#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৪০
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
গাড়িটি গিয়ে থাকলো একটা খোলা অন্ধকার মাঠে।
রাত তখন গভীর।
গাড়ি থেকে পুলিশ আর মুখোশ পড়া ছেলেগুলো নেমে গেল৷
আফজাল রেগে বলে উঠলো, ‘ তোমরা কোথায় যাচ্ছ.? আর এটা কোথায়.??
কেউ কোনো শব্দ করলো না। আফজাল গাড়ি থেকে নেমে অন্ধকারে চারপাশ দেখার চেষ্টা করলো।
পেছন থেকে দুইজন লোক এসে আফজালের হাত, পা বেধে হাঁটু গেড়ে নিচে বসিয়ে দিলো। মুখ শক্ত কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেললো।
আফজাল বুঝতেও পারলো না এই কয়েক মিনিটে কি হয়ে গেল!!
অন্ধকার মাঠে আলো জ্বলে উঠলো। সাদা শাড়ি পড়ে এগিয়ে আসলো এক রমনী।
আফজাল তাকিয়ে রইলো চেষ্টা করেও মুখ থেকে একটা শব্দ বের করতে পারলো না।
” ওয়েলকাম তোমাকে নরপিশাচ। আজ তোমাকে এইসব কিছু থেকে মুক্ত দিতে নিয়ে আসলাম। ভালো লাগছে না..??”
সময় ঘড়ায় উত্তর আসে না।
~ ওপ্স তুমি তো এখন একটা পুতুল হয়ে আছো। আমাকে দেখে ভালো লাগছে না.??
আফজাল মুখ দিয়ে শব্দ বের করার চেষ্টা করলো৷
রমনীটি পাশে দাঁড়ানো একজন পুলিশের থেকে ছুরি নিয়ে আফজালের সামনে বসলো।
আফজালের ভয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে। এতো ভয়ংকর লাগছে কেন সামনের রমনীটি কে..? আফজাল এই নারী কে চিনে না। এটা ওর নিরু হতেই পারে না। ওর নিরু ছিলো কোমল, নরম মনের মেয়ে। একটু কষ্ট পেলেই কান্না করে পুরো বাড়ি মাথায় নিয়ে নিত। আঘাত পেলে চুপচাপ সরে যেত নিজেকে কষ্ট দিত তবুও কাউকে কিছু বলতো না। আফজাল বলতেই পাগল ছিল। আজ সে কাকে দেখছে..??
~অবাক হচ্ছ.? বলেই আফজালের গালে ছু*রি রেখে আলতো করে টান দিল।
হঠাৎ কোমল মুখটা শক্ত হয়ে গেল। আফজালের গাল গুলো শক্ত করে চেপে ধরলো কাঁটা জায়গা দিয়ে ফিরকি দিয়ে রক্ত ঝড়ছে।
নিরুপমা রক্ত হাতে নিয়ে হাসতে লাগলো কি ভয়ংকর হাসি। এই মাঝ রাতে আশেপাশে কোনো জীবজন্তুর ও শব্দ শুনা যাচ্ছে না নিরবতায় চারপাশ থমকে আসে তার মধ্যে এই হাসি ভীষণ ভয়ংকর শোনালো।
নিরুপমা একজন কে ইশারা করলো ফুটন্ত গরম পানি নিয়ে আসলো।
আফজাল কে পানিটা দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘ মনে আছে এই পানির কথা!.???’
আজফার ভীতু চোখে পানির দিকে তাকালো। নিরু কিভাবে জানলো!.?? ভয়ে জীবন যায় যায়।
নিরুপমা পানিটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বললো,’ আমার পিচ্চি বোনটা। কতোবার অনুরোধ করে ছিল, পায়ে ধরে ছিল তুমি শুনোনি। নরপিশাচদের মনেও তো একটু মায়া হয় তোর মতো নরপিশাচের মায়া হলো না। আমার বোন তো তোরও বোন ছিল। সারাদিন জিজু জিজু বলে মাথায় নিয়ে রাখতো কি করলি ওর সাথে!! ।
নিরুপমার রাগে শরীর কাপছে। পাশের জনকে ইশারা করতেই ফুটন্ত গরম পানি আফজালের উপর ডেলে দিল।
গরম পানি পড়তেই ছটফট শুরু করলো আফজাল।
নিরুপমা আবার ইশারা করতে দুইজন গিয়ে আফজালর গলায় রশ্মি পেচিয়ে দুই পাশ থেকে টেনে ধরলো।
আফজালের জীবন যায় যায় অবস্থা নিরুপমা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আফজালের পাশে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ এখন কেমন লাগছে.? এই শাস্তি গুলো ২০, বছর আগে দিতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু এই ভূয়া সমাজ, আইনের হাতে তুলে দিয়ে ভুল করে ছিলাম।
আফজালের চোখ উল্টে যাওয়া দেখে তৃপ্তির হাসি হেঁসে একজন কে ছেড়ে দিতে বললো। রুহ দেহ থেকে যেতে যেতে বেঁচে গেল।
নিরুপমা একটা চেয়ারে আয়েশ করে বসে বলে উঠলো, ‘ বাড়িতে সেইদিন কেউ ছিল না। সবাই গ্রামে গিয়ে ছিলো বিয়ের দাওয়াত খেতে। তুই অফিসের কাজের জন্য আঁটকে পড়ে ছিলি সিলেট। মারিয়াম ওর বাবার সাথে অভিমান করে গ্রামে যেতে চায়নি। বাসায় একমাত্র মারিয়াম ছিল। মারিয়াম প্রায় বাসায় একা থাকে তাই কেউ টেনশন করলো না ওকে রেখে গেল।
সব ঠিক ছিল কিন্তু মাঝ রাতে তুই বাড়িতে আসলি তাও নেশা করে। আমি তোর নেশা করার কথা সবার থেকে লুকিয়ে গিয়ে ছিলাম। ভালোবেসে বিয়ে করে ছিলাম বলে তুই বলতেই পাগল ছিলাম হাহ্ কতোটা ভালোবাসায় অন্ধ ছিলাম। তোর দোষ গুলো আমার চোখে পড়লেও দোষ মনে হতো না। বার বার বুঝিয়ে ছিলাম শুধু একটাই অজুহাত দেখাতি ভালোবাসার তুই তো জানতি আমার দূর্বলতা কি!!
সেই রাতে তুই মারিয়াম কে দেখে নিজের মধ্যে কাপুরুষের রুপ ধারণ করে ছিলি আমার পিচ্চি বোনটা কে জোর করে ধর্ষন করে ছিলি ওর চিৎকার চার দেয়াল ছাড়া কারো কানে যায়নি।
পিচ্চি মেয়েটা লজ্জায় কাউকে বলতে পারেনি। ও তো জানতো আমি কতোটা আফজাল বলতে পাগল ছিলাম।
ও গ্রামে চলে যেতে চাইলো কিন্তু আমরা কেউ দিলাম না। সবার এতো ভালোবাসা সেও ছেড়ে যেতে পারলো না।
তারপর থেকে বার বার এটা সেটা বলে ভয় দেখিয়ে ওর সাথে সম্পর্ক করতে চাইলি মারিয়াম নিষেধ করলে, প্রতিবাদ করতে চাইলে আমাকে ব্যাবহার করলি। দিন দিন মেয়েটার জীবন অন্ধকার নেমে আসলো।
একদিন ঘুমের ঔষধ খাইয়ে তুলে নিয়ে গেলি বন্ধুদের আস্তানায়। তোর বুক কাঁপলো না একবারও! তুই তো পশুদের কাতারেও পরছ না। পশুদের এক বেলা খানা ছিটিয়ে দিলে মালিকের সঙ্গ ছাড়ে না। আমার ভাই নিজের কোম্পানিতে চাকরি দিল নতুন জীবন দিল আর আমি….
তাও আমাদের বুকেই ছু*রি মারলি.?
সেই দিন নিজের সাথে আরেক বন্ধু নিয়ে। নিরুপমার চোখ জলে ভরে উঠলো।
পিচ্চিটার যখন জ্ঞান ফিরলো তোর পায়ে ধরলো বাড়িতে আসতে দিতে তুই হেঁসে ছিলি, বিশ্রী হেসে গরম পানি, এসিডের ভয় দেখিয়ে পিচ্চিটার বেঁচে থাকা জাহান্নাম করে দিলি। ওখান থেকে এসেই নিজের জীবন দিয়ে দিলো মেয়েটা রেখে গেলো আমার জন্য উপহার হিসেবে একটা ডায়রী।
নিরুপমা নিজের চোখের পানি মুছে আফজালের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তোর মতো পিশাচ কে নিজের হাতে শেষ না করলে আমার পিচ্চিটার আত্মা ও শান্তি পাবে না।’
নিরুপমা রেগে আফজালের হাতে কোপ বসালো। দুই কোপে দুই হাত শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেল।
রক্ত চারপাশ ভেসে যাচ্ছে।
নিরুপমার চোখে মুখে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে।
আবারও রশ্মি পেচিয়ে টেনে ধরতে বললো।
গাড়িতে বসা মুখ কালো কাপড় দিয়ে পেঁচানো ছেলেটাকে চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ নির্জন গাড়ি চালিয়ে দে যেভাবে আমার ভাইয়ের উপর চালিয়ে ছিলো।’
নিরুপমা বলতে দেরি গাড়িটা আফজালকে পিষে দিতে দেরি হলো না।
রক্ত লাল হাতের দিয়ে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসলো নিরুপমা।
_________
ডায়রীটা কাঁপা কাপা হাতে শক্ত করে ধরে রাখলো মহুয়া।
সে এসে ছিলো নিরুপমার রুমে । নিরুপমা কে রুমে না পেয়ে চলে যাওয়ার সময় টেবিলের উপর পুরোনো ডায়রী দেখে হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখছিল। কিন্তু ডায়রীতে এমন কিছু পাবে হয়তো সে কখনো কল্পনা করেনি। মারিয়ামের মৃত্যুটা জেনো ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো। পৃথিবীতে কেউ ভালো নেই আর না ছিল। জীবন এতো কঠিন কেন.? মহুয়ার চোখ থেকে পানি পড়ছে। কেউ ইচ্ছে করে এতো সুন্দর পৃথিবী ছাড়তে চায় না আর যে ছাড়ে তার পেছনে হয়তো অনেক বড় সত্যি লুকিয়ে থাকে। মহুয়ার ইচ্ছে করলে সেই লোকগুলোর মতো আফজালের বুকেও নিজের সব রাগ শেষ করে দিতে। আজ থেকে একদিন আগেও কেন এই ডায়রী সে পেল না! তাহলে হয়তো আফজালের শেষ রাত কাল হয়ে যেত।
মহুয়ার ভাবনার মাঝে ঘরের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো নিরুপমা।
কারো উপস্থিতি বুঝতেই হাত থেকে ডায়রীটা নিচে পড়ে গেল।
নিরুপমা শক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো মহুয়া আর নিচে ডায়রীটির দিকে।
মহুয়া জলদি ডায়রীটা তুলে ভয়ে ভয়ে নিরুপমার দিকে তাকালো।
মহুয়াঃ আমি আসি বলে মহুয়া বের হয়ে যেতে নিলে নিরুপমা শান্ত এক গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ যতোটুকু জেনেছো নিজের মধ্যে রাখো।’
মহুয়া ঘোমটা টেনে আঁড়চোখে তাকালো। নিরুপমার সাদা শাড়িতে রক্তের দাগ লাল হয়ে যাওয়া শাড়ি দেখে থমকে গেল।
মহুয়াঃ রক্ত!!
নিরুপমা মুচকি হাসলো।
মহুয়া কি বুঝলো জানা নেই তবে ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা দেখা গেল।
________________
সকাল থেকে সব চ্যানেলে একই সংবাদ দেখাচ্ছে। রাতে আফজাল জেল থেকে পালিয়েছে আর সকালে তার টুকরো টুকরো শরীর মাঠে পাওয়া গেছে। কে খু’ন করেছে.? খুনির কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। যে খু’ন করেছে খুন ঠান্ডা মাথায় আর বুদ্ধি দিয়ে করেছে কোনো ক্লো পাওয়া যাচ্ছে না।
ছোঁয়া চুপচাপ বসে তাকিয়ে রইলো টিভির দিকে। ওর কোনো অনুভূতি হচ্ছে না। সে তো ছোট থেকেই যেনে আসছে বাবা নামক ব্যক্তিটি জন্মের আগেই মা-রা গেছে হঠাৎ ঝড়ের মতো কেউ এসে বললো,’ সে ওর বাবা এক সপ্তাহ না যেতেই এতো নিষ্ঠুরতম ভাবে মৃত্যু। ‘ ওর কোনো অনুভূতি হচ্ছে না চোখে পানি আসছে না।
__________
নির্জনের উপর দিয়ে খুব পেশার গেল কয়েকদিন। আফজালের মৃত্যু নিয়ে ঝামেলা চললো। লাস্ট প্রমাণিত হলো নিজের লোকদের হাতেই খু’ন হয়েছে আফজাল এটাসেটা দিয়ে ধামাচাপা পড়ে গেল আফজালের বিষয়টা।
নিরুপমা ছাঁদে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে । মেঘলা এসে পাশে দাঁড়ালো। নিরুপমা হেঁসে বলে উঠলো , ‘ তোমাকে ধন্যবাদ মেঘলা।’
মেঘলাঃ ধন্যবাদ বলবেন না আন্টি।
নিরুপমাঃ আমাকে আন্টি না বলে ফুপিমণি বলো। আমি তোমার ফুপিশাশুড়ি।
মেঘলা হাসলো।
মেঘলাঃ আর মাত্র তিনদিন ফুপিমণি তারপর আমাদের সব শেষ। তিন মাস শেষ।
নিরুপমাঃ ভালো করে ভেবে দেখো বিয়ে, জন্ম, মৃত্যু আল্লাহর ইচ্ছে। শ্রাবণ কিন্তু খারাপ ছেলে নয় সব দিক দিয়ে সেরা।
মেঘলাঃ আমার শাশুড়ী আমাকে পছন্দ করে না।
দেখতে দেখতে তিনদিন চলে গেল।
মেঘলা ব্যাগ গুছিয়ে রাখলো। শ্রাবণ আসলে চলে যাবে। আচ্ছা শ্রাবণ কি ওকে আটকাবে..? বলবে যেও না, আমি তোমার সাথে শেষ অব্দি থাকতে চায়। জীবন তো একটাই এই এক জীবনে আমি তোমাকে চাই।
নিজের ভাবনায় নিজেই বিরক্ত হলো। আবার নিজেকে জিজ্ঞেস করলো ” তুমি কি পারবে ওকে ছাড়া থাকতে.? ওকে ভুলে যেতে.? ওর পাশে অন্য নারীকে দেখতে.? পারবে না মেঘ! তাহলে যেতে চাচ্ছ কেন.? তারা তো তোমাকে যেতে বলেনি।
মহুয়া মন খারাপ করে মেঘলার রুমে বসে আছে। মেঘলা যাওয়ার পর সেও চলে যাবে। মেঘলা গেলে বাড়িটা কেমন নিশ্চুপ হয়ে যাবে। এমনিতেই বাড়িটা কেমন হয়ে গেছে আগের মতো হুই হুল্লোড় নেই।
মেঘলা ব্যাগ নিয়ে নিচে নেমে আসলো। সবাই মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে। আমেনা বেগম সোফায় বসে আছেন।
আনোয়ার চৌধুরী মেঘলার মাথায় হাত রেখে বলে উঠলেন,’ ভালো করে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নও। তুমি যথেষ্ট বড় হয়েছো নিজের মন যা বলে তাই করো।’
হালিমা চৌধুরী জড়িয়ে ধরলেন। নিষেধ করলেন যেতে। ছোঁয়া রাগ করে বলে উঠলো, ‘ ভাবি মিস করবো। কয়েকদিন থেকে আবার ভাইয়ার কাছে চলে এসো। ‘
মেঘলা শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে হেঁসে বললো, ‘ আসি আন্টি দোয়া করবেন। ভালো থাকবেন। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবেন নিজের যত্ন নিবেন। ‘
ধীর পায়ে দোতলায় গিয়ে আফরোজা বেগমের পাশে বসলো। মেঘলার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে সবাইকে ছেড়ে যেতে চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি আফরোজা বেগমের হাতে পরলো। আফরোজা বেগম শুধু উপরের দিকে তাকিয়ে আছেন উনি তো মানুষ চিনেন না। শুধু বেঁচে আছেন, তাকিয়ে আছেন জীবন চলছে।
মেঘলা বাড়ি থেকে বের হতে নিলে কেউ আটকাতে গেলে আমেনা বেগম বলে উঠলো, ‘ আটকাবে না যেতে দাও। এই কয়েকদিনের মধ্যে বাড়িতে দুই ছেলের বিয়ের আয়োজন শুরু হবে।’
হালিমা বেগমঃ দুই ছেলে.?
আমেনা বেগমঃ হুম আমার বড় আর ছোট ছেলের।
মেঘলা আর এক মুহূর্ত দাড়ালো না মহুয়ার দিকে তাকিয়ে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। দুইজন আজ একই জায়গায় দাঁড়িয়ে।
হালিমা বেগমঃ কি বলছেন ভাবি শ্রাবণের বউ দাঁড়িয়ে আছে কিসের বিয়ে.?
আমেনা বেগম মুচকি হেঁসে বসে রইলেন। কি চলছে উনার মাথায়!.??
মেঘলা শ্রাবণের সাথে দেখা না করে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। গাড়িতে বসেই কাঁদতে শুরু করলো। এতো শক্ত মনের মেয়েটাও আজ কাঁদছে প্রিয় মানুষটিকে হারানোর ভয়ে।
চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।
#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৪১
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। মেঘলা চলে গেছে আজ দুইদিন।
মহুয়া হাতের ঘড়িটার দিকে তাকালো। সময় দেখে নিলো আর পাঁচ মিনিট তারপরেই ট্রেন ছেড়ে দিবে।
মহুয়া দুই একবার জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো। মনে মনে বলে উঠলো, ‘ আপনি তো আসেন, একবার বলেন যেও না।’
বুকে সব না বলা যন্ত্রণা গুলো চাপা দিয়ে ছুটলো নিজের গন্তব্যে। চোখে ভিজে উঠতে চাইলে চোখ বন্ধ করে রাখলো।
কি হবে সামনে..? কিছুই জানে না মহুয়া সে ছুটছে নিজের বাড়িতে মামা মামি কি ওকে দেখে জড়িয়ে ধরবে নাকি তাড়িয়ে দিবে!! তাড়িয়ে দিলে সে কোথায় যাবে..??
বাড়ি থেকে সবাই কে বলে বের হলেও কেউ থাকতে বলেনি ছোঁয়াও না। শুধু বললো সাবধানে থেকো খুব জলদি দেখা হবে।
মহুয়া শুধু মুচকি হাসলো। এটাই হয়তো শেষ দেখা। সে আর কখনো এখানে আসবে না তাদের মুখোমুখি হবে না৷
আমেনা বেগম যখন বললো,’ আহনাফের বিয়েতে তুমি আসবে, না আসলে কষ্ট পাব।’
মহুয়া জোর পূর্বক তাকিয়ে হেঁসে ছিলো। ভেতরে মনে হচ্ছিল কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
তিন ঘন্টা পর গাড়ি থেকে নেমে রিক্সায় উঠে গেল। মনে হাজারো ভয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাড়ির দিকে।
বাড়ির সামনে এসে মহুয়া বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।
বাড়ির আশপাশে কেমন আগাছায় ভরে গেছে। মহুয়া এক পা এগিয়ে যাচ্ছে আর বুকের ভেতর কাপছে। দরজার সামনে টুকা মারলো কয়েক বার।
অনেক সময় চলে গেল খট করে দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো মহুয়ার মামি।
মহুয়া মামিকে দেখেই ভয়ে মাথা নিচু করে নিল।
বৃদ্ধ মহিলা মহুয়াকে দেখে অশ্রুসীক্ত চোখে তাকিয়ে বললো।
~ মহুয়া!…
মহুয়া ভয়ে চুপসে গেছে।
~ মহুয়ারে তুই এতোদিন পর কই থাইকা আইলি.??
মহুয়াঃ মামি..
মহুয়া আর কিছু বলার আগেই মহুয়ার মামি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
মহুয়া থমকে গেল কিছু সময়ের জন্য। কখনো যেই মহিলা ভালোবেসে ওর হাতটাও ধরেনি আজ ওকে জড়িয়ে ধরে আছে। এটাও বিশ্বাস করতে হবে.? মহুয়া কি স্বপ্ন দেখছে!.?
মহিলা মহুয়াকে ছেড়ে টেনে ঘরে নিয়ে গেল।
মহুয়া কে বসিয়ে পানি এনে দিল।
মহুয়া মাথা নিচু করে বললো,’ মামি আমি আগে ফ্রেশ হয়ে আসি।’
মামিঃ গরম পানি করে দিব.?
মহুয়াঃ না, না প্রয়োজন নেই মামি।
মামিঃ তাহলে ফ্রেশ হয়ে আয়।
মহুয়া আশেপাশে তাকিয়ে বললো,’ মামি মামা, ভাই,বোন ওরা কই.??
মামি আঁচলে মুখে গুঁজে চোখের পানি মুছে বলে উঠলো, ‘ তুই আগে গোসল করে খেয়ে দেয়ে একটু ঘুমা তারপর তোর সাথে অনেক গল্প করবো। ‘
মহুয়া বার বার অবাক হচ্ছে মামির আচরণে। কি হয়েছে.? এটা তো মহুয়ার সেই মামি নয় এতোটা চেঞ্জ কিভাবে হলো.? মাথায় এতো এতো প্রশ্ন নিয়ে নিজের সেই ছোট ঘরটার দিকে যেতে নিলে ওর মামি ওকে আঁটকে ঘরের সবচেয়ে সুন্দর রুমটা ওকে দিল।
মহুয়া রুমটার দিকে তাকিয়ে ভাবলো,’ কতো শখ ছিল একদিন এই রুমে ঘুমানোর কখনো আশেপাশেও আসতে দিত না মিম আর আজ এই রুম মামি আমাকেই দিয়ে দিল!!.? কিছু তো একটা হয়েছে না হলে মামি এতোটা পাল্টে যেত না। বাকিরা সবাই কোথায়.?
____________
অফিস থেকে বাসায় আসতেই রায়হান সাহেব মেঘলা কে ডাকলো।
মেঘলা ফ্রেশ হয়ে এসে রায়হান সাহেবের পাশে বসলো।
রায়হান সাহেবঃ কি হয়েছে তোমার.?? ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছো না কারো সাথে কথা বলো না।
মেঘলাঃ অফিসে ঝামেলা তাই ঠিক ভাবে সময় পাচ্ছি না।
রায়হান সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমাকে তুমি কাজ, অফিস সম্পর্কে শিখিও না মেঘলা। যা হয়েছে ভুলে যাও। তোমার আম্মু কষ্ট পায় তোমাকে এভাবে দেখলে।’
মেঘলা কিছু না বলে উঠে নিজের রুমের দিকে চলে গেল। রায়হান সাহেব তাকিয়ে রইলো মেয়ের যাওয়ার দিকে।
মেঘলা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে কফির মগ হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেল।
আজ দুই দিন শ্রাবণ একবারও কল দেয়নি। ওর কি একবারও মেঘলার কথা মনে পড়েনি? মেঘলা কি শ্রাবণের মনে একটুও জায়গা করে নিতে পারেনি..? চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে মেঘলা চোখের পানি মুছে মোবাইল হাতে নিয়ে মহুয়া কে কল দিল মোবাইল বন্ধ। আজ মহুয়ার চলে যাওয়ার কথা মেয়েটা চলে গেছে.? মামা মামি কি ওকে বাসায় জায়গা দিয়েছে.?? মেঘলা চুপচাপ বসলো খুব টেনশন হচ্ছে মেয়েটার জন্য।
মেঘলা বসে হেলান দিয়ে আকাশের তাঁরা গুণতে শুরু করলো। ছোট থেকেই মেঘলার এটা অভ্যাস। যখন সে ভীষণ চিন্তিত থাকে তখনি আকাশের তাঁরা গুণতে শুরু করে।
দূর থেকে এক জোরা চোখ তাকিয়ে আছে মেঘলার বারান্দার দিকে। মেঘলা কি তা জানে? উঁহু জানে না। প্রতিরাতে শ্রাবণ অফিস থেকে ফেরার পথে তাকিয়ে থাকে মেঘলার বারান্দার দিকে একবার চোখের দেখা দেখে চলে যায় নিজের বাড়িতে।
_______________
মহুয়া ঘুমানোর চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারলো না৷ রুম থেকে বের হয়ে পুরো বাড়ি একবার ঘুরে দেখলো এক বছরে বাড়িটা কতোটা পাল্টে গেছে।
মামির রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো মামি জায়নামাজে বসে আছে।
মহুয়া হাসলো এই প্রথম মামিকে জায়নামাজে দেখলো।
চলে যেতে নিলে উনি ডাকলেন। মহুয়া রুমে গিয়ে চুপচাপ বসলো।
মামিঃ কোথায় ছিলি এতোদিন মহুয়া.? কেমন আছিস.?
মহুয়াঃ আলহামদুলিল্লাহ মামি ভালো।
মামিঃ কোথায় ছিলি বললি না। আচ্ছা যখন তোর মন চায় বলিস।
মহুয়াঃ মামা আর….
মহুয়া আর কিছু বলার আগেই ওর মামি বলে উঠলো , ‘ তোর মামা আর পৃথিবীতে নেই। তুই পালিয়ে যাওয়ার পর ছেলে পক্ষ পাঁচ লাখ টাকা দাবী করে এক টাকাও কম নিবে না। তোর মামা তো পাঁচ লাখ এনে খরচ করে ফেলে ছিল তখন হাতেও টাকা ছিল না বাধ্য হয়ে তোর জায়গায় মিম কে বিয়ে দিয়ে দেই। অন্যের সন্তানের জীবন নষ্ট করতে গিয়ে আল্লাহ আমাকে বুঝিয়ে দিল আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেননা। মেয়ের টেনশনে সারাদিন চুপচাপ হয়ে গেল তোর মামা ঠিক তখনি দুই ছেলে না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়ে আসলো কয়েকদিন আমাদের সাথেই ছিল তারপর ওদের বউ নিজেদের সাথে নিয়ে শহরে চলে গেল। আমাদের আর খুজ খবর নেয়নি।প্রথম প্রথম এক দুই বার কল দিয়ে খুঁজ নিলেও এক সময় একদম যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। মিম একদিন কান্নাকাটি করে পালিয়ে আসলো আমাদের বাড়ি। প্রতিরাতে মাইর খাইতে খাইতে আমার মাইয়াডার মুখের দিকে তাকানো যায় না। ওরা পাওয়ারফুল লোক পুলিশ নিয়ে এসে ওরে নিয়ে গেল। ৬০বছরের আধা বুড়া স্বামী আমার মেয়েটার বয়স তো ১৮ ও হয় নাই। মেয়ের টেনশনে টেনশনে তোর মামা স্টোক করে ঘুমেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। দুই ছেলে আসলো কিন্তু বউরা পরের মেয়ে তারা আসলেই কি না আসলেই কি। মেয়েটাও বাবার শেষ মুখ দেখতে পারলো না ওরা আর আসতে দেয়নি কোনো যোগাযোগ রাখেনি।
শেষ করে মহুয়ার দিকে তাকালো। মহুয়ার চোখে জলে ভরে উঠলো।
উনি চোখের জল মুছে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ এইগুলো আমাদের পাপের শাস্তিরে মহুয়া। অনেক অন্যায় করেছি তোর সাথে কোন মুখে ক্ষমা চাইবো। আমাদের ঘরের লক্ষী বের হয়ে যেতেই সুন্দর গুছানো সংসারটা ভেঙে গেল।
মহুয়া আর এক মুহূর্ত বসলো না বের হয়ে রুমে চলে গেল। কেমন জেনো সব কিছুর জন্য নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে। ওইদিন না পালালে মিমের জীবন সবার জীবন এমন হতো না।
____________
সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে মহুয়া বাহিরে বের হতেই অবাক হলো। চোখ কচলে আবার তাকালো।
মেঘলা হেঁসে এসে মহুয়া কে জড়িয়ে ধরলো সাথে ছোঁয়া।
মহুয়া দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো ওদের।
ওদের ফ্রেশ হতে দিয়ে মহুয়া আসলো রান্না ঘরে ওর মামি বারবার নিষেধ করলো। মহুয়া উনাকে বের করে দিয়ে নিজের সকালের নাস্তা তৈরি করে ওদের আগে খাবার দিল।
ছোঁয়াঃ মেহু তোদের বাড়িটা খুব সুন্দর।
মহুয়া হেঁসে বললো,’ তোমাদের বাড়ির এক কোনা হবে।”
ছোঁয়াঃ এভাবে বলো না সুন্দর ভীষণ ছোট হলেও।
মেঘলা চুপচাপ খাচ্ছে,’ তোমাকে বার বার কল দিয়ে বন্ধ পাচ্ছিলাম। খুব টেনশন হচ্ছিলো।’
মহুয়ার মামির দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেল। ওর টেনশন ছিল মহুয়াকে বের করে দিল নাকি মারধর করলো।হয়তো মোবাইল নিয়ে আঁটকে রেখেছে। অনেক কিছু ভেবে ছোঁয়া কে কল দিয়ে চলে আসলো। মহুয়াকে ভীষণ আপন মনে হয়।
মহুয়া তো ভীষণ খুশি ওদের পেয়ে সাথে মামিও।
মামিকে এতোটা ভালো আচরণ করতে দেখে ছোঁয়া বলে উঠলো, ‘ কি ব্যাপার এতো ভালো হলো কিভাবে.? ‘
মহুয়াঃ রাতে সব বলবো।
_______
মেঘলা ছোঁয়া এসেছে দুইদিন। দুইদিনে মামি ওদের অনেক আপন করে নিয়েছে নিজের মেয়ের মতো আদর যত্ন করেছে।
মেঘলা বললো খুব জলদি ওরা মিমের শশুর বাড়ি যাবে কিন্তু তার আগে একটা জায়গায় যেতে হবে আজ। মিমের ঝামেলা শেষ করবে বলে কথা দিল।
তিনজন মিলে রেডি হয়ে বের হলো। মেঘলা মহুয়াকে একটা কালো শাড়ি পড়িয়ে দিল সাজগোজ ছাড়াই ভীষণ সুন্দর লাগছে৷
নিজেদের গন্তব্যে এসে মেঘলা মহুয়াকে নিয়ে ঢুকলো। প্রায় রুম গুলো অন্ধকার।
মহুয়াঃ এখানে তো…
মেঘলাঃ চুপপ এখন কোনো কথা হবে না।
মহুয়াকে একটা রুমে নিয়ে গেল।
লাইট জ্বালাতেই নিচে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকতে কাউকে দেখে বুক ক্ষনিকের জন্য কেঁপে উঠল।
মহুয়াঃ পলাশ।
রুমে লাইটের আলো পেয়ে পিটপিট করে তাকালো পলাশ। চোখের সামনে মহুয়াকে দেখে প্রথম চিনতে পারেনি।
ছোঁয়াঃ কে উনি.?
মেঘলাঃ উনার পরিচয় অনেক কয়টা বলবো! তার থেকে ভালো এখন শুধু দেখে যাও।
পলাশ মহুয়াকে দেখে শুয়া থেকে উঠে বসে তাকিয়ে থাকে। দাঁড়িয়ে মহুয়াকে ছুতে আসলে মহুয়া কয়েক পা পিছিয়ে যায়।
মহুয়া রুম থেকে বের হয়ে যেতে নিলে মেঘলা হাত ধরে বলে উঠে,’ বাকি সবার শাস্তি আমি দিয়েছি। কাউকে ছাড় দেইনি কিন্তু এই বিশ্বাসঘাতকের শাস্তি তুমি নিজে দিবে।মহুয়া ভুলে গেলে হবে না সে তোমার সাথে অন্যায় করতে না চাইলেও হাজারো মেয়ের স্বপ্ন ইজ্জত শেষ করেছে ওদের নরকে ঠেলে দিয়েছে।
মহুয়া পেছন ফিরে পলাশের দিকে তাকালো। চুল বড়বড়, দাঁড়ি মুখ ভর্তি হয়ে গেছে, পড়নের কাপড় ছিড়া কেউ দেখলে পাগল ছাড়া কিছুই বলবে না।
মহুয়া শক্ত চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ ওর খাবার বন্ধ করে দাও। প্রতি সপ্তাহে একটা রুটি আর এক গ্লাস পানি দিবে। এভাবে যতোদিন বাঁচে। খাবারের যন্ত্রণার চেয়ে পৃথিবীতে এর চেয়ে বড় শাস্তি আমি মনে করি কিছুতেই নেই।’
পলাশ আজ ছটফট করলো না। হয়তো নিজের ভুলগুলো আজ চোখে পড়েছে।
এখান থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়াতেই ছোঁয়া বলে উঠলো, ‘ শহরে যেহেতু এসেছি চলো একটু শপিং করে যাই। ‘
মেঘলাও না করলো না মহুয়ার মন খারাপ ইচ্ছে না থাকলেও ওদের সাথে গেল।
শপিং মলের সামনে গিয়ে থমকে গেল সবাই। মেঘলা মাক্স দিয়ে মুখ ঢেকে নিল আর মহুয়া চুলগুলো সামনে এনে কেটে পড়তে চাইলো তবুও ওদের দেখে ফেললো নির্জন।
নির্জনঃ আরেএ আমার দেখো কি ভাগ্য দুই ভাবি আর সাথে ব…..
আহনাফ ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই নির্জন হেঁসে বললো, ‘ বোন আরকি। দুই ভাবি আর উনাদের বোনের সাথে দেখা হয়ে গেল।’
আহনাফঃ চোখে কম দেখলে আমার কাছে আয় চশমা দিয়ে দিব ওটা উনাদের বোন নয় আমাদের বোন।
নির্জন মুখ ভেংচি কাটলো।
শ্রাবণ হেঁসে বললো,’ দিন দিন পুলিশে গিয়ে নিজের মধ্যে মেয়েলি সব ভাব নিয়ে নিচ্ছিস। ‘
নির্জনঃ তোমরা দুইজন আমার পিছু না দৌড়ে নিজের বউদের ধর।
আহনাফ ছোঁয়া কে ঢাক দিতে ছোঁয়া থেমে গেল।
মহুয়া মেঘলা চলে গেল ভেতরে।
ওরা কিনা কাটা শেষ করে বের হলো আহনাফ বা শ্রাবণ কেউ ওদের সাথে কথা বললো না ডাকও দিলো না।
নির্জন এসে টুকটাক ফাজলামো করলো।
ছোঁয়া ওদের বিদায় জানিয়ে মেঘলা মহুয়ার সামনে গাড়িতে উঠে গেল।
রাগে দুঃখে মেঘলার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। খুব সুন্দর করে সেই জল আড়াল করে নিলো মেঘলা।
মহুয়া চুপচাপ বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
একবারও তাকালো না আহনাফ। তাহলে কি সব ক্ষনিকের ভালো লাগা ছিল!.? বিয়ে করে নিচ্ছে পুরুষ মানুষ হয়তো এমনি। মনে মনে কতো কথা ভেবে নিল মহুয়া।
বাড়িতে এসেও তেমন কথা বললো না কেউ। ছোঁয়া বুঝতে পারছে মহুয়া মেঘলার মুখ এমন ভার কেন।
মামি সবাই কে ডেকে গেল কিন্তু কেউ আর নামলো না খেতে।
রাতে মোবাইল বন্ধ করে ঘুমিয়ে গেল মহুয়া।
মেঘলার ঘুম আসছে না রুম থেকে বের হয়ে পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখলো। মামির রুমে উঁকি দিয়ে দেখে উনি জেগে আছে। মহুয়া হেঁসে বললো,’ মামি কি করছেন!.??’
মামি একটা এলবাম বন্ধ করে বললো, ‘ আসো মেঘলা।’
মেঘলা ভেতরে গিয়ে টুকটাক কথা শুরু করলো। দুইজন কয়েক দিনে বেশ মিশে গেছে। মামি বললো,’ চলো তোমাকে এই বাড়ির সবার ছবি দেখাই। এই এলবাম অনেক পুরোনো মহুয়া কখনো দেখেনি। ‘
মেঘলাঃ এটাতে ওর আব্বু আম্মুর ছবি আছে.?
মামিঃ হুম
মেঘলাঃ কেন দেখেনি কখনো.?
মামিঃ আমি এটা কখনো বের করিনি। আজকাল প্রায় বের করা হয় একা একা থাকি মন খারাপ হলে ছবি গুলো দেখি আর নিজের পাপের জন্য মাফ চাই।
মেঘলা আগ্রহ নিয়ে এলবাম হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতে শুরু করলো।
অনেক পুরোনো ছবি চোখে পড়ছে। আসতে আসতে এলবামের মাঝ পৃষ্ঠা গুলোতে এসে চোখ আটকে গেল মেঘলার পাগলের মতো একের পর এক পৃষ্ঠা পাল্টাতে শুরু করলো। মামির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ এই বাচ্চা মেয়েটা কে.? আর পাশের মহিলা পুরুষটি কে…???’
মামি কাঁপা কাঁপা হাতে হাতবুলিয়ে বললো,’ এটা মহুয়ার বড় বোনছিল আর উনারা ওর আব্বু আম্মু। একটা এক্সিডেন্টে বড় বোন মাহি আর ওর আব্বু মা-রা যায় এই কথা শুনেই ওর মা ও তিনদিনের দিন ঘুমের মধ্যে না ফেরার দেশে চলে যায় মহুয়া একদম এতিম হয়ে যায় তখন আমি ওকে বুকে আগলে নেই। ‘
মেঘলা কথা বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না একদম চুপ হয়ে গেল অথচ শরীর কাঁপছে, ঠোঁট, চোখ কাপছে। কাঁপা কাঁপা পায়ে রুম ছেড়ে নিজের রুমে চলে আসলো। মহুয়া গভীর ঘুমে মেঘলা গিয়ে ওর পাশে বসে তাকিয়ে রইলো। কাঁপা কাঁপা হাত মহুয়ার মাথায় রেখে বলে উঠলো, ‘ সেই পিচ্চি বোনটা আজ এতো বড় হয়ে গেছে। চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি পড়লো মহুয়ার গালে।’
চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।