ময়না পাখির কথাগুলো পর্বঃ- ০১ | গল্প পোকা কষ্টের গল্প

0
2799

গল্পঃ- ময়না পাখির কথাগুলো।
পর্বঃ- ০১
লেখাঃ- মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

– বাইশ বছর আগে আপনার স্ত্রী তার আট মাসের দুধের শিশু রেখে আমার সাথে পালিয়ে গিয়েছিল, আমি আপনার সেই প্রথম স্ত্রীর দ্বিতীয় স্বামী। খুব স্বার্থপর হয়ে আপনাকে ঠকিয়ে আমি আপনার স্ত্রীকে নিয়ে চলে গেলাম আর সেদিন থেকে কিন্তু আপনি আপনার শিশু কন্যাকে নিয়ে হয়ে গেলেন অসহায়। এবার চিনতে পারছেন?

– চোখের চশমা বাম হাত দিয়ে সামান্য নাড়িয়ে শহিদুল ইসলাম সাহেব তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলো। মুখ দিয়ে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু চোখ দুটো আগে দেখতে চায় তাই মুখ বন্ধ চোখ খোলা।

– লোকটা আবার বললো, আমার নাম মাহাতাবুর রহমান মুহিত, সবাই আমাকে মুহিত নামে ডাকে। আমার স্ত্রী মানে আপনার সাবেক স্ত্রীও আমাকে মুহিত নামে ডাকে। কেমন আছেন ভাইজান?

– আপনি হঠাৎ কেন এসেছেন? আর আমি কেমন আছি সেটা জানার জন্য আপনি নিশ্চয়ই আসেন নাই। তাই আপনার প্রয়োজন বলেন।

– এত বছর পরেও রাগটা পুষে রেখেছেন, সেটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। আচ্ছা ঠিক আছে আমি বরং তাহলে আসল কথা বলছি।

– জ্বি বলেন।

– আপনার একমাত্র মেয়েকে তার মা দেখার জন্য অস্থির হয়ে গেছে, সে খুব অসুস্থ। বেশ কিছুদিন ধরে সে শুধু তার মেয়ে দেখতে চায় তাই বাধ্য হয়ে আমি এসেছি। আমার আসার কোন ইচ্ছে ছিল না কিন্তু…!

– জনাব মুহিতকে থামিয়ে দিয়ে শহিদুল ইসলাম বললেন, কিন্তু আপনি নিজেও বুঝতে পারছেন মিলির মা আর বেশিদিন বাঁচবে না। তাই আপনি চাচ্ছেন মৃত্যুর আগে স্ত্রীর শেষ ইচ্ছে যেন পূরণ করতে পারেন তাই না?

– জ্বি ভাই।

শহিদুল ইসলামের একমাত্র মেয়ের নাম মোহনা আক্তার মিলি আর মিলির মায়ের নাম ছিল সাজেদা বেগম।

– শহিদুল ইসলাম বললেন, আমার ধারণা মিলি তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাবে না। তবু আমি একবার তাকে বলবো, যদি সে যেতে রাজি হয় তাহলে আপত্তি নেই।

– সে কি তার মায়ের কথা কখনো মনে করে না?

– দেখুন মুহিত সাহেব, সাজেদা চলে যাবার পর আমি আর আমার মেয়ের জীবন কেটেছে। আমি যখন বেলকনিতে বসে গভীর রাতে সাজেদার জন্য মন করে থাকি তখন মিলি চুপিচুপি সেখানে গিয়ে আমাকে সান্ত্বনা দেয়। আবার মায়ের ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যেদিন মিলি ঘুমিয়ে পরে। সেদিন আমি তার রুমে গিয়ে জ্বলন্ত বাতিটা নিভিয়ে আসি, তার বুকের উপর থেকে ছবিটা সরিয়ে রাখি। তারপর যেভাবে শব্দহীন প্রবেশ করি সেভাবেই ফিরে আসি। মিলি তার মাকে মনে মনে অনেক খুঁজে বেড়ায় কিন্তু আমার সামনে প্রকাশ করে না। কারণ তাহলে তো আমি আরো বেশি করে করবো, তাই দুজনের মনে সে ঠিকই আছে কিন্তু কেউ কখনো সেটা প্রকাশ করে দুজনেই একসাথে নিস্তব্ধ হই না।

– মুহিত সাহেব টেবিলের উপর এক টুকরো কাগজ রেখে বললো, এখানে মোবাইল নাম্বারটা লেখা আছে। যদি মন চায় তাহলে মিলি যেন কল দিয়ে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে।

– মিলি তার মায়ের কাছে কল করবে কিনা জানি না, তবে আপনি তার মাকে বলে দিবেন যে মিলির বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। মিলি নিজেই একটা ছেলে পছন্দ করেছে এবং তার সাথেই তার বিয়ে হচ্ছে।

– আপনার মেয়ের জন্য অগ্রীম অভিনন্দন।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

– দোয়া করবেন মিলির জীবন যেন তার মায়ের মতো না হয়, কারণ তার মা একজনকে ভালবেসে বিয়ে করেছিল। কিন্তু মিলির জন্মের পর মিলিকে রেখে সে চলে গেছে তাই মিলির যেন এমন না হয়, দোয়া করবেন।

ড্রইং রুমে মেহমান এসেছে সেটা মিলি আগেই দেখেছে কিন্তু রুমের মধ্যে বসে সে তার বয়ফ্রেন্ড মানে যার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছে তার সাথে কথা বলছিল। সচারাচর সজীব (বয়ফ্রেন্ড) এমন সময় কল করে না কিন্তু আজকে হঠাৎ করে দিয়েছে। সজীব একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে তাই এটা তার অফিসে টাইম।

– হ্যালো মিলি?

– হ্যাঁ বলো।

– কি করো? আঙ্কেল কি বাসায় আছে?

– হ্যাঁ বাবা বাসায় আছেন, কিন্তু কেন?

– আঙ্কেলের সঙ্গে আমার কিছু জরুরি কথা আছে তাই আমি একটু পরে আসতেছি তোমাদের কাছে, তুমি আঙ্কেল কে বলে রেখো যে আমি আসবো।

– নিশ্চয়ই আমাদের বিয়ের বিষয় তাই না?

– হ্যাঁ সেরকমই।

– আচ্ছা বাদ দাও, বিয়ের সময় আমি কিন্তু নীল শাড়ি পরবো তাই কেউ যেন লাল শাড়ির জন্য কভু জোরাজোরি না করে।

– আচ্ছা ঠিক আছে, রাখি?

– শোনো আরেকটু।

– বলো, আমি আমার নতুন চাকরির বিগত সাত মাসের বেতনের টাকা সব রেখে দিয়েছি। বাবার কাছে দিলে সে নিতে চায় না তাই ভেবেছি টাকা দিয়ে আমরা বিয়ের পরে হানিমুনে যাবো।

– আগে বিয়ে হোক তারপর সবকিছু হবে, আমার কাজ করতে হবে।

– কখন আসবে তুমি? তোমার জন্য তাহলে আমি নুডলস রান্না করে রাখবো।

– রান্না করতে হবে না মিলি, আমি বেশিক্ষণ সময় নিতে পারবো না তাই জরুরি কথা বলে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পরবো।

– সেই কথা বলার ফাঁকে খাবে, কোন কথা শুনতে চাই না আমি।

সজীব বিরক্ত হয়ে কল কেটে দিল, মিলি দুইবার হ্যালো হ্যালো করে মোবাইল কানের কাছ থেকে হাতে নিয়ে দেখে কল কেটে গেছে। মিলির মনটা খারাপ হয়ে গেল, এভাবে কেউ কল কেটে দেয়? একবার বিয়ে হোক তারপর সবকিছু সুদে আসলে আদায় করতে হবে। বিয়ের পরে কেমন কি করবে সেরকম কিছু বিষয় কল্পনা করে মিলি হেসে দিল।

ড্রইং রুমে মিলির বাবা শহিদুল ইসলাম সোফায় বসে চোখ বন্ধ করে আছেন। আজকে হঠাৎ করে পুরনো স্মৃতি জাগ্রত হয়ে বেরিয়ে গেল। জীবনের একটা অংশ অন্ধকার করে দিয়ে প্রদীপ নিয়ে চলে গেছে সাজেদা বেগম। অন্ধকার মহাসমুদ্রে মিলির মতো একটা বেঁচে থাকার অবলম্বন দিয়ে গেছে। যদি মিলিকে সাথে করে নিয়ে যেতো তাহলে আজ তার কোন যায়গা অবস্থান হতো কে জানে? এখন যেমন করে মিলি তার মাকে বহুবছর ধরে দেখতে পারে না তেমনি তখন উল্টো ভাবে মিলি তার বাবা কে দেখতে পারতো না।

– বাবা লোকটা কি চলে গেছে?

– প্রশ্ন শুনে চোখ মেলে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন মিলির বাবা। ” হ্যাঁ চলে গেছে, তিনি যেই কাজে এসেছেন সেটা শেষ হয়ে গেছে তাই আর দেরি করলেন না। ”

– তিনি কে বাবা? এর আগে কখনো তোমার কাছে আসতে দেখিনি।

– হাত বাড়িয়ে মেয়েকে নিজের কাছে বসিয়ে দিল মিলির বাবা, তারপর বললেন, বাইশ বছর আগে তোমার মা তোমাকে আমাকে রেখে যার সাথে চলে গেছেন ইনি সেই লোক।

– কি..? মিলির দুচোখ ভর্তি বিস্ময় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে, নিজের কানকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তবুও বললোঃ- এতবছর পরে আমাদের কাছে কেন এসেছে তিনি?

– তোমার মা নাকি ভিষণ অসুস্থ তাই তিনি নাকি তোমাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাদের ধারণা তোমার মা বেশিদিন বাঁচবে না তাই তিনিও এসেছেন যাতে তোমার মায়ের ইচ্ছে পূরণ করতে পারেন সেজন্য।

– মিলি এক মুহূর্ত চুপ হয়ে গেল, কি বলবে সেটাই খুঁজে পাচ্ছে না বলে নীরবতা। তারপর চট করে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কি বললে বাবা?

– মিলির বাবা চোখ থেকে চশমা খুলতে খুলতে বললেন, আমি বলেছি যে আমার মেয়ে যদি চায় তাহলে সে গিয়ে দেখা করতে পারবে। আমার পক্ষ থেকে কোন নিষেধ নেই, তাই তোমাকেও একই কথা বলবো, তুমি যেতে পারো।

– কিন্তু তিনি আমাদের রেখে চলে গেছেন তাই না? তাহলে কেন যাবো সে ডাকলে?

– দেখ মিলি, পৃথিবীর সকল মানুষ ভুল করে, শুধু সারাজীবনে একটা ভুল বা কোন পাপ করেননি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। কেউ কেউ তার নিজের ভুল বুঝতে পারে আবার কেউ কেউ সেই ভুলের উপর স্থির থাকে। আর অনেকে আছে যারা ভুল বুঝতে পারে কিংবা অনুতপ্ত হয়ে যায় কিন্তু সে ফিরতে পারে না।

– তাহলে কি আমার যাওয়া উচিৎ বাবা?

– হ্যাঁ, তোমার মা যেহেতু তোমাকে দেখতে চার, তাই তুমি যাবে। কারণ শেষ মুহূর্তে এসে তিনি যেন বুঝতে পারেন যে তাকে আমরা ক্ষমা করেছি।

– তুমি এতটা ভালো কেন বাবা? তোমার মতো বাবা পেয়ে আমি সকল কষ্ট ভুলে গেছি জানো?

– আমি মোটেই ভালো মানুষ নই, তোমার মা কি তাহলে চলে যেতে পারতো?

