মোহ মায়া ৮ম এবং শেষ পর্ব

0
2360

#মোহ_মায়া
#৮ম_এবং_শেষ_পর্ব
#অনন্য_শফিক



নিতুল বললো,’নেও। মোবাইল নিয়ে বর্ষাকে ফোন দেও।’
আমি খানিক সময় ভেবে ওর কাছ থেকে ফোন হাতে নিলাম। তারপর বর্ষার নম্বর খুঁজে বের করে ওকে ফোন করলাম।
বর্ষা প্রথম দু’বার ফোন রিসিভ করলো না।সে ফোন রিসিভ করলো তৃতীয় বার। ফোন রিসিভ করে সে ও পাশ থেকে চুপ করে রইলো।
আমি কী বলবো না বলবো বুঝতে পারছি না।তাই মোবাইল ফোন কানে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছি বোকার মতো। আমার হাত পা কেমন কাঁপছে।ভয় পাচ্ছি খুব!নিতুল কখন জানি আবার আমায় আঘাত করে বসে!
আমি কথা বলছি না দেখে নিতুল নোরার গলা চেপে ধরলো।গলা চেপে ধরে সে আমায় বুঝাতে চাচ্ছে আমি কথা না বললে নোরাকে সে মেরে ফেলবে।
আমি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললাম,’হ্যালো।’
ও পাশ থেকে বর্ষা আঁতকে উঠলো খানিক। আঁতকে উঠা গলায়ই সে বললো,’ভাবী!’
আমি তখন আর নতুন কোন কথা না বলে সরাসরি বলে ফেললাম,’বর্ষা,আজ কিন্তু তুমি তোমার ঘরের দরজাটা গভীর রাত পর্যন্ত খোলা রাখবা?’
ও পাশ থেকে বর্ষা অবাক হয়ে বললো,’কেন ভাবী? দরজা খোলা রাখবো কেন শুধু শুধু?’
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,’আজ আমি তোমার সাথে দেখা করতে আসবো। অনেক কথা আছে তোমার সাথে।প্লিজ তুমি দরজাটা খোলা রেখো!’
বর্ষা বললো,’ভাবী, আপনি অত রাতে কী করে আসবেন?নিতুল ভাইয়া আসতে দিবে আপনাকে?’
‘সে তুমি ভেবো না।আমি যেভাবেই হোক আসবো।’
বর্ষা বললো,’ঠিক আছে ভাবী। খুব সাবধানে আসবেন কিন্তু!’
আমি আচ্ছা বলেই ফোন রেখে দিলাম ‌।
তারপর নিতুলের হাতে মোবাইল দিয়ে নোরাকে এক টানে ওর হাত থেকে আমার কোলে নিয়ে ঘরের ভেতর চলে গেলাম।
নোরা আমার কোলে এসেই আমার বুকে এমন ভাবে মাথা গুঁজে নিলো যে ওখান থেকে আর কিছুতেই মাথা উঠাচ্ছে না সে।যেন কোন মুরগির বাচ্চা চিলের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে তার মায়ের কাছে এসে মায়ের পালকের ভেতর ঢুকে যেতে চাচ্ছে।নোরার দিকে তাকিয়ে আমার খুব কান্না পাচ্ছে।মনে হচ্ছে ওর কপাল কী পরিমাণ খারাপ। পৃথিবীতে মনে হয় একমাত্র মেয়ে নোরাই যার পিতা তাকে হত্যার কথা বলে, গলায় চেপে ধরে ভয় দেখায়!

নিতুল সন্ধ্যা বেলায়ই ঘর থেকে বের হয়ে চলে গেল।তার মন আজ উৎফুল্ল। হয়তো বর্ষার সাথে এই কদিন সে কোন ভাবেই দেখা করতে পারেনি। তাই আজ সে এই ফাঁদের ভেতর‌ দিয়ে বর্ষাকে আটকে ফেলতে চাইছে!বর্ষা কী পারবে আজ এই অশূরের হাত থেকে বাঁচতে?

রাত বাড়ছে।আমি জানি নিতুল সন্ধ্যা রাতে কখনোই বর্ষাদের বাড়িতে যাবে না।সে যাবে যখন রাত শেষ হয়ে যেতে থাকে তখন! তখন সব মানুষ ঘুমিয়ে থাকবে।আর সে তার চাওয়া পাওয়া মিটিয়ে নিবে এই সুযোগে!

বর্ষার দরজা খোলাই ছিল। দরজা ঠেলে টুপ করে ওর ঘরের ভেতর ঢুকে গেলাম আমি।বর্ষা খাটের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে ছিল।আমায় দেখে সে তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠে চুপিচুপি বললো,’ভাবী এসে গেছেন! কিন্তু জোরে শব্দ করে কথা বলা যাবে প্লিজ!মা বাবা যদি টের পায় সর্বনাশ হবে!’
আমি ওকে সান্তনা দিলাম। বললাম,’আজকের পর থেকে তোমার মা বাবা অনেক কিছুই জেনে যাবে।আজ এখানে ভয়াবহ কিছু ঘটবে।’
বর্ষা আঁতকে উঠা গলায় বললো,’ভয়াবহ কী ঘটবে ভাবী?’
‘ঘটলেই বুঝতে পারবে। এখন শুনো। তুমি চুপচাপ বিছানার উপর বসে থাকো।একটুও নড়বে না। চিৎকার করবে না।আমি কী করছি না করছি তাও তোমার দেখার প্রয়োজন নাই।তুমি শুধু ওখানে বসে থাকবে।পারলে চোখ বুজে রেখো!’
বর্ষার মুখ কেমন কালচে হয়ে গেছে। ভীষণ ভয় পেয়েছে ও!
আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,’তুমি একটুও টেনশন করো না। কোন ভয় নেই বোন।কাল সকাল থেকেই তোমার জীবনে আলো ফিরে আসবে।’
বর্ষা আর কোন কথা বললো না। চুপচাপ খাটের উপর বসে রইল।আর আমি গিয়ে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে রইলাম। অপেক্ষা করছি আমার শিকারের আশায়! মুক্তির প্রত্যাশায়!

নিতুল এলো ঠিক শেষ রাতের দিকেই।তার পায়ের শব্দ ঠাহর করেই আমি স্বতর্ক হয়ে দাঁড়ালাম।আর পেছনে হাত দিয়ে দেখলাম পিঠের সাথে মিশিয়ে রাখা জিনিস টা ঠিক আছে কি না!
নিতুল ঘরে ঢুকেই ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। ভেতরে তখন অন্ধকার।নিতুল সেই অন্ধকারের ভেতর তার মোবাইলের স্ক্রিনের আলোতে পথ দেখে দেখে খাটের কাছে যেতে লাগলো।তার হাঁটায় অস্থিরতা। হয়তোবা খুব তাড়াহুড়ো করছে। আমিও তাড়াহুড়ো করছি।নিতুল যখন প্রায় খাটের একেবারে কিনারে চলে গেল আমিও তখন একেবারে তার কাছে, পেছনে।নিতুল এবার তার একটা হাত বাড়িয়ে দিলো বর্ষার দিকে। আমার হাত তখন কাঁপছে। সেই কাঁপা কাঁপা হাতটা পেছনে নিয়ে আমার পিঠের সাথে মিশিয়ে রাখা দা খানা বের করে এনে এক‌ কোঁপে নিতুলের বাড়ানো হাতটা কেটে ফেললাম।নিতুল এবার আর্তচিৎকার করে উঠে পেছনে তাকালো।আর সঙ্গে সঙ্গে আমি তার লম্বা গর্দান উড়িয়ে দিলাম আরেক কোঁপে।বর্ষা ভয়ে চিৎকার করে উঠলো। ভয়ংকর সে চিৎকার।তার চিৎকার শুনে সাড়া বাড়ি জেগে উঠলো মুহর্তে। জেগে উঠলো এ বাড়ির সব মানুষ।

সকাল হয়ে গেছে।মুক্তির এক সকাল। গ্রামের সব মানুষ এসে দেখে যাচ্ছে এক নরপশুর ‌পড়ে থাকা লাশ।কেউ এসে ঘৃণা ভরা থুথু নিক্ষেপ করছে সেই লাশের উপর।
একটু পর পুলিশ আসবে। এসে খুনিকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে কারাগারে।
বর্ষা আমার দিকে তাকালো।তার চোখে মুখে আনন্দের হাসি।হাসার পরেও তার চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে।সে এবার আমার কাছে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে ফেললো। তারপর ভেজা গলায় বললো,’ভাবী,আজ আপনি আমায় মুক্তি দিয়েছেন। আপনাকেও আমি আজ থেকে মুক্তি দিবো। সত্যি সত্যি মুক্তি দিবো।’
বলে সে আমার হাত থেকে দা টা কেড়ে নিলো।
আমি বললাম,’না বর্ষা আমি খুনি আমার হাতেই দা’টা দাও। এক্ষুনি পুলিশ আসবে।’
বর্ষা বললো,’পুলিশ আসবে বলেই তো আপনার কাছ থেকে এটা নিয়ে নিলাম। এখন অপরাধী আমি।’
‘না তুমি নয় আমি অপরাধী।’
বর্ষা এবার বললো,’ভাবী, আপনার নোরার জন্য হলেও বাইরে থাকতে হবে। নোরাকে বড় করতে হবে। মানুষের মতো মানুষ করতে হবে। কিন্তু আমার হাজত খানায় থাকলেও কোন সমস্যা নাই। ওখানে আমি বেশ ভালো থাকবো। একজন নরপশুর যৌনদাসী হয়ে থাকার চেয়ে খুনের অপরাধে দন্ডিত হয়ে কারাবাস যাপন লক্ষ্য কুটি গুণে শ্রেয়!

___সমাপ্ত___

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে