মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-১৬+১৭

0
572

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_১৬
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

আহনাফ পলাশের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখ ফেঁকাশে হয়ে গেছে। রক্ত গিয়েছে অনেক। ব্যথায় চোখ লাল হয়ে আছে।

একজন নার্স বলে উঠলো, ‘ স্যার আমি রুমে এসে ছিলাম স্যালাইন চেক করতে এসে দেখি রোগী ছটফট করছে,হাত থেকে রক্ত পড়ে ফ্লট লাল হয়ে আছে।

আহনাফ পলাশের দিকে তাকিয়ে বললো সিসিটিভি ফুটেজ দেখেন। এই রুমে আপনার আগে কে এসে ছিলো দেখুন।

পলাশের অবস্থা দেখে মহুয়া ভেতর ভেতর ভীষণ খুশি হয়েছে ভেতর ভেতর পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করছে। সে তো চায় এই লোক ওর সামনে কাতরাতে কাতরাতে নিজের মৃত্যু ভিক্ষা চাক।

পলাশের কানে অনেক পিঁপড়ে ঢুকে গিয়ে ছিলো। পিঁপড়ের কামড় সহ্য করতে না পেরে এক পর্যায় পলাশ জ্ঞান হারায়।

সিসিটিভির কথা শুনে মহুয়া মুচকি হাসে। সে এতোটাও কাঁচা খেলোয়াড় নয়। সিসিটিভি অন্য পাশে ঘুরতেই মহুয়া পলাশের রুমে এসে ছিলো।

সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে এসে জানালো সন্দেহ জনক কাউকে দেখা যায়নি। তার মানে পলাশ নিজের হাত নিজেই কেঁটেছে।

আহনাফ পলাশের দিকে খেয়াল রাখতে বলে চলে আসে।

ক্যাবিনে এসে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ ব্যাগ গুছিয়ে চলে যান।’
মহুয়া ব্যাগ হাতে নিয়ে বের হতে গিয়ে দরজার সাথে কপালে ভারি খায়।

আহনাফ ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে মহুয়ার দিকে তাকায়।
মহুয়া কপাল ডলতে ডলতে বেরিয়ে যায়।

হসপিটাল থেকে বের হয়ে একটা রিক্সা দাঁড় করিয়ে বসে পরলো।

রিক্সা চলছে আর মহুয়া তাকিয়ে আছে সন্ধ্যার রাস্তার পাশে ছোটো ছোটো দোকান গুলোর দিকে। হঠাৎ মনে হলো সে কাউকে দেখেছে! রনি.? হ্যাঁ সে রনিকে দেখেছে তাও আজ কতোগুলো দিন পর। ওইদিন কোথাও রনিকে দেখা যায়নি। আজ চায়ের দোকানে রনিকে দেখে ব্যাস অবাক হয়েছে সে।

বাসায় এসে নিজের রুম দেখে ভীষণ অবাক হয়। সব কিছু এলোমেলো হয়ে আছে। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে বসলো। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে যদিও আহনাফ ওকে দিয়ে বেশি কাজ করায়নি। প্রথম দিন খুব সুন্দর করে কাজ বুঝিয়ে দিয়েছে, বেশি কাজ দেয়নি। তাও এই কাজ ওর জন্য প্রথম ছিলো।

কিছু সময় বসে থেকে উঠে ব্যালকনিতে গেলো। ব্যালকনিতে গিয়ে পা থেমে গেলো। হৃদয় মুচড়ে উঠলো দ্রুত ছোঁয়ার কাছে ছুটে গেলো।

ছোঁয়া ব্যালকনিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
মহুয়া ছোঁয়াকে কোলে করে রুমে নিয়ে আসতে চাইলো। মেয়েটার শরীর পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। মহুয়া চেষ্টা করেও কোলে নিয়ে রুমে আসতো পারলো না৷ অজ্ঞান ছোঁয়ার ওজন একটু বেশিই হয়ে গেছে। মহুয়ার মাথা শূন্য শূন্য লাগছে। সে এখন কি করবে..? ওর জ্বর আর বাড়ির কেউ একটু খুঁজ ও নেয়নি.? ভীষণ রাগ হলো বাড়ির প্রতিটি সদস্যর উপর। ছোঁয়ার চোখে মুখে পানির ছিটা দিলো কিন্তু তাতে কোনো কাজ হলো না।

মহুয়া রুম থেকে বের হয়ে আহনাফের রুমে আসলো কিন্তু রুমে আহনাফ নেই। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে তারমানে আহনাফ ওয়াশরুমে মহুয়া দেরি না করে আহনাফের রুম থেকে বের হয়ে নিচে যাচ্ছিলো তখনি নির্জন কে দেখে বললো,’ ভাইয়া আমার সাথে একটু আমাদের রুমে আসুন।’
নির্জনের মন ভালো না তাই বলে উঠলো, ‘ এখন আমি একটু ব্যস্ত মহুয়া। ‘
মহুয়ার রাগ আকাশ ছেয়ে গেলো অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়ার শরীর খারাপ অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে প্লিজ আমার রুমে দুই মিনিটের জন্য আসুন।’

ছোঁয়ার শরীর ভালো না শুনেই নির্জন ঘাবড়ে গেলো। মহুয়াকে রেখেই দৌড়ে রুমে আসলো।

মহুয়া পেছন থেকে বলে উঠলো, ‘ ব্যালকনিতে।’

নির্জন ব্যালকনিতে গিয়ে ছোঁয়ার মুখে হাত রেখে কয়েক বার ডাকলো তারপর কোলে নিয়ে রুমে এসে বিছানায় শুইয়ে আহনাফ ভাইকে ডাকতে বললো।
মহুয়া অবাক হয়ে নির্জনের ছটফট দেখতে লাগলো।
নির্জন ছোঁয়ার মুখে পানির ছিটা মেরে মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকছে।
মহুয়া এক নজর তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আবার আহনাফের রুমে গেলো।
আহনাফ সবে মাত্র গোসল করে বের হয়েছে। গেঞ্জি বা শার্ট কিছু গায়ে নেই, চুল গুলো কপালে এসে লেপ্টে আছে।

মহুয়া ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢুকেই আহনাফের দিকে তাকিয়ে আছে।
আহনাফঃ নিজের চোখ সরাও,আমি জানি আমি অনেক হ্যান্ডসাম তাই বলে তাকিয়ে তাকিয়ে অন্যের সম্পত্তি তে নজর লাগাবে না।

মহুয়া আহনাফের থেকে চোখ সরিয়ে অন্য দিকে ফিরে বলে উঠলো, ‘ ফালতু কথা রাখুন আপনি হ্যান্ডসাম..? ওপ্স আপনি না বললে তো আমি জানতামি না।অন্যের সম্পত্তির দিকে তাকানোর মতো স্পেশাল কিছু আপনার মধ্যে নেই।
আহনাফঃ তুমি আমাকে অপমান করছো.? অথচ একটু আগেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলে।
মহুয়াঃ কাপড় পড়ুন। আমি আপনার দিকে নয় অন্য দিকে তাকিয়েছি।
আহনাফঃ যখন তখন আমার রুমে এভাবে চলা আশা আমার পছন্দ না। কেনো এসেছেন.?
মহুয়াঃ ছোঁয়া অসুস্থ অজ্ঞান হয়ে গেছে,অনেক জ্বর।
আহনাফঃ আরও আগে বলা উচিত ছিলো।
মহুয়াঃ আপনি সুযোগ দিয়েছেন.??

নির্জন ছোঁয়ার সামনে বসে আছে। ছোঁয়ার জ্ঞান ফিরেছে তবে জ্বরের গুড়ে আবল তাবল বকছে। নির্জন একবার কান পেতে শুনতে গিয়ে ছিলো। ছোঁয়া বিড়বিড় করে নির্জন কেই বকছে। এটা দেখে মুচকি হাসলো নির্জন।

আহনাফ আর মহুয়ার পিছু পিছু বাড়ির সবাই আসলো।

নিরুপমা মেয়ের পাশে চিন্তিত হয়ে বসলেন। মেয়েটার কয়েকদিন পর পর এভাবে জ্বর আসে। একদম বাবার মতো হয়েছে। ছোঁয়ার আব্বুরও জ্বর আসলে অজ্ঞান হয়ে যেতো, অল্পতেই জ্বর উনাকে কাবু করে ফেলতো। আর ছোঁয়া হয়েছে একদম ওর আব্বুর মতো।

আহনাফ জ্বর মেপে দেখলো ১০৩°জ্বর। আহনাফ কিছু মেডিসিন দিয়ে বললো কিছু খাইয়ে মেডিসিন গুলো খাইয়ে দিতে এখনি।
হালিমা বেগম ছোঁয়ার মাথায় পানি দিচ্ছে।
নির্জন অপরাধীর মতো তাকিয়ে আছে। আজ ওর জন্য ছোঁয়ার এই অবস্থা। মেয়েটা অনেক কেঁদেছে। চোখ মুখ ফুলে আছে। কেমন ফর্সা মুখ লাল হয়ে, চোখ গুলো ফুলে গেছে।

ছোয়াকে একটু স্যুপ খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিলো৷ মহুয়া নিজে ওর যত্ন নিবে বলে সবাইকে চলে যেতে বলল।

সবাই চলে গেছে অনেক সময় হলো। নিরুপমা যেতে চায়নি মহুয়া বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠিয়ে দিলো। ছোঁয়ার চুল মুছে, হাল্কা করে ঘা মুছে দিলো। নিচটা মুছে এসে ছোঁয়ার পাশে বসলো। ছোঁয়া ঘুমাচ্ছে। মহুয়ার নিজের ও ক্লান্ত লাগছে লাইট বন্ধ করে ওর পাশে ঘুমিয়ে পরলো।

রাত ২টা ছুঁই ছুঁই দরজায় কেউ কড়া নাড়তেই মহুয়ার ঘুম ভেঙে যায়।

মহুয়া লাইট জ্বালিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো নির্জন দাঁড়িয়ে আছে।
নির্জনঃ গুড মর্নিং না হওয়া ভাবি।
মহুয়া বিরক্ত হলো। এটা কেমন মজা এতো রাতে এই ছেলে এখানে কেনো.? আর এইসব উল্টো পাল্টা কি বলছে.?
নির্জনঃ ভাবি ছোঁয়া এখন কেমন আছে.?
মহুয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো ” ভাবি কে.?? আপনি নিজেই সুস্থ আছেন তো.??
নির্জনঃ সরি ক্রাশ।
মহুয়া এবার বুঝে যায় আসলেই ছেলেটা উল্টো পাল্টা কিছু খেয়েছে।
নির্জনঃ আমার উত্তর দিলেন না.?
মহুয়াঃ কয়টা বাজে.?
নির্জন হাত সামনে এনে ঘড়ি দেখে দরজায় ঠেস মেরে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ ২:৩৪। ‘
মহুয়াঃ আপনি ঘুমাননি.?
নির্জনঃ ঘুম আসছে না।
মহুয়াঃ ছোঁয়া ঠিক আছে ঘুমাচ্ছে।
নির্জনঃ ও কিছু খাবে.?
মহুয়া কিছু সময় চুপ থেকে বললো,’ হুম স্যুপ, নুডলস, কফি।এখন এইগুলো হলেই হবে। বলেই ওর মুখের উপর দরজা বন্ধ করে হাসতে লাগলো।

নির্জন ঠোঁট উল্টে কিছু ভাবতে ভাবতে একবার দরজার দিকে তাকিয়ে নিচে নেমে গেলো।

রান্না ঘরে ঠুস ঠাস শব্দ শুনে আহনাফ এগিয়ে আসলো। নির্জন কে দেখে অবাক হলো এতো রাতে কি করছে.?
~ কি করছিস.?
নির্জন ভয়ে পেছন ফিরে আহনাফ কে দেখে হেঁসে বলে, ‘ নুডলস। ‘
আহনাফঃ তুই তো নুডলস পছন্দ করিস না। আর ফ্রিজে তো খাবার আছে গরম করে খেয়েনে।
নির্জনঃ আমি তো এই খাবার অন্য কারো জন্য বানাচ্ছি।
আহনাফঃ কার জন্য.?
নির্জনঃ মহুয়ার জন্য।
আহনাফ কিছু সময় চুপচাপ তাকিয়ে রইলো নির্জনের দিকে।
আহনাফঃ মহুয়ার জন্য মানে.?
নির্জনঃ মহুয়া সারা রাত ছোঁয়া কে পাহারা দিয়েছে এখন ওর নুডলস খেতে ইচ্ছে করছে তাই ভাবলাম ক্রাশ বলে কথা।
আহনাফ থমথমে মুখে নুডলসের দিকে তাকালো তারপর নির্জন কে জিজ্ঞেস করলো,’ আর কখনো রান্না করেছিস..?’
নির্জনঃ না, তবে ইউটিউব থাকতে এটা কোনো ব্যপারি না।

আহনাফ নুডলসের দিকে তাকিয়ে হাসলো। নির্জনের কথা একটাও বিশ্বাস হয়নি ওর। মহুয়া নিশ্চয়ই খাবার বানাতে ওকে বলবে না, কি লুকাচ্ছে.?
আহনাফ কথা না বাড়িয়ে পানি নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। আর যাওয়ার সময় বলে গেলো ‘ অনেক ভালো রান্না হচ্ছে, আগে উনাকে খাওয়াবি তুই প্রথম খেলে রান্নার স্বাদ চলে যাবে। এতে তোর ক্রাশ তোর প্রেমেও পড়ে যেতে পারে ‘ বলেই মুচকি হেঁসে উপরে চলে গেলো।

নির্জন সব কিছু বানিয়ে কফি হাতে নিয়ে সামনে শ্রাবণ কে দেখে থমকে গেলো সাথে বিরক্ত ও হলো। আজ রাতে কি সবাই ওকে পাহারা দিতে জেগে আছে।
নির্জনঃ ভূতের মতো সামনে এসে দাঁড়ানোর কি আছে! সুন্দর করে কথা বলতে বলতে আসতে পারো।এভাবে মাঝ রাতে হার্ট অ্যাটাক করানোর ধান্দায় ঘুরতেছো!?
শ্রাবণঃ তুই এতো রাতে রান্নাঘরে কেনো.?
নির্জনঃ আর কয়জন কে বলতে হবে একসাথে আসো.!!
শ্রাবণ নির্জনের এমন পাগলের মতো কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
নির্জনঃ ভাবির জন্য রান্না করতে এসেছি।
শ্রাবণঃ ভাবি.?
নির্জনঃ দেখো ভাই তুমি মান আর না মান আমি তো মেঘলা ভাবিকে, ভাবি মেনে নিয়েছি। সারাদিন এক বারও ভাবির একটু খুজ নাও না। দেবর হিসেবে আমার ভীষণ খারাপ লাগে।কতো মিষ্টি একটা মেয়ে দেখলেই মন গলে যাওয়ার কথা। ভাবির ঘুম আসছে না আমি জিজ্ঞেস করলাম কিছু খাবেন বললো নুডলস খাবে। যেটা তোমার করার কথা সেটা আমি করে দিচ্ছি মানবতার ফেরিওয়ালা বলে কথা।

শ্রাবণ চুপচাপ নির্জনের সব কথা শুনলো।তারপর জিজ্ঞেস করলো, ‘ তোর ভাবি কোথায় আছে এখন.?’
নির্জনঃ গেস্ট রুমে।
শ্রাবণঃ চল দেখে আসি।
নির্জনঃ তুমি কেন যাবে। ভাবি এখন ঘুমাবে।
শ্রাবণঃ মিথ্যা কথা বলার আগে দেখে নেওয়া দরকার মানুষটা কোথায়!? মিথ্যা কথাও ঠিক ঠাক বলতে পারিস না। এক কাজ করবি কাল থেকে ভালো করে তোর ভাবির কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিবি। বলেই নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। রান্না ঘরে লাইট দেখে ভেবেছিলো চোর হবে।

বেচারা নির্জন হাতে খাবারের বাটি নিয়ে শ্রাবণের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ভাবি তোমার রুমে.? তোমাদের মধ্যে কি কিছু চলছে.? আমি জানতাম এতো সুন্দর বউ রেখে আমার ভাই সিঙ্গেল ঘুমায় কিভাবে! আজ একটা বউ নেই বলে একা ঘুমাতে হয়।’

শ্রাবণ সোফা থেকে একটা বালিশ নির্জনের দিকে ছুঁড়ে মারলো। বেচারা একটুর জন্য খাবার গুলো সহ বেঁচে গেলো।

শ্রাবণ রুমে এসে বিছানার দিকে তাকায়। মেঘলা ঘুমিয়ে আছে। অফিসের সব কাজ শেষ করে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। আজকের চাঁদটা একটু বেশিই সুন্দর আর বড়।
আকাশে দিকে তাকিয়ে তাঁরা গুনতে শুরু করলো। কিছু সময় ব্যালকনিতেই পার করে দিলো। মেঘলার হঠাৎ চেঞ্জ ওকে ভাবায়। সারাদিন আজ ওকে অনেক জ্বালিয়েছে।

হঠাৎ চোখ গেলো পাশে একটা বইয়ের দিকে।
বইটা হাতে নিয়ে দেখলো একটা ইংরেজি রোমান্টিক বই। শ্রাবণ কৌতূহলি হয়ে বইটা নিয়ে রুমে আসলো। কে এই বই পড়ছে.? সোফায় বসে বইটার প্রথম পৃষ্ঠা খুলে আরও চমকে উঠলো।

খুব সুন্দর করে গুটিগুটি ইংরেজি অক্ষরে লেখা “Meghla ”

শ্রাবণ অবিশ্বাস চোখে ভাবতে লাগলো, এই মেঘলা কে..? চোখ তুলে মেঘলার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ তুমি কে.? আর এই বই কার.?বইয়ে মেঘলা নাম কেনো.?

চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_১৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

হাতে খাবার নিয়ে মহুয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নির্জন।
মহুয়া বিরক্ত হয়ে খাবার গুলো হাতে নিয়ে রুমের দরজা লাগাবে তখনি নির্জন বলে উঠলো, ‘ আগে আপনি একটু খেয়ে নিবেন তারপর ছোঁয়া কে খাওয়াবেন।আর ছোঁয়া কে বলবেন না আমি এই খাবার রান্না করেছি ওর খুঁজ খবর নিতে এসেছি। ‘
মহুয়া খাবারের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তাহলে কার রান্না বলবো.?’
নির্জন কিছু একটা ভেবে বললো,’ বলবেন আহনাফ ভাই রান্না করেছে ওর জন্য। ‘
মহুয়া কথা না বাড়িয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। এই ছেলের মাথা সমস্যা আছে।

মহুয়া খাবার গুলোর দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলো৷ নুডলস এতো লাল টকটকে কেনো.? আস্তে করে টেবিলের উপর রেখে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

_______

সকালের মিষ্টি রোদের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো ছোঁয়ার। আশেপাশে তাকিয়ে মহুয়াকে খুঁজলো। শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার। ওড়নাটা বিছানার এক কোনে পড়ে আছে। ছোঁয়া ওড়নাটা হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। শরীরে জ্বর নেই।

মহুয়া ব্যালকনি থেকে রুমে এসে ছোঁয়া কে বিছানায় না দেখে ওয়াশরুমের দরজায় ধাক্কা দিলো।
মহুয়াঃ ছোঁয়া তুমি কি ভেতরে আছ.?
ছোঁয়াঃ হুম।

ছোঁয়া গোসল শেষ করে বিছানায় বসে পড়লো। মহুয়া একটা তোয়ালে এগিয়ে দিয়ে বললো,ভালো করে চুল মুছে নাও, না হয় ঠান্ডা লেগে যাবে।
ছোঁয়াকে এমন চুপচাপ দেখে মহুয়া নিজেই ওর চুল সুন্দর করে মুছে দিলো।
মহুয়াঃ জ্বর তো নেই। শরীর কি খারাপ লাগছে.?চা বানিয়ে দিবো.?
ছোঁয়াঃ না।
মহুয়াঃ মন খারাপ।
ছোঁয়া কিছু না বলে টেবিলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো এইগুলো কি.?
মহুয়াঃ তোমার জন্য ছিলো কিন্তু এখন তো ঠান্ডা হয়ে খারাপ হয়ে গেছে।
ছোঁয়া একবার তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’ তুমি রান্না করে ছিলে.?’
মহুয়াঃ না।
ছোঁয়াঃ কে.?
মহুয়াঃ আহনাফ চৌধুরী।
ছোঁয়া চোখ বড় বড় করে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আবার খাবার গুলোর দিকে তাকিয়ে হাতে নিলো।
আহনাফ কোনোদিন নিজের জন্যও বাসায় কিছু রান্না করেনি আজ কিনা ওর জন্য রান্না করেছে! এখন তো আপসোস লাগছে কেন সে সুস্থ হলো। অসুস্থ থাকলে তো আহনাফ আরও ওর দেখাশোনা করতো।ওকে নিয়ে ভাবতো।

নুডলসের বাটি হাতে নিয়ে একটু নুডলস মুখে দিয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

মহুয়া চুপচাপ ছোঁয়ার কাহিনী দেখছে। ছোঁয়ার কাহিনী দেখে ওর একটু সন্দেহ হলো। আহনাফের নাম শুনতেই ওর চোখে আলাদা খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠেছে। মহুয়া মুচকি হাসলো। ওর বুঝতে বাকি নেই ছোঁয়ার এই পরিবর্তনের মানে। মহুয়া মনে মনে বলে উঠলো, ‘ ওয়েলকাম তুমি খুব শীগ্রই নরকের যন্ত্রণায় পা বাড়াচ্ছ।’

ছোঁয়া একটু নুডলস মুখে নিয়ে বাটি টেবিলে রেখে বলে উঠলো, ‘ জঘন্য ‘

মহুয়া পেছনের দিকে ফিরে মুচকি হেঁসে উঠলো।

___________

শ্রাবণ এখনো ঘুমাচ্ছে। চোখে পানির ছিটা পড়তেই চোখ পিটপিট করে তাকালো। রিনঝিন শব্দে ঘুম ঘুম চোখে পেছন ফিরে তাকালো।

মেঘলা কমলা রঙের শাড়ি হাতে নিয়ে পড়ার চেষ্টা করছে ইউটিউব দেখে। চুল থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। ভেজা চুল যারা দিতেই চুলের পানি গিয়ে শ্রাবণের মুখে পড়েছে, হাতে কাঁচের চুড়ি যার রিনঝিন শব্দ শুনতে খুবি সুন্দর লাগছে।

শ্রাবণের মনে হলো এটা তার দেখা সবচেয়ে সুন্দর সকাল।

মেঘলা শাড়ির কুঁচি দেওয়ার চেষ্টা করছে। সে কখনো নিজে শাড়ি পড়েনি। কুঁচি তো কিছুতেই দিতে পারছে না। হঠাৎ চোখ গেলো আয়নার কোনায়। শ্রাবণ কেমন অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

ভয়ে মেঘলা শাড়ি দিয়ে শরীর ঢেকে বুকের উপর ভালো করে শাড়িটা ধরলো। শ্রাবণের দিকে রেগে বলে উঠলো, ‘ এ্যাঁই এ্যাঁই শ্রাবণ চৌধুরী অন্য দিকে ফিরেন। আর একবার এই দিকে তাকালে আপনার চোখ গেলে দিবো।
শ্রাবণঃ আমি তো আপনার দিকে তাকাইনি।
মেঘলাঃ আমি নিজ চোখে দেখেছি আপনি তাকিয়ে ছিলেন।
শ্রাবণঃ আমি তো অন্য কিছুর দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
মেঘলাঃ ঠিক মতো মিথ্যাও বলতে পারেন না।
শ্রাবণঃ দেখুন আপনার বাম পাশে দেয়ালে একটা টিক টিকি।
মেঘলা তাকালো, সত্যি টিক টিকি।
মেঘলাঃ আমি এইসব ছোটো খাটো পোকামাকড় ভয় পাই না।
শ্রাবণঃ কিন্তু আমি পাই।
মেঘলাঃ কিইইই!!.?
শ্রাবণ কথা ঘুরিয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনি কেনো পোকামাকড় ভয় পাবেন বরং পোকামাকড় আপনাকে ভয় পাবে। আপনি পোকামাকড় থেকে ভয়ংকর আর বিষাক্ত।

মহুয়া ছোঁয়ার কাপড় গুলো ছাঁদে ভালো করে ছড়িয়ে দিলো। ফুল গাছগুলোতে পানি দিয়ে পেছনে ফিরতেই আহনাফ কে দেখলো কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।

মহুয়া আহনাফ কে দেখেই দ্রুত ছাঁদ থেকে নেমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
আহনাফ পেছন থেকে ডেকে উঠলো।
মহুয়ার পা থেমে গেলো। পেছনের দিকে না ফিরে বলে উঠলো, ‘ কিছু বলবেন.?’
আহনাফ মোবাইল পকেটে রেখে দুই হাত সুন্দর করে বুকের মাঝে বাজ করে রেখে বললো,’ এদিকে ফিরুন।’
মহুয়া পেছনের দিকে ফিরতে আহনাফ বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া কেমন আছে.?’
মহুয়াঃ হুম এখন ভালো।
আহনাফঃ জ্বর আছে?
মহুয়াঃ না।
আহনাফঃ কাল রাতে আপনার কিছু খেতে ইচ্ছে হয়ে ছিলো। কিছু খেতে ইচ্ছে হলে ফ্রিজে দেখবেন। ফ্রিজে সব কিছু আছে।
মহুয়াঃ বুঝলাম না, কাল রাতে খেতে ইচ্ছে করে ছিলো মানে.?
আহনাফঃ নির্জন কে দেখলাম আপনার জন্য রান্না করে নিয়ে গেলো। বললো আপনার খেতে ইচ্ছে করছে।

মহুয়া যা বুঝার বুঝে গেলো। এই বাঁচাল ছেলে আর কাউকে না পেয়ে ওকে ফাঁসিয়েছে। জায়গায় জায়গায় মানুষ ফাঁসিয়ে নিজে ভালো থাকছে।

মহুয়াঃ আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। উনি একটা বলেছে আপনি আরেকটা শুনেছেন।
আহনাফঃ হয়তো।

মহুয়া চুপচাপ ছাঁদ থেকে নামতে গিয়ে ছাঁদের দরজার সাথে ধাক্কা খেয়ে কপালে হাত ডলতে শুরু করলো।

আহনাফ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে অন্য দিকে ফিরে হেঁসে উঠলো।
____

মহুয়া ছোঁয়াকে নিয়ে নিচে এসে দেখে রান্না ঘরে আজ মেঘলা।

আমেনা বেগম অনেক বার নিষেধ করার পরও মেঘলা নিজে রান্না করছে। আমেনা বেগম, হালিমা বেগম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওর রান্না দেখছে।আমেনা বেগম ভীষণ রেগে আছেন এমনিতেই মেঘলার ছায়াও দেখতে পারেন না আর এখন কিনা রান্না ঘরেও চলে এসেছে। ছেলের ওই দিনের কথার পর আর আমেনা বেগম মেঘলা কে কিছুই বলে না। রাগ হলেও চুপচাপ হজম করে নেন।

শ্রাবণ ওর আব্বুর সাথে অফিসের কথা বলছে। দিন দিন কোম্পানির লস হচ্ছে। কোম্পানি এভাবে চলতে থাকলে এতো কষ্ট করে তৈরি করা স্বপ্নের কোম্পানি একদম শেষ হয়ে যাবে। হঠাৎ কোম্পানির এই পরিণতির কারন শ্রাবণ কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছে না। কোম্পানির সব চেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল চুরি হয়ে গেছে।

আজাদ চৌধুরী কিছুই বললেন না শুধু শ্রাবণের কথাগুলো চুপচাপ শুনলেন।তারপর উঠে রুমের দিকে চলে গেলো।

শ্রাবণ আহনাফের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ মনে হচ্ছে আব্বু কিছু লুকাচ্ছে! তাই না আহনাফ.? ‘

আহনাফ শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে মোবাইল হাতে নিলো।

মেঘলা সব কিছু সুন্দর করে টেবিলে সাজিয়ে ছোঁয়ার কপালে হাত রেখে বললো,’ জ্বর কমেছে.??’
ছোঁয়া নিজেও মেঘলা কে একদম পছন্দ করে না।
~হুম।
মেঘলাঃ তোমার জন্য কি অন্য কিছু রান্না করে দিবো.?
ছোঁয়াঃ প্রয়োজন নেই।

নির্জন বসতে বসতে বলে উঠলো, ‘ ভাবি আমার জন্য আজ খিচুড়ি রান্না করবে.?’
মেঘলাঃ ঠিক আছে।

মেঘলা একবার আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে। মোবাইলে কিছু একটা হয়তো করছে।

মেঘলা সব সময় অবাক হয়। ও এই বাড়িতে আসার পর আহনাফ যতবার ওর সামনে পড়েছে কখনো ওর দিকে তাকায়নি। আর না কখনো ওর সাথে কথা বলেছে। এই বাড়ির এক একটা ছেলে এক এক রকম।

শ্রাবণ ছোঁয়ার মাথায় হাত রেখে স্নেহের সাথে বলে উঠলো, ‘ হঠাৎ শরীর কিভাবে খারাপ হলো.? তুমি কি ঠান্ডা কিছু খেয়েছো.?’
আহনাফ অন্য পাশ থেকে বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া রাণীকে কি কেউ কিছু বলে ছিলো.? আমাদের ছোঁয়া রাণী তো বেশি কষ্ট পেলেও অসুস্থ হয়ে পড়ে..।
শ্রাবণঃ স্যার বকেছে.?
আহনাফঃ ভাইয়াকে বলো কোনো ছেলে ডিস্টার্ব করেছে.?

শ্রাবণ আর আহনাফ সব সময় ছোঁয়াকে একটু বেশি ভালোবাসে।ওদের বোন নেই ছোঁয়া ওদের এক মাত্র বোন।

ছোঁয়া আদরের হাত,আর কন্ঠ পেয়ে ঠোঁট উল্টে কান্না করে দিলো। কেউ কিছু বুঝার আগেই নির্জনের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘ এই কুত্তা আমাকে সবার সামনে রাস্তায় থাপ্পড় মেরেছে, রেগে ধমকিয়ে কথা বলেছে আরও মারার হুমকি দিয়েছে।

সবাই চোখ তুলে নির্জনের দিকে তাকালো। বেচারা মুখের সামনে রুটিটা মাত্র নিয়ে ছিলো। সবার তাকানো দেখে রুটি প্লেটে রেখে রাগী দৃষ্টিতে ছোঁয়ার দিকে তাকালো।

মহুয়া মনেমনে বলে উঠলো, ‘এই জন্য বেচারা কাল রাতে এতো যত্ন, এতো কেয়ার করে ছিলো। ‘

আহনাফ রেগে নির্জনের দিকে তাকালো।
হালিমা বেগম রান্না ঘর থেকে গরম খুন্তি হাতে নিয়ে নির্জনের দিকে আসলো৷ শ্রাবণ থামিয়ে বলে উঠলো, ‘ নির্জন তুই কোন সাহসে ছোঁয়ার গায়ে হাত তুলেছিস.?
নির্জনঃ ভাই আমার কোনো দোষ নেই এই ডাইনী রাস্তায় আমার ইয়ারফোন ফেলে দিয়ে ছিলো।
আহনাফঃ তোর ইয়ারফোন কয়টা লাগবে আমাকে বলতি! তাই বলে বাচ্চা মেয়ের গায়ে হাত তুলবি.?
নির্জনঃ বাচ্চা মেয়ে.? কে বাচ্চা মেয়ে.? বাচ্চা মেয়ে কিভাবে কলেজে গিয়ে ছেলেদের জড়িয়ে ধরতে পারে!..?
আহনাফঃ কিসের ছেলে.?
নির্জনঃ তোমার বাচ্চা বোনকে জিজ্ঞেস করো।
আহনাফ ছোঁয়ার দিকে তাকাতেই ছোঁয়া রেগে বলে উঠলো, ‘ ভাই আমি ধরিনি ওই বেয়াদব,অসভ্য ছেলে আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিলো। আমি ক্লাস থেকে বের হয়ে মহুয়ার ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলাম তখনি হঠাৎ আমার সামনে ফুল নিয়ে এসে দাঁড়ায় রাফি। আমি রেগে তাকাতেই হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরে কানে ফুল গুঁজে আবার হাওয়ার বেগে কোথায় জেনো চলে গেছে। আমি কিছুই বুঝতে পারিনি।

নির্জনঃ হ্যাঁ তুই তো খুকি, খুকিরা কিছু বুঝে-ও না।
ছোঁয়াঃ তোর কি হ্যাঁ.! তোর কি.? কেমন ভাই তুই যে বোনকে একটা ছেলে জড়িয়ে ধরেছে দেখেও নাচতে নাচতে চলে এসেছিস।
নির্জনঃ তো কি ডাক ঢোল বাজিয়ে পার্টি দিবো.?
আহনাফঃ চুপ! আর একটাও কথা এখানে শুনতে চাই না। ছোঁয়া খাওয়া শেষ হলে আমার রুমে আসবে। আর নির্জন তুই আমার সাথে চল।

আহনাফ উঠে যেতেই নির্জন ছোঁয়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ তোর ওই রাফি আর বাইকের ছেলে দুই প্রেমিক এখন হসপিটাল ভর্তি, ফলমূল নিয়ে একটু ভালোবাসা দেখিয়ে আসিস।
ছোঁয়া সহ সবাই অবাক হয়ে নির্জনের দিকে তাকালো।
নির্জন কিছু দূর গিয়ে ফিরে তাকিয়ে আবার বলে উঠলো, ‘ ওদের আশপাশে তোকে দেখলে নেক্সট টাইম ওদের জান টাই নিয়ে নিবো।

মেঘলা মুচকি হেঁসে তাকিয়ে রইলো নির্জনের দিকে। ছেলেটার কথায় ধম আছে।
শ্রাবণঃ এই ছেলের মাথায় কখন কি চলে কে জানে। ছোঁয়া রাণী আমি ওকে বকে দেবো এখন নিশ্চয়ই আহনাফ ওকে মারবে। তুমি আর মন খারাপ না করে সবটা ভুলে যাও।

ছোঁয়া চুপচাপ মাথা নেড়ে খাবারে হাত দিলো।
মহুয়া মেঘলাকে সাথে বসতে বললো। একসাথে খেলে ভালো লাগবে।
মেঘলা আমেনা বেগম, হালিমা বেগম, নিরুপমা সবাইকে জোর করে সাথে নিয়ে এসে বসলো।
মেঘলাঃ এক সাথে খেলে আপনাদেরও ভালো লাগবে।
শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’ আপনার দেবর আপনার জন্য রান্না করে ছিলো খেয়েছেন.?
মেঘলাঃ কিসের খাবার.? কোন দেবর.?
শ্রাবণ মুচকি হেঁসে বলে উঠলো, ‘ নির্জন, কাল রাতে কতো কষ্ট করে আপনার জন্য মধ্য রাতে রান্না করলো। ‘

ছোঁয়ার খাবার থেমে গেলো সাথে হালিমা বেগমের। যেই ছেলে পানি ডেলে খায় না সে রান্না করেছে তাও ভাবির জন্য!!..

ছোঁয়া রাগে অগ্নি দৃষ্টিতে মহুয়ার দিকে তাকালো। ছোঁয়ার বুঝতে বাকি নেই এই জঘন্য খাবার আর কেউ নয় নির্জন বানিয়ে ছিলো তাও ওর জন্য ।

মহুয়া মুচকি হাসলো ছেলেটা আসলেই বাঁচাল আর মজার মানুষ। এক এক জায়গায় এক এক জনকে ফাঁসিয়ে দিলো।

___________

ছোঁয়ার কাল থেকে এক্সাম বই হাতে নিয়ে সারা রুমে হাঁটছে আর বই নিয়ে পড়ছে। আজ সারাদিন আর রাত পড়ে সে সব মুখস্থ করে নিবে।

মহুয়া ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। কালো সেলোয়ার-কামিজ পড়েছে সাথে ওড়না দিয়ে সুন্দর করে ঘোমটা দিয়ে নিলো।

সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যেতে নেয়। ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। কিছু সময় যেতে নিজেকে হাওয়ায় ভাসছে অনুভব করলো। হাতে আর কোমরে কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে নিলো। নিজের অন্য হাত দিয়ে সামনের মানুষটির কলার চেপে ধরে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।

আহনাফ কে দেখে ভয়ে মাথা নিচু করে সরি বলে উঠলো। লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেলো।
আহনাফঃ একটু দেখে শোনে চলে ফেরা করবেন। এখনি পা ভেঙে হসপিটাল ভর্তি হওয়া লাগতো।
মহুয়াঃ জ্বি ধন্যবাদ।

মহুয়া রিক্সা করে হসপিটাল যাওয়ার পথে রাস্তার মাঝে এসে রিক্সা থামিয়ে দিলো রনি।

মহুয়া রনিকে দেখে অবাক হলো। সাথে একটু ভয়ও পেলো।

রনি মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ গাড়ি থেকে নাম।’
মহুয়াঃ রাস্তা ছাড়ুন এটা কোন ধরনের বেয়াদবি!!…
রনিঃ রাস্তার মাঝ খানে সিনক্রিয়েট না করে নেমে আয়।
মহুয়া রেগে রনির দিকে তাকাতেই রনি বিশ্রী হাসি দিয়ে মোবাইল থেকে একটা ছবি সামনে ধরলো। মহুয়ার সারা শরীরে এক ভয়াবহ কম্পন বয়ে গেলো। বুকের ভেতর কেমন ধুকধুক শুরু হলো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে।কিছু বুঝে উঠার আগেই রনি ওর মুখে রুমাল চেপে ধরলো। একটা কালো গাড়ি আসতেই জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিলো।

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে