#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_03
#Ariyana_Nur
হাত,মুখ বাধা অবস্থায় চেয়ারে বসে রয়েছে রাই।হাতের মধ্যে ছোট একটা ছুরি নিয়ে তার সামনে হাটু গেড়ে বসে রয়েছে ফাহাদ।ফাহাদ ছুরিটার দিকে তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে ছুরিটা ঘুড়াতে ঘুড়াতে বলল……
—এটা দিয়ে কি করবো জানো পাখি?ভাবছি এটা দিয়ে তোমার পাখা কাটবো?
কথাটা বলেই ফাহাদ রাই এর দিকে অগ্নি দৃষ্টি করে তাকালো।ফাহাদ রাই এর ভীতু চেহারা দেখে কোমল কন্ঠে বলল……
—তুমি কি আমায় ভয় পাচ্ছো পাখি?আরে ভয় পাবার কি আছে?তোমার কি পাখা আছে বল?যে আমি তোমার পাখা কাটবো।পাখা থাকলে তো তুমি ঊড়েই যেতে তাই না।আচ্ছা তাহলে এটা দিয়ে কি করবো🤔পাখা নেই তো কি হয়েছে বল।তোমার তো পা আছে। যেটা দিয়ে তুমি আমার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াও।এটা দিয়ে তাহলে তোমার পা কাটি। যাতে তুমি আমার কাছ থেকে পালাতে না পারো।
কথাটা বলে এক মুহূর্ত দেড়ি না করে ফাহাদ রাই এর পায়ের পাতার উপর ছুড়ি চালিয়ে দিল।সাথে সাথেই গড়গড় করে রক্ত গড়িয়ে পরল।ব্যাথায় রাই এর চোখে পানি চলে এল।ফাহাদ রাই এর কাটা পা নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল…….
—হুস…।কান্না বন্ধ কর পাখি।কান্না করছো কেন?পা ব্যাথা করছে?জানো আমার ও ব্যাথা করে।ঠিক এই খানটায় (রক্তাক্ত হাত দিয়ে নিজের বুকের বা পাশে চেপে ধরে)এই খানটায় অনেক ব্যাথা করে।যখন তুমি আমার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াও।আমায় কেন এতো ভয় পাও তুমি?কি করেছি আমি?তুমি জানোনা তুমি আমার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ালে আমার কষ্ট হয় ভীষন কষ্ট হয়।তার পরেও কেন পালিয়ে বেরাস তুই।এন্সার মি?
কথাটা বলে ফাহাদ হাতে থাকা ছুড়িটি দেড়ালের দিকে ছুড়ে মারল।
ফাহাদ দু’হাতে নিজের চুল টেনে ধরে পাগলের মত আচারন করতে লাগল।
রাই ফাহাদের এমন আচারন দেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে সাথে ভয়ে ঠকঠক করে কাপছে।ফাহাদ রাই এর গাল চেপে ধরে বলল…….
—কান্না বন্ধ কর।তোর ঐ মায়াবী চোখের পানি আমার একদম সহ্য হয় না।বল আর কখনো আমার থেকে পালাবি?বল পালাবি না।
শেষের কথাটা ফাহাদ চেচিয়ে বলল।
রাই ভয়ে ভয়ে উপর নিচে মাথা নাড়িয়ে না বলল।সাথে সাথেই ফাহাদ এর মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল।
—ভাই মন্টু ফোন করেছিলো।ভাবির কোন খোজ পায়নি।
ফাহাদ তার লোকের কথা শুনে ভাবনার জগত থেকে ফিরে এল।চোখ মুখ শক্ত করে বিরবির করে বলল…….
—সেবারের শাস্তিটা কম হয়ে গিয়েছিলো তাই না পাখি?তাই তো এতো তাড়াতাড়ি ভূলে গেলো।এবার এমন শাস্তির ব্যবস্থা করবো যা তুমি মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত মনে রাখবে।
_______
ব্যাথায় কাতর হয়ে পা ধরে বসে রয়েছে ছেলেটি।ব্যাথায় তার জান যায় যায় অবস্থা।রাই ইট ছুড়াতে ইট পায়ের বৃদ্ধা নখে লেগে অনেকটা থেতলে ভিতরে রক্ত জমাট বেধে গেলে।ছেলেটির পাশেই কোমড়ে হাত রেখে ছেলেটার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রয়েছে ফাইজা।
—রাইজু!ইটটা পায়ে না মেরে এই হাদারাম এর মাথায় মারলি না কেন?তাহলে এর সব বাদরামি মাথা থেকে বের হয়ে যেত।
ফাইজার রাগি গলার কথা শুনে ছেলেটি ফাইজার দিকে তাকিয়ে কাতর কন্ঠে বলল…….
—ফাইজা!তুমি এভাবে বলতে পারলে?
ছেলেটির কথা শুনে ফাইজা তেজি গলায় বলে উঠল……
—বলতে পারলাম দেখেই তো বললাম।মাথামোটা,কান্ডজ্ঞানহীন লোক একটা।
ছেলেটি অবাক কন্ঠে বলল…..
—আমি কি করেছি?
ফাইজা ধমক দিয়ে বলল……
—চুপ!একটাও কথা না।আসছে আমার সাধু মানুষ সে কি করেছে বলতে।তিহান তুমি কি গো হ্যা?না মানে তোমার কি কোন কান্ডজ্ঞান বলতে কিছু নেই না কি?মেয়েটা কোন অবস্থা থেকে এখানে এসেছে সেটা তুমি জানো।তার পরেও কেন তুমি মেয়েটার সাথে মজা করতে গেছো?সেদিনের ভার্সিটিতে তোমার ঐ মজার ফলে আজ মেয়েটার এই দশা।তার পরেও তুমি কিভাবে আজ আবার এর সাথে মজা কর?
ফাইজার বকা খেয়ে তিহান মাথা নিচু করে বসে রইল।তখন মজা করার সময় মাথায় কিছু না এলেও এখন সে ঠিক বুঝতে পারছে ঐ রকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে রাই এর সাথে মজা করা ঠিক হয় নি।
ফাইজার কোন কথাই যেন রাই এর মাথায় ঢুকছে না।রাই অবাক কন্ঠে বলল….
—ফাইজু!উনি….?
ফাইজাঃরাইজু এই হাদারাম এর গলায়ই বাবা আমায় ঝুলিয়েছে।আমি বুঝি না কি দেখে বাবা একে পছন্দ করেছে।সারাক্ষন শুধু এর মাথায় দুষ্টুমি ঘুড়ে।
রাই,ফাইজার দিকে গোল গোল চোখ করে বলল……
—মানে?এর সাথেই….?
ফাইজা কপাল চাপড়ে বলল…..
—হ রে বোইন হ এই হাদারামই আমার বর।মিঃতিহান হাদারাম।আমার আসতে দেড়ি হবে দেখে একে পাঠিয়েছিলাম।কে জানতো যে এ তোকে ভরসা দেবার বদলে উল্টো তোকে আরো ভয় দেখাবে।
তিহান ফাইজার দিকে তাকিয়ে মিনমিনে গলায় বলল……
—এভাবে আমার সুইট শালীকার সামনে আর বকা দিও না বউ।যা বলার পরে বাসায় বসে আরাম করে বলো।আমার ও তো একটা মান-সম্মান আছে বল।তা এভাবে নষ্ট করা কি ঠিক?
তিহান এর কথাগুলো যেন ফাইজার রাগ বাড়ানোর জন্য আগুনে ঘৃ ঢালার মত ছিলো।ফাইজা,তিহান এর মাথার চুল টানতে টানতে বলল…….
—তোর মান সম্মান কে আজ আমি হত্যা করবো।দোষ করে আবার বড় বড় কথা।আজ তোর মাথার সব ভূত আমি তাড়াবো সাথে তোর মান-সম্মানও।
তিহান,ফাইজার হাত থেকে নিজের চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই পারছে না।ফাইজা নিজের সব রাগ তিহানের চুলের উপর ঝাড়ছে।
এমনিতেই রাই এর শরীর ক্লান্ত।তার উপরে ফাইজার কাজে রাই এর মাথা ভনভন করে ঘুরছে।রাই নিজেকে আর দাড় করিয়ে রাখতে পারল না।রাই মাথা ঘুড়ে নিচে পরে যাবার আগেই এক জোড়া শক্ত হাত রাই কে আগলে ধরল।
—ফাইজা!তিহান টা তো গাধা কোন কমোন সেন্স নেই।তার সাথে তুমিও কি জ্ঞানহীন হয়ে গেছে?
তীব্রর গম্ভীর কথা শুনে ফাইজা পিছন দিকে তাকাতেই দেখে তীব্র, রাইকে ধরে দাড়িয়ে রয়েছে।ফাইজা দৌড়ে রাই এর সামনে গিয়ে রাই এর গালে হাত রেখে উওেজিত কন্ঠে বলল……..
—রাইজু!রাইজু!কথা বলছিস না কেন?ভাইয়া কি হয়েছে ওর?
তীব্রঃফাইজা শান্ত হও।অতিরিক্ত স্টেস থেকে হয়তো সেন্সলেস হয়ে গেছে।
তিহান দাত কেলিয়ে হেসে বলল……..
—কেয়া বাত হে ভাই?তুই দেখি হিরোর মত আমার শালীকে অজ্ঞান হয়ে নিচে পরার আগেই নিজের বক্ষ পিঞ্জরে আগলে নিয়েছিস।আই প্রাউড অফ ইউ ভাই।আই প্রাউড অফ ইউ।
তীব্র,তিহান এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে কোন কথা না বলে রাইকে পাজাকোলে তুলে রাইকে গাড়িতে শুইয়ে দিল।
_______
খান বাড়ির ড্রয়িং রুমে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।ফরিদ খান (তীব্রর বাবা)সোফার পায়ের উপর পা রেখে গম্ভীর হয়ে বসে রয়েছে।তার পাশে কাচুমাচু করে বসে রয়েছে ফারুক খান আর তার স্ত্রী মুনিয়া বেগম(তিহান এর বাবা মা)।মুনিয়া বেগম মনে মনে দোয়া দুরুদ পরছে আর আল্লাহ কে ডাকছে।ঘড়ির কাটা বারোটার ঘরে যেতেই ফরিদ খান গম্ভীর গলায় বলল……
—ছোট বউ মা!(মুনিয়া বেগমকে উদ্দেশ্যে করে)কোথায় তোমার বড় ছেলে?রাত বারোটা বেজে গেছে এখনো সে বাড়িতে ফিরেনি কেন?কোন ভদ্র ঘরের ছেলেরা কি এতো রাত পযর্ন্ত বাড়ির বাহিরে থাকে?
মুনিয়া বেগম কাচুমাচু করে কাপাকাপা গলায় বলল……
—আসলে দাদা আমি বলতে ভূলে গিয়েছিলাম।তীব্র আমায় বলেছিলো,আজ ওর ফ্রেন্ডদের সাথে একটা পার্টি আছে।হয়তো সেখানে গেছে তাই ফিরতে একটু দেড়ি হচ্ছে।।আপনি চিন্তা করবেন না দাদা।আপনি গিয়ে শুয়ে পরুন।আমি সবটা দেখে নিব।আপনার কষ্ট করে জেগে থাকতে হবে না।
ফরিদ খানঃসমস্যা নেই।আমিও দেখি আমার গুনধর ছেলে বাড়িতে কখন ফিরে।ফারুক! তিহান আর বউ মা কোথায়?আসার পর থেকে যে একবারো ওদের দেখলাম না?
ফরিদ খান এর কথা শুনে ফারুক খান শুকনো ঢোক গিলে বলল……
—দাদা!ওরা তো…..।
ফারুক খানকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে মুনিয়া বেগম ফোড়ন কেটে বলল…..
—আসলে দাদা হয়েছে কি বউমা এর শরীরটা বেশ ভালো না।তাই ওরা দুজন আগে আগে ডিনার করে শুয়ে পরেছে।তাই আপনি তাদেরকে দেখেন নি।
ফরিদ খান একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল……
—ফারুক!আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আমার লাগাম ছাড়া ছেলেটাকে ঘড় বন্দি করার জন্য সব চেয়ে বড় উপায় হল ওর বিয়ে।ছোট বউ মা!তুমি ওকে ছোট থেকে মায়ের আদর দিয়ে লালন পালন করেছো।কখনো মায়ের অভাব বুঝতে দেও নি।তাই কথাটা ওকে জানানোর আগে তোমায় আগে জানাচ্ছি।আমি রুমার সাথে তীব্রর বিয়ে দিতে চাই।রুমাকে আমি আমার বাড়ির পূত্রবধু করতে চাই।
মুনিয়া বেগম অবাক হয়ে বলল……
—দাদা!দুনিয়াতে এতো মেয়ে থাকতে রুমা কেন?তীব্র তো রুমাকে পছন্দই করে না।তাছাড়া…….।
মুনিয়া বেগম কে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে ফরিদ খান হুংকার দিয়ে বলে উঠল………
—কোন কিন্তু না।এবার আমি ওর একটা কথাও শুনবো না।তোমার ছেলে শুধু রুমা না।কোন মেয়েকেই তার পছন্দ না।দেবদাস হয়ে থাকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে।তাই এবার ওর কোন তালবাহানাই চলবে না।কালকেই ওর সাথে রুমার বিয়ের পাকা কথা ঠিক করব।কাল যথা সময়ে রুমার পরিবার চলে আসবে।তোমার ছেলেকে বাড়িতে রাখার দায়িত্ব তোমার।তুমি যেভাবেই হোক ওকে বাড়িতে রাখবে।আর হ্যা এটাই আমার শেষ কথা।
ফরিদ খানের কথা শুনে মুনিয়া বেগম ছলছল চোখে তার স্বামী ফারুক খানের দিকে তাকালো।ফারুক খান সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেলল।কিই বা বলবে সে।ছোট থেকে ভাই এর ছেলেকে নিজের ছেলের মত লালন পালন করলেও কোন অধিকার খাটিয়ে তার ভাই এর উপর দিয়ে কথা বলার সাহস তার নেই।
_______
কলিং বেল এর শব্দ পেয়ে মুনিয়া বেগম দরজা খোলার জন্য উঠে দাড়ালো।দরজা খুলতেই দেখে তীব্র,রাইকে কোলে নিয়ে দারজার সামনে দাড়িয়ে রয়েছে।তার পাশেই ফাইজা দাড়ানো।পিছনে তিহান পা ধরে বসে রয়েছে।মুনিয়া বেগম গোল গোল চোখ করে তীব্রকে দেখে কিছু একটা ভেবে গলা ছেড়ে আওয়াজ দিয়ে বলল…….
—দাদা!দেখে জান।তীব্র বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে।
#চলবে,
(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)