মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-৩৬+৩৭

0
556

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পব_৩৬
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

আমরা ছিলাম দুই ভাই এক বোন। ছোট কাল কাটে গ্রামেই তারপর ব্যাবসার জন্য আব্বা শহরে চলে আসে।

দেখতে দেখতে কয়েক বছর কেটে যায় কোম্পানির উন্নতি হতে শুরু করে।

আমি পড়াশোনা শেষ করে কোম্পানি দেখাশোনা শুরু করি। মিরাজ পড়াশোনা করে নিরু ক্লাস 9এ উঠেছে।

আব্বা গ্রামে গিয়ে সাথে করে নিয়ে আসলো আমাদের পাশের বাড়ির এক চাচার মেয়েকে। মেয়েটা বেশ পিচ্চি ছিল। দেখতে মাশাল্লাহ ফুলের মতো ছিল। আমি আদর করে ফুল ডাকতাম।
ওর মা আরেকজনের সাথে চলে গিয়েছে আর বাপ নতুন বিয়ে করে বউ আনছে। নতুন বউ আজ ওর হাত পুড়ে ফেলেছে সেই জন্য আব্বা নিজের সাথে করে ওকে এখানে নিয়ে এসে ছিল৷ স্কুলেও ভর্তি করালো৷ আস্তে আস্তে আমাদের নিশ্চুপ বাড়িটা চঞ্চলতায় মেতে উঠলো।মারিয়া ছিল খুব চঞ্চল হাসিখুশি একটা মেয়ে। ধীরে ধীরে পিচ্চি মেয়েটা আমাদের চোখের সামনে বড় হতে শুরু করলো।

আব্বার পছন্দে আমার বিয়ে হলো আমেনার সাথে। বিয়ের চার বছরের মাথায় আমাদের সংসারে শ্রাবণ আসলো।

সেই দিন বাড়িতে কি আনন্দ ছিল বংশের প্রথম সন্তান এসেছে।

নিরুর জন্য বিয়ে আসতে শুরু করলো তার মধ্যে শুনতে পেলাম নিরুর প্রেম চলছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আফজালের সাথে। প্রথম আমি নিষেধ করি নিরুকে মেরেও ছিলাম কিন্তু ওর জেদের কাছে হার মানতে হয়ে ছিল। আফজালের সাথে ওর বিয়ে ঘরওয়া ভাবে হয়ে গেল। আফজালের এই শহরে কেউ ছিল না সেই জন্য আমাদের সাথেই বাড়িতে থাকতে শুরু করলো আমার কোম্পানিতে চাকরি দিলাম।

দিনকাল ভালোই যাচ্ছিল দেখতে দেখতে নিরুর বিয়ের পাঁচ বছর চলে গেছে এর মধ্যে মিরাজের বিয়ে হয়ে গেছে আহনাফ, নির্জন কে নিয়ে সারাদিন মেতে থাকতো মারিয়া। আব্বা ঠিক করলেন এবার মারিয়ারও বিয়ে দেওয়া উচিত।

আস্তে আস্তে মারিয়ার মধ্যে চঞ্চলতা হারিয়ে গেল, কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে, প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে বের হয় না কারো সাথে কথা বলে না। মানুষ দেখলেই ভয়ে শিউরে ওঠে, ধীরে ধীরে চোখের নিচে কালি পড়ে যাচ্ছে যেই মেয়ের মুখ থেকে হাসি সরতো না সেই মেয়ে হাসতে ভুলে গেল। আমেনা, নিরু সবাই অনেক ভাবে জিজ্ঞেস করতো সব সময় এড়িয়ে চলতে শুরু করলো সবাই কে।
আমাদের বাড়ির পেছনে একটা ভাঙা ঘর এখনো আছে। সেই ঘরটা ছিল মারিয়ার ভীষণ পছন্দের। ঘরের সামনে একটা বকুল ফুলের গাছ ছিল প্রতিদিন তিনটা ফুলের মালা গেঁথে বাড়ির দুই বউ আর নিরুর খোঁপায় পড়িয়ে দিত।এটা করে ও আনন্দ পেত।

সবাই বললো বিয়ে দিয়ে দিতে। ছেলে দেখা শুরু করলাম। মারিয়া দেখতে ভীষণ মিষ্টি একটা মেয়ে ছিল আমাদের আরেক বোন। রক্তের সম্পর্কই কি সব!?? আত্মার সম্পর্ক হয়ে গিয়ে ছিলো মারিয়ার সাথে সবার।

ছেলেও পছন্দ করা শেষ, বিয়ের তারিখ ঠিক করার আগের রাতে মারিয়া হঠাৎ আমার রুমে আসলো। আমাকে আচমকা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। আমিও কতোটা বোকা ছিলাম ভাবলাম বিয়ে ঠিক হচ্ছে তাই হয়তো সবার জন্য মায়া লাগছে তাই কাঁদছে। আমেনাও অনেক বুঝিয়ে আহনাফ কে সাথে দিয়ে ছিলো। আহনাফ ছিল মারিয়া ফুপিমণি বলতেই পাগল। আহনাফের বয়স পাঁচ তখন আর শ্রাবণের আট, নির্জন দুই।

সকালে সবাই ঘুম থেকে উঠে ড্রয়িং রুমে আসলো। শুক্রবার ছিল সবার ছুটির দিন।

একমাত্র মারিয়ার দেখা নেই। আহনাফ কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বের হয়ে আসলো। আমেনা জড়িয়ে ধরে শান্ত করাল।

সারা বাড়ি খুঁজেও মারিয়াকে পাওয়া গেলো না। সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লো।

দিন শেষ হয়ে বিকেল হয়ে গেল। আম্মা কি মনে করে বললো,’ মারিয়াকে বাড়ির পেছনের ঘরে নাই তো!..?’

হালিমা বেগম গেল মারিয়াকে দেখতে।

কিছু সময় যেতেই হালিমার চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে সেই ঘরে গিয়ে যা দেখলো তা হয়তো কখনো কল্পনা করিনি।

আজাদ চৌধুরী চশমার আড়ালে চোখের পানি মুছে নিলেন।

আহনাফ বলে উঠলো, ‘ কি হয়ে ছিল উনার সাথে!.?? ‘

আজাদ চৌধুরীঃ বন্ধ করে মারিয়ার ঝুলন্ত শরীরটা দেখে আমার আত্মা কেঁপে উঠে ছিল!!.. ছোট থেকে বোন ভেবে ভালোবেসে বড়করা পিচ্চিটার শরীর এভাবে দেখবো!! ??? আম্মা জ্ঞান হারালেন৷ কখনো কেউ ওকে পর মনে করেনি। আম্মা নিজের মেয়ের মতো ভালোবেসে বড় করেছে।

আহনাফঃ কেন উনি এমনটা করলেন..?
আজাদ চৌধুরীর চোখ মুখ শক্ত হয়ে উঠলো।
নির্জনঃ উনি কি মৃত্যুর আগে কোনো চিঠি বা ডাইরী লিখে জাননি.?
আজাদ চৌধুরী চুপ করে রইলেন।
আহনাফ কিছু সময় চুপ থেকে আফজালের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আর আপনি হঠাৎ কোথায় থেকে আসলেন.? ছোট থেকে শুনে এসেছি ছোঁয়া জন্মের আগে এক্সিডেন্টে আপনি মা-রা গেছেন। তাহলে এতো বছর পর কোথায় থেকে আসলেন.??
আফজালের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে।

শ্রাবণ শান্ত কন্ঠে বললো, ‘ সেই জন্যই কি ছোট থেকে সেই ঘরে প্রবেশ করা সবার জন্য নিষিদ্ধ ছিল!…?

নিরুপমা দূর থেকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে আজাদ চৌধুরীর দিকে। ছোট বোনটার কথা মনে হতেই ভেতরটা কেমন কেঁদে উঠলো। বলে উঠলো, ‘ তুই আমাকে বাঁচতে দিলি না আপা!!.? সে আমাকে বাঁচতে দিল না!!…

__________________

সব প্রশ্ন মাথায় রেখে সবাই নিজেদের কাজে লেগে পড়লো।

ড্রয়িং রুমে আজাদ চৌধুরী আর আফজাল সাহেব বসে আছে।

আফজাল শয়তানি হেঁসে বললো,’কি লাভ হলো কাহিনী শুনিয়ে! .? ‘
আজাদ চৌধুরীঃ তুই ঠিক আগের মতোই আছিস। কুত্তার লেজ যেমন কখনো সোজা হয় না তুই ও তেমন। আপসোস সময় থাকতে আমার বোনটা বুঝতে পারলো না, চিনতে পারলো না।
আফজালঃ তোর সব শেষ না করে আমি ভালো হচ্ছি না।
আজাদ চৌধুরীঃ আমাকে শেষ করতে এসে নিজের ধ্বংস ডেকে আনলি।
আফজালঃ তোর ছেলের বউরা তো মাশাল্লাহ।
আজাদ চৌধুরী রেগে তাকালো।
আফজালঃ বংশ,শিক্ষা সব দিক দিয়ে.!
আজাদ চৌধুরী কিছু বললেন না।
আফজালঃ একটা মজার কথা শুনবি.?এইসব আমার প্লেন ছিল। বলে হেঁসে কুটিকুটি খাচ্ছে।

আজাদ চৌধুরী হাসলেন। বোকা নিজের ধ্বংস নিজে ডেকে আনলো।

আজাদ চৌধুরী আমেনা বেগম কে ডেকে বললেন বাড়িতে ভালো ভালো রান্নার আয়োজন করো আজ জামাই আদর হবে।

আফজাল বেশ অবাক হচ্ছে আজাদ চৌধুরী আচরণে। চোখে মুখে ভয় নেই কেন!.?

______________

মহুয়া মেঘলার জন্য টেনশন করছে। সেই সকালে বের হয়েছে মেঘলা। কোনো বিপদ হলো না তো!!..?

আমেনা বেগমও আজ টুকটাক মেঘলার কথা জিজ্ঞেস করলো। বাড়ির বউ সকালে বের হয়েছে এখন রাত হয়ে গেছে। মেয়েটার কি আমার ছেলের টাকায় হয় না!.? এখনো চুরি বাটপারি করার জন্য বের হতে হয়!! কিছুটা রাগও প্রকাশ করলেন কিন্তু ছেলের জন্য বেশি কিছু বললেন না।

রান্না শেষ করে মহুয়া টিউশন করাতে বেরিয়ে গেল। আসতে আসতে রাত নয়টা বাজবে।

আহনাফ এতো বলার পরেও মহুয়া টিউশন ছাড়েনি ওর এসিস্ট্যান্ট ও আর হয়নি।

মহুয়া বের হয়ে যাওয়ার কিছু সময় পর মেঘলা নির্জন এক সাথে বাড়িতে প্রবেশ করলো। বাড়িতে এসেই আফজালকে ড্রয়িং রুমে দেখে হাসলো মেঘলা।

আমেনা বেগম মেঘলাকে দেখে মুখ কালো করে বলে উঠলো, ‘ তোমার তাহলে বাড়িতে আশার সময় হলো!?! নির্জনেরসাথে এসেছো নিশ্চয়ই জেল থেকে এসেছো৷?? এখনো কি আমার ছেলের টাকায় হয় না!!.? আমার ছেলে কি তোমার প্রয়োজন মত সব কিছু দিচ্ছে না!!.?

মেঘলা একবার আফজালের দিকে তাকালো।

আফজাল কৌতূহলি চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।

আমেনা বেগম একদম আফজালের কথা ভুলেই বসে ছিলেন। ছেলের বউকে কিছু কঠিন কথা শুনাতে গিয়ে এভাবে লজ্জা ফেলবেন ভাবতেও পারেননি।

নির্জন কিছু বলতে চাইলে মেঘলা শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ নির্জন তুমি ক্লান্ত রুমে যাওও’

আমেনা বেগম মেঘলার দিকে তাকিয়ে কঠিন আদেশের সুরে বললো,’ তুমিও রুমে যাওও।’

আফজাল জেনো মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো একটা ফাঁদ পেল।

আমেনা বেগম কে বলে উঠলো, ‘ ভাবি ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন পরিচয় করালেন না!..?’
আমেনা বেগমঃ ভাই আপনি আশার পর থেকে সময় হয়ে উঠেনি। ‘
আফজালঃ সমস্যা নেই বাড়িতেই আছি পরিচিত হয়ে যাব। তা মেয়ের বংশ কেমন.? নিশ্চয়ই আজাদের কোনো বন্ধুর মেয়ে হবে।.?

আমেনা বেগম মুখে হাসি টেনে বলে উঠলো, ‘ মেয়ের বংশ পরিচয় দিয়ে কি করবো ভাই!.? এখন মেয়েটা আমাদের বাড়িতে সারাজীবনের জন্য এসেছে এখন ওর বংশ পরিচয় সব আমার ছেলে। ‘

আফজালঃ তাও তো আছেন না বাবা কি করে.? পড়াশোনা কতোটুকু করলো.? আপনাদের সাথে যায় কিনা!.?
আমেনা বেগম রান্না ঘরের দিকে যেতে যেতে বললো, ‘ আমি নিরু কে দিয়ে চা পাঠাচ্ছি ভাই। আশার পর থেকে এখনো আপনার সামনে আসলো না। নিশ্চয়ই অভিমান করে আছে। ‘

________________

নির্জন রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে আজ যা যা তথ্য সংগ্রহ করলো সব ভালো করে দেখতে শুরু করলো।

দরজায় নক করে উঁকি দিলো ছোঁয়া।
নির্জন দরজার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিলো।

ছোঁয়া দরজা ঠেলে রুমে এসে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নির্জনের দিকে।
নির্জন একবার তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে আবার নিজের কাজ করছে।

ছোঁয়া রেগে কফি নির্জনের সামনে ধরলো।
নির্জনের এখন এটা খুব প্রয়োজন ছিল৷ হাত বাড়িয়ে কফি নিতে গেলে কফি সরিয়ে নিল ছোঁয়া।
বিছানার পাশে চেয়ারে বসে নিজে আরাম করে কফি খাওয়া শুরু করলো।

নির্জন জাস্ট অবাক হয়ে ছোঁয়ার কান্ডকারখানা দেখছে। ল্যাপটপ বন্ধ করে ছোঁয়ার দিকে ঘুরে বললো,’ এটা কি হলো ছোঁয়া!.?? ‘
ছোঁয়া কিছু না বলে মন দিয়ে কফি খাচ্ছে যেন এখানে কফি আর ও বাদে আর কেউ নেই আর ওর একমাত্র কাজ হলো তৃপ্তি করে কফির স্বাদ নেওয়া।

নির্জনঃ মুখের সামনে থেকে কফি কেঁড়ে নিলি!..??
ছোঁয়াঃ কফি আমি বানিয়েছি আবার আমি খাচ্ছি। তোমার থেকে কখন কেঁড়ে নিলাম.?
নির্জনঃ কিন্তু বানিয়েছিস আমার জন্য …. এই কফি আমার।
ছোঁয়াঃ হুহ্ আমি অর্ধেক খেয়ে ফেলেছি এখন খাবে!..?
নির্জন থমথমে মুখে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আমার জন্য পাঁচ মিনিটে কফি বানিয়ে আনবি যা।’
ছোঁয়াঃ ইসসসস এমন ভাবে অর্ডার করছে যেন আমি তাহার কাজের লোক!! মাসে মাসে বেতন দিয়ে রাখছে।
নির্জনঃ না তুই আমার ঘরের রাণী আর রাণীর কাজ রাজার আদেশ শুনা, সেটা ভালোবেসে হোক আর ভয় পেয়ে।
ছোঁয়া ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো, ‘ তা রাজা মশাই আপনার রাজ্যটা একটু দেখাবেন.? আপনার প্রাসাদটা কোথায়.? কোন গ্রহে..?আমার না দেখতে ইচ্ছে করছে…
নির্জন রাজকীয় ভাবে বলে উঠলো, ‘ এই বাড়ি হলো রাজপ্রাসাদ আর এই রুম হলো…… ‘

ছোঁয়াঃ থামেন! থামেন রাজা মশাই আজ কি নেশা টেশা করেছেন নাকি!.?
নির্জনঃ কেন..? আমাকে দেখে তোর নেশাখোর মনে হচ্ছে!.?
ছোঁয়া একটু ভাবলো, ভালো করে থুতনিতে হাত রেখে নির্জনকে দেখলো তারপর বলে উঠলো, ‘ নাহ্ চেহারা তো ঠিক আছে তবে কথার মধ্যে পাচ্ছি!! বলেই হাসতে লাগলো।

নির্জন চুপচাপ দেখলে ছোঁয়ার সেই হাসি।

ছোঁয়া আবার বলে উঠলো, ‘ তবে তোর চরিত্র রাজাদের সাথে মিলে যায়। রাজাদের যেমন এক রাণীতে হয় না তোরও তেমন এক মেয়ে,প্রেমিকা, বউয়েতে হয় না,হবে না।

নির্জন ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ ঠিক বলেছিস আমার পৃথিবীর সব নারী এনে দিলেও হবে না আমার তো তোকে লাগবে। তুই আমার রাণী হয়ে যা ছোঁয়া রাণী। এই নির্জন রাজা আর কোনো নারীর দিকে তাকাবে না।। তোর কসম…

ছোঁয়া সবে কফিতে চুমুক দিয়ে ছিল। নির্জনের এমন কথা শুনে কষ্ট করে ঢুক গিলে নিল। থমথমে মুখে নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো,,’ সত্যি করে বল তুই আজকে উল্টা পাল্টা কি খেয়ে আসছিস!.? আমি শুনেছি সব পুলিশ উল্টা পাল্টা জিনিস খায়।’

নির্জন ছু মেরে ছোঁয়ার হাতের কফির কাপ নিয়ে নিলো।
ছোঁয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই কফিটা মুখে দিয়ে বললো,’ এই ঠান্ডা কফি তোর মতো এলিয়েন ছাড়া আর কারো পক্ষে খাওয়া সম্ভব না। ‘
ছোঁয়া রেগে বলে উঠলো, ‘ নির্জনের বাচ্চা আমার কফি দে।এটা একদম খাবি না এঁটো হয়ে গেছে। ‘
নির্জনঃ এঁটো হলেও স্বাদ দিগুণ বেড়ে গেছে।

ছোঁয়া লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ দেখ উল্টা পাল্টা কথা বলবি না। কফি দে আমি বানিয়ে দিচ্ছি।

নির্জন ইচ্ছে করে কাপ উপরে তুলে ধরলো।

ছোঁয়া আনতে গেলে নির্জন কাপ সরিয়ে নিলো আর বেচারি ছোঁয়া গিয়ে পরলো নির্জনের বুকে।

ছোঁয়ার ঠোঁট ছুয়ে গেল নির্জনের বুক।

দুইজনের কেউ বুজতে পারলো না কয়েক মিনিটে হয়ে গেল কি!!!..???

ছোঁয়া লজ্জায় পুরো জমে গেছে। এতোক্ষণ নির্জনের সব কথায় লজ্জা পেলেও বুঝতে দেয়নি কিন্তু এমনটা হওয়ার পর লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেছে। নির্জনের বুক থেকে মাথা তুলে এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। রেখে গেল এক প্রেমিক পুরুষের কেঁপে উঠা বুকের ধুকপুক। আলগোছে হাতটা বুকে রাখলো নির্জন আবার সাথে সাথে হাত সরিয়ে বলে উঠলো, ” হাত লাগলে যে মুছে যাবে আমার ছোঁয়া রাণীর ঠোঁটের প্রথম স্পর্শ ”

______________________

কালো থ্রি পিস পড়া, মাথায় ঘোমটা দেওয়া, লম্বা বিনুনি কোমর ছড়িয়ে নিচে দুল খাচ্ছে। মুখের এক পাশে কিছু চুল অগোছালো ভাবে পড়ে আছে।

মহুয়া রাস্তার পাশে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আশেপাশে রিক্সা খুঁজছে। রাত দশটা বেজে গেছে আজ। কিছুটা দূরে একটা চায়ের দোকান এখনো খোলা। দোকানের মালিক একজন মধ্যে বয়সী মহিলা।

মহুয়া ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো। দোকানে। ব্যাগে দেখে নিল ৫০টাকা আছে।

মহুয়া এক কাপ চা হাতে নিয়ে পাশে ফিরে দেখলো আহনাফ তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।

চোখের ভুল ভেবে চোখ কচলে আবার তাকালো।

আহনাফ গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। মহুয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো,’ খালা আমাকেও এক কাপ চা দেন।’

মহুয়াঃ আপনি!!..?
আহনাফঃ অবাক হয়েছেন.?
মহুয়াঃ কিছুটা, তবে আপনি এখানে কেনো.?
আহনাফঃ বাসায় যাওয়ার সময় আপনাকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম।

মহুয়াঃ তাহলে তো এসেছেন অনেক সময় হবে।
আহনাফঃ অনেক না আবার কমও না। ১০মিনিট হবে। গাড়িতে বসে ছিলাম।

দোকানী চা দিতে আহনাফ হাত বাড়িয়ে নিল।
মহুয়াঃ আপনি তো চা খাননা।
আহনাফ চায়ে চুমুক দিয়ে বললো,’ বাহ্ আমার বিষয় তো খুব ভালো জানেন!! তা আর কি কি জানেন শুনি।’
মহুয়াঃ আপনি নিজেই বলে ছিলেন আর আমার স্মৃতি শক্তি খুব ভালো তাই মনে রেখেছি।
আহনাফঃ আচ্ছা বিশ্বাস করে নিলাম। আমি চা খাই না তবে মাঝে মাঝে টং দোকানের চা খাওয়া হয় ভীষণ ভালো লাগে।
মহুয়াঃ ঠিক বলেছেন টং দোকানের চা আলাদা স্বাদ।

চা খাওয়া শেষ করে আহনাফ মহুয়ার হাত ধরে কিছু দূর নিয়ে আসলো। সুনসান নীরব চারপাশ, আহনাফ গাড়ি থেকে দুইটা বেলীফুলের মালা বের করে একটা মহুয়ার হাতে পেঁচিয়ে দিলো অন্যটা নিয়ে মহুয়ার পেছনে চলে গেল।

মহুয়া কিছু বলতে চাইলে আহনাফ ওর ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চেপে বলে উঠলো, ‘ হুসসসস একদম চুপ কোনো কথা হবে না চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।’

মহুয়া থমকে গেল, ভেতর তোলপাড় শুরু হলো। আহনাফের হাতের স্পর্শে ঠোঁট কাঁপতে লাগলো।এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে অন্য দিকে চোখ সরিয়ে নিল মহুয়া।

আহনাফ মহুয়ার ঘোমটা ফেলে বিনুনিতে দ্বিতীয় বেলীফুলের মালা পড়িয়ে দিলো।

মহুয়া সামনে গিয়ে বলে উঠলো,”‘ বেলীপ্রিয়া”

আমি তোমার একটা নাম দিয়েছি ” বেলীপ্রিয়া” যার শরীর থেকে বেলীর ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে থাকে আশপাশ।

মহুয়া লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে গেলো। লজ্জা পেলেই গাল লাল হয়ে যায় মহুয়ার।

মহুয়াকে লজ্জা পেতে দেখে হাসলো আহনাফ।

” তুমি লজ্জা পেলে তোমাকে বিশ্রী রকমের সুন্দর লাগে বেলীপ্রিয়া ”

মহুয়াঃ সুন্দর তো সুন্দর, সুন্দর আবার বিশ্রী হয় কিভাবে!!.??।
আহনাফঃ তুমি বুঝবে না। ঘোমটা দিয়ে নিজেকে আড়াল করে নাও।আমি নিজের উপর বেশি সময় কন্টোল রাখতে পারবো না ভুল কিছু হয়ে গেলে আমার দোষ দিতে পারবে না। সব দোষ এই প্রকৃতির আর তোমার।
মহুয়া প্রথম বুঝতে পারে না আহনাফ কি বলছে! যখন বুঝে সাথে সাথে উল্টো দিকে ফিরে যায়।

আহনাফ হাসে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে, কি চমৎকার সেই হাসি। কিন্তু এই মুগ্ধকর হাসি তার বেলীপ্রিয়া দেখতে পেল না। দেখলে হয়তো আবারও হাসির প্রেমে পড়তো এ যে নজর কাড়া হাসি।।

আহনাফ মহুয়ার সামনে গিয়ে আবার দাঁড়ালো।

মহুয়া আবার লজ্জায় একদম মাথা নিচু করে নিয়েছে।

আহনাফ কিছু সময় তাকিয়ে রইলো ওর লজ্জামাখা মুখের দিকে। মহুয়ার আরও কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। খুব করে ইচ্ছে করলো মহুয়ার এলোমেলো চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিতে।

যা ভাবা তাই কাজ, হাত বাড়িয়ে মহুয়ার এলোমেলো চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিলো৷ মহুয়ার শরীর কাঁপছে । আহনাফের দৃষ্টি গেল মহুয়ার কাঁপা কাঁপা ঠোঁটের উপর।

আহনাফ লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে উল্টো দিকে ফিরে বলে উঠলো, ‘ গাড়িতে গিয়ে বসো।’

মহুয়া এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না দৌড়ে গাড়ির কাছে চলে গেল। বুকে হাত দিয়ে বলে উঠলো, ‘ এতো জোরে লাফাচ্ছিস কেন!.?

আহনাফ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমার কি হয়েছে!!..? আমি আমাকে চিনতে পারছি না! নিজেকে পাগল পাগল লাগে। এই মেয়ের সামনে আসলে নিজেকে অন্য একজন মানুষ মনে হয়, প্রেমিক হৃদয় জেগে উঠে, নিজের উপর কন্ট্রোল হারাই বার বার।

গাড়িতে চুপচাপ বাহিরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে মহুয়া। আহনাফ এক মনে গাড়ি ড্রাইভ করছে।

আহনাফ নিরবতা ভেঙে বলে উঠলো, ‘ একটা প্রশ্ন করি!.?’

মহুয়া ফিরলো না, না ফিরেই বললো,’ বলেন.’

আহনাফঃ সারাক্ষণ একটা মানুষকে ভাবা, তাকে ভাবতেই মুখে হাসি ফুটে উঠা, তাকে ছাড়া অন্য কারো দিকে তাকাতে ইচ্ছে না হওয়া, তাকে দেখলেই বুকের ধুকপুক বেড়ে যাওয়া, তাকে একটু দেখার জন্য মন ছটফট করা, কাজের ফাঁকে তার মুখটা ভেসে উঠা, তাকে ছাড়া সব কিছু মৃত, শূন্য অনুভব হওয়া, তাকে দেখলেই প্রেম প্রেম পাওয়া এইগুলো কিসের লক্ষন..???এই রোগের মেডিসিন কোথায়.???

মহুয়া থমথমে মুখে আহনাফের দিকে তাকালো। আচমকা হেসে বলে উঠলো, ‘ আপনি প্রেমে পড়েছেন।..?’

আহনাফঃ প্রেমের বয়স সেই কবে ফেলে এসেছি।
মহুয়াঃ প্রেমের কোনো নির্দিষ্ট বয়স থাকে না, হয় না। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে আমরা প্রেমে পড়তে পাড়ি, প্রেমে পড়ি। ডাক্তার সাহেব আপনি নিজের মেডিসিন নিজেই খুজে নেন।

চলবে……….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৩৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

মেঘলার ঘুমের ঘোরে মনে হলো কেউ ওর দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে। কারো নিশ্বাস ওর চোখে মুখে উপচে পড়ছে।
মেঘলার ঘুম ভীষণ হাল্কা।
মেঘলা পরিচিত পারফিউমের ঘ্রাণ পেয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলো।
শ্রাবণ মেঘলার এলোমেলো চুলগুলো আলতু করে ঠিক করে দিল। শাড়ির আঁচলটা কাঁপা কাঁপা হাতে ঠিক করে দূরে সরে গেল।

ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো মেঘলা ঠিক আগের মতো ঘুমাচ্ছে চুল এলোমেলো শাড়ির আঁচল সরে গেছে।

শ্রাবণ চোখ সরিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো।

মেঘলা কিছু সময় যেতে শুয়া থেকে উঠে শ্রাবণের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ঘুম কেমন হলো!.??’
মেঘলা অন্ধকার বাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো,’ ঘুমাতে আর দিলেন কই!!.’
শ্রাবণ অবাক হয়ে মেঘলার দিকে তাকালো। মেঘলা মুচকি হেঁসে বাহিরে তাকিয়ে আছে।

শ্রাবণ এক হাতে মাথা চুলকে বলে উঠলো, ‘ আপনি জেগে ছিলেন!.?’
মেঘলাঃ কই নাতো।
শ্রাবণ যা বুঝার বুঝে নিল।

মেঘলা আচমকা শ্রাবণ কে জড়িয়ে ধরলো তাও শক্ত করে।

শ্রাবণ বেশ অবাক হলো। যেখানে এখনো নিজ ইচ্ছায় মেঘলা শ্রাবণের হাতও স্পর্শ করেনি সেই মেয়ে জড়িয়ে ধরেছে!!!

সময় গড়ায় পাঁচ মিনিট পর মেঘলা শ্রাবণকে ছেড়ে দেয় তবে দূরে যেতে পারে না। প্রথম মেঘলা জড়িয়ে ধরলেও এখন শ্রাবণ মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
মেঘলা ছুটার চেষ্টা করলে শ্রাবণ আরও শক্ত করে ধরে।
শ্রাবণঃ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো একদম নড়াচড়া করবে না।

মেঘলা লজ্জায় মুখ শ্রাবণের বুকে লুকিয়ে রেখেছে। কেমন নির্লজ্জের মতো জড়িয়ে ধরে ছিল শ্রাবণ কে! আজ কাল হুটহাট কি করে নিজেও জানেনা। শ্রাবণকে দেখলে কেমন কেমন ফিল হয়। জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে সব সত্যি বলে দিতে ইচ্ছে হয়। এই ঝামেলার জীবন ভালো লাগে না একটু শান্তি চায়। আজ সে ভীষণ ক্লান্ত একটু আশ্রয় চায় শ্রাবণের বুকে৷

______________

রাত করে আশার জন্য ছোঁয়া একটু বকা দিল মহুয়াকে। রাস্তা ঘাটে বিপদ হতে পারে এতো রাতে চলাফেরা করলে।

মহুয়া ছোয়াকে বুঝিয়ে শুনিয়ে গোসল করে আসলো।
ছোঁয়াঃ এতো রাতেও কেন গোসল করতে হয় মহুয়া!.?
মহুয়াঃ তুই তো জানিস ময়লা আমার একদম সহ্য হয় না। বাহির থেকে আসলে মনে হয় শরীর ভার হয়ে আছে গোসল করলে শান্তি লাগে।

ছোঁয়াঃ খাবার নিয়ে আসবো.??
মহুয়াঃ না খাব না আজ।

ওদের কথার মাঝেই দরজায় কড়া নাড়লো আহনাফ।
ছোঁয়াঃ ভাইয়া তুমি ?
আহনাফঃ মহুয়া নিচে আসো।
মহুয়া চুপচাপ ঘোমটা দিয়ে নিচে গেল।

আহনাফ টেবিলে বসতে বসতে বললো, ” আম্মু দাদীজানের কাছে আছে। ফুপিমণি ঘুমিয়ে পড়েছে ছোট আম্মুর মন ভালো না আমার জন্য খাবার গরম করে আনো।
মহুয়াঃ প্রথমে বললেই হতো এতো বড় কাহিনী বলার কারণ বুঝলাম না।
আহনাফঃ তোমার তো নিজের স্বামীর প্রতি একটুও মায়া, ভালোবাসা, দায়িত্ব কিছু নেই মহুয়া। কতোটা পাষাণ বউ। স্বামী সারাদিন কাজ করে বাসায় এসেছে কই একটু সেবাযত্ন করবে তা না রুমে গিয়ে বসে আছো!।

মহুয়া চুপচাপ আহনাফের কথা শুনছে আর খাবার গরম করে সামনে রাখছে।

আহনাফ মহুয়ার হাত ধরে পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিল।

একটা প্লেটে খাবার নিয়ে মহুয়ার সামনে দিল।
মহুয়াঃ আমি খাব না আহনাফ।
আহনাফের হাত থেমে গেলো অবাক হয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ এই প্রথম তোমার মুখে আমার নাম শুনলাম!.’
মহুয়াঃ এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে?
আহনাফঃ কিছু না।

মহুয়া চুপচাপ বসে আছে সে খাবে না৷
আহনাফঃ মহুয়া আমি প্লেটে নিয়ে নিয়েছি চুপচাপ বসে না থেকে হাত মুখ চালাও। তোমার খাওয়া শেষ হলে আমি রুমে গিয়ে ঘুমাবো। ভীষণ ঘুম পেয়েছে সারাদিন আজ প্রচুর প্যারার মধ্যে দিয়ে গেছে।

মহুয়া বাধ্য হয়ে খাবারে হাত দিল। কিন্তু আহনাফের সামনে খেতে লজ্জা লাগছে৷
আহনাফ হয়তো বুঝতে পারলো৷ মোবাইল বের করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইলো।

খাওয়া শেষ করে সব গুছিয়ে মহুয়া নিজের রুমে যাওয়ার সময় আহনাফ মহুয়ার হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।

মহুয়া ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই আহনাফ দুষ্টু হেঁসে মহুয়ার দিকে এগিয়ে আসলো৷

আহনাফের হাসি দেখে নিজের অজান্তেই মহুয়া দুই পা পিছিয়ে গেল।
আহনাফ মহুয়ার একদম কাছে এসে মহুয়ার মুখের দিকে হাত বাড়ালো।

মহুয়া দরজার সাথে ধাক্কা খেয়ে থেমে গেল।
আহনাফ মহুয়ার পেছন থেকে রুমাল নিয়ে আবার সোজা হয়ে দাঁড়ালো। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুমি কি ভেবে ছিলে!.?’
মহুয়াঃ আমাকে রুমে কেন এনেছেন! দরজা খুলেন কেউ দেখলে…
আহনাফঃ দরজা লাগানো কেউ কিভাবে দেখবে মহুয়া!.? দিন দিন চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে বুদ্ধি হাঁটুতে চলে আসছে। আর আমার বউ আমার রুমে কে কি বলবে!.?
মহুয়া চুপ করে রইলো, এই লোকের সাথে কথা বলে লাভ নেই।

আহনাফ সোজা গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
আহনাফঃ মেহু মাথাটা একটু টিপে দাও না ভীষণ যন্ত্রণা করছে।
মহুয়া ধীর পায়ে গিয়ে আহনাফের বিছানার পাশে দাঁড়ালো।
আহনাফ এক টানে মহুয়াকে বসিয়ে দিল।
আহনাফঃ তুমি পরপুরুষের রুমে নেই মেহু। তুমি তোমার স্বামীর রুমে আছো৷
মহুয়া হাত বাড়ালো আহনাফের চুলের দিকে।
আহনাফঃ যত্ন করে ভালোবেসে চুল টেনো আবার দেখো সব জেনো হাতে না চলে আসে। এই চুল আমার ভীষণ প্রিয়। আমি ঘুমালে ডাক দিবে না।
মহুয়া হাসলো আহনাফের কথা শুনে।

_________________

ধীরে ধীরে দরজা খুলে রুম এক নারী প্রবেশ করলো। শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে হাতের ছু*রিটা শক্ত করে চেপে ধরলো।

ড্রিমলাইটের আলোয় বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো।

কাঁথা গায়ে দেওয়া কাউকে দেখেই রাগে, ঘৃণায় চোখ জ্বলে উঠলো।

শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ছুরিটা বুকের দিকে বসিয়ে দিল। পরপর কয়েকবার ছুরি বসিয়ে তাকালো।
ছুরিতে রক্ত নেই কেন!..?

পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে!? আস্তে করে পেছনে ফিরে ভয়ে বিছানায় পড়ে গেল।

” ভয় পেয়েছো!!.? ভেবে ছিলাম তুমি আসবে আমার ভালোবাসার টানে”

নারীটি ভয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে ছুরি সামনে ধরলো।
” আমাকে খু’ন করতে এসে ছিলে!.? নিজের স্বামীকে!!.? নিরু তুমি ঠিক আগের মতো বোকা রয়ে গেছো। আমাকে মা-রা এতো সহজ!.??

~ আমি একদিন তোমাকে নিজ হাতে খু’ন করবো।
~ পারবে!.? ভালোবাসার মানুষের বুকে ছুরি বসাতে!.? তোমার বুকে বসবে না!.? বুক কাঁপবে না.?
হঠাৎ নিরুপমা শব্দ করে হেঁসে উঠলো। হাসতে হাসতে হুঁ হুঁ করে কেদে উঠলো।

~ আমি তোমার ভালোবাসা আর তোমার বুকে আজ থেকে ২০ বছর আগেই ছুরি বসিয়েছি তাও কিভাবে বেঁচে গেলে!!..??

আফজাল সিগারেট ঠোঁটে চেপে বারান্দায় চলে গেল।

নিরুপমা সেখানে বসেই কাঁদতে শুরু করলো।

চলবে,

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে