#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_10
#Ariyana_Nur
চুলোর উপর হাড়িতে বসানো পানি টগবগ করে ফুটছে।মাঝে মাঝে পানির ছিটে এসে গরম চুলোয় পরাতে কিছুটা আওয়াজ সৃষ্টি হচ্ছে।কিন্তু সেদিকে রাই এর কোন খেয়াল নেই।সে চুলোয় পানি বসিয়ে আনমনে কফির মগের মধ্যে কফি আর চিনি নিয়ে মিক্স করছে আর স্বপ্নের কথা ভাবছে।
—কিরে কি ভাবছিস?
হঠাৎ ফাইজার কথা শুনে রাই চমকে উঠল।ফাইজাকে সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা তুতলিয়ে বলল,
—ক-কই?কিছু না তো।
রাই এর কথা শুনে ফাইজা ভ্রু কুচকে রাই এর দিকে তাকিয়ে বলল,
—বললেই হল কিছু না।কিছু যদি নাই ভাবিস তাহলে দাড়িয়ে দাড়িয়ে গ্যাস অপচয় করছিস কেন?
ফাইজার কথা শুনে রাই হাতে থাকা কফির মগটা রেখে তড়িঘড়ি চুলো বন্ধ করল।কিছুটা মিনমিনে গলায় বলল,
—কফি কবরো তো তাই একটু বেশি করে পানি ফুটিয়ে নিচ্ছিলাম।
রাই এর উওর ফাইজার পছন্দ হল না।ফাইজা কপালে ভাজ ফেলে বলল,
—তাই?
রাই,ফাইজার কথাটা যেন শুনেও শুনলো না।সে কফি বানাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।রাইকে চুপ থাকতে দেখে ফাইজা পূনরায় জিগ্যেস করল,
—কিরে কথা বলছিস না কেন?
রাই কফির মগটা হাতে নিয়ে ব্যাস্তটা দেখিয়ে বলল,
—তোর ভাইয়া কফির জন্য বসে রয়েছে আসছি।
কথাটা বলে এক মুহূর্ত দেড়ি না করে কিচেন থেকে বের হয়ে গেলো।রাই যে ফাইজার কথা এড়িয়ে চলে গেলো সেটা ফাইজার বুঝতে ভূল হলো না।
_________
বেডের মধ্যে কাচুমাচু হয়ে বসে রয়েছে দিপা বেগম।তার সামনেই ট্রেতে রয়েছে গরম সুপের বাটি।দিপা বেগম গরম সুপের বাটির দিকে তাকিয়ে বার বার শুকনো ঢোক গিলছে আর অসহায় চোখ পাশে টুলের উপর বসে ফাহাদ এর দিকে তাকাচ্ছে।কিন্তু সেদিকে ফাহাদ এর কোন ভাবান্তর নেই।ফাহাদ এক মনে তার হাতে থাকা ফোন এর মধ্যে স্কল করতে করতে বিরক্ত হয়ে বলল,
—ফুপি তোমার এই ভীতু চেহারা দেখতে দেখতে আমি টায়ার্ড হয়ে গেছি।প্লিজ এই নাটক অফ করো তো।অন্তত তুমি তো আমার সাথে একটু নরমাল ব্যবহার কর।
ফাহাদ এর কথা শুনে দিপা বেগম এর চোখ কোটার বাহিরে বের হয়ে আসার উপক্রম হয়ে গেলো।মনে মনে বলতে লাগল,
—বলে কি এই ছেলে?এর সাথে করবো নরমাল ব্যবহার? এ আমার সাথে যে ব্যবহার করেছে ভাবতেই আমার শরীর কেপে উঠে।মনে তো হয় না এর সাথে আর কোনদিন নরমাল ব্যবহার করতে পারবো।
সেদিন ফাহাদ দিপা বেগম এর হাতের এর উপর ছুড়ি চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি।তার থেকে কথা গোপন করার জন্য জোর করে গরম সুপ তার মুখের মধ্যে ঢেলে দিয়েছে।সুপ যাতে ফেলে দিতে না পারে তার জন্য মুখ চেপে ধরে রেখেছি।তার কাজে দিপা বেগম গলা কাটা মুরগির মত ছটফট করেছে।পুরোনো কথা ভাবতেই দিপা বেগম এর শরীর পুনরায় কাটা দিয়ে উঠল।
—মনজুর মায়ের গ্রামের বাড়ির এড্রেস জানো?
হাতে থাকা ফোনটা পকেটে রাখতে রাখতে কথাটা বলল ফাহাদ।ফাহাদ এর কথা শুনে দিপা বেগম কিছুটা নড়েচড়ে বসল।ফাহার এর দিকে তাকিয়ে দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে না করল।মানে সে জানে না।সাথে সাথে ফাহাদ এর মুখটা রাগে লাল হয়ে গেলো।ফাহাদ এর রাগি চেহারার দিকে তাকিয়ে দিপা বেগম শুকনো ঢোক গিলে মিনমিনে গলায় জিগ্যেস করল,
—কি হয়েছে ফাহাদ বাবা?মনজুর মায়ের যে ঠিকানা দিয়েছি সেখানে তাকে পাওনি?
ফাহাদ দিপা বেগম এর কথা শুনে রাগি গলায় বলল,
—না পাইনি।আমার লোক যাওয়ার আগেই সে পালিয়েছে।আর এসব হয়েছে তোমার জন্য।তুমি যদি আমার থেকে কথাটা গোপন না করতে তাহলে কিছুই হত না।
কথাগুলো বলে ফাহাদ রাগ দেখিয়ে সেখান থেকে হনহন করে চলে গেলো।
__________
আলিশান বিশান বড় এক কামরার মধ্যে ফাহাদ এর একটা ছবির উপর ছুড়ি দিয়ে একের পর এক দাগ কাটছে একটি মেয়ে।মুখে রয়েছে তার রহস্যময়ী হাসি।মেয়েটি দাগ কাটছে আর বিরবির করে বলছে,
—খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার তাই না জান?আমার ও হয়েছিলো যখন তুমি আমার ভালোবাসা প্রত্যাক্ষান করে আমায় ফিরিয়ে দিয়েছিলে।আমার কষ্টটা তখন অনুভব করতে না পারলেও এখন তো বুঝতে পারছো সেদিন আমার কতটা কষ্ট হয়েছিলো।তুমি জানো জান?তোমার কষ্ট দেখলে,তোমার ঐ অসহায় ফেসটা দেখলে এখন আর আমি আগের মত কষ্ট পাই না।কেন যেন মনের মধ্যে একটা শান্তির স্রোত বয়ে যায়।তুমি জানো?আমি এখন চাই খুব করে চাই তুমি আরো জ্বলে,পুড়ে ছারখার হও।তোমার পাখির বিরহে এতোটাই পুড়ো যে,তোমার মনের ঘরে তোমার পাখির জন্য তিলে তিলে গড়ে উঠা সব সুপ্ত অনুভূতি তার বিরহে জ্বলতে জ্বলতে বিলিন হয়ে যায়।তার পর না হয় আমি এসে তোমার সেই পোড়া ঘরে নতুন করে আমার পাগলাটে ভালোবাসা দিয়ে একটু একটু করে গড়ে তুলব।যেখানে থাকবে শুধু আমার জন্য সকল অনুভূতি।শুধু আমার জন্য।
___________
অবশেষে তীব্রর অপেক্ষার প্রহর শেষ করে রাই কফির মগ হাতে নিয়ে রুমে প্রবেশ করল।রাই কে আসতে দেখেই তীব্র এমন একটা ভাব নিয়ে ল্যাবটবের দিকে তাকিয়ে রইল, মনে হচ্ছে সে খুব মন দিয়ে নিজের কাজে ডুবে রয়েছে।আশেপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই।রাই গুটিগুটি পায়ে তীব্রর সামনে গিয়ে কাপাকাপা হাতে কফির মগটা তীব্রর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
—আপনার কফি।
তীব্র ল্যাবটবের দিকে চোখ রেখেই ভাব নিয়ে বলল,
—তুমি তাহলে কফি নিয়ে এসেছো। আমি তো মনে করেছিলাম কফি বানাতে আজকের দিন পার হয়ে যাবে।
তীব্র কথাটা বলে ল্যাপটবের থেকে চোখ সরিয়ে মাথা উচু করে রাই এর চেহারা দিকে তাকালো।তীব্রর কথার প্রতি উওরে রাই কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।তীব্র রাইকে একটা মুচকি হাসি উপহার দিয়ে রাই এর হাত থেকে কফির মগটা নিতে গেলেই তীব্র হাসিখুশি মুখটা মলিন হয়ে গেলো।রাই এর হাতের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গম্ভীর গলায় বলল,
—হাতে কি হয়েছে?
তীব্রর গম্ভীর গলার কথা শুনে রাই নিজের হাতের দিকে তাকালো।হাতের এক জায়গায় কিছুটা লাল হয়ে গেছে।রাই মাথায় জোর দিয়ে মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো কিভাবে হাতের এখানে লাল হয়েছে?কিন্তু কোন ভাবেই মনে করতে পারলো না।রাই এর ভাবনার মাঝেই তীব্র নিজের কোল থেকে ল্যাপটবটা সাইডে রেখে উঠে দাড়ালো।বেড টেবিলের ড্রয়ার খুলে কিছু একটা খুজতে লাগলো।রাই গুটিগুটি পায়ে তীব্রর সামনে গিয়ে কফির মগটা বেড টেবিলের উপর রেখে কোন কথা না বলে চলে আসতে নিলেই তীব্র রাই এর হাত ক্ষপ করে ধরে ফেলল।তীব্রর কাজে রাই হকচকিয়ে গেলো।
—এতো ইডিয়েট কেন তুমি?একটা মানুষ নিজের প্রতি নিজে এতোটা কেয়ারলেস কি করে হয়?কফি করতে পারোনা মুখ ফুটে বললে কি হত তোমার?তার জন্য কি আমি তোমায় শুলে চড়াতাম?ইডিয়েট, স্টুপিট একটু নিজের খেয়াল রাখতে পারো না?
তীব্রর ঝাঝালো গলার কথা শুনে রাই এর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।সামান্য একটা বিষয় কে তিল থেকে তাল বানিয়ে কোথার থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তীব্র।রাই, তীব্রর দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বলে উঠল,
—আপনি কি কচু খেয়েছেন?
#চলবে,