– মা কেন চলে গেছে সেই প্রশ্ন আমি মায়ের সঙ্গে করবো, যদি সত্যি সত্যি দেখা হয়ে যায় তাহলে আমি অবশ্যই জিজ্ঞেস করবো।

– মিলির বাবা মুহিত সাহেবের রেখে যাওয়া নাম্বার এগিয়ে দিল মিলির কাছে। ” এটা তোমার মায়ের মোবাইল নাম্বার, তুমি চাইলে কল দিয়ে কথা বলে নিতে পারো। ”

★★

সাজেদা বেগম মাত্র আসরের নামাজ পড়ে উঠে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। শরীর খুব দুর্বল তাই আজকে নামাজ পড়তে একটু দেরি হয়ে গেল তবুও পড়তে পেরেছেন এটাই তৃপ্তি। স্বামী মুহিত গেছে ঢাকা শহরে কিন্তু সেখানে গিয়ে কি হচ্ছে কিছুই জানা নেই। নিজের অসুস্থতার জন্য তার মেয়েকে দেখার জন্য সেখানে মুহিতকে সে পাঠিয়ে ভুল করলো নাকি? তারা যদি অপমান করে তাড়িয়ে দেয়? অপমান করলে তো কিছু করা যাবে না কারণ অপমানিত হবার মতো কাজ সে আর মুহিত দুজনেই করেছে।

হঠাৎ করে মোবাইলে কল এলো, মোবাইল ছিল রুমের মধ্যে তাই রুম থেকে সেই মোবাইল বাহিরে দিয়ে গেল তার ছোট ছেলে মিরাজ।

– সাজেদা বেগম রিসিভ করে সালাম দিলেন, সে বললো আসসালামু আলাইকুম। অপরপ্রান্তে কান্না করার গোঙ্গানি শুনতে পাচ্ছেন সাজেদা বেগম কিন্তু কে হতে পারে? তাই আবার বললেন, কে?

– একটা মেয়ে আবেগপূর্ণ মুখে তখন বললো, মা আমি মিলি।

– মুহূর্তের মধ্যে শরীরে একটু শিহরিত হয়ে গেল সাজেদা বেগমের। কে? মিলি?

– হ্যাঁ আমি আমি মিলি, কেমন আছো তুমি? আর এত বছর পরে তোমার সন্তানের কথা মনে হলো?

– সবসময় মনে পরে, কিন্তু তোমার বাবা আর তুমি কতটুকু ঘৃণা তাই ভেবে কখনো সামনে যাবার সাহস করতে পারি নাই।

– কেন এমন করলে মা? আমার মুখের দিকে তাকিয়েও কি তুমি থাকতে পারলে না? আর বাবা তোমাকে কত্তো ভালবাসে তবুও কীভাবে তুমি চলে গেলে মা?

– তোমার করা অনেক অনেক প্রশ্ন আমি শুধু কান দিয়ে শুনে যেতে পারবো কিন্তু উত্তর দিতে পারবো না কারণ উত্তর আমার জানা নেই। তবে মাঝে মাঝে যখন খুব মন খারাপ লাগে তখন নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলি যে ভাগ্য এভাবেই লেখা ছিল।

– তুমি কেমন আছো মা? বললে না তো।

– অনেক ভালো আছি, তুমি কেমন আছো? আর তোমার বাবা কেমন আছেন?

– আমরা ভালো আছি, তোমার তোমার শূন্যতা আজও অনুভব করি। কিন্তু এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেছে যে প্রকাশ করতে পারি না। আচ্ছা মা, যে আঙ্কেল এসেছিলেন তিনি বললেন তুমি নাকি অসুস্থ।

– হ্যাঁ শরীর দুর্বল হয়ে গেছে মনে হয় পরপারে চলে যেতে হবে।

– এমন করে কেন বলো? আমার সাথে দেখা না করেই চলে যাবে? আমি খুব শীঘ্রই তোমার সাথে দেখা করতে আসবো মা।

– তোমার বাবা কিছু বলবে না?

– না বাবা যেতে বলেছেন।

– তাহলে খুব তাড়াতাড়ি চলে আসো মায়ের সঙ্গে দেখা করতে, আমি অপেক্ষা করে রবো।

– আমি কালকে অফিসে গিয়েই ছুটির জন্য বড় স্যারের কাছে আবেদন করবো।

– তুমি চাকরি করো মিলি? এতবড় হয়ে গেছো?

– বাইশ বছর আগে তুমি যাকে রেখে গেছো সে কি আজও সেভাবেই থাকবে?

– তাই তো..! আমি তো আমার সেই পিচ্চি মিলির অপেক্ষা করছি, কিন্তু সে আজ কতবড় হয়ে গেছে সেটাই জানা নেই।

– জানো মা? তোমার আর বাবার একমাত্র একটা ছবি তোলা ছিল না? সেই ছবিটি আমার কাছে থাকে, আর আমি বেশিরভাগ রাতেই সেই ছবি বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরি। সকাল বেলা দেখি যে ছবিটি যথাস্থানে সাজানো রয়েছে, এর মানে কি বুঝতে পারছো?

– না তো।

– এর মানে হচ্ছে বাবা রাতের আধারে আমার রুমে এসে তোমার আর তার ছবিটি তুলে নিয়ে যায় এবং যথাস্থানে রেখে দেয়। কি জানি, হয়তো সেও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে ছবির প্রতি।

– সাজেদা বেগম শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।

– মিলি বললো, মা আমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, তুমি কিন্তু অবশ্যই আসবে।

– তাই নাকি? ছেলে কি করে?

– জব করে, আমি পছন্দ করেছি তাই বাবা আর অমত করেননি। আজ পর্যন্ত বাবা আমাকে কভু বকাবকি করে নাই এবং কোন ইচ্ছে অপূর্ণ রাখে নাই।

– তোমার জন্য শুভ কামনা রইলো, তবে বিয়ের সময় আমি যদি বেঁচে থাকি তাহলে উপস্থিত হতে চেষ্টা করবো। বিয়ে কবে?

– চলতি মাসের মধ্যে হবে কিন্তু তারিখ এখনো ঠিক করা হয়নি।

মোবাইল কেটে গেল, ব্যালেন্স শেষ। মিলি তার মোবাইল বুকে জড়িয়ে আবারও কেঁদে উঠলো। এতক্ষণ ধরে দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মিলির বাবা মা-মেয়ের কথোপকথন শুনছিলেন। মেয়েকে কান্না করতে দেখে তিনি রুমের মধ্যে শব্দ করে প্রবেশ করলো। মিলি একবার মুখ তুলে সে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো, বাবা কাছে যেতেই তাকে জড়িয়ে ধরে বললো।

– বাবা আমি শুধু একবার মায়ের সঙ্গে দেখা করে আসবো, আমি জানি তুমি হয়তো মনে মনে ভয় পাচ্ছ যে মায়ের কাছে গেলে তোমাকে ভুলে যেতে পারি। কিন্তু সেটা কখনো নয় বাবা, আমার এই জীবনের সবটুকু জুড়ে শুধু তুমি বাবা।

শহিদুল ইসলাম সাহেব কিছু একটা বলবেন তার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো। মিলির বাবা শহিদুল ইসলাম বললেন, ” আবার কে এলো? ”

– মিলির মনে পরে গেল যে সজীব তার বাবার সঙ্গে দেখা করতে আসার কথা ছিল কিন্তু এতক্ষণ মায়ের বিষয়ের জন্য সেটা মনে ছিল না। এবার সে বললো. বাবা সজীব তোমার সাথে দেখা করতে আসার কথা ছিল হয়তো সে এসেছে।

– ওহহ আচ্ছা ঠিক আছে যাচ্ছি আমি, তুই বরং নাস্তার ব্যবস্থা কর।

– আগে দেখো সত্যি সত্যি সজীব কি না?

– আচ্ছা ঠিক আছে।

★★

ড্রইং রুমে মিলির বাবা শহিদুল ইসলাম ও সজীব বসে আছে দুজনেই। সজীব মনের মধ্যে একটা কথা সাজাচ্ছে বলার জন্য কিন্তু কীভাবে শুরু করা যায় সেটা খুঁজে পাচ্ছে না। সজীব এর জড়তা কাটিয়ে দিতেই শহিদুল ইসলাম বললেনঃ-

– কি খবর সজীব? কেমন আছো? আর তোমার মা-বাবা কি বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করেছে না করে নাই?

– আঙ্কেল একটু ছোট্ট সমস্যা দেখা দিয়েছে তাই সেটা নিয়ে আলোচনা করতে এসেছি।

– কি হইছে?

– কীভাবে যে বলবো…!

– সঙ্কোচ কেন? বলে ফেলো।

– কথাটা আন্টিকে নিয়ে।

– মিলির মায়ের বিষয়?

– জ্বি।

– আচ্ছা ঠিক আছে বলো।

– আন্টির সঙ্গে আপনার ঠিক কি ধরনের সমস্যা হয়েছিল? আমি সঠিকটা জানতে চাই, অনেকে অনেক কিছু বলে তাই আপনার কাছে সরাসরি জিজ্ঞেস করেছি।

– অনেকে বলতে কারা? তোমার পরিবার?

– জ্বি আঙ্কেল।

– তারা কি বিয়ের ব্যাপারে পিছিয়ে যেতে চায়?

– আসলে আঙ্কেল ব্যাপার হচ্ছে…!

– ব্যাপার বুঝতে পারছি আমি, মিলির মা ওকে রেখে অন্য কারো সাথে চলে গেছে এটা সত্যি। এবং সে বিষয় জেনে যদি তোমার পরিবার বিয়ে করাতে না চায় সেটা ভিন্ন কথা।

– আমার মা-বাবা এই সমস্যাটা একটা বড় করে নিচ্ছেন তাই আরকি।

– তুমি প্রথম যেদিন আমার সঙ্গে দেখা করছো সেই দিন কি বলছো মনে আছে?

– জ্বি আঙ্কেল। আমি বলেছিল যে যেকোনো কিছু হোক তবুও মিলিকে চাই।

– এখন কি মতামত পরিবর্তন হচ্ছে?

– আপাতত কিছুদিন পিছিয়ে দিচ্ছি, আমি আমার মা-বাবাকে বলে বোঝাতে চেষ্টা করবো।

– আমার কেন যেন মনে হচ্ছে যে তুমিও হয়তো আমার মিলিকে বিয়ে করতে চাও না। সেটাই যদি হয়ে থাকে তাহলে সরাসরি বলে দিও কারণ আমি চাই না আমার মেয়ে একটা মিথ্যে স্বপ্ন দেখুক।

– আমি আজ আসি আঙ্কেল।

– বসো, মিলি নাস্তা নিয়ে আসবে নাস্তা করে তবে যেও সমস্যা নেই।

– আমার একটু কাজ আছে জরুরি, আমি মিলির সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে নেবো।

নাস্তা নিয়ে ড্রইং রুমে এসে মিলি দেখলো যে তার বাবা একা একা বসে আছে। সজীব কখন চলে গেছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না তাই নাস্তা সামনে রেখে জিজ্ঞেস করলো,

– বাবা সজীব কি চলে গেছে?

– শহিদুল ইসলাম চমকে গেলেন, তার মনের মধ্যে একটা অজানা ভয় লেগে গেল। যেই মেয়ে সর্বদা কষ্ট করতে করতে এসেছে, আজও সে আরেকটা কষ্টে পরতে যাচ্ছে। একদিকে এতদিন পরে তার মা ফিরে পেয়েছে কিন্তু সে মুমূর্ষু। আরেকদিকে সজীব এর সাথে বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে সেই বেদনা। তিনি ভাবতে লাগলো কীভাবে বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে সেই খবর তার মেয়েকে বলবে?

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে