মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-২৪+২৫

0
554

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২৪
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

মেঘলা পাশ দিয়ে দ্রুত হেঁটে গেল।
সাজ্জাদ মুগ্ধ চোখে এখনো তাকিয়ে আছে মেঘলার দিকে ।
নির্জনঃ কিরেএ ভাই এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি.??
সাজ্জাদ হাত দিয়ে মাথা চুলকে হাসলো। নির্জনের সাথে রুমে যেতে যেতে আরেক বার মেঘলার যাওয়ার দিকে তাকালো।

আমেনা বেগম এখনো মেঘলাকে দেখতে পারে না, অবশ্য একটা বস্তির ছিনতাইকারী, চোর,অশিক্ষিত মেয়েকে কোনো উচ্চপদের পরিবার মেনে নিবে না।কিন্তু ছেলের ওইদিন নিষেধের পর থেকে উনি আর একটা কথাও বলেনি মেঘলার সাথে আর না বলেছে মেঘলার বিষয় অন্য কারো সাথে।

মেঘলা ফ্রেশ হয়ে সোজা চলে গেল মহুয়ার রুমে।
মহুয়া কাপড় গুছিয়ে রাখছিল মেঘলা কে দেখে হেঁসে ভেতরে আসতে বললো।
মেঘলা মায়াভরা দৃষ্টিতে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে একপা দুইপা করে কাছে গেল।
মহুয়া স্তব্ধ হয়ে গেল। আচমকা মেঘলা মহুয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

মহুয়া আসতে আসতে করে মেঘলার পিঠে হাত রাখল।
~ কিছু কি হয়েছে মেঘলা.??
মেঘলা মহুয়ার মুখটা হাতে নিয়ে বলে উঠলো, ‘ না হঠাৎ তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে ভীষণ ইচ্ছে হলো, তুমি রাগ করেছ.??’
~ না, না আমি তো খুশি হয়েছি।
মেঘলা মহুয়াকে আর কিছু বলার আগেই ছোঁয়া শব্দ করে রুমে প্রবেশ করলো।
মেঘলা মহুয়া ছোঁয়ার দিকে তাকালো। ছোঁয়া মহুয়ার সামনে গিয়ে মহুয়াকে মেঘলার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিল।
মহুয়া তাজ্জব বনে গেল ছোঁয়ার আচরণে।
ছোঁয়াঃ আমার পছন্দ না মহুয়ার আশেপাশে অন্য কেউ আসুক।
মহুয়া কি বলবে.? এই মেয়ে কি বলছে.?
ছোঁয়াঃ আমি আমার প্রিয় মানুষগুলোর আশেপাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারি না।
মেঘলা মুচকি হেঁসে বললো, ‘ আমাকে কি একটু আপন করে নেওয়া যায়না ছোঁয়া!..??’
ছোঁয়া কিছু না বলে মুখ অন্ধকার করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
আচমকা মেঘলা ছোঁয়াকেউ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
ছোঁয়া শান্ত হয়ে গেলে, কেমন মস্তিষ্ক বলছে দূরে সরিয়ে দে! কিন্তু মন বলছে একদম না ছোঁয়া, তুই তো এমন না।

ছোঁয়া চুপচাপ বসে আছে মহুয়া অনেক সুন্দর করে বুঝালো। মেঘলা যেখানেই বড় হোক,যেই পেশাই করুক তুমি একটু ভেবে দেখ। সে যদি তোমার মতো এতো বিলাসবহুল বাড়ি, পরিবার থাকত তাহলে কি ওখানে থাকতে হত.? এমন পেশা বেছে নিত.? ওর ব্যাবহার দেখ কতো সুন্দর। কেউ বলবে মেঘলা খারাপ মেয়ে! যাই করেছে ভুলে যাও।

ছোঁয়াও ভাবলো। মেঘলা তখন ছোঁয়াকে ছেড়েই রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে ছিলো।

মেঘলা ছোঁয়ার রুম থেকে বের হয়ে শ্রাবণের রুমে যাওয়ার সময় সামনে পড়লো সাজ্জাদ।

মেঘলা সামনের দিকে তাকিয়ে শাড়ির আঁচল অন্য দিকে সুন্দর করে ধরে রেখেছে। শাশুড়ীর শাড়ি পছন্দ আর বউদের শাড়িতেই ভালো মানায় সেই জন্য মেঘলা শাড়ি পড়েছে আজ। অনেক কষ্টে মায়ের কাছে শাড়ি পড়া শিখেছে সাথে কি করলে শাশুড়ী খুশি হবে, কি করলে শ্রাবণ ওকে নিজের করে নিতে চাইবে সব শিখে নিয়েছে, এমন একটা সাপোর্টার মা থাকলে জীবনটা অতোটাও কঠিন লাগে না।

সাজ্জাদ মেঘলার দিকে তাকিয়ে বুকে হাত দিলো। মেয়েটার তাকানো হাঁটা দেখলেই কোনো নাইকার থেকে কম মনে হয় না।

মেঘলা সাজ্জাদের দিকে একবার চোখাচোখি হলো। তীরের মতো চোখ ফেললো সাজ্জাদের দিকে। ছেলের তাকানো দেখেই মেজাজ চারশো চল্লিশ বুলটেজের হয়ে গেল।

সাজ্জাদ ধুকপুক বুকে মেঘলার সামনে এসে দাঁড়ালো।
~ হায় মিস আমি সাজ্জাদ।
মেঘলা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। উত্তর না দিয়ে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সাজ্জাদ পথ আগলে দাড়ালো।
মেঘলাঃ সমস্যা কি.??
সাজ্জাদঃ শাড়িতেই নারী এই কথাটা আজ সত্যি হলো। আপনাকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না।
মেঘলা আহাম্মক বনে গেল। মানে কি এইটুকু ছেলে ফ্লার্ট করতে এসেছে.!!??
মেঘলা ছেলেটার দিকে তাকালো লম্বায় ৫.৮ হবে। গায়ের রং ফর্সা, মাথার একঝাক চুল কুঁকড়ানো,দেখতে খারাপ না।

মেঘলা অপরিচিত ছেলের সাথে কথা না বলাই ভালো মনে করল।
ছেলেটা আবার বলে উঠলো, ‘ আপনার দেখি আমার প্রতি একটুও আগ্রহ নেই।’

এই পর্যায়ে মেঘলা ভীষণ বিরক্ত হলো।
মেঘলাঃ আপনার প্রতি আমি আগ্রহ কেন দেখাব.? আমি কি আপনাকে চিনি.??’
সাজ্জাদঃ কি বলছেন! একটা ছেলে আপনার প্রশংসা করল! আপনার সাথে কথা বলছে আর তার বিষয় কিছু জানার বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই আপনার.?? চিনেন না বলেই তো আগ্রহ বাড়বে।
মেঘলাঃ আমি বলেছি প্রসংশা করুন.? আর আপনার বিষয় জানার আগ্রহ দেখানোর মতো স্পেশাল কিছু দেখছি না আপনার মধ্যে।
সাজ্জাদঃ তাহলে আমিই পরিচয় দেই.?
মেঘলাঃ কোনো প্রয়োজন নেই।
সাজ্জাদ আর কিছু বলার আগেই খেয়াল করল ওদের দিকে একটা ছেলে তাকিয়ে আছে।
মেঘলা সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে। ওর মুখ যথেষ্ট গম্ভীর। কিন্তু বুঝা যাচ্ছে না রেগে আছে নাকি শান্ত।
মেঘলা সাজ্জাদের দিকে না তাকিয়ে চলে যেতে নিলে সাজ্জাদ বলে উঠলো ” আপনার সাথে তো কথা শেষ হয়নি”
মেঘলা সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে থামলো বাড়ির মেহমান না দাঁড়ালে অসম্মান করা হবে।

শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এখানে দাঁড়িয়ে কি করছেন!.? আমার লুঙ্গি খুঁজে পাচ্ছি না, কোথায় রেখেছেন..? ‘
মেঘলা থমথমে মুখে শ্রাবণের দিকে তাকালো। এই লোক লুঙ্গি পড়ে!.? কই কোনোদিন তো দেখলাম না!.।

শ্রাবণঃ কি হল.?
সাজ্জাদ একবার শ্রাবণের দিকে আরেকবার মেঘলার দিকে তাকালো।
মেঘলা সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে হেঁসে বললো,’ এখন আমার যেতে হবে আমরা না হয় পড়ে পরিচয় হয়ে নিব।’
সাজ্জাদ মেঘলা হাসি দেখে আরেক দফা ক্রাশ খেল।
সাজ্জাদঃ জ্বি,জ্বি অবশ্যই। আমি সাজ্জাদ। অনেক ভালো গান গাই।

মেঘলাঃ আমি ম….
শ্রাবণঃ আপনি কি আসবেন..!!?
মেঘলা রাগী দৃষ্টিতে শ্রাবণের দিকে তাকালো। রেগে রুমে চলে গেল,মেঘলা সাথে শ্রাবণ ও রুমে গিয়ে শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দিল।

সাজ্জাদ রাগী দৃষ্টিতে শ্রাবণের দরজার দিকে তাকালো। বিড়বিড় করে বলে উঠলো ” এমন একটা ভাব করছে বাহিরের লোক এদের সম্পর্ক সম্মন্ধে কিছুই যানে না। এইসব লোকদেখানোর জন্য করছেন সেটা এই সাজ্জাদ খুব ভালো করেই জানে। আমি যা চাই নিজের করেই ছাড়ি একদিন মেঘলাকে আমার করেই ছাড়ব। শুধু মাত্র আর কয়েকদিন।

____________

খাবারের টেবিলে সবাই বসে আছে।

বাড়ির বড়রা খাবার খেয়ে যাওয়ার পর ছোটরা আসে।
সাজ্জাদকে সবাই অনেক আপ্যায়ন করছে শুধু মাত্র শ্রাবণ চুপচাপ আছে।
মেঘলা, আমেনা,হালিমা সবাইকে খাবার দিচ্ছে।

মেঘলা সবাইকে খাবার দিয়ে সাজ্জাদকেও খেতে বললো।
সাজ্জাদ মুগ্ধ দৃষ্টিতে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আপনিও আসুন না এক সাথে খাওয়ার মজাই আলাদা। ‘
মেঘলা সবার দিকে একবার তাকিয়ে বললো, ‘ না, না আপনারা খান।’

সবাই বলতে শুরু করলো একসাথে বসার জন্য। ছোঁয়া উঠে মেঘলার হাত ধরে শ্রাবণের পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিল।

হঠাৎ সাজ্জাদের একটা উদ্ভব ইচ্ছে হলো।মেঘলাকে ওর পাশে বসিয়ে খাওয়ানোর। মেঘলা খাবে আর ও মুগ্ধ হয়ে দেখবে।

আহনাফ সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে ছোঁয়ার পাশের চেয়ারে বসলো। নির্জন সাজ্জাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।
সাজ্জাদ নির্জনের মুখে আহনাফ,শ্রাবণের অনেক কথা শুনেছে। আহনাফকে অনেক গম্ভীর আর রাগী ভেবে সাবধানে বেশি কথা বললো না। আর টুকটাক কথা শ্রাবণের সাথে বলতে চাইলে কিন্তু এখন ওর মনে হচ্ছে আহনাফ অনেকটা ফ্রেন্ডলি কিন্তু এই শ্রাবণ গম্ভীর।

আহনাফ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ খাবার শেষ হলে আমার রুমে আসবেন। ‘

মহুয়া রেগে প্লেটের ভাত শক্ত করে ধরলো। জীবনেও যাব না।

সাজ্জাদ মহুয়ার পাশের চেয়ারেই বসে ছিলো। চোখ বড় বড় করে মহুয়ার ভাত চেপে ধরার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো, আপু তুমি ঠিক আছ.??’
মহুয়া ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো”হুম”
সাজ্জাদঃ ছোট আপু রাগ ভাতের সাথে নয়, নিস্পাপ ভাত গুলো কষ্ট পাবে।
মহুয়াও ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ আমরা সবাই নিস্পাপ জিনিসের উপর জুলুম করতে ভালোবাসি।’

আহনাফ বলার পরেও মহুয়া আহনাফের রুমে যায়নি। সে আর কখনো আহনাফের সামনেও যেতে চায় না। নিজের জন্য বাসা দেখে নিয়েছে, টিউশনি করানোর পাশাপাশি একটা চাকরি খুঁজবে। কাল সকালেই সবাইকে জানাবে আর বিকেলে নতুন বাসায় উঠবে।

আহনাফ রেগে রুমে সামনে এসে বললো দরজা খুলতে, ছোঁয়া দরজা খুলতেই আহনাফ ছোঁয়াকে রুম থেকে বের করে ভেতর দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।

ছোঁয়া হ্যাঁ করে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে রইলো। কতোবার মহুয়াকে বলেছে যেটা যায়নি ভাই তো এখন রেগে আছে। আল্লাহ মহুয়া কে না আবার থাপ্পড় মেরে বসে।

ছোঁয়া ভয় পেল কেউ ওদের এক রুমে দরজা বন্ধ দেখলে খারাপ কিছু ভাবতে পারে এর থেকে ভালো ছোঁয়া নিজেই দরজার সামনে থেকে চলে যাক। তাহলে কারো নজরে পড়বে না।

ছোঁয়া হেলতে দুলতে গিয়ে ঢুকলো নির্জনের রুমে। নির্জন রুমে নেই। ছোঁয়া জানে নির্জন এখন ছাঁদে নিশ্চয়ই মোবাইলে প্রেমিকাদের নিয়ে ব্যাস্ত।

ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। হাতের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাফির অনেক মেসেজ,কল। ছেলেটাকে আর কি করলে পিছু ছাড়বে!.?

মেঘলা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনি লুঙ্গি পড়েন.?’
শ্রাবণ ল্যাপটপের দিয়ে তাকিয়ে বলে উঠলো ” হুম”
মেঘলাঃ তাহলে আমি এই রুমে থাকব না।
শ্রাবণঃ তুমি নিজ থেকে এইরুমে এসেছ কেউ জোর করে আনেনি।
মেঘলা ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে বললো, ‘ আমি আপনার বউ..
শ্রাবণঃ মাত্র কয়েকদিনের জন্য।
মেঘলা এবার ভীষণ রেগে গেল। শ্রাবণ দিকে তাকিয়ে রেগে বলে উঠলো, ‘ আমি কাল সকালেই উকিলের কাছে যাব। তিন দিনের মধ্যে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক শেষ হবে। আমি আজ এখন এই মুহূর্তে চলে যাচ্ছি। ‘

শ্রাবণ ল্যাপটপ রেখে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আরও এক মাস পঁচিশ দিন বাকি।’
মেঘলাঃ আমি জানতে চাইনি।
শ্রাবণঃ একদিন বাকি থাকলেও এই বাড়ির বাহিরে পা দিতে পারবে না। এক সেকেন্ড আগেও না।
মেঘলাঃ আপনি আমাকে রাখতে পারবেন না। আমি কারো জীবনে আর ঝামেলা হয়ে থাকতে চাই না।
শ্রাবণঃ ঝামেলা হয়ে জীবনে প্রবেশ করেছেন আর বলছেন থাকতে চান না!.?
মেঘলাঃ হ্যাঁ এবার মুক্তি দিতে চাই।
শ্রাবণঃ আপনি চাইলেও বাকি দিনগুলো থাকতে হবে আর না চাইলেও থাকতে হবে।
মেঘলা ভীষণ রেগে গেল। রাগের চুটে সামনে থাকা ফুলদানি ড্রেসিং টেবিলের দিকে ছুড়ে ফেললো। সাথে সাথে ঝনঝন শব্দ করে ভেঙে গেল কাঁচ।

শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো,’ এইগুলো আমার কষ্টের টাকায় কেনা আপনার মতো দুই নাম্বারি করে টাকা উপার্জন করি না প্লিজ আর একটা কিছুও নষ্ট করবেন না।’

মেঘলা শ্রাবণের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রুমে থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য দরজার কাছে আসতেই পায়ে কাঁচের টুকরো ঢুকে যায়। মেঘলা আহ্ বলে পায়ে হাত দেয় শ্রাবণ শান্ত দৃষ্টিতে তখনো তাকিয়ে আছে ড্রেসিং টেবিলের টুকরো গুলোর দিকে।
মেঘলা রাগে, দুঃখে ব্যাথার কথা ভুলে যায়।আজ ওর থেকে ড্রেসিং টেবিলের দাম বেশি শ্রাবণের কাছে, থাকবে না সে দরজা খুলে রুমের বাহিরে পা দিতেই চোখ বন্ধ করে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়। ভীষণ ব্যাথা সাথে রক্ত পড়ছে।
মেঘলার প্রতিটা পায়ের রক্তের ছাপ ফ্লটে লেগে যাচ্ছে।

নির্জন আর সাজ্জাদ ছাঁদ থেকে কথা বলে নামছে। কোনো একটা বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করছে।

ফ্লটে রক্তের ছাপ দেখে ভয়ে নির্জন বলে উঠলো, ‘ ভাই ভুতের পায়ের ছাপ!!.?’
সাজ্জাদ নিজেও তাকিয়ে রইলো বাড়িতে কোনো চিৎকার চেচামেচি হচ্ছে না। কারো পা এভাবে কাটলে এতোক্ষনে সারা বাড়ি মাথায় তুলার কথা।তাহলে কি সিনেমার ভূতের মতো কিছু এসেছে..? রাত তখন ১টা। সাজ্জাদ নিজেও ভয় পেয়ে বলে উঠলো, ‘ তোদের বাড়িতে ভূত আছে.?’
নির্জনঃ শুনেছি বাড়ির পেছনের ঘরটায় মাঝে মাঝে কোনো মেয়ের চিৎকার শুনা যায়।

লে বেচারা সাজ্জাদ পারলে এখন প্যান্টেই হিসু করে দেয়।

নির্জন কিছু একটা দেখে বলে উঠলো, ‘ ওইতো ভূত!!.??

সাজ্জাদ ভয়ে বলে উঠলো, ‘ কই!.?’
নির্জনঃ নিচে। তুই তো আমার থেকেও ভিতুরডিম। আমরা পুরুষ মানুষ আমাদের ভয় পেতে নেই।
সাজ্জাদঃ তাহলে তুই কেন ভয় পাচ্ছিস.?
নির্জনঃ প্রথম তো।

মেঘলার চোখ লাল টকটকে হয়ে গেছে। ব্যাথায় পা নাড়তেও পাড়ছে না।
সাজ্জাদ অবাক হলো ভূতের জায়গায় মেঘলাকে দেখে। নির্জনের আগে নিজেই দৌড়ে গেল। মেঘলার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে উঠলো, ‘ মেঘলা আপনার এই অবস্থা হলো কিভাবে..? আপনা পা থেকে তো অনেক রক্ত ঝড়ছে!!
মেঘলা কিছু বলছে না। এই সময় সাজ্জাদকে আরও বিরক্ত লাগছে।
নির্জনঃ ভাবি! পায়ের এই অবস্থা আপনি কাউকে একবার ডাকতে পারতেন অন্তত মহুয়া বা ছোঁয়া কে।
মেঘলাঃ আমি ঠিক আছি রুমে যাও।
নির্জনঃ আমি আহনাফ ভাইকে ডাকছি।
মেঘলাঃ প্রয়োজন নেই, দরকার হলে আমি ডেকে নিব।
সাজ্জাদঃ আমি এইসব পারি নির্জন আমার আব্বু ডক্টর।

শ্রাবণ পেছন থেকে বলে উঠলো, ‘ সাজ্জাদ তোমার কষ্ট করতে হবে না। আমি নিয়ে এসেছি আমার বউ আমি দেখে নিচ্ছি।’
মেঘলা রেগে গেলেও ওদের সামনে চুপ করে রইলো।
সাজ্জাদঃ ভাইয়া অনেক রক্ত ঝড়েছে আপনি কোথায় ছিলেন.??
শ্রাবণঃ আমি কাউকে কৈফিয়ত দিতে পছন্দ করি না সাজ্জাদ। যাও অনেক রাত হয়েছে নিজেদের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
সাজ্জাদ কিছু বলার আগেই নির্জন বলে উঠলো, ‘ ভাইয়া যেহেতু আছে আমাদের দরকার পরবে না ভাবির। চল রুমে যাই নাকি ভাবি থাকব.?’
মেঘলাঃ চলে যাও।
সাজ্জাদ চেয়েও আর কিছু বলতে পারলো না কিন্তু মন একদম যেতে চাচ্ছে না। শ্রাবণ মেঘলার সামনে বসে পা হাতে নিল।
সাজ্জাদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শ্রাবণের হাতে মেঘলার রক্ত মাখা পায়ের দিকে।

_______

মহুয়া রেগে বলে উঠলো , ‘ আপনার বাসায় আছি বলে যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন না!! আপনি একটা মেয়ের রুমে এসেছেন আবার দরজা কোন অধিকারে বন্ধ করেছেন.? বাসার লোকজন দেখলে কি মনে করবে.?
আহনাফঃ আমি আপনাকে ডেকে ছিলাম।
মহুয়াঃ আমার যেতে ইচ্ছে হয়নি।
আহনাফ নিজেকে শান্ত করার জন্য লম্বা লম্বা শ্বাস নিল।
আহনাফঃ আপনার সাথে আমার কথা আছে।
মহুয়াঃ আমার আর কোনো কথা নেই। আমি রিজাইন লেটার পাঠিয়ে দিয়েছি।
আহনাফঃ কথা ছিল ৬মাস আপনি চাইলেও কাজ ছাড়তে পারবেন না।
মহুয়াঃ আমারও কাজ এটা ছিল না।
আহনাফঃ কাজ নির্ধারন করে আমি কখনো দেইনি৷
মহুয়াঃ আমি কাল চলে যাচ্ছি, আমি আর আপনার সাথে কাজ করব না।
আহনাফঃ কি.? কোথায় যাচ্ছেন..?
মহুয়াঃ আমার নিজের বাসায়। আমি বাসা দেখে নিয়েছি।
আহনাফ নিজেকে শান্ত করে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনি বাসা থেকে এক পা ও বাহিরে রাখবেন না আর সুন্দর করে কাল কাজে চলে আসবেন।’
মহুয়াঃ আমি আপনার কথা শুনতে বাঁধ্য নই। নিজ ইচ্ছায় এসেছি আবার নিজ ইচ্ছায় যাচ্ছি।
আহনাফঃ নিজ ইচ্ছায় সব জায়গায় প্রবেশ করা যায় তবে বের হতে মালিকের আদেশ লাগে।
মহুয়াঃ আপনি মালিক সাজতে এসেছেন!.?
আহনাফঃ আপনি কাল কোথাও যাচ্ছেন না আমার কথাই শেষ কথা।
মহুয়া বিরক্ত হলো কিন্তু কিছু বললো না। আহনাফ বের হবার পর পর ও বের হয়ে যাব এইলোক ওর ছায়াও খুঁজে দেখতে পাবে না।

আহনাফ মহুয়াকে যা বলতে চেয়েছিল তা আর বলা হলো না রুম থেকে বের হয়ে গেল।

নিজের রুমে যাওয়ার সময় নিচে চোখ গেল। শ্রাবণ যত্ন করে মেঘলার পায়ে মলম লাগিয়ে বেন্ডেজ করে দিচ্ছে। মেঘলা রেগে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
আহনাফ হাসল, আজকের জন্য এই দৃশ্যটা ওর কাছে সেরা মুহূর্ত মনে হলো। এই যে নিজে কষ্ট দিচ্ছে আবার নিজেই মলম লাগাচ্ছে।

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২৫
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

রাত গিয়ে সুন্দর একটা সকালের দেখা দিল।

আফরোজা বেগম কে ডক্টর দেখে গেছে, উনার শরীর অনেক খারাপ। আহনাফ সকাল থেকে দাদীর হাত ধরে বসে আছে।
আনোয়ার চৌধুরী সোফায় বসে বউ আর নাতি কে দেখছে। ছোট থেকেই আহনাফ দাদী ভক্ত ছিলো বেশি, আফরোজা বেগমের আশেপাশে আনোয়ার চৌধুরীকে একদম আসতে দিত না এই নিয়ে আনোয়ার চৌধুরীও বাচ্চাদের মতো ঝগড়া শুরু করতো। কি মিষ্টি ছিলো সেই দিন গুলো আজ আফরোজা বেগম মৃত্যুর সজ্জা।

খাবার টেবিলে মহুয়ার মুখে চলে যাওয়ার কথা শুনে সবার মন আরও খারাপ হয়ে গেল। এমনিতেই আফরোজা বেগমকে নিয়ে সবার মন খারাপ ছিলো। ছোঁয়া তো কিছু না বলে খাবার টেবিল ছেড়ে চলে গেল।

শ্রাবণ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’ কোথায় যাবেন.? গ্রামে.??
মহুয়া মিষ্টি হেঁসে বলে উঠলো, ‘ না ভাইয়া আমি নতুন বাসা নিয়েছি।’

আমেনা বেগমঃ কেন মা তোমার কি এখানে সমস্যা হচ্ছে.? কেউ কিছু বলেছে.? আমাকে বলো।
মহুয়াঃ না, না আন্টি কেউ কিছু বলেনি। মাঝে মাঝে আসব আন্টি এসে আপনাদের দেখে যাব।
হালিমা বেগমঃ একদম না তুমি কোথাও যাচ্ছ না, চুপচাপ নিজের রুমে যাও।
মহুয়াঃ প্লিজ আন্টি, আমি বাসা দেখে নিয়েছি আজ বিকেলে যেতে হবে।
নিরুপমাঃ ও যখন থাকতে চাচ্ছে না এতো জোরাজোরি করার কি আছে। ঠিক আছে মেয়ে যাও তুমি। মাঝে মাঝে এসো।
মহুয়াঃ ধন্যবাদ আন্টি।
আমেনা বেগম আর হালিমা বেগম কেও মহুয়া বুঝালো। কিছুতেই তারা রাজি হচ্ছে না একটা মেয়ে আলাদা একা বাসায় থাকা রিক্স।
শ্রাবণ শুধু চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে সবটা শুনে গেল।

সাজ্জাদ নিচে এসেই মেঘলা কে খুঁজল।
গুণগুণ করে বলে উঠলো ” তুমি কই.? তুমি নাই,আমি তোমাকে চাই!!”
কোথাও মেঘলাকে না দেখে মহুয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
শ্রাবণ সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। এই ছেলেটাকে ওর একদম পছন্দ না। ওর বউয়ের দিকে এভাবে ড্যাবড্যাব করে কোনো ছেলে কেন তাকিয়ে থাকবে.?? শুধু মাত্র নির্জনের বন্ধু বলে এখনো বাসায় রেখেছে।
সাজ্জাদ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ সবাই কে বলা শেষ..? কই আমাকে তো বললে না। ‘
মহুয়া হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আপনি বাসা খুঁজে দিলেন আর নতুন করে আপনাকে কি বলব ভাইয়া.?ধন্যবাদ বলা যায় ।’

শ্রাবণঃ তোমরা আগে থেকে পরিচিত.?? ‘
মহুয়া হেঁসে বলে উঠলো, ‘ হ্যাঁ একটু, কলেজ থেকে আশার সময় উনার আব্বুকে রাস্তায় বসে থাকতে দেখে এগিয়ে গিয়ে ছিলাম। হসপিটাল নিয়ে যাওয়া তারপর বাসায় পর্যন্ত আমি সাথে ছিলাম তখন ভাইয়ার সাথে পরিচয়। তারপর কথায় কথায় আমারও বাসা খুজার কথা উঠলো আর ভাইয়া বললো উনারাও বাসা ভাড়া দিবেন।

এতোক্ষন সবাই ওর কথা শুনে চিন্তা মুক্ত হলো যাক পরিচিত কারো বাসায় উঠেছে। কিন্তু শ্রাবণের বিষয়টা একদম ভালো লাগেনি। যদিও সাজ্জাদ মহুয়াকে বোনের মতো দেখছে আর মহুয়া ভাই বলছে।

আহনাফ হসপিটালে মহুয়ার অনেক অপেক্ষা করে। আজ কিছুতেই হসপিটালে মন বসাতে পারছে না কি যেন একটা নেই আশেপাশে, শূন্য শূন্য লাগছে বুকের ভেতর ।
আজ ভালো করে কোনো রোগী ও দেখতে পারছে না। ডক্টর সোনিয়া এসে দুইবার জিজ্ঞেস করে গেছে” ঠিক আছেন তো আপনি.? অসুস্থ.? ”

আহনাফের খুব করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে ” হ্যাঁ সে মনের দিন দিয়ে খুব বাজে ভাবে অসুস্থ হয়ে গেছে! এই রোগের মেডিসিন কোথায়..? ”

আহনাফ কয়েকজন রোগী দেখে হসপিটাল থেকে বের হয়ে গেল।

____________

মেঘলা বাসায় এসে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই একটা কাগজ আর গোলাপ সিঁড়ির উপরে দেখে হাতে নিলো। আজ গোলাপি শাড়ি, সাথে চুড়ি,ছোট একটা টিপ আর কাজল দিয়েছে।

কাগজটা ভ্রু কুঁচকে হাতে নিল সাথে লাল টকটকে গোলাপ।

মেঘলা আশেপাশে তাকিয়ে এটা আবার জায়গায় রাখতে গিয়ে কাগজের উপরে সুন্দর করে ” মেঘ” নামটা দেখে থেমে গেল। চোখ মুখ শক্ত করে আশেপাশে আবার তাকালো। কাগজটা মুচড়ে হাতের মাঝে নিয়ে গটগট করে নিজের রুমে চলে গেল।

শ্রাবণ মাত্র অফিস থেকে বাসায় এসেছে।
আজ অনেকটা তারাতাড়ি বাসায় চলে এসেছে। যেখানে রাত ১০ টায় বাসায় আসে অনেক সময়১২-১টাও বেজে যায় আসতে আজ অনেক তারাতাড়ি চলে এসেছে।
মেঘলা গোসল করে বের হয়ে সামনে তাকিয়ে চিৎকার দিতে গেলে শ্রাবণ তার আগেই দ্রুত গিয়ে ওর মুখ চেপে ধরে।

মেঘলা অস্বস্তিতে, লজ্জায়, ভয়ে শ্রাবণের হাতে কামর বসায়। শ্রাবণ তাও ছাড়ে না। মেঘলার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, ভেজা চুল থেকে টপটপ পানি এসে কপাল,গাল,ঠোঁট বেয়ে পড়ছে।
মেঘলা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।
শ্রাবণ সেই লজ্জা মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কতোটা স্নিগ্ধ, সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। শ্রাবণের মনে প্রশ্ন জাগলো,’ আচ্ছা গোসলের পর কি মেয়েদের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়.?? না হলে এই মেয়েকে এখন এতো আকর্ষণীয় লাগছে কেন.?

মেঘলা ধীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ ছাড়ুন ‘
শ্রাবণ নিজের অজান্তেই বলে বসে ” উহু কাছ থেকে আরেকটু দেখি”

মেঘলার বুক কেঁপে ওঠে, বুকের ভেতর মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে। কাঁপা কাঁপা ঠোঁট নেড়ে বলে উঠলো, ‘ কি..?’
শ্রাবণঃ আপনাকে..
মেঘলাঃ আমাকে…!!? আপনি ঠিক আছেন তো..?

হুট করে শ্রাবণ ধাক্কা দিয়ে মেঘলাকে দূরে সরিয়ে দেয়। অন্য দিকে ফিরে বলে উঠে,’ এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে শাড়ি পড়ে নিন।’
মেঘলা বিছানা থেকে শাড়ি হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে দৌড় দেয়।

মেঘলা যেতেই শ্রাবণ রেগে নিজের চুল টেনে ধরে বিছানায় বসে পড়ে। ওর মধ্যে এইসব কি হচ্ছে.? আজ কাল এইসব আজব ফিলিংস কোথায় থেকে আসছে!.? এই মেয়ের থেকে দূরে থাকতে হবে। পাশের টেবিলে গোলাপ দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। গোলাপ হাতে নিয়ে দেখে এটার নিচে একটা চিরকুট। চিরকুট টা খুলতেই গুটিগুটি অক্ষরে ভেসে আছে কিছু লাইন

” আমার মেঘ! শুধুই আমার। সব মেঘই তো অন্ধকার হয়ে আসে , আপনি একটু ব্যতিক্রম হয়ে আসুন, আপনি আমার জীবনে আলো হয়ে আসুন। ”

_________

ছোঁয়া নিচে নামছে আর আহনাফ উপরে উঠছে।
ছোঁয়ার চোখ মুখ ফুলে আছে। প্রচুর কান্না করার জন্য এই অবস্থা। মহুয়াকে এই কয়দিনে বোনের আসন দিয়ে দিয়েছে কিন্তু মেয়েটাকে ওকে বুঝলো না!!।
আহনাফ ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ কি হয়েছে.? মুখের এই অবস্থা কেন.? কি হয়েছে.??
ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে বলে উঠলো, ‘ কিছু না। ‘
আহনাফঃ সত্যি.??
ছোঁয়া এই প্রথম আহনাফের সাথে উঁচু গলায় কথা বললো। রেগে বলে উঠলো, ‘ তুমি কাল কি করেছ মহুয়ার সাথে.?? হসপিটাল থেকে আশার পর থেকে ও একদম পাল্টে গেছে। আমারই ভুল কেন যে মেয়েটাকে জোর করে তোমার সাথে কাজ করার জন্য রাজি করিয়ে ছিলাম!! তুমি একদম ভালো না ভাই..’

আহনাফ থমথমে মুখে ছোঁয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া ‘
ছোঁয়া ভয় পেলো। ভয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।
পেছন থেকে নির্জন বলে উঠলো, ‘ ভাই ওর জামাই মরছে এই কষ্টে দুঃখে মাথার তার সব ছেড়ে গেছে। ‘
ছোঁয়া নির্জনের দিকে রেগে তাকিয়ে নিচে নেমে গেল৷
নির্জন গেল আহনাফের পিছু পিছু।

__________

বাসায় কেমন একটা নিশ্চুপ ভাব চলে আসলো।
মহুয়া চলে গেছে আনোয়ার চৌধুরী চেয়েও নিষেধ করতে পারেনি। ঠিকই বলেছে মহুয়া সে বিপদে পরে আশ্রয় চেয়ে ছিলো এখন নিজের একটা জায়গা তৈরি করতে হবে। সারাজীবন তো আর অন্যের বাড়িতে পরে থাকতে পারবে না। নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত। আর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে লড়াই করেই বাঁচতে হয়, কখনো জীবনের সাথে আবার কখনো মানুষের সাথে।

মেঘলা আজ একটা কাজে বেরিয়ে ছিল সেই সকালে। সন্ধ্যায় ক্রিমিনাল কে ধরে নিয়ে আসে৷ জিজ্ঞাসা বাদ করতে করতে বেজে গেল রাত দশটা। অবশ্য মহুয়া জানে ওর জন্য কেউ অপেক্ষা, টেনশন কোনোটাই করবে না। মহুয়া ওই বাড়িতে থাকলে যেই না থাকলে একই। সে তো এটাও জানে না মহুয়া চলে গেছে।

দশটায় অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় উঠতেই কাউকে দেখে হাত দিয়ে মুখ আড়াল করার চেষ্টা করল কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয়। এতো টেষ্ট করেও লাভ হলো না ঠিক ওকে দেখে ফেললো৷

” মেঘ আপনি এখানে.?? ”

চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে