#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
ছোঁয়া সব শপিং মেঘলার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,’ সবার গুলো তুমি নিজ হাতে সবাইকে দিবে৷ বাড়ির বড় বউ বলে কথা। ‘
মেঘলা লাজুক হাসলো পরক্ষনেই একটু আগের সামিয়ার হাত শ্রাবণের হাতে ছিলো মনে হতেই চোখ মুখ শক্ত করে শ্রাবণের দিকে তাকালো।
________
সবার সব কিছু মেঘলা সবাইকে দিতেই সবাই অনেক অনেক খুশি হলো।
আমেনা বেগম শাশুড়ীর কাছে থাকবে সাথে দেবর, স্বামী যাবে না তাদের জন্য কাউকে থাকতে হবে। সেই জন্য আমেনা বেগম যাবে না।
মেঘলা আমেনা বেগমের দিকে ব্যাগ এগিয়ে দিতেই উনি সাফ সাফ নিষেধ করে দিলেন। উনার প্রয়োজন নেই।
মেঘলা হাসলো। হেঁসে শাশুড়ী সামনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ আর মাত্র এক মাস, এই এক মাস কষ্ট করে আমাকে আর আমার জিনিস গুলোকে সহ্য করে নেন। এইগুলো কোনো অন্যায় পথে আনা টাকার নয় আমার নিজের ইনকামের টাকায়।ভালোবেসে এনেছি। ভালোবাসার জিনিস ফিরিয়ে দিতে নেই।
আমেনা বেগম মেঘলার হাত থেকে ব্যাগটা নিলেন।
মেঘলার চোখে পানি টলমল করছে ।
আমেনা বেগমের হঠাৎ এক উদ্ভুত ইচ্ছে হলো৷ ইচ্ছে করলো মহুয়ার মাথায় হাত রাখতে কিন্তু তিনি তা করলেন না।
_________
সময় থেমে থাকে না। দিন গিয়ে রাত নেমেছে সবাই খাওয়া দাওয়া করে নিজেদের রুমে চলে গেছে।
ছোঁয়া হেলতে দুলতে ছাঁদে গিয়ে ভেতর দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
আজ আকাশে চাঁদ নেই৷ বাহিরে বাতাস নেই, অন্ধকার রাত, নিশ্চুপ চারপাশ ছোঁয়ার চুল ছাড়া।
ছোঁয়া মোবাইলের ফ্লাশ লাইট জ্বালিয়ে রেলিং ঘেঁষে বসলো৷ লাইট বন্ধ করে চোখ বন্ধ করে নিলো৷ দুই চোখে হাজারো স্মৃতি ধরা দিচ্ছে। বুকের ভেতর তুলফাল শুরু হচ্ছে, শূন্যতা চারপাশ ঘিরে ধরেছে। ছোঁয়া ডুকরে কেঁদে উঠলো। আসতে আসতে কান্না বাড়তে লাগলো।
আহনাফ কে সে কখনো ভাইয়ের নজর দেখেনি চেষ্টা করেছি তাও ওর মন কখনো আহনাফ কে ভাই মানতে চায় না। এতো এতো ছেলে থাকতে এই মন কেন পাষাণ পুরুষটির দিকেই গেল!! আজ দুইদিন কেউ জানে কিভাবে ছোঁয়ার রাত, দিন যাচ্ছে!!?
যতোবার মহুয়ার দিকে তাকাচ্ছে হৃদয় পুড়ছে, হিংসে হচ্ছে। আজ তো ওর জায়গায় ছোঁয়া থাকতো! নিজের মনকে বুঝাতে ব্যার্থ এখানে তো মহুয়ার দোষ নেই। মন বলে তাহলে কেন এই মহুয়া আমাদের মাঝ খানে আসলো!.? কেন আপনাকে নিয়ে গেল!.? আমি নিজেকে সামলাতে আর পারছি না আপনি এতো পাষাণ কেন!.? এতো কাছে থেকেও ভালোবাসা বুঝতে পারলেন না.? অনুভব করতে পারলেন না.? আমি তো শুধু রেজাল্টের অপেক্ষায় ছিলাম তারপর আমি নিজেই আপনাকে বুঝিয়ে দিতাম কিন্তু তার আগেই আপনি আমার থেকে দূরে সরে গেলেন!! ছোঁয়া হেঁচকি তুলে কাঁদতে শুরু করলো। এই কান্না যে কেউ দেখে না! ছোঁয়ার কষ্ট যে কেউ বুঝতে পারে না। কেউ বুঝতেও পারবে না, ছোঁয়া যে ছোট থেকে পাক্কা অভিনেত্রী। না হয় এতো ভালোবাসা কিভাবে গোপন রাখলো!?
_____
শ্রাবণ পাঞ্জাবি, শাড়ি আলমারিতে তুলে রাখলো।
মেঘলা একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে নিজের কাজ শুরু করলো। একটু পর পর কল আসছে সেই জন্য ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
ফাহিম কল দিলো।
মেঘলা সব সময় স্বাভাবিক ভাবে প্রয়োজনীয় কথা বলে ফোন রেখে দেয়। আজ ফাহিম ভয়ে ভয়ে বললো,’ মেডাম একটা কথা বলি..?
মেঘলাঃ হুম বলো..
ফাহিমঃ ম্যাডাম আপনি তো মেয়ে একটু বলবেন কি করলে মেয়েরা খুশি হয়..? কিভাবে মেয়েদের সারপ্রাইজ দিলে ওরা ইমপ্রেস হবে.? বলতে পাড়েন আমি জানতে চাচ্ছি কি করলে একটা মেয়ে একটা ছেলের প্রেমে পড়ে.!?
মেঘলা হাসলো। নিশ্চয়ই এই আবুল ছেলে কোনো মেয়ের প্রেমে পড়েছে।
মেঘলা প্রথম জিজ্ঞেস করলো, ‘ কি ব্যাপার ফাহিম তুই কি কারো প্রেমে পড়েছিস!!.??
ফাহিম ভয় পেলেও সাজ্জাদের মুখের দিকে তাকিয়ে ভয় গিলে বলে উঠলো, ‘ জ…জ্বি ম্যাডাম।’
মেঘলা খুব সুন্দর করে ফাহিম কে বুঝিয়ে দিলো কি করলে, কিভাবে করলে মেয়েরা সহজে পটে যাবে।
ফোন রেখে ফাহিম রেগে সাজ্জাদের দিকে তাকালো সাজ্জাদ ফাহিমের গাল টেনে বলে উঠলো, ‘ আমাদের বিয়েতে সবচে প্রথম দাওয়াত দিব তোমাকে,ফ্রী তে খাবারও দিব, সাথে আমার ছোট শালিটাকেও দিব।’
ছোট শালির কথা শুনতেই ফাহিম লজ্জা পেল।
শ্রাবণ বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে কম ব্যালকনির দিকে কান পেতে আছে। মেঘলা এতো কার সাথে কথা বলে!.?? ওর বয়ফ্রেন্ড আছে.??
মেঘলা কথা শেষ করে রুমে এসে পানি খেয়ে দরজা খুলে বের হতে নিলে শ্রাবণ পেছন থেকে থামতে বললো।
মেঘলা থামলো না নিজের মতো রুম থেকে বের হয়ে গেল।
শ্রাবণ অবাক হলো এই প্রথম মেঘলা ওর কথা শুনেনি,ওর ডাকে সারা দেয়নি। ওকে ইগ্নোর করছে।
মেঘলা প্রায় আধা ঘণ্টা পর রুমে আসলো।
শ্রাবণ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে মেঘলার কাছে কফি চাইলো।
মেঘলা শুনেও না শোনার মতো বালিশ ঠিক করে ওয়াশরুমে গেলো, ফ্রেশ হয়ে এসে চুল আঁচড়ে রুম থেকে বের হতে নিলে শ্রাবণ মেঘলার হাত ধরে নিজের সামনে দাঁড় করায়।
মেঘলা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
শ্রাবণঃ কি হয়েছে.?? ইগ্নোর কেন করছো.??
মেঘলা কিছু না বলে হাত ছাড়িয়ে নিতে চায় শ্রাবণ কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় জমে যায় মেঘলা, বুকের ভেতর ধুকপুক বাড়ে, শরীরও কি কাঁপছে!.? এই প্রথম শ্রাবণ এভাবে স্পর্শ করেছে।
মেঘলা ছুটতে চাইলে শ্রাবণ আরও নিজের সাথে চেপে নিচ্ছে।
মেঘলা শান্ত হয়ে গেল, ছুটাছুটি করার চেষ্টা বন্ধ করে শ্রাবণের দিকে তাকালো।
শ্রাবণ মেঘলা দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
মেঘলাঃ ছা…ছাড়ুন আমাকে।
শ্রাবণঃ কি হয়েছে.? আমাকে ইগ্নোর কেন করছো.?
মেঘলাঃ আমি পাত্তা দিয়ে ছিলাম কবে যে আপনাকে ইগ্নোর করছি!.?
শ্রাবণঃ তাহলে এখন আমার তোমার থেকে পাত্তা পেতে হবে..??
মেঘলাঃ ছাড়তে বলছি!
শ্রাবণঃ ধরতেও তো বলনি কিন্তু আমি ধরে রেখেছি৷ এখন চুপচাপ লক্ষি বউয়ের মতো নিচে গিয়ে কফি বানিয়ে নিয়ে আসবে।
মেঘলা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো, ‘ কফি চাই.? তাহলে নিজের গার্লফ্রেন্ড কে ডাকুন আমি কারো কাজের লোক নই, আর না কারো……
শ্রাবণঃ থেমে গেলে কেন বলো.? ভালোই লাগছিল শুনতে..।
মেঘলাঃ আপনি আমাকে ছাড়বেন নাকি আমি চিৎকার দিব!.?
শ্রাবণঃ ভয় দেখাচ্ছ.? আমি আমার বিয়ে করা বউকে ধরে রেখেছি, দাও চিৎকার দাও…আর আমার গার্লফ্রেন্ড আসলো কোথায় থেকে.?
সাথে সাথেই শ্রাবণের মোবাইল বেজে উঠলো।
শ্রাবণ আঁড়চোখে একবার মেঘলার দিকে তাকালো।
মেঘলা রাগী দৃষ্টিতে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।
মেবাইলের স্কিনে খুব সুন্দর করে ” সামিয়া” লেখা।
শ্রাবণ মেঘলা রিয়াকশন দেখে মনে মনে হাসলো৷
মেঘলার কোমর জড়িয়ে ধরে রেখেই কল রিসিভ করে কানে দিল।
~ হ্যাঁ সামিয়া বলো…?
………
~ কি বলছো সত্যি.?
………..
~ ঠিক আছে সময়মতো চলে আসবে।
…………
~ কি পড়ে আসবে তাও বলে দিতে হবে.??
…………..
~ শাড়ি সাথে চুলগুলো ছেড়ে কানে ফুল হাতে গোলাপ।
মেঘলা রাগে বিড়বিড় করে বলে উঠলো ” আল্লাহ এই মুহূর্তে আমার কান দুইটা বন্ধ করে দাও আমি এইসব আর নিতে পারছি না। আমি শাড়ি পড়ি একবার ফিরেও তাকায় না আর গার্লফ্রেন্ড কে কি সুন্দর শিখিয়ে দিচ্ছে হারামি একটা ”
শ্রাবণ কান থেকে ফোন সরিয়ে বলে উঠলো, ‘ কিছু বললে.??’
মেঘলাঃ কই না তো।
~ হ্যাঁ সামিয়া বাকিটা একটু পর আমি কল দিয়ে বুঝিয়ে দিব।
………
কল রেখে মেঘলার দিকে তাকাতেই টলমল চোখ জোরার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তোমার চোখে পানি!!’
মেঘলা এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ চোখে কি যেন পড়েছে.’
শ্রাবণঃ দেখি আমার দিকে তাকাও।
মেঘলাঃ না, প্লিজ এবার তো ছাড়েন।
শ্রাবণঃ এদিকে তাকাতে বলেছি।
মেঘলা শ্রাবণকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
শ্রাবণ মেঘলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসে। ঠিক এতোটা আমারও জ্বলে যখন তোমার আশেপাশে সাজ্জাদ থাকে।
_______
মহুয়া সেই কখন থেকে ছোঁয়া কে খুঁজছে কিন্তু কোথাও ছোঁয়া নেই।
ছোঁয়াকে খুঁজতে নিরুপমার রুমে যাওয়ার আগেই একটা হাত টান দিয়ে ওকে রুমে নিয়ে গেলো।
মহুয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই দরজা বন্ধ করে মহুয়াকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
মহুয়া ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। পারফিউমের ঘ্রাণ নাকে আসতেই বুঝতে পারলো এটা আহনাফ।
মহুয়া ধীরে ধীরে চোখ খুলে আহনাফের দিকে তাকালো। কিন্তু রুম একদম অন্ধকার। মহুয়া অন্ধকার ভীষণ ভয় পায়। ভয়ে আহনাফের শার্ট খামচে ধরলো।
আহনাফ রেগে বলে উঠলো, ‘ সকালে আমার কথার উপর কথা বলার সাহস কে দিয়েছে তোমাকে!.?? বার বার বলেছি আমার কথার উপর কথা বলবে না।
মহুয়াঃ আমি চাই না বিষয়টা কেউ জানুক।
আহনাফঃ কতোদিন.?
মহুয়াঃ সারাজীবন।
আহনাফঃ বিয়ে বাড়ি থেকে সবাই আশার পরেই সবটা জানিয়ে দিব।
মহুয়াঃ বিয়ে বাড়ি থেকে এসেই আমি চলে যাব আর আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিব।
আহনাফ রেগে দেওয়ালে একটা ঘুষি মেরে বলে উঠলো, ‘ একবার বলেছো দ্বিতীয় বার এই চিন্তা করলেও হাত পা ভেঙে ঘরে সাজিয়ে রাখবো।
মহুয়াঃ আপনি আমার সাথে এমনটা করতে পারেন না। জোর করে বিয়ে করেছেন। এখন জোর করে রাখতে পারবেন না।
আহনাফঃ আমি চাইলে সব পাড়ি।
মহুয়াঃ আমি সবার চোখে খারাপ হতে চাই না। উনারা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে আমি তাদের বিশ্বাস ভেঙে তাদের বাড়ির ছেলের বউ হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারি না। আমি তাদের কষ্ট দিতে চাই না। আর আমার আপনাকে পছন্দ না, আপনারও আমাকে পছন্দ না
আহনাফঃ বউ হওয়ার স্বপ্ন দেখতে কে বলেছে তুমি বাস্তবে বউ।
মহুয়াঃ আপনাকে এখন আমার সহ্য হচ্ছে না, আমার সামনে থেকে দূরে যান। আপনাকে দেখলেই আমার খু’ন করতে ইচ্ছে হয়৷ সব পুরুষ এক।
আহনাফঃ সেই জন্যই তো অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছি জেনো আমাকে দেখতে না পাও। খু’ন করতে করতে এখন আমার মতো নিষ্পাপ, ভদ্র, ইনোসেন্ট ছেলেকেও ছাড় দিচ্ছ না! এটা ঠিক না মেহু আমি তোমার বর। আমাকে খু’ন করলে তুমি বাসর রাতের আগেই বিধবা হয়ে যাবে। আমাদের ছেলে মেয়েদের কি জবাব দিবে!.?
মহুয়া আহনাফের কথা শুনে ভয় পেয়ে গেলো। খু’ন করতে করতে মানে.?? আহনাফ কি সব জেনে গেছে.?
আহনাফ আবার বলে উঠলো, ‘ আচ্ছা আমাকে কিভাবে খু’ন করতে চাও বলো.? আমি হেল্প করছি।
মহুয়া নিজের অজান্তেই বলে উঠলো, ‘ বুকের বা পাশে ছু’রি……
আর কিছু বলার আগেই আহনাফ বলে উঠলো, ‘ এ্যাঁই একদম না মেহু এখানে সব সময় তুমি থাক। এখানে আঘাত করলে আমি না তুমি ব্যাথা পাবে।
মহুয়া থমকে যায়, নিঃস্বাস বুঝি বন্ধ হয়ে আসবে!.? ছোট একটা কথা কিন্তু এটার গভীরতা কতোটুকু জানা নেই।
মহুয়াঃ আমি আপনাকে ঘৃণা করি।
আহনাফঃ প্লিজ ঘৃণা করো তবে ভালোবেস না। ভালোবাসলে আমাকে শেষ করতে পারবে আর ঘৃণা করলে নিজেই শেষ হয়ে যাবে।
মহুয়াঃ আমি শেষ হবো.?
আহনাফঃ হ্যাঁ.
মহুয়াঃ কিভাবে.?
আহনাফঃ সময় বলে দিবে।
মহুয়াঃ লাইট জ্বালান আমার অন্ধকার ভয় করে।
আহনাফঃ যার জীবন অন্ধকার সে অন্ধকার ভয় পায়!? অবাক হলাম।
মহুয়া অবাক দৃষ্টিতে অন্ধকারে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো।
আহনাফঃ এভাবে তাকাবে না। তোমার এই বড় বড় চোখের চাহনি এই অন্ধকার রুমে ডাইনীর মতো লাগছে।
মহুয়াঃ এই অন্ধকারে আমার চোখ কিভাবে দেখছেন.??
আহনাফঃ এতো প্রশ্ন কেন করো.? চুল ছেড়ে রাতে বাড়িতে হাঁটবে না হঠাৎ দেখতে ডাইনীদের মতো লাগে ।
মহুয়াঃ আমি জানি আপনার আমার মতো লম্বা চুল, বড় বড় চোখ মেয়েদের পছন্দ না তাই বলে বার বার ডাইনী বলবেন না।
আহনাফঃ তুমি একদিন চুল ছেড়ে, চোখে কাজল দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখবে তোমাকে দেখতে কেমন লাগে সম্ভব হলে সামনে একটা পাখা ধরবে চুল উড়বে বড় বড় চোখ একবার চোখ রাঙিয়ে তাকালে ভয়ে যে কেউ হিসু করে দিবে। বলেই আহনাফ হাসলো।
মহুয়াঃ আপনি ভূতের মুভি একটু বেশি দেখেন মনে হয়.?
আহনাফঃ হুম প্রচুর প্রতি রাতে দেখি, আগে দেখতাম মুভি আর এখন দেখি ছবি।
মহুয়াঃ দুইটা তো একি,ছবি মুভি।
আহনাফঃ নাহ্ দুইটা এক না। একটা মুভি আরেকটা কারো ছবি। কয়েকদিন পর থেকে আমার রুমেই হরর মুভির ডাইনী দেখতে পাব তাই মুভি দেখা বন্ধ করে দিয়েছি আপাতত তার ছবি দেখি।
মহুয়া ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ প্লিজ লাইট জ্বালান আমার ভয় করছে..’
আহনাফঃ ঠিক আছে আগে হাত দাও।
মহুয়াঃ অন্ধকারে.?
আহনাফঃ হুম।
মহুয়া ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো, ‘ হাত দিয়ে কি করবেন.?’
আহনাফঃ খু’ন করবো।
মহুয়াঃ কথায় কথায় খু’নের কথা কেন বলেন!.?
আহনাফঃ কেন ভয় পাও.?
মহুয়া থমথমে মুখে বলে উঠলো, ‘ না!’
আহনাফ মহুয়ার হাতে কিছু একটা দিয়ে দরজা খুলে চলে গেল।
মহুয়া জলদি লাইট জ্বালিয়ে আশেপাশে তাকালো আহনাফ নেই,চলে গেছে। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো বেলীফুলের মালা।
বেলীফুলের মালা দেখেই মনে পড়ে গেল সেই দিনের কথা। আহনাফ কে না বলে ওর ব্যালকনি থেকে বেলীফুলের মালা ধরে ছিল বলে কতোগুলো কথা শোনালো আর সেই পুরুষ আজ নিজেই বেলীফুলের মালা এনে দিচ্ছে।
___________
ছোঁয়া কাঁদতে কাদতে রেলিংয়ে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। রেলিংয়ের আরেক পাশ থেকে ধীরে হেঁটে একজন এসে ছোঁয়ার পাশে বসলো। গিটার পাশে রেখে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ একতরফা ভালোবাসা গুলো ভীষণ কষ্টের হয় তাই নারে ছোঁয়া!.?? এই যে তোর পাষাণ পুরুষের মতো তুইও পাষাণী হয়ে আমার ভালোবাসা বুঝতে পারিস না!…..
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২৯
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
সময় থেমে থাকে না, রাত গিয়ে সুন্দর একটা সকালের দেখা মিললো। সূর্যের আলো চোখে পড়তেই হাত চোখের উপর রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলো কিন্তু না সূর্য মামা আজ সকাল সকাল ভীষণ তেজ নিয়ে উঠেছে বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো ছোঁয়া। আশেপাশে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো ধীর পায়ে হেঁটে ছাঁদ থেকে নিচে নেমে গেল।
ছোঁয়া নেমে যেতেই দেওয়ালের ওপর পাশে বসে থাকা নির্জন মুখের উপর থেকে জ্যাকেট নামিয়ে বলে উঠলো ” মহারাণীর ঘুম ভেঙেছে, এই সকালটার মতো প্রতিটা সকাল আমার হোক।”
___________
সবাই রেডি হয়ে নিচে আসলো। সাজ্জাদ এসে সবার সাথে কথা বলে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনাকে শাড়িতে বেশি ভালো লাগে। এমন না যে সেলোয়ার-কামিজে ভালো লাগে না। আপনি মেয়েটাই এমন যা পড়েন তাতেই মুগ্ধ না হয়ে থাকা যায় না। ‘
মেঘলা হঠাৎ এমন কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে নেয়। মুখে হাসি টেনে বলে উঠলো ” ধন্যবাদ ”
বিপরীতে সাজ্জাদ কিছু না বলে মেঘলার দিকে তাকিয়ে হাসলো। বলতে চেয়েছিল অনেক কিছুই কিন্তু এখনো যে সময় আসেনি। সঠিক সময়ের অপেক্ষায়।
মহুয়া চুপচাপ সবার সামনে এসে দাঁড়ালো।
সবাই ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ তুমি রেডি হওনি..??’
মহুয়াঃ না, আসলে আমার শরীর ভালো লাগছে না। আপনারা চলে যান।’
নির্জন বাড়ি থেকে বের হয়ে মহুয়ার সামনে এসে বলে উঠলো, ‘ ক্রাশ মহুয়া সুন্দরী তুমি যদি আমাদের সাথে না যাও তাহলে কোনো মজাই হবে না, কতো আশিক হার্ট মিস করা থেকে বেঁচে যাবে এটা কিন্তু আপাতত আমি চাচ্ছি না জলদি রেডি হয়ে আসো। এতো সুন্দরী নারী, মেয়ে, বালিকা, মহিলা সরি মহিলা হবে না জাতির ক্রাশ বাংলাদেশে আছে তা গ্রামের লোকজনও দেখুক সাথে কিছু ঘটকদের পেটে ভাত পড়বে।
মহুয়াঃ ভাইয়া আমি….
নির্জন মহুয়ার সামনে এসে বলে উঠলো, ‘ ক্রাশকে ছাড়া আমরা কেউ যাব না তাই না গায়েস…!???
সবাই পেছন থেকে বলে উঠলো, ” একদম, তোমাকে ছাড়া আমরা কেউ যাব না ”
মহুয়ার রাগে মন চাচ্ছে আহনাফের ঘাড় মটকে দিতে। এই লোক নিজেও যাবে না আর ওকেও ব্লাকমেইল করছে না যাওয়ার জন্য। এটা তো কাউকে বলতেও পারব না।
ছোঁয়াঃ এই তোর আবার কি হলো মহুয়া!.? জলদি রেডি হ যা।
মহুয়াঃ আমি বললাম তো যাব না ছোঁয়া আমার শরীর খারাপ লাগছে।
ছোঁয়া রেগে বলে উঠলো, ‘ তাহলে হসপিটাল চল।’
মহুয়া ক্লান্ত চোখে ওর দিকে তাকালো।
মেঘলাও বলতে শুরু করলো চলো সবাই বলছে। তুমি একা একা বাসায় কেন থাকবে.? ভালো লাগবে চল।
মহুয়া বাধ্য হয়ে রেডি হয়ে ওদের সাথে বের হলো।
দাদু, নিরুপমা, নির্জন, ছোয়া এক গাড়িতে। অন্য গাড়িতে হালিমা বেগম, মহুয়া, মেঘলা, সাজ্জাদ।
সাজ্জাদ সামনে বসলো আর তারা পিছে।
সাজ্জাদ এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাইলো না। পেছনে ফিরে বলে উঠলো, ‘ আন্টি আমাকে ড্রাইভার বানিয়ে দিলেন.? এটা ঠিক না আন্টি আমি আপনার ছেলের মতো, ছেলের মতো কি আমি তো আপনার ছেলে..। ‘
হালিমা বেগম সাজ্জাদের ইনোসেন্ট মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এই বাবা না না আমি আসছি।’
সাজ্জাদঃ সামনে আপনার খারাপ লাগতে পারে আন্টি আপনি পেছনে শান্তিতে বসে ঘুমান।
হালিমা বেগম সামনে বসতে পারেন না মাথা ঘুরায়। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে সামনে যেতে বলার আগেই সাজ্জাদ বলে উঠলো, ‘ মেঘলা আপনি সামনে চলে আসেন।’
মেঘলা অবাক হলো সাথে বিরক্তও। এই ছেলের ব্যাবহার একদম ঠিক লাগছে না।
হালিমা বেগম মেঘলাকে বলতেই মেঘলা তৃক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সাজ্জাদের দিকে। এই ছেলের থেকে সব সময় দূরে থাকতে হবে।
সাজ্জাদের মনে খুশিতে লাড্ডু ফুটছে।এটাই তো চেয়ে ছিলো।
মেঘলা গাড়ি থেকে নেমে সামনের সিটে বসার আগেই পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো ” থামেন!!এদিকে আসেন।”
শ্রাবণের কন্ঠ শুনেই অবাক হয়ে মেঘলা পেছনে ফিরে তাকালো।
শ্রাবণ গাড়ির কাছে এসে বলে উঠলো, ‘ আপনারা চলে যান আমি আমার বউকে নিয়ে আসছি।’
সাজ্জাদ রেগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। হালিমা বেগম হেঁসে বললো নিয়ে যা সাবধানে আসবি।
মহুয়া এসে সামনে বসলো। সাজ্জাদ গাড়ি স্টার্ট দিলো৷
মহুয়াঃ আস্তে গাড়ি চালান ভাইয়া।
সাজ্জাদঃ সরি বইনা।
________
গ্রাম এখন আর আগের মতো নেই। ডিজিটালের ছুঁয়া লেগেছে গ্রামেও। আগের মতো ভাঙা রাস্তা, অশিক্ষিত সমাজ তেমন নেই। এখন রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে, মাটির বাড়ি ভেঙে কাঠের বাড়ি তৈরি হয়েছে, কাঠের বাড়ি হয়েছে বিল্ডিং, সারা রাস্তা মহুয়া আর সাজ্জাদ প্রচুর গল্প করেছে, সাজ্জাদ গান লাগিয়েছে দুইজন গানের সাথে তাল মিলিয়ে গেয়েছে প্রচুর মজা করেছে। প্রথম প্রথম সাজ্জাদ রেগে থাকলে মহুয়ার সামনে তা বেশি সময় থাকতে পারলো না এটা সেটা জিজ্ঞেস করতে করতে ফ্রী হয়ে গেল। মহুয়ার প্রতি কেমন একটা মায়া কাজ করে। সাজ্জাদ মহুয়াকে বোন বানিয়ে নিয়েছে আর মহুয়া পেয়েছে একটা ভাই।
পাকা রাস্তা পেরিয়ে একটা খুব সুন্দর বাড়ির সামনে গিয়ে থামলো গাড়ি।
সবাই বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ভেতর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসলো কিছু মহিলা, বাচ্চা, মেয়ে।
সবার সাথে ভেতর গেল মহুয়া। ছোঁয়া মহুয়ার থেকে বেশ দূরে দূরে থাকছে। মহুয়া গিয়ে ছোঁয়ার হাত ধরে বলে উঠলো, ‘ কি হয়েছে.? তুমি আমার থেকে দূরে দূরে থাকছো কেন.??’
ছোঁয়া কিছু বলার আগেই এক মেয়ে এসে ছোঁয়ার বুকে জাপ্টে পড়লো। তাল সামলাতে না পেরে ছোঁয়া পড়ে যেতে নিলে নির্জন পেছন থেকে ছোঁয়ার কোমর দু-হাত ধরে সামনের দিকে ধরলো।
~ ছোঁয়া কেমন আছিস পিচ্চি.?
ছোঁয়াঃ রিয়া আপু এখন আমাকে ছাড়ো না হলে এতোক্ষন ভালোই ছিলাম এখন কোমর ভেঙে বসে থাকবো।
রিয়া ছোঁয়াকে ছেড়ে দাঁড়ালো।
ছোঁয়া নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো ” ধন্যবাদ, জীবনে আজ একটা ভালো কাজ করলি না হলে এতোক্ষনে আমার কোমর ভেঙে, কোমর ভাঙা মেয়ে হয়ে যেতাম।বিয়ে বাড়িতে এসে ঘরের কোনে বসে থাকতাম ”
নির্জনঃ তাতে ভালোই হতো। তোর এই পেত্নী চেহারা দেখা থেকে কতো ছেলে বেঁচে যেত। বলেই সাজ্জাদকে নিয়ে উপরে চলে গেল নির্জন।
ছোঁয়া রেগে নির্জনের দিকে তাকিয়ে রইলো। রিয়া মহুয়ার দিকে তাকাতেই ছোঁয়া বলে উঠলো, ‘ আমার বোন মহুয়া। ‘
রিয়াঃ তোর বোন মানে.??
ছোঁয়া মহুয়ার হাত ধরে বলে উঠলো, ‘ রক্তের সম্পর্কই সব না আত্মার সম্পর্কই আসল।’
রিয়াঃ আচ্ছা, আচ্ছা আর জ্ঞান দিতে হবে না আস্তে আস্তে পরিচয় হয়ে যাবে এখন রুমে চল।
শ্রাবণ বাইক থামালো বাড়ির সামনে এনে।
মেঘলা রেগে তাকিয়ে আছে শ্রাবণের দিকে।
শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো ” ভালো লাগেনি মেঘরাণী..? আমি জানি আমি অনেক ভালো ড্রাইভার….
মেঘলা রাগে কিছু বলতে পারছে না।
শ্রাবণ বউ নিয়ে এসেছে শুনেই সবাই আবারও বউ নিতে গেইটে আসলো।
শ্রাবণ সুন্দর করে মেঘলার ঘোমটা টেনে দিয়ে মেঘলার হাতটা ধরে হাঁটতে শুরু করলো। মেঘলা রাগে চুপচাপ হাঁটতে লাগলো….. শুধু একবার সুযোগ পাক সব সুদে-আসলে ফিরিয়ে দিবে..।
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।