মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-০৩

0
536

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_3
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

ছোঁয়া মহুয়া কে জিজ্ঞেস করলো,’ কি হয়েছে এভাবে ভয় পেয়ে আছে কেনো…?’
মহুয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
~ আরেএ মেহু বলবে তো কি হয়েছে..?
মহুয়া ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই ছোঁয়া হেঁসে বললো,’ এতো বড় নাম ডাকতে ভালো লাগে না, তাই ছোটো করে মেহু ডাকবো।’
এই প্রথম মহুয়া মুচকি হাসলো।
ছোঁয়া মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে বললো,’ মেহু তোমাকে হাসলে ভীষণ কিউট লাগে, সব সময় হাসবে।’
মহুয়া ছোঁয়া কে কিছু বলার আগেই ছোঁয়া বলে উঠলো, ‘ চলো আজ থেকে আমাদের রুম পাশের রুমটা। এই রুম স্পেশাল কারো জন্য। ‘
মহুয়া একবার দরজার দিকে তাকিয়ে চলে গেলো নিজের নতুন রুমে।

______

রাতে এক এক করে বাসায় সবাই আসলো।

বাসার সবাই ব্যস খুশি আহনাফের আশাতে। ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে নিজের রুমে বসে আছে। এখনো রুম থেকে বের হয়ে আহনাফের সাথে দেখা করেনি।
আহনাফ দাদাজান, আব্বু, চাচ্চু সবার সাথে কোশল বিনিময় করে বসলো।

শ্রাবণ আহনাফের সাথে কথা বলে ফ্রেশ হতে নিজের রুমে গেলো।

আহনাফ সবার জন্য গিফট নিয়ে এসেছে। এক এক করে সবার গিফট বের করে দিলো।

ছোঁয়ার জন্য গিফট বের করে আশেপাশে খুঁজলো।

আহনাফঃ ছোঁয়া কি বাসায় নেই.?
হালিমা বেগমঃ ছোঁয়া তোমার জন্য সারপ্রাইজ সাজিয়ে রেখে ছিলো। কিন্তু তুমি নিজেই সবাই কে সারপ্রাইজ দিতে না জানিয়ে চলে আসলে তাই হয়তো রাগ করে নিজের রুমে বসে আছে।

নির্জনঃ ভাই এই মেয়ে শুধু শুধুই গাল ফুলাবে। বেশি না গিফটের কথা শুনলেই দেখবে নাচতে নাচতে গিফটের সামনে চলে আসবে। যতসব ঢং।

আহনাফঃ নির্জন ছোঁয়া আমাদের ছোটো বোন রাগ, অভিমান করলে আমাদের সাথেই করবে। যে ওকে নিয়ে আয়।
নির্জনঃ সরি ভাই এই বেয়াদব মেয়ের সামনে আমি যেতে চাই না। ছোটো বোন না ছাই, ওকে আমি কোনো বোন মানিনা, কিসের বোন সারাদিন আমার পেছনে বাঁশ দেওয়ার জন্য পরে থাকে বেয়াদব মেয়ে একটা।

শ্রাবণ রেগে নির্জনের মাথা গাট্টি মারতেই নির্জন চুপ হয়ে গেলো।

শ্রাবণ আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আহনাফ তুই এখনো ছোঁয়ার সাথে কথা বলিসনি.?
আহনাফঃ আমি বাসায় আশার পর তো ছোঁয়ারাণী বাসায় ছিলো না।

আনোয়ার চৌধুরী বসে বসে ভাইদের কথা শুনলো। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া রুমে আছে গিয়ে নিয়ে আসো।’

আহনাফ দাদাজানের কথা শুনে ছোঁয়ার রুম কোনটা জিজ্ঞেস করলো।

নির্জন মোবাইল বের করে গেইমস খেলতে লাগলো। এইসব ড্রামা দেখার থেকে গেইমস খেলা ভালো। এমনিতেই একটু পর নতুন গার্লফ্রেন্ড কল দিবে।

আহনাফ রুমের সামনে গিয়ে কয়েক বার কড়া নাড়লো। ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা ঠেলে রুমে আসলো।
বেলকনিতে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুঝলো ছোঁয়া রাগ করে দাঁড়িয়ে আছে।
আস্তে আস্তে ছোঁয়ার পেছনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ আমাদের ছোট্ট ছোঁয়ারাণী দেখি ভীষণ বড় হয়ে গেছে! এই যে ভাইয়া সরি বলছি রাগ কি কমেছে..? নিচে আসো ভাইয়া তোমার জন্য চকলেট এনেছি।

মহুয়া কফি হাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো৷ পেছন থেকে কোনো ছেলের এমন কথা শুনে বুঝলো কেউ ওকে ছোঁয়া ভাবছে। হয়তো ছোঁয়ার ভাই। মহুয়ার চোখ জলে ভরে উঠলো, ঠিক এমন ভাবে মহুয়া রাগ করলে ওর ভাই রাগ ভাঙাতো,ঘুরতে নিয়ে যেতো, আইসক্রিম, চকলেট নিয়ে আসতো মন খারাপ থকলে। আজ ওরা নিশ্চয়ই সব জায়গায় ওকে খুঁজছে তবে ভালোবেসে নয় ঘৃণা ভরা চোখ দিয়ে ।

মহুয়া মাথার ওড়না ঠিক করে পেছন ফিরে তাকালো।
আহনাফ ছোঁয়া রুমে অন্য কাউকে দেখে লজ্জা পেয়ে গেলো। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে বলে উঠলো, ‘ সরি আমি ছোঁয়ার রুম ভেবে আপনার রুমে প্রবেশ করে ফেলেছি।’
মহুয়া আহনাফের দিকে একবার তাকালো ছেলেটা অন্য দিকে তাকিয়ে চলে যাচ্ছে।
~ ছোঁয়ার রুম এটা।
আহনাফ থামলো। কিন্তু পেছন ফিরে তাকালো না।
~ ছোঁয়া কে বলবেন আহনাফ চৌধুরী নিচে ওর জন্য অপেক্ষা করছে। বলেই দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

ছোঁয়া ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বিছানায় বসলো।
মহুয়া আহনাফ চৌধুরী রুমে এসেছে বলতেই চোখ বড় করে তাকালো। এক ছুটে রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসলো।
আফরোজা বেগম ছোঁয়াকে এভাবে আসতে দেখে বলে উঠলো, ‘ কি হয়েছে..? ‘
ছোঁয়া ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলো, ‘ কি ব্যাপার সুন্দরী এভাবে বউ সেজেছো কেনো.?
আফরোজাঃ কেনো তোর হিংসে হচ্ছে!
ছোঁয়াঃ এ্যাঁহ আমি কোন দুঃখে তোমাকে হিংসে করতে যাবো! নানাজান আজ তোমাকে দেখলে আবার তোমার প্রেমে পিছলে পড়বে। লাল শাড়ি পড়ে নতুন বউ সেজে বসে আছো।

ড্রয়িং রুমে সবাই হেঁসে উঠলো।
নির্জন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,’ তুই এভাবে সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছিস..?’
বিরক্ত হয়ে তাকালো ছোঁয়া। বেয়াদব ছেলে একটা। সব জায়গায় নাক না গলালে পেটের ভাত হজম হয় না!..

ছোঁয়া শ্রাবণের পাশে গিয়ে বসলো। আহনাফ কে অনেকটা ভয় পায় ছোঁয়া। এই বাড়ি দিয়ে আহনাফ ভীষণ রাগী আর গম্ভীর। শুধু মাত্র আফরোজা বেগমের সাথেই একদম ফ্রী।

ছোঁয়া আড়চোখে আহনাফের দিকে তাকাতেই আহনাফ ওর সামনে অনেকগুলো চকলেটের বক্স আর সাজগোজের জিনিস রাখলো।
ছোঁয়া অভিমানী সুরে বলে উঠলো, ‘ আমি কতো প্লেন করে রেখে ছিলাম আর তুমি সব শেষ করে দিলে!..

নির্জন বিড়বিড় করে বলে উঠলো ‘ ড্রামা শুরু।’

আহনাফঃ কাল আবার নতুন করে বাসায় আসবো তুমি সব সারপ্রাইজ করে রাখবে তাহলেই হয়।

ছোঁয়াঃ ধুর জেনেশুনে কিভাবে সারপ্রাইজ হয়..’
ছোঁয়া হঠাৎ বলে উঠলো, ‘ মহুয়ার জন্য কি এনেছো.??’
সবাই ছোঁয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। সবার তাকানো দেখে ছোঁয়া হেঁসে বলে উঠলো, ‘ মনে ছিলো না ভাই তো ওকে চিনে না।’
আহনাফ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,’ মহুয়া কে.?’
নিরুপমা কোথায় থেকে ঝড়ের গতিতে এসে বলে উঠলো, ‘ আমি বলছি।’

প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবটা শুনে নির্জন হাসতে হাসতে বলে উঠলো, ‘ আমরা তো আরেকটা নতুন দাদি পেতে যাচ্ছিলাম, আফরোজা বেগম বুড়ি হয়ে গেছে এখন একটা যুবতী দাদি দাদাভাইয়ের জন্য প্রয়োজন। এখন ওই মেয়েকে বলো রাজি হলে কাজী ডাকি।

শ্রাবণ ভীষণ বিরক্ত হলো নির্জনের এমন কথা শুনে। মহুয়াকে নিয়ে কোনো কথাই ওর পছন্দ হয় না। একবার সামানা সামনি দেখলে নিজের জন্য কাজী ডাকতে শুরু করবে সেই ছেলে দাদার জন্য ডাকবে ভাবতেই আবার হাসি পেলো।

সবাই হেঁসে উঠলো নির্জনের কথা শুনে আফরোজা বেগম গম্ভীর হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে আছেন।
আহনাফ আর কোনো আগ্রহ দেখালো না ওই মেয়ের বিষয়।
শ্রাবণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ছোঁয়ার রুমের দরজার দিকে। একবার যদি মহুয়াকে দেখতে পারে সেই আশায়।

মহুয়া মোবাইলটা বের করলো। একমাত্র এই মোবাইল ওর কাছে আছে। তাও সিম নেই। সিমটা খুলে পানিতে ফেলে দিয়ে ছিলো।

মাথা ভীষণ যন্ত্রণা করছে,চোখ জ্বলছে, কয়েকবার মাথায় পানি দিলো।

____

আমেনা বেগম রান্না শেষ করে সবাই কে ডাকলেন টেবিলে।

সোফায় নির্জন আর আহনাফ বসে আছে। কিছুটা দূরে ছোঁয়া টিভি দেখছে।

নির্জনঃ আচ্ছা ভাই ইউরোপের মেয়েরা অনেক সুন্দর তাই না.?
আহনাফঃ হুম..
নির্জনঃ তোমার তো নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ড আছে..?
ছোঁয়া কান খাঁড়া করে ওদের কথা শুনছে।
আহনাফঃ নাহ্..

ছোঁয়া খুশি হয়ে মনে মনে নেচে নিলো।

নির্জনঃ কি বলো.? আজকাল এমন ছেলে আছে যে গার্লফ্রেন্ড নেই! তুমি নিশ্চয়ই মিথ্যা বলছো।আমি দেখেছি ইউরোপের মেয়েরা একদম ফর্সা,কি সুন্দর ফিগার।
আহনাফ নির্জনের দিকে তাকাতেই নির্জন চুপ হয়ে গেলো।
ছোঁয়া সুযোগ পেয়ে বলে উঠলো, ‘ ভাইয়া তোমার কেমন মেয়ে পছন্দ..?
আহনাফ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে ছিলো। ছোঁয়ার কথা শুনে বলে উঠলো, ‘ এখনো ভেবে দেখিনি।’
ছোঁয়াঃ বলো না ভাইয়া।সবার তো একটা পছন্দ আছে।

আহনাফ চুপ করে কিছু একটা ভেবে বললো,’ শ্যামবর্ন গায়ের রং, চোখ বেশি বড় নয় আবার ছোটো না,চুল গুলো কোমর পর্যন্ত, হাইট ৫.৪-৫ এমন হলেই হবে।’

ছোঁয়া মন খারাপ করে নিজের দিকে তাকালো, ছোঁয়া উজ্জ্বল ফর্সা, চোখ বেশি বড় না তবে ওর সাথে একদম ঠিক আছে, চুল কাঁধের একটু নিচে পড়ে, হাইট ৫.২-৩।

নির্জন হেঁসে বললো, ‘ ভাই যদি মেয়ে ফর্সা হয়, চোখ বড় হয়, চুল হাঁটু অব্দি হয়, হাইটে ৫.৫ হয় তাহলে তুমি কি করবে..?

আহনাফ নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আচ্ছা তুই মনে কর এমন মেয়ের সাথে তোর বিয়ে হলো। তুই কোনো এক কারনে ঝগড়া লাগলি তোর বউ হঠাৎ রেগে গেলো, হাতে একটা চাকু নিয়ে তোর সামনে দাঁড়ালো বড় বড় চুল গুলো বাতাসে উড়ছে, রেগে বড় বড় চোখ লাল করে তোর দিকে তাকিয়ে আছে, ফর্সা মুখ সাথে এমন ভয়ংকর অবস্থা ঠিক দেখতে কেমন লাগবে তোর বউকে..?

ছোঁয়া চোখ বন্ধ করতেই সামনে মহুয়ার এমন ছবি ভেসে উঠলো ভয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো,” ডাইনী!!”

নির্জন আর আহনাফ হুঁ হুঁ করে হেঁসে উঠলো।

ছোঁয়া রেগে উঠে চলে আসলো।

_________

সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে।
আনোয়ার চৌধুরী ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’সুইটহার্ট মহুয়া কোথায়..?’
ছোঁয়াঃ সুইটহার্ট মেহুর মাথা ব্যথা।
আনোয়ার চৌধুরীঃ ওকে নিয়ে আসো খাবার খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নিলেই ব্যথা কমে আসবে।
ছোঁয়া উঠতে নিলে নিরুপমা বলে উঠলো, ‘ আব্বা মেয়েটার জন্য উপরে খাবার পাঠিয়ে দেই।’
নিরুপমা কিছুতেই চান্না মহুয়া নিচে আসুক।

আফরোজা বেগমঃ কেনো মাথা ব্যথা, পা তো আর ব্যথা না যে নিচে এসে খেতে পারবে না৷ ছোঁয়া নিয়ে আসো।

আহনাফ একটু কিছু মুখে দিয়ে উঠে গেলো।খেতে ইচ্ছে করছে না। একটু বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন।

ছোঁয়া মহুয়াকে নিয়ে নিচে নেমে আসলো।
শ্রাবণ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা সব সময় ঘোমটা দিয়ে মাথা নিচু করে রাখে। এটা দেখতে ভীষণ ভালো লাগে।
শ্রাবণকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নির্জন সিঁড়ির দিকে তাকালো।

নির্জন শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এটা আবার কে..?’
শ্রাবণঃ মহুয়া..
নির্জনঃ মেয়েটা তো অনেক সুন্দর।
শ্রাবণঃ ভাবির চোখে দেখ।
নির্জন খাওয়া থামিয়ে ভাইয়ের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
শ্রাবণঃ এভাবে না তাকিয়ে খাবার গিল।
নির্জনঃ কি ব্যাপার ভাই। ভাবির চোখে কেনো দেখবো..?
শ্রাবণঃ আমার তো মনে হয় না ভেঙে ভেঙে তোকে বুঝিয়ে বলতে হবে।
নির্জন মন খারাপ করে মহুয়ার দিকে আরেক বার তাকালো। এতো সুন্দর মেয়েটাকে সে পটাতে পারবে না ভাবতেই খাবার আর গলা দিয়ে নামছে না!। যতোই হোক ভাই এই প্রথম কোনো মেয়েকে পছন্দ করেছে ভাবির নজরে কেনো কষ্ট হলেও আজ থেকে ভাবি বলে ডাকবে সে। হঠাৎ মন খুশি হয়ে গেলো ভাবি এতো সুন্দর ভাবির কোনো বোন থাকলে নিশ্চয়ই এর থেকে আরও বেশি সুন্দর হবে! আর তখন সে নিজের পাওয়ার দিয়ে পটিয়ে বিয়ে করে নিবে। তার চগে মহুয়ার সাথে ভাব করতে হবে তারপর কৌশলে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে বোন আছে কি না।

মহুয়া বসতেই আনোয়ার চৌধুরী এটা সেটা জিজ্ঞেস করলো৷ শ্রাবণ কে বললো ওর জন্য মেডিসিন নিয়ে আসতে।

শ্রাবণ তো মহা খুশি। ভালোবাসা বুঝি এমনি হয়, হুট করে জীবনে চলে আসে, বসন্তের মতো সর্বক্ষন মনে এক আনন্দের বাতাস বইতে থাকে। প্রিয় মুখটা একবার দেখলেই হৃদয় শীতল হয়ে যায়। মানুষটার সাথে একটু কথা বলার জন্য হাজারটা অজুহাত খুঁজতে থাকে।

আফরোজা বেগম মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ সারাদিন রুমে আঁটকে না থেকে সবার সাথে বসে কথা বলতে পারো, ছাঁদে যেতে পারো। সারাক্ষণ রুমে আঁটকে থাকলে নিজেকে আরও একা মনে হবে। সবার মাঝে বসে নিজের মনকে শান্তি দেওয়ার জন্য টুকটাক কথা বলতে পারো।

মহুয়া একবার আফরোজা বেগমের দিকে তাকায়। মহিলাটাকে যতোটা কঠিন ভেবেছিলো ততোটাই কঠিন নয়।

নির্জন হঠাৎ হাত বাড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ হায় আমি নির্জন চৌধুরী.. ‘
সবাই খাবার থেকে চোখ তুলে নির্জনের দিকে তাকালো। বেচারা সবার তাকানো দেখে হাত মুছতে মিছতে বলে উঠলো, ‘ আমার খাওয়া শেষ। ‘
আনোয়ার চৌধুরী,’ তাহলে রুমে যাও, চাকরি খুঁজো,আর কতো এভাবে বসে বসে খাবে..? তোমার দুই ভাই নিজেদের ভবিষ্যত গড়ে তুলছে আর তুমি কি করছো..??
নির্জন বিরক্ত হয়ে আনোয়ার চৌধুরীর কথা গুলো শুনলো। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা নিচের দিয়ে তাকিয়ে খাচ্ছে। মানে কি সবাই এতো আগ্রহ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে আর এই মেয়ে একবারও তাকালো না। কি আজব মেয়ে।

_____

রাত গিয়ে সকালের আলো ফুটে উঠেছে৷ মহুয়া নামাজ পড়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো।
কালো হুডি পড়ে কোনো একটা ছেলেকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে দেখলো।

সকাল ৮টা। আমেনা বেগম, হালিমা বেগম, নিরুপমা সবাই মিলে নাস্তা তৈরি করছে। এই বাড়িতে দুইটা কাজির লোক। দুইটাই ছুটিতে গেছে।যার কারনে সবাই মিলে কাজ করছে।

মহুয়া এই প্রথম রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসলো।
হাঁটতে হাঁটতে রান্নাঘরের সামনে থামলো৷
আমেনা বেগম মহুয়াকে দেখে হেঁসে বললো,’ কিছু লাগবে..?’
মহুয়াঃ না আন্টি।

সবাই নিজের কাজ করছে হঠাৎ মহুয়া বলে উঠলো, ‘ আন্টি আমি হেল্প করি..?’
আমেনা কিছু বলার আগেই নিরুপমা বলে উঠলো, ‘ করতে পারো কিছু..? ‘
মহুয়া কি বলবে সে তো কিছুই পারে না। তবুও মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালো।
নিরুপমা কতোগুলো সবজি ওর সামনে রেখে বললো তাহলে এইগুলো একটু কেঁটে দাও।
আমেনা বেগম রেগে বলে উঠলো, ‘ এইসব কি! মহুয়া তোমার কিছু করতে হবে না রুমে যাও।রান্নাঘরের কাজ শুধু মহিলাদের। ‘
মহুয়াঃ আমি পারবো আন্টি।
নিরুপমাঃ মেয়েটা কাটতে চাচ্ছে নিষেধ কেনো করছেন ভাবি।
আমেনা বেগম আর কিছু বললেন না। সখ করে বলেছে মেয়েটা কাটুক তাহলে।

মহুয়া হাতে চাকু নিয়ে একটা পেঁয়াজ নিলো। কিন্তু কিভাবে শুরু করবে..? সে তো বাড়িতে বটি দিয়ে কাটতো কিন্তু এখানে চাকু।

তখনি ছোঁয়া ওকে খুঁজতে খুঁজতে রান্না ঘরে দেখতে পেয়ে আসলো।
ছোঁয়াঃ এইসব কি আম্মু! মহুয়াকে কেনো কাজ করতে দিয়েছেন..?
নিরুপমাঃ মেয়েটা নিজেই করতে চাইলে আমার কি দোষ।
ছোঁয়া মহুয়ার হাত থেকে চাকু নিয়ে পাঁচ মিনিটে সব সবজি কেঁটে ওর আম্মুর সামনে রাখলো৷
মহুয়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। এতো দ্রুত একটা মেয়ে কিভাবে সবজিগুলো কাটলো!.?

নিরুপমা মেয়ের হাত থেকে চাকু নিয়ে বলে উঠলো, ‘ তোমাকে সব সময় বলি ধীরে ধীরে কাটবে কিন্তু না তুমি আমার কথা শুনবে কেনো! একদিন হাত কেঁটে বসে থাকবে।

আমেনা বেগম হাসলেন ছোঁয়ারদিকে তাকিয়ে। মেয়েটা ব্যস গুণবতী।

নির্জন ড্রয়িং রুম থেকে বলে উঠলো, ‘ ফুপিমণি আমি ভাবছি একটা রেস্টুরেন্ট খুলবো আর রাধুনি হিসেবে তোমার মেয়েকে সিলেক্ট করবো। দাদার ইচ্ছেও পূরণ হবে তোমার মেয়েও একটা জব পাবে। দারুণ আইডিয়া না.?’

ছোঁয়া কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে নির্জনের দিকে টমেটো ছুড়ে মারলো।

________

ছোঁয়া মহুয়াকে রেডি হতে বললো। দাদাজান বলেছে আজ ছোঁয়ার কলেজে মহুয়াকে ভর্তি করাবে।

মহুয়া চুপচাপ রেডি হয়ে নিলো৷ কালো বোরকা সাথে হিজাব দিয়ে সুন্দর করে মুখ ডেকে নিলো।

ছোঁয়াঃ এভাবে কেনো?
মহুয়াঃ আমি এভাবে চলাফেরা করতে পছন্দ করি।
ছোঁয়া আর কিছু বললো না। মহুয়াকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

ছোঁয়া কলেজ এসেই দেখা পেলো শ্রাবণের।
শ্রাবণ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আসুন, ফাস্ট ইয়ার না..?’
মহুয়াঃ জ্বি..

ভর্তি করিয়ে শ্রাবণ ছোঁয়াকে বললো সাবধানে মহুয়াকে নিয়ে বাসায় চলে যেতে ওকে আবার অফিস যেতে হবে।

শ্রাবণ ওদের বিদায় জানিয়ে চলে গেলো।

ছোঁয়া গেইটের কাছে এসে দেখলো ভুলে ব্যাগ ক্লাসে রেখে এসেছে। মহুয়াকে এখানে দাঁড়াতে বলে জলদি আবার কলেজের ভেতর গেলো।

মহুয়া দাঁড়িয়ে আছে তখনি একটা মেয়েকে কাঁদতে দেখলো। সে না চাইতেও জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে..?
~ এক ছেলে আমার শরীরে বাজে ভাবে হাত দিয়েছে, আমার ওড়না নিয়ে গেছে…
মেয়েটা কথা শেষ করার আগেই মহুয়ার চোখ অস্বাভাবিক লাল হয়ে গেলো। রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে জিজ্ঞেস করলো। ছেলেটা কোথায়..?
মেয়েটা কান্না করে বলে উঠলো, ‘ একটা ভাইয়া এসে ছিলো হেল্প করতে, ছেলেটাকে বুঝিয়ে ছিলো কিন্তু ছেলের বন্ধু গুলো আর ছেলেটা মিলে ওই ভাইয়ার গায়েও হাত তুলেছে। আমি ভয়ে চলে এসেছি।

মহুয়াঃ কি আজব একটা ছেলে তোমাকে হেল্প করতে এসেছে, তোমার জন্য ছেলেদের হাতে মাইর খাচ্ছে আর তুমি পালিয়ে যাচ্ছো!.?তোমার প্রয়োজন ছিলো ছেলেটাকে হেল্প করা! ছেলেটা কোথায়..?

তখনি সামনে গন্ডগোল শুনতে পেলে৷ মহুয়া বুঝলো এখনো হয়তো ছেলেটাকে মারছে।
মহুয়া এক পা দু পা করে এগিয়ে গেলো। ভীড় ঠেলে সামনে গিয়ে দেখলো একটা ছেলে আরেকটা ছেলেকে মেরে রক্তাক্ত করে ফেলেছে ভীষণ রাগ হলো৷ নিজেকে এই ছেলের মাঝে দেখতে পেলো। ঠিক এভাবে তাকেও মেরে ছিলো নরপিশাচরা রেগে সামনের ছেলেটার কলার পাকড়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে গালে পর পর দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। সেকেন্ডের মাঝে নিস্তব্ধতায় ছড়িয়ে গেলো চারপাশ। কারো মুখে কোনো শব্দ নেই৷ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে এক বোরকা পড়া সাধারণ মেয়ের দিকে সবাই।

ভীড় ঠেলে ছোঁয়া মহুয়ার পিছু পিছু এসে ছিলো এমন কিছু দেখতে পাবে কখনো আশা করেনি। নিরবতা ভাঙে ছোঁয়া বলে উঠলো, ” আহনাফ ভাই!! ”

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে