#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_১৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
ছোঁয়া বই টেবিলের উপর রেখে রুম থেকে কিছু একটা হাতে নিয়ে বের হয়ে নির্জনের রুমের সামনে দাঁড়ালো।
দরজা খুলে ভেতর দেখে নিলো কেউ আছে কিনা।
ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দে বুঝে গেলো নির্জন ওয়াশরুমে।
শয়তানি একটা হাসি দিয়ে আশেপাশে তাকালো । বিছানার উপর নির্জনের তোয়ালে রাখা।
ছোঁয়া এই সুযোগটা সুন্দর করে কাজে লাগালো।
নির্জন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তোয়ালে হাতে নিয়ে মুখ মুছে হাত, ঘার, পা মুছে আবার বিছানায় রাখলো। মোবাইল হাতে নিয়ে বিছানায় শুয়ে ফেসবুকে স্কল করলো।
মুখে এক দুই বার চুলকিয়ে নিল। আস্তে আস্তে হাতে,পায়ে,ঘারে,মুখে প্রচুর চুলকাতে শুরু করলো৷ নির্জন শুয়া থেকে উঠে বসে পড়লো হাত দিয়ে চুলকিয়ে হচ্ছে না। নির্জনের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। শরীরে কেমন ছোট ছোট কি জেনো বের হচ্ছে আর চুলকানো দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
এক পর্যায়ে নির্জন সহ্য করতে না পেরে হালিমা বেগম কে ডাকতে লাগলো। নির্জনের এমন চিৎকার চেচামেচি শুনে সবাই দৌড়ে রুমে আসলো।
ছোঁয়া মনের খুশিতে মোবাইলে DJ গান লাগিয়ে রুম দরজা বন্ধ করে নাচতে লাগলো। প্রতিশোধ নিতে পেরেছে সে।
হালিমা বেগম কান্না জুড়ে দিলেন ছেলের অবস্থা দেখে। আনোয়ার চৌধুরী নির্জনের অবস্থা খারাপ থেকে আরও খারাপ দেখে জলদি ওকে গাড়িতে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য বের হলো। গাড়িতে নির্জন ছটফট করছে। এমনিতেই নির্জনের শরীরে এলার্জি বেশি , আজেবাজে কিছু খেলে,একটু ময়লায় গেলেই এলার্জি দেখা দেয় আর ছোঁয়া তো চুলকানোর পাউডার সবটা তোয়ালে আর বিছানায় ছিটিয়ে দিয়েছে।
ছোঁয়া তাকিয়ে রইলো নির্জনের গাড়ি যাওয়ার দিকে ওর চোখে পানি টলমল করছে। ভাবতেও পারিনি নির্জন এতোটা অসুস্থ হয়ে যাবে। সে তো একটু মজা করার জন্য এমনটা করেছে নির্জন এতোটা কষ্ট পাবে ভাবতে পারিনি। চোখের পানি গাল বেয়ে পরছে। ওর কি একবার হসপিটাল যাওয়া দরকার.? কি অবস্থা এখন নির্জনের.??? ওর ভীষণ কান্না পাচ্ছে আজ নির্জনের কিছু হয়ে গেলে!! এইসব ভেবে হেঁচকি তুলে কান্না শুরু করলো।
বাড়িতে একমাত্র ছোঁয়া ছাড়া আর কেউ নেই সবাই হসপিটাল গেছে হালিমা বেগমের কান্না কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। মিরাজ চৌধুরীও হসপিটাল পৌঁছে গেছে ছেলে দুষ্টু হলেও মা বাবার কাছে বেঁচে থাকার একমাত্র কারন। মা বাবার কাছে দুষ্টু মনে হয় না সব সময় তাদের কাছে আদুরে রাজপুত্রের মতোই থাকে।
হসপিটাল আনার পর নির্জনের অবস্থা দেখে আহনাফ ভয় পেয়ে গেলো তাও নিজেকে সামলে বলে উঠলো, ‘ ওর এই অবস্থা কিভাবে হলো.??’
নির্জনের শরীরে একটা ইনজেকশন পোষ করে আহনাফ চিকিৎসা শুরু করলো।
নির্জনের শরীর লাল হয়ে গেছে।
আহনাফ বের হয়ে বললো,’ টেনশন না করে একজন থেকে বাকিরা বাসায় চলে যান নির্জনকে ঘুমের মেডিসিন খাইয়েছি সে এখন ঘুমাবে, ঘুম থেকে উঠে ঠিক হয়ে যাবে। আমি যা যা প্রয়োজন করে দিয়েছি।ইনশাআল্লাহ আক রাতের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবে।
পেছন থেকে ছোঁয়া বলে উঠলো, ‘ ভাই আমি থাকি.? ছোঁয়াও চলে এসেছে।
আহনাফঃ তোর তো কাল এক্সাম এখন বাসায় যা। তুই ছাড়াও অনেকে আছে।
ছোঁয়াঃ বড়,ছোটো মামী, আম্মু,নানাভাই কেউ থাকতে পারবে না। কিছু হবে না একদিনে তো আর সব মুখস্থ করতে পারবো না। আমি আজ রাত থেকে কাল সকালে চলে যাবো।
সবাই চেষ্টা করেও ছোঁয়া কে নিতে পারলো না। ছোঁয়া নির্জনের ক্যাবিনের সামনে চেয়ারে বসে রইলো। কান্না করে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।
আহনাফ বিরক্ত হয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো। চার ঘন্টা হয়ে গেছে মহুয়া এখনো আসেনি। অথচ বাড়ি থেকে আহনাফের আগে বের হয়েছে। আহনাফ ছোঁয়া কে ডাকলো।
ছোঁয়াঃ বলো ভাইয়া।
আহনাফঃ মহুয়া কি আজ কলেজ গিয়েছে.?
ছোঁয়াঃ না ভাইয়া। ছোঁয়া তো হসপিটাল থাকার কথা।
আহনাফঃ চার ঘন্টা হয়ে গেছে এখনো আসেনি।
ছোঁয়াঃ কি বলো!! ওর কোনো বিপদ হলো না তো.??
আহনাফের মনও কেমন করে উঠলো ‘ কোনো বিপদে পরলো না তো.??’
আহনাফঃ ওর কি কোনো ফ্রেন্ড আছে.? ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছে.?
ছোঁয়াঃ না ভাইয়া ওর কোনো ফ্রেন্ড নেই কলেজে। ও কারো সাথেই কথা বলে না। প্লিজ ভাইয়া খুঁজ নাও মহুয়া কোথায় আমার ভীষণ টেনশন হচ্ছে।
আহনাফ বাড়িতে কল দিয়ে মহুয়ার কথা জিজ্ঞেস করলো৷
আহনাফ চিন্তিত হয়ে মোবাইল রেখে চোখ বন্ধ করে ছোঁয়া কে নির্জনের কাছে যেতে বললো।
ছোঁয়াঃ ভাই মহুয়া.?
আহনাফঃ তোর ওকে নিয়ে টেনশন করতে হবে না। তুই নির্জনের পাশে থাক আর কোনো সমস্যা হলে আমি ডাক্তার সোনিয়া কে বলে যাবো।
____
আহনাফ গাড়িতে বসে আছে সে জানে না কোথায় যাচ্ছে। তবে বাড়ি থেকে হসপিটাল ভালো করে রাস্তায় মহুয়াকে খুঁজলো না পেয়ে কলেজ গেলো। কলেজ না পেয়ে ওর নাম্বারে কল দিলো মোবাইল বন্ধ। মহুয়ার কোনো খোঁজ না পেয়ে আনোয়ার চৌধুরীর কাছ থেকে ওর নিজ বাড়ির নাম্বার চাইলো। আনোয়ার চৌধুরী ভড়কে গেলেন উনার কাছে তো মহুয়ার বাড়ির কোনো ঠিকানা বা নাম্বার নেই।
আনোয়ার চৌধুরী আমতা আমতা করে বললেন,’ নাম্বার হারিয়ে ফেলেছেন।’
আহনাফ ভীষণ বিরক্ত হলো। এটা কোনো কথা একটা নাম্বার রাখতে পারো না!!
আনোয়ার চৌধুরী অবাক হচ্ছে আহনাফের ব্যাবহারে। আহনাফ পাগলের মতো মহুয়াকে খুঁজছে। মনে হচ্ছে ওর কোনো মূলবান কিছু হারিয়ে গেছে
ছয় ঘন্টা পেরিয়ে গেছে মহুয়ার কোনো খবর নেই৷ এর মধ্যে মেঘলা মাত্র বাড়িতে আসলো। কারো দিকে না তাকিয়ে নিজের মতো নিজের রুমে চলে গেলো। এই বাড়ির কোনো খবর ও জানে না। সকাল থেকে একটা কাজে আঁটকে গিয়ে ছিলো।এখন সে নিজেই ভীষণ ক্লান্ত।
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো অনেক খিদে পেয়েছে।
রান্না ঘরের দিকে যাওয়ার সময় দেখলো বাড়িতে পুলিশ। কৌতুহলে সামনে গেলো দেখতে একজন পুলিশ দেখেই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে আড়ালে চলে গেলো। আর একটু হলে সবার সামনে ধরে পড়ে যেতো। কিন্তু উনি এখানে কেনো..??
মেঘলা আড়াল থেকে ওদের সব কথা শুনলো। মহুয়াকে ৭ঘন্টা ধরে পাওয়া যাচ্ছে না শুনেই মেঘলা চমকে উঠলো। মহুয়ার বিষয় সবটা না জানলে অনেকটাই জানে। মহুয়ার যাওয়ার মতো তেমন কোনো জায়গা নেই। তাহলে কি মহুয়ার খুঁজ ওরা পেয়ে গেছে..? এটা কিভাবে সম্ভব! মহুয়ার খুঁজ করা বা ওকে চিনে এমন সবাই তো জেলে, ফুলবানু আর ওর দল-বল সবাই জেলে তাহলে মহুয়াকে নিলো কে.??? অবশ্য মহুয়া নিজেও জানেনা ওরা যে জেলে এখন।
মেঘলা দেরি না করে নিজের রুমে চলে গেলো। শার্ট, প্যান্ট মুখে মাক্স, মাথায় ক্যাপ পড়ে বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো।
বাড়ির সবাই খুব চিন্তিত মহুয়াকে নিয়ে । এতোক্ষন নির্জনকে নিয়ে চিন্তিত ছিলো আর এখন মহুয়াকে নিয়ে।
আহনাফ রাস্তায় মহুয়ার জুতা দেখে হাতে নেয়। এখানে জুতা কেনো.?? এটা তো মহুয়ার!! আহনাফ আশেপাশে তাকায় রাস্তার পাশে সিসিটিভি আছে কিনা.?
সিসিটিভি অফিসে গিয়ে চেক দিয়ে দেখতে পায় ” কয়েকজন ছেলে জোর করে মহুয়াকে কালো একটা গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে। ”
গাড়ির নং এবং লাস্ট লোকেশন দেখে আহনাফ নিজেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। সাথে পুলিশদের কল দিয়ে লোকেশন জানিয়ে দেয়।
আহনাফ গাড়ি থেকে নেমে একটা অন্ধকার গলিতে ঢুকে পড়লো। সন্ধ্যা হয়ে গেছে সেই ৮টায় মহুয়া কিডন্যাপ হয়েছে আর এখন বাজে সন্ধ্যা ৭টা।
অন্ধকার গলি একটু হাঁটতেই আলোর দেখা মিলল। কিছু লোক গোল করে বসে জুয়া খেলছে, কিছু লোক খেলা দেখছে আর সিগারেট টানছে, কেউ বা নেশা করে পড়ে আছে। আহনাফ এই পর্যন্ত এসে থেমে গেলো এখন সে কোথায় খুঁজবে.?? চারপাশে ছোটো ছোটো ঘর কোথায় আছে মহুয়া.? আর ঠিক আছে তো.?? বুক ধুকপুক করছে, মাথা ঝিমঝিম করছে,হাত, পা কাঁপছে।
আহনাফ কিছু লোক দেখে আড়ালে লুকিয়ে গেলো।
একটা লোক আরেকটা কে বলছে,’ মাইয়াডারে দেখে আয় ভাই একটু পর আসবো। ‘
~ ভাই মাইয়াডা পুরাই আগুন একটু ধরে দেখি।
~ একদম এই ভুল করলে ভাই জিন্দা কবর দিয়ে ফেলবো এই পাখি অন্য কারো শিকার।
~ ভাই এতো সুন্দর টকটকে ফল সামনে দেখলে…
~ আর একটা কথাও মুখ থাক্কা বার করবি না, মুখ বন্ধ করে বাহিরে দাড়ায় থাক।
~ ভাই দাঁড়াইলেই কি আর না দাঁড়াইলেই কি রনি ভাইয়ের আস্তানায় পা রাখার সাহস কারো নাই।
আহনাফ হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো। রাগে ইচ্ছে করছে সব গুলোর জীবন নিয়ে নিতে। ইতিমধ্যে আহনাফের কিছু লোক চলে আসলো। আহনাফ ইশারা দিতেই সবগুলো লুকিয়ে গেলো আর একটা একটা করে নিয়ে আড়ালে চলে যাচ্ছে।
মহুয়ার সামনে কেউ হাঁটু গেড়ে বসে ওর জ্ঞান ফিরানোর চেষ্টা করলো। মহুয়ার পায়ের বাঁধন খুলে হাতের বাঁধন খুলবে তখনি মনে হলো ঘরে কেউ আসছে। খুব সাবধানে দরজার পেছনে লুকিয়ে গেলো।
লোকটা ঘরে ঢুকে লাইট জ্বেলে মহুয়ার মুখে পানি মারলো। মহুয়া চোখ পিটপিট করে খুলতেই বিশ্রী একটা হাসি দিয়ে ময়লা দাঁত গুলো বের করে মহুয়ার দিকে তাকালো।
মহুয়ার মাথা ঘুরছে।সারাদিন একটু পানিও খাওয়া হয়নি, হঠাৎ করে তার সেই আগের বন্দি অবস্থার কথা মনে পড়লো, মনে পড়লো সেই অসহ্য যন্ত্রণা আর মারের কথা, এভাবে হাত পা বাঁধা অবস্থায় তিনদিন ছিলো এক ফুটা পানির জন্য কতো কাতরেছে। ওইসব মনে হতেই শরীর কাঁপতে লাগলো। চোখ ঝাপসা হয়ে আবার জ্ঞান হারালো৷ এবার হয়তো তার মুক্তি নেই, সে আগের মতো মনে শক্তি পাচ্ছে না, ওর ভাগ্যে আসলেই এই জীবন লেখা হয়ে গেছে ও পালিয়ে বেড়াবে কতো দিন..???? পালিয়ে যাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ! আর কেউ হয়তো আসবেও না। ওলকে বাঁচাতে তখনো কেউ আসেনি নিজেকে লড়তে হয়েছে। এবার কি সে পারবে.? হয়তো পারবে না মনে শক্তি নেই এখানেই ওর হার।
লোকটা মহুয়াকে আবার জ্ঞান হারাতে দেখে বিরক্ত হলো। প্রতি সপ্তাহে এভাবে পাঁচ থেকে সাতজন মাইয়া এমনে তুইললা আনে তবে এবারের মেয়েটারে মনে হয় বেশিই গুরুত্ব দেওয়া হইতাছে কারন এই মাইয়ারে বড় বসের কাছে পাঠানো হইব, বলে মুখে বিরক্তির ছাপ এনে।
লোকটা মহুয়ার দিকে তাকিয়ে পেছনে ফিরতেই কেউ ওর মুখে স্প্রে মারে এটা অজ্ঞান হওয়ার স্প্রে ছিলো লোকটা সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায়। এখানে আসার সময় দশজনকে অজ্ঞান করে এসেছে।
মহুয়ার মুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফিরাতে চেষ্টা করলো। মহুয়া ঝাপসা চোখে তাকালো। সে অজ্ঞান হয়নি তখন শুধু ক্লান্ত শরীরে চোখ বন্ধ করে নিয়ে ছিলো।
মহুয়ার হাতের বাঁধন খুলে হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসতে নিলে মহুয়া হাত ধরা ব্যক্তির দিকে তাকালো সারা শরীর ডাকা চোখও ক্যাপের কারনে ডেকে আছে।কে এই আগুন্তকঃ? ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে.? মহুয়ার চোখ গেলো কোমরের দিকে পকেট থেকে একটা কার্ড অর্ধেক বের হয়ে আছে যেখানে লেখা CID এর একটু নিচে নামের পাশে লেখা ” মেঘ” আর কিছু পড়ার আগেই পায়ের শব্দ পেয়ে মহুয়াকে ধাক্কা দিয়ে বসিয়ে ব্যক্তিটি লুকিয়ে গেলো।
মহুয়া ধাক্কায় ভীষণ ব্যাথাও পেয়েছে তাও চোখের সামনে আলো দেখতে পাচ্ছে মুক্তির পথ দেখতে পাচ্ছে। কেউ তো এসেছে ওকে বাঁচাতে!
দরজা দিয়ে আর কেউ নয় আহনাফ প্রবেশ করলো। দরজার ভেতরে এসে দাঁড়িয়ে গেলো আহনাফ। মহুয়াকে দেখেই দ্রুত এসে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো থমকে গেলো মহুয়া। আহনাফ শান্ত হলো, বুকের ভেতর জ্বলতে থাকা আগুন নিভল।মস্তিষ্ক ঠান্ডা হলো কিন্তু মহুয়াকে ছাড়লো না।
মহুয়ার মনে হলো সে স্বপ্ন দেখছে এখানে আহনাফ কিভাবে আসলো.? আর এভাবে জড়িয়ে ধরলো কেনো.??
বেশি কিছু ভাবতে পারলো না তার আগেই জ্ঞান হারিয়ে আহনাফের বুকের সাথে মিশে রইলো।
” আজ থেকে তুমি আমার বাহুডোরে বন্দী হয়ে গেলে মেহুরাণী,তোমার অতীত আর এই অন্ধকার জীবন থেকে খুব জলদি মুক্তি পাবে শুধু সূর্যোদয়ের অপেক্ষা ”
চলবে……
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।
#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_১৯
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
মেঘলার মাথার চারপাশ ঘুরছে তাও সে থামছে না, দ্রুত পা ফেলছে সাথে এক টাকাও নেই যে গাড়ি করে বাসায় যাবে। অনেকটা দূর আসার পর দূর থেকে একটা গাড়ি আসতে দেখে ঝাপসা চোখে তাকালো, হাত তুলে থামার ইশারা দিলো কিন্তু গাড়িটা থামল না, দ্রুত ওর পাশ দিয়ে চলে যেতেই মেঘলা মাথা ঘুরে পড়ে গেলো রাস্তার পাশে।
গাড়িটা কিছু দূর গিয়ে আবার ফিরে আসলো। গাড়ি থেকে নেমে আসলো শ্রাবণ। গাড়িটাতে শ্রাবণ ছিলো প্রথম খেয়াল করেনি পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হলো মেঘলাকে দেখেছে। একবার মন বললো ” মেঘলা হলে ওর কি..? চলে যাবে, আবার মনে হলো, মেয়েটা এতো রাতে এখানে কি করছে.? বিপদে পড়েনি ত.? বিপদে না পড়লেও এখানে আর কিছু সময় থাকলে বিপদে পড়ে যাবে, এই জায়গাটা একদম নিরাপদ নয় মেয়েদের জন্য । এইসব ভাবতে ভাবতে আনমনে আবারও ফিরে আসলো।
চুল গুলো সামনে এসে মুখ ঢেকে আছে৷ শ্রাবণ দ্বিধায় পরে গেলো! আসলেই কি এটা মেঘলা নাকি অন্য কেউ.? সে কি মেয়েটাকে রেখে চলে যাবে.? কিন্তু মন সায় দিলো না। কিন্তু এখনি তো দেখলো দাঁড়িয়ে আছে, মেয়েটা কি অভিনয় করছে.??
শ্রাবণ মেয়েটার মুখ থেকে চুল সরাতেই চোখ বড় হয়ে গেলো। বুকের ভেতর ধক করে সুচের মতো কিছু একটা বিঁধল। মেঘলার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। দাঁতের সাথে দাঁত খিঁচে রেখেছে বাহিরে প্রচুর ঠান্ডা বাতাস বইতে এখনি বৃষ্টিও নামতে পারে।
শ্রাবণ কোনো কিছু না ভেবে মেঘলাকে কোলে তুলে নিলো। গাড়িতে বসিয়ে ড্রাইভিং সিটে নিজে বসলো, পাশেই মেঘলা। দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিলো হসপিটালের দিকে। বেশি সময় লাগলো না পাশেই একটা হসপিটাল ছিলো সেখানে নিয়ে গেলো।
___________
নির্জনের ঘুম ভাঙার পর থেকেই দেখছে ছোঁয়া ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কাঁদছে আর নাক টানছে।
নির্জন খুব ভালো করে জানে ওর এই অবস্থার জন্য ছোঁয়া দায়ী।
ছোঁয়া নির্জনের দিকে স্যুপ এগিয়ে দিলো।
নির্জন ওর দিকে না তাকিয়ে বললো,’ খাব না।’
ছোঁয়া তাও চামচে স্যুপ নিয়ে ওর মুখের সামনে ধরল।
নির্জনঃ ফ্যাঁচফ্যাঁচ করা বন্ধ কর আমি মরে যাইনি যে তোর অভিনয় করতে হবে।
ছোঁয়াঃ আমার এতো যত্নের চোখের পানি পড়ছে আর তুই সান্ত্বনার জায়গায় বলতেছস আমি অভিনয় করি!.?
নির্জনঃ যেটা সত্যি সেটাই বলেছি।এখন আমার সামনে থেকে যা। এখানে কেন তুই.? আম্মু,ভাবি,ফুপি,বড় আম্মু তারা কই.?
ছোঁয়াঃ আমি তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি।
নির্জনঃ গুড, আমিও এখন বাসায় যাব।
ছোঁয়াঃ একদম না তুমি এখানে থাকবে, আজ রাত থাকতেই হবে আরও চিকিৎসা বাকি।
নির্জন একবারও ছোঁয়ার দিকে তাকায়নি।
ছোঁয়া বুঝতে পেরেছে নির্জন বুঝে গেছে ছোঁয়ার জন্য ওর এই অবস্থা।
ছোঁয়াঃ সরি নির্জন ভাইয়া।
নির্জন উঠে নিজের শার্ট ঠিক করে মোবাইল হাতে নিলো।
ছোঁয়াঃ তুমি কোথায় যাচ্ছ। চুপচাপ শুয়ে পড়।তোমার শরীর এখনো ঠিক হয়নি। ভাইয়া চলে আসবে এখনি আমি ডাক্তার আপুে ডাকছি। তোমার মেডিসিন খাওয়া বাকি।
নির্জনঃ আমাকে নিয়ে তোর ভাবতে হবে না। নাকি এখানেও আমাকে মা-রার প্লেন কষে রেখেছিস! সেই জন্য আমাকে রাখার এতো তারা।
ছোঁয়া হেঁচকি তুলে কান্না শুরু করলো।
~ আমার ভুল হয়ে গেছে ভাইয়া।
নির্জন দরজা টেনে বের হয়ে যেতে নিলে ছোঁয়া পেছন থেকে শার্ট খামচে ধরলো।
নির্জন থামলো পেছনে না ফিরে বললো,’ শার্ট ছাড় ছোঁয়া আমার জরুরি কাজ আছে যেতে হবে।’
ছোঁয়া হেঁচকি তুলতে তুলতে বললো,’ এতো রাতে কিসের কাজ!.? কোথাও যাবে না তুমি..।
নির্জনঃ এমন ভাব করছিস যেনো আমি মরে যাচ্ছি নাকি সবাইকে বলে দিব সেই ভয় পাচ্ছিস!.? সবাইকে বুঝাতে চাচ্ছিস আমার প্রতি তোর ভালোবাসা ভীষণ গভীর! আমার জন্য তুই খুব চিন্তা করিস!।
ছোঁয়া মাথা নিচু করে রেখেছে। সে তো মজা করে এমনটা করে ছিলো। ও তো নির্জনকে এতোটা কষ্ট দিতে চায়নি। এখনো নির্জনের শরীরে ছোটো ছোটো লাল লাল হয়ে আছে।
নির্জনঃ শার্ট ছাড়।
ছোঁয়াঃ না।
নির্জন বিরক্ত হয়ে পেছন ফিরলো, ছোঁয়ার দিকে তাকাতেই বুকটা কেঁপে উঠল। কান্না করে চোখ মুখের কি অবস্থা করেছে! নির্জন নিজেও জানে ছোঁয়া মজা করে এমন করেছে। ছোটো থেকেই ছোঁয়া হাজার ঝগড়া করলেও নির্জনের অসুখ হলে, খেলতে গিয়ে ব্যাথা পেয়ে আসলে, কলেজে ছেলেদের সাথে ঝামেলা, মারামারি করে আসলে ছোঁয়া নির্জনের ব্যথায় নিজে কান্না করে ফেলত। যত্ন করে খাবার মেডিসিন এগিয়ে দিত, আবার মিনিটও যেত না দুইজন ঝগড়া শুরু করতো।
নির্জন ছোঁয়ার একদম কাছে এসে শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ উপরের অসুখ সরাতে এতো ব্যস্ত,কিন্তু ভেতরের অসুখে যে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি সেই খবর কি রাখিস..?’
ছোঁয়ার কান্না বন্ধ হয়ে গেলো। অবাক দৃষ্টিতে তাকালো নির্জনের দিকে। কথাটাতে কি কিছু ছিল!?.
নির্জন ছোঁয়াকে অবাক করে দিয়ে, ওর হাত নিয়ে নিজের বুকের পাশে রেখে বলে উঠলো, ‘ আমি সুস্থ হতে চাই ভেতর থেকে ছোঁয়া, না হয় এই অসুখ দিন দিন বেড়েই চলবে আমার হৃদয়ে, মনে,শরীরে, তুই কি আমার ডাক্তার হবি..?’
ছোঁয়া সেই আগের মতোই তাকিয়ে আছে। সে কি বলবে.?? নির্জনের ভেতরে কি রোগ.? কোনো বড় ধরনের রোগ নয়তো.?? ছোঁয়া ত ডাক্তার নয়!।
ছোঁয়া কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই নির্জন চলে গেলো। ছোঁয়া পিছু ডাকতে গিয়েও থেমে গেল। কি একটা মনে করে ছুটল নির্জনের পিছু কিন্তু পেল না। কোথায় হারিয়ে গেলো.? এখনই তো এখানে ছিল!!.? মাথায় হাজার চিন্তা নিয়ে বসে পড়লো। নির্জনের কি রোগ হয়েছে.?? ওকে যেভাবেই হোক আহনাফের কাছে আনতে হবে। ভালো কিছু টেস্ট করাতে হবে। ভালো চিকিৎসা দিলে নির্জন সুস্থ হয়ে যাবে, দরকার হলে দেশের বাহিরে নিয়ে চিকিৎসা করবে। ছোঁয়া যেভাবেই হোক নির্জনের অসুখ সারিয়ে সুস্থ করে তুলবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো।
_________
মহুয়ার জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে অচেনা রুমে দেখে ধীরে ধীরে উঠে বসলো। শরীর দূর্বল লাগছে সারাদিন পানিও খাওয়া পড়েনি যার জন্য শরীর অনেকটা দূর্বল।
মহুয়া আশেপাশে ভালো করে তাকিয়ে অবাক হলো এটা আহনাফের রুম। বেশ কয়েক বার এই রুমে এসেছে সে যার জন্য চিনতে ভুল হলো না। কিন্তু এই রুমে কেনো.?? সারাদিনের সব কিছু মনে পড়লো এক এক করে তখন ভয় পেলেও এখন ভয় করছে না। শেষ সময় আহনাফ ওকে জড়িয়ে ধরে ছিলো। ভাবতে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। নিশ্চয়ই সবাই অনেক খুঁজেছে ওকে, আহনাফ হয়তো বুঝতে পেরেছিল মহুয়া পড়ে যাবে তাই জড়িয়ে ধরে ছিলো। হাজার কিছু ভেবে এটাকে সাধারণ ভাবে উড়িয়ে দিলো। ধীর ধীরে বিছানা থেকে নিচে নামল। আস্তে আস্তে হেঁটে দরজার কাছে গেলো। সারা শরীর কেমন ব্যথা করছে।সারাদিন হাত পা বাঁধা অবস্থায় এক জায়গায় পড়ে ছিলো হয়তো এইজন্য শরীর ব্যথা করছে।
মহুয়া দরজা খুলবে তখনি পেছন থেকে পুরুষালী গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে আসলো।
মহুয়ার হাত থেমে গেলো, গলা শুকিয়ে আসলো। আহনাফ কি বাড়িতে!..? উনার তো হসপিটালে এখন থাকার কথা!! এই কন্ঠ চিনতে সে ভুল করতে পারে না,এটা আহনাফ এর রসকষহীন গম্ভীরকন্ঠ।
মহুয়া চুপচাপ পেছন ফিরতেই আহনাফ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ চোরের মতো কোথায় যাচ্ছেন!.??’
মহুয়া মাথা নিচু করে বলে উঠলো, ‘ চোরের মতো যাব কেন!.? আমি তো আমার রুমে যাচ্ছি। ‘
আহনাফঃ আপনার রুম..? এই বাড়ির প্রতিটা রুম আমাদের আপনি মেহমান আপনাকে যখন যেই রুম দেওয়া হবে সেই রুমেই থাকতে হবে।
মহুয়া এখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, এক হাতে মাথার ঘোমটা টেনে নিল। আহনাফ ভুল বলেনি তবুও ধীরে শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আমি জানি এটা আপনাদের বাড়ি,রুমও আপনাদের। এখন তো একটা রুম আমাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে আমি সেখানেই যাচ্ছি। ‘
আহনাফ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিল। মেয়েটার মুখটা কেমন সাদা হয়ে ফেঁকাসে হয়ে আছে। শরীর মৃদু কাঁপছে।
আহনাফঃ চুপচাপ বিছানায় এসে বসুন।
মহুয়া এবার চোখ তুলে তাকালো আহনাফের দিকে। খুব বিরক্ত আর অসহ্য লাগছে আহনাফের কথাগুলো। ওর এখন কিছু খাওয়া দরকার সাথে বিশ্রাম। মহুয়া জানে শুধু আহনাফ নয় এখন বাড়ির সবাইকে এক এক করে বিস্তারিত খুলে বলতে হবে কি হয়ে ছিলো। কেউ জানতে চাইবে না মহুয়া এখন বলতে চায় কি না!!? আহনাফ ও হয়তো এখনি আবার জিজ্ঞেস করবে, কিভাবে ওখানে গেলো.? ওরা কি কিছু করেছে.? ওরা কেন ওকে নিয়ে গেলো.? আরও হয়তো অনেক কিছু!!
আহনাফ ওর এইসব ভাবনায় এক বালতি জল ঢেলে বলে উঠলো, ‘ আপনাকে একটা কথা বার বার কেন বলতে হয়.?’
মহুয়া নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে আহনাফের দিকে তাকালো।
আহনাফঃ আপনি নিজ থেকে আসবেন নাকি কোলে করে আনতে হবে। যদিও আপনি অনেক ভাড়ি।আমার হাত ব্যথা হয়ে গেছে আপনাকে কোলে নিয়ে। আপনার ওজন কতো.?
আহনাফের কথা শুনেই মহুয়া চোখ বড় করে তাকালো৷
আহনাফ নিজেকে কঠিন দেখাতে গিয়েও হেঁসে ফেললো। কি সুন্দর সেই হাসি।সুদর্শন পুরুষরা হাসলে বুঝি এতোটা সুন্দর লাগে!? মহুয়া মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখলো। শ্যামবর্ন এক সুদর্শন পুরুষ, 6ফুট লম্বা, সব চেয়ে আকর্ষণীয় হলো আহনাফের চুলগুলো। সিল্ক চুলগুলো কপালে এসে লেপ্টে আছে, সাথে হাল্কা চাপ দাড়ি,চোখগুলোও খুব সুন্দর। একটা পুরুষ এতটা সুন্দর হওয়া একদম উচিত নয়। পুরুষ মানুষ এতোটা সুন্দর, আকর্ষণীয় কেন হবে..? তাকালেই চোখ আঁটকে যায়,চোখ সরাতে গিয়েও থমকে যায় মহুয়া বার বার।
আহনাফ মহুয়াকে ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুখ আবার আগের মতো গম্ভীর করে নেয়।
~ আমি জানি আমি হ্যান্ডসাম তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না। আমার লজ্জা লাগে।
আহনাফের কথাটা কানে যেতেই মহুয়ার ইচ্ছে করলো হুঁ হুঁ করে হেঁসে ফেলতে। মহুয়া চোখ সরিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি কিছু ভাবছিলাম সেই জন্য খেয়াল ছিল না কোনদিকে, কারদিকে তাকিয়ে আছি।
আহনাফঃ হ্যাঁ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে কতো অযুহাত বের হয়।
মহুয়া কিছু বললো না সত্যি তো হ্যাবলার মতো তাকিয়ে ছিলো। কতোটা নির্লজ্জ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় বার সে কখনো কারো প্রশংসা করবে না,আর না কারো প্রেমে পড়বে। সে অনেক আগেই প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছে জীবনে আর যাই হোক ” ভালোবাসা নামক বি*ষ সে পান করবে না,কখনো না।”
মহুয়া রুমে বসে আছে আহনাফ রুম থেকে বের হয়েছে দশ মিনিট হয়ে গেছে।
আমেনা বেগম হাতে খাবার নিয়ে মহুয়ার কাছে আসলো। খাবার দেখে খিদে যেন আরও বেড়ে গেল।
আমেনা বেগম মহুয়াকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বললো।
মহুয়া ফ্রেশ হয়ে এসে বসলো।
আমেনা বেগমঃ খেয়ে বিশ্রাম নিবে।
মহুয়া খুশি হল কেউ ওকে কিছু জিজ্ঞেস করছে না।
আহনাফ বাসায় এসেই সবাই কে নিষেধ করেছে মহুয়া কে জেনো কিছু জিজ্ঞেস না করা হয়। কেউ জেনো এই বিষয় বাড়িতে কথা কখনো না তুলে।
খাবার খেয়ে বসে আছে এখন সে কি করবে.? নিজের রুমে যাবে.? ওফ্ফ নিজের রুমও তো বলা নিষেধ!..
আহনাফ অনেকক্ষন পর রুমে আসলো। শার্ট ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে,দেখেই বুঝা যাচ্ছে বৃষ্টিতে ভিজে এসেছে। এই সময় উনি কোথায় গিয়ে ছিলো..? বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে সাথে ঝড় তুফান । মহুয়ার দিকে একবার তাকিয়ে বললো, ‘ এখনো আছেন!।’
মহুয়ার ভীষণ রাগ হলো। সে কি ইচ্ছে করে আছে!? এই লোক তো বললো এই রুমে বসে থাকতে যতক্ষন না উনি ফিরে আসছে।
আহনাফ কিছু মনে করার ভঙ্গিতে বলে উঠলো, ‘ ওহ্ হে আমি তো বলে ছিলাম অপেক্ষা করতে। ‘
মহুয়া কিছু বললো না ওর অস্বস্তি হচ্ছে এই রুমে থাকতে।
আহনাফ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ রুমে যাও বিশ্রাম নাও। ‘
মহুয়া অবাক হলো একবারও কেউ ওকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। আজ বাড়িতে হলে মামি হাজারটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করত!!..কতো মিথ্যা অপবাদ ওর দিকে ছুড়ে মারতো। এই ঘটনার জন্য ওর খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিত। এইসব ভাবতেই বুক চিঁড়ে এক দীর্ঘ শ্বাস বের হয়ে আসলো।
আহনাফ মহুয়ার হুট করে মহুয়ার অনেকটা কাছে চলে আসলো, ‘ আমি জানি আমার আশেপাশে মেয়েরা সারাক্ষণ থাকতে চায়,যেন আমি মধু আর মেয়েরা মৌমাছি। আমি কিন্তু আপনাকে মৌমাছি ভাবিনি মহুয়া আপনিও কেমন মৌমাছি হয়ে যাচ্ছেন।’
মহুয়া আহনাফের দিকে না তাকিয়ে বললো,’ বৃষ্টিতে ভিজে আপনার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে, কাপড় চেঞ্জ করে নেন চিন্তা ভাবনাও চেঞ্জ হয়ে যাবে। বলেই বড় বড় পা ফেলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
আহনাফ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেঁসে উঠলো। জেনো ভীষণ মজা পেয়েছে।
আহনাফ তার ছেলেদের কল দিয়ে বললো সে কাল সকালে আসবে। এখন বাহিরে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে যাওয়া সম্ভব না।
ফোন রেখে বাহিরে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি আপনার বিষয় সবটা জানতে চাই মহুয়া একদম শুরু থেকে,..’
_______
ডাক্তারের সামনে শ্রাবণ বসে আছে।
ডাক্তার বলে উঠলো, ‘ রোগী আপনার কি হয়.?’
শ্রাবণ কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বলে উঠলো, ” আমার ওয়াইফ’
ডাক্তারঃ উনি হয়তো ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না,টেনশন করে বেশি, উনাকে রেস্টে রাখবেন কিছু দিন, একটুও টেনশন করা যাবে না, খাবারের দিকে খেয়াল রাখবেন।
শ্রাবণ ডাক্তারের কাছ থেকে মেঘলার কাছে এসে বলে উঠলো, ‘ চলুন। ‘
মেঘলাঃ কোথায়।
শ্রাবণঃ জাহান্নামে।
মেঘলাঃ আমার আপনাকে নিয়ে জান্নাতে যাওয়া স্বপ্ন দেখি, আমি কেন জাহান্নামে যাব।?
শ্রাবণঃ আপনার জায়গা জাহান্নামেও হবে না।
মেঘলাঃ আপনার বুকে হলেই হবে।
শ্রাবণ থমকে গেলো, এমন জবাব আশা করেনি শ্রাবণ। মুখ গম্ভীর করে বললো,’ বাড়িতে চলুন।’
গাড়িতে বার বার মেঘলা শ্রাবণের দিকে তাকাচ্ছে।
শ্রাবণ এটা খেয়াল করে ইচ্ছে করে ব্রেক কষলো মেঘলা ভয় পেয়ে গেলো।
শ্রাবণঃ সমস্যা কি তোমার.?
মেঘলা অবাক হওয়ার মতো মুখ করে বলে উঠলো, ‘ আমার সমস্যা!!.? আমার তো কোনো সমস্যা নেই।
শ্রাবণঃ তাহলে চোখ গাড়ির বাহিরে রাস্তায় রাখুন। না হলে গাড়ি থেকে বের করে দেব।
মেঘলা ইনোসেন্ট মুখ করে বলে উঠলো, ‘এতো কিউট মুখে এমন তিক্ত কথা আমার নরম হৃদয় ছিদ্রকরে দিল প্রিয় স্বামী ।’
শ্রাবণ কথা না বাড়িয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। এই মেয়ের সাথে কথা বলে লাভ নেই। কখন কি বলে হয়তো নিজেও জানেনা।
মেঘলা আবার বলে উঠলো, ‘ আপনি কখনো কাউকে ভালোবেসেছেন.???’
সাথে সাথে শ্রাবণের চোখের সামনে ভেসে উঠলো এক মায়াবতীর মুখ, যাকে প্রথম দেখায় ওর হার্ট বিট ফার্স্ট হয়ে গিয়ে ছিলো, যার হাসিতে হৃদয়ে বসন্তের ফুল ফুটে ছিলো,যার তাকানোতে ওর দুই চোখ আঁটকে গিয়ে ছিল, ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে রাখা মুখটার প্রেমে পড়ে গিয়ে ছিল, যেভাবে মেঘ আড়াল করে নেয় রোদ কে, সেভাবে সেই নারী নিজেকে আড়াল করে নেয় ঘোমটার ভেতরে।
মেঘলা প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে গাড়ির বাহিরে তাকালো। আজ সারাদিন ব্যস্ততায় কেটেছে কাল সে এইসব কিছুর সমাধান বের করবে। কে এই মহুয়া? কোথায় থেকে এসেছে? ওর অতীত কি? কি হয়ে ছিলো ওর সাথে? সব কিছু জানতে হবে! পলাশকে হসপিটাল থেকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে সকালেই মেঘলা ওর লোকদের দিয়ে ।এইসব কিছুর উত্তর একমাত্র পলাশ দিতে পারবে।
মহুয়ার ঘুম আসছে না মাথায় শুধু ঘুরছে সেই আগুন্তকঃ এর কথাই। কে ছিলো? CID মেঘ!! কে এই মেঘ.?? মহুয়া চোখ বন্ধ করে ভাবল, এটা মেয়ে ছিল, মহুয়াকে জড়িয়ে ধরতেই মহুয়া বুঝে ছিল, মহুয়া আরও ভাবল, এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে ব্যালকনিতে গেলো। বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি, বৃষ্টির ছিটা এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে ওকে।
মহুয়া ব্যালকনি থেকে দৌড়ে ছাঁদে গেলো। মিনিটে বৃষ্টির পানি ওকে ভিজিয়ে দিলো। মহুয়া হঠাৎ কাঁদতে কাঁদতে হাঁটু গেড়ে ছাঁদে বসে পড়লো চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, ‘ আল্লাহ আমাকে পথ দেখান, আমি মুক্তি চাই এই জীবন থেকে। এই জীবনের শেষ কোথায়!..????’
চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।