#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৩৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
সকাল থেকেই আফজালের মন বেশ ফুরফুরে।
আমেনা বেগম স্বামীকে চা দিয়ে আফজাল সাহেবের জন্য চা বানালেন।
নিরুপমা আমেনা বেগমের হাত থেকে চা নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসলেন।
আফজাল হাসলো নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বিনিময়ে নিরুপমাও মুচকি হাসলো।
আজাদ চৌধুরী চা শেষ করে উঠে গেলেন।।
নিরুপমা আফজালের দিকে চা বাড়িয়ে দিল।
আফজাল ধরার আগেই হাত থেকে কাপ ছেড়ে দিলো।
চায়ের কাপ গিয়ে পড়লো আফজালের হাঁটুর উপর।
নিরুপমা ভয়ে চুপসে গেলেন।আফজাল ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে নিয়েছেন।
নিরুপমা সরি সরি বলে টেবিলে রাখা গ্লাসের সবটা পানি ডেলে দিলো আফজালের উপর এতে আফজাল আর্তনাদ করে উঠলো।
টেবিলের উপর এই মাত্র ফুটন্ত গরম পানি রেখে ছিলেন আমেনা বেগম উনার শশুরের জন্য।
আফজালের আর্তনাদে সবাই দৌড়ে আসলো।
আফজাল রাগী চোখে নিরুপমার দিকে তাকালো নিরুপমার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি।
নিরুপমা আফজালের কানে কানে বলে উঠলো, ‘ তুমি এখনো আগের মতোই কাঁচা রয়ে গেলে বৃদ্ধ হচ্ছ একটু তো বুদ্ধি আনো না হয় তোমার ভাড়া করা কুত্তা গুলো থেকে ধার নাও।’
আফজাল অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাতেই নিরুপমা হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আজ তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে অপেক্ষা করো।’
আফজালের পা জ্বলে যাচ্ছে চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে নিরুপমার কথায় তেমন গুরুত্ব দিলো না।
আফজাল নিজের রুমে বসে আছে। পায়ে বার বার পানি দিচ্ছে। একদম চামড়া উল্টে গেছে।
আমেনা বেগম দুই বার এসে জিজ্ঞেস করে গেছেন ডাক্তার ডাকবে কিনা। আফজাল বার বার নিষেধ করে দিয়েছে।
নিরুপমা হাতে মলম নিয়ে এসে আফজালের সামনে রাখলো৷
আফজালঃ ইচ্ছে করে করেছো তাই না!.?
নিরুপমাঃ যাক এতো দিনে একটু বুদ্ধি হয়েছে তোমার।
আফজাল হাসলো।
নিরুপমাঃ ভাঙবে তাও মচকাবে না।
আফজালঃ এইগুলো করে লাভ কি!.? আমার কিছুই করতে পারবে না।
নিরুপমাঃ তোমার কিছু করতে পারবো কিনা জানিনা তবে তোমার পাপের রাস্তা সব এক এক করে শেষ করে দিব।
আফজালঃ হাস্যকর।
নিরুপমাঃ মলমটা লাগিয়ে নাওও।
আফজাল মলমটা ভালো করে দেখে লাগিয়ে নিল।
নিরুপমা মুচকি হেঁসে পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
আফজাল সাহেব আসতে আসতে বলে উঠলো, ‘ পা জ্বলছে কেন!.?’
নিরুপমার মুখে হাসি দেখেই রাগ আর কন্ট্রোল করতে পারলো না।এক তো দুইবার ফুটন্ত গরম পানি একই জায়গায় পড়েছে তার উপর মলমে কিছু মিশানো ছিল।
আফজাল রেগে নিরুপমার গালে থাপ্পড় মারতে গেলে নিরুপমা নিজেই আফজালের গালে থাপ্পড় মেরে বসে।
আফজাল হতভম্বের মতো তাকিয়ে আছে নিরুপমার দিকে।
নিরুপমা রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেই আফজালের ফোন বেজে ওঠে সাথে হাসি ফুটে উঠে নিরুপমার মুখে।
আফজাল থমথমে মুখে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে হাতে নেয়। থাপ্পড় খেয়েছে তাও নিরুপমার হাতে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। এতো সাহস কিভাবে আসলো!.?
আফজাল ফোন কানে দিয়ে হেলো বলতেই অপর পাশ থেকে কিছু একটা শুনে চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো রেগে মোবাইল দেওয়ালে ছুড়ে মারলো।
চিৎকার করে বলে উঠলো, এতো গুলো মেয়ে পুলিশ কিভাবে ধরলো!? কার এতো বড় সাহস.!??
_____________
আজ দুপুরের দিকে নির্জন মেঘলা বাড়িতে আসলো।
মেঘলার দিকে সন্দেহের সৃষ্টিতে তাকালেন আমেনা বেগম।
আমেনা বেগমঃ আজকাল তোমাদের দুইজনকে সব সময় এক সাথে দেখা যায়। আমার ছেলেকে ফাঁসিয়ে শান্তি হয়নি তোমার!.?? এখন দেবরের সাথেও!
মেঘলা অপমানে মাথা নিচু করে নেয়।
নির্জন অবাক হয়ে বলে, ‘ কি বলছো বড় আম্মু!.??’
আমেনা বেগমঃ তুমি চুপ থাকো!!. আক্কেল জ্ঞান সব তো পকেটে নিয়ে রাখো। নিজের মায়ের অবস্থা দেখেছো.? দিন কে দিন ঘর বন্ধি হয়ে যাচ্ছে এর মধ্যে এমন কাজ করো না জেনো একদম শেষ হয়ে যায়।
নির্জনঃ বড় আম্মু তুমি একটু বেশি ভেবে ফেলছো।
আমেনা বেগমঃ আমি অন্ধ নই। আজ বাসার মানুষের চোখে পড়ছে কাল বাহিরের মানুষ বলাবলি শুরু করবে।
মেঘলা লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সে কিছুতেই শাশুড়ীর সাথে তর্ক করতে চায় না। অবশ্য শাশুড়ী ভুল কিছু বলছে না। ওদের সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন ছিল।
” আন্টি আপনি যেমন ভাবছেন তেমন কিছু না, নির্জনের ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে সেই জন্য হসপিটালে আমি মেঘলা কে কল দিয়ে ডেকে ছিলাম।”
আমেনা বেগম পেছনে ফিরে সাজ্জাদ কে দেখলেন।
আমেনা বেগমঃ আরে সাজ্জাদ অনেক দিন পর আসলে।
সাজ্জাদ হেঁসে আমেনা বেগমের দিকে তাকালো।
আমেনা বেগম চিন্তিত হয়ে নির্জনের দিকে তাকালো। এত্তোক্ষন রাগের বসে খেয়াল করা হয়নি।
হাতে, পায়ে বেন্ডেজ করা কপালেও কেটে আছে।
আমেনা বেগমঃ কিভাবে হলো এইসব!.?
নির্জনঃ গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়ে ছিলো বড় আম্মু তবে বেশি কোনো সমস্যা হয়নি।
আমেনা বেগম নির্জনের কপালে হাত রেখে দেখছেন হাত, পা দেখে রেগে বলে উঠলো, ‘ বার বার তোর বড় আব্বু নিষেধ করেছে এই জব নিস না তাও তুই এটাই নিলি৷ কি করেছিস শরীরের। এদিকে আয়।
নির্জনকে সোফায় বসিয়ে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে আর বকছে।
সাজ্জাদ মেঘলার পাশে গিয়ে দাড়ালো।
সাজ্জাদঃ মেঘলা..
মেঘলাঃ ভাবি!
সাজ্জাদঃ কেনো! নাম ধরে বললে সমস্যা.??
মেঘলাঃ ভাবি ডাকটা সুন্দর আর ভাইয়ের বউকে ভাবি বলে।
সাজ্জাদ মেঘলার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আপনার জন্য একটা জিনিস এনে ছিলাম।’
মেঘলাঃ আমার জন্য! কি.?
সাজ্জাদ একটা পেকেটে মুড়ানো ব্যাগ মেঘলার হাতে দিলো।
মেঘলা খুলতে চাইলে সাজ্জাদ এখন খুলতে নিষেধ করলো।
নিজের রুমের দরজা থেকে দাঁড়িয়ে ড্রয়িং রুমের সব দেখছে আফজাল।
ঈগল চোখে তাকিয়ে রইলো মেঘলার দিকে এতোদিন মেয়েটাকে সন্দেহ না হলেও আজ ভীষণ ভাবে রহস্যময়ী লাগছে। এইসব কিছুর পেছনে নির্জন আছে আর নির্জনের পেছনে কে!.??? মেঘলা.?
আফজাল মনে মনে ছয় নয় কষলো একপর্যায়ে কাউকে কল দিয়ে বললো,’ আজকের মধ্যে এই মেয়ের সব বায়ু ডাটা চাই।’
_________
মহুয়া আহনাফের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
আহনাফ অবাক হয়ে মহুয়ার দিকে তাকালো।
মহুয়া রাগী দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে তাকিয়ে চোখ অন্য দিকে করে নিলো।
ডক্টর সোনিয়া বেশ লজ্জায় পড়ে গেলেন৷
এমন কিছু হবে জানলে এই সময় আহনাফের কাছে আসতেন না।
আহনাফ শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ মহুয়া বসো।’
মহুয়া হাতের টিফিন বক্স রেখে চুপচাপ বসলো।
ডক্টর সোনিয়া কিছু বলতে চাইলে আহনাফ থামিয়ে দিল।
আহনাফঃ ডক্টর সোনিয়া আপনি এখন আসেন আমরা বাকি কথা পড়ে বলব।
মহুয়া রাগে বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ হুহ্ এখন প্রেম আলাপ করলে তো আমি শুনে ফেলবো।’
আহনাফ মনে মনে হাসছে মহুয়ার মুখ দেখে।
ডক্টর সোনিয়া চলে যেতেই আহনাফ চেয়ার ছেড়ে মহুয়ার সামনে এসে বসলো।
মহুয়া অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
আহনাফঃ আমার বউ দেখি ভীষণ হিংসুটে। এটা ঠিক না উদার মনের ডক্টর আহনাফ চৌধুরীর বউ এতো কিপটে।
মহুয়াঃ কিপটে.?
আহনাফঃ না, ভীষণ জেলাস।
মহুয়া মুখ ভেংচি কেটে বলে উঠলো, ‘ মোটেও না।’
আহনাফঃ তাহলে তো ভালোই হলো আমার আর কিছু বলতে হবে না। শুধু শুধু প্যারা নিচ্ছিলাম।
আহনাফ উঠে দাঁড়ালো, মহুয়া অভিমানী সুরে বলে উঠলো, ‘ আপনি ওই মেয়ের সাথে কি করছিলেন!.?’
আহনাফঃ প্রেম করছিলাম। ঘরের বউ একজন পাষাণী সেই জন্য বাহিরে প্রেম খুঁজতে হয়।
মহুয়া রাগে ফুঁসে ওঠলো।
মহুয়াঃ সব ছেলেরাই এক।
মহুয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বের হয়ে যেতে চাইলো আহনাফ মহুয়ার হাত ধরে নিলো। নিজের দিকে ঘুরিয়ে টেনে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরলো। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলো, ‘ শান্ত হও, এতো রেগে গেলে হবে!.? তুমি জানো রাগ শরীরের জন্য কতোটা ক্ষতিকর!.?’
মহুয়াঃ জানতে হবে না আমার ছাড়েন। যার কাছে প্রেম খুঁজেন তাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন।
আহনাফঃ তুমি তো আমাকে ভালোবাস না, পছন্দ করো না, স্বামী হিসেবে মানো না তাহলে জ্বলছে কেনো.? এতো জেলাস কেনো.??
মহুয়াঃ আমি মোটেও জেলাস না।
আহনাফঃ আচ্ছা মেনে নিলাম জেলাস না। তাহলে আমি প্রেম করতে পারি.? বউ নিজেই পারমিশন দিয়ে দিলো! এমন বউ প্রতিটা ছেলের হোক।
মহুয়াঃ ছিঃ! কি দোয়া করছেন..??? আজ বাসায় আসেন আপনার প্রেম করার শখ মিটে যাবে। লুচু পুরুষ বউ থাকতে বাহিরে প্রেম খুঁজেন!. অন্য মেয়ের কাছে! এইসব করার জন্য হসপিটালে আসেন.? আমি আজ বাসায় গিয়ে আন্টিকে সব বলবো।
আহনাফঃ আচ্ছা তোমার শাশুড়ী কে বলো।
মহুয়া আহনাফকে দূরে সরাতে চাইলো কিন্তু আহনাফ ছাড়লো না।
আহনাফঃ শুনো.. সোনিয়া একটা কাজে আমার কাছে এসে ছিলো। কথা বলতে বলতে চোখে কি জেনো পড়েছে এখানে তো আর কেউ নেই তাই বাধ্য হয়ে আমি চোখ দেখতে ছিলাম তুমি দরজার কাছে ছিলে তাই উল্টা পাল্টা ভেবেছো। মেয়েটা অনেক ভালো।
মহুয়া শুনলো আহনাফের কথা। সে আহনাফ কে বিশ্বাস করে। আহনাফ মিথ্যা বলে না।
মহুয়া হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আমি জানি ডক্টররা কসাই হয় তাদের মনে প্রেম ভালোবাসা থাকে না। ‘
আহনাফঃ তোমাকে তো বললাম এসিস্ট্যান্ট হয়ে চলে আসো, তোমার একটাই কাজ থাকবে কসাই থেকে প্রেমিক বানানো।’
মহুয়া আহনাফ কে সরিয়ে বলে উঠলো, ‘ থুর! আমি বাসায় যাব।’
আহনাফঃ যাও আমি তো ধরে রাখিনি।
মহুয়া বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ এতোক্ষণ কি তাহলে জ্বীনে ধরে রেখে ছিলো!.?’
আহনাফ হেসে বলে উঠলো, ‘ নাহ্ আমার আত্মায়।’
_________
রাতে শ্রাবণ বাসায় আসলো। সোফায় বসে পানি খেয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
আফজাল নিজের রুম থেকে খুড়িয়ে খুড়িয়ে বের হয়ে আসলো। শ্রাবণের পাশে বসে টুকটাক কথা জিজ্ঞেস করলো অফিসের বিষয়।
এক পর্যায়ে নির্জনের কথা, নির্জন থেকে মেঘলা সাজ্জাদ সব কথাই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তুললো আফজাল।
শ্রাবণ এমনিতেই ক্লান্ত ছিল সাজ্জাদের কথা শুনতেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।
আমেনা বেগম কিছু বলতে আসলে না শুনেই সিঁড়ি বেয়ে হনহন করে রুমে চলে গেলো।
শ্রাবণের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো আফজাল। সে মেঘলার ভীষণ সব তথ্য সংগ্রহ করে নিয়েছে। নিজের বোকামির জন্য নিজের উত্তর রাগ হচ্ছে এতো বড় ভুল কিভাবে করলো!.? যেভাবে ভুল করেছে সেভাবেই ঠিক করবে। মেঘলার অস্তিত্ব মুছে দিবে। এখন টার্গেট মেঘলা। এইসব দুই পয়সার সিআইডি সরাতে বা হাতের কাজ মাত্র।
___________
ছোঁয়া পিঠার প্লেটটা ঠাসস করে রাখলো নির্জনের সামনে।
নির্জন ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে প্লেটের দিকে তাকালো।
নির্জনঃ এভাবে রেগে আছিস কেন.? কেউ কিছু বলেছে.??
ছোঁয়াঃ আগে তুই বল তোরে এই চাকরি কে করতে বলছে.??
নির্জনঃ ছোঁয়া আমি তোর বড় একটু তো সম্মান দিয়ে তুমি করে বল।
ছোঁয়াঃ মরতে মরতে ফিরে এসেছে আবার আছে সম্মান নিয়ে। এইসব পুলিশ টুলিশ দের কেউ সম্মান দেয় না।
নির্জনঃ পুলিশ বুঝলাম কিন্তু টুলিশটা কি!.??
ছোঁয়া রেগে প্লেট থেকে কাটা চামচ নির্জনের সামনে ধরে বলে উঠলো, ‘ একদম ফাজলামো করবি না নির্জনের বাচ্চা! ‘
নির্জনঃ ছোঁয়া আমার এখনো বিয়ে হয়নি বাচ্চা আসবে কোথায় থেকে.?
ছোঁয়াঃ এখন কি বাচ্চার জন্য মামিকে বলবো বিয়ে দিয়ে দিতে!.??
নির্জন লজ্জা পাওয়ার মতো মুখ করে বলে উঠলো, ‘ আমি তো প্রথমে আলহামদুলিল্লাহ কবুল।’
ছোঁয়া রেগে তাকিয়ে রইলো নির্জনের দিকে।
নির্জনঃ যা রুম থেকে বের হ।
ছোঁয়াঃ কেন.? রুমটা তোর.?
নির্জনঃ তো কার.?
ছোঁয়াঃ কোথাও কি নাম লেখা আছে..?
নির্জনঃ তোর চোখের পাওয়ারের সাথে সাথে পড়ালেখার পাওয়ার ও কমে গেছে ভালো করে রুমের দেওয়াল গুলোতে তাকা।
ছোঁয়াঃ তাতে কি আমি রুম থেকে বের হবো না।
নির্জনঃ তাহলে চুপচাপ বসে থাক বিরক্ত করবি না।
ছোঁয়াঃ আমি তোকে বিরক্ত করছি.? আমাকে তো বিরক্ত লাগবেই। ভালো লাগবে সব রাস্তার পেত্নী গুলোকে।
নির্জন তাকালো ছোয়ার দিকে।
নির্জনঃ কি হয়েছে তোর.??
ছোঁয়াঃ আমার আবার কি হবে..?
নির্জনঃ এমন করতেছিস কেন.?
ছোঁয়াঃ তুই পুলিশের চাকরি ছেড়ে দে। এই চাকরি ভালো না।
নির্জনঃ কে বলেছে ভালো না.?
ছোঁয়াঃ আল্লাহ না করুক আজ যদি তোর কিছু হয়ে যেত।
নির্জনঃ তাতে তো তোর আরও ভালো হতো।
ছোঁয়ার অভিমানে চোখ ভরে উঠলো। নির্জন বুঝি ওর বিষয় এইসব ভাবে!!.?
নির্জনঃ আবার কি হলো.? এদিকে আয়।
ছোঁয়া উঠে যেতে নিলে নির্জন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।
ছোঁয়াঃ সর।
নির্জনঃ আমার দিকে তাকা ছোঁয়া।
ছোঁয়াঃ আমি কেন তোর দিকে তাকাবো! তোর দিকে তাকানোর তো মেয়ের অভাব নেই। আমার কথা কেন শুনবি.? ওদের কথা শুনবি।
নির্জন পকেট থেকে চকলেট বের করে বলে উঠলো, ‘ তোর জন্য এনে ছিলাম।’
ছোঁয়া হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো।
ছোঁয়াঃ তোর এমন অবস্থা দেখে আমার কেন এতো কষ্ট হচ্ছে.?
নির্জনঃ এই পাগলি আমার কিচ্ছু হয়নি, এই দেখ আমি সুস্থ।
ছোঁয়াঃ হু কতোটা সুস্থ দেখতে পাচ্ছি।
নির্জনঃ বিছানায় বস আজ গল্প করি।
ছোঁয়াঃ এখনি তো আবার বলবি আমার রুম থেকে বের হ।
নির্জনঃ বলবো না।
ছোঁয়াঃ প্রমিজ।
নির্জনঃ প্রমিজ।
________
শ্রাবণ রুমে এসেছে সেই কখন একবারও মেঘলার দিকে তাকায়নি ব্যালকনিতে বসে আছে।
মেঘলা ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই সাজ্জাদের বক্সটা চোখে পড়লো।
হাতে নিয়ে খুলতেই শাড়ি,চুড়ি,কানের ঝুমকো চোখে পড়লো। বলা যায় সাজ্জাদের চয়েস সুন্দর।
মেঘলার বেশ পছন্দ হলো। মেরুন রঙের শাড়ি,চুড়ি, ঝুমকো। দেখেই পড়তে ইচ্ছে হলো।
শাড়ি,চুড়ি,ঝুমকো পড়ে নিজেকে বার কয়েক আয়নায় দেখে নিলো। চুলগুলো ছেড়ে ব্যালকনিতে উঁকি দিলো।
শ্রাবণ কখনো সিগারেট খায় না চুপচাপ বসে আছে।
মেঘলা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে অন্যের দেওয়া শাড়ি,চুড়ি, গহনা পড়ে যখন প্রিয় পুরুষটির সামনে দাঁড়ালো। তখন কেমন করে জেনো শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকালো।
মেঘলা,’ আমাকে কেমন লাগছে..?’
শ্রাবণ অভিমানী,গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ সুন্দর লাগছে।’
মেঘলার বুক কেঁপে উঠল, এতোটা গম্ভীর কণ্ঠ!!? কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘ কতোটা সুন্দর লাগছে!.?’
শ্রাবণ হাসলো, কি ছিল সেই হাসিতে!.? হঠাৎ সেই হাসির রং পাল্টে গেল৷ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘ বিশ্রী রকমের সুন্দর লাগছে।’
চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।
#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৩৯
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
সকাল সকাল বাড়িতে পুলিশ দেখে চমকে যায় সবাই।
আফজাল রাগী দৃষ্টিতে পুলিশের দিকে তাকিয়ে আছে।
সবাই নাস্তা করছিল ঠিক সেই সময় দারোয়ান এসে বললো বাড়িতে পুলিশ আসছে। গেইটের বাহিরে প্রচুর সাংবাদিক।
পুলিশের সামনে মেঘলা আর ফাহিম এসেছে।
আমেনা বেগম ভয় পেয়ে গেলেন ছেলের বউ বুঝি কিছু করে বসলো!..??
পুলিশ দেখে আমেনা বেগম মেঘলার কাছে গিয়ে হাত ধরে সাইডে নিয়ে আড়াল করলেন মেঘলা বেশ অবাক হলো শাশুড়ীর আচরণে।
মেঘলাঃ কি হয়েছে আন্টি.?
আমেনা বেগমঃ ভয় পেয়ো না আমরা আছি। কি করেছো.? পুলিশ কেনো তোমাকে ধরতে এসেছে.?
মেঘলাঃ আন্টি তেমন কিছুই নয়।
আমেনা বেগমঃ চুপচাপ এখানে দাঁড়িয়ে থাকো আমি দেখছি পুলিশের সামনে তুমি আসবে না একদম।
মেঘলা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়লো।
আমেনা বেগম মেঘলাকে রেখে আসলেন।
ইতিমধ্যে বাড়ির সব সদস্য বাড়িতেই ছিলো সবাই ড্রয়িং রুমে এসে দাঁড়ালো।
পুলিশ আফজাল সাহেবের দিয়ে তাকিয়ে একজন পুলিশ কে ইশারা করলো ধরে নিয়ে আসো।
আফজাল রেগে বলে উঠলো, ‘ আমার দোষ!.???’
পুলিশঃ তা তো মামা শশুর বাড়িতে গেলেই বুঝতে পারবেন। এই উনাকে নিয়ে চলো।
আমেনা বেগম অবাক হয়ে বলে উঠলেন,’ আপনারা প্রমাণ ছাড়া, কারণ ছাড়া উনাকে নিয়ে যেতে পারেন না।’
পুলিশঃ ম্যাডাম আমরা সব প্রমাণ নিয়েই উনাকে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সব প্রমাণ সিআইডি মেঘ চৌধুরীর কাছে আছে।
আমেনা বেগমঃ উনাকে বলুন আসতে।
স্বামী ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনারা কিছু বলছেন না কেনো.??’
পুলিশঃ সিআইডি অফিসার মেঘ চৌধুরী আপনাদের বাড়িতেই আছে জিজ্ঞেস করে নিন। আমাদের কাজ আমাদের করতে দিন।
আমেনা বেগম আরও অবাক হলেন। হালিমা বেগম এসে আমেনা বেগম কে সাইডে নিয়ে গেলো।
পুলিশ আফজাল কে নিয়ে বাসা থেকে বের হতেই আফজাল হাত দিয়ে মুখ ডাকতে শুরু করলো। গেইটের বাহির প্রচুর সাংবাদিক। সবাই ভিডিও করছে , আগামীকাল পাওয়া মেয়েদের কথা জিজ্ঞেস করছে। কালো জগতের লিডার আফজাল সাহেব কি না.?
নিরুপমা শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সব দেখলো, ধীর পায়ে নিজের রুমে চলে গেলো। নিরুপমার পেছন পেছন ছোঁয়া দৌড়ে মায়ের কাছে গেল।
মহুয়া গিয়ে দাঁড়ালো মেঘলার পাশে।
আমেনা বেগম মহুয়ার সামনে এসে বলে উঠলো, ‘ তুমি সিআইডি..? ‘
মহুয়া অবাক হয়ে বললো,’ না, না আন্টি।’
আমেনা বেগমঃ তাহলে মেঘ কে.?
আজাদ চৌধুরী আমেনা নিয়ে সোফায় বসালেন।
শ্রাবণ, আহনাফ চুপচাপ বসে আছে। নির্জন অফিসে সে নিজে আসেনি।
ফাহিম মেঘলার পাশে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ ম্যাডাম আপনি এখন অফিসে যেতে হবে।’
মেঘলাঃ তুমি যাও আমি আসছি।
মেঘলা আমেনা বেগমের সামনে এসে বলে উঠলো, ‘ আমিই মেঘ। সিআইডি অফিসার মেঘ চৌধুরী।
আমেনা বেগম অবিশ্বাস্য চোখে তাকালেন।
মেঘলা সবার দিকে তাকিয়ে শ্রাবণের দিকে তাকালো। শ্রাবণ চুপচাপ শান্ত দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
মেঘলা আবার বলতে শুরু করলো, ‘ আমি এক বছর ধরে চেষ্টা করছিলাম কিভাবে এই কেইসের সব তথ্য বের করবো। কিভাবে আসল ক্রিমিনাল কে ধরবো। বস্তিতে বখাটে মেয়েদের আসর করি নিজেকে সবার সামনে বখাটে মেয়ে হিসেবে তুলে ধরি তখনি রনি এসে প্রস্তাব দেয় AF কোম্পানির মালিকের ছেলের গার্লফ্রেন্ড হওয়ার অভিনয় করতে। আমি অনেক ভাবলাম শুধু তো অভিনয় পাঁচ মিনিটের অভিনয় যদি আমি সব চেয়ে বড় ক্রিমিনাল কে ধরতে পারি তাহলে সমস্যা কি!.? প্রথমে সব ঠিক ছিলো তারপর তো সব এলোমেলো হয়ে গেল। আমি মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ছিলাম জেনো কেউ আমাকে চিনতে না পারে সন্দেহ না করতে পারে।
ইন্সপেক্টর মিরাজ চৌধুরী প্রথম দেখেই আমাকে চিনে ফেলে ছিলেন কিন্তু আমার অনুরোধে কাউকে কিছু বলেননি। আমি আজ মন থেকে দুঃখিত আপনাদের মিথ্যা বলার জন্য।
মেঘলা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আমাকে এখন আসতে হবে। আফজাল সাহেবের বিষয় কোনো প্রশ্ন থাকলে আজাদ চৌধুরী কে জিজ্ঞেস করে নিবেন।
আজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে মেঘলা বের হয়ে গেল।
আমেনা বেগম ছাড়া সবার মুখ স্বাভাবিক জেনো এইসব সবাই আগে থেকেই জানতো।
___________
ইতি মধ্যে সব টিভি চ্যানেল গুলোতে বলতে শুরু করেছে আফজাল সাহেবের অপকর্মের কথা।
আফজাল রেগে নির্জনের দিকে তাকিয়ে আছে। নির্জন হেঁসে বললো,’ ওয়েলকাম শশুর মশাই। ‘
আফজাল চাইলেও মুখে কিছু বলতে পারছে না তবে মনে মনে কয়েকটা বিশ্রী গালি দিয়ে বসলো নির্জন কে।
মেঘলা এসে বললো,’ এখন সব স্বাভাবিক করো সাংবাদিক যেতে বলো। ‘
নির্জনঃ বাড়িতে কি অবস্থা.?
মেঘলাঃ জানিনা।
নির্জনঃ তোমার বিষয় সবাই জেনে গেছে.?
মেঘলাঃ জানার বিষয় আর কতো গোপন রাখবো?
নির্জনঃ হুম তাও ঠিক।
মেঘলাঃ তোমার শশুর কে একটু বেশি ভালো ভাবে যত্ন নিবে।
নির্জনঃ জিজ্ঞাসা বাদ আপনি করবেন।
_____________
বাহিরের সব কাজ শেষ করে আসতে আসতে রাত হয়ে গেছে।
মেঘলা বাড়িতে এসে দেখলো সব নিরব হয়ে আছে।
আমেনা বেগম মেঘলা কে দেখে চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেলেন।
মেঘলা আজাদ চৌধুরীর পাশে বসলেন।
আজাদ চৌধুরীঃ সব বলেছে.?
মেঘলাঃ রাতের মধ্যে সব শেষ হয়ে যাবে।
আজাদ চৌধুরীঃ ওর ফাঁসি চাই।
মেঘলা হাসলো। ফাঁসি!.? কম হয়ে যায় না.?
মেঘলা টুকটাক কথা বলে উপরে চলে আসলো।
নিজের রুমে এসে দেখলো শ্রাবণ নেই হয়তো অফিসে।
মেঘলা ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুয়ে পড়লো। দুই চোখে ঘুম এসে ভীড় করলো।
__________
মহুয়া ব্যাগ গুছিয়ে রাখলো।
ছোঁয়াঃ ব্যাগ কেনো গুছিয়ে রাখছিস.?
মহুয়াঃ আমি চলে যেতে চাই ছোঁয়া।
ছোঁয়াঃ বাড়িতে কারো মন ভালো নেই এখন.? ভাই মে’রে ফেলবে।
মহুয়াঃ কিছু হবে না।
ছোঁয়াঃ ভেবে দেখ ভালো করে।
মহুয়াঃ বাদ দে এইসব তোর মন খারাপ…
ছোঁয়াঃ উঁহু।
মহুয়াঃ চল গল্প করি মন হাল্কা হবে।
ছোঁয়ার মনে পড়ে গেল কাল নির্জনের বলা ” আজ গল্প করবোশ নিজের অজান্তেই মুখে হাসি চলে আসলো। কিছু একটা মনে করার মতো করে এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে নির্জনের রুমে গেল।
মহুয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়ের আবার হঠাৎ কি হলো.??
ছোঁয়া বের হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আহনাফ রুমে এসে বললো,’ ছাঁদে চলো।’
মহুয়াঃ আপনি.?
আহনাফঃ হুম চলো।
ছাঁদে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে আহনাফ মহুয়া।
আহনাফ মহুয়ার বাহু শক্ত করে চেপে ধরে রাগে বলে উঠলো, ‘ তুমি চলে যাবে.? এতো বড় সাহস.?
মহুয়াঃ দেখুন আহনাফ..
আহনাফঃ কি দেখবো আমি.?? যাওয়ার কথাও যদি মাথায় এনেছো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। হাত পা ভেঙে ঘরে সাজিয়ে রাখবো।মহুয়া তুমি আমার রাগ সম্পর্কে জানো না আমার কথা না শুনলে আমি যা বলি তাই করি।
মহুয়াঃ আহনাফ পাগলামি করবেন না।
আহনাফঃ এটা তোমার কাছে পাগলামি মনে হচ্ছে!.?? হ্যাঁ তাহলে এমন পাগলামি আমি সারাজীবন করবো। আমি কাল বাসায় জানাচ্ছি সব কিছু।
মহুয়াঃ এমনটা করবেন না আপনি।
আহনাফঃ আজ থেকে তুমি আমার কথায় চলবে। নিজের সিদ্ধান্ত নিজের নেওয়া বন্ধ।
মহুয়াঃ আহনাফ…
আহনাফঃ চুপপপপপপপ
আহনাফ রাগে অন্য দিকে ফিরলো মহুয়া ভয় পেয়ে আছে আহনাফ কিভাবে জানলো.? এতোটা রেগে আছে!! ভয় লাগছে কিছু বলতে।
মহুয়া ভয়ে ভয়ে হাত রাখলো আহনাফের কাঁধে।
আহনাফঃ আমাকে তুমি ভয় পাও মহুয়া! কিন্তু কেনো.?? আমি তোমার মধ্যে, চোখে ভয় নয় একটু ভালোবাসা চাই। তুমি আমার এখানেই থাকতে হবে মহুয়া তোমার শেষ ঠিকানা আমার বুক। তুমি চাইলেও থাকতে হবে না চাইলেও।
_____________
নির্জন রুমে এসেই থমকে গেলো পর মুহূর্তে মুখে হাসি টেনে বলে উঠলো, ‘ হাতে ফুলের বদলে ঝাড়ু কেনো ছোঁয়া রাণী!.?’
ছোঁয়া রেগে নির্জনের দিকে তেড়ে গেলে নির্জন দুই পা পেছনে গিয়ে ছোঁয়ার হাত ধরে সামনের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। ছোঁয়ার হাত নির্জনের হাতের মুঠোয়, পিঠ নির্জনের বুকে।
ছোঁয়াঃ ছাড় আমাকে।
নির্জনঃ আগে বল কি হয়েছে.???
ছোঁয়াঃ তোর মতো লুচু ছেলেকে ঝাড়ু পিটা করা উচিত।
নির্জনঃ যাহ্ বাবাহ্ এখনো লুচুগিরি কিছুই করলাম না তাও নাম দিয়ে দিলি! এটা ঠিক না ছোঁয়া এতে করে তুই আমাকে লুচু হতে বাধ্য করছিস।
ছোঁয়া এক ঝটকায় নির্জন কে দূরে সরিয়ে সামনে কোমরে হাত রেখে তাকালো। একটা ডাইরী বের করে নির্জনের সামনে ধরতেই টান দিয়ে নির্জন ডায়রীটা নিয়ে নিলো।
ছোঁয়াঃ প্রেমিকা কে নিয়ে ডায়রীও লেখা হয়।
নির্জনঃ তাতে তোর কি.? রুম থেকে বের হ। তোকে না বললাম আমার অনুমতি ছাড়া আমার রুমে আসবি না।
ছোঁয়া ছলছল চোখে তাকালো নির্জনের দিকে।
নির্জন ছোঁয়ার গালে হাত রাখতে গেলে ছোয়া এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দিলো।
ছোঁয়াঃ নির্জন তুই এমন কেনো.? সর আমার সামনে আসবি না।
নির্জনঃ ছোঁয়া আমি ক্লান্ত প্লিজ একটু ঠান্ডা পানি খাওয়া।
ছোঁয়া কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এই মুহূর্তে পানি না চেয়ে বিষ চাইলে খুশি হতাম।’
নির্জন হেঁসে বলে উঠলো, ‘ জেলাস.? ছোঁয়া তুই জেলাস.?
ছোঁয়া কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আসলেই সে ভীষণ জেলাস সেই মেয়ের উপর। যার কথা ডায়রীর প্রতিটি পাতায় লেখা আছে কিন্তু নাম লেখা নেয়। মনে মনে বলে উঠলো, ‘ আমার ভাগ্য এমন কেন!.?? ‘
_____________
শ্রাবণ অনেক রাত করে বাসায় আসলো। নিজের কাছে চাবি আছে খুব সহজেই বাসায় ঢুকে গেলো৷
রুমে এসে দেখে মেঘলা ঘুমাচ্ছে । কিছু সময় ঘুমন্ত মেঘলার দিকে তাকিয়ে রইলো। ধীর পায়ে কাছে গিয়ে চুল সরিয়ে কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো৷ মেঘলা নড়ে উঠতেই সরে গেল।
ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে খাবার গরম করে প্লেটে নিয়ে রুমে আসলো।
মেঘলা কে ডাক দিতেই মেঘলা চোখ পিটপিট করে তাকালো।
শ্রাবণ কে দেখে চোখ ঢলে উঠে বসলো।
শ্রাবণঃ মুখ ধুয়ে আসো।
মেঘলাঃ কেনো.?
শ্রাবণঃ আমার খিদে পেয়েছে তাই।
মেঘলাঃ আমি খাবার গরম করে আনছি আপনি বসুন।
শ্রাবণঃ প্রয়োজন নেই আমি গরম করে নিয়েছি।একা একা খেতে ইচ্ছে করছে না।
মেঘলা মুখ ধুয়ে এসে বসলো।
শ্রাবণ খাবার সামনে রাখলো।
মেঘলাঃ আপনি রেগে নেই তো.?
শ্রাবণঃ কিসের জন্য.?
মেঘলাঃ আমি যে মিথ্যা বলেছি আপনাদের।
শ্রাবণ চুপ করে রইলো। মনে মনে হাসলো সে তো প্রথম থেকেই জানতো মেঘলার পরিচয়। বিয়ের পর প্রথম প্রথম সন্দেহ হতো মেঘলার আচরণ সাথে ভিন্ন ভিন্ন বই দেখে।বেশি কষ্ট করতে হয়নি এসিস্ট্যান্টের মাধ্যমেই জেনে গিয়ে ছিলো মেঘলার পরিচয় কিন্তু এতোদিন না জানার মতো ছিল কি দরকার যেখানে মেঘলা নিজে চাচ্ছে না সেখানে নিজ থেকে আগবাড়িয়ে বলার।
মেঘলাঃ কি হলো.?
শ্রাবণঃ তোমার ইচ্ছে ছিলো না তাই জানাওনি। মেঘলা তুমি যেমন তেমন দেখে তোমাকে বিয়ে করিনি। পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। শুধু আম্মু কষ্ট পেয়েছে তবে ঠিক হয়ে যাবে। খেয়ে নাও।
মেঘলা কথা বাড়ালো না পেটে ভীষণ খিদে। রাতে খাওয়া হয়নি ক্লান্ত ছিল এসেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
______________
জেল থেকে বের হয়ে আসেপাশে তাকালো। সব পুলিশ গভীর ঘুমে।
আফজালকে খুব গোপনে পালাতে সাহায্য করছে চারজন পুলিশ সাথে কিছু আফজালের লোকও আছে যারা কালো কাপড় দিয়ে মুখ ডেকে আছে।
আফজাল মনে মনে বলে উঠে শুধু এখান থেকে বের হই একটাকেও ছাড়বো না।
আফজাল গিয়ে গাড়িতে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করে। আফজালের সেই দিকে খেয়াল নেই ওরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।?? সে তো ভেবেছে সব তার লোক। সে ভাবতেও পারছে না সামনে ওর জন্য কি অপেক্ষা করছে।
চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।