#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_06
#Ariyana_Nur
রাস্তা দিয়ে হেলতে দুলতে হেটে চলেছে ফাহাদ।কয়েক বার হোচট খেয়ে পরে যাওয়াতে হাতে,পায়ে অনেক যায়গায় ছিড়ে গিয়ে রক্ত জমাট বেধে রয়েছে।তার পরেও তার চলার গতি থামছে না।যেদিকে চোখ যাচ্ছে সেদিকেই হেলতে দূলতে হেটে চলেছে সে।ফাহাদের জ্ঞান ফেরার পর এক মুহূর্ত দেড়ি না করে সে রাই কে খুজতে বের হয়ে গেছে।আত্মীয়-স্বজন এর বাড়ি হতে শুরু করে আলি-গলি এমন কোন জায়গা নেই যেখানে ফাহাদ রাইকে না খুজেছে।সারাদিন পেটে দানাপানি না দিয়ে হন্য হয়ে ফাহাদ নিজের লোকদের কে নিয়ে রাইকে খুজেছে।দিন শেষে রাই এর কোন খোজ খবর না পেয়ে নিজের কষ্টগুলো থেকে পরিত্রান পাবার জন্য মদের সাহারা নিয়েছে।ফাহাদ এর এই অবস্থা দেখে তার লোকেরা হতভম্ব হয়ে রয়েছে।যেই ছেলে দম্ভীক ভাবে সব সময় চলাফেরা করে সেই ছেলেকে এই রুপে দেখে তারা যেন কথা বলার ভাষাই হাড়িয়ে ফেলেছে।
ফাহাদ নেশার ঘরে এলোমেলো পা ফেলছে আর বিরবির করে বলছে…….
—পাখি!আমার রাই পাখি!কোথায় ঊড়ে গেলে তুমি?প্লিজ আমার কাছে ফিরে এসো না।প্রমিস করছি আর তোমায় কষ্ট দিবো না।এই দু’দিনে আমি বুঝে গেছি তুমি আমার জীবনে কি।প্লিজ ফিরে এসো।আমি গুড বয় হয়ে যাবো।একটুও তোমায় আর কষ্ট দিবো না।
কথাগুলো বলতে বলতে ফাহাদ হোচট খেয়ে পরে গেলো।সাথে সাথেই তার একজন লোক ফাহাদকে উঠে বসতে সাহায্য করল।ফাহাদ তার লোকের হাত ধরে বলল……..
—রনি আমার রাই পাখিকে এনে দে না।তাকে ছাড়া আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছে রে।আমি নিশ্বাস নিতে পারছিনা।দম কেমন আটকে আটকে আসছে।রনি আমি না হয় বেড বয় তুই তো গুড বয় তুই একটু আমার রাই পাখিকে বলনা আমার কাছে চলে আসতে।প্রমিস করছি রাই পাখি আমার কাছে চলে আসলে আমি সত্যি সত্যি গুড বয় হয়ে যাব।তাকে একটুও কষ্ট দিবো না।
রনি তীব্রকে উঠানোর চেষ্টা করে বলল……
—ভাই আপনার নেশা চড়ে গেছে বাসায় চলুন।আমরা ঠিক ভাবিকে খুজে বের করবো।
ফাহাদ,রনির হাত ছেড়ে দিয়ে চেচিয়ে বলল…….
—না আমি কোথাও যাবো না।আমি আমার রাই পাখিকে না নিয়ে বাসায় এক পা ও রাখবো না।রাই পাখি!(চিৎকার করে)কোথায় তুমি?প্লিজ চলে আসো?আমি আর পারছিনা তোমাকে ছাড়া থাকতে?প্লিজ চলে আসো রাই পাখি।প্লিজ কাম ব্যাক।
কথাগুলো বলতে বলতে ফাহাদ রাস্তার মধ্যেই সুয়ে পরল।ফাহাদকে দেখলে যে কেউ বলবে ফাহাদ একটা পাগল।হ্যা ফাহাদ পাগল।সে তার রাই পাখির জন্য পাগল।
ফাহাদ এর পাগলামি দেখে রনির চোখে জল চলে এল।একটা পাথরের মত মানুষ কাউকে পাগলের মত ভালো না বাসলে সে কখনো এমন পাগলো করতে পারে না।রনি,ফাহাদের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল…….
—আমি জানি ভাই আপনি ভাবিকে ভীষন ভালোবাসেন।আপনার মত কেউ ভাবিকে ভালোবাসতে পারবে কিনা সেটা আমি জানি না।কিন্তু আপনি যেভাবে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতেন নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে আগলে রাখতে চান তেমন ভয়ংকর ভালোবাসাকে ভাবি কেন কোন মেয়েই পছন্দ করবে না।
তাই তো ভাবি এই ভয়ংকর ভালোবাসা থেকে মুক্তি পেতে পালিয়েছে।
__________
তীব্রর সামনে ভয়ে জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে রাই।চোখে এসে ভীড় করেছে নোনা জল।তীব্র সেটা দেখেও যেন দেখছে না।সে তার তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাই এর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।মনে হচ্ছে তীব্র তার তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়েই রাইকে ভস্ম করে দিবে।
—কাকে বলে বাসা থেকে বের হয়েছো?
তীব্রর শীতল গলার কথা শুনে রাই চোখ তুলে তীব্রর দিকে তাকালো।কিন্তু বেশিক্ষন আর তীব্রর ঐ রাগি চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলো না।কয়েক সেকেন্ড পরই সে চোখ নামিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।রাই কে চুপ করে থাকতে দেখে তীব্র পুনরায় বলল……..
—কি হল কথা বলছো না কেন?কাকে বলে তুমি বাসা থেকে বের হয়েছো?
তীব্রর কথার প্রতিউওরে রাই চুপ করে দাড়িয়েই রইল।কিই বা উওর দিবে সে।সে তো তাকে ঝামেলা মুক্তি করতেই কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে চলে এসেছে।আজ দুপুরে পারিবারিক ভাবেই রাই আর তীব্রর বিয়েটা হয়েছে।রাই তো প্রথমে তার আর তীব্রর বিয়ের কথা শুনে আকাশ থেকে পরেছিলো।রাই বাসার সবাইকে সবটা জানিয়ে তাদের ভূল ধারনা ভাঙতে চেয়েছিলো।কিন্তু সে ফাইজার জন্য পারেনি।ফাইজা হাত জোর করে নিজের পরিবারের সম্মান বাচাতে রাইকে সব সত্যি সবাইকে জানাতে নিষেধ করেছে।এলাকায় তীব্রর বাবার বেশ ভালোই নাম ডাক রয়েছে।সকাল হতে না হতেই ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পরেছে ফরিদ খান এর ছেলে একটা মেয়েকে বিয়ের আসন থেকে তুলে নিয়ে এসেছে।তার উপরে ফরিদ খান এলাকার কয়েকজন গন্যমান্য ব্যাক্তিদের কে বিয়েতে থাকতে বলেছেন।এক রাই এখানে এসে তাদের নাম খারাপ করেছে।দ্বিতীয় যদি বিয়েটা না করে তাহলে তাদের মাথা আরো নিচু হয়ে যাবে।তাই রাই না চাইতেও বাধ্য হয়ে বিয়েটা তার করতে হয়েছে।
রাই কে চুপ করে থাকতে দেখে তীব্র ভীষণ ক্ষেপে গেলো।দু’কদম বাড়িয়ে রাই এর বাহু শক্ত করে চেপে ধরে ঝাঝালো গলায় বলল……..
—কিছু জিগ্যেস করছি শুনতে পারছো না।উওর দাও।
তীব্র এমন আচরনে রাই কেপে উঠল।শক্ত করে বাহু চেপে ধরাতে ভীষন ব্যাথা লাগছে।রাই চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কাপা কাপা গলায় বলল……
—কাউকে বলে না।
—কেন?
তীব্রর পাল্টা প্রশ্নে রাই এবার আর দেড়ি করল না।সাথে সাথেই উওর দিল……..
—আমার এক দূরসম্পর্কের আত্মীয় এর বাসায় জাবার জন্য।
—কেন?
তীব্রর প্রশ্নে রাই মুখ তুলে তীব্রর দিকে তাকালো।সাথে সাথে মাথা নিচু করে কিছুটা সাহস নিয়ে বলল…….
—আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই।
রাই এর কথাটা তীব্রর পছন্দ হল না।তীব্র রাই এর বাহু আরেকটুকু শক্ত করে চেপে ধরে রাগি গলায় বলল……..
—ফাজলামি কর।তোমার ইচ্ছেতেই কি সব হবে নাকি?রাত বেড়াতে পাগলের মত সবাইকে ঘুড়াচ্ছো এটা কেমন ইচ্ছা তোমার?আমাদের কে কি মানুষ মনে হয় না?একবারো ভাবলে না আমাদের কথা?
বলা নেই কওয়া নেই হুট করেই বাসা থেকে উধাও।একবারো ভাবতে পারছো যদি কোন অঘটন ঘটে যেত তখন কি হত?
রাই কিছু না বলে নিরবে চোখের জল ফেলছে।তীব্র রাই এর বাহু ছেড়ে দিয়ে বড় করে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে রাই এর দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে মিইয়ে যাওয়া গলায় বলল……..
—তুমি কি কোন ভাবে এই সম্পর্কে থেকে পালাতে চাচ্ছো?
রাই হাত জোর করে ডুকরে কেদে উঠল।আটকানো গলায় বলল…….
—আমায় ক্ষমা করবেন।আমি আপনার জীবনটা নষ্ট করতে চাইনি।বিশ্বাস করুন আমি এই বিয়েটা আটকাতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি।বিয়ের আসন থেকে পালিয়ে আপনার বাসায় এসে এমনিতেই আপনাদের মান-সম্মান নষ্ট করেছি।আমি বিয়েটা আটকানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু পরিনি।এক প্রকার বাধ্য হয়েই বিয়েটা করেছি।আমায় ক্ষমা করবেন।আমি আপনার জীবনটা নষ্ট করে দিলাম।রাই চোখের পানি পানি মুছে নাক টেনে বলল……
—চিন্তা করবেন না।আমি কখনো আপনাদের মাঝে এসে দাড়াবো না।কখনো আপনার কাছে স্ত্রী অধিকার নিয়ে আসবো না।আমার জন্য কখনো আপনাদের কোন ঝামেলা হবে না।আমিই তো ঝামেলার মূল কারন।না থাকবো আমি না থাকবে ঝামেলা।আমি মরে গেলে কিছু একটা বলে সবাইকে বুঝ দিয়ে দিবেন।আমার আগে পরে তো কেউ নেই তাই কোন সমস্যা হবে না।আমি মরে গেলে আপুকে আমার তরফ থেকে সরি বলে দিবেন।আমার জন্য আপু আপনাকে ভূল বুঝলো।আপনাকেও সরি আমার কারনে আপনাদের মাঝে ঝামেলা হবার জন্য।আমি…….।
আর কিছু বলার আগেই রাই এর গালে সজোরে একটা থাপ্পড় পরল।রাই গালে হাত রেখে কাপাকাপা গলায় বলে উঠল……
—ফাইজু!তুই…..?
#চলবে,
(ভূলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)