#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_08
#Ariyana_Nur
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে রাই ঘুমানোর জন্য বিছানা ঠিক করছে।এমন সময় তীব্র বাহির থেকে এসে ঘামে ভেজা শরীর নিয়েই কোন কথা না বলে হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পরল।তীব্রর কাজে রাই এর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।রাই এর বিছানা গুছানোতে এলার্জি।সব কাজ করলেও বিছানা গুছাতে তার ভালো লাগে না।তার মধ্যে এতো কষ্ট করে বিছানা গুছানোর পর ঘামাক্ত শরীর নিয়ে বিছানায় শোয়াতে রাই এর রাগ লাগছে। ইচ্ছে করছে তীব্রর মাথা ফাটাতে।রাই নিজের রাগটাতে প্রকাশ না করে হাতে থাকা বিছানার ঝাড়ুটা সাইডে রাখতে না রাখতেই তীব্র আদুরে গলায় বলে উঠল,
—বউ!শরীরটা খুব দূর্বল লাগছে।আমায় একটু ফ্রেস করিয়ে খাইয়ে দেও না গো।
তীব্রর আদুরে গলার কথা শুনে রাই তীব্রর দিকে রাগি চোখে তাকালো।তীব্র যে তার সাথে মজা করছে তা আর তার বুঝতে বাকি নেই।আজ সকালেও তীব্র আর তিহান মিলে রাইকে ইচ্ছে মত নানান কথা বলে কখনো বিব্রত করেছো তো কখনো রাগিয়ে তুলেছে।শেষে মুনিয়া বেগম এসে ওদের হাত থেকে রাইকে রক্ষা করে।রাই কথা না বাড়িয়ে তীব্রর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে থেকে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়াতে নিলেই তীব্র বলল,
—রাগ মনে পুষে রাখতে নেই।সাথে সাথে ঝেড়ে ফেলতে হয়।তা না হলে তা আস্তে আস্তে বিশাল রুপ ধারন করে বোম এর মত ফাটবে।
তীব্রর কথা শুনে রাই এর নিভু নিভু রাগটা দাঊ দাঊ করে জ্বলে উঠল।রাই তীব্রর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে কাবার্ড থেকে একটা বেডশিট বের করে তীব্রর দিকে ছুড়ে মেরে গটগট করে ওয়াসরুমে ঢুকে শব্দ করে ওয়াসরুমের দরজা লাগিয়ে দিল।
রাই এর কাজে তীব্র শব্দ করে হেসে উঠল।সে তো রাইকে জ্বালানোর জন্যই এমন করেছে।নিজের কাজে সফল হয়ে তীব্রর মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি ফুটে উঠল।
________
রাই ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে তীব্র
রুমে নেই।বিছানার চাদর অনেকটা এলেমেলো হয়ে রয়েছে।রাই মনে মনে তীব্রর গুষ্ঠি উদ্ধার করতে করতে পূনরায় বিছানা গুছানোর কাজে লেগে পরল।
তীব্র অন্য রুমের ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসে দেখে রাই শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।রাইকে আরেকটুকু জ্বালানোর জন্য রাই এর দিকে হাতে থাকা তোয়ালে টা ছুড়ে মারল।রাই তোয়ালে টা হাতে নিয়ে তীব্রর দিকে কপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলল,
—কি করবো এটা দিয়ে?পাপোস বানাবো?
তীব্র রাই এর রাগি ফেস এর দিকে তাকিয়ে দাত কেলিয়ে হাসি দিয়ে কাবার্ড থেকে কিছু একটা বের করে পকেটে নিয়ে রাই এর পাশে এসে বসে বলল,
—যা ইচ্ছে কর।আমার সবই তো তোমার।তোমার জিনিস তুমি যা ইচ্ছে করবে।জিগ্যেস করার কি আছে।
তীব্রর কথা শুনে রাই তীব্রর দিকে গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে রইল।কথার মানে কিছু বোঝার আগেই তীব্র রাই এর হাত টেনে নিজের হাতের ভাজে নিয়ে নিল।তীব্রর কাজে রাই এর চোখ কোটার থেকে বের হবার উপক্রম।তীব্র,রাই এর হাত ধরে রাই এর হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
—বিয়েটা যেভাবেই হয়েছে না কেন বিয়ের পর তোমাকে আমার কিছু গিফট দেওয়া দরকার ছিলো।কিন্তু এই দু’দিন পরিস্থিতি, সময় কোনটাই ছিলো না যে তোমায় কিছু এনে গিফট করবো।তাই আজ একটু সময় করে মলে গিয়েছিলাম।
তীব্র পকেট থেকে আংটি টা বের করে রাই এর সামনে ধরে বলল,
—অনেক খুজে এটা পছন্দ করেছি।অনুমতি হবে কি নিজ হাতে আংটি টাকে তার নিজ স্থানে বসিয়ে তার সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করে তোলার?
তীব্রর কথা ও কাজে রাই পুরোই শকড।কি উওর দিবে রাই?কিছুই মাথায় আসছে না তার।মাথা কেমন ফাকা ফাকা লাগছে।রাই এর ভাবনার মাঝেই তীব্র,রাই এর হাতে আংটিটা পরিয়ে দিল।তীব্রর কাজে তো এবার রাই অবাকের চরম পর্যায় পৌচ্ছে গেলো।তীব্র রাই এর বিস্ময়রত চেহারার দিকে তাকিয়ে রাই এর নাক টেনে দিয়ে মুচকি হেসে বলল,
—কাছের মানুষের কাছ থেকে অধিকার চেয়ে নিয়ে হয় না।অধিকার ফলাতে হয়।আংটিটা তোমার হাতে মানিয়েছে।দেখো তোমার হাতের ছোয়া পেতে কেমন আরো জ্বলজ্বল করছে।আংটির সৌন্দর্য নষ্ট করে তাকে মূল্যহীন না করলেই খুশি হব।
কথাটা বলে তীব্র কিছুক্ষন রাই এর হাতে থাকা জ্বলজ্বল করতে থাকা আংটিটার দিকে তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।তীব্র চলে যাওয়ার পরেও রাই শকড হয়ে কিছুক্ষন বসে রইল।অবাক চোখে নিজের হাতে থাকা আংটির দিকে তাকিয়ে রইল।মুহূর্তেই চোখের সামনে ভেসে উঠল পুরোনো কিছু তিক্ত স্মৃতি।
ফ্লাসব্যাক…….
রাই কিচেনে কাজ করছে।এমন সময় কিচেনের মধ্যে ধরফর করে প্রবেশ করল ফাহাদ।ফাহাদের এমন আগমনে রাই ভয় পেয়ে গেলো।মিনমিনে গলায় বলল,
—ফাহাদ ভাইয়া আপনি এখানে?কিছু লাগবে?
ফাহাদ রাই এর দিকে রক্ত চক্ষু নিক্ষেপ করে রাগি গলায় বলল,
—তোমার হাতটা দাও।
রাই,ফাহাদ এর কথা শুনে ভয়ে দু’হাত ওড়না দিয়ে ঢেকে নিলো।ফাহাদ পূনরায় রাগি গলায় বলল,
—কি বলছি কথা কানে যায় না।হাত দাও।
রাই এবার ভয়ে ভয়ে হাত বাড়িয়ে দিতেই ফাহাদ রাই এর হাত ক্ষপ করে ধরে পকেট থেকে একটা হিরের আংটি বের করে পরিয়ে দিল।ফাহাদ,রাই এর হাতের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে রাই এর হাত নিজের ঠোটের সামনে নিতেই রাই ঝাটকা দিয়ে ফাহাদ এর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল।আংটিটা হাত থেকে খোলার চেষ্টা করতেই ফাহাদ রাই এর হাত খপ করে ধরে বসে।রাই এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে চেচিয়ে বলল,
—আমার কাজে বাধা দেওয়ার সাহস তুই কি করে পাস?এতো সাহস তোর?তুই আমার সামনে আমার দেওয়া আংটি হাত থেকে খোলার সাহস দেখাস?
রাই এর হাত জোড়ে চেপে ধরাতে রাই ব্যাথায় কুকড়ে উঠল।কাপাকাপা গলায় বলল,
—ভাইয়া এতো দামি আংটি আমার হাতে দেখলে কাকিমা কি বল…..।
কথাটা শেষ করার আগেই ফাহাদ জ্বলন্ত চুলাটা নিভিয়ে চুলোর উপরে থাকা ফ্রাইপ্যান টা দূরে ছূরে মারল।ফাহাদ এর কাজে রাই ভয়ে কেপে উঠল।কিছু বোঝার আগেই রাই এর আংটি পড়ানো আঙুলটা চুলোর আগুনে জ্বলজ্বল করতে থাকা স্টেনের মধ্যে লাগিয়ে দিল।সাথে সাথেই রাই গগন ফাটানো চিৎকার দিয়ে উঠল।ফাহাদ অপর হাত দিয়ে রাই এর মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল,
—হুস!ডোন্ট সাউন্ড।এটা হলো আমার ভালোবাসা চিহ্ন ছুড়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করার শাস্তি।এবার তো শুধু আঙুল পুড়ে দিয়েছি।দ্বিতীয় বার আংটি খোলার সাহস দেখালে না থাকবে আংটি আর না থাকবে আংটি পরার আঙুল।
বর্তমান……..
পুরোনো কথা মনে পরতে রাই এর চোখ জলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল।নিজের হাতে থাকা আংটিটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে লাগল,
—কি আজব তাই না?দু’জন মানুষ দু’জনই অধিকার দেখিয়ে বিনা অনুমতিতেই হাতে আংটি পরিয়ে দিলো।কিন্তু দুজনের অধিকার ফলানোর ধরন আলাদা।একজনের অধিকার ফলানো আংটি না চাইতেও ভয়ে ভয়ে নিজের কাছে রাখতে হয়েছে।আর আরেক জনের……।
পুরো কথা শেষ না করে রাই চাপা নিশ্বাস ফেলল।
________
রাই ড্রায়িং রুম গুছাচ্ছে।কলিং বেলের শব্দ পেয়ে রাই হাতের কাজ রেখে দরজা খুলতেই হুরহুর করে কয়েক জন লোক ভিতরে প্রবেশ করল।তাদের কাজে রাই কিছুটা ঘাবড়ে গেল।মনের মধ্যে সাহস সঞ্চয় করে রাগি গলায় বলল,
—কারা আপনারা?আজব তো?বলা নেই কয়া নেই বাসার ভিতরে ঢুকে পরলেন?বের হন বাসা থেকে।
রাই এর কথা যেন লোকগুলো শুনেও শুনলো না।তারা সেই আগের মত একি ভাবে রাইকে ঘিড়ে দাড়িয়ে রইল।রাই পূনরায় ঝাঝালো গলায় বলল,
—কি হল কথা কানে যাচ্ছে না।বের হন ব…..।
রাই পুরো কথা শেষ করার আগেই একটা শীতল কন্ঠে ভেসে এল,
—আমার ভালোবাসায় কি কো কমতি ছিলো রাই পাখি?আমি তো তোমায় পাগলের মতই ভালোবেসে ছিলাম।তাহলে কেন আমায় ছেড়ে চলে আসলে?
কন্ঠটা চিনতে রাই এর একটুও ভুল হল না।ফাহাদের শীতল কন্ঠটা যেন রাই এর শরীর কাটা দিয়ে উঠছে।রাই ঘুড়ে ফাহাদ এর দিকে তাকিয়ে কাপাকাপা গলায় বলল,
—আ-আপনি?
ফাহাদ বাকা হেসে রাই এর দিকে রক্ত চক্ষু করে তাকিয়ে বলল,
—কি ভেবেছিলে আমার হাত থেকে পালিয়ে বাচতে পারবে?পালিয়ে আর কয়দিন বাচবে পারলে পাখি?দেখলে তো তিনদিনের দিনের মাথায় তোমায় কেমন খুজে বের করে ফেললাম।
ফাহাদ এর কথা শুনে রাই ভয়ে ঠকঠক করে কাপতে লাগলো।ফাহাদ রাই এর অবস্থা দেখে বাকা হেসে বলল,
—আমার এন্ট্রিতেই এমন করছো পুরো পিকচার দেখলে কি করবে পাখি?
ফাহাদ একটা রহস্যময়ী হাসি দিয়ে শিস বাজাতেই দু’জন লোক সেন্সহীন,রক্তাত্ব একজন কে টানতে টানতে বাসার ভিতরে প্রবেশ করল।লোকটার রক্তাত্ব চেহারা দেখে রাই শকড হয়ে দাড়িয়ে রইল।রাই এর চোখ দিয়ে আপনা আপনি জল গড়িয়ে পরল।অস্ফুট সুরে বলে উঠল,
—ত-তীব্র!
#চলবে,
(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)