মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-৩০+৩১

0
564

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৩০
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

শ্রাবণ বউ নিয়ে প্রথম গ্রামের বাড়িতে এসেছে সবাই বউকে ঘিরে বসেছে।
মেঘলা ক্লান্ত মুখে সবার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করছে।
একেক জন একেক রকমের প্রশ্ন করছে। বউয়ের বাড়ি কোথায়.? পড়াশোনা কতোটুকু করেছে.? বাবা কি করে..? বিয়ের কতো গুলো দিন হলো এখনো খুশির খবর শুনছে না কেন.?? একজন তো মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ” তোমাদের কারো সমস্যা থাকলে বলো এখানে ভালো কবিরাজ আছে আমি তাবিজ এনে দিব ” মেঘলা কি বলবে বুঝতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে সে কখনো পড়েনি। কারো কোনো উত্তর দিতে পারছে না।

” কি গো বউ কি বোবা নাকি..? একটু আগে তো দেখলাম কথা কইলো এখন চুপ কেন.?”

শ্রাবণ ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে উঠানে এতো ভিড় দেখে তাকিয়ে রইলো বুঝতে বাকি নেই মাঝ খানে ওর বউ।

বাড়িটা গোল আকৃতির, মাঝ খানে উঠান, সোজা করে জায়গা রেখে গেইট।
শ্রাবণ এগিয়ে যেতে সবাই সাইডে দাঁড়ালো । মেঘলার কাছে গিয়ে বললো” তোমাকে দেখতে ক্লান্ত লাগছে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নাও।”

~ আজ কোনো বিশ্রাম নেই শ্রাবণ বাবা, এই প্রথম বউ নিয়ে গ্রামে পা রেখেছো আর কবে না কবে আসো বউয়ের সাথে আমাদের অনেক কথা আছে।
শ্রাবণঃ কি কথা চাচি আমাকে জিজ্ঞেস করেন। মেঘলার শরীর ভালো না।
~ তোমারে কেন জিজ্ঞেস করবো.? আমরা বউকে জিজ্ঞেস করবো। শরীর ভালো না আমাদের সাথে থাকলে শরীর ভালো হইয়া যাইবো।
শ্রাবণ বিড়বিড় করে বলে উঠলো ” আপনাদের সাথে থাকলে আমার বউ আর আমি খুঁজে পাব না। বউকে আমি ডিভোর্স দেওয়ার আগে বউ আমাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবে।”

~ কিছু কইলা বাবা..?
শ্রাবণঃ না চাচি। আপনারা বসেন মেঘলা কাপড় চেঞ্জ করে নেক।

আশেপাশে তাকিয়ে ছোঁয়া আর মহুয়াকে দেখে ডাকলো। ওরা মাত্র রুম থেকে বের হয়েছে।
মহুয়া ঘোমটা ভালো করে দিয়ে চুল ডেকে রাখলো। ছোঁয়া ওড়না গলায় ঝুলিয়ে রেখেছে, চুল গুলো হাত খোঁপা করা।

ওরা আসতেই শ্রাবণ সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনারা ওদের সাথে গল্প করেন আমি মেঘলাকে নিয়ে যাচ্ছি। বলেই মেঘলার হাত ধরে নিয়ে গেল। মেঘলা লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলে উঠলো ” ধন্যবাদ ”

ছোঁয়া রেগে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে আছে। ওরা এখন রিয়ার সাথে হলুদের শাড়ি, সাজগোছ নিয়ে কথা বলতো আর ভাই এতো মহিলার মাঝে ফাঁসিয়ে দিলো!!..

মহিলারা মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ” ওমা এ দেহি পরী নাইমা আইছে গ্রামে।
মহুয়া লজ্জায় নুইয়ে গেল।

~ নিরুর মাইয়া বুঝি তুমি.?
ছোঁয়া জোর করে মুখে হাসি টেনে বললো,’ জ্বি আন্টি মহুয়া নিরুপমা আন্টির মেয়ে। ‘
মহুয়া অবাক হয়ে তাকাতেই ছোঁয়া চোখ মারলো। এখন যা জিজ্ঞেস করার মহুয়াকে করুক আমি কেটে পড়ি। যদি জানে আমি নিরুর মেয়ে কেউ ছাড়বে না।

~ তুমি কেডা.?
ছোঁয়াঃ আমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড।
এক মহিলা মহুয়ার থুতনিতে হাত রেখে বলে উঠলো ” মাশাল্লাহ নিরুর ঘরে চাঁদ নাইমা আইছে। ছোট বেলা যখন আইছলা তখন আরও কালা দেহা গেছে এখন ঠিক আফরোজা জেডির মতো দেহা যাইতাছে।

ছোঁয়া আস্তে করে মহিলাদের কাছ থেকে বেরিয়ে গেল আর ফেঁসে গেল মহুয়া।

_______

রাত আটটায় বাড়ির সবাই এক সাথে হলো। মেহমান সবাই আসেনি কাল আসবে।

আনোয়ার চৌধুরী এসেছে বাড়িতে বিয়ের মতো আয়োজন শুরু হয়েছে।
খাবার টেবিলে আনোয়ার চৌধুরীর ভাই আর পৃথিবীতে নেই উনার বউ এই বাড়ির সর্দার।

আশা বেগম আনোয়ার চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আফরোজা কেমন আছে.? শুনলাম শুয়া থেকে উঠতো পারে না।
আনোয়ার চৌধুরীঃ জ্বি ভাবি…
আশা বেগমঃ তোর ছেলের বউ কই.? দেখা করাইবি না?
আনোয়ার চৌধুরী মনে মনে একটু ভয় পেলেন। মেঘলার শ্রাবণের বিয়ে কিভাবে হয়েছে তারা কেউ জানে না। মেঘলা না আবার উল্টা পাল্টা কথা বলে বসে।

আনোয়ার চৌধুরী নির্জনকে ডেকে বললো মেঘলা আর শ্রাবণকে নিচে পাঠাতে।

নির্জন গিয়ে নিয়ে আসলো।

মেঘলা সালাম দিয়ে দাঁড়ালো।
আশা বেগম পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো৷
মেঘলা গোলাপি শাড়ি সাথে হাল্কা গয়না পড়ে আছে। আশার সময় শাশুড়ী নিজের গহনা গুলো ওর হাতে দিয়ে বলে ছিলো” এইগুলো পড়ে থাকবে, সুন্দর করে কথা বলবে, শাড়ি দিয়েছি ভালো লাগলে পড়, সাবধানে থেকো।” এই টুকুই মেঘলার জন্য অনেক ছিলো। আমেনা বেগম এইসব দিবে, এতো সহজ ভাবে কথা বলবে ভাবতেও পারেনি কেউ।

আশা বেগমঃ সব ঠিক আছে তবে গায়ের রং একটু চাপা।
নির্জনঃ আহ্ দাদি ভাই ফর্সা, ভাবিও ফর্সা হলে কেমন মূলা মূলা লাগবে না.? এটাই ওদের কিউট লাগে।
আশা বেগম নির্জনের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো ‘ জয় তুই আমার পাশে বস।’
নির্জন আশা বেগমের পাশে বসলো। আশা বেগম নির্জন কে একটু বেশিই ভালোবাসেন। ভালোবেসে জয় বলে ডাকে।
মেঘলার দিকে তাকিয়ে আশা বেগম বললো,’ তোমার বাপ কি করে..?? তোমার পড়াশোনা কি.? ‘
মেঘলা থমকে গেল। সে তো সত্যি কথা বলতে পারবে না আবার মিথ্যা ও বলতে পারবে না।

মেঘলাকে চুপ দেখে নির্জন কিছু বলার আগে শ্রাবণ মেঘলাকে এক হাতে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো,’ দাদি ওর পরিচয় আমি, এখন ও আমার পরিচয়ে বাঁচবে তাহলে আগের কথা জিজ্ঞেস করে লাভ কি.??? তুমি বরং ওকে সংসার সম্পর্কে বুঝিয়ে দাও।
আশা বেগমঃ তোর পরিচয়ের আগে ওর আরও একটা পরিচয় আছে।কিভাবে বিয়ে হলো,পরিচয় হলো জানতে হবে না। চুপচাপ বসে থাক। এখনি বউ পাগলা হয়ে গেছস। তোর দাদাও বউ পাগল ছিল, গ্রামের সবাই হাসতো।
শ্রাবণ আরও কিছু বলতে চেয়ে ছিল কিন্তু মুরব্বিদের মাজে বেশি কিছু বললে হেতে বিপরীত হবে।
নির্জন হেঁসে বলে উঠলো, ‘ দাদি আমার বন্ধুকে দেখলে না সাজ্জাদ ভাবি ওর বোন হয়। আমার বন্ধুর আবার ভাইকে একটু বেশি পছন্দ তাই বিয়ের প্রস্তাব দিল আর আমরাও রাজি। ভাবি পড়াশোনায় ভালো, পরিবার ভালো।

পেছন থেকে সাজ্জাদ বেআক্কেলের মতো তাকিয়ে রইলো। নির্জন কে খুজতে খুঁজতে এখানে এসে ছিলো এমন কথা শুনতে হবে ভাবতেও পারেনি।
শ্রাবণ মুচকি হেঁসে বললো, ‘ শান্তি হয়েছো.?’
আশা বেগমঃ হ ছেলেডারে দেখলাম ভালোই। পরিবারও শুনলাম ভালো।

আশা বেগম কিছু সময় চুপ থেকে বললো,’ শুনলাম নিরুর মাইয়া এসেছে সেই কবে দেখছি, শুনলাম একটা মাইয়াও আইছে খুব সুন্দর আর বুদ্ধিমতী।

নির্জন ছোঁয়া আর মহুয়াকেও নিয়ে আসলো।

আশা বেগম মহুয়াকে নিরুর মেয়ে ভাবে বলে উঠলো, ‘ তুমি তো দেখতে আফরোজার মতো হইছো।’

” এটা মহুয়া দাদি, আর ফুপিমণির মেয়ে হলো ছোঁয়া। ”
ছোঁয়া হেঁসে সালাম দিল, টুকটাক কথা বললো।
মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আশা বেগম বলে উঠলো, ‘ তুমি ছোঁয়ার বান্ধবী.? ‘
মহুয়াঃ জ্বি দাদি।
আশা বেগমঃ মাশাল্লাহ। আমাদের আফরোজাও যৌবন কালে তোমার মতো ছিল। তোমারে দেখে আফরোজার কথা মনে পইরা গেল।
মহুয়া বিনিময় মুচকি হাসি উপহার দিল।
আশা বেগম বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ কিছু সৌন্দর্য জীবনে অন্ধকার ডেকে আনে আবার কখনো অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যায়। সাবধানে থেকো মেয়ে তোমার জীবন না আবার আফরোজার মতো হয়।

____________

সাজ্জাদ রেগে একের পর এক সিগারেটে টান বসাচ্ছে। একটু আগেই গ্রামের দোকান থেকে কিনে এনেছে। জীবনে কখনো যা স্পর্শ করে দেখেনি আজ তাই খাচ্ছে।
নির্জনঃ তোর কি হয়েছে.? থামবি এবার.?
সাজ্জাদ কোনো উত্তর দিল না। এখন এতোটাই রাগ লাগছে সব কিছু ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে।

যাকে ভালোবাসা, যাকে নিয়ে ঘরবাঁধার স্বপ্ন দেখছে আজ সবার সামনে তার ভাই হয়ে গেল!!।

নির্জন সাজ্জাদকে নিজের মতো ছেড়ে দিল। শান্ত হলে নিজেই বলবে এমন কি হয়েছে। হঠাৎ করে কেন রেগে গেল।

ছোঁয়া হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে সাথে রিয়াও। মহুয়া মুখ ভার করে তাকিয়ে আছে।

বিকেলে মহিলা গুলো একের পর এক প্রশ্ন করতে শুরু করলো। একজন থামছে তো আরেকজন শুরু কেউ ক্লান্ত হচ্ছে না মহুয়া উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। কেউ নিজের ছেলের কথা বলছে কেউ বোনের, ভাইয়ের, আত্মীয়স্বজন কারো ছেলে বাকি রাখেনি বিয়ের জন্য, প্রসংশা করতে করতে মুখে ফেনা তুলে নিয়েছি। মহুয়ার মনে হলো সে পাত্রের বাজারের মাঝে বসে আছে আর বাজার ভর্তি পাত্র। সবাই বলছে পাত্র রেডি বেছে নাও, দেখে নাও………

চলবে..

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৩১
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

আজ গায়ে হলুদ। সকাল থেকেই বাড়ি সাজানোর কাজ চলছে। ছেলেদের জন্য হলুদ পাঞ্জাবি আর মেয়েদের হলুদ শাড়ির ব্যাবস্থা করা হয়েছে।

বাড়িতে মানুষে গিজগিজ, আত্মীয় স্বজন এসে বাড়ি ভর্তি হয়ে গেছে। এতো মানুষের ভিড়েও মহুয়ার কেমন শূন্যতা অনুভব হচ্ছে। সব থাকার পরেও কিছু একটা নেই, কি নেই??? চোখ বন্ধ করতেই আহনাফের মুখটা ভেসে উঠলো। ঝটপট চোখ খুলে নিলো মহুয়া। না এই লোকের শূন্যতা অনুভব হতেই পারে না। মহুয়া মোবাইল হাতে নিয়ে বসে রইলো বেহায়া মন বলছে একটা ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস কর, কেমন আছে??। আবার মস্তিষ্ক বলছে, কেন সে কি একটা বার কল দিয়ে তোর খবর নিতে পারে না..? মন আর মস্তিষ্কের খেলায় মস্তিষ্ক হেরে গেল সব কিছু দূরে ঠেলে আহনাফকে কল দিল একবার বাজতে বাজতে কেটে গেল। দ্বিতীয় বার দিতেই মোবাইল বন্ধ পেল।রাগে ইচ্ছে করলো নিজের চুল ছিড়ে ফেলতে। এই লোক নিজেকে ভাবেটা কি!.? যা আর ভাবব না আমি এই লোকের কথা।

ছোঁয়া রুমে আসলো হাতে হলুদ শাড়ি সাথে লাল টকটকে ছয়টা গোলাপ।

মহুয়া ছোঁয়াকে দেখে চুল হাত খোঁপা করে উঠে দাঁড়ালো।
ছোঁয়াঃ মহু ফ্রেশ হয়ে আয়। রিয়া আপু সাথে উনার সব কাজিনদের পার্লার থেকে মেয়েরা সাজাচ্ছে আমরা রুমেই সাজব।

মহুয়া ফ্রেশ হয়ে আসতেই ছোঁয়া মহুয়ার হাতে ব্লাউজ ধরিয়ে দিল।

মেঘলা শাড়ি হাতে নিয়ে বসে আছে। শ্রাবণের নিষেধ শাড়ি পড়া যাবে না। গ্রামের বিয়েতে অনেক বখাটে ছেলে আসে।
মেঘলা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি আপনার কথা মতো কেন চলব!.? আমি এখানে এসেছি আনন্দ করবো তাও আপনার সহ্য হয় না!.? আমাকে নিয়ে আপনার এতো বেশি ভাবতে হবে না।
শ্রাবণ হাতে ঘড়ি পড়ছিলো। ঘড়ি পড়ে চুল গুলো ঠিক করে মেঘলার সামনে এসে দাঁড়ালো মেঘলা চোখ নামিয়ে নিল। এই লোকের সামনে হাজার চেষ্টা করলেও রাগ দেখাতে পারে না মেঘলা। যেই মেয়েকে সবাই ভয় পায় সিআইডি মেঘ বলতেই ভয়ে জমে যায় সেই মেয়ে কিনা আজ সাধারণ একটা ছেলেকে ভয় পায়।

” আমার দিকে তাকিয়ে বলো কি যেন বলছিলে..?”
~ কিছু না।
~ গুড, শাড়িটা আমার হাতে দাও।
মেঘলা না চাইতেও শাড়িটা দিয়ে দিলো। শ্রাবণ শাড়ি নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।

মহুয়াকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিল ছোঁয়া। বাঙালি সাজে ভীষণ সুন্দর লাগছে মহুয়াকে। ছোঁয়া মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বললো ” আজ ভাইয়ের জায়গায় আমি থাকলেও তোমার প্রেমে পড়তাম। আহনাফ ভাই একবার দেখলেই আজ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী বউ হিসেবে ঘোষণা দিতো। ভাইয়ার মতোই ভাইয়ার পছন্দ।
মহুয়াঃ তোমার ভাই আমার প্রেমে পড়েনি ছোঁয়া আমি জানিনা কেন বিয়ে করেছে। তবে এতোটুকু জানি ভালোবেসে বিয়ে করেনি।

ছোঁয়া হাসলো, সে জানে আহনাফ কেন বিয়ে করেছে!

মহুয়া ছোঁয়াকে রেডি করালো। ছোঁয়া কেউ দেখতে ভীষণ মিষ্টি লাগছে।
মহুয়া ছোঁয়ার কানের পেছনে কালো কাজল দিয়ে বলে উঠলো ” আমার আপুটার দিকে কারো নজর না লাগুক।”
ছোঁয়াঃ উঁহু, আপু নয় ননদী।

ছোঁয়া হেঁসে ফেললো।রিয়াকে খুব সুন্দর করে বাড়ির উঠানে বসানো হলো। হলুদ শাড়ির সাথে লাল ফুলের গহনা ভীষণ সুন্দর লাগছে রিয়াকে দেখতে। বাড়ির মহিলারা হলুদ মেহেদী হলুদ এর বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস আশেপাশে রাখলো বাড়ির মানুষরা সবাই রিয়াকে গিড়ে ধরল। রিয়ার মুখে ফুটে আছে লজ্জা মাখা হাসি। ছেলে পক্ষ থেকে বউয়ের জন্য গায়ে হলুদের শাড়ি মেহেদি নিয়ে এসেছে ছেলের ভাইয়ার তার দুই বন্ধু।

মেঘলা রুমে বসে আছে। এখন তার বাহিরে যেতে একদম ইচ্ছে করছে না কত শখ করেছিল এখানে এসে সাজবে সবার সাথে আনন্দ করবে কিন্তু শ্রাবণ হতেই দিল না। শাড়ি পরলে লোকটার সমস্যা কি..?
মন খারাপ করে মোবাইল হাতে নিয়ে ফাহিম কে কল দিল খুব জলদি কাজে ফিরতে হবে।

সাজ্জাদ আর নির্জন হলুদ পাঞ্জাবি পরে হাতা গোটাতে গোটাতে বাহিরে আসলো সব মেয়েরাও ওদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ওদের দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম আর সুন্দর লাগছে।
সাজ্জাদ বাইরে এসে একবার চারপাশে মেঘলা কে খুজলো মেঘলাকে না পেয়ে দরজার দিকে যাচ্ছিল তখনই কেউ শাড়িতে পেঁচ খেয়ে সাজ্জাদের উপর পরে। একটা মিষ্টি কন্ঠের মেয়ে বলে ওঠে, ও মাগো আমার কোমর শেষ। কন্ঠটা চিনতে সাজাতের একদম দেরি হয় না সে জটপট ধাক্কা দিয়ে মেয়েটাকে দূরে সরিয়ে লাফ দিয়ে দাড়িয়ে পড়ে আর বলে ওঠে ” তুমি!!.?”

সামিয়া সাজ্জাদকে দেখে বেশ অবাক হয় ইনোসেন্ট মুখ করে বলে ওঠে, আমি তো এমনিই শাড়িতে পেচ লেগে পড়ে গেছি তার উপর আবার তুমি ধাক্কা মেরে আমার কোমরটা একদম শেষ করে দিলা!.? মা গো আমার এবার বিয়ে হবে না গো। এখন আমাকে কেউ বিয়ে করবে না গো। বিয়ে বাড়িতে এসে, বিয়ে খেতে এসে নিজের বিয়ের বারোটা বাজিয়ে দিলাম।

সাজ্জাদের কাছে সামিয়াকে ভীষণ ন্যাকা আর ছেছড়া মনে হল। সাজ্জাদ খুব ভালো করেই বুঝতে পারছিল সাইমা ইচ্ছে করে ওর উপরে পড়েছে আর এখন যা করছে সবই ন্যাকা নাটক।
সাজ্জাদের কথা বাড়াতে ইচ্ছে হলো না।সাজ্জাদ বিরক্তিকর দৃষ্টিতে সামিয়ার দিকে তাকালো। মেয়েটা এখনো ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে মনে হয় দেশের সব আটা ময়দা মেখে চলে এসেছে দেখতে জঘন্য লাগছে।
সাজ্জাদ মোবাইল পকেট থেকে বের করে এমন একটা ভাব করলো যেন ওর খুব ইম্পরট্যান্ট কল এসেছে। মোবাইল কানে দিয়ে এখনই আসছি বলে চলে গেল।

সামিয়া রেগে হাতের ফুলটার দিকে তাকিয়ে রইলো। সব প্লেন শেষ হয়ে গেল থুর।

মহুয়া ছোঁয়া বাহিরে আসতে সবার নজর গেল বউ ছেড়ে মহুয়ার দিকে মনে হচ্ছে যেন এক হলুদ পরী নেমে এসেছে। মহুয়া বেশ লজ্জা পাচ্ছিল লজ্জায় মুখ নিচের দিকে করে রেখেছে। সবাই বেশ প্রশংসা করল মহুয়ার ছোঁয়ার। কি উদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বর পক্ষের ছেলের ভাই মহুয়ার দিকে।

মহুয়ার অনেক ছবি তুলল ছোঁয়া। ছবি তুলে আহনাফের কাছে পাঠিয়ে দিল ছোঁয়া । নিজের ভালোবাসা তো পূর্ণতা পায়নি সে চায় আহনাফের ভালোবাসা পূর্ণতা পাক।।
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান খুব সুন্দর ভাবে শেষ হলো কিন্তু মেঘলা রুম থেকে একবারও বের হলো না।

বিকেলে খুব সুন্দর ভাবে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হলো তারপর সন্ধ্যার দিকে মেহেদী অনুষ্ঠান শুরু হল। মেহেদী অনুষ্ঠান হচ্ছে ছাঁদে।
মহুয়া গিয়ে বুঝিয়ে শুনিয়ে মেঘলা কে নিয়ে আসলো ছাদে। খুব সুন্দর করে মেঘলার হাতে দিয়ে দিল।
রিয়াকে ছোঁয়া মেয়েদি দিয়ে দিল অনেক সুন্দর করে মেহেদী দিতে পারে ছোঁয়া। তারপর রিয়ার হবু জামাই কাছে ভিডিও কল দিয়ে তা দেখালো। রিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। ছোঁয়া রিয়ার হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে এখান থেকে কেটে পড়লো প্রেমের বিয়ে তাও এত লজ্জা!। অবশ্য বাড়ি কেউ জানে না রিয়া শান্ত ভাইয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

ছোঁয়া মেঘলার হাতের অনেক পপ্রসংশা করলো।
মেঘলা বিনিময় মুচকি হাসলো।
ছোঁয়া বলে উঠলো,’ মহু সুন্দরী আমার হাতে আপনার জাদুর মেহেদী দিয়ে রাঙিয়ে দিবেন পিলিজ.?
ছোঁয়ার বলার স্টাইল দেখে মেঘলা মহুয়া হেঁসে উঠলো।
মহুয়াঃ তুমি আমার থেকে ভালো মেহেদী ডিজাইন পারো।
ছোঁয়া হাত বাড়িয়ে দিলো মহুয়া মেহেদী হাতে নিয়ে ছোঁয়ার হাতে দিয়ে ছিলো। হাত ব্যাথা করছে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সামিয়া সাজ্জাদ কে জোর করছে হাতে মেহেদী দিয়ে দিবে হাত দেওয়ার জন্য জোর করছে। বেচারা রাগে মুখ লাল করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে আবার কখনো আঁড়চোখে মেঘলার দিকে তাকাচ্ছে।
দরজা দিয়ে শ্রাবণ, নির্জন প্রবেশ করতেই সবাই ওর দিকে তাকালো। শ্রাবনের পেছনে আহনাফ কে দেখে সবাই অবাক হলো।
মহুয়া আহনাফের দিকে তাকিয়ে রইলো আহনাফ তাকাতেই মহুয়া চোখ নামিয়ে নিলো।

আহনাফ গিয়ে রিয়ার সাথে কথা বললো। রিয়া আহনাফকে দেখে ভীষণ খুশি হলো।

সবার সাথে কথা বলে মহুয়ার সামনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ রুমে আসো।’

ছোঁয়া বাদে সবাই কেমন দৃষ্টিতে তাকালো। মেঘলা আহনাফ আর মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
মহুয়াকে উঠতে না দেখে আহনাফ রেগে বলে উঠলো, ‘ তুমি কি চাও সবার সামনে কোলে তুলে নেই। ‘
ভয়ে মহুয়া সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলো। এই লোকের বিশ্বাস নেই।

মহুয়া চুপচাপ ছাঁদ থেকে নেমে গেল।
নির্জন ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো হাতে অর্ধেক মেহেদী দিয়ে বসে আছে। ছোঁয়ার পাশে গিয়ে বসে হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বললো,’ মেহেদী দে..’
ছোঁয়াঃ মেহেদী দিয়ে কি করবি.? আর আমার হাত কেন দরছিস.?
নির্জন বিরক্তি মুখে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তোর হাতটা চুরি করে নিয়ে যাব এবার দে।’
ছোঁয়া কথা না বাড়িয়ে মেহেদী নির্জনের হাতে দিল।
নির্জন খুব মন দিয়ে ছোঁয়ার হাতে মেহেদী পড়াতে শুরু করলো।
মেঘলা ছোঁয়া আর নির্জনের দিকে তাকিয়ে রইলো। সে অবাক হচ্ছে ছোয়ার হাতে নির্জন মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে এখন ওর ও উদ্ভুত একটা ইচ্ছে হলো ” শ্রাবণ যদি ওর পায়ে আলতা পড়িয়ে দিত।! ” এটা কখনো সত্যি হবে না তবে কল্পনা করতে তো দোষ নেই। বাস্তবে না হোক কল্পনায় সে শ্রাবণের হাতে পায়ে আলতা পড়ে নিল।

মহুয়া রাগে কটমট করছে তবে ভেতরে ভেতরে বাহিরে একদম শীতল। সেই কখন রুমে এনে বসিয়ে রেখেছে কিন্তু কিছুই বলছে না। লোকটার সমস্যা কি.??

আহনাফ মোবাইলে কথা শেষ করে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ পাঁচ মিনিটে শাড়ি চেঞ্জ করে সেলোয়ার-কামিজ পড়ে আসেন।’
মহুয়াঃ আপনি এই রুম থেকে বের হোন। এখানে আপনাকে আমাকে এক রুমে দেখলে মানুষ খারাপ ভাববে। আপনার ছোট আম্মু, ফুপিমণি লজ্জিত হবে।

আহনাফ ঘা ছাড়া একটা ভাব নিয়ে বললো,’ আমি নিজের বউয়ের রুমে আছি। কে কি ভাবলো তাতে আমার যায় আশে না। যা বলেছি জলদি করেন।’
মহুয়াঃ শাড়িতে সমস্যা কি.??
আহনাফ রেগে মহুয়ার বাহু চেপে ধরে বলে উঠলো, ‘ গ্রামে আসতে নিষেধ করে ছিলাম। দুই দিন হলো না এখানে এসেছেন এখনি এতো বিয়ের প্রস্তাব আসছে!! কি ভাগ্য আমার বউয়ের নামে বিয়ের প্রস্তাব আসে আমার কাছে।
মহুয়া অবাক হলো ভয় পেয়েও গেল।আহনাফের চোখ লাল মুখ ভয়ংকর হয়ে আছে।
আহনাফ আবার বলে উঠলো, ‘ শাড়ি পড়ে কাকে দেখাচ্ছেন..? শাড়ি কার জন্য পড়েছেন.??’
মহুয়া ভয়ে চুপসে গেল,’ স..সবাই পপড়েছে তাই…’
আহনাফঃ সেই জন্য আপনিও পড়তে হবে!.? নাকি আরও মহিলাদের মাথা নষ্ট করার জন্য এমন সাজ দেখাচ্ছেন.?
মহুয়া ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। যেখানে বউ, গার্লফ্রেন্ড সাজগুজ করলে জামাই,বয়ফ্রেন্ড জেলাস হয় ছেলেরা তাকাবে, বলে ছেলেদের মাথা নষ্ট করার জন্য সাজছো!.? সেখানে ওকে শুনতে হচ্ছে মহিলাদের মাথা নষ্ট করার জন্য সাজছে.? এই লোকের মাথা সত্যি সমস্যা আছে।

আহনাফঃ যাও কাপড় চেঞ্জ কর। আর কাল বিকেলেই আমরা বাড়ি যাচ্ছি।
মহুয়া কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে গেল। বাড়ি গিয়েই ও নিজের মামা মামির কাছে চলে যাবে তারপর মামা মামি যা ইচ্ছে করুক তাও সে চলে যাবে।

___________

রাত গভীর সবাই ঘুমে মগ্ন। গ্রামের দিকে দশটার পর আর কেউ জেগে থাকে না। রাত এখন দুইটা বাজে।

নির্জন, সাজ্জাদ,আহনাফ এক রুমে। এখনো কেউ ঘুমায়নি।

আহনাফ বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ থুর বিয়ের পরও ব্যাচেলার ঘুৃম।’
নির্জন আহনাফের পাশেই ছিল,’ কি ভাই বিয়ে করলা কবে.?’
আহনাফ মোবাইল হাত থেকে রেখে বলে উঠলো, ‘ তোদের ভাবির সাথে দেখা করে আসি। ‘
নির্জন আর সাজ্জাদ এক সাথে বলে উঠলো, ‘ ভাবি!!”

আহনাফ দরজার সামনে এসে কড়া নারলো কয়েক বার। ছোঁয়া চোখ ডলতে ডলতে এসে দরজা খুলে দিলো। এতো রাতে আহনাফ কে দেখে ঘুম উড়ে গেল।

আহনাফ ছোঁয়াকে মহুয়ার কথা জিজ্ঞেস করলো।
~ মহুয়া ঘুমায়।

ছোঁয়া আর কিছু বলার আগেই ঘুম জড়ানো কন্ঠে মহুয়া বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া কে এসেছে.? ‘

আহনাফ রুমে ঢুকে মহুয়াকে রুম থেকে বের হতে বললো।
মহুয়া আহনাফ কে দেখে লাফ দিয়ে উঠে বসলো।
আহনাফঃ জলদি বের হও।
মহুয়াঃ কেন..? কোথায় যাব..?
আহনাফঃ কফি বানাতে….
মহুয়াঃ কিহ্..!!? এতো রাতে কফির জন্য এভাবে ঘুম থেকে তুলেছেন আমাদের.?
আহনাফঃ হুম…
মহুয়াঃ আপনার মাথায় সমস্যা আছে।
আহনাফঃ হুম জানি,তুমি কি বের হবে নাকি কোলে তুলে নিব?

চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে