#মেঘময়_চাঁদ
#পর্ব_৪
#লেখনীতে_সাবীহা_সুলতানা_মহিমা
হসপিটালে পৌছেই শুভ্র ভাই মা কে বললেন, ছোট মা তুমি আমাকে কি কি আনতে হবে বলে দাও আমি কিনে ড্রাইভারকে দিয়ে পাঠিয়ে দিবো।
তোমরা ডক্টর দেখানো শেষ হলে ড্রাইভারের সাথে চলে যেও। আমাকে এখনি হলে যেতে হবে। আমি ইমরোজ কে ফোন করে বলে দিবো ও তোমাদের দুজনকে ঠিক সময মতো এসে নিয়ে যাবে।
আর মা কে বলো আমি রাতে না আসতে পারলেও কাল সকালে এসে ফুপির সাথে দেখা করে যাবো।
বাবু চেষ্টায় থাকিস যদি আসতে পারিস, কারন জানিষি তো বড় আপা কেমন মানুষ, এতো দিন পরে এসেও যদি না পায় তোকে তাহলে যে সে রেগে আগুন হবে।
হুম বুঝতে পারি ছোট মা। আমি চেষ্টা করবো, আমার মা কে কেউ ছোট করুম এটা আমি কখনই হতে দিতে পারিনা। তা সে যেই হোকনা কেন