#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৩২
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
মহুয়া দাঁড়িয়ে আছে মহুয়ার পিছনে আহনাফ।
মহুয়া ভাবতে লাগলো এখন কফি বানানোর জন্য কি তাকে মাটির চুলায় আগুন ধরাতে হবে.? ।
আহনাফ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মহুয়াকে দেখছে।।।
গ্রামের সচরাচর গ্যাস থাকে না। এখানে কোন৷ লাইন গ্যাস নেই এখানে সবাই মাটির চুলায় রান্না করে তবে সিলিন্ডার গ্যাস আছে।।
মহুয়া ভাবতে লাগলো কিভাবে কি শুরু করবে। এত রাতে কিভাবে কোথায় কি আছে সে কিছুই জানে না।। এখানে রান্না করে কোথায় কি থাকে সেটাও জানেনা এখানে আসার পরে সে কখনো রান্না ঘরে আসেনি।।
“এখন মাটির চুলায় রান্না করতে হবে না ভেতরে সিলিন্ডার গ্যাস আছে, আসো।। ”
আহনাফ মহুয়াকে দাঁড় করিয়ে নিজে কফি বানিয়ে নিলো।।
ছোঁয়ায় একদৃষ্টিতে ঘরের দরজা থেকে রান্না করে দিকে তাকিয়ে আছে।।
আহনাফ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ চলো বাহিরে.. ‘
মহুয়াঃ আপনার মাথা ঠিক আছে.? এতো রাতে বাহিরে কোথায় যাব..?
আহনাফঃ আসতে বলেছি পেছন পেছন আসো।
সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা হচ্ছে কারো সাথে একতরফা প্রেমে পড়া।
হৃদয় টাকে প্রতিনিয়ত চুর্ণ বিচুর্ণ করে ফেলে না বলা অনূভুতি গুলো দুমড়ে মুচড়ে খন্ড খন্ড করে ফেলে মৃত্যু হয়ে যায় হৃদয়টার, ছোঁয়া এখন সেই মৃত্যুর যন্ত্রণায় আছে তাও সে কখনো কাউকে বুঝতে দিবে না, একটা ফুল ফুটার আগেই ঝড়ে গেছে।
ওর পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তাকালো তাকিয়ে দেখে নির্জন ওর দিকে তাকিয়ে আছে।।
ছোঁয়া নির্জন কে দেখে চুপচাপ রুমের ভিতরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিতে নেয়, তখনই নির্জন দরজায় হাত দিয়ে আটকে দেয়।।
ছোঁয়া বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ওঠে সমস্যা কি..?।
নির্জন ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো আপাতত আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ওদের মধ্যে কি চলছে আর তুই কি লুকাতে চাচ্ছিস??।
ছোঁয়া বলে উঠলো ওদের মধ্যে কিছু চললে আমার আগে তো তুই জানার কথা তাই না..?
নির্জন হাসলো। হেসে বলে উঠল নিজেকে অনেক স্মার্ট আর চালাক ভাবতে শুরু করেছিস তাই না??
ছোঁয়া বলে উঠল নির্জনের বাচ্চা যাবি এখান থেকে।। এটা গ্রাম শহর না।। এখানে মানুষ দশটার পর ঘুমিয়ে যায় তোরা এত রাত পর্যন্ত কি করছিস।
নির্জন হাতের মোবাইলটা দেখিয়ে বলে উঠলো এখানে নেটের খুবই বাজে অবস্থা কারো সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না আমার পাখিগুলা নিশ্চয়ই রাগ করে আছে।
ছোঁয়া নাক মুখ কুঁচকে বল উঠলো ১৪ ভাতার।
নির্জন না রেগেই বলে উঠলো, ‘তোর হাতটা দেখি.. ‘
ছোঁয়া হাত বাড়িয়ে দিল দুই হাত মেহেদী রঙিন হয়ে আছে।। হাতের তালুতে লাভের মধ্যে৷ দুই হাতে দুইটা লাভ। লাভের মাঝে জ্বলজ্বল করছে দুইটা নাম।
লাভ গুলো দেখতে মনে পড়ে গেল সন্ধ্যার সেই দৃশ্য।। নির্জন যখন ছোঁয়াকে হাতে মেহেদি দিয়ে দিচ্ছিল তখনই মেঘলা বলে উঠলো। আমি শুনেছি,, যার হাতের মেয়েটি যত রঙিন হবে তার স্বামীর ভালোবাসা তত গভীর হবে।
ছোঁয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,’ সত্যি!..?? ‘
মেঘলাঃ হয়তো সত্যি।
ছোঁয়া মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। ওর জীবনে আর কখনো ভালোবাসা নামক শব্দটা আসবে না আর স্বামী, বিয়ে এইসবের কথা কল্পনায়ও আনে না।
নির্জন মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ভাবি আজ তাহলে পরীক্ষা হয়ে যাক ভাইয়ার ভালোবাসা কতোটা গভীর। ‘
মেঘলা হেঁসে উঠলো,’ আছিই আর এক মাস।’
নির্জনঃ ভাবি বিয়েটা ছেলে খেলা নয়, আপনি চাইলেই সব সম্ভব এক মাস নয় একটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারবেন। আমি ভাইয়ের চোখে আপনার জন্য ভালোবাসা দেখি।
মেঘলাঃ নির্জন এটা ভালোবাসা নয় দায়িত্ব।
নির্জনঃ দায়িত্ব থেকেই ভালোবাসা তৈরি হয় আর কোনটা ভালোবাসা কোনটা দায়িত্ব আমি বুঝি।
ছোঁয়াঃ সারাদিন মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করতে করতে এখন যেই দিকে তাকায় শুধু প্রেম, ভালোবাসা দেখতে পায়।
নির্জনঃ ইসসস এটা কি হয়ে গেল!!..?
ছোঁয়াঃ কি করছস.?
নির্জন অপরাধীর মতো মুখ করে বলে উঠলো, ‘ লাভের মধ্যে তোর নামের প্রথম অক্ষর লেখতে গিয়ে নিজের নামের লেখে ফেলছি।’
ছোঁয়া কিছু সময় তাকিয়ে থেকে মুখ ভার করে বলে উঠলো, ‘ অন্য হাতে আমার নাম লেখে দে।’
নির্জন মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখে অন্য হাতে ছোঁয়ার নাম লেখলো। সে যে ইচ্ছে করেই নিজের নাম লিখেছে ওর এই হাসি দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
ছোঁয়া নির্জন কে ডেকে বলে উঠলো, ‘ কি হলো? কই হারায় গেলি.?’
নির্জন পকেট থেকে দুইটা বালা বের করে ছোঁয়ার হাতে পরিয়ে বলে উঠলো, ‘ সুন্দর লাগছে, হাত গুলোতে কিছু একটা নেই নেই, শূন্য শূন্য মনে হচ্ছিল এখন পরিপূর্ণ লাগছে।
ছোঁয়া বালা গুলোর দিকে তাকিয়ে হাত স্পর্শ করলো। আসলেই বালা গুলো খুব সুন্দর আবছা অন্ধকারে কি সুন্দর জ্বলে আছে। ছোঁয়া কিছু বলার জন্য সামনে তাকিয়ে দেখলো নির্জন নেই।
” এই ছেলে কি সব সময় এইসব পকেটে নিয়ে ঘুরে নাকি!.? নিশ্চয়ই প্রেমিকাদের জন্য কিনে ছিল।
________________
সকাল হতেই বিয়ে বাড়িতে মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেল। আত্মীয় স্বজনে বাড়িতে শ্বাস নেওয়ার অবস্থা নেই।
সকাল সকাল গালে নরম ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেতেই সাজ্জাদ চমকে উঠলো, ঘুমের ঘুরে হাত গালে রাখতেই তুলে তুলে নরম হাত হাতের মুঠোয় আসতেই এক লাফে ঘুম থেকে উঠে বসলো।
নিজের চোখের সামনে সামিয়া কে দেখেই সকাল সকাল মেজাজ খারাপ হয়ে গেল৷ রুমে আর কেউ নেই, এই মেয়ে এই রুমে কি করছে..?
সাজ্জাদঃ তুমি!!..?
সামিয়াঃ হে আমি,খুশি হননি..?
সাজ্জাদ দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ এই রুমে কি করছো..?”
সামিয়াঃ এটা আমার আন্টির বাসা আমি চাইলে যেই কোনো রুমে যেতে পারি।
সাজ্জাদঃ তাই বলে একটা ছেলের রুমে এসে তার গালে হাত রাখার সাহস কিভাবে হয় তোমার!!..?
সাজ্জাদের হঠাৎ এভাবে রেগে যাওয়ায় ভয় পেয়ে যায় সামিয়া।
সাজ্জাদঃ সকাল সকাল দিনটাই খারাপ করে দিলো। এই রুম থেকে বের হও না হলে গালে একটা থাপ্পড় পড়তে বেশি সময় লাগবে না।
সামিয়াঃ আপনি আমার সাথে এভাবে কেন কথা বলছেন..?
সাজ্জাদঃ রুম থেকে বের হতে বলেছি।
সামিয়াঃ আমি তো…
সাজ্জাদঃ যাওওওওও!
সামিয়া গাল ফুলিয়ে নাক টানতে টানতে বেরিয়ে গেল।
সাজ্জাদঃ বিরক্তিকর মেয়ে….
____________
রিয়াকে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।
ছোঁয়া তিনটা তিন কালার লেহেঙ্গা বের করে মেঘলা, মহুয়া আর নিজে নিলো। সাজগোজ করে বের হলো গেইট ধরতে হবে।
ওদের সাথে যু্ক্ত হলো সামিয়া আরও কিছু মেয়ে।
গেইটে দাঁড়িয়ে অনেক মজা করলো৷ দূর থেকে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিল আহনাফ।
নির্জন মেয়ে পটাতে ব্যস্ত এতো কিউট কিউট বেয়াইন একটাকেও হাত ছাড়া করা যাবে না।
সবাই বেশ অবাক হচ্ছে ছেলে পক্ষ টাকা নিয়ে কোনো ঝামেলা করছে না। প্রথম গ্লাসে হলুদ দেওয়া ছিল, দ্বিতীয় গ্লাসে হাল্কা মরিচ সাথে একগাদা লবন, তৃতীয় গ্লাসে পুরো গ্লাসটায় লেবুর রস ছিল একটুও পানি বা লবন ছিল না।
প্রথম গ্লাসটা ছোঁয়া তুলে জামাইর হাতে দিলো জামাই মুখে দেওয়ার আগেই তার এক বন্ধু নিয়ে নিলো। ছোঁয়া বিরক্ত হয়ে দ্বিতীয় গ্লাস জামাইর হাতে দিতে নিলে ছেলেরভাই বলে উঠলো, ‘ বেয়াইন সব কিছু আপনি করলে বাকিদের কি সাজিয়ে রেখেছেন!..? যেমন কাপড় সাজিয়ে রেখে বলে দেখে নেন,বেছে মেন, কার কোনটা চাই!.???’
সব ছেলেরা হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।
মেয়েরা বেশ রেগে গেল তর্কে লেগে গেল সামিয়া। মেয়েটার মাথার তার একটু ছিড়ে থাকলেও এখানে বেশ গুছিয়ে ঝগড়া করছে।
দুই পক্ষে ঝগড়া করেই যাচ্ছে আজ হয়তো বাড়ি থেকে ভেবেই এসেছে কেউ কাউকে ছাড়বে না।
ছেলে পক্ষঃ আপনাদের কি চাই..?
মেয়ে পক্ষঃ আমাদের কি চাই তা তো আপনারা ভালো করেই জানেন।
ছেলে পক্ষঃ এটা কেমন ছেঁচড়ামি হয়ে যাচ্ছে না..? আমাদের বউ চাই দিয়ে দেন বাড়ি চলে যাই চাইলে এক দুইটা বেয়াইন সাথে ফ্রী দিতে পারেন।
মেয়ে পক্ষঃ আপনারা হয়তো প্রথম বিয়ে বাড়িতে এসেছেন কোনটা ছেঁচড়ামি আর কোনটা অধিকার বুঝতে পারছেন না।
ছেলে পক্ষঃ আপনাদের কি মনে হয় আমার ভাইকে আরও বিয়ে দিয়ে এনেছি যে প্রথম হবে না।
মেয়ে পক্ষঃ পেঁচাল না করে আমাদের পাওনা দিয়ে ভেতরে যান, না হলে…..
ছেলে পক্ষঃ না হলে…?
মেয়ে পক্ষঃ বাড়িতে ভাই নিয়ে চলে যান। আমাদের মেয়ের জন্য ছেলের অভাব হবে না।দেখতে শুনতে কোনোদিক দিয়ে কম নেই আমাদের মেয়ে।
ছেলে পক্ষঃ আমাদের ছেলেও দেখতে নায়কের থেকে কম নয়। চল ভাই আমরা এর থেকে কিউট মেয়ে এনে দেখিয়ে দিব।
ছেলেরা ফিরে যেতে চাইলে ছোঁয়া মেঘলার দিকে তাকায় , মেঘলা হেঁসে বললো এখনি ফিরবে…
সাথে সাথে শান্ত এসে আবার চেয়ারে বসে বলে উঠলো, ‘ শালিকা আপনাদের কতো চাই..? ‘
সব মেয়েদের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ছেলেদের মুখ ফাটা বেলুনের মতো হয়ে গেছে।
শান্তর ভাই ফিসফিস করে বলে উঠলো ” আমরা কি সত্যি চলে যেতাম নাকি বউ পাগল গাধা!!”
ছোঁয়া একটা কাগজ এগিয়ে দিলো।
ছেলের ভাই বলে উঠলো, ‘ ঠিক আছে আমরা সবটাই দিতে রাজি।”
সবার চোখ আরও বড় বড় হয়ে গেল। ছোঁয়া মজা করে ৫০ হাজার লেখে ছিলো।
মেয়ে পক্ষঃ সত্যি!!..?
ছেলে পক্ষঃ হে সত্যি।
~ এই সাব্বির তোর মাথা ঠিক আছে।
~ চুপ থাক, আমারটা আমাকে বুঝতে দে।
ছেলে পক্ষঃ আপনাদের থেকে কালো পরী বেয়াইন একটা শরবতের গ্লাস এগিয়ে দেন।
“কালো পরী!!.???”
” কালো লেহেঙ্গা পড়া বেয়াইন”
সবাই মহুয়ার দিকে তাকালো। মহুয়া কালো লেহেঙ্গা সাথে কালো চুড়ি, হাল্কা সাজ,সাথে চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে দেখতে পরীর থেকে কম নয় আরও বেশি সুন্দরী লাগছে।
মহুয়া মুচকি হেঁসে লাস্টের শরবতের গ্লাসটা হাতে নিল। সাব্বিরের দিকে এগিয়ে বললো আগে টাকা।
সাব্বির একটা কাগজে মোড়ানো টাকার ব্যাগ এগিয়ে দিলো।
ছোঁয়া টাকা পেয়ে খুশিতে গেইট ছেড়ে ভেতরে চলে গেল ওর পেছন পেছন সবাই দৌড় দিলো। মহুয়ার হাতে এখনো গ্লাসটা। সাব্বির মহুয়ার হাত থেকে হেঁসে গ্লাস হাতে নিয়ে মুখে দিয়ে থমকে গেল। না পারছে ফেলে দিতে আর না পারছে গিলে নিতে।
মহুয়া অন্য দিকে ফিরে হাসতে হাসতে ভেতরে চলে গেল।
সাব্বিরের মুখে শয়তানি হাসি। বেচারি বেয়াইনগন এখন শুধু টিস্যু দিয়ে চোখ মুছবে….
ছোঁয়ার মাথায় হাত ৫০হাজারের জায়গায় শুধুই পাঁচ হাজার টাকা আর সব কাগজ। এভাবে বোকা বানালো!!.? এটা মেনে নেওয়া যায় না! সব মেয়েরা মিলে ছেলে পক্ষকে বকতে শুরু করলো।
আহনাফ এতোক্ষন সব সুন্দর ভাবে লক্ষ করলো।
মহুয়া বাহিরে আসতেই আহনাফ হাত ধরে স্টেজের সাইডে চেয়ারে বসিয়ে দিল। মহুয়ার পাশে নিজে বসে রইলো।
মহুয়াঃ আমরা এখানে বসে আছি কেন..?
আহনাফঃ কেন ভালো লাগছে না.?
মহুয়া চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে বললো” হুম”
আহনাফ মহুয়ার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে শুকিয়ে যাওয়া বেলীফুলের মালা পেচিয়ে দিল।
মহুয়াঃ অনেক আগের মনে হচ্ছে!.?
আহনাফ কিছু না বলে মুচকি হাসলো৷
মুগ্ধ হলো মহুয়া, কি সুন্দর লোকটার হাসি কিন্তু সহজে এইলোকের মুখে হাসি দেখা যায় না। সব সময় মুখে একটা গম্ভীর ভাব এনে রাখে জেনো তার হাসতে মানা, হাসলেই দাঁত গুলো খলশে পড়ে যাবে।
আহনাফঃ এভাবে তাকিয়ে থাকবে না, উল্টো পাল্টে কিছু করে দিতে দ্বিতীয় বার ভাববো না।
মহুয়া লজ্জায় অন্য দিকে ফিরে যায়।
আহনাফ মহুয়ার হাত টেনে নিজের দিকে তাক করিয়ে বলে উঠে ” তাকিয়ে থাকো।”
মহুয়া এবার সত্যি বুঝে যায় এইলোকের মাথায় সমস্যা আছে। নিজে নাকি ডাক্তার অথচ নিজের মাথায় সমস্যা নিয়ে ঘুরছে!. এখন বললো তাকাবে না আবার এখন বলছে তাকিয়ে থাকো।
আহনাফঃ নিষেধ করায় রাগ করে অন্য দিকে ফিরে গেলে এখন এটার শাস্তি হলো এক ঘন্টা আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।
মহুয়া বিরবির করে বললো,’ আমি রাগ করিনি।’
আহনাফ বুঝলো মহুয়া লজ্জা পাচ্ছে তাও বলে উঠলো, ‘ তোমার গাল এমন লাল হয়ে যাচ্ছে কেন..? আমার দিকে তাকাও আমি কিন্তু সব রোগের ডাক্তার।
মহুয়াঃ সব রোগের!..?
আহনাফঃ হুম শুধু মাত্র তোমার জন্য।
” তোকে দেখতে পেত্নীর মতো লাগছে”
ছোঁয়া পেছন ফিরে এমন কথা শুনে রেগে গেল।
নির্জনঃ এভাবে মুখে ভূতের মতো আটা ময়দা মেখে ঘুরে বেড়াচ্ছিস কেন..? দিন দুপুরে জ্বীন, পেত্নী ভেবে নিয়ে যাবে।
ছোঁয়াঃ নির্জনের বাচ্চা শুধু কি আমি সেজেছি সবাই আজ আটা ময়দা মেখেছে। এতোক্ষন তো দেখলাম আটা ময়দা মেখে ঘুরে বেড়ানো খরগোসের মতো মুখ মেয়েদের পেছনে ঘুরলি।
নির্জনঃ তুই আমাকে ফলো করছিস..?তুই এমনিতেই সুন্দর আটা ময়দা মেখে ডাইনী সেজে বাচ্চাদের সাথে সাথে আমাদের মতো ভদ্র ছেলেদের ভয় দেখানোর কি দরকার যা মুখ ধুয়ে আয়।
রাগে ছোঁয়ার ইচ্ছে করছে নির্জনের মাথা ভারি মারতে।
ছোঁয়াঃ পেত্নী, ভূত,ডাইনী আর কিছু বাকি থাকলে তাও বলে ফেল।
নির্জন ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে আসলো। ছোঁয়া নিজের অজান্তেই দুই পা পিছিয়ে গেল।নির্জন তাও এগিয়ে এসে ছোঁয়ার দিকে ঝুঁকে ছোঁয়ার এলোমেলো হয়ে থাকা চুল ফু দিয়ে উড়িয়ে দিলো।
ছোঁয়ার শরীর কেঁপে উঠল , কেমন বরফের মতো জমে গেছে।
নির্জন কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো ” বউ বউ লাগছে”
ছোঁয়া অবিশ্বাস চোখে নির্জনের দিকে তাকালো। এক ঝাঁক লজ্জা এসে ভিড় করেছে ছোঁয়ার চোখে মুখে।
______________
সাজ্জাদ মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে মেঘলার দিকে গোলাপি লেহেঙ্গায় সুন্দর লাগছে মেঘলাকে, মেঘলার টানাটানা চোখ গুলোতে আবারও প্রেমে পড়লো সাজ্জাদ ।
” কি নামে ডেকে বলবো আপনাকে মন্দ করেছে আপনার ঐ দুটি চোখে। আমি যে মাতাল হাওয়ার ই মতো হয়ে যেতে যেতে পায়ে পায়ে গেছি জড়িয়ে। কি করি ভেবে যে মরি বলবে কি লোকে.? কি নামে ডেকে বলবো আপনাকে মন্দ করেছে আমাকে ঐ দুটি চোখে”
সাজ্জাদ মেঘলার পাশে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো ” গোলাপি লেহেঙ্গায় আপনাকে সদ্য ফোঁটা গোলাপের মতো স্নিগ্ধ, মায়াবতী লাগছে।”
মেঘলা হেঁসে বললো,’ ধন্যবাদ ‘
সাজ্জাদ আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সামিয়া কাউকে খুঁজছে সাজ্জাদ উল্টো দিকে ফিরে গেলো৷
মেঘলা হেঁসে বলে উঠলো ” মেয়েটা দেখতে যেমন সুন্দরী, মিষ্টি চেহারার অধিকারী তেমনি মিশুক। আপনাকে খুঁজছে ডাক দিব..!?
সাজ্জাদঃ একদম না গোলাপের রাণী।
মেঘলাঃ গোলাপের রাণী..?
সাজ্জাদঃ আজ আপনাকে গোলাপের রাণী লাগছে।
সাজ্জাদ মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ যদিও হয় সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নারী তবুও সে তুচ্ছ। ভালোবাসি আমি যাকে দিয়েছি গোলাপ গুচ্ছ, যত্ন করে রাখবে সেটা দেবে না সে ফেলে। থাকবে সেথা যত্ন করে তার মনের ই ডালে। যদি সেটা ছুড়ে ফেলে হবো উদাসীন হারিয়ে যাবো আমি তখন স্বপ্ন মূল্যহীন।
মেঘলাঃ আপনি চেষ্টা করলে কবি হতে পারবেন। আপনিও কাউকে ভালোবাসেন..?
সাজ্জাদ হেঁসে বললো,’ এইগুলো তো পছন্দের কবিদের থেকে কপি করা।’
মেঘলা হেঁসে ফেললো।
সাজ্জাদ আবার বলে উঠলো ” আমি বলবো সে দেখতে একটি গোলাপ কিন্তু চাইলেই ধরতে পারি না কারণ গোলাপেও কাঁটা আছে,তাও আমি ভুল করে একবার সারাজীবনের জন্য ধরতে চাই।’
” সাজ্জাদ দেখি দিন দিন প্রেমের কবি হয়ে যাচ্ছ।”
সাজ্জাদ মেঘলা পেছন ফিরে তাকালো। শ্রাবণ দুইহাত বুকে ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে।
সাজ্জাদঃ তেমন কিছু না ভাইয়া।
শ্রাবণ সাজ্জাদে দিকে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ অন্যদের কপি না করে নিজে কিছু করার চেষ্টা করেন। ”
সাজ্জাদ মাথা নেড়ে কেটে পড়লো এখান থেকে।
শ্রাবণ মেঘলার সামনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি আপনাকে আমার সাথে সাথে থাকতে বলে ছিলাম।
মেঘলাঃ আমি ছোট বাচ্চা নই।
শ্রাবণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘ সাজ্জাদের থেকে দূরে থাকবে।’
মেঘলাঃ কেন..? আপনি কি সাজ্জাদের সাথে দেখলে জেলাস হন.?
শ্রাবণঃ তোমরা মেয়েরা সব সময় বেশি বুঝ। আমি নিষেধ করেছি দ্বিতীয় বার জেনো ওকে তোমার আশেপাশে না দেখি।
____________
বিয়ে খুব সুন্দর করে শেষ হয়ে গেল। বাড়ির সবার মন খারাপ। বাড়ির উঠানে বসে আছে আনোয়ার চৌধুরী আর উনার বড় ছেলে, সাথে অনেক আত্মীয় স্বজনরা।
আহনাফ রুমে ফ্রেশ হয়ে মোবাইলে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছে শ্রাবণ বসে আছে ওরা সবাই কাল বাড়ি ফিরবে আজ সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
নির্জনের মোবাইলে একটা কল আসলো। নির্জন ফোন কানে নিয়ে কথা বললো আচমকা নির্জনের হাত থেকে মোবাইল পড়ে গেল। সবাই নির্জনের দিকে তাকাতেই নির্জনের চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। পড়ে যেতে নিলে আহনাফ দ্রুত গিয়ে নির্জনকে ধরলো। শ্রাবণ মোবাইল হাতে নিয়ে কানে দিলো।
নির্জনের কাছে হালিমা বেগম ছুটে আসতেই নির্জন বলে উঠলো ” আব্বু!! বলেই কেমন বাচ্চাদের মতো কাঁদতে শুরু করলো।” কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। কি হয়েছে..?
শ্রাবণ মোবাইল কানে চেপেই থমকে দাঁড়িয়ে রইলো৷
আনোয়ার চৌধুরীঃ কি হয়েছে..?
শ্রাবণঃ দাদু ছোট আব্বু হসপিটাল….
শ্রাবণ চেষ্টা করেও বাকিটা কাউকে বলতে পারলো না। ওর গলায় কথা আঁটকে গেছে, কেউ মনে হচ্ছে গলা চেপে ধরে রেখেছে।
নির্জনঃ আব্বু আর নেই..
চলবে…
#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৩৩
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
কখন কার মৃত্যু কিভাবে আশে কেউ বলতে পারে না। মৃত্যু কারো বয়স দেখে না, যার ডাক যখন আসবে তাকে যেতেই হবে।
গ্রাম থেকে সবাই হসপিটালে গিয়ে দেখে মিরাজ চৌধুরী আর নেই। হসপিটালে নিয়ে আসার আগেই মা-রা গেছেন।
যেই কেইসের জন্য গ্রামে যেতে পারেনি সেই কেইসের তদন্ত করতে গিয়েই মৃত্যু ঘটেছে।
হালিমা বেগমের পাগলামি দেখে কেউ নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। স্বামী হারিয়ে পাগলের মতো আচরণ করতে শুরু করেছেন।
নির্জন, চঞ্চল ছেলেটা জেনো একদম শান্ত হয়ে গেছে। সে জেনো বাবা নয় জীবনের চাবি হারিয়ে ফেলেছে। “চাবি ছাড়া যেমন তালা মূল্যহীন বাবা ছাড়া নির্জনের নিজেকে ঠিক তেমন মনে হচ্ছে। ”
মানুষ বলে ছেলেরা নাকি কষ্ট পেলেও কাঁদতে জানে না। নির্জন আজ তিনদিন দরজা বন্ধি। বাবা হারিয়ে একদম ভেঙে পরেছে।
ডাক্তার বললো এটা এক্সিডেন্ট কিন্তু সবাই এটা মেনে নিলেও মেঘলা কিছুতেই মেনে নিতে পারলো না এটা এক্সিডেন্ট! ডাক্তার কিছু লুকাচ্ছে! এটা মার্ডার! প্লেন করে মিরাজ চৌধুরীকে খু’ন করা হয়েছে।
বাড়িটা কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে। আনোয়ার চৌধুরী ছেলের এমন মৃত্যুতে নরম হয়ে গেছেন। আফরোজা বেগম কিছুই জানেন না। উনার শুধু শ্বাস চলছে কখন উনি নিজেই চলে যান সেই চিন্তায় আছে সবাই।
সকালে নাস্তা বানিয়ে সবাই কে ডাকলেন আমেনা বেগম।
নিরুপমা আস্তে ধীরে নেমে আসলো। মুখটা কেমন চুপ্সে আছে।
আমেনা বেগমঃ কি হয়েছে নিরু শরীর ভালো না..?
নিরুপমা হাসার চেষ্টা করে বললো,’ ভালো ভাবি। আব্বা ভাই কই.?”
আমেনা বেগমঃ আব্বার জন্য উপরে খাবার দিয়ে আসছে টুম্পার আম্মা। আর আপনার ভাই অফিসে চলে গেছে, অফিসে কাজের সমস্যা চলছে।
নিরুপমা খাবারের প্লেটে খাবার নিয়ে হালিমা বেগমের রুমের সামনে গেল।
দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখলো হালিমা বেগম জায়নামাজে বসে কাঁদছেন।
নিরুপমার চোখে জলে ভরে উঠলো। আজ হালিমার এই চোখের পানির জন্য যে সে নিজে দায়ী!! আজ ভাই হারিয়েছে কাল না জানি আরও কতোজন হারাতে হয়!! নিরুপমা খাবার প্লেট রেখে জলদি বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। জীবনের কালো অধ্যায় যে আবার শুরু হলো।
কি লুকাতে চাচ্ছে নিরুপমা..?
__________________
দেখতে দেখতে কেটে গেল এক মাস। এই এক মাসে সবাই কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে, স্বাভাবিক হতে পারেনি হালিমা বেগম। স্বামী হারিয়ে কেমন চুপচাপ হয়ে গেছেন। পাল্টে গেছে নির্জন। আগের মতো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ানো, কথায় কথায় ফাজলামো করা সব বন্ধ হয়ে গেছে।
বাসায় আসছে খাচ্ছে আর রুমে যাচ্ছে কারো সাথে দ্বিতীয় কোনো শব্দ খরচ করছে না।
সকাল সকাল চেঁচামেচির শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেল সবার।
সবাই নিচে নেমে আসলেও নির্জনের কোনো খবর নেই সে ঘুমাচ্ছে।
আহনাফ শ্রাবণ আনোয়ার চৌধুরীর পাশে বসে আছে। আজাদ চৌধুরী রাগে নির্জনকে ডেকে আনতে বলেছেন।
নির্জন নিচে এসে দাঁড়ালো।
আজাদ চৌধুরী নির্জনের দিকে পেপার এগিয়ে দিয়ে রেগে বলে উঠলেন,’ এইসব কি নির্জন!!.? ‘
নির্জন কাগজটা হাতে নিয়ে একটু হাসলো তারপর সবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনারা এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন..? এখানে কি সার্কাস দেখানো হচ্ছে..? ”
আহনাফ ধমক দিয়ে বলে উঠলো, ‘ নির্জন আব্বু যা বলছে উত্তর দে।’
নির্জনঃ ভাই তুমিও! এতোদিন কাজ করিনি বলে কতো কিছু বলতে এখন কাজ নিয়েছি এটাতে তো কারো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
আজাদ চৌধুরীঃ কাজ নিয়েছো ভালো কথা, পুলিশের জব কেন নিতে হবে!!..? তুমি চাইলে এখনি অফিসে জয়েন হতে পারো।
নির্জনঃ আমি এই বিষয় আর কিছু বলতে চাচ্ছি না বড় আব্বু।
আজাদ চৌধুরী রেগে বলে উঠলেন,’ যা ইচ্ছে করো দরকার হলে ঘরে বসে খাও তাও পুলিশের চাকরি করতে পারবে না।’
নির্জন মৃদু হাসলো।
হালিমা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে আবার রুমে চলে গেলেন৷
উনি খুব ভালো করেই জানেন ছেলে কেন স্বামীর পুলিশের চাকরি নিয়েছে। নির্জন তদন্ত করে সেই লোক পর্যন্ত পৌঁছাবে যে এতো নিষ্ঠুরভাবে ওর আব্বুকে মে’রেছে। সে প্রতিশোধ নিবে, একটা একটা করে সবাইকে বের করবে। চঞ্চল, হাসিখুশি একটা ছেলে শান্ত মস্তিষ্কে কতোটা ভয়ংকর হতে পারে তা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।
_____________
শ্রাবণের দিন দিন কাজের চাপ বাড়ছে। অফিসের ঝামেলার সাথে সাথে যুদ্ধ করতে করতে সে ক্লান্ত তবুও কোনো উন্নতি হচ্ছে না দিন দিন কোম্পানির অবস্থা খারাপ হচ্ছে । খারাপ সময় আসলে সব দিক দিয়ে আসে। বাড়িতে আসলে বাড়িটা কেমন নির্জীব লাগে অফিসে গেলে সব এলোমেলো লাগে। কোথায় আছে সব কিছুর সমাধান!!..???
শ্রাবণ কাগজপত্র গুছিয়ে উঠে দাঁড়ালো। মেঘলা তারাহুরো করে কফি রাখতে গিয়ে পায়ে কিছুটা ফেলে দিল।
শ্রাবণ দ্রুত পানি ডেলে দিল মেঘলার পায়ে।
মেঘলা ব্যাথা পেলেও হাসি মুখে বলে উঠলো, ‘ আমার কিছু হয়নি আপনার জন্য আরেক মগ নিয়ে আসি..? আপনার অফিসে দেরি হচ্ছে! আসলে নিচে একটা কাজ করতে গিয়ে আপনার কফির কথা মনে ছিল না..। ‘
শ্রাবণঃ চুপচাপ বসো। দেখি পা এদিকে দাও।
মেঘলাঃ কিছু হয়নি তো।
শ্রাবণ বরফ এনে মেঘলার পায়ে লাগিয়ে ঠান্ডার মলম লাগিয়ে দিল।
মেঘলাঃ আপনার ক….
শ্রাবণঃ চুপ!! আমার কফি লাগবে না। একটু রেস্ট নাও ….
মেঘলা ভদ্র মেয়ের মতো চুপচাপ বসে রইলো। শ্রাবন অফিসের জন্য রেডি হয়ে মেঘলার দিকে তাকালো।
মেঘলা হ্যাঁ করে শ্রাবণকেই দেখছিলো। এক মাসে লোকটা কতোটা চেঞ্জ হয়ে গেছে। রাতদিন কাজ করে নিজের অবস্থা করেছে কি!!..? একটুও নিজের যত্ন নেয় না।
শ্রাবণ ফাইল হাতে নিয়ে বের হতে গিয়েও ফিরে তাকালো ” বউ থেকেও পানসে মুখে অফিসে যেতে হয়।”
মেঘলা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
” তাহলে কি কাল থেকে আপনার জন্য অফিসে যাওয়ার আগে মিষ্টি এনে রাখবো!..?”
শ্রাবণ হেঁসে বললো, ‘ বউ চাইলে শুধু অফিসে যাওয়ার আগে কেন! চব্বিশ ঘণ্টা মিষ্টি দিতে পারে।’
মেঘলাঃ কিন্তু আপনি তো মিষ্টি পছন্দ করেন না।
শ্রাবণ ফুশ করে একটা শ্বাস ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। বউ কে কি মিষ্টির কথা বললো আর বোকা বউ কি বুঝলো!!..?
আহনাফ রেগে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মহুয়া কাচুমাচু করছে। এই এক মাস খুব সুন্দর করে আহনাফ কে ইগ্নোর করেছে। আহনাফের এসিস্ট্যান্টের কাজ ছেড়ে টিউশনি করাচ্ছে। বাড়ির কারো মন মানুষিকতা ঠিক নেই সেই জন্য চলে যাওয়ার কথাও বলতে পারছে না।
আহনাফঃ এই এক মাসে আমি কতোবার খবর পাঠিয়ে ছিলাম..?
মহুয়াঃ একই বাসায়,একই ছাঁদের নিচে তাও কেন চিঠি লিখে খবর পাঠাতে হবে!.?
আহনাফঃ আমার ইচ্ছে। এখন বলো আমাকে ইগ্নোর কেন করছো..?
মহুয়াঃ আমি কাউকে ইগ্নোর করিনি।
আহনাফঃ তাহলে আমার এসিস্ট্যান্টের কাজ কেন ছেড়েছো..?
মহুয়াঃ আমার এসিস্ট্যান্টের কাজ ভালো লাগে না।
আহনাফঃ তাহলে আমার বাচ্চা সামলানোর জবটা নিতে পারো।
মহুয়াঃ আপনার বাচ্চা!..?
আহনাফঃ হুম, রাজি হলে…
মহুয়াঃ আপনার বউ, বাচ্চা আছে…?
আহনাফঃ বউ তো আছে তবে বাচ্চা এখনো ডাউনলোড হয়নি, বউ বাচ্চার জব নিতে চাইলে….
মহুয়া রেগে বলে উঠলো, ‘ অসভ্য লোক।’
আহনাফঃ অসভ্য আর সভ্য যাই বলো দুইটার থেকে একটা জব তো নিতেই হবে। হয় এসিস্ট্যান্ট হয়ে যাও না হয় আমার বাচ্চার জবটা নিয়ে নাওও। আমার আম্মুও নাতিনাতনির মুখ দেখুক।
মহুয়া লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিল। ছাঁদের দরজা লাগানো চাইলেও পালাতে পারবে না।
আহনাফঃ তুমি লজ্জা পাচ্ছ..? অথচ আমি লজ্জা পাওয়ার মতো এখনো কিছুই বলিনি।
মহুয়াঃ আমি মোটেও লজ্জা পাচ্ছি না, আমার আপনার দিকে তাকাতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
আহনাফঃ কেন আমি দেখতে কি একটু বেশিই আকর্ষণীয় যে তাকালেই, কাছে আসো কাছে আসো এমন ফিলিংস হবে!!…
মহুয়া কানে দুই হাত দিয়ে বলে উঠলো ” চুপ করেন, আপনি দেখতে খুবই বাজে, আমি ভেবে পরে যানাবো।”
আহনাফঃ মনে জেনো থাকে… বলেই পকেট থেকে একটা বেলীফুলের মালা বের করে মহুয়ার দিকে এগিয়ে আসলো।
আহনাফঃ এতো বড় চুল সামলাতে সমস্যা হয় না..?
মহুয়াঃ আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।
আহনাফ বেলীফুলের মালা এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো ” তোমার জন্য ”
_____________________
ছোঁয়া একটু পর পর নির্জনের রুমে উঁকি দিচ্ছে। মহুয়াকে নিয়ে আসতে চেয়ে ছিলো কিন্তু আহনাফের জন্য পারলো না।
নির্জনের সামনে যেতে সে ভয় পাচ্ছে!! কি আজব এক সময় সারাদিন ঝগড়া মারামারি লেগে থাকত আর আজ একটু কথা বলবে কেমন ভয় লাগছে।হঠাৎ চুপচাপ হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর সাথে কথা বলতে ভয় কাজ করে।
আজকাল ছোঁয়ার দিন কাটে ভার্সিটি আর ছোট মামির ঘরে। ছোট মামির কষ্ট গুলো কেমন নিজের মনে হয়।
ছোঁয়া নির্জনের রুমে প্রবেশ করার আগেই আজাদ চৌধুরীকে রেগে ফোনে কারো সাথে কথা বলতে দেখে থেমে যায়।
আজাদ চৌধুরীঃ তুমি থেমে যাওওও এর পরিণাম ভালো হবে না!! আমি খুব জলদি তোমার মুখোমুখি হব।
…………….
আজাদ চৌধুরীঃ তুমি আমাকে আগের রুপে ফিরে যেতে বাধ্য করছো…
…………..
আজাদ চৌধুরীঃ তোমার বউ বাচ্চার প্রতি তো মায়া কর।
…..
আজাদ চৌধুরীঃ তোমার এমন দিন আসবে রাস্তার কুকুর ও ফিরে তাকাবে না আফজাল।
আজাদ চৌধুরী রেগে মোবাইল দেয়ালে ছুড়ে ফেললেন।
ছোঁয়া ভয়ে চুপসে ঠাসস করে নির্জনের রুমে গিয়ে লুকিয়ে গেলো।
আজাদ চৌধুরী আশেপাশে তাকিয়ে মোবাইল তুলে নিয়ে রুমের দিকে চলে গেলেন।
ছোঁয়া বুকে থুথু দিয়ে লম্বা শ্বাস নিলো। বড় মামা ভীষণ রাগী নিশ্চয়ই অফিসের কারো সাথে ঝামেলা হয়েছে প্রচুর রেগে আছেন।
নির্জন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ছোঁয়া কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো। এই এক মাসে আজ প্রথম ছোঁয়া নির্জনের রুমে আসলো।
নির্জনঃ ছোঁয়া…
ছোঁয়া প্রথম ভয় পেয়ে গেলো নির্জন কে দেখে হেঁসে বললো, ‘ নির্জন তুমি…’
নির্জনঃ আমার রুমে তো আমিই থাকবো। কিছু প্রয়োজন..?
ছোঁয়াঃ হুম..
নির্জনঃ কি..? জলদি বলে বের হ।
ছোঁয়া চুপ করে আছে।
নির্জনঃ এভাবে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে না থেকে যা বলবি বল।া
ছোঁয়াঃ তুমি কি বিরক্ত হয়েছ আমাকে দেখে..?
নির্জন ছোঁয়ার দিকে না তাকিয়ে শার্টের বোতাম লাগিয়ে নিলো।
নির্জনঃ এতো অভিনয় না করে কি লাগবে বলে বের হ, আমি বাহিরে যাব।
ছোঁয়াঃ তোমাকে লাগবে….!
নির্জন ঘড়ি হাতে নিয়ে থমকে যায় কিছু সময়ের জন্য। এই একটা কথায় এমন কি ছিল!..?
চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়