মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-১২+১৩

0
587

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_১২
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

হাতের লাল টকটকে গোলাপ ফুলগুলো নিয়ে মেয়েটার সামনে এসে দাঁড়ালো।

কলেজের মেয়েরা হ্যাঁ করে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে।

মেয়েটা খুশিতে আত্নহারা হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে লজ্জায় মুখ ডেকে নিলো। জেনো সে ভীষণ লজ্জা পেয়েছে ,।

মহুয়া থমথমে মুখে তাকিয়ে আছে মেয়েটার মুখের দিকে। হঠাৎ করে মেয়েটার মাঝে নিজেকে দেখতে পেলো…

” ১৬ বছরের এক কিশোরী মেয়ে এভাবে মুখে হাত দিয়ে লাজুক হাসছে আর মুগ্ধ হয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। কাঁপা কাঁপা হাতে ফুলগুলো নিয়ে নিলো।

~ আমার দেখা পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দর নারী তুমি মহুয়া। এই ছেড়ে যাওয়ার যুগে, তুমি একটু কষ্ট করে থেকে যেও। আমি দুনিয়াতে এতো এতো নারী থাকতে শুধু তোমাতেই আসক্ত হতে চাই বার বার। তুমি থাকবে তো.??

ছেলেটার এমন মুগ্ধকর কথা সামনে দাঁড়ানো কিশোরী আবারও নতুন করে প্রেমে পড়ে গেলো। ধীর মিষ্টি লাজুক কন্ঠে বলে উঠলো ‘ পলাশ ভাই জীবনে কখনো যদি ছেড়ে যাওয়ার শব্দ আসে তাহলে আমি আমার মৃত্যু বেছে নিবো তাও আপনাকে ছেড়ে যাবো না”

সেই একই পুরুষ, সেই একই কথা, কিন্তু সেই কিশোরীর জায়গায় আজ অন্য নারী।
” ইতিহাস সাক্ষী পুরুষ তুমি শান্ত মস্তিষ্কের এক নিকৃষ্ট খু’নি!ছলনাময় !” এটা কথাটা জেনো খাপেখাপ মিলে গেলো আজ।

মহুয়া হাত মুষ্টি বদ্ধ করে তাকিয়ে রইলো। আজকাল কান্না আসে না কোনো কিছুতে নিজেকে পাথর মনে হয়।

” ছোঁয়া ইনি হলো তুহিন, তোকে সব সময় যার কথা বলি।”

ছোঁয়া মুচকি হেঁসে বললো,’ কেমন আছেন.? ‘
~ জ্বি ভালো, আপনাকে দেখে আরও ভালো হয়ে গেছি। আপনার কথা সব সময় বলে। অনেক ইচ্ছে ছিলো একবার দেখার। কল্পনায় আপনার ছবিও একে নিয়েছি তবে কল্পনার থেকেও বেশি সুন্দর আপনি।

ছোঁয়া তুহিনের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলো। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আমাদের এখন যাওয়া দরকার ‘

ছেলেটার নজর এবার গেলো ছোঁয়ার পেছনে দাঁড়ানো মেয়েটার দিকে।

মহুয়া স্বাভাবিক ভাবে হেঁসে মাথা দোলালো।

হঠাৎ তুহিনের চোখ মুখের রঙ পাল্টে গেলো। এক ঝাঁক ভয় এসে ভীর করলো। ভয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেলো। হাত কাঁপছে সাথে হৃদয় ও। চোখের রঙিন চশমাটা ভালো করে দিয়ে চোরের মতো এদিক ওদিক তাকালো। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো বাঁকা হেঁসে তাকিয়ে আছে। সে কি চোখে বেশি দেখছে.???
ভালো করে তাকালো, না সে ভুল দেখছে না!! ওর সামনে মহুয়া দাঁড়িয়ে আছে।
মহুয়ার এই হাসি সবার কাছে স্বাভাবিক হলেও তুহিন ওরফে পলাশ ঠিক বুঝে গেলো এই হাসির পেছনে কতোটা ভয়ংকর হাসি লুকিয়ে আছে।

মহুয়া ছোঁয়ার হাত ধরে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসলো। আশার সময় একবার পেছনে ফিরে দেখে নিলো তুহিনের ভয়ার্ত মুখটা।

মহুয়া খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে সামনে যা হবে একদম ভালো কিছু হবে না। এতোদিনের লুকোচুরি খেলা হয়তো আজ এই মূহুর্ত থেকে শেষ। আজ থেকে বাড়ির বাহিরে প্রতিটি পা সাবধানে ফেলতে হবে। আজ আবার বুকের ভেতর ভীষণ ব্যাথা করছে। মস্তিষ্কে প্রতিশোধের নেশা চরে বসলো। সে নিজ হাতে শাস্তি দিবে এই মানুষ টাকে।

মহুয়া আর ছোঁয়া একটা রেস্টুরেন্টে আসলো। রেস্টুরেন্টে ঢুকার আগেই নির্জনের সাথে দেখা হলো।
নির্জনঃ এখানে কি..?
ছোঁয়াঃ এখানে কি করতে আসে মানুষ..??
নির্জনঃ এখানে মানুষ খাবার খেতে আসে কিন্তু তুই তো আমার জানা মতে মানুষ না।
ছোঁয়া রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ তাহলে আমি কি এলিয়েন!.?? ‘
নির্জনঃ নাহ্ পেত্নী..।
ছোঁয়া আশেপাশে তাকিয়ে রাস্তার পাশ থেকে ইটের টুকরো হাতে নিতেই নির্জন বলে উঠলো, ‘ আরেএ পাগল কে পাগল বললে রেগে যায়, পেত্নী কে পেত্নী বললে পেত্নীও রেগে যায় কিন্তু তুই কেনো রেগে যাচ্ছিস!..?’

মহুয়া বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া শান্ত হও, চুপ করো এটা রেস্টুরেন্ট।’

ছোঁয়া ইটের টুকরো নির্জনের পায়ে ছুঁড়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকে গেলো।
নির্জন ব্যাথা পেয়ে মহুয়ার দিকে ইনোসেন্ট মুখ করে বলে উঠলো, ‘ ভাবি সরি আপু আপনাকে সুন্দর লাগছে, এভাবে হাসবেন সব সময়। ‘

মহুয়া সাথে সাথে হাসি বন্ধ করে দিলো।
নির্জনঃ চলুন, আমিও রেস্টুরেন্টে এসে ছিলাম।

মহুয়া এই ছেলের ব্যাবহারে মাঝে মাঝে অবাক হয়। সব সময় প্রথম ভাবি বলবে তারপর আপু কিন্তু দেখা যাবে বয়সে মহুয়া নির্জনের থেকে অনেক ছোটো।

মহুয়া, নির্জন, ছোয়া বসে আছে। ছোঁয়া একটু পর রাগী চোখে নির্জনের দিকে তাকাচ্ছে। নির্জন মুচকি মুচকি হাসছে।

মহুয়া আশেপাশে তাকাতে গিয়ে দেখলো ওদের দুই টেবিল সামনে আহনাফ বসে আছে পাশে একটা মেয়ে। মেয়েটা দেখতে ভীষণ সুন্দর । মুখে ভারী সাজ, ঠোঁটে কড়া লাল লিপস্টিক। মহুয়া বিড়বিড় করে বলে উঠলো, ‘ ডাক্তার রেস্টুরেন্টে বসে রোগীর চিকিৎসা করছে। তাহলে হসপিটাল কিসের জন্য!.? অপ্স সব চিকিৎসার মেডিসিন তো আর হসপিটালে থাকে না ‘
ওর পাশেই ছোঁয়া ছিলো। ছোঁয়া ভ্রু কুঁচকে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে সামনে তাকালো। আহনাফ কে দেখেই খুশি হয়ে উঠে দাঁড়ালো। নির্জন ও আহনাফ কে দেখলো।
ছোয়ার খুশি আর বেশি সময় রইলো না। মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেলো। ছোঁয়া নিজের জায়গা বসে বলে উঠলো, ‘ এই মেয়ে কে.?’
মহুয়াঃ হয়তো উনার গার্লফ্রেন্ড।
ছোঁয়াঃ ভাইয়ার তো গার্লফ্রেন্ড নেই ভাইয়া বলেছে।
নির্জনঃ নেই বলেছে হতে কতোক্ষন।
ছোঁয়া মুখ কালো করে নির্জনের দিকে তাকালো।
নির্জন আয়েশ করে মুখে খাবার দিয়ে বলে উঠলো, ‘ আজকের খাবার গুলো অন্য দিনের থেকে তেতু, সবাই গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে আমি সিঙ্গেল বলেই হয়তো।
ছোঁয়াঃ প্রতিদিন একটা করে মেয়ে নিয়ে আসিস আজ তো অন্য রকম লাগবেই।
নির্জনঃ মেয়েটা ভাইয়ার এসিস্ট্যান্ট।
ছোঁয়াঃ তুই চিনিস.?
নির্জনঃ হুম সাথে ভাইয়ার আর ওর মধ্যে কিছু চলছে।
ছোঁয়াঃ তুই সিউর কিভাবে.??
নির্জনঃ ওদের মুখের হাসি দেখে।

ছোঁয়া চুপচাপ তাকিয়ে রইলো আহনাফ আর মেয়েটার দিকে। রাগ হলো ভীষণ মেয়েটার উপর। ইচ্ছে করছে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে আহনাফের থেকে দশ হাত দূরে ফেলতে কিন্তু সাহস তো থাকতে হবে!.

মহুয়া আহনাফের দিকে তাকাতেই আহনাফ ওর দিকে তাকালো। হাত দিয়ে মুখ ডেকে নিলো মহুয়া তাও কিছুই লাভ হলো না আহনাফ দেখে ফেললো ওদের।

___________

বাড়িতে আশার পর থেকে ছোঁয়া একদম চুপচাপ হয়ে আছে।
মহুয়াঃ মন খারাপ..?
ছোঁয়াঃ হুম।
মহুয়াঃ তাহলে ব্যালকনিতে গিয়ে অন্ধকার আকাশের ওই বহু দূরের চাঁদের কাছে মনে জমে থাকা কষ্ট, মন খারাপ খুলে বলো মন হাল্কা হয়ে যাবে।
ছোঁয়াঃ আমার ফ্রেন্ডদের বললে, আম্মুকে বললে বলতো আমার কাছে বলো কি হয়েছে? মন হাল্কা হবে আর তুমি বলছো চাঁদের সাথে বলতে!..।

মহুয়া হাসলো,’ মানুষের কাছে কষ্ট গুলো শেয়ার করার থেকে চাঁদের সাথে শেয়ার করা ঢের ভালো, করে দেখো, আমি আর কিছু বলতে হবে না।’

ছোঁয়া তাই করলো। এক ছুটে ব্যালকনিতে চলে গেলো।

মহুয়া নিচে এসে রান্নাঘরের সামনে দাঁড়ালো।
আমেনা বেগম রান্নায় ব্যস্ত।মহুয়ার দিকে একবার তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ মহুয়া আমার একটা কাজ করে দিবে.?।
মহুয়াঃ জ্বি আন্টি বলুন।
~ আমি একটু কাজে ব্যস্ত তুমি কি আহনাফের রুমে এই কফিটা দিয়ে আসতে পারবে.?
মহুয়া নিষেধ করলো না। কফির মগ হাতে নিয়ে আহনাফের রুমের সামনে আসলো। দরজায় শব্দ করতেই ভেতর থেকেবলে উঠলো, ‘ দরজা খুলা ভেতরে আসতে।

মহুয়া ভয়ে ভয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে আসলো। রুমটা খুব সুন্দর করে গুছানো।

আহনাফ ল্যাপটপ হাতে নিয়ে ব্যালকনি থেকে রুমে আসলো। মহুয়াকে রুমে দেখে অবাক হলো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো , ” আপনি..?’
মহুয়াঃ আপনার কফি।
আহনাফঃ আপনি কেনো এনেছেন.?
মহুয়াঃ আন্টি ব্যস্ত সেই জন্য।
আহনাফ বিছানায় ল্যাপটপ রেখে নিজেও বসলো।
মহুয়াঃ এটা কোথায় রাখব.?
আহনাফঃ আমার হাতে দেন।
মহুয়া হাতে দিয়ে বেরিয়ে আসতে নিলে আহনাফ বলে উঠলো, ‘ দাঁড়ান ‘
মহুয়া দাঁড়াল পেছন ফিরে আহনাফের দিকে তাকাতেই আহনাফ বললো,’ কফিতে মিষ্টি কম হয়েছে। ‘
মহুয়া হাত কচলে বললো,’ আচ্ছা তাহলে দেন আবার বানিয়ে নিয়ে আসি।’
আহনাফ মুচকি হেঁসে কফির মগ দিলো।

মহুয়া নিজে কফি বানিয়ে আনলো।
আহনাফ এবার মুখে দিয়ে বললো,’ মিষ্টি অনেক বেশি হয়ে গেছে। ‘
মহুয়াঃ আমার কাছে তো ঠিক মনে হলো। আচ্ছা আমি আবার বানিয়ে আনছি।

মহুয়া আবার কফি বানিয়ে আনলো।
আহনাফঃ কফি তো ঠান্ডা হয়ে শরবত হয়ে গেছে।
মহুয়ার ভীষণ রাগ হলো তাও নিজেকে সামলে আবার কফি বানাতে গেলো।

নিরুপমা, হালিমা,আমেনা বেগম মহুয়ার এভাবে কফি নিয়ে দৌড়া দৌড়ি দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।

মহুয়া খুব ভালো করে বুঝতে পারছে আহনাফ ইচ্ছে করে এমন করছে। এবার আহনাফের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনা ঠান্ডা কফিতে দুই চামচ হলুদের গুঁড়া, তিন চামচ লবন, এক চামচ মরিচ সাথে বেশি করে চা পাতা দিয়ে স্পেশাল কফি বানিয়ে নিয়ে গেলো।

এতোক্ষন মহুয়ার এই কফি রান্না চোখ বড় বড় করে দেখছিলো সবাই। আজ আহনাফের কফি খাওয়ার সখ আকাশে পাঠাবে।

আহনাফ ব্যাস মজা পাচ্ছে মহুয়াকে খাঁটিয়ে।

মহুয়া এবার হেঁসে আহনাফের দিকে কফি এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘ এবার আমি যাই আমার টিউশনে যেতে হবে।’

আহনাফ কফির দিকে না তাকিয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’ আপনি টিউশন কেনো নিয়েছেন.? আমাদের বাড়িতে কি সব কিছু পাচ্ছেন না.?’

মহুয়াঃ আমার নিজের পরিচয় এবং বাড়ি প্রয়োজন। আর বাড়ি বাড়া নিতে হলে টাকা লাগবে সেই জন্য টিউশন নেওয়া।
আহনাফঃ ওহ।

আহনাফ কফি মুখে দিয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। সে না পাড়ছে ফেলতে আর না পাড়লে গিলতে।
মহুয়াঃ ভালো হয়নি.?
আহনাফ কিছু না বলে চুপচাপ কফির মগের দিকে তাকিয়ে আছে।
মহুয়া আস্তে করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। বাহিরে এসেই হাসতে শুরু করলো। বেচারার মুখটা দেখার মতো ছিলো।

______

মহুয়া টিউশন থেকে ফিরতে ফিরতে বাহিরে অন্ধকার হয়ে গেলো।আশেপাশে তাকিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। কিছু দূর এসেই মহুয়ার পা আপনা আপনি থেমে গেলো। ওর সামনে তুহিন দাঁড়িয়ে আছে।

মহুয়া সতর্ক চোখে আশেপাশে তাকালো বুঝার চেষ্টা করলো কতো জন আছে এখানে!?

তুহিন মহুয়ার সামনে এসে কাতর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ মহুয়া’
মহুয়া অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই এই ছেলেকে খু’ন করবে।
তুহিনঃ তুমি রেগে আছো.? আমি তোমাকে ওখানে রেখে আস্তে চাইনি, আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি বিয়ে করার জন্য নিয়ে গিয়ে ছিলাম কিন্তু ওরা আমাকে আঁটকে ফেলে, আমি গিয়ে ছিলাম টাকা চাইতে! তুমি তো জানো আমার কাছে টাকা ছিলো না। আমি তোমাকে খুঁজতে কতোবার সেখানে গিয়েছি তোমাকে পাইনি। আমি তোমাকে অনেক খুজেছি মহুয়া আমার ভালোবাসা সত্যি ছিলো তাই তো তোমাকে আবার ফিরে পেলাম।

মহুয়া নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েও পাড়লো না। তুহিনের কলার চেপে ধরে ঠাসস ঠাসস করে গালে থাপ্পড় মারতে শুরু করলো।
~ মহুয়া স্টপ! মহুয়া কি করছো.!!??
~ তোকে এখন জীবিত রেখেছি আলহামদুলিল্লাহ বল। তোর ভালোবাসা না মৃত্যু তোকে আমার সামনে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে এসেছে।তুই আমাকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেছিস আর এখন বুঝাতে এসেছিস আমাকে! আমাকে বাচ্চা মনে হয়..? তোর নিখুঁত অভিনয় আমি বুঝতে পারিনি। ভালোবেসে বিশ্বাস করে বাড়ি ছাড়লাম তোর হাত ধরে আর তুই আমার জায়গা করে দিলি পতিতা পল্লীতে বলেই ব্যাগ থেকে কলম হাতে নিয়ে তুহিন কিছু বুঝার আগেই ওর বুকের বাম পাশে কলমটা একদম ঢুকিয়ে দিলো সবটা।

তুহিন বুকে হাত দিয়ে রেগে মহুয়ার চুল ধরতে গেলেই মহুয়া কারাতে মাইর দিয়ে নিচে ফেলে দিলো। রাস্তার পাশ থেকে বড় একটা ইট এনে শরীরের শক্তি দিয়ে তুহিনের মাথায় আঘাত করলো। মাথা ফেঁটে রক্ত পড়ছে। মহুয়া ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ তুই এতো জলদি মরবি না তোকে আমি এতো কম শাস্তি দিয়ে মুক্তি দিবো না । আমার মতো হাজারটা মেয়ের জীবন নষ্ট করেছিস আমি তো ভাগ্যের জুড়ে বেঁচে গেছি কিন্তু বাকি মেয়েগুলো তোদের মতো নরপশুদের প্রেমে ফেঁসে নিজের সব হারিয়েছে। তোর মৃত্যু এতোটা ভয়ংকর হবে যে এমন বিশ্বাস ঘাতকতা করার আগে প্রতিটা পুরুষের বুক কেঁপে উঠবে! এর আগে চারটা খু’ন করেছি তুই আমার শেষ খু’ন।

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_১৩
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

মেঘলা আশেপাশে তাকিয়ে দরজা ঠেলা দিলো ভাগ্য ভালো দরজা খুলা। আস্তে করে মাথাটা ভেতরে দিয়ে দেখে নিলো রুমে শ্রাবণ আছে কিনা! তারপর ধীর পায়ে রুমে ঢুকে দরজা ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে একটা লম্বা শ্বাস নিলো।

এখন মিশন হলো শ্রাবণে মানিব্যাগ খুঁজে বের করা। বিছানার উপর, নিচে, বালিশের কভারের ভেতর, টেবিল সব জায়গায় খুঁজে নিরাশ হলো। কোথাও মানিব্যাগ নেই।

আলমারির দিকে চোখ যেতেই খুশিতে হাত দিয়ে চুল গুলো উড়িয়ে বলে উঠলো, ” চিল মেঘু ভয় পাবি না এটা তোর রুম, আর এখানের সব কিছু তোর জামাইর, এই বিছানা, এই টেবিল, এই রুম, এই আলমারি আর আলমারি ভেতরের সব কিছু। বাহিরে চুরি করলে অপরাধ কিন্তু জামাইর থেকে চুরি করলে অপরাধ নেই।
বলেই আলমারি খুলতে গিয়ে থেমে গেলো ড্রেসিং টেবিলের উপর শ্রাবণের কাপড় ভাজ করে রাখা।
মেঘলা ভাজ করা শার্ট হাতে নিয়ে দেখলো। কালো শার্টটা ভীষণ ভালো লেগে গেলো সাথে সাথে ইচ্ছে জাগলো এটা একবার পড়ে দেখার।

” আমার জামাইর শার্ট গুলো এতো সুন্দর কেনো!!.??”

শ্রাবণ রুম থেকে বের করে দেওয়ার পর মেঘলা শ্রাবণের পাঁচটা শার্ট চুরি করে নিয়ে ছিলো। হয়তো এতো এতো শার্টের ভেতর শ্রাবণ খেয়াল করেনি কখনো।

মেঘলা শার্ট নিজের কাপড়ের উপর পড়ে আয়নার সামনে নিজেকে বার বার দেখছিলো। চুল গুলো জুটি করা ছিলো ছেড়ে দিলো। আয়নার সামনে ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখল কিছু সময়।

শ্রাবণের শার্টের নিচেই ওর মানিব্যাগ ছিলো। মেঘলার নজর গেলো মানিব্যাগের দিকে। ওফ্ফ মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! মানিব্যাগ হাতে নিয়ে বলতে লাগলো,’ আমি চোর হলেও ভালো বউ! বেশি না মাত্র ৫০০ টাকা নিবো। স্বামী আপনি রাগ করবেন না।’ বলেই মানিব্যাগ খুলে দেখলো ভেতরে সব হাজার টাকার নোট। একটা নোট নিয়ে পকেট থেকে ৫০০ বের করে আবার রেখে দিলো কারন সে ভালো বউ।

মেঘলা সব কিছু জায়গায় রেখে শার্টের দিকে তাকালো ইচ্ছে করছে না শার্টটা রেখে যেতে। একটা একটা করে বোতাম খুলে আবার রুমের চারদিকে তাকালো। হঠাৎ কিছু দেখেই এক চিৎকার দিয়ে হাত দিয়ে মুখ ডেকে নিলো। ভয়ে হাত পা কাঁপছে। এখনি বুঝি সে জ্ঞান হারাবে। মনে মনে বলতে লাগলো, ‘ আল্লাহ জীবনে আর এই ঘরে চুরি তো দূর প্রবেশও করবো না শেষ বারের মতো বাঁচিয়ে দাও, অজ্ঞান করে দাও।’

শ্রাবণ ব্যালকনির দরজায় হেলান দিয়ে মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে।
মেঘলা ভয়ে মানিব্যাগ জায়গায় রেখে দিলো একটা একটা করে শার্টের বোতাম খুলে শার্ট খুলে রাখলো। শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনি এখানে!.? ‘
শ্রাবণঃ আমার রুম আমি থাকবো না কে থাকবে.? তুমি এখানে কেনো!.?

মেঘলা কি বলবে ভয়ে ভয়ে হাসলো। মুখে লজ্জা লজ্জা ভাব এনে বলে উঠলো, ‘ আপনাকে দেখতে এসেছি। কতোগুলো বছর হলো দেখিনা ‘

শ্রাবণঃ দেখা শেষ..??
মেঘলাঃ আরেকটু সামনে আসুন ভালো করে দেখতে পাচ্ছি না…

বলেই নিজের গালে থাপ্পড় মেরে বলে উঠলো ‘ মেঘু তোর কি হয়েছে.? এখানে চুরি করতে এসেছিস কাউকে দেখতে নয় পালা।’

শ্রাবণ এগিয়ে আসতে নিলেই মেঘলা চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ এ্যাঁই এ্যাঁই নিজের জায়গায় থাকেন একদম আর এক পা এগিয়ে আসবেন না।’

শ্রাবণ দাঁড়িয়ে গেলো। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

” তোমাকে নিষেধ করেছি এই রুমে আসতে তার পরেও এই রুমে কেনো এসেছো..??”

মেঘলা আমতাআমতা করে বললো,’ আপনাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল। এতো কিউট, গুলুমুলু, হ্যান্ডসাম পুরুষ আমার জীবনে আর দেখিনি তো তাই’

শ্রাবণের রাগ হলো, রাগে কপালের রগ ভেসে উঠলো ঝড়ের বেগে মেঘলার সামনে এসে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।

মেঘলা ভয়ে কাঁপছে।

শ্রাবণ রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকালো মেঘলার দিকে বেচারির আত্মা এখনি দেহ থেকে বেরিয়ে যাবে।

” মিথ্যা কথা আমার একদম পছন্দ না!”

~ আমি….
~ চুপ!! প্রথমত আমার রুমে আমার অনুমতি ছাড়া এসেছো, দ্বিতীয়ত আমার শার্টে হাত দিয়েছো, তৃতীয়ত আমার মানিব্যাগ থেকে টাকা নিয়েছো। এখন বলো আগে কোনটার শাস্তি দিবো..??’

মেঘলা ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে ভেতর, বাহির সব ভয়ে কাঁপছে। বিশ বছরে কোনোদিন ও এভাবে ধরা খায়নি। কোনো ছেলেকেও এতোটা ভয় পায়নি।
~ চুপ থাকলে শাস্তির পরিমাণ বাড়বে।
~ আগে আমার কাছ থেকে দূরে সরে দাঁড়ান।
শ্রাবণ মেঘলা কে ভয় দেখানোর জন্য আরও কাছে এসে দাঁড়ালো।
~ জলদি বলো.!
~ আমার আপনাকে ভয় লাগছে দূরে সরেন।
শ্রাবণ গুণে গুণে দুই পা পিছিয়ে গেলো।

মেঘলাঃ আপনি আমার স্বামী তাই না..??
শ্রাবণ মুখে বিরক্তিকর ছাপ ফেলে বললো, ‘ এটা শুধু নামের, বাধ্য হয়ে তোমার মতো মেয়েকে বিয়ে করতে হয়েছে। যাদের আমার গেইটেও দাঁড়ানোর যোগ্যতা নেই তাদের আজ বাড়িতে থাকতে দিতে হচ্ছে নিজের নামের পাশে নাম দিতে হয়েছে! আমার চোখের সামনে আসতে নিষেধ করে ছিলাম’

মেঘলা ভয় সরে গেলো জেনো সে শ্রাবণের কথায় কষ্ট পেয়েছে। কষ্ট পাবে না কেনো! সেও তো একটা মানুষ। কেউ কি কখনো বলেছে কেনো সে এই পথ বেছে নিয়েছে!..? সবাই শুধু অবহেলা, ঘৃণার চোখেই দেখে এসেছে। এতোদিন কষ্ট না পেলেও আজ শ্রাবণের কথায় ভীষণ কষ্ট পেয়েছে, স্বামী বলেই বুঝি কষ্টটা বুকে তীরের মতো বিঁধেছে!!??
মেঘলাঃ যেভাবেই হোক করেছেন তো! প্রথমত এই রুম আপনার যেখানে আপনি আমার স্বামী সেখানে আপনার আর আমার মধ্যে পার্থক্য আসছে কোথায় থেকে.? আপনার জিনিস মানেই আমার। আর নিজের রুমে আসতে কারো পারমিশন লাগে না…। দ্বিতীয়ত শার্টটা আমার অনেক ভালো লেগেছিলো তাই পড়ে ফেলে ছিলাম তার জন্য সরি। তৃতীয়ত আমার টাকার প্রয়োজন ছিলো, আপনি আমার স্বামী তাই আপনার রুমে এসে ছিলাম, স্বামীর কাছ থেকে টাকা নিতে পারমিশন লাগে না। আপনি উত্তর পেয়েছেন..? আমি এই তিন মাস বাহিরে চুরি, ছিনতাই করবো না, আমি চাই না আপনাদের পরিবারের কোনো সমস্যা হোক।

শ্রাবণঃ যেখানে তুমি নিজেই একটা সমস্যা সেখানে আর চাওয়া না চাওয়ার কি আসে যায়!.. খুব সুন্দর করে যুক্তি দিয়ে দিলে স্বামীর মানেই তোমার। ঠিক আছে আমিও সেটাই মানি, সাথে স্বামীর সেবা করতে হয় সেটা জানো না..?

মেঘলা ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই শ্রাবণ শয়তানি হাসি দিয়ে নিজের অনেকগুলো কাপড় মেঘলার সামনে ফেলে বলে উঠলো, ‘ এই গুলো সাবান দিয়ে হাতে কেচে ভালো করে ধুয়ে ছাঁদে দিয়ে আসো। তারপর বাকি কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছি। ‘

মেঘলা ভালো মতো ফেঁসেছে। এই দেখতে শান্ত, ভদ্র লোক যে আসলেই একটা বজ্জাত কে জানতো!

মেঘলা মুখ ভার করে কাপড় গুলো নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো আর মনে মনে শ্রাবণের চৌদ্দগুষ্ঠিকে বকতে শুরু করলো।

মেঘলা যেতেই শ্রাবণ হেঁসে ফেললো।

______________

মহুয়া আহনাফ কে দেখলেই লুকিয়ে থাকে যেই কফি খাইয়েছে আহনাফ না ওকে এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেয়।

টেবিলে আহনাফ, নির্জন, শ্রাবণ বসে আছে। ছোঁয়া, মহুয়া এসেও বসলো।

মেঘলা নিজের রুমে সব সময় খাবার খায়।

নির্জনঃ ভাই ভাবিকেও ডেকে আমাদের সাথে আনি..?
শ্রাবণ নির্জনের কথায় পাত্তা না দিয়ে খাবার খাচ্ছে।
নির্জন বিড়বিড় করে বলে উঠলো,’ এতো সুন্দর, কিউট বউ রেখে মানুষ একা খায় কিভাবে.? আমি তো আমার বউকে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়ে তারপর নিজে খাবো। বউ কে সাথে নিয়ে সব জায়গায় যাবো।’

ছোঁয়া পাশ থেকে বলে উঠলো, ‘ ওয়াশরুমে গেলেও সাথে নিয়ে যাস কেমন!.?। ‘

সবাই হেঁসে উঠলো ওদের কথা শুনে।
নির্জনঃ এই কটকটি তোরে বলছি সব জায়গায় নাক গলাতে তোর জামাই ঠিক শ্রাবণ ভাইয়ের মতো হইবো দেখে নিস।

শ্রাবণ নির্জনের দিকে তাকাতেই নির্জন ভয়ে বলে উঠলো, ‘ সরি ভাই মুখ ফস্কে সত্যি কথা বের হয়ে গেছে। ‘

শ্রাবণ নির্জনের কথায় পাত্তা না দিয়ে আহনাফের দিকে তাকালো, ‘ তোর হসপিটালের কি খবর..? শুনলাম এসিস্ট্যান্ট খুঁজছিস!’
আহনাফঃ হুম, আগের এসিস্ট্যান্টের বিয়ে হয়ে গেছে।
নির্জনঃ বিবাহিত মহিলা কি তোমার এসিস্ট্যান্ট হতে পারে না..? তুমি অবিবাহিত মেয়ে এসিস্ট্যান্ট খুঁজছ কেনো?
আহনাফ রেগে নির্জনের গালে ঠাসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। বেচারা গালে হাত দিয়ে মহুয়ার দিকে তাকালো কি লজ্জা! একটা মেয়ের সামনে ভাই এভাবে মারলো! এই মুখ সে আর কিভাবে দেখাবে..? তার তো এখন বনবাসে চলে যাওয়া উচিত।

আহনাফঃ মেয়েটার স্বামী চাচ্ছে না তার ওয়াইফ বাহিরে কাজ করুক।
নির্জন মুখে তালা মেরে বসে রইলো। কথা বললে যদি আরেকটা দেয় তাহলে যতোটুকু মানসম্মান ছিলো সেটাও থাকবে না।

ছোঁয়া কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো, ‘ ভাই তোমার তো এসিস্ট্যান্ট লাগবে তাই না..??’
আহনাফঃ হুম।
ছোঁয়াঃ মহুয়াও সাইন্স নিয়ে পড়ছে আর ও একটা জব ও খুঁজছে যেহেতু এসিস্ট্যান্ট লাগবে ওকে নিয়ে নাওও।

আহনাফ ছোঁয়ার থেকে চোখ সরিয়ে মহুয়ার দিকে তাকালো। মহুয়া খাবার মুখে দিতে গিয়ে থেমে গেলো ছোঁয়ার কথা শুনেই।

আহনাফ কিছু না বলে খাওয়ার মধ্যে মন দিলো।

মহুয়া ছোঁয়ার দিকে তাকাতেই ছোঁয়া ইনোসেন্ট মুখ করে বলে উঠলো, ‘ প্লিজ প্লিজ প্লিজ এখানে কিছু বলো না আমি রুমে গিয়ে তোমাকে বুঝিয়ে বলছি।’

শ্রাবণ হাত ধুয়ে উঠে গেলো। যাওয়ার সময় আঁড়চোখে মহুয়ার দিকে তাকালো। যতো চেষ্টা করে মেয়েটার থেকে দূরে সরে যেতে ততই যেনো আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। যত কষ্টই হোক সে ওর জীবনে এই ফুলের মতো মেয়েটাকে জড়াবে না। ওর থেকে দূরে দূরে থাকবে।

রুমে আশার পর থেকে ছোঁয়া মহুয়া কে বার বার বুঝিয়ে যাচ্ছে।
মহুয়া বিরক্ত হয়ে বললো,’ ছোঁয়া আমি কেনো এই বদরাগী, গম্ভীর মানুষটার এসিস্ট্যান্ট হতে যাবো.? আমি পারবো না।

ছোঁয়াঃ ভাইয়া খুব ভালো। আর কোনো মেয়ে এসিস্ট্যান্ট আসলে তুমি ভেবে দেখো মেয়েটা ভাইয়াকে পটিয়ে যদি প্রেমে ফাঁদে ফেলে দেয়।
মহুয়াঃ তাতে তোমার সমস্যা কি..? এমন বদরাগী বেয়াদব লোকের প্রেমে কোনো মেয়ে কখনো পড়বে না।

ছোঁয়া তাও হার মানার মেয়ে নয় বার বার এটা সেটা বলে বুঝাচ্ছে।

মহুয়া যখন বুঝছে না তখন রুম থেকে বের হয়ে আহনাফের রুমের সামনে গেলো। সে যেভাবেই হোক অন্য কোনো মেয়েকে এসিস্ট্যান্ট হতে দিবে না।

______________

পাশাপাশি ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে মহুয়া আর মেঘলা।
মেঘলা নিরবতা ভেঙে বললো,’ ছেলেটাকে হসপিটাল ভর্তি করিয়েছি।
মহুয়াঃ বাঁচবে তো.?
মেঘলাঃ হুম তবে অনেকদিন ভর্তি থাকবে।
মহুয়া মুচকি হাসলো।এতো জলদি মৃত্যু এই লোকের কপালে লেখা নেই।
মেঘলাঃ আমি তোমাদের সব কথা শুনে ছিলাম।ছেলেটা যতো টুকু বুঝলাম তোমার প্রেমিক। কি হয়ে ছিলো তোমার সাথে.? সে কেনো তোমাকে ওই রকম জায়গায় রেখে এসে ছিলো..? কিভাবে এমন জায়গা থেকে মুক্তি পেলে.? তোমার সাথে কি কিছু হয়ে ছিলো ওখানে.? তুমি আসলে কে.? আর খু’ন গুলো কাকে করেছো.??

মহুয়াঃ আস্তে ধীরে প্রশ্ন করো মেঘ।
মেঘলাঃ তুমি আস্তে ধীরে উত্তর গুলো দিলেই হয়।
মহুয়াঃ আজ বলতে ইচ্ছে করছে না।
মেঘলাঃ তোমার বাড়িতে কে কে আছে.?
মহুয়াঃ মামা, মামী দুই ভাই।
মেঘলাঃ বাবা মা..?
মহুয়াঃ নেই আমি ছোটো থাকতেই না ফেরার দেশে পারি জমিয়েছে।
মেঘলাঃ আপন ভাই.?
মহুয়াঃ না। আমার ভাই বোন নেই। আমার আম্মু একজন বড় উকিল ছিলেন, আর আব্বু পুলিশ। আমি যখন জন্ম নেই সেই খবর পেয়ে আব্বু আমার বোনকে নিয়ে হসপিটাল যেতে নেয় মাঝ রাস্তায় গাড়ি এক্সিডেন্ট করে বড় একটা ট্রাকের সাথে সেখানেই তারা মা-রা যায়। সেই কথা শুনতে পেয়ে আম্মুও স্টক করে আমি হয়ে যাই দুই দিনেই এতিম। তারপর আমার দেখা শোনা করে মামা মামী। লোক মুখে শুনতাম আমি অপয়া, অলক্ষী সেই জন্যই আমার জন্মতে আমার পুরো পরিবার শেষ হয়ে যায়।

মেঘলাঃ তোমার কখনো মনে হয়নি এই গুলোর পেছনে অন্য কারো হাত থাকতে পারে.?? তুমি ভেবে দেখো! আমার কাছে অন্য কিছু মনে হচ্ছে।
মহুয়াঃ না কখনো মনে হয়নি। আর আমি আমার আব্বু আম্মুর বিষয় তেমন কিছু জানি ও না। মামা মামী যতোটুকু বলেছে ততটুকুই জানি।
মেঘলাঃ তার মানে তোমরা দুই বোন ছিলে। এই ছেলের সাথে কিভাবে পরিচয়.?
মহুয়াঃ কোনো একদিন তোমার সাথে বসে চায়ের আড্ডা দিবো তখন আমার জীবনের ছোটো গল্পটা বলবো।

মেঘলাঃ আচ্ছা তবে সেই আড্ডা খুব জলদি হোক।
মহুয়াঃ তুমি কেনো এই পেশা বেছে নিয়েছো। পৃথিবীতে এতো কাজ থাকতে!.?
মেঘলাঃ তুমি কেনো খু’ন করে ছিলে দেশে আইন থাকতে.? এতো মানুষ থাকতে..?
মহুয়াঃ রাখো দেশের আইন এরা শুধু বাংলা সিনেমার মতো লাস্ট মুহূর্তে এন্ট্রি নিতে আসে। নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমার কাছে আর কোনো রাস্তা ছিলো না। সাথে এতো গুলো মেয়ের আর্তনাদ আমার মধ্যে অন্য মহুয়াকে খুঁজে পেয়ে ছিলাম।
মেঘলাঃ আমিও নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য এই পথ বেছে নিয়েছি।যখন নিজের মা’কে চিকিৎসার অভাবে কষ্টে হসপিটালের সামনে কাতরাতে কাতরাতে মরতে দেখেছি। আমি সেই দিন অনুভব করে ছিলাম এই পৃথিবীতে বাঁচতে হলে টাকার প্রয়োজন। মা মা-রা যাওয়ার পর খাওয়ার জন্য এক মুঠ ভাত পাইনি কতো লোকের ঘরের দরজায় গিয়েছি ছোটো ছিলাম। একদিন খিদায় রাস্তার পাশে বসে ছিলাম একটা ছেলের হাতে বিস্কুট দেখে তা নিয়ে দৌড় দেই। তারপর থেকে এই পথ বেছে নিলাম।

মহুয়া মেঘলার হাতের উপর হাত রাখে। মেঘলার কষ্টটা বুঝার চেষ্টা করে।

__________

মহুয়া রুমে এসে বললো আমি রাজি।
ছোঁয়া খুশিতে মহুয়াকে জড়িয়ে,ধরে বলে উঠলো, ‘ সত্যি মেহু.?’
মহুয়াঃ হুম।

ছোঁয়াঃ ভাইয়ার কাছে চলো।
মহুয়াঃ কেনো..?
ছোঁয়াঃ ভাইয়া বলে ছিলো তুমি নিজে বললে ভাইয়া ভেবে দেখবে।

মহুয়ার হাতে হসপিটাল যাওয়ার এটা একটা দাড়ুন সুযোগ কিছুতেই হাত ছাড়া করলে চলবে না। পলাশকে শায়েস্তা করতে হলে হসপিটাল যেতেই হবে। কঠিন থেকে কঠিন মৃত্যু দিবে তাকে। বিশ্বাসঘাতক, বেইমানদের কোনো ক্ষমা নেই।

চলবে…..

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে