#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_05
#Ariyana_Nur
বেলকনিতে বসে একের পর এক সিগারেট শেষ করে চলেছে একজন লোক।সিগারেট এর ধোয়া ঊড়ানোর সাথে সাথে নিজের মনের ভিতরের জমে থাকা কষ্টগুলো সে ঊড়িয়ে দিতে চাচ্ছে।কিন্তু বরাবরই সে ব্যার্থ হচ্ছে।বার বার তার চোখের সামনে রাই এর অস্রুভেজা মুখটা ভেসে উঠছে।তাতেই যেন তার ভিতরটা ভেঙেচুড়ে যাচ্ছে।মনের মধ্যে রক্ত ক্ষরন হচ্ছে।লোকটি হাতে থাকা সিগারেটে শেষ টান দিয়ে নিচে ছুড়ে মাড়লো।নাক মুখ দিয়ে ধুয়ো ঊড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বিরবির করে বলল…….
—আমি পারছি না চাঁদ।কিছুতেই নিজেকে আটকে রাখতে পারছি না।তোমার ঐ অস্রুভেজা চেহারা দেখে ইচ্ছে করে সব বাধা পেরিয়ে ছুটে তোমার কাছে চলে যাই।তোমাকে নিজের বক্ষ পিঞ্জরে এমন ভাবে আগলে নেই যাতে কোন কষ্ট তোমার ছুতে না পারে।কিন্তু…..।তা তো আমি করতে পারবো না চাঁদ।তাতে উল্টো তুমিই আমায় ভূল বুঝে দূরে চলে যাবে।আমি কি করবো চাঁদ?কি করবো?না তোমায় চোখের জল দেখতে পারছি আর না তোমার চোখের জল মুছে দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিতে পারছি।
কেমন এক দোটানায় আমায় ফেলোছো তুমি?এই যন্ত্রণা থেকে কবে আমার মুক্তি মিলবে চাঁদ? কবে মুক্তি মিলবে?
________
খোলা জানার পাশে বসে চাঁদ শূন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের জীবনের হিসেব খাতা মিলাতে ব্যাস্ত রাই।নিজের ভাগ্য দেখে নিজেই তাস্যিল্য হাসছে সে।কি ছিলো আর কি হয়ে গেলো?মাথার উপর থেকে বাবা,মা নামক ছাড়াটা সরে গেলে ঝকঝকে রঙিন দুনিয়া যে মুহূর্তেই অন্ধকারে পরিনত হয়ে যায় তা তার বুঝা হয়ে গেছে।ধরনীর বুকে তো কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে আলোর রশ্নী ফুটে উঠবে।কিন্তু তার এই অন্ধকার দুনিয়ায় কখনো কি এক ঝলক আলোর দেখা মিলবে কি না সেটা রাই এর অজানা।
_________
রুমের মধ্যে অচেতন অবস্থায় পরে রয়েছে ফাহাদ।তার পাশে বসে মরা কান্না জুড়ে দিয়েছে দিপা বেগম।কলিজার টুকরো ভাতিজাকে এভাবে অচেতন অবস্থায় পরে থাকতে দেখে তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।দিপা বেগম একটু পর পর ফাহাদ এর গালে হালকা চাপড় মেরে ফাহাদ এর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছে।
—ও বাবা!ও আমার ফাহাদ বাবা!বাবা চোখটা খোল না বাবা।দেখ তোর ফুপি তোকে ডাকছে।একবার একটু ফুপিকে চোখ খুলে দেখনা।বাবা!ও বাবা!চোখটা খোল নারে।তোকে এভাবে পরে থাকতে দেখে ফুপির অনেক কষ্ট হচ্ছে রে বাবা।প্লিজ বাবা একবার চোখটা খোল বাবা?ফুপির কথাটা একটু শোন না বাবা।
রাহিম ইসলাম রুম জুড়ে পায়চারি করছে আর ভাবছে কি করবে?এক দিকে নিজের ভাই এর শেষ চিহ্ন তার ভাতিজি নিখোজ অপর দিকে নিজের স্ত্রীর কলিজার টুকরো ভাতিজার করুন দশা।সব দিকের টেনশনে যেন তার মাথা ভাড় হয়ে যাচ্ছে।তার উপরে একটু পর পর দিপা বেগম এর মরা কান্নার কারনে মাথা খাটিয়ে কোন উপায় বের করতে পারছে না।রাহিম ইসলাম দিপা বেগম কে এক রাম ধমক দিয়ে বলল…..
—এমন মরা কান্না জুড়ে দিয়েছো কেন?তোমার ভাতিজা কি মরে গেছে?আদিখ্যেতা দেখলে আর বাচি না।একে দেখতেই বুঝা যাচ্ছে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পরে রয়েছে।নেশা কাটলে দেখবে এমনিতেই উঠে যাবে।তোমায় আর কষ্ট করে ডাকতে হবে না।এদিকে বাড়ির মেয়ে নিখোজ।কি করবো কিছুই মাথায় ঢুকছে না।কেন যে তোমার কথা শুনে তোমার এই আধ পাগল ছেলেটার সাথে মেয়েটার বিয়ে ঠিক করতে গেছিলাম।দিনকাল এমনিতেই ভালো না মেয়েটা কোথায় আছে কি করছে কে জানে।
দিপা বেগম রাহিম ইসলাম এর কথা শুনে চটে গেলো।রাগি গলায় বলল…….
—মুখ সামলে কথা বল।আমার ফাহাদ বাবা খুব ভালো বুঝলে।ও ঐসব ছাইপাস গেলে না।তোমার ঐ মুখপোড়া ভাতিজীর রাগ আমার উপর না ঝেড়ে তাকে খুজে তার উপর ঝাড়ো না।সে তো নিজের আশিক এর হাত ধরে পালিয়েছে তার জন্য তুমি যে কেন আদিখ্যেতা দেখাচ্ছো সেটাই তো আমি বুঝতে পারছি না।আগেই বলেছি এই মেয়েকে বাসায় জায়গা দিও না।শুনোনি তো আমার কথা।এখন বেশ হয়েছে।তোমার মুখে চুনকালি মেখে পালিয়েছে।এবার দেখি সমাজে তুমি মুখ দেখাও কিভাবে।যত্তসব নিজে আদিখ্যেতা দেখিয়ে আমাকে বলছে আমি আদিখ্যেতা দেখাচ্ছি।
রাহিম ইসলাম রাগ দেখিয়ে দিপা বেগম এর সাথে কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।এর সাথে কথা বলতে গেলে যে এ তুরকালাম বাধিয়ে তার মাথা আরো খারাপ করে দিবে সেটা তার অজানা নয়।
_________
ফরিদ খান এর মুখোমুখি দাড়িয়ে রয়েছে তীব্র।রাগে তার শরীর রি রি করছে।সকাল সকাল তীব্রকে,রাইকে নিয়ে নানান কথা শুনিয়েছে ফরিদ খান।তার সাথে নতুন করে সুর তুলেছে আজই রাইকে তার বিয়ে করতে হবে।তীব্র নিজের রাগকে কন্টোল করে স্বাভাবিক গলায় বলল……..
—এটা কোন কথা বাবা?আপনি আমাকে না জানিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করছেন?বিয়েতে আমার মতামত আছে কিনা সেটা কি একবারো জেনেছেন?
তীব্রর কথা শুনে ফরিদ খান হুংকার দিয়ে বলল……..
—আমি তোমার বাবা তুমি আমার না।কি করবো না করবো তা আমার তোমার থেকে পারমিশন নিয়ে করতে হবে না।আমার যেটা ভালো মনে হচ্ছে আমি সেটা করছি।একটা মেয়েকে বিয়ের আসন থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছো।মেয়েটা তোমার ভরসায় সব ছেড়ে বিয়ের আসন থেকে পালিয়েছে।তাকে বিয়ে না করে কি এভাবেই বাসায় বসিয়ে রাখবে?একবারো ভেবে দেখেছো লোকে কি বলবে?আমাদের মান-সম্মান এর কি হবে?তুমি না হয় ছেলে মানুষ কিন্তু রাই?রাই তো একটা মেয়ে।বিয়ের আসন থেকে পালিয়ে আশা মেয়ে যদি এভাবেই তার প্রেমিকের বাসায় পরে থাকে তাহলে ভাবতে পারছো লোকে তাকে নিয়ে কি কি আজে বাজে কথা রটাবে?আমি বুঝতে পারছিনা,যাকে বিয়ের আসন থেকে তুলে নিয়ে এসেছো তাকে তুমি বিয়ে করতে চাচ্ছো না কেন?তোমার কথা শুনে কেন যেন মনে হচ্ছে তুমি তাকে ধোকা দিতে চাচ্ছো।ভূলেও সে সব চিন্তা মাথায় এনো না।তাহলে আমি ভূলে যাব তুমি আমার ছেলে।আমার কাছে সব ভূলের ক্ষমা হলেও ধোকা বাজদের জন্য কোন ক্ষমা নেই।আমি তোমাকে দুটো অপশন দিচ্ছি।এক রাইকে আজ বিয়ে করবে তা না হলে রাই যেখান থেকে এসেছে আমি নিজে গিয়ে রাইকে সেখানে দিয়ে আসবো।
ফরিদ খানের কথা শুনে তীব্র মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল।কি জবাবই দিবে সে।ফরিদ খান যা বলছে তা তো আর মিথ্যে নয়।বরং সেই সবাইকে মিথ্যে বলেছে।কোন মুখে তীব্র বলবে তার বাবাকে কেন সে রাইকে বিয়ে করতে চায় না।তীব্রর কাছে বিয়ে কোন ছেলে খেলা নয়।তীব্র চায় না কাগজ, কলমে সাইন করে কাগজ, কলমের বর,বউ সেজে সব ঝামেলা মিটিয়ে নিতে।পরে ইচ্ছে হলে একসাথে থাকবে না হলে যে যার রাস্তা দেখে নিবে।তীব্র না হয় পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে সব মেনে নিবে কিন্তু রাই?রাই ভাববে তীব্র তাকে দয়া করে করুনা করে বিয়ে করেছে।তাছাড়া বিয়ের মত পবিত্র একটা সম্পর্কে তীব্র দুজনের বিনা অনুমতিতে গড়তে চাচ্ছে না।আর রইল রাইকে তার বাসায় পাঠানো।সেটা তো কোন ক্ষেত্রেই করা যাবে না।তীব্র চায় না দ্বিতীয় বার ঐ আজাব খানায় গিয়ে রাই নিজের সুন্দর জীবনটা নষ্ট করুক।
তীব্রর ভাবনার মাঝেই ফরিদ খান বলে উঠল………
—তোমার ভাবাভাবি শেষ হলে ফ্রেস হয়ে ড্রয়িং রুমে চলে এসো।কি করবে সেটা না হয় সবার সামনেই জানিও।
ফরিদ খান দরজার দিকে পা বাড়াতেই তীব্র করুন কন্ঠে বলল……..
—বাবা আমার কথাটা একটু শুনুন।আমি এই বিয়…….।
তীব্র আর কিছু বলার আগেই ফরিদ খান তীব্রর দিকে না ঘুড়ে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল…….
—আমি তোমার কোন কথাই শুনবো না তীব্র।আমি তোমায় আগেও বলেছি এখন আবার বলছি।তোমার কাছে মাত্র দুটি অপশন আছে হয় রাইকে আজ বিয়ে করবে নয়ত রাইকে আমি তার বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবো।আর এটাই আমার শেষ কথা।
কথাটা শেষ করেই ফরিদ খান রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ফরিদ খান রুম থেকে বের হতেই তীব্র দুই হাতে নিজের চুল টেনে ধরল।মাথাটা তার ভিষন ব্যাথা করছে।কি করবে সে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।সে কি রাই কে বাচানোর জন্য বিয়েটা করবে নাকি পরিস্থিতি মোকাবেলা না করে কাপুরুষের মত এখান থেকে পালাবে?
#চলবে,
(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)