মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-০৪

0
533

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_4
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

নিরবতা ভাঙে ছোঁয়া বলে উঠলো, ‘ আহনাফ ভাই! ‘

সে দিকে ছোঁয়ার কোনো খেয়াল নেই। সে তো থাপ্পড় মে*রেও শান্ত হয়নি।
~ লজ্জা করে না বোনের বয়সী একটা মেয়ের গায়ে হাত দিতে!.? আপনাদের মতো ছেলেদের শুধু থাপ্পড় নয় জুতা খুলে মা’রা উচিত।
আহনাফ রেগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে তাকিয়ে আছে বোরকা পড়া মেয়েটার চোখের দিকে।

নিচে মা*র খেয়ে পড়ে থাকা ছেলেটা ফাঁকে পালিয়ে গেলো।

মহুয়া আহনাফের হাত থেকে ওড়নাটা এক টানে নিজের হাতে নিয়ে নিলো। রেগে আশেপাশে মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আর আপনারা দেখে দেখে মজা নিবেন! আজ রাস্তায় এক গুন্ডা অন্যের বোন, মেয়ে, বউয়ের সাথে এমন করছে কালজে আপনাদের মেয়ের সাথে এমন হবে না তার কি গ্রান্টি..? প্রতিবাদ না করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখবেন,ভিডিও করবেন। আপনারা একটু প্রতিবাদ করলে, এগিয়ে আসলে এরা মেয়েদের সাথে কথা বলতেও ভয় পেতো।

ছোঁয়া কি বলবে মাথায় কাজ করছে না। মহুয়া এইসব কি বলছে.? এখানে কি হয়ে ছিলো.? ভাই এভাবে মারছিলো কেনো ছেলেটাকে..? এই ওড়না কার.? সব কিছু কেমন এলোমেলো লাগছে!

আহনাফ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো , ‘ শেষ আপনার বক্তব্য দেওয়া..? ‘
মহুয়া রেগে আহনাফের দিয়ে আঙ্গুল দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি আপনাকে পুলিশে দেবো।’
আহনাফ দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ আজ মেয়ে মানুষ বলে চুপ করে আছি তা না হলে এতোক্ষন এখানেই পুঁ*তে ফেলতাম।একটা থাপ্পড়ের পরিবর্তে মুখের সবগুলো দাঁত ফেলে দিতাম। বেয়াদব মহিলা।
শুধু মেয়ে বলে ছেড়ে দিলাম। দ্বিতীয় বার আমার সামনে জেনো আপনার মতো বেয়াদব মহিলাকে না দেখি।

মহুয়া রেগে গেলো কতো বড় সাহস ওকে বেয়াদব মহিলা বলছে!.? মহুয়া আর কিছু বলার আগেই কেউ একছুটে মহুয়ার হাত চেপে ধরলো। হাত ধরে টেনে সেখান থেকে নিয়ে আসলো।

আহনাফ রেগে সবার দিকে তাকিয়ে নিজের গাড়ির ভেতর গিয়ে বসলো। ছোঁয়ার মোবাইলে কল দিলো।

ছোঁয়া ভয় পেয়ে গেলো৷ এখন যদি ভাইয়ার সামনে মহুয়াকে নিয়ে যায় নিশ্চয়ই ভাইয়া মহুয়ার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিবে। না হয় কি করবে আল্লাহ জানে,বাড়িতে তো এই জীবনে আর ওর জায়গা হবে না সোজা বাসা থেকে বের করে দিবে। ছোঁয়া খুব ভালো করে আহনাফ কে চিনে। আজ মহুয়ার জায়গায় অন্য কোনো ছেলে হলে ICU তে ভর্তি করাতে হতো এতোক্ষনে।

মহুয়া তখনো রাগে ফুঁসছে। কতো বড় বেয়াদব ছেলে অপরাধ করেছে তারপরও ওকেই কথা শুনিয়ে গেলো, বেয়াদব মহিলা বললো৷ আরও কয়েকটা থাপ্পড় দেওয়া প্রয়োজন ছিলো।

ছোয়া মহুয়া দিকে ভালো করে তাকালো।, ‘ এতোদিন শান্ত সৃষ্ট, চুপচাপ ভেবে আশা মেয়েটা আজ তার আসল রুপে ফিরলো। ছোঁয়া ব্যাস অবাক হয়ে গেলো এটা ভেবে মহুয়া কে সে বোকা, ভীতু ভেবে ছিলো। এই মেরে তো ছোঁয়া কে টপকে গেছে।তাহলে এমন বোকা,ভীতু সেজে থাকে কেনো.??মাথায় হাজারটা প্রশ্ন, চিন্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

ছোঁয়া মোবাইল রিসিভ করে বলে উঠলো, ‘ ভাইয়া তুমি চলে যাও আমি রিক্সা দিয়ে বাসায় চলে যাচ্ছি। ‘
আহনাফ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘মিথ্যা কেনো বলছো ছোঁয়া!.? আমি তোমাকে এখন দেখেছি।’
ছোঁয়া ভয়ে চুপসে গেলো। আমতাআমতা করে বলে উঠলো, ‘ ভাইয়া আমি রিক্সা থামিয়ে দেখতে গিয়ে ছিলাম কি হয়েছে। এখন আবার রিক্সায়।’

আহনাফ কিছু না বলে কল কেটে দিলো। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো বাড়ির দিকে।

ছোঁয়া একটা গভীর শ্বাস ফেলে মহুয়ার দিকে তাকালো,
~ কি হয়ে ছিলো মহুয়া..?
মহুয়া চুপ করে রইলো।
ছোঁয়ার ব্যাস রাগ হলো।
~ কি হয়েছে.? তুমি ভাইকে কেনো সবার সামনে মে*রে*ছো..?
মহুয়া অবাক হয়ে বললো,’ ভাই!.? ‘
ছোঁয়াঃ তুমি যার গায়ে হাত তুলেছো সে আহনাফ চৌধুরী।
মহুয়ার চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসলো। কঠিন কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ এমন বেয়াদব ছেলে তোমার ভাই!.? পৃথিবীতে সব পুরুষ এক! অন্তত তোমাদের বাড়ির ছেলেরা এমন ভাবতে পারিনি।..
ছোঁয়া ভীষণ রেগে গেলো। সব সহ্য হলেও ভাইদের নিয়ে সে কখনো কটুকথা সহ্য করে না।আর যদি হয় আহনাফের কথা তাহলে আজ মহুয়ার জায়গায় অন্য কেউ হলে ছোঁয়া মুখ বাঁকা করে দিতো। তবুও নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলে উঠলো, ‘ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বলো মহুয়া.. ‘

মহুয়া সবটা বললো। হাতের ওড়নাটাও দেখালো।

ছোঁয়া গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ আমার ভাই এমন নয়। এখানে তুমি ভুল বুঝেছো। ভাই যাকে মা’র ছিলো সে এই এলাকার বখাটের লিডার রনি। প্রতিদিন একটা না একটা মেয়েকে বিরক্ত করা ওর প্রধান কাজ।

তখনি ওদের সামনে ওই মেয়েটা এসে দাঁড়ায়।
মহুয়া ওড়না ওই মেয়ের হাতে দেয়। মেয়েটা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
ছোঁয়া মেয়েটার সামনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ তোমার সাথে রনি আর ওর দল-বলরা বেয়াদবি করে ছিলো..?
মেয়েটা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো।

ছোঁয়া মহুয়ার দিকে ফিরে আহত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ এটা কি করলে মহুয়া!..? ‘

মহুয়া উপরে নিজেকে শান্ত রেখে ছোঁয়ার দিকে তাকালো কিন্তু ভেতর ভেতর অনুতপ্ত হয়ে পড়লো। না জেনে এমনটা করা একদম উচিত হয়নি। কিন্তু ওর কি দোষ মেয়েটা যা বললো সব তো আহনাফের সাথে মিলে গিয়ে ছিলো হাতেও ওড়না ছিলো। সামনে কি হতে যাচ্ছে ওর সাথে!..?

____

রাগে চোখ দিয়ে আগুন জ্বলছে। বাড়িতে প্রবেশ করেই দোতলায় নিজের রুমে চলে আসলো।রুমে ঢুকেই ধরাস করে দরজা’টা লাগিয়ে দিলো। গায়ের শার্ট টা খুলে বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেললো। চশমা খুলে টেবিলের উপর রেখে ওয়াশরুম ঢুকে ঝরনার নিচে দাঁড়িয়ে রইলো। রাগে ইচ্ছে করছে মেয়েটার গাল লাল করে ফেলতে৷ কতো বড় সাহস আহনাফ চৌধুরীর গায়ে হাত তুলে! এই মেয়ে দ্বিতীয় বার ওর সামনে পড়লে জীবন নিয়ে নিবে৷ আস্ত রাখবে না এই মেয়ের৷ খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিবে আহনাফ চৌধুরীর গায়ে হাত তুলার পরিণাম কতোটা ভয়ংকর বেয়াদব মহিলা।

________

ছোঁয়া বিছানার উপর বসে গম্ভীর হয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মহুয়া কে দেখে মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি সেই আগের মতো শান্ত হয়ে আছে।

ছোঁয়াঃ তোমার ভয় করছে না মহুয়া..?
মহুয়া শান্ত দৃষ্টিতে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ না ‘
ছোঁয়াঃ মহুয়া তুমি জানো এই বাড়ির সব থেকে রাগী ছেলে আহনাফ চৌধুরী। যেমন রাগী তেমনি খুব ভালো মনের মানুষ। ভাই কখনো এমন কাজ করতে পারে না তুমি সন্দেহের বসে এমন কাজ কিভাবে করলে! ভাই ভীষণ কষ্ট পেয়েছে। বড় আম্মু জানতে পারলে এক মূহুর্ত আর এই বাড়িতে তোমার জায়গা থাকবে না। সবার ভীষণ আদরের আহনাফ ভাইয়া। ভাইয়ার সামনে ভুলেও যেও না। তুমি বোরকা পড়ে মুখ ডাকলে কি হবে! তোমার চোখ দেখলেই ভাই চিনে ফেলবে তারপর নিশ্চিত এই বাড়ি থেকে বের করে দিবে।দাদাভাই ও কিছু বলতে পারবে না।

মহুয়া চুপচাপ ছোঁয়ার কথা শুনে বেলকনিতে চলে গেলো। সে তো জানতো না, এখানে ওর দোষ কোথায়..? এখন আর নিজের জন্য ভয় হয় না। চোখ বন্ধ করতেই সমস্ত সুন্দর স্মৃতি গুলো ঝাপসা হয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠে। আস্তে আস্তে জীবন থেকে সুন্দর স্মৃতিগুলো মুছে যাচ্ছে। কতোগুলো জা*নো*য়া*রের মুখ ছাড়া স্মৃতির পাতা শূন্য। সে শুধু বাঁচতে চায় পি*শা*চটার মাথা থেকে দে*হটা আলাদা করে ফেলার জন্য!. ভালোবাসার নামে ছলনা করা পুরুষটির দেহ থেকে হৃদয়টা টেনে বের করে ফেলবে, প্রতারক, ঠকবাজ সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে তার ভালোবাসা, সম্মান আর সব শেষে জীবন নিয়ে খেলার অধিকার কে দিয়েছে..?

__________

রাতে সবাই ডাইনিং বসে আহনাফের জন্য অপেক্ষা করছে।
আহনাফ নিজের রুমে দরজা আঁটকে বসে আছে।
ছোঁয়া ভয়ে ভয়ে দুইবার ডেকে এসেছে। আহনাফের ভীষণ কান্না আসছে এখন তার।
শ্রাবণঃ আহনাফের কি শরীর খারাপ.?
নির্জনঃনা ভাইয়ার মন ভালো না কোনো কারনে ভীষণ রেগে আছে।

আমেনা বেগম সবাইকে সব কিছু সামনে দিয়ে নিজেই ছেলেকে আনতে গেলেন।

আনোয়ার চৌধুরী মহুয়া কে কলেজের কথা জিজ্ঞেস করলেন। কেমন লাগলো..? আরও অনেক কথা। মহুয়াও সুন্দর করে উত্তর দিলো।

শ্রাবণ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো৷ মেয়েটা সব সময় মাথা নিচু করে রাখে৷ কখনো হাসে না মুখ স্বাভাবিক। প্রয়োজনের বাহিরে কোনো কথাও বলে না৷ এতো বড়ঘোমটা দিয়ে রাখতে কি বিরক্ত লাগে না..?

নির্জন শ্রাবণের দিয়ে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ এভাবে হ্যাবলার মতো তাকিয়ে না থেকে খাবার খাও৷ আমার আপসোস লাগছে আমার এতো হ্যাডসাম ভাইটাকে পাত্তা দিচ্ছে না হবু ভাবি!! ভাই কিভাবে ভাবিকে পটাবে সেটাই তো বুঝতে পারছি না।ভাবি তো ভুলেও তোমার দিকে তাকায় না।এখন যদি জিজ্ঞেস করি এখানে শ্রাবণ কে ভাবি মনে হয় বুঝতেই পারবে না এখানে শ্রাবণ কে। বলেই হেসে ফেললো।

শ্রাবন হতাশার নিশ্বাস ফেলে মহুয়ার দিকে তাকালো নির্জন মিথ্যা কিছু বলেনি।

শ্রাবণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আবার বললো, ‘ কেনো পটানো কি অসম্ভব কাজ নাকি..? আর আমি পটাবো কেনো আমি তো আস্তে আস্তে ভালোবাসতে শিখাবো।’

নির্জন বিরক্ত হলো,’ তুমি আস্তে আস্তে ভালোবাসা শিখানোর আগেই যদি বিড়াল এসে কবুতর নিয়ে চলে যায়। তুমি আজ থেকে আমার কথায় চলো দেখবে এক সপ্তাহে ভাবি তোমাকে জড়িয়ে ধরে বলছে ” শ্রাবণ আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না ”

শ্রাবণ নির্জনের নাটকীয় কথায় ফিক করে হেঁসে ফেলে৷

আফরোজা বেগম শ্রাবণ আর নির্জনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে’ কি হয়েছে.? ‘

শ্রাবণঃ একটু ভাইদের মধ্যে কথা হচ্ছিলো দাদিজান।
আফরোজা বেগমঃ তোমার কি সন্ন্যাসী হওয়ার সখ জেগেছে নাকি.?
শ্রাবণ একবার আফরোজা বেগমের দিকে নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ নির্জন দেখতো আমাকে দেখে কি সন্ন্যাসীদের মতো লাগছে.? আবার ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ ছোঁয়া আমাকে দেখে কি সন্ন্যাসী মনে হচ্ছে..? ‘

ছোঁয়াঃ একদম না আমার ভাই দেখতে তো হিন্দি মুভির হিরোদের থেকেও হ্যান্ডসাম।
শ্রাবণ বিজয়ী হেঁসে দাদির দিকে তাকালো।

শ্রাবণের এমন বাচ্চামু কাহিনি দেখে তেতে উঠলেন আফরোজা বেগম।

~ আমি মেয়ে দেখছি তোমার জন্য একসপ্তাহের মধ্যে তোমার জন্য মেয়ে ঠিক করবো। পড়ের সপ্তাহে আহনাফের জন্য। নাতির বউ বাচ্চা দেখে শান্তিতে মরতে চাই।

শ্রাবণ বিড়বিড় করে বলে উঠলো,’ মেয়ে খুঁজার কি আছে, তোমাদের চোখের সামনেই তো মেয়ে আছে।

নির্জন মুখটা শুখনো করে দাদির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ তা বুড়ি সবার বিয়ে নিয়ে ভাবছো আমার যে একটা বউ নেই সেটা মনে নেই! কয়েকদিন পর শীত আসছে আমি আর একা ঘুমাতে পারবো না। ভীষণ শীত লাগে আমার জন্যও বউ দেখো তৃতীয় সপ্তাহে আমি বিয়ে করবো। ২৩টা বসন্ত চলে গেলো বউয়ের মুখ দেখি না।এখন শীতে বউয়ের মুখ দেখিয়ে দাও এর পরের শীতে বাচ্চাকাচ্চার মুখ দেখিয়ে দিবো।

মহুয়া হাত দিয়ে মুখ আড়াল করে হেঁসে যাচ্ছে। ছোঁয়া হুঁ হুঁ করে হেঁসে উঠলো।

শ্রাবণ বেআক্কেল মতো নির্জনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে কোথায় কি বলতে হয় এই ছেলে তাও জানে না!ভাগ্যিস আজাদ চৌধুরী আর মিরাজ চৌধুরী আগে আগে খেয়ে নিজের রুমে চলে গেছেন।

আফরোজা বেগম নির্জনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন প্রয়োজন হলে আরেকটা কোলবালিশ নিয়ে আসো। যতোদিন নিজে কোনো কাজে মন দিচ্ছো না ততদিন শশুরবাড়ির মুখ দেখবে না।

নির্জন বিড়বিড় করে বলে উঠলো, ‘ শশুরবারির মুখ দেখে কি হবে বউয়ের মুখ দেখিয়ে দিলেই হয়।’

আমেনা বেগম আহনাফ কে নিয়ে আসলেন।
একটা চেয়ার টেনে আহনাফ বসে পড়লো। মুখটা গম্ভীর করে আছে। কেউ আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলো না আহনাফের মুখের দিকে তাকিয়ে।
শ্রাবণঃ কি হয়েছে..? মন খারাপ কেনো.? রেগে আছো কেনো.? কিছু কি হয়েছে.??

আহনাফ কারো দিকে না তাকিয়ে প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে।

শ্রাবণ উত্তর না পেয়ে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।

মহুয়া চুপচাপ খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ালো। এখান থেকে যেতে পারলেই বাঁচে।

পা বাড়িয়ে আহনাফের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পেছলে পড়ে যেতে নেয় ভয়ে চোখ বন্ধ করে সামনের কিছু একটা খামচে ধরে।
আহনাফ ব্যাথায় দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে থাকে সামনের দিকে ।

মহুয়ার কপাল বাড়ি খেয়েছে আহনাফের চেয়ারে আর হাত দিয়ে খামচে ধরেছে আহনাফের বুকের একপাশের শার্ট। হাতের নখ গিয়ে বিঁধেছে আহনাফের বুকে।

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো।
আমেনা বেগম মহুয়ার কাছে এসে বলে উঠলো, ‘ বেশি ব্যথা পেয়েছো.?’

মহুয়া মাথা নিচু করেই বলে উঠলো, ‘ আমি একদম ঠিক আছি। ‘

হালিমা চৌধুরী অবাক হয়ে বলেন,’ ভালো জায়গায় কিভাবে পড়ে গেলে..?’

মহুয়া এক হাত নিচে রাখে। বুঝার চেষ্টা করে নিচে কি ছিলো।হাত নিচে রাখতেই অনুভব করে তেল জাতীয় কিছু। কিন্তু এখানে কে ফেলেছে.? আর কেনো ফেলেছে..? একবার ঘার ঘুরিয়ে রান্না ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নিরুপমার দিকে তাকায় মহুয়া।

আহনাফ দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ হাত সরিয়ে উঠে দাড়ান। আর না হয় সারা রাত এখানে বসে থাকুন আমার শরীর থেকে হাত সরান।’

মহুয়া খেয়াল করেনি কাকে আঁকড়ে ধরে ছিলো।মুখ ঘুরিয়ে আহনাফের দিকে তাকায়, ভয়ে জলদি হাত সরিয়ে নেন। একটু ধরেই তো ছিলো তাই বলে রেগে যাওয়ার কি আছে! বেয়াদব লোক একটা।

মহুয়া হাত সরিয়ে নিতেই নিজের সামনে আরেকটা হাত দেখতে পায়। মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে শ্রাবণ হাত বাড়িয়ে আছে মহুয়ার দিকে।

মহুয়া বিরক্ত হয়ে ‘চ’ শব্দ করে শ্রাবণের হাত না ধরে নিজেই উঠে দাঁড়ায়। কারো দিকে না তাকিয়ে সিঁড়ির দিকে জেতে জেতে বিড়বিড় করে বলে উঠে, ‘ একজনকে বাঁচার জন্য আঁকড়ে ধরেছি বলে অপমান করলো তো আরেকজন হাত বাড়িয়ে মানবতা দেখাচ্ছে।’

নির্জন মুচকি মুচকি হেঁসে শ্রাবণের দিকে তাকাচ্ছে, আহারে বেচারা।

আহনাফ ছোঁয়ার দিকে তাকালো। ছোঁয়া ভয়ে ভয়ে খাবার খাচ্ছিলো। আহনাফকে তাকাতে দেখে খাবার রেখে বলে উঠলো, ‘ আমি আসি খাওয়া শেষ। ‘

আহনাফ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ আমি রুমে যাওয়ার পর আমার রুমে আসবে, এক মিনিট দেরি হলে তার জন্য শাস্তি দেওয়া হবে ।’

ছোঁয়ার আত্মা শুকিয়ে গেলো। আহনাফ কি বলবে ভাবতেই।

চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে