মেঘ বিয়োগের মৌসুম পর্ব-০৭

0
652

#মেঘ_বিয়োগের_মৌসুম
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৭
❌ কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলো।❌

ওয়াহাজ বেলার কথা শুনে চকিতে বলে ওঠে,” তুমি তার বিরুদ্ধে পুলিশকে জানিয়েছ?”
বেলা নরমস্বরে বলে,” হ্যাঁ ভাইয়া, আমি আমার সাথে হওয়া অন্যা*য়ের মাফ কিছুতেই করব না, আপোষ কিছুতেই করব না। আমার দিকে ইট ছুড়*লে, পাটকেল খেতেই হবে।”

ওয়াহাজ অদ্ভুত আওয়াজ করে সহাস্য বলে ওঠে,” গুউউড!”

ভাইয়ের থেকে সাহস পেয়ে বেলা জাওয়াদের স্ত্রীকে বলে,” আমি আপনার স্বামীকে ছাড়াতে সাহায্য করতে পারব না। আমি আমাকে, শুধুমাত্র আমাকে খুব বেশি ভালোবাসি৷ আমার ভালোবাসার মানুষ আমি নিজেই৷ ভালোবাসার মানুষের কেউ ক্ষ*তি করতে চাইলে আমি তাকে ছেড়ে কথা বলব না। ”

বেলা আবার বলে,” আপনি অন্যকাউকে বলে দেখুন কেউ সাহায্য করে কি না। আমি আপনাকে কোনো প্রকার সাহায্য করতে পারব না, দুঃখিত।”

মেয়েটা বুঝতে পারে এখানে কথা খরচ করে কোন লাভ হবে না। সে আর কোন কথা না বাড়িয়ে চুপিসারে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোও ধীরে ধীরে সেখান থেকে চলে যায়।

বারান্দা থেকে চলে যেতে যেতে বলে,” ওই যে লোককে ভাইয়া ভাইয়া করল, ওটা কি বউটার আপন ভাই নাকি?”
সাথেকার একজন বলে ওঠে,” ভাই-ই হয়তো। দেখলে না দুজনের মুখের কত মিল। বউটাও তো ভাইয়ের মতোই লম্বাচওড়া। এত সুন্দর আর গুণের মেয়েকে রেখে ধ্রুব এরকম একটা কাজ করল! বউটার জন্য মায়া লাগছে। ”
” যা বলেছ!”

কথা বলতে বলতে সবাই বাহিরের দিকে চলে যায়। বেলা গিয়ে বিছানায় বসে। ওয়াহাজ নিজেও গিয়ে বোনের পাশে বসে৷

বেলা তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,” ভাইয়া, সত্যি সত্যি ধ্রুব অন্যকাউকে বিয়ে করেছে? একটু পর সত্যিই আমার তালাক হবে? এতদিনের সম্পর্ক ছেড়ে আমি কি সত্যিই ভালো থাকব? আমাকে ভালো থাকতেই হবে তাই না, ভাইয়া? ও’কে ছাড়া তো আমি আমার জীবন চাইনি৷ ও’ কেন চাইল?”

ওয়াহাজ ঠোঁটে মিথ্যে হাসি নিয়ে আসে। বোনকে শক্ত করতে, সান্ত্বনা দিয়ে বলে, ” তুমি ছাড়া এ জগতে মোর কেহ নাই কিছু নাই গো………
এই লাইনটা, জাস্ট এই লাইনটা জীবন থেকে বাদ দিলেই মানুষ সুখী। তুই তোর জীবন থেকে এই লাইনটা বাদ দিতে পারলে তুই হবি পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী মেয়ে, ইন শা আল্লাহ । তোর এটা মাথায় রাখতে হবে যে, পৃথিবীর যে যা দেবে তাকে সেটাই ফিরিয়ে দিতে হবে। কোন একজনকে পৃথিবী বানিয়ে রাখা চলবে না। ”
***
বাড়ির বাহিরে বড়ো উঠোনটায় অনেক মানুষ জড়ো হয়েছে। কেউ এসেছে নতুন বউ দেখতে, কেউ এসেছে তালাক দেখতে, আবার কেউ সবগুলো কারণেই এসেছে।
কিছুক্ষণ আগে গ্রামের প্রধানও এসে বসেছেন। ওয়াজিহা,ওয়াহাজসহ বাড়ির সবাই বাহিরে এসে দাঁড়িয়েছে। দুই ভাগ হয়ে দাঁড়িয়েছে তারা। একভাগে ওয়াহাজ আর ওয়াজিহা এবং অন্যদিলে জাহিদা বেগম, রিমি, ধ্রুব এবং লিলি।

গ্রামের প্রধান সবার উদ্দেশ্যে কিছুক্ষণ কথা বলে ধ্রুবকে বলেন,” তুমি তোমার প্রথম স্ত্রীকে তালাক কেন দিতে চাইছ?”

ধ্রুব কিছুক্ষণ চুপ থেকে কথা সাজিয়ে নেয় তারপর বলে, ” আমার বেলাকে ভালো লাগছিল না। জানি না কেন দিনদিন ওকে অসহ্য লাগছিল। ওর কথাবার্তা, চালচলন ভালো লাগছিল না। তাই আমি দ্বিতীয় বিয়ে করেছি।”

সামনে থেকে একজন বলে ওঠে,” এগুলোই কারণ? তার মানে আপনার স্ত্রীর কোন ত্রুটি সেরকম আপনি পাননি? ”

বেলাকে উদ্দেশ্য করে লোকটা আবার বলেন,” আপনার কিছু বলার আছে? আপনিও কি তালাক নিতে প্রস্তুত?”

বেলা কী বলবে বুঝে উঠতে পারছিল না। কথা কেমন গলায় এসে বারবার ঠেঁকে যাচ্ছিল। ভাঙা ভাঙা গলায় বলে,” আমার চেহারা নষ্ট হয়ে গেছে জন্য আমার স্বামী সুন্দর একটা মুখের মেয়েকে বিয়ে করেছে যে বিদেশে হাজার হাজার টাকা উপার্জন করেছে। সবদিক দিয়ে পারফেক্ট বউ পেয়েছে কিন্তু সলিড ভালোবাসা সে আজ হারাবে৷ একদিন হাড়ে হাড়ে টের পাবে কী হারিয়েছিল, সেকেন্ডে সেকেন্ডে আফসোস করবে। আর আমার চলাফেরা নিয়ে কী যেন বলল! কীভাবে চলেছি জন্য সে পছন্দ করেনি সেটা আমি আসলেই বুঝতে পারছি না। সকাল থেকে রাত আটটা-নয়টা পর্যন্ত কাজে ব্যস্ত থাকতাম। সকালে উঠে থালা-বাসন মাজা, ঘর ঝাড়ু থেকে শুরু করে বাড়ির যাবতীয় কাজ আমাকে দেখতে হতো, করতে হতো। আমার বড় ভাই আমাকে একটা কাজ ঠিক করে দিয়েছিল সেটার পিছনে আমার কোনো বাধাধরা সময় দিতে হয়নি, যখন প্রয়োজন হয়েছে শুধু তখন সময় দিয়েছি। একটা মেয়ের মাসিক কিছু হাত খরচ প্রয়োজন হয়৷ সেটা নিজের স্বামী নিজে থেকে না দিলে তার থেকে চাইতে গেলে নিজেকে করুণার পাত্রী মনে হয়। সবসময় কারণ বলে টাকা চাইতে ইচ্ছে করে না। আমার ভরণপোষণের দায়িত্ব পুরোপুরি আমার স্বামীকে দিতে ইচ্ছে করেনি। মনে হয়েছে আমি যদি কিছু একটা করে নিজেরটা জন্য কিছু যোগার করতে পারি তাহলে তার ওপর চাপ কমবে কিন্তু তার এই এসব আমার চালচলনের কথার ব্যাপারে আমার আর কিছুই বলার নেই। আমি আমার চরিত্রের বিষয়ে একদম নিখুঁত। আমি আমার শরীরে নিজের ইচ্ছেতে বা অন্যের ইচ্ছেতে কোন দাগ লাগাতে দেইনি। ”

পাশে থেকে একটা লোক বলে ওঠে,” বাহ সুন্দর কথা বলেছেন। আমাদের নিজেদেরই উচিৎ মাসে একটা নির্দিষ্ট এমাউন্ট আমাদের স্ত্রীদের হাতে তুলে দেয়া। আচ্ছা যাই হোক, আপনার স্বামী যেমন আপনার বিষয়ে তার পক্ষ থেকে কিছু অভিযোগ জানালো আপনারও কি তেমন কোন অভিযোগ জানানোর আছে?”

বেলা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলে,” আমার মাঝে কোন ত্রুটি আছে বলেই আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে দিচ্ছে। আমি ছেড়ে দিচ্ছি না যে ওর মাঝে আমি কোন ত্রুটি দেখব। শুধু এতটুকু বলব যে আমার চেহারায় যদি কোন কমতি থাকে আর সেটার জন্যই যদি আমাকে ডিভোর্সী হতে হয় তাহলে সে বোকামি করল৷ আমি তার সংসারে সারাদিন রাত খেটেখুটে এইরকম হয়েছে। কই আমার শাশুড়ি তো কোনদিন বলে নাই যে বেলা যাও একটু রেস্ট নাও, এত কাজ তোমার করতে হবে না। আমি যদি অন্যদের মতো ভালো একটা জীবন পার করতাম তাহলে চেহারা খারাপ হতো না। ধ্রুব ভুলে গেছে আমার চেহারা দেখেই সে আমাকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আমার পরিবারে ত্রুটি দেখেও সে রাজি হয়েছিল শুধুমাত্র আমার চেহারা দেখে। তাই বলব আমাকে ছাড়ার এটা হয়তো মেইন কারণ না। আমার স্বামীর অন্যকাউকে ভালো লেগেছে। তার মন আমার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারেনি। অথচ সে নজর হেফাজত করলে আমাদের একটা সুন্দর সংসার থাকত। ”

আবার দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে সে। ভেতর থেকে যেন কথাগুলো বমির মতো পেটে চাপ দিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। বেলার এতগুলো কথা বলতে গিয়ে বারবার গলায় বেধে যাচ্ছে। তবুও আবার বলে,” আমার স্বামীকে ছাড়ার মতো সকাল পর্যন্তও কোনো কারণ ছিল না। আমি জানতামই না তার আরেক জীবন সম্পর্কে। তবে এখন আমি আর একটা রাতও এই বাড়িতে কাটাতে চাই না। এখান থেকে মুক্তি চাই। আমাকে আমার টাকা দিয়ে দিলে আমি এখান থেকে চলে যাব। যেখানে আমার সম্মান নেই সেখানে এক মুহূর্তও না। দোয়া রইল, আমাকে যে যা দিয়েছে বা দিচ্ছে তারা যেন দ্বিগুণ ফিরে পায়। ভালোবাসা দিলে ভালোবাসা ফিরে পাবে আর কষ্ট দিলে কষ্ট।”

ওয়াহাজকে প্রশ্ন করা হয়,” আপনি কি চান আপনার বোনের তালাক হোক? নাকি কোন শা*স্তি চান?”

ওয়াহাজ বোনের হাত ধরে বলে,” আপাতত কিছু করছি না। আমার বোনকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে নিয়ে যাব।”

ধ্রুব আর বেলাকে আবারও জিজ্ঞেস করে তারা সবকিছু ভুলে আবার একসাথে হতে চায় কি না। দুজনই অসম্মতি জানায়৷ অতঃপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পাশের মসজিদের ইমাম তালাকের ব্যবস্থা করে।

বেলা চুপ করে ওয়াহাজের হাত শক্ত করে ধরে আছে। তালাকের ঠিক আগ মুহূর্তে বেলা মাগরিবের পরের ঘটনা উপস্থাপন করে। সেখানে উপস্থিত নব্বই শতাংশ মানুষ রিমির ওপরে প্রচন্ড রেগে যায়। কেউ কেউ বলে ওঠে – ” এই মেয়ে প্রচন্ড বেড়েছে। তার কি সংসার করতে হবে না? তার স্বামীর আর তার যদি এরকম হয়? ওর ঘরে যদি কোনো পুরুষ আসে তাহলে কী করবে?”

আবার কেউ বলে ওঠে,” জাওয়াদের সাথে সাথে রিমিকেও পুলিশে দেয়া উচিৎ ছিল।”

সবাইকে থামিয়ে গ্রামের প্রধান বলে,” আপনি কি আপনার সাথে হওয়া এই অন্যায়ের কোন শা*স্তি চান? আপনি চাইলে এত মানুষের সামনে ওকে ক্ষমা চাওয়াব। আপনার পা ধরে মাফ চাইতে হবে তার।”

বেলার জায়গায় অন্যকেউ হয়তো বলত,” না, না ঠিক আছে। ওর ভুল ও বুঝতে পারলেই হবে। মাফ চাইতে হবে না।” কিন্তু বেলা সেটা না বলে, বলে,” আমি চাই রিমি আমার পা ধরে মাফ চাক, আমি মাফ করি আর না করি। ”

বেলার কথা শুনে জাহিদা বেগম, রিমি, লিলি, ধ্রুব সবার মুখটা কালো হয়ে যায়। এত মানুষের সামনে কারো পা ধরে মাফ চাওয়া চারটেখানি কথা না। কেউ তো ছোটো হওয়ার ভয়ে স্যরিটুকু বলতে চায় না আর এখানে পা ধরে মাফ চাইতে হবে।
রিমি বারবার অসহায়ের মতো মায়ের দিকে তাকাচ্ছে। জাহিদা বেগমের কিছুই করার নেই এখানে৷ যা হয়ে গেছে সেটা তো বদলে দেয়া যাবে না।

সবার কথামতো বেলার পা ধরে মাফ চাইতে হয় রিমির। রিমি যখন ধীরপায়ে এগিয়ে বেলার কাছে যাচ্ছিল তখন তার মনে হচ্ছিল তার প্রিয় মানুষ যদি ওরকম না করত ভুলবশত তাহলে তার সম্মান এত নষ্ট হতো না।
রিমি বেলার পা ধরে বসে পড়ে। ছন্নছাড়াভাবে বলতে থাকে,” ভুল, আমার ভুল হয়ে গেছে, হ্যাঁ আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে মাফ, আমাকে মাফ করে দেন। ”

রিমির কথা শুনেও বেলা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। মিনিট দুয়েক কে*টে যায়। বেলা চুপচাপ আছে দেখে রিমি বারবার বেলার দিকে তাকাচ্ছে। মনে হচ্ছে এখনই মাটি দুইভাগ হয়ে গেলে বোধ হয় ভালো হতো। শা*স্তি এতটা জঘ*ন্য হয় সেটা রিমির জানা ছিল না। বেলার মুখ দেখে তার হয়তো একটু হলেও তার খারাপ লাগছে।

বেলার শক্তপোক্ত মুখের আড়ালে একটা ভেঙেচুরে যাওয়া কান্নারত মুখ রয়েছে যেটা বেলা কাউকে দেখতে দিচ্ছে না। বেলা চোয়াল শক্ত করে আবার নরম হয়। বলে,” তোমাদের দেয়া কষ্ট আমার রূহ পর্যন্ত চলে গেছে। সামাজিকভাবে আমি তোমাকে মাফ করলেও আমার মন সায় দিচ্ছে না। আমার মন তোমাকে, তোমাদের মাফ করতে নারাজ। আমি এখন সবার সামনে মাফ করে দিলেও আল্লাহর কাছে বিচার রেখে যাচ্ছি। মজলুমের দোয়া হয়তো বিফলে যাবে না। আমার মতো অন্তত একটা দিন তোমার আসুক। সবাই সবার কৃতকর্মের শা*স্তি পাবে, পাবেই। আল্লাহ ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে মোটেও দেন না।”

বেলার কথাগুলো অন্যকারো কানে গিয়ে ধাক্কা খেলেও রিমির বুকে গিয়ে আ*ঘাত করছে৷ এই সময়টাতে এসে রিমির মনে হচ্ছে এতদিন সে যা করেছে বেলার সাথে সেটা খারাপ করেছে। রিমি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে,” স্বামী হারানোর সময়টা কেমন? অতি শোচনীয়! সহ্য করার মতো না? বেস্টফ্রেন্ডের বেস্টফ্রেন্ড অন্যকেউ হওয়ায় ছোটোবেলায় কান্নাকাটি করেছিলাম, বেলা কীভাবে স্বামীর অন্য স্ত্রীকে সহ্য করছে? তার কষ্ট হচ্ছে না? কান্না করছে না কেন?”

রিমি উঠে দাঁড়ায়। অচেতন মানুষের ন্যায় হেটে মাকে পার করে সোজা বাড়ির ভেতরে চলে যায়। বাহিরে থাকা সব মানুষ অজানা কারণে বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে তার কাছে এমনকি তার মা-ও।

কিছু সময় কেটে গিয়েছে। গ্রামের প্রধান ধ্রুবকে উদ্দেশ্য করে বলল,” উনি আপনার থেকে কত টাকা পাবে?”

ধ্রুব একবার বেলার দিকে তাকাল৷ বেলা তখনও ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে থাকায় দুজনের চোখে চোখ পড়ে যায়। সাথে সাথে দুজন চোখ নামিয়ে নেয়। ধ্রুব গ্রাম প্রধানের দিকে তাকিয়ে বলে,” কাবিনের সাত লাখ টাকা আর আমি বারো লাখ টাকা নিয়েছিলাম বিদেশ যাওয়ার জন্য, মোট ঊনিশ লাখ টাকা। যা গহনা ছিল সেগুলো আম্মা ফিরিয়ে দিয়েছে।”

লোকটা টিটকারি করে বলেন,” যে পাত্রে খাবার খেলে ওই পাত্রই ফূঁটো করলে! ভাই এর দাম তো তোমার দিতেই হবে।”

ধ্রুব আর কিছু বলে না। ব্যাগে থাকা টাকাগুলো সামনে থাকা টেবিলের ওপর রাখে। কয়েকজন মিলে টাকা গুণতে থাকে। ততক্ষণে তালাকের সময় হয়ে যায়। মুয়াজ্জিন সাহেব বলে ওঠেন,” তালাক হলো আল্লাহর অপছন্দনীয় একটা কাজ। যেটা বৈধ কিন্তু তবুও আল্লাহ এটা পছন্দ করেন না। আমি এখানে আপনার স্ত্রী বেলাকে মেনে নিতেও বলতে পারছি না কারণ পরিস্থিতি যেমন দেখছি আপনি দুইটা বউয়ের সমান দায়িত্ব পালন হয়তো করতে পারবেন না। আপনি যেভাবে আরেকজনকে বিয়ে করেছেন সেটা অতি ঘৃণীয় একটা কাজ। ”

অতঃপর কিছু সময় পর ধ্রুবকে বলা হলো সবাইকে সাক্ষী রেখে বেলাকে তালাক দিতে। লিলির মুখে হাসি ফুঁটে উঠেছে। অন্যদিকে বেলার সারা শরীর কাঁপছে। ভাইয়ের হাত শক্ত করে খাঁমচে ধরে আছে।

ধ্রুব বেলার দিকে না তাকিয়ে মাটির দিকে তাকায়। বেলা ছলছল চোখে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুব উচ্চারণ করে ‘তালাক’, বেলার কানে পৌঁছতেই নিজের ভর সহ্য করতে না পেরে পিছন দিকে পড়ে যেতে লাগলে ওয়াহাজ তাকে শক্ত করে ধরে। বেলা ভাইয়ের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। বুকের মধ্যে তার কালবৈশাখী ঝড় নয় এ যে সাইক্লোন শুরু হয়েছে সবকিছু ধ্ব*ংস করে দিচ্ছে।বুকে চিনচিন ব্যথা করছে, ভেতর থেকে কান্না গলায় এসে আটকে গিয়েছে।

ধ্রুব পরপর তিনবার তালাক দিয়ে দেয়। তারও গলা কাঁপছিল, মনে হচ্ছিল তার জীবনে থাকা শ্রেষ্ঠ একটা মানুষ আজ তার জন্য নিষিদ্ধ হলো।

ধ্রুবর বলা তিন তালাক শুনে বেলা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। পা ভেঙে আসছে তার, শরীর কাঁপছে। ভাইকে কান্না আটকানো গলায় বলে,” ভাইয়া, আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে, বুকটা ভারী ভারী লাগছে, ওই লোকটা আজ থেকে আমার জন্য নিষিদ্ধ হয়ে গেল! সে আমার ব্যক্তিগত মানুষ হয়ে কেন থাকল না? প্রিয় মানুষগুলো কেন থেকে যায় না? তারা কি জানে না তাদের অভাবে আমরা তিলেতিলে শেষ হয়ে যাই? আত্মহ*ত্যা অপরা**ধ অথচ বেঁচে থাকা কত কঠিন হয়ে গেল আমার জন্য!”

#চলবে……

❌ কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলো।❌

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে