#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২৬
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
” মেঘ আপনি এখানে…?”
মেঘলা বিরক্ত হলো এই সময় সাজ্জাদকে এখানে দেখে। তবুও মুখে জোর করে হাসি ফুটালো।
সাজ্জাদঃ বললেন না তো! এতো রাতে এখানে কেন.??
মেঘলা ঘাবড়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো” অনেক রাত হয়ে গেছে বুঝি..?”
সাজ্জাদঃ আপনার কাছে মোবাইল বা ঘড়ি নেই..?
মেঘলাঃ আসলে আমি মোবাইল ব্যাবহার করতে পারি না আর ঘড়ির টাইম চিনি না।
সাজ্জাদঃ ওহ্ আচ্ছা, বেপার না আমি শিখিয়ে দিব সব।
মেঘলাঃ জ্বি এখন আমি আসি।
সাজ্জাদঃ এখানে কেন এসেছেন..? মনে হচ্ছে সিআইডি অফিস থেকে বের হলেন।
মেঘলাঃ আসলে একটা কেইসে আমাকে একটু দরকার ছিল।
সাজ্জাদঃ আপনাকে? কিন্তু কেন.?
মেঘলাঃ আসলে……. আমার বাসায় যেতে হবে উনি নিশ্চয়ই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
সাজ্জাদ অন্য দিকে ফিরে হাসলো। মেঘলা যখন জানবে মেঘলা আর শ্রাবণের সম্পর্কের কথা সাজ্জাদ খুব ভালো করেই জানে নিশ্চয়ই অবাক হবে।
মেঘলা মাথার কেপ টেনে চোখের কাছে এনে মাথা নিচের দিকে করে পকেটে হাত দিয়ে হাটতে শুরু করলো।
দূর থেকে সাজ্জাদ তাকিয়ে কিছু সময় মেঘলার যাওয়া দেখলো। কোনো মেয়েকেও এমন লোকে এতো সুন্দর লাগতে পারে সাজ্জাদের জানা ছিল না সে দৌড়ে মেঘলার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
মেঘলা দেখেও দেখলো না। এখন সে একটু একা রাস্তায় হাঁটতে চাচ্ছে।
সাজ্জাদঃ আপনি তো অনেক দ্রুত হাঁটতে পারেন।
মেঘলাঃ হুম, হাঁটতে হাঁটতে অভ্যাস হয়ে গেছে।
সাজ্জাদঃ তাহলে চলুন এই নির্জন রাস্তায় হাঁটার রেস লাগাই!.?
মেঘলাঃ আজ নয়।
সাজ্জাদঃ আজ প্লিজ, এতো সুন্দর একটা রাত। এভাবে চুপচাপ হাঁটতে ইচ্ছে করছে না।
মেঘলা সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে হাসলো।
মেঘলাঃ চলুন।
সাজ্জাদ খুশিতে মাথা ঝাঁকিয়ে মেঘলার দিকে তাকালো।
রাস্তার মাঝে দূরত্ব রেখে দাঁড়ালো সাজ্জাদ আর মেঘলা।
মেঘলাঃ যে আগে বাড়ির সামনে যেতে পাড়বে সেই আজকের বিজয়ী।
সাজ্জাদঃ আর যে বিজয়ী হবে তার জন্য..?
মেঘলা কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো, ‘ তার একটা ইচ্ছে পূরণ করা হবে।”
_____________
ছোঁয়া ছাঁদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো নির্জন ছোঁয়া দেখেও দেখলো না আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আজকের আকাশটা এতো অন্ধকার কেন.??”
নির্জন ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে হাসল। মেয়েটা অল্পতেই ইমোশনাল হয়ে যায়।
নির্জনঃ তোর চোখ অন্ধকার সেই জন্য সব কিছু অন্ধকার লাগছে।
ছোঁয়াঃ সর তুই।
নির্জন ছোঁয়ার হাতে হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,’ ওই দূরের চাঁদের মতো আমার পাশেও এক চাঁদ মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। এটা কিন্তু ঠিক না ছোঁয়া তোর জন্য আজকের আকাশটা অন্ধকার হয়ে আছে এই হাস্যজ্বল মুখে আমাবস্যা মানায় না।
ছোঁয়াঃ আমি কোনো চাঁদ নই।
নির্জনঃ তাহলে তুই কি..?
ছোঁয়াঃ আমি মানুষ।
নির্জনঃ না তুই পেত্নী।
ছোঁয়া রেগে বলে উঠলো, ‘ তাহলে তুই পেত্নীর জামাই জ্বীন।
নির্জনঃ ভুল বললি জ্বীন হলো পরীর জামাই।
ছোঁয়া রেগে আরেকটা বললো তো নির্জন বলছে আরেকটা ঝগড়া বাড়ছো কমছে না, তবে এই ঝগড়ায় রাগ ঘৃণা নেই আছে শুধু জিতার পালা…
শ্রাবণ ব্যালকনি থেকে রাস্তার দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর একের পর এক সিগারেট শেষ করছে।
রাস্তার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে মেঘলার। নিজের পরিবর্তনে সে নিজেই অবাক হচ্ছে। একটা মেয়ের জন্য সে কাজ,ঘুম ফেলে রাস্তার পানে চেয়ে চেয়ে রাত কাটাচ্ছে!!
ঘড়ির দিকে তাকালো রাত ১টা বাজে। এখন তো টেনশন হচ্ছে। মেয়েটা কোনো বিপদে পড়ল না তো!..?কোথায় এখনো.? খুব রাগ হলো মন তো চাচ্ছে!! নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলে উঠলো ” কাল থেকে এই মেয়ের বাহিরে যাওয়া বন্ধ। ”
মোবাইল পকেটে রেখে আবার রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলো। দূর থেকে কাউকে আসতে দেখে সিগারেট নিচে ফেলে তাকালো। মেঘলাকে চিনতে একটুও ভুল করলো না। এই কয়দিনে মেয়েটার হাঁটা, কথা বলার ধরন, তাকানো, রাগ, অভিমান সব শ্রাবণ চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে পারে।
মেঘলা গেইটের সামনে এসে থামলো। দশ মিনিট পর সাজ্জাদ এসে দাঁড়ালো মেঘলার পাশে। শ্রাবন মেঘলার সাথে সাজ্জাদকে দেখে তাকিয়ে রইলো। ওরা হেঁসে হেঁসে কথা বলছে আর এই সিগারেটের আগুনের ধোঁয়ার মতো শ্রাবণের ভেতর জ্বলছে, কিন্তু কেন!!..? মেঘলার আশেপাশে সাজ্জাদকে কেন শ্রাবণের সহ্য হয় না..? কেন এতো জ্বলে.??
শ্রাবণ মেঘলার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এতোক্ষনের এতো চিন্তা এক মুহুর্তেই রাগে পরিনত হলো।
নির্জন ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে রেগে বলে উঠলো, ‘ এতো বকবক কিভাবে করছ.?? সাথে আমার চুল গুলো তো অর্ধেক শেষ করে দিলি।’
ছোঁয়াঃ প্রথম তুই আমার চুল কেন দরলি..?
নির্জনঃ আমি তো আস্তে করে টান দিলাম।
ছোঁয়াঃ হাতির মতো হাত আবার বলে আস্তে করে টান দিছি সর সামনে থেকে।
নির্জনঃ আগে সরি বলে মাফচা।
ছোঁয়াঃ জীবনেও না।
নির্জন ছোঁয়ার ছোট শরীর টাকে কোলে তুলে নিল।
ছোঁয়াঃ এ্যাঁই এ্যাঁই নির্জন নামা বলছি।
নির্জনঃ আমি এখন তোকে একদম ছাঁদ থেকে ফেলে দিব।
ছোঁয়াঃ নাএএএএএএএএএএ..
নির্জন ছোঁয়ার মুখ চেপে ধরে বলে উঠলো,’ চুপ,একদম চুপ, মাফ চাইলে ছেড়ে দিব।’
ছোঁয়া একবার ছাঁদ থেকে নিচের দিকে তাকালো।
নির্জনঃ জলদি কর আমি একটা আটার বস্তা কে বেশিক্ষন নিয়ে রাখতে পারবো না।
ছোঁয়াঃ কিইই!! আমি আটার বস্তা..?
নির্জনঃ একটু কম করে খাবি..
ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে নির্জনের দিকে তাকালো।
নির্জনঃ আজ কি আমার কোল থেকে নামার ইচ্ছে নেই.??
ছোঁয়াঃ সরি..
নির্জন কান উপরের দিকে করে বললো,’ আবার বল শুনতে পাইনি!!..’
ছোঁয়াঃ সরিইই…
নির্জনঃ সুন্দর করে বল।
ছোঁয়া দাঁতের সাথে দাঁত চেপে কিছু বলার আগেই নির্জন বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া গেইটের দিকে তাকা।’
ছোঁয়া রাগি চোখে নির্জনের দিকে তাকিয়ে গেইটে তাকালো। মুহূর্তেই চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। খুশিতে নিজের অজান্তেই নির্জনের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিলো৷
নির্জন থমকে গেল। আধো অন্ধকারে তাকিয়ে রইলো ছোঁয়ার হাস্যজ্বল মুখের দিকে…
আহনাফের পিছু পিছু মেঘলা বাসায় ঢুকলো। এখন বাসার সবাই গভীর ঘুমে..
মেঘলা রেগে থাকলেও ভয়ে আহনাফ কে কিছু বলতে পারছে না আর না পারছে কিছু করতে।মন চাচ্ছে ঠিক বুকের বা পাশে চা*কু ঢুকিয়ে দিতে। কিন্তু মন চাইলেও সেই সাহস নেই মহুয়ার। সে এই পুরুষের চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারে না আর বুকে চা*কু ঢুকাবে.!!.??’
মহুয়া আহনাফের পেছনে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এমনিতেই বেশি কথা বলার জন্য একটা থাপ্পড় খেয়েছে আর কোনো কথা সে ভুলেও বলবে না।
আহনাফ পেছন ফিরে ব্যাগ মহুয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে উঠলো, ‘ কাল সব চলে আসবে নিজের রুমে যাওও.. আর তুমি চাইলে আমি কাল সবটা সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই.. আর তুমি না চাইলেও জানাতে চাই এবং জানাব’
মহুয়া রোবটের মতো ব্যাগ হাতে নিয়ে উপরের দিকে যাচ্ছে। আহনাফ পেছন থেকে ডাকলো।
মহুয়া থামলো কিন্তু আহনাফের দিকে ফিরলো না। আহনাফ কিছু বলার আগেই উপরের রুম থেকে বিরাট এক শব্দ আসল।
আহনাফ মহুয়া দুইজন উপরে তাকিয়ে দেখলো শ্রাবণ রেগে নিজের দরজায় লাথি বসিয়ে হনহন করে ছাঁদের দিকে চলে যাচ্ছে ।
ছোঁয়া ছাঁদ থেকে নামছে শ্রাবণকে দেখে থামলো। অবাক হয়ে শ্রাবনের দিকে তাকালো। দেখেই বুঝা যাচ্ছে প্রচুর রেগে আছে৷
শ্রাবণ ছোঁয়ার দিকে না তাকিয়ে ছাঁদে চলে গেল৷
ছোঁয়া ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো,’ আমাদের বাড়ির ছেলেদের সমস্যা কি!.?? এরা এখনি ভালো তো এখনি রেগে বোম।
ছোঁয়া প্রথম প্রথম কিছু সময় একটু রেগে থাকার ভান করলো। মহুয়া জড়িয়ে ধরতেই সব শেষ ।
ছোঁয়াঃ তুমি আর যাচ্ছ না তো..? দেখ মহুয়া আমি আর তোকে ভুলেও যেতে দিব না।
মহুয়া হাসলো। ছোঁয়ার পাগলামি দেখে মহুয়ার নিজেকে খুব মূল্যভান কিছু মনে হচ্ছে আজ।
ছোঁয়াঃ ভাইয়াকে তো অনেক গুলো ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।
আহনাফের কথা উঠতেই হাসি উড়ে গেল।
মহুয়া থমথমে মুখে বলে উঠলো,’ ওই লোকের নামও আমার সামনে নিবে না ছোঁয়া। ‘
ছোঁয়াঃ কিছু কি হয়েছে.?
মহুয়া চুপচাপ একটা পেপার ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে দিলো।
ছোঁয়া পেপারটা হাতে নিয়ে মহুয়ার দিকে তাকাতেই মহুয়া বলে উঠলো, ‘ আশা করি এই বিষয় তুমি আমি আর উনি ছাড়া কেউ কোনোদিন জানবে না।
ছোঁয়ার মুখে কোনো কথা নেই সে অশ্রু টলটল চোখে পেপারটার দিকে তাকিয়ে রইলো ।
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।
#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
সকাল সকাল ভূত দেখার মতো সবাই মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
মহুয়া ঘোমটা টেনে হাসার চেষ্টা করল।
আহনাফ চুল ঠিক করতে করতে নিচে এসে খাবার টেবিলে বসলো।
আমেনা বেগম এগিয়ে এসে বলে উঠলো, ‘ আরেএ মহুয়া তুমি..? ‘
মহুয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না একবার আহনাফ আরেকবার নিজের কচলানো হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো।
আহনাফ ধীরে সুস্থ বলে উঠলো, ‘ আম্মু এদিকে আসো…’
আমেনা বেগম ছেলের দিকে গেলেন।
হালিমা বেগম সবার জন্য নাস্তা বানাচ্ছে। নিরুপমা ভ্রু কুঁচকে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
আহনাফ মায়ের হাত ধরে সামনে বসালো।
মহুয়া মাথা নিচু করে আছে।
শ্রাবণের পিছু পিছু মেঘলা নেমে আসলো।
ছোঁয়া সবে মাত্র ঘুম থেকে উঠে হেলতে দুলতে নামছে।
আনোয়ার চৌধুরী সোফায় বসে আছে।
আনোয়ার চৌধুরী সবটাই জানে। কাল আহনাফ আনোয়ার চৌধুরীর থেকে পারমিশন নিয়েই এতো বড় একটা কাজ করে বসেছে।
শ্রাবণ মহুয়াকে দেখে একবার তাকালো। কি স্নিগ্ধ শান্ত সেই চাহনি।
পেছন থেকে নির্জন শ্রাবণের গলা জড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ ভাই তোমার বউ পেছনে, অন্যের বউয়ের দিকে না তাকিয়ে নিজের বউয়ের দিকে তাকাও। পুরাই চিকনি চামিলি তোমার বউ, আর শাড়িতে তো ঐশ্বরিয়াকে হার মানায়।’
শ্রাবণ রেগে তাকাতেই নির্জন দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো, ‘ এইসব আমি বলিনি, আমার বন্ধু বলেছে আমি তো ভাবির নজরে দেখি।
শ্রাবণ রেগে মেঘলার দিকে তাকায়। যতো যাই হবে সব দোষ গিয়ে পড়বে মেঘলার উপর, রাগও দেখাবে মেঘলার উপর, ও কেন শাড়ি পড়ে ছেলেদের সামনে যাবে.?
নির্জনঃ ভাই এভাবে তাকালে বউ পালাবে, সুন্দর করে ভালোবাসা দিয়ে তাকাও, না হয় আমার দিকে তাকাও শিখিয়ে দিচ্ছি।
শ্রাবণঃ বেশি জ্ঞান না দিয়ে সর।
নির্জনঃ জ্ঞান কোথায় দিলাম, আমি তো হেল্প করছি। তুমি চাইলে এক সপ্তাহে পটিয়ে দিতে পারি।
শ্রাবণ রেগে তাকাতেই নির্জন দাঁত কেলিয়া মেঘলার পেছনে চলে গেল।
আহনাফ ওর আম্মুর হাতে হাত রেখে বলে উঠলো, ‘ আম্মু আমি যদি হঠাৎ কোনো সিদ্ধান্ত নেই তুমি মেনে নিবে!.?? তুমি তো জানো কোনো কারণ ছাড়া তোমার ছেলে কিছু করে না।
আমেনা বেগম হেঁসে আহনাফের মাথায় হাত রাখল।।
আহনাফঃ আম্মু আমি…
মহুয়া আহনাফ কে থামিয়ে বলে উঠলো, ‘ আন্টি…..’
আহনাফ থেমে গেল, এই মুহূর্তে মহুয়ার উপর ভীষণ রাগ উঠলো তাও নিজেকে শান্ত করে বলে উঠলো, ‘ আমি কথা বলছি তো!’
মহুয়া ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি তো ছোঁয়া কে ভীষণ মিস করছিলাম সেই জন্য রাতে চলে এসেছি। আপনাদের সমস্যা হলে আমি আজ……
আমেনা বেগমঃ এইসব কি বলছো! তুমি ফিরে আসাতে আমরা অনেক খুশি হয়েছি। তুমি আমার মেয়ের মতো।আমার মেয়েনেই আমি সেই জায়গাটা ছোঁয়া আর তোমাকে দিয়েছি।
উনার কথা শেষ হতেই মেঘলা বলে উঠলো, ‘ আর আমাকে.???’
আমেনা বেগম থেমে গেলেন থমথমে মুখে অন্য দিকে ফিরে তাকিয়ে রইলেন।
হালিমা বেগম রান্না ঘর থেকে হাত মুছতে মুছতে বের হলো।মেঘলার সামনে এসে বলে উঠলো, ‘ তুমি আমার মেয়ে। বড় আপা তো দুইজনকে দিয়েছে আমি আমার মেয়ের জায়গা সবটা তোমাকে দিয়ে দিলাম ।’
মেঘলা খুব সুন্দর করে নিজের চোখের জল আড়াল করে হালিমা বেগম কে জড়িয়ে ধরলো। তাও অনেক আশায় তাকিয়ে রইলো শাশুড়ীর দিকে।
আহনাফ,শ্রাবণ, নির্জন সবাই দর্শক হয়ে বসে বসে তা দেখলো। আহনাফের আর কিছু বলার সুযোগ হলো না।
আনোয়ার চৌধুরী সবাইকে ডাকলো।
উনার বড় ছেলে ছোট ছেলেও উপস্থিত হলো।
আনোয়ার চৌধুরী সবাই কে বললো, কাল গ্রামে যেতে হবে। ওখানে একসপ্তাহ থাকতে হবে। উনার ভাতিজার মেয়ের বিয়ে।
এই কথা শুনতেই খুশিতে লাফালাফি শুরু করলো ছোঁয়া। সেই ছোট থাকতে একবার গ্রামে গিয়ে ছিল আর যাওয়া হয়নি।
শ্রাবণ, আহনাফ নিষেধ করলো ওরা যেতে পারবে না।
আহনাফের হসপিটাল আর শ্রাবণের অফিস আছে।
নির্জন ভাইয়েরা যাবে না শুনে আনোয়ার চৌধুরীকে বলে উঠলো, ‘ দুই ভাই যাবে না আমি গিয়ে কি করবো!.? একা একা মন টিকবে না, আমার সাথে কি সাজ্জাদকেও নিতে পারি দাদু!.??
আনোয়ার চৌধুরী হেঁসে বললো,’ নিয়ে নাওও।’
শ্রাবণ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ এই ছেলে ওখানে কেন যাবে!.?
নির্জনঃ ভাইয়া ও আমার বন্ধু।
শ্রাবণঃ তাহলে মেয়েরা বাড়িতে থাক।
ছোঁয়াঃ এটা কেমন কথা ভাইয়া! তোমরা যাবা না ঠিক আছে তাই বলে আমরা কোন কারনে যাব না!.?
শ্রাবণঃ আমি বলেছি মানে যাবে না কেউ। আম্মু, ফুপি, ছোট আম্মু তোমরা আর আব্বু চাচ্চু, দাদু যাক।
আজাদ চৌধুরী এখন না বিয়ের দিন যাবে বললো আর মিরাজ চৌধুরী একটা কেইসে আঁটকে গেছে যেতে পারবে না।
আনোয়ার চৌধুরী এবার ছেলের বউদের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোমাদের কোনো বাহানা আছে.??
ছোঁয়া আনোয়ার চৌধুরীর গলা জড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ আমরা যাব দাদু এই রোবট মানব গুলোর কথা শুনবো না।
শ্রাবণঃ কে রোবট..?
ছোঁয়াঃ তুমি আর আহনাফ ভাই।
আহনাফঃ এখানে আমাকে কেন টানছিস..?
ছোঁয়াঃ ভাই শ্রাবণ ভাইয়াকে তুমি একটু বুঝাও, আমরা বাসায় থেকে কি করবো!.? আমি গ্রামে যাব।
মেঘলা আনোয়ার চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ” দাদু আপনি কি আমাদের নিবেন..? আমি, ছোঁয়া মহুয়া..?
আনোয়ার চৌধুরী হেসে বলে উঠলো, ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই, এরা রোবট হতে পারে আমরা তো আর রোবট না।’
মেঘলা খুশি হয়ে বললো,’ গ্রাম আমার অনেক ভালো লাগে, অনেক বার গিয়েছি কয়েকটা কেইস সল্ভ করতে।
সবাই অবাক হয়ে বললো,’ কিইই..!!???’
মেঘলা ভয় পেয়ে গেল। বেশি উত্তেজিত হয়ে এটা কি বলে দিল!.
মহুয়া সবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমি বড় হয়েছি গ্রামে। গ্রামের পরিবেশ খুব সুন্দর। ‘
ছোঁয়াঃ আজ বিকেলে আমরা মার্কেটে যেতে হবে। শ্রাবণ ভাইয়া তুমি নিয়ে যাবে।।।
শ্রাবণ নিষেধ করলো সে পাড়বে না, আহনাফেরও সময় নেই। এবার নির্জনকে ধরলো, নির্জনেরও কেনাকাটা করতে হবে সে রাজি হয়ে গেল।
মেঘলা শান্তির নিশ্বাস ফেললো। ওর কথাটা যাক কেউ গুরুত্ব দেয়নি।
_____
বিকেলে মার্কেটে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লো সবাই। মার্কেটের সামনে এসে দেখা পেল সাজ্জাতের। নির্জন বলেছে সাজ্জাতকে আসতে।
সবাই মার্কেটের ভেতরে গেল।
সাজ্জাদ মেঘলার পাশাপাশি হাঁটছে।
এক ঘন্টা চলে গেল কাপড় পছন্দ করতে করতে নির্জন, সাজ্জাদের কেনাকাটা শেষ কিন্তু মেয়েরা এখনো কিছুই কিনেনি।
নির্জন রেগে ছোঁয়ার দিকে তাকাতে মেঘলা বলে উঠলো, ‘ আরেএ দেবরজী মাত্রই তো আসলাম। যখন বিয়ে করবেন বউয়ের আঁচল ধরে দশ ঘন্টাও ঘুরতে পারবেন বিরক্ত লাগবে না, আজ বোন বলে এক দুই ঘন্টাও ঘুরতে পারছেন না। এটা কিন্তু ঠিক না’
নির্জনঃ ভাবি তখন বউ থাকবে, বউয়ের আঁচল ধরে ঘুরার ফিলিংসটাই অন্য রকম।
সাজ্জাদ নির্জনকে থামিয়ে বলে উঠলো, ‘ মেঘলা বউ তো নেই এখন আপনারা চাইলে নিজেদের আঁচলটা আমাদের হাতে বেঁধে দিতে পারেন জামাই,জামাই, প্রেমিক প্রেমিক ফিলিংস আসবে দশ ঘন্টা কেন সারাজীবন এখানে কাটিয়ে দিতে পারবো।
ছোঁয়া হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আরেহ্ বাহ্ ভাইয়া তো হেব্বি রোমান্টিক চাইলে আপাতত আমার ওড়না কে আঁচল বানিয়ে চালিয়ে নিতে পারেন…
ছোঁয়া মজা করে বললেও নির্জন রেগে সাজ্জাদ আর ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
সাজ্জাদ সেটা বুঁজে নির্জন কে রাগানোর জন্য ছোঁয়ার ওড়না ধরতে গেলেই নির্জন ওর হাত চেপে ধরে বলে উঠে,’ দূরে থাক। ‘
সাজ্জাদঃ আমাকে ছোঁয়া বলেছে।
নির্জন রেগে সাজ্জাদের হাত আরও শক্ত করে চেপে ধরতেই সাজ্জাদ আরেক হাত দিয়ে কানে ধরে বলে উঠলো, ‘ আরে ভাই মজা করছিলাম হাত তো ভেঙে ফেলবি, আমার বউ কি তখন তোর হাত ধরে হাঁটবে!.? ছাড় না বাপ।
নির্জন ঝাড়ি মেরে সাজ্জাদের হাত ছাড়লো।
সাজ্জাদ বেচারা হাতের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ লাল করে ফেলছস।’
নির্জনঃ চুপচাপ পিছে পিছে হাট।
মহুয়া হেঁসে বললো, ‘ আপনারা ঝগড়া না করে হেল্প করলেও তারাতাড়ি হবে।’
সাজ্জাদের চোখ গেল একটা সুন্দর শাড়ির দিকে। চোখ বন্ধ করে ভাবলো শাড়িটায় মেঘলাকে কেমন লাগবে।
সাজ্জাদ খুশি হয়ে মেঘলা কে ডাকলো।
মেঘলা ফিরতেই সাজ্জাদ শাড়িটা দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনাকে খুব সুন্দর মানাবে..’
মেঘলারও শাড়িটা বেশ পছন্দ হয়েছে, মেঘলা খুশি মনে শাড়িটা হাতে নিতেই পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো, ‘ শাড়িটা আপনার জন্য একটু বেশি কড়া গোলাপি হয়ে গেল না!.??
মেঘলা পেছন ফিরে শ্রাবণকে দেখে অবাক হলো। আরও অবাক হলো শ্রাবণের সাথে একটা মেয়ে দেখে।
মেঘলা মেয়েটার দিকে শান্ত চোখে চেয়ে থাকলেও ভেতর ভেতর রাগে ফেটে পড়ছে। মেয়েটা শ্রাবণের হাত ধরে আছে।
মেঘলা রাগ করে শাড়িটা সাজ্জাদের দিকে দিয়ে বললো,’ আপনার পছন্দ হলে নিয়ে নেন।’
সাজ্জাদঃ আমার গার্লফ্রেন্ড নেই, আমি কার জন্য নিব..?’
মেঘলা দাঁতের সাথে দাঁত বলে উঠলো, ” যার জন্য মন চায়।’
শ্রাবণ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো,’ শাড়িটা তোমাকে মানাবে সামিয়া। তুমি শাড়িটা সাজ্জাদের থেকে নিয়ে নাও আর সাজ্জাদ তুমি তো দেখছি খুব ভালো মেয়েদের জিনিস চেনো প্লিজ সামিয়ার বাকি জিনিস গুলো পছন্দ করে দাও, তোমার পছন্দ খুব সুন্দর।
সামিয়া মেয়েটা শ্রাবণের হাত ছেড়ে সাজ্জাদের হাত শক্ত করে ধরে নিলো।
সাজ্জাদ থতমত খেয়ে গেল। কারেন্টের শর্ট খাওয়ার মতো দূরে সরে যেতে চাইলো কিন্তু সামিয়া ওর হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।
সাজ্জাদ ইনোসেন্ট মুখ করে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে দেখলো সামনে শ্রাবণ নেই বেচারা ভালোই ফেঁসেছে।
শ্রাবণ মেঘলার পিছু পিছু গেল। মেঘলা ছোঁয়া আর মহুয়ার পেছনে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। কিছু কিনার রুচি একদম চলে গেছে। আমাদের শপিংয়ে নিয়ে আসতে পারবে না কি সুন্দর বলে দিল অথচ গার্লফ্রেন্ড কে শপিং করাতে নিয়ে চলে আসল৷ পুরুষজাতি এমনি। ঘরে বউ থাকতে বাহিরে মেয়ে নিয়ে রংঢং না করলে শান্তি লাগে না। মেঘলা বিরবির করে হাজারো গালি দিচ্ছে পুরুষ জাতিকে।
ছোঁয়া মহুয়ার দিকে তাকিয়ে মোবাইল হাতে নিলো। আহনাফ কে ভিডিও কল দিয়ে একের পর এক শাড়ি, কাপড় দেখাচ্ছে আর বলছে কোনটা মহুয়াকে ভালো মানাবে।
মহুয়া রেগে ছোঁয়ার দিকে তাকালেও ছোঁয়া তাতে পাত্তা দিল না৷ আহনাফ ছোঁয়ার পাগলামি দেখে হাসছে। ছোট বোনরা বুঝি এমনি হয়!.?
আহনাফ যা যা বললো সব গুলোই নিল ছোঁয়া সাথে ম্যাচিং করে আহনাফের জন্য পাঞ্জাবিও নিয়ে নিলো।
শ্রাবণ মেঘলাকে যা দেখাচ্ছে মেঘলা তাই নিতে নাকচ করে দিচ্ছে।
শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়ের আবার হলোটা কি!.?
ছোঁয়া ইচ্ছে মতো শপিং করলো সাথে নিজের পছন্দ মতো, আহনাফ, শ্রাবণের পছন্দ মতো ওদের বউয়ের জন্য নিয়ে নিলো। মামি,আম্মু সবার জন্য নিল।
মেঘলা শুধু দাঁড়িয়ে চুপচাপ সবার কেনাকাটা দেখলো। ওর মাথায় এখন শুধু ঘুরছে কে সেই মেয়ে । মেয়েটাকি শ্রাবণের গার্লফ্রেন্ড!.? গার্লফ্রেন্ড মনে হতেই বুকের ভেতর চিনচিন ব্যাথা অনুভব হলো। তাহলে কি এই বিয়ের খেলায় মেঘলা ভুল করে শ্রাবনকে ভালোবেসে বসলো!!.? ভেজা চোখে তাকিয়ে রইলো শ্রাবণের মুখের দিকে। শ্রাবণ তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিল। মুচকি হাসলো শ্রাবণ।
মহুয়া মেঘলার পাশে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ চোর পুলিশের খেলা শেষ হলে বাড়িতে চলো। ‘
মেঘলা এদিক ওদিক তাকিয়ে চুল কানের পেছনে গুঁজে বলে উঠলো, ‘ কিসের চোর পুলিশ!.? ‘
মহুয়াঃ আমাকে বাচ্চা ভেবোনা আমি সব বুঝি।
মেঘলাঃ হ্যাঁ তুমি তো বুড়ি হয়ে গেছ।
মহুয়াঃ হুম তাই। বাড়িতে গিয়েও ভাইয়াকে সামনে বসিয়ে ইচ্ছে মতো দেখতে পারবে, জামাই তো তোমারি,এখন চলো।
মেঘলাঃ আমি তো কিছুই কিনলাম না।
মহুয়াঃ তুমি না কিনলেও ভাইয়া প্রচুর কিনেছে।
মেঘলাঃহুহ ওই মেয়ের জন্যই কিনেছে আমি জানি।
মহুয়াঃ কোন মেয়ে.?
মেঘলাঃ কিছু না চল।
সবাই নিচে গিয়ে সাজ্জাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
একটু পর কিছু একটা দেখে সবার চোখ বের হয়ে আশার মতো অবস্থা।
সাজ্জাদ দুই হাতে, গলায়, মাথায় শপিং ব্যাগ, বেচারার মুখও দেখা যাচ্ছে না। পেছনে সামিয়া সাজ্জাদ কে রেগে বলছে ওর এখনো শপিং শেষ হয়নি। বেচারা সাজ্জাদ পারলে এখানে বসে কান্না করে কোন পাগলের পাল্লায় পড়লো! এতো এতো শপিং করেও নাকি শেষ হয়নি।
শ্রাবণ আগে আগে গাড়িতে উঠে গেল ইশারায় সবাইকে বললো গাড়িতে উঠে বসতে। সাজ্জাদ সামিয়ার চোখ ফাঁকি দিয়ে গাড়ির দিকে আসতে নিলেই শ্রাবণ গাড়ি ছেড়ে দিল।
কিছু দূর গাড়ি যেতেই সবাই গাড়ি থেকে সাজ্জাদের দিকে তাকালো। সামিয়া টেনে শপিং করতে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে সাজ্জাদকে….
চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।