মেঘের ভেলায় চড়ে পর্ব-০৪

0
809

#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_04
#Ariyana_Nur

বেডের মধ‍্যে কাচুমাচু হয়ে বসে রয়েছে রাই।তার সামনে চেয়ারে বসে তীক্ষ্ম চোখে রাইকে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে ফরিদ খান।তার কিছুটা দূরেই বাসার সকলে দাড়িয়ে রয়েছে।রাই বার বার আড় চোখে ফাইজা দিকে তাকাচ্ছে।ফাইজা প্রতিবারই চোখ দিয়ে রাইকে আস্বস্ত দিচ্ছে।

—কি নাম তোমার?

ফরিদ খানের গম্ভীর গলার কথা শুনে রাই একপলক তার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে শুকনো ঢোক গিলে তুতলিয়ে বলল……

—জ্-জ্বি আ-আমার নাম রাইজা ইসলাম।ডাক নাম রাই।

ফরিদ খানঃবাড়িতে কে কে আছে তোমার?

ফরিদ খানের কথা শুনে রাই চুপ করে রইল।কি উওর দিবে সে?বাবা,মা তো তাকে অনার্থ করে অনেক আগেই চলে গেছে।চাচা,চাচি থাকতেও তো আজ তারা নেই।রাই কে চুপ করে থাকতে দেখে ফরিদ খান আবার বলল…….

—কি হল কথা বলছো না কেন?বাড়িতে কে কে আছে?

রাই চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কাপাকাপা গলায় বলল……..

—আমি অনার্থ।আমার কেউ নেই।

রাই এর কথা শুনে ফরিদ খান কিছুটা রাগ মিশ্রিত গলায় বলল…….

—দু’দিনের সম্পর্কের জন‍্য বাবা,মা থাকতেও নিজেকে অনার্থ দাবি করা কোন বুদ্ধিমানের কাজ না।আজকাল কার ছেলেমেয়েরা নিজেদের পছন্দ মত কিছু না হলেই নিজেকে অনার্থ দাবি করে।যেটা আমার মোটেও পছন্দ হয় না।

ফরিদ খানের কথা শুনে রাই না চাইতেও চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরল।রাই এর কান্না ফাইজার সহ‍্য হল না।তাই সে কিছুটা এগিয়ে এসে মিনমিনে গলায় বলল……

—মাফ করবেন চাচ্চু।রাই আসলেই অনার্থ।ওর বাবা মা দু’জনই অনেক আগেই মারা গেছে।

ফাইজার কথাটা শুনে ফরিদ খান মনে মনে একটু অনুতপ্ত হল।রাই এর সম্পর্কে সব না যেনেই সে রাইকে কথা শুনিয়ে দিল।যাদের বাবা,মা না থাকে তাদের বাবা,মা এর কথা জিগ্যেস করলে যে কলিজায় কতটুকু আঘাত লাগে তা সে কিছুটা হলেও বুঝে।ফরিদ খান প্রসঙ্গ পাল্টে পূনরায় বলল…….

—তা রাই!তুমি কি বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছো?

রাই চাপা নিশ্বাস ফেলে মিনমিনে গলায় বলল……

—জ্বি।

ফরিদ খান তীব্রর দিকে তাকিয়ে বলল……

—তুমি কি বিয়েতে রাজি ছিলে না?

রাই মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে না বলল।

ফরিদ খান পূনরায় তীব্রর দিকে তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে বলল……..

—তুমি কি ওর কথা মত পালিয়েছো?

তীব্র ফাইজার পিছনে দাড়ানো ছিলো।
রাই ভাবলো ফাইজার কথা বলছে।তাই সে মাথা নাড়িয়ে হ‍্যা বলল।রাই এর কাজে তীব্রর চোখ চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।তিহান,তীব্রকে মৃদু ধাক্কা দিকে ফিসফিস করে বলল……

—দেখ ভাই দেখ!ভালোর জামানা আর নাই।তুই আমার শালীকাকে হিরো সেজে বাচালি আর এদিকে আমার শালীকা তোকে কেস খাইয়ে দিল।

তীব্র,তিহান এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই তিহান মিটমিট করে হেসে অন‍্য দিকে চলে গেলো।

—তোমরা কি বিয়ে করেছো?

ফরিদ খানের কথা শুনে রাই গোল গোল চোখ করে ফরিদ খানের দিকে তাকালো।মনে মনে ভাবতে লাগলো লোকটা কি পাগল নাকি?মেয়ে মেয়ে আবার বিয়ে হয় কিভাবে?রাইকে চুপ করে থাকতে দেখে ফরিদ খান পূনরায় জিগ‍্যেস করল……

—কি হল কথা বলছো না কেন?বিয়ে করেছো তোমরা?

রাই,ফাইজার দিকে তাকাতেই ফাইজা ইশারায় রাইকে না বলতে বলল।রাই ও ফাইজার কথ মত মাথা নাড়িয়ে না করল।

ফরিদ খান শক্ত গলায় বলল…….

—তা কি সিদ্ধান্ত নিলে? বিয়ে করবে ওকে?

রাই মাথা নিচু করে বসে রইল। কি উওর দিবে সে।এতোক্ষন ফরিদ খানকে পাগল ভাবলেও এখন সে পুরো শিউর হয়ে গেছে এই লোকের মাথায় সমস‍্যা আছে।তাই কথা না বাড়িয়ে চুপ করে বসে থাকাই ভালো।রাই কে চুপ থাকতে দেখে ফরিদ খান আবার বলল……..

—কি হল কথা বলছো না কেন?কথার উওর দাও?

রাই কিছু বলার আগেই মুনিয়া বেগম ফোড়ন কেটে বলল…….

—দাদা!আপনি হলেন গুরুজন। যতোই বাড়ি থেকে পালিয়ে আশুক না কেন মেয়েরা বড়দের সামনে মুখ ফুটে কি বিয়ের কথা বলতে পারে বলুন?আর তাছাড়া বিয়ে করার জন‍্যই তো পালিয়েছে তাই না।মুখে বলার কি আছে।

মুনিয়া বেগম এর কথা শুনে যেন রাই এর মাথায় আকাশ ভেঙে পরল।রাই কি বলবে তার কি বলা উচিত কিছুই তার মাথায় আসছে না।মুনিয়া বেগম এর কথা শুনে ফরিদ খান হুংকার দিয়ে বলল……..

—আমায় আর জ্ঞান দিতে হবে না ছোট বউ মা।যা বোঝার আমি বুঝে গেছি।

কথাটা বলেই সে উঠে এক মুহূর্ত দেড়ি না করে ধুপ ধাপ পা ফেলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

ফরিদ খান রুম থেকে বের হতেই মুনিয়া বেগম বড় করে একটা নিশ্বাস নিয়ে বিরবির করে বলল…….

—আল্লাহ অর্ধেক বাচালে।

ফারুক খান মুনিয়া বেগম এর দিকে কাপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে বলল……

—কিছু বললে?

মুনিয়া বেগম নিজেকে সামলে নিয়ে বলল……

—না কিছু না।এখনো তুমি এখানে দাড়িয়ে রয়েছো কেন?যাও গিয়ে দাদাকে রাত বেড়াতে বাসা থেকে বের হতে আটকাও।

ফারুক খান মুনিয়া বেগম এর কথা মত কোন কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।মুনিয়া বেগম তীব্র,তিহান এর দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বলল……..

—তোদের কি রুম থেকে বের হওবার কথা আলাদা ভাবে বলতে হবে?বের হ রুম থেকে। যা গিয়ে দেখ দাদা কি করছে।

মুনিয়া বেগম এর ঝাড়ি খেয়ে তীব্র, তিহান শুর শুর করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।সবাই রুম থেকে বের হতেই মুনিয়া বেগম রাই এর সামনে বসে রাই এর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল…….

—এখন কেমন লাগছে মা?শরীর খারাপ লাগছে।

রাই মাথা নাড়িয়ে না বলল।

মুনিয়া বেগম রাই এর চোখের ল‍েপটানো কাজল থেকে হাতে একটু কাজল লাগিয়ে রাই এর কানের পিছে লাগিয়ে দিয়ে মিষ্টি হেসে বলল…….

—মাশাল্লাহ।কান্না কাটির ফলে মেকআপ কিছুটা নষ্ট হয়ে গেলেও বউ সাজে তোমায় কিন্তু দারুন লাগছে।

মুনিয়া বেগম এর কথা শুনে রাই মাথা নিচু করে ফেলল।রাই এর কাজে মুনিয়া বেগম মুচকি হেসে কথা না বাড়িয়ে ফাইজাকে উদ্দেশ্য করে বলল…….

—ফাইজা তুই এখানে ওর কাছে থাক। আমি গিয়ে দেখে আসি ওখানে কি হচ্ছে।

______

মুনিয়া বেগম রুম থেকে বের হতেই রাই অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করল……..

—ফাইজু!এতোক্ষন এখানে কি হল কিছুই তো আমায় মাথায় ঢুকলো না।প্লিজ আমায় বলবি কি হল এখানে?আমি তোর কাছে এসে কি তোকে সমস‍্যায় ফেলে দিলাম?

ফাইজা বেড টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস হাতে তুলে নিয়ে গটগট করে পানি পান করে রাই এর সামনে টানটান হয়ে শুয়ে পরল।বড় করে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল…….

—উফ্ বাচা গেলো।এতোক্ষন দমটা আটকে ছিলো।দাড়া একটু পিঠটা টান করে নেই তার পরে তোর সকল প্রশ্নের উওর দিচ্ছি।

রাই উওেজিত কন্ঠে বলল…..

—পিঠ পরে টান করিস।আগে আমার প্রশ্নের উওর দে।ঐ লোকটা কে ছিলো?এমন অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্নই বা আমায় কেন করছিলো?

—ঐ লোকটা আমার বড় শশুর মানে আমার চাচা শশুর।

এটুটুকু বলে ফাইজা থেমে গেলো।

রাই ফাইজাকে ধাক্কা দিয়ে বলল……

—তা না হয় বুঝলাম।কিন্তু সে আমায় এমন সব প্রশ্ন করছিলো কেন?

ফাইজা উঠে বসে বলল……

—আমি তোকে প্রথম থেকে সব বলছি।তুই সেন্সলেস হয়ে গেছেলি।বাড়িতে পৌঁছানোর পর কোন ভাবেই তোর জ্ঞান ফেরানো যায় নি।গাড়িতে তো তোকে আর এভাবে ফেলে রাখা যাবে না।তিহানের পায়ের অবস্থা তো তুই খারাপ করেছিস।আর তোর মত মুটিরে আমার পক্ষে তো কোলে নেওয়া সম্ভবই না।তাই উপায় না পেয়ে ভাইয়া মানে তিহানের বড় ভাই তীব্র ভাইয়া তোকে কোলে নিয়ে বাসায় ঢুকে।এতো রাতে তীব্র ভাইয়াকে বউ বেসে একটা মেয়েকে নিয়ে বাসায় ঢুকতে দেখে বাড়ির সবাই মনে করে বসে ভাইয়া তোকে বিয়ের আসন থেকে তুলে নিয়ে এসেছে।আমাদের কারো কোন কথা না শুনেই তারা তাদের মন মত সব ভেবে নেয়।আর আমার চাচা শশুর।তার কথা আর কিই বা বলবো।যেমন পাজি তেমন ঘাড়তেড়া।নিজে যেটা ভাববে,বলবে সেটাই ঠিক।কিছু না জেনে সুনেই আমাদের সাথে রাগারাগি করা শুরু করে দেন।আমি অনেক চেষ্টা করেছি সব বলার কিন্তু কোন ভাবেই পারিনি।শুধু এতোটুকু বলতে পেরেছি তুই আমার কলিজার টুকরা বেস্টু।আর কিছুই বলার সুযোগই পাই নি।

সব শুনে রাই এর মুখটা মলিন হয়ে গেল।রাই মিনমিনে গলায় বলল…….

—আমি এখানে এসে তোকে ঝামেলায় ফেলে দিলাম তাই না।আমার জন‍্য কত কিছু হয়ে গেছে।তোরা সবাই আমার জন‍্য শুধু শুধু বকাও শুনলি।দেখ ফাইজু!আমার জন‍্য তোর কোন সমস‍্যা হোক আমি চাইনা।কোন সমস‍্যা হবার আগেই আমি এখান থেকে চলে যাব।আমি এখানে থেকে তোর কোন অশান্তি করতে চাই না।

ফাইজা মুখের মাঝে লম্বা হাসি ঝুলিয়ে বলল…….

—ধূর কি যে বলিস না।তোর জন‍্য কোন সমস্যাই হবে না।আমার শশুর বাড়ির লোক অনেক ভালো।শুধু চাচা শশুরটা একটু রাগি।কিন্তু মানুষ হিসেবে খুব ভালো।চিন্তা করিস না আমার শাশুড়ি মা আছে না উনি সব দেখে নিবে।আর যদি তোর জন‍্য কোন সমস‍্যা হয় তাহলে আমি নিজেই তোকে বলব।তাই এসব নিয়ে কোন টেনশনই করিস না।

রাই অস্রুভেজা চোখে ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলল……

—সত‍্যি তো?

ফাইজা,রাই এর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল……

—একশতে দুইশো র্পাসেন্ট সত‍্যি।

ফাইজার কথা শুনে রাই কিছু না বলে মুখ মলিন করে বসে রইল।ফাইজা, রাই এর শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল……

—সরি রে রাইজু!আজকের ঘোটে যাওয়া সত‍্যিটা তোকে বলতে পারলাম না।আমায় ক্ষমা করিস দোস্ত।তোর মুখে হাসি ফুটানোর জন‍্য আমি এমন হাজার মিথ‍্যে তোকে বলতে পারি।তাতে তুই আমার ঘৃণাই বা করিস না কেন?

#চলবে,

(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন‍্যবাদ)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে