#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২২
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
মাথা ঝিমঝিম নিয়ে উঠে বসল মহুয়া। আশেপাশে তাকিয়ে নিজেকে একটা রুমে দেখে কিছু সময় বসল তারপর রুম থেকে বের হয়ে বাহিরে পা রাখতেই ফুলবানুর সামনে পরল।
ফুলবানু এক গাল হেঁসে পান চিবিয়ে থুুতু ফেললো৷ মহুয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে মিষ্টি করে বললো,’ ঘুম ভাঙছে.?’
মহুয়া ভয়ে ভয়ে আশেপাশে তাকিয়ে বললো, ‘ জ্বি আন্টি।’
ফুলবানু মহুয়ার দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললো,’ কাউরে খুঁজতাছ.??’
মহুয়াঃ জ্বি আন্টি পলাশ কোথায়.?
ফুলবানুঃ পলাশ কাজি আনতে গেছে আজ তোমাদের এহানে বিয়া হইব।
মহুয়া কিছু বললো না, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
ফুলবানু একটা মেয়েকে ইশারা করে কাপড় নিয়ে আসতে বললো।কাপড় আসতেই মহুয়ার হাতে দিয়ে বললো,’ কাপড় পইরা সুন্দর কইরা রেডি হইয়া লও।একটু পর পলাশ চইলা আইব।
মহুয়া কাপড় গুলো হাতে নিল।খুব সুন্দর একটা গোলাপি শাড়ি।
ফুলবানুঃ কাপড় পড়তে পাড় তো.?
মহুয়া চুপচাপ মাথা নিচু করে নিল। সে শাড়ি পড়তে পাড়ে না। এখন উনি শুনলে নিশ্চয়ই বলবে, পলাশ এ কেমন মেয়ে বিয়ে করতে আনছে সামান্য শাড়ি পড়তে পাড়ে না! আবার এই মেয়ে সংসার সামলাবে কিভাবে!.?
মহুয়ার চুপ থাকা দেখেই ফুলবানু বুঝে নিল। ইশারায় পাশে দাঁড়ানো মেয়েটাকে মহুয়ার সাথে যেতে বললো।
মহুয়া শাড়ি পড়ে বসে আছে। মেয়েটার এমন আজব অদ্ভুত কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না।
মেয়েটা মহুয়ার গালে হাত রেখে বললো,’ ভালোবাসা অন্ধ,আর তুমি দুইটা সুন্দর চোখ থেকেও ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গেছ। আর এখন বার বার সেই ভালোবাসা বদলাবে কিন্তু অন্ধকার পথ হাতরে আলোর পথ আর খুঁজে পাবে না। আবারও একটা পবিত্র ফুল অপবিত্র হতে যাচ্ছে। নিজেকে সুন্দর করে তৈরি করে নাও।’
মহুয়াঃ কি বলছ.?কিসের অপবিত্র আর কিসের অন্ধ পথ!! আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
~ একটু পর সব বুঝতে পারবে।
মেয়েটা বের হয়ে গেল।মহুয়া আর বেশি এই বিষয়টা ভাবল না। মেয়েটার ব্যাবহার ভীষণ আজব।
সময় যাচ্ছে, সেকেন্ড, মিনিট,ঘন্টা পেরিয়ে যাচ্ছে প্রেমিক আর আসছে না।
মহুয়া অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেল।লোকটার কিছু হল না তো.? কোথায় গেল.? হাজারটা চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
হঠাৎ মনে হলো কেউ ওর শাড়ির আঁচল সরিয়ে নিচ্ছে।মহুয়ার ঘুম অনেক হাল্কা কেউ রুমে আসলেই ঘুম ভেঙে যায়।
মহুয়া চোখ খুলে সামনে পুরুষের অবয়ব দেখে ভয় পেয়ে গেল। উচ্চ সুরে বলে উঠলো, ‘ পলাশ! পলাশ! পলাশ ভাই…? ‘
কোনো উত্তর না পেয়ে ভয়ে কিছুটা গুটিয়ে গেল।শাড়ির আচল টান দিয়ে নিজের হাতে নিয়ে বললো,” কে আপনি.? কে!.?
রুমে ড্রিম আলো।
লোকটা মহুয়ার দিকে এগিয়ে যেতেই মহুয়া ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে নেমে গেল পেছন থেকে ওর শাড়ীতে আবার টান পরলো। মহুয়া দৌড় দিয়ে দরজার সামনে গেল। দরজার পাশে লাইটের সুইচ চাপ দিতেই রুম আলো হয়ে গেল। নিজের সামনে একটা অচেনা পুরুষ দেখে ভয়ে কাঁদতে শুরু করলো।
~ এ্যাঁই ব্যা*** এতো অভিনয় না করে কাছে আয়। টাকা দিয়া অভিনয় দেখতে আহি নাই।
মহুয়া কি বলবে? কান্নার জন্য মাথায় কিছুই আসছে না। দরজার ছিটকিনি খুলতে গেলে লোকটা ওর হাত শক্ত করে ধরে ফেলে। খুব বাজে দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।
মহুয়ার ঘা গুলিয়ে বমি আসে।
লোকটা টেনে হেঁচড়ে বিছানায় ফালায় মহুয়া, আন্টি! পলাশ বলে চিৎকার শুরু করে।
লোকটা আস্তে আস্তে বিশ্রী হাসি দিয়ে ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চায়।কিন্তু তার আগেই মহুয়া সরে যায়।তাতে লোকটা রেগে যায়।
~ এখানে ডাবল টেহা দিয়া আইছি। তুই ও মজা নিবি আমিও নিব এতো চিৎকার চেচামেচি করবি না। চুপচাপ কাছে আয়।
~ আপনার আল্লাহর দুহাই লাগে আঙ্কেল আমার কাছে আসবেন না। আমি আপনার মেয়ের মতো।
~ এতোগুলা টেহা দিছি কি দূরে থাহার লাইগা। এদিকে আয় আমার কাছে, ইসস মনে হইতাছে সাক্ষাত পরী।
মহুয়া দরজার কাছে ছুটে গেলে লোকটা ওর কাছে চলে আসে। ওর হাত ধরতে গেলেই মহুয়া পাশে একটা কাঁচের বোতল দেখতে পায়। লোকটা ওর হাত ধরতেই মহুয়া ঘৃণায় বোতলটা আরেক হাত দিয়ে তুলে নেয় শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে লোকটার মাথার মাঝ খানে আঘাত করে সাথে সাথে ফিরকি দিয়ে রক্ত ছুটে। বোতল মাঝ খান দিয়ে ভেঙে যায় মহুয়া হাতের বাকি অংশ লোকটার বুকে ঢুকিয়ে দেয়।
মহুয়ার চোখের সামনে লোকটা হাত পা ছুটাছুটি করে মারা যায়। একটা জড়বস্তুর মতো মহুয়া তা দেখে।
মহুয়ার হাতে রক্ত দেখে চমকে যায় ফুলবানু।
মহুয়ার হাতে, শাড়িতে রক্তে মাখামাখি।
~ এই পুরি এতো রক্ত কই থাইকা.??
মহুয়া কিছু বলে না, নিচে বসে এক দৃষ্টিতে ফ্লটের দিকে তাকিয়ে থাকে।
~ এই মাইয়া কথা কস না কা.!!
মহুয়ার ঘর থেকে একটা মেয়ের চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে যায়।ফুলবানু একবার মহুয়ার দিকে আরক বার রুমের দিকে তাকিয়ে ছুটল রুমে।
লোকটার রক্তাক্ত লাশ নিচে পড়ে আছে। এই প্রথম হলো ফুলবানুর পল্লিতে এমনটা।
সেই দিনের ঘটনা খুব সুন্দর করে আড়াল করে নিয়ে ছিল ফুলবানু।তারপর থেকে মহুয়া একটা রুমে আটকানো। সে নিজ থেকেই সেই রুম থেকে বের হচ্ছে না ঠিক মতো কিছু খাচ্ছে না।
ফুলবানু আজ পাঁচ দিন পর এই ঘরে ঢুকল। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ এই মাইয়া রেডি হইয়া নে।’
মহুয়া পাঁচ দিন পড়েও মুখ খুললো না। সেই আগের মতো চুপ করে আছে।জীবনের প্রথম এমন ভয়ংকর কাজ ওকে ভেতর থেকে শেষ করে দিয়েছে।
ফুলবানু রেগে মহুয়ার গাল চেপে ধরে বললো,’ একটা নতুন নাগর আইছে বহুত বড়লোক, একটা তোর মতো টকটকে মিষ্টি চায়। খুব সুন্দর কইরা রেডি হইয়া ল।’
মহুয়া এতোদিনে খুব ভালো করে বুঝে গেছে এখানে কি করা হয়! কেন মেয়েদের চলাফেরা এমন!! পলাশকে ও ভালোবেসে ছিল,বিশ্বাস করে ছিল আর সে আজ এর পরিনাম এভাবে দিল.? টাকার জন্য ভালোবাসার মানুষটিকে বিক্রি করে দিল.? প্রতিদিন যেই মেয়েটি ওকে খাবার দিতে আসে সেই মেয়েটিও এক সময় পলাশের এমন বোলা ভালা চেহারার ফাঁদে পড়ে ছিল। ভালোবেসে সব ছেড়ে ওর হাত ধরে ছিল আর তার ফলাফল হিসেবে জায়গা হলো এই পতিতা পল্লীতে।
এই পাঁচ দিন কান্না করতে করতে চোখের নিচে কালি বসে গেছে।নিজের প্রতি ঘৃণা হতে শুরু করলো। সে অপবিত্র হয়ে গেছে, এই হাত দিয়ে খু*ন করেছে, এখন সে খু*নি!!।
মহুয়া আবার কাঁদতে শুরু করলো। কি বিষাদ সেই কান্নায়, এক প্রতারক কে ভালোবাসল! ঘর ছাড়ল আজ সে কোথায়!.? বুক ফেটে কান্না আসল, আমি বাঁচতে চাইনা আল্লাহ এমন জীবন নিয়ে। আত্নহত্যা কেন পাপ আল্লাহ!..?? আমি যে আত্মহত্যা ও করতে পারছি না।
ঘন্টা খানেক পর ফুলবানু আবার আশে।
মহুয়াকে আগের মতো বসে থাকতে দেখে রেগে যায়।~ তোর রেডি হওয়া লাগব না চল আমার সাথে।
মহুয়া হাত ছাড়াতে চাইলে ফুলবানু ওর গালে থাপ্পড় মেরে চুলগুলো পেছন থেকে শক্ত করে ধরে বলে,’ অনেক নাটক করছস এখন আমি আমার এতো টাকা লস হতে দিমু না। চুপচাপ যেভাবে বলে ঠিক সেভাবে করবি। যেই নাগরের লগে আইছস সে তো হালায় চইলা গেছে।
মহুয়াঃ আন্টি চুল ছাড়ুন আমি বাড়িতে যাব।
ফুলবানু হাসতে হাসতে বলে, ‘ এখানে যে একবার আসে সে আর ফিরে যেতে পারে না।’
মহুয়া কাঁদতে কাঁদতে উনার পায়ে পড়ে। পা জড়িয়ে অনুরোধ করে। কিন্তু ফুলবানুর তাতে কোনো হেলদোল হয় না। মহুয়াকে হেঁচড়ে একটা রুমে নিয়ে আসে।মহুয়া বার বার সাইফ কে ডাকে,মাইশার কথা মনে করে। জীবন এমন কেন.??আজ আপনাকে আপনার বোনের ভীষণ প্রয়োজন ভাই!!
একটু পর এক মাতাল হেলতে দুলতে রুমে আসে। রুমের দরজা বাহির দিয়ে আঁটকানো ছিল।
মহুয়া দৌড়ে বের হয়ে যেতে নিলে ফুলবানু বাহির দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।
মহুয়া দরজা ধরে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে।
মাতাল ওর সাথে দস্তাদস্তি শুরু করলে মহুয়া মাতাল ছেলের বুকে লাথি বসায়।মাতাল রেগে মহুয়াকে মারতে শুরু করে। মহুয়ার চিৎকার বাহিরে তীরের মতো সবার কানে বিঁধে। কিছু মেয়ে বলতে শুরু করে খালা মাইয়াডারে মনে হয় মারতাছে। এতো মিষ্টি মাইয়াডারে মাইরা ফেলব।
~ দয়া কইরা খালা দরজাডা খুইলা দেও।মাইয়াডা মইরা যাইব।
একটু পর সব ঠান্ডা হয়ে যায়। না ভেতর থেকে কোনো শব্দ আসে আর না বাহির থেকে।
প্রায় দুই ঘন্টা পর দরজা খুলে ভেতরে উঁকি দেয় ফুলবানু।সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে আবার তাকায়।
চুল এলোমেলো, ঠোঁটের পাশ কেটে রক্ত শুকিয়ে আছে, হাতে লাল লাল দাগ পড়ে গেছে, গালে একটা আচর খেয়ে কেঁটে গেছে।কাপড় একটু এলোমেলো নিচে এক দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে মহুয়া।
বিছানার উপরে তাকাতেই দম আঁটকে আসল। আজও এই ছেলেটাকে মে*রে ফেলেছে!!.
ফুলবানু দৌড়ে গিয়ে ছেলেটার নাকে হাত দিলো। না নিশ্বাস ফেলছে না। ফুলবানু রেগে মহুয়াকে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করলো। নিজের রুম থেকে চাবুক এনে ইচ্ছে মতো মারল কিন্তু মহুয়া একবারও টু শব্দ করল না। সেই আগের মতো স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। বাহির থেকে সব মেয়েরা ভয়ে গুটিয়ে গেল।
একটা রুমে হাত পা বেঁধে ফেলে রাখল মহুয়াকে এটা ওর শাস্তি। এক সপ্তাহ ওকে কোনো খাবার দেওয়া হবে না। নিজ থেকে যতক্ষন না এই কাজ করতে রাজি হইব ততক্ষণ ওর খাবার নাই।
ফুলবানু প্রতিদিন মহুয়াকে মারতে শুরু করল। এক ফুটা পানি নেই আশেপাশে । পানির পিপাসায় দম আঁটকে আসছে। একটা মেয়ে লুকিয়ে এসে ওকে এক গ্লাস পানি খাওয়াল। ওর দিকে তাকিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। মেয়েটা দেখতে খুব রূপবতী।
মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো, ‘ রাজি হইয়া যাও বইন তোমার কষ্ট আর দেখতে পারছি না।আমিও যে একদিন তোমার জায়গায় ছিলাম। আমাকেও এই ভাবে অত্যাচার করে রাজি করাইছে।’
মহুয়া কিছু বলে না, শুধু শূন্য দৃষ্টিতে মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
মেয়েটা চোখের পানি মুছে ফিসফিস করে বলে,” আমি দেখি তোমার জন্য একটু খাবার আনতে পারি কি না!”
আজ পাঁচ দিন। মহুয়ার শরীর খুব ক্লান্ত খুদার্ত চোখ বার বার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
ফুলবানু পানি এনে ওর সামনে রেখে বললো,’ তোর আশিক তোরে এখানে বেঁচে দিছে, আর কখনো আসব না। বাঁচতে চাইলে রাজি হইয়া যা। যা চাইবি তাই পাইবি শুধু কাস্টমাররে খুশি করাইলেই হইব।
চোখে পানির ছিটা পড়তে চোখ খুলে মহুয়া। উঠে দেখে হাতের পায়ের বাঁধন খুলা। দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
ফুলবানু ওর জন্য শাড়ি পাঠালো।সাথে বিভিন্ন খাবার। আজ যে ফুলবানুর খুশির দিন।মহুয়া রাজি হয়েছে।
মহুয়া শাড়িটার দিকে তাকিয়ে হাসল। এতো জলদি হার মেনে নেওয়ার মেয়ে নয় মহুয়া। লড়াই করতে হলে শক্তি প্রয়োজন সাথে বুদ্ধি। মহুয়া পালাবে,হ্যাঁ সে এই পল্লী থেকে পালাবে যেভাবেই হোক। পলাশের জন্য হলেও পালাবে, ওকে শাস্তি দিবে, এতোটা জঘন্য শাস্তি দিবে কোনো পুরুষ বিশ্বাস, ভালোবাসা নিয়ে পুতুল খেলার আগে একশো বার ভেবে নিবে।
মহুয়া শাড়ি পড়ে বের হতেই ফুলবানু খুশিতে লাল দাঁত বের করে তৃপ্তির হাসি হাসল।আজ থেকে এই পল্লী জমজমাট।
মহুয়া চুপচাপ ফুলবানুর সামনে দাঁড়াতেই। কিছু ছেলে খুলবানুর সাথে কথা বলতে আসল।
আস্তে আস্তে কিছু মেয়ের ছবি তুলে নিল। সেই মেয়েদের মধ্যে মহুয়ার ছবিও তুলা হলো। শাড়ি পড়া এই নারীকে দেখলে একটা মাতালও প্রেমে পড়তে যেন বাধ্য। সব ছেলেরা লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মহুয়ার দিকে।
ছবিগুলো কারো কাছে পাঠিয়ে ফুলবানুর সাথে কথা বললো। একটু পর কল আসলে ফুলবানু কারো সাথে ভয়ে ভয়ে কথা বললো। তারপর ছবিতে থাকা কিছু মেয়েদের ডাকল। মহুয়াকে ইশারায় দূরে চলে যেতে বললো।
মোট চৌদ্দ জন মেয়ে গাড়িতে বসালো। গাড়ি ছাড়ার আগে আবার কল আসল। একটা ছেলে দৌড়ে আবার ফুলবানুর কাছে গেল। ফুলবানু মনে মনে বিরক্ত হলেও উপরে প্লাস্টিকের হাসি ঝুলিয়ে রাখল।
ওই পাশের লোকটা এমন কাউকে চাইল যা শুনে ফুলবানু শক্ট হয়ে গেল। উনার এতোদিনের আশায় একজগ পানি ঢেলে দিলো কেউ। ফুলবানু কিছু বলার আগেই কল কেঁটে গেলো। দ্বিতীয় বার কল দিয়ে নিষেধ করার মতো সাহস ফুলবানুর নেই। অগত্যা কোনো ইচ্ছে না থাকলেও থমথমে মুখে মহুয়াকে গাড়িতে তুলে দিল। মহুয়া আশেপাশে এই পনেরো দিনে দেখা তিনটা মেয়েকে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। মেয়েরা কাঁদছে!! কই এতোদিন তো কাঁদতে দেখিনি। এমন কি জায়গা যেখানে যাচ্ছে শুনে প্রত্যাকের চোখে পানি.??
চলবে…
#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২৩
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
গাড়ি চলছে সবার মুখ বাঁধা, হাত বাঁধা।
নতুন মেয়েদের চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে আর ফুপানোর শব্দ শুনা যাচ্ছে।
মহুয়া ক্লান্ত চোখে মেয়েদের দিকে তাকালো। ওদের জন্য ভীষণ মায়া হল৷ নিজের কথা না ভেবে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো।
ইশারায় একটা মেয়েকে বললো পেছনে বাঁধা হাতটা ওর দিকে ফিরাতে।
মহুয়া নিজের অন্য দিকে ঘুরে পেছনে বাঁধা হাতগুলো দিয়ে মেয়েটার হাত খুলার চেষ্টা করল। বেশি শক্ত করে বাঁধা ছিল না খুব সহজেই খুলে ফেললো৷ একজন একজন করে সবার হাত মুখ বাঁধা খুলে ফেললো।
মহুয়াঃ বাঁচতে চাও.? পালাতে চাও.?
সব মেয়েরা চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট।
মহুয়াঃ ভয় পেও না। আমার কথামতো কাজ কর।
প্রায় তিন ঘন্টা গাড়িটা চললো। তারপর একটা ছোট গ্রামের হোটেলের সামনে গাড়িটা থামল। গাড়ির মালিক আর ছেলেগুলো খাবার খাওয়ার জন্য হোটেলে যেতেই। মহুয়া বুদ্ধি দিয়ে দরজা খুলে মেয়েগুলোকে নিয়ে নেমে গেল তখন মধ্যে রাত। এই হোটেলটা ওদের নিজের।
মহুয়া প্রথম নামল। নেমে পেছন ফিরতেই কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভয়ে বুক কেঁপে উঠল। ছেলে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মহুয়ার দিকে। রেগে মহুয়ার দিকে তেরে আসতেই মহুয়া নিজের শরীরের ওড়নাটা ফেলে দিল,ছেলেটার দিকে তাকিয়ে মুচকি লাজুক হেঁসে ছেলেটার দিকে তাকালো। ছেলেটা আবছা অন্ধকারে থমকে গেল।কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। এই আবছা অন্ধকারে মহুয়াকে দেখতে পরীর মতো লাগছে।
মহুয়া এক পা দুই পা করে পিছিয়ে গেলো ছেলেটাও এক পা দুই পা করে এগিয়ে আসছে। গাড়ির পেছনে গিয়ে মহুয়ার শরীরে রাগ চেপে বসলো। হিংস্র বাঘিনীর মতো ছেলেটার কলার ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে মাথা থেকে লম্বা পিন বের করে ছেলেটার ঘলায় ঢুকিয়ে দিয়ে ওড়না দিয়ে গলা পেচিয়ে নিলো আরও দুইটা মেয়ে ছেলেটার মাথায় ইটের ভারি মারলো সাথে সাথে ছেলেটা এখানেই শেষ।
” এটা তোরা কি করলি!! ” বলার সাথে সাথে পেছন থেকে আরেকটা মেয়ে ইট দিয়ে এই ছেলেটাকেও ভারি মারলো আর সবগুলো মেয়ে মিলে এই ছেলেটাকেও মেরে ফেললো আর একজন। ড্রাইভার ছেলেটা ভয়ে চুপসে গেলো উল্টো দিকে দৌড় দিতে গিয়ে উল্টে পড়লো, মেয়েগুলো আজ বাঘিনীর রুপ নিয়েছে ওকেও ইচ্ছে মতো মারল।
তারপর সবাই মিলে দ্রুত সেই গ্রাম থেকে বের হয়ে গেল। তিন তিনটা খুন করেও আজ ওদের নিজেদের খুনি মনে হচ্ছে না। আজ থেকে ওরা স্বাধীন, মুক্ত।
__________
বর্তমান,
কথা শেষ করে মাথা নিচু করে বসে রইলো পলাশ,রনি।
মেঘলার মুখে কোনো শব্দ নেই, চোখে পানি চিকচিক করছে। পলাশ কে কিছু না বলে ফাহিমের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ওকে নিয়ে যাওও,আমি আবার আসব।’
আহনাফ রনির মুখ চেপে ধরে বলে উঠলো, ‘ এখানেই শেষ না আরও আছে। তোর সাথে মহুয়ার কিসের সম্পর্ক.? তুই কিভাবে মহুয়াকে চিনিস.? মহুয়াকে তুলে কেন নিয়ে ছিলি.?
রনি ভয়ে ভয়ে ঢুক গিলল।
~ আমার সাথে মহুয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। ওকে প্রথম দিন দেখেই আমি প্রেমে পড়ে গিয়ে ছিলাম। ভালোবেসে ফেলেছি।
আহনাফ রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো।রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়ে রইলো রনির দিকে।
~ আমি ওর পিছু নেওয়া শুরু করি, ওকে আমার ভালোবাসা বুঝাতে চাই, একদিন খবর আসল একটা মেয়ে পাঁচটা ছেলেকে খুন করেছে তার মধ্যে আমার ভাইও ছিল। গাড়ির ড্রাইভার ছিল আমার ছোট ভাই। ভাগ্য ভালো ও বেঁচে গিয়ে ছিলো। আমি রেগে ফুলবানুর পল্লীতে গিয়ে মেয়ের ছবি দেখে অবাক হয়ে ছিলাম। ফুলবানুকে মে’রে ফেলার হুমকি সাথে পল্লীকে উড়িয়ে দেওয়ার কথা বলতেই আমাকে সব বলে দিয়ে ছিলো।
আহনাফঃ আর ওই মেয়ে গুলোকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিল.?
রনির গলা শুকিয়ে আসলো।
রনিঃ আমি জানিনা, আমাদের কাজ ছিল বসের আস্তানা পর্যন্ত মেয়ে গুলোকে পৌঁছে দেওয়া। বিভিন্ন জায়গা থাইকা মাইয়া তুলে এনে পতিতা পল্লীতে, হোটেলে না হয় বড় বসের আস্তানায় বিক্রি করি।
আহনাফঃ মহুয়া কে তুলে এনে ছিলি কেন.?
রনিঃ বড় বস মহুয়ার জন্য পুলিশ, সন্ত্রাস লাগিয়ে রেখেছে কিন্তু এখনো মহুয়ার চেহারা দেখিনি আমি ফুলবানুর কাছ থেকে সব ছবি মুছে ফেলেছি, মহুয়ার জায়গায় অন্য মাইয়ার ছবি দিয়া আসছি। মহুয়াকে আমি কাল বিয়ে করার জন্য তুলে আনছি।।
আহনাফ রেগে রড দিয়ে রনির কান বরাবর ভারি মারলো সাথে সাথে রনির কান দিয়ে রক্ত পড়ছে আর রনি সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যায়।
__________
আহনাফ হসপিটালে এসে সোফায় পাশ থেকে টেবিল সরিয়ে নিল।
মহুয়া ঠিক ১২টায় আজকে হসপিটাল আসল। আজ কলেজে যেতে হয়েছে যার জন্য লেইট।
মহুয়া ভয়ে ভয়ে আহনাফের ক্যাবিনের সামনে দাঁড়ালো
চুপচাপ দরজা খুলে ভেতরে যেতেই ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেল।
আহনাফ গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মহুয়ার দিকে। মেয়েটা যেখানে সেখানে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাবে, না হয় কিছুর সাথে উষ্ঠা খাবে, ভারি খাবে! কেন এই মেয়ে কি চোখে দেখে না!..?
মহুয়া সামনে আহনাফকে দেখে লজ্জা পেয়ে গেল। ইসস তাহলে কি ধাক্কাটা আহনাফের সাথেই খেল! কি লজ্জার বিষয় বার বার আহনাফের সামনেই কেন এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়?
~ আজ কি আর উঠবেন না.? নাকি এভাবে এখানে বসেই কাজ করার চিন্তা ভাবনা করছেন.??
মহুয়া চট জলদি উঠে দাঁড়ালো। আশেপাশে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। এখান থেকে ওর টেবিল টা কোথায়!.?
আহনাফের দিকে তাকাতেই আহনাফ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আজ আপনি ফাইল তৈরি করবেন, ২টা থেকে রোগী আশা শুরু হবে রাত ৮টা পর্যন্ত দেখব।
মহুয়া কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
~ আমি কি বলেছি শুনতে পাচ্ছেন.?
মহুয়াঃ জ..জ্বি।
আহনাফঃ গুড এবার কিছু খেয়ে তৈরি হন। আর চাচার কাছ থেকে কাজটা বুঝে নেন।
মহুয়া ক্যাবিন থেকে বের হয়ে যেতেই আহনাফ দরজার দিকে তাকালো। কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসল।
মহুয়া ক্যান্টিনে চুপচাপ কিছু সময় বসে রইল। ডাক্তার সোনিয়া আসল ক্যান্টিনে। মহুয়ার পাশে এসে বসল।
মহুয়া বেশ কয়েক বার এই ডাক্তার কে আহনাফের সাথে কথা বলতে দেখেছে।
সোনিয়াঃ কেমন আছো মহুয়া.?
মহুয়াঃ আলহামদুলিল্লাহ মেম,আপনি.?
সোনিয়াঃ মেম না বলে আপু বল শুনতে ভালো লাগবে।
মহুয়া হাসল। মেয়েটার কথার মধ্যে খুবই মিষ্টি একটা ভাব আছে। এই যে কতোবড় একটা ডাক্তার হওয়ার শর্তেও কতো সুন্দর ভাবে কথা বলছে।
এখানে তাদের মধ্যে টুকটাক কথা হল৷
২টার আগেই মানুষ এসে বসে আছে। সিরিয়াল অনুযায়ী মহুয়া ফাইল তৈরি করছে।
ঘন্টা খানেক ঠিকি ছিল। প্রথম প্রথম শুধু মেয়ে,মহিলা আসলেও এখন ছেলে আশা শুরু করেছে।দেখতে দেখতে ওয়েটিং রুম ভর্তি হয়ে গেল। মহুয়া চোখ তুলে চারপাশে তাকিয়ে শুধু ছেলেই দেখতে পাচ্ছে৷ ওর আশেপাশেও এসে ছেলেরা দাঁড়াচ্ছে মহুয়া মাথা নিচু করে নাম্বার, নাম ডাকছে আর ফাইল তৈরি করছে।
এখানে প্রায় ৮০% ছেলে এই মাত্র এসেছে। একজন ছেলের সাথে ৭-৮ জন বন্ধু এসেছে। বোনের সাথে ভাই, প্রথম তো ছেলে, মেয়ে, একাই এসে ছিল আস্তে আস্তে তাদের চোদ্দগুষ্টির যত ছেলে আছে সব চলে আসছে।
দরজায় দাঁড়ানো লোকটা আহনাফ কে বলে উঠলো ” স্যার একটু তারাতাড়ি করে দেখবেন,না মানে বাহিরে অনেক ভীড়।এই প্রথম কোনো পুরুষ ডাক্তারের কাছে এতো ছেলে রোগী আসতে দেখলাম। এরা সবাই একদিনে কিভাবে অসুস্থ হল? ”
আহনাফ সিসি ক্যামেরা দিয়ে বাহিরের অবস্থা দেখে হাসল।
আসলে আহনাফ কি করতে চাচ্ছে.??
মহুয়ার অস্বস্তি বাড়তে লাগলো। মাথা উপরে তুলে তাকাতেই ছেলেদের এমন দৃষ্টি ওর অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। দুই বার ধমক ও দিয়েছে দূরে গিয়ে দাঁড়ান আপনারা। যারা রোগী একমাত্র তারা ছাড়া বাকিরা নিচ তলায় অপেক্ষা করুন।আপনাদের জন্য রোগীদের সমস্যা হচ্ছে।
রাত ৯টায় মহুয়া বাড়িতে ফিরলো তাও একা। রিক্সা দিয়ে আসার সময় ভীষণ ভয় পেয়ে ছিল। আজ ওর জীবনের আবারও একটা ভয়ংকর দিন গেল।
মহুয়া বাসায় এসেই ঠান্ডার মধ্যে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।
ছোঁয়া নিষেধ করল গোসল করতে কিন্তু আজ মহুয়া ছোঁয়ার সাথেও কোনো কথা বললো না।
ওয়াশরুমে প্রায় এক ঘন্টা ভিজল, হঠাৎ কান্নায় ভেঙে পড়ল। আমাদের আশেপাশে নরপিশাচদের আনাগোনায় মুখরিত। মানুষ রুপি পিশাচ এরা। সাথে সাথে ভীষণ রাগ হল আহনাফের উপর।
মহুয়া বের হতেই ছোঁয়া চমকে ওর গালে হাত রেখে বলে উঠলো, ‘ মহুয়া তুই ঠিক আছিস।’
মহুয়াঃ হুম ঠিক আছি।
ছোঁয়াঃ একদম তুই ঠিক নেই। কিছু কি হয়েছে.??
মহুয়াঃ না..
ছোঁয়াঃ তোর কন্ঠ এমন লাগছে কেন.?
মহুয়াঃ ভালো লাগছে না, বলেই ব্যালকনিতে চলে গেল।
ছোঁয়া মহুয়াকে টেনে রুমে এনে বিছানায় বসিয়ে কাঁথা গায়ে জড়িয়ে বললো,’ চুপচাপ বসে থাক আমি এখনি খাবার নিয়ে আসছি।তোকে দেখেই মনে হচ্ছে কিছু খাসনি,মুখটা কেমন এই টুকু হয়ে গেছে।
মহুয়া ছোয়ার চিন্তিত মুখটার দিকে তাকিয়ে হাসল।
ছোয়া দ্রুত নিচে আসতে গিয়ে হুঁচট খেয়ে পড়তে নিলে কেউ একজন সুন্দর করে ওর কোমর জড়িয়ে বাঁচিয়ে নেয়।
ছোঁয়া ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।এই বুঝি কোমর গেলরেএএগগ।
কোমরে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই চোখ খুলে সামনে তাকায়। নিজের সামনে অপরিচিত ছেলে দেখে ভয়ে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে যায়।
~ এই জন্যই কারো সাহায্য করতে নেই। সাহায্য করলাম আর আপনি আমাকে ধাক্কা মারলেন!..
ছোঁয়াঃ তো কি আপনাকে আঠার মতো জড়িয়ে রাখব.?
ছেলেটা লজ্জা পাওয়ার মতো মুখ করে বললো,’ রাখতে পারেন।’
” সাজ্জাদ!! ”
কারো গম্ভীর কণ্ঠ পেতেই সাজ্জাদ ছেলেটা বিরক্ত হয়ে পেছনে ফিরে।
সাজ্জাদঃ তোর আর আসার সময় হলো না।
নির্জন ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে রেগে বলে উঠলো, ‘ এখানে সং সেজে দাঁড়িয়ে আছিস কেন.?? যা নিজের কাজে।’
অচেনা কারো সামনে ধমক খেয়ে ইনোসেন্ট মুখ করে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল ছোঁয়া। এই নির্জনের বাচ্চা সব সময় এমন করে।
নির্জন সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ তুই ওকে কেন ধরে ছিস.?’
সাজ্জাদঃ কেন তুই কি চোখে দেখিসনি কিউট বাচ্চাটা নিচে পড়ে যাচ্ছিল।
নির্জনঃ তাই বলে তোকে ধরতে হবে.? পড়ে যাক, কোমর ভেঙে যাক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব ঠিক হয়ে যাবে। তুই কেন ধরতে যাবি, নেক্সট ও পড়ে যাক, হাত,পা, কোমর ভেঙে যাক হাতেও স্পর্শ করবি না।”
সাজ্জাদ কিছু সময় নির্জনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর হাসতে হাসতে বলে উঠলো ” জ্বলে.. জ্বলে… জ্ব….লেএএএ..”
নির্জন সাজ্জাদের দিকে রেগে তাকিয়ে আবার নিজেই হেঁসে ফেললো। সাজ্জাদ খুব ভালো করেই জানে নির্জন ছোঁয়াকে পছন্দ করে, ছবিও দেখে ছিল একবার চিনতে একদম ভুল করেনি এটাই ছোঁয়া।
সাজ্জাদ নির্জনের অনলাইন বন্ধু, এই বাসায় কখনো আসেনি, তবে সাজ্জাদকে নিয়ে অনেক কাহিনী শুনিয়েছে সবাইকে নির্জন, মুখে মুখে প্রায় সবাই চিনে সাজ্জাদকে। অনলাইনেই এদের পরিচয় তারপর বন্ধুত্ব আর এখন এরাএকজন আরেকজনকে নিজের ভাই , বন্ধু সব মনে করে।
সাজ্জাদ ড্রয়িং রুমে সবার সাথে পরিচিত হয়ে নির্জনের সাথে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার সময় দরজায় চোখ আঁটকে যায়। শ্যামবর্ন গায়ের রং, একটা শাড়ি পড়া মেয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে চুপচাপ হেঁটে এদিকে আসছে, মুখে কোনো সাজসজ্জার ছিটেফোঁটাও নেই, চুল গুলো খোলা কি অপরুপ সুন্দরী লাগছে। লোকে বলে চাপা গায়ের রঙে নাকি মেয়েদের সুন্দর লাগে না সাজ্জাদ তো চোখ সরাতেই পারছে না।
সাজ্জাদ কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নির্জন নেমে এসে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে.??
সাজ্জাদ ইশারায় জিজ্ঞেস করল , মেয়েটা কে..?’
নির্জনঃ মেঘলা ভাবি, তোকে তো বলে ছিলাম সবটা।
সাজ্জাদ অবিশ্বাস্য চোখে নির্জনের দিকে তাকিয়ে আবার মেঘলার দিকে তাকালো। এতো সুন্দর একটা মেয়ে বস্তির ছিনতাইকারী, চোর!!?? বিশ্বাস হলো না সাজ্জাদের।
সাজ্জাদ মনে মনে হেঁসে বলে উঠলো, “‘ আপনি বস্তির মেয়ে হোন বা ছিনতাইকারী আমার আপনাকেই চাই মেঘলা”
চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।