#মোহ_মায়া
#১ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক
বাবুর কান্না শুনে রান্না ঘর থেকে দৌড়ে ড্রয়িং রুমে এসে আমি থ হয়ে গেলাম। আমার স্বামী নিতুল তারই ছাত্রী বিন্দুকে জাপটে ধরে আছে। একেবারেই অন্তরঙ্গ অবস্থায় আছে দুজন।বিন্দুর শরীরে একটা সুতো পর্যন্ত নাই।আর আমার এক বছর বয়সী বাচ্চাটা টেবিলের উপর হাত পা ছুড়ে চিৎকার করে কাঁদছে।
আমি রুমে ঢুকতেই দুজন দুদিকে ছিটকে পড়লো।
বিন্দু তড়িঘড়ি করে মেঝেতে পড়ে থাকা জামাটা তুলে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো।আর নিতুল তার শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে ঝাঁজালো গলায় বললো,’কারোর রুমে আসলে অনুমতি নিতে হয় জানো না?’
আমি টেবিলের উপর থেকে আমার মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললাম,’ছিঃ নিতুল ছিঃ! তুমি এতো নীচ! তোমার এক বছর বয়সের মেয়েটা টেবিলের উপর পড়ে থেকে চিৎকার করে কাঁদছে আর তুমি তাকে ফেলে রেখেই অন্য একটা মেয়ের সাথে অশ্লীলতায় মেতে উঠেছো? নিজের বাচ্চাটার জন্য একটুও বুকটা কাঁপলো না তোমার?আমি তো তোমার কোলে তুলে দিয়ে গিয়েছিলাম বাবুকে। তুমি কী করে তাকে কোল থেকে নামিয়ে এমন পাপ কাজে লিপ্ত হলে?’
নিতুল আমতা আমতা করে বললো,’আরে ওর পিঠে একটা তেলাপোকা ছিল। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল বর্ষা।তাই আমি ওটা ছাড়াতে চেয়েছিলাম!’
বর্ষা এতোক্ষণে মাথা উপরে তুলেছে।সে এবার শব্দ করেই বললো,’ভাবী, ভাইয়া ঠিকই বলেছে।’
বর্ষাকে আমি এক ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলাম।
তারপর বললাম,’বর্ষা, তুমি কী জানো তোমাকে আমি কতটা আমি বিশ্বাস করতাম?জানো না।আপন বোনের চেয়েও বেশি।আর এর প্রতিদান তুমি এভাবে দিলে? ছিঃ!’
নিতুল এবার রাগত স্বরে বললো,’ওকে ধমকাচ্ছো কেন হ্যা?ওর কী দোষ? বললাম না তেলাপোকা–
এক ধমক দিয়ে নিতুলকে থামিয়ে দিলাম আমি।আর বললাম,’ছোটলোক কখনো বড় হয় না। এদের মন মানসিকতা সব সময় নীচই থাকে।আমারই দোষ!সবাই নিষেধ করার পরও যে কেন তোমার মতো ছোটলোককে বিয়ে করতে গেলাম!’
নিতুল এবার আমার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো।ওর চড়ের আঘাত সামলাতে না পেরে আমার এক বছরের মেয়ে নোরাকে নিয়ে দূরে ছিটকে পড়লাম আমি। তারপর ওখান থেকে উঠে চোখ মুছে বললাম,’তেলাপোকা সাড়িয়ে দিতে গিয়ে কী কারোর ঠোঁটে চুমুও খেতে হয়?’
নিতুল এবার এসে আমার চুল টেনে ধরলো।ওর এমন অসভ্যতামি দেখে আমার বাচ্চা মেয়েটা চিৎকার করে কাঁদছে। ততক্ষণে সুযোগ বুঝে বর্ষা চটকে পড়েছে। এখন বাসায় আমি একা।নিতুল এবার আমায় তার ইচ্ছে মতো শাস্তি দিবে। কিন্তু আমি কোন প্রতিবাদ করতে পারবো না। কারণ নিতুলকে আমি আমার পছন্দে বিয়ে করেছিলাম।বাবা মা এতো করে নিষেধ করলো তবুও মানলাম না।শেষে নিতুলের সাথে যখন তারা আমার বিয়ে দিলেন তখন বলে দিলেন, নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছো এখন কোন সমস্যা হলে নিজেই ম্যানেজ করবে। আমাদের কাছে এলে কোন লাভ হবে না। তোমার জন্য আজ থেকে আমাদের বাড়ির গেট চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেল!
‘
নিতুল নোরাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে সোফার উপর শুইয়ে রেখে দিলো। তারপর আমার চুল শক্ত করে ধরে টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ফেলতে বললো,’বড় লোকের মেয়ে বলে আমায় অপমান করিস তুই?তোর বড়লোকী আমি ছুটাচ্ছি দাঁড়া। এই বলে সে আমার তলপেটে লাথি মারে। সঙ্গে সঙ্গে দরজার কাছে গিয়ে ছিটকে পড়ি আমি। দরজার কোনায় লেগে ঠোঁট কেটে দরদর করে রক্ত ঝরতে থাকে ঠোঁট থেকে।
মুহূর্তে আমি অজ্ঞান হয়।
‘
যখন হুঁশ ফিরে তখন দেখি ঘরে লাইট জ্বলছে।রাত হয়ে এসেছে।ও পাশে ফিরে দেখি সোফায় নোরা ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে আছে।আর একদল মশা ভনভন শব্দ করে উড়তে উড়তে এসে বসছে নোরার শরীরে। তারপর কামড়ে দিচ্ছে তাকে।
মেঝে থেকে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে দেখি আমার সমস্ত শরীর ব্যাথায় আচ্ছন্ন। তবুও কষ্ট করে উঠি।উঠে ধীর পায়ে নোরার কাছে যাই। নোরাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে গিয়ে আমার চোখ ভিজে উঠলো জলে। মনে পড়ে গেলো আমার বাসর রাতের কথা।নিতুল আমার হাত ধরে সেদিন বলেছিলো—
‘
#চলবে