মেঘের বাড়ি পর্ব-০৪

0
608

#মেঘের বাড়ি☁
#পর্ব-৪
#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি
.
.
” খালা বাড়িতে নেই আর সাজিয়া ভেতরে রুমে আছে৷”

” ওহ আচ্ছা তাহলে পরে আসবো৷”

লোকটিকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত ও বাড়ি থেকে আলিয়া বেড়িয়ে গেল৷

” আল্লাহ বাঁচায়ছে৷ আমার সন্ধেহটাই ঠিক মনে হচ্ছে৷ সোহাগ মামা কে জানাতে হচ্ছে৷” আলিয়া বাসায় ঢুকতে শুনতে পায় তার নানী বিষ খেয়েছে৷

আলিয়া দেরি না করে নানীর কাছে ছুটে যায়৷ সেখানে গিয়ে দেখে মেঘ তার মা’কে বমি করানোর চেষ্টা করছে৷ বিশ মিনিট ধরে ঘরোয়া ভাবে ট্রিটমেন্ট করা হয় মেঘের মায়ের৷ বমি করানোর ফলে পেট থেকে বিষটা বেরিয়ে গেছে৷ সবাই কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেও আলিয়া হতে পারলো না৷ আলিয়া তার ছোট খালামনি নুর কে সাইডে টেনে নিয়ে গিয়ে বলে,” নুর একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর আছে৷ আন্টিকে এখুনি এখানে ডেকে আন৷”

(আলিয়া আর নুর দুজনে সমবয়সি হওয়ার কারনে ছোট থেকে আলিয়া নুর কে নাম ধরে ডাকে৷ তবে তাদের সম্পর্ক টা বেস্টফ্রেন্ডের মতই৷ )

নুর দ্রুত গিয়ে মেঘকে ডেকে নিয়ে আসে৷

” কি হয়েছে আলিয়া?”(মেঘ)

” আন্টি একটা খবর আছে৷ তুমি জানো ও বাড়ির সাজিয়া আন্টির মায়ের নাম কী?”

“জানবো না কেন সাজিয়ার মায়ের নাম তো শেফালী বেগম৷” নামটা বলতে বলতে মেঘ থেমে গিয়ে আলিয়ার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থেকে বলতে লাগলো,” তার মানে তুই সন্ধেহ করছিস..” বাকিটা বলার আগে আলিয়া তার আন্টিকে চুপ থাকতে বলে৷

” আন্টি এখানে কিছু বলো না৷ তোমাকে কিছু দেখাই চলো৷ তারপর তোমার কাছে সব কিছু পানির মত সহজ মনে হবে৷”

মেঘ তৎক্ষনাৎ বলে উঠলো,” আমি জানি তুই কী দেখাতে নিয়ে যাবি৷ আর আমিও এটা আগে থেকে জানতাম কিন্তু বিষয় টা যে এভাবে উল্টো আমাদের দিকে ঘুরে যাবে ভাবি নি৷” নুর তার বোন আর বোনজির কথার আগামাথা বুঝতে না পেরে বললো,” আপু তোরা কী বিষয়ে কথা বলছিস? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না?”

” তোকে কিছু বুঝতে হবে৷ দৌড়ে গিয়ে ছোটভাইকে ডেকে আন৷ আর আলিয়া তুই ভেতরে যা তোর নানুর পাশে বস৷ সবটা জানতে পেরে ভিষণ কষ্ট পেয়েছে৷ ”

ছোটভাই সোহাগ আসতে আলিয়া ভেতরে চলে গেল৷

” কী হয়েছে মেঘ?”

” ভাই অনেক বড় একটা জট খুলে গেছে৷”

” ক্লিয়ার করে বল?”

” তাহলে শুনো….”

৮.

“এই সব কী শুনতাছি আমজাত?”(মোহাম্মদ গাজী)

বংশের বড় সন্তান মোহাম্মদ গাজী বেশ রাগী তবে সৎ পথে চলে৷ তার উপর গ্রামের মাতব্বর তাই সবাই তাকে বেশ ভয় পায়৷ সোহেলের বাবা আমজাত গাজী বেশ ভয় পেলেন৷ তবে মুখে তা প্রকাশ না করে স্বাভাবিক ভাবে বললো,” কী হুনছেন ভাইজান?”

” শোন আমজাত তুমি আমাকে ছোট বেলা থেকে খুব ভালো করেই জানো৷ আমি অহেতুক কোন কথা বলি না৷ এখন তুমি বলো বউমা এখনো কেন শশুড় বাড়ি ফেরত আইলো না?”

” ভাইজান ওই মাইয়া বেশি সুবিধার না৷ বাড়ি আসার পর থেইকা বাড়িতে ঝামেলা পাকায়তাছে৷ আবার হুনলাম ওই মাইয়ার মা নাকী ভালো না খারাপ কাজ করে৷”

” যা যা কইতাছো তার প্রমান দিতে পারবা?”

” হ পারমু না কেন৷”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে মোহাম্মদ গাজী বললো,” আগামীকাল সকাল এগারোটায় বড় বাড়ি আইবা ওই হানে বিচার বইবো৷ আর একটা কথা তোমার কাছে যত প্রমান আছে সব নিয়া আসবা৷ ”

“মানে ভাইজান আমরা তো কোন নালিশ জানাই নাই? তাইলে বিচার বসবো ক্যান?”

” নালিশ তোমরা জানাও নাই কিন্তু সোহেলের বউ জানায়ছে৷ কিছুক্ষণ আগে আমাকে সবটা জানায়ছে তাই যা কথা হওয়া কাল হইবো৷ তৈরি থাইকো আমজাত৷”

মাতব্বর আর কিছু বললো না নিজের বাড়ির দিকে চলে গেল৷ গোধূলীলগ্ন গ্রাম্য পরিবেশটা এক অদ্ভুত বিমোহিত রুপ ধারণ করেছে৷ সোহেল নদীর পাড়ে হাটতে হাটতে মেঘের কথা ভাবতে লাগলো৷ তখনি সোহেলের ফোনটা বেজে ওঠে৷ সোহেল তার ফোন বের করে কল রিসিভ করতে ফোনের ওপাশ থেকে তার বোন আখি বলে উঠলো ,” ভাইজান কোথায় আছো?”

” কেন কী হয়েছে?”

” বাড়ি আসো ভাইজান তারপর সব তোমারে বলতাছি৷”

সোহেল চিন্তিত হয়ে দ্রুত বাড়ির পথে পা বাড়ালো৷

______

” রানা যারা তোকে ভাবির সম্পর্কে খবরাখবর দিয়েছে তাদের কে কাল নিয়ে আসতে পারবি?”(আখি)

” হ ভাবি পারবো৷ তাগো নাম্বার আমি নিয়ে রাখছি৷”

” আচ্ছা তাগো আজকাই ফোন দিয়া বল কাল সকাল এগারোটার ভেতর এখানে আসতে৷ তাদের সব খরচ আমি দিমু৷”

” আচ্ছা ভাবি৷”

৯.

সোহেল বাড়িতে পা রাখতেই তিন বোন আর ছোট ভাই সবুজের স্ত্রী মনি এসে হাজির হয়৷

” কি বেপার তোরা এভাবে ছুটে আসলি যে?”

” ভাইজান একখান ঘটনা ঘটে গেছে৷ বড় চাচা কাল আমাগো সবাইরে বড় বাড়ি যাইতে কইছে৷”

” হ্যাঁ ভালো তো৷ ”

” কিসের ভালোর কথা বলছো ভাই? তোমার বউ চাচার কাছে বিচার দিছে৷ সে কথা শুনে চাচা কাল আমাগো সবাইরে যাইতে কইছে৷”

সবটা শুনে সোহেলের মুখটা অন্ধকার হয়ে গেলো৷ কোন কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলো৷

__________

অন্যদিকে মেঘ তার মায়ের পাশে বসে আছে৷ চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে একদিনে৷ মেঘের বড় বোন রান্নাঘর সামলে এসে মেঘকে বলে, ” মেঘ রাত তো অনেক হলো আম্মাকে কিছু খায়িয়ে দে৷ ডাক্তার হালকা কিছু খাইয়ে দিতে বলেছে৷ আর তুই ও খেয়ে নে৷ ”

” আপা দুলাভাই, নুর , আলিয়া মাহিমকে আগে খেতে দেও৷ তারপর না হয় তুমি আমি আম্মা আর খালাম্মা মিলে বসবো৷”

” ঠিক আছে৷”

সে দিন রাতটাও মেঘ না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলো৷ পরের দিন সকাল সকাল সোহাগ, মেঘ আর আকাশ আর তাদের মা শেফালী বেগম রওনা দিলো সোহেলের গ্রামের উদ্দেশ্য৷ বেলা পনে দশটায় মাতব্বরের বড় বাড়ি গিয়ে পৌছায় আকাশ সোহাগ আর মেঘ এবং তাদের মা৷ সোহাগের বেশ কিছু বন্ধু আছে সে গ্রামে তারা প্রত্যেকে বেশ প্রভাবশালী৷ তারও সোহাগকে সার্পোট করার জন্য সালিশে হাজির হয়৷ তার কিছুক্ষণ পর পর সোহেল এবং তার পুরো পরিবার বড় বাড়ি এসে হাজির হয়৷ সোহেলের বোনেরা মেঘকে দেখে নাকমুখ কুঁচকে এক ভয়ঙ্কর চোখ মুখ করে তাকিয়ে আছে৷ মাতব্বর মোহাম্মদ গাজী এসে চেয়ারে বসার পর বললো,” এখন বলো বড় বউ তোমার কী বলার আছে?” মেঘ কিছু বলতে যাবে তার পূর্বে সোহেলের বোনেরা ক্ষিপ্ত হয়ে বলে উঠলো,” ভাবি কি কইবো চাচা যা কওনের তা আমরা কমু৷ আপনি জানেন এই ভাবির চরিত্র কত্তো খারাপ?”

এতটুকু বলতেই মেঘ রেগে কিছু বলতে যাবে তার পূর্বে সোহাগ বলে,” মুখ সামলে কথা বলুন৷ আমার বোনের চরিত্র নিয়ে আর একটা কথা বললে আপনার ওই নোংরা মুখ আমি আস্ত রাখবো না৷”

সোহাগের কথা শুনে আখির স্বামী সহ তাদের ভায়রাভাই তেরে সোহাগের দিকে যেতে নিলে সোহাগের বন্ধুরা সোহাগের সামনে দাড়িয়ে আঙ্গুল তুলে বলতে লাগলো,” এমন সাহস কইরো না মিয়া৷ এমন হয়লো যে হাত দিয়া তোমরা আমার বন্ধুরে আঘাত করবা দেখা গেল সেই হাত পরে তোমার থাকলো না৷তহন কী হয়বো ভাইবা দেখছো মিয়া?”

সোহাগের বন্ধুর কথা শুনে আখির জামাই সহ বাকিরা ভয়ে পেছনে সরে গেলো৷ তখন সোহেল বলে উঠলো,” চাচা মেঘ এবং তার পরিবার আমাকে ঠকিয়েছে আমি তার বিচার চাই৷”

” আমি আপনাকে ঠকিয়েছি নাকি আপনি সহ আপনার পুরো পরিবার আমার উপর অত্যাচার করেছেন কোনটা ?”

” মিথ্যা কথা বলবে না মেঘ৷ আমার মা বোনেরা মটেও তেমন মানুষ না৷ তবে তোমরা যে পাপ কাজ করতে তার প্রমান আমাদের কাছে আছে৷”

সোহাগ দাঁত কিড়মিড় করে সোহেলকে বললো,” নিয়ে আয় তোর প্রমান আমরাও দেখি তোর প্রমান৷”

সোহেল আখিকে ইশারা করতে আখি তার দেবরকে ফোন করে৷ কিছুক্ষণ পর রানা তিনজন লোক নিয়ে বড়বাড়ি হাজির হয়৷ আখি তখন লোক গুলোর উদ্দেশ্য বললো তো আপনারা কন চাচা আপনারা যাদের কথা বলেছেন এরা তারা কীনা?”

লোক গুলো শেফালী বেগম আর মেঘের দিকে ভালো করে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,” আরে না এরা তো তারা না৷ ওই মহিলা আর তার মেয়ের সাথে এদের কোন মিল নেই৷ এরা তারা না৷”

লোক গুলোর কথা শুনে আখি সাথী মিলা আর তাদের মায়ের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো৷ তীরে এসে তরী ডুবে যাবে এমনটা তারা কখনো ভাবেনি৷

ননদ আর শাশুড়ির অবস্থা দেখে মেঘের মুখের কোণে হাসি ফুটে উঠলো৷ আর দৃঢ় কন্ঠে মাতব্বর চাচা কে বলে উঠলো,” দেখলেন তো চাচা তারা যে নোংরা অভিযোগ করেছিলো তার পুরোটাই ছিলো বানোয়াট কথা আমাকে বদনাম করার জন্য এই মা মেয়েরা মিলে ষরযন্ত্র করেছে৷

সোহেলের মুখে কোন কথা নেই৷ কোন মুখে কথা বলবে? যেখানে নিজের স্ত্রীকে বিশ্বাস করেনি? শুধু তার মা আর বোনদের কথা শুনে নিজের স্ত্রীকে ভুল বুঝলো! সোহেল মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল৷ তখন মেঘ বলে উঠলো,” কী হলো সোহেল আপনার মুখে এখন কোন কথা নাই কেন? গতকাল আমাকে যেন কী বলেছিলেন? আমি ন*ষ্টা ? আমরা মা মেয়ে মিলে ব্যবস্যা করি?”

সোহেল সত্যি মাথা নিচু করে হাত জোড় করে মেঘকে বললো,” আমাকে ক্ষমা করো মেঘ৷ আমি সত্যি অনেক বড় অন্যায় করেছি৷ জানি এই অন্যায়ের ক্ষমা হয় না তবুও আমি ক্ষমা চাইছি৷ আর একটা সুযোগ কথা দিচ্ছি আমি আর দ্বিতীয় বার এই ভুল করবো না৷

বড়ভাইকে এভাবে মাথা নিচু করে ক্ষমা চেয়ে আবার সুযোগ চাইতে দেখে তিন বোন যেন আগুনের ফুলকির মত জ্বলে উঠলো৷ সোহেলকে কিছু বলতে নিবে তখনি তাদের মা তাদের ইশারায় চুপ থাকতে বলে৷ নিজে বলে ওঠে,” বউমা আমাদের সত্যি ভুল হয়ে গেছে তুমি আমাদের ক্ষমা করে দেও৷ আমরা আর এই ভুল দ্বিতীয় বার করবো না৷ তুমি দয়া করে বাড়ি ফিরে চলো৷” আখি সহ তার দুই বোন রাগ সামলে তাদের মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে বলতে লাগলো,” ভাবি দয়া করে আর রাগ করো না৷ যা হবার তা হয়ে গেছে এবার ফিরে চলো তোমার সংসারে৷”

সোহেল করুণ চোখে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে মেঘ কী সিধার্ন্ত নেয় এটা জানার জন্য, তখন সোহাগ বলে,” মেঘ ভেবে দেখ তুই কী করবি? এই মানুষ রুপী শয়তান গুলোর সাথে ফিরে যাবি নাকী আমাদের সাথে ফিরবি তবে তুই যা সিধার্ন্ত নিবি আমার সাপোর্ট তাতেই সব সময় পাবি৷

মেঘ চোখের সামনে গত দুইদিন ঘটে যাওয়া সব ঘটনা চোখের সামনে ভেশে উঠলো৷ কিছুটা অভিমান নিয়ে মেঘ বলে উঠলো,” আমি ওনার সাথে সংসার করবো চাচা তবে আমার একটা শর্ত আছে৷”

শর্তের কথা শুনে সোহেলের পরিবার বেশ নড়ে চড়ে উঠলো৷ সবার মাঝে কৌতুহল জমেছে মেঘ কী শর্ত দেয় সেটা জানার জন্য৷

মেঘ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,” আমার শর্ত হলো…….
.
.
.
#চলবে…………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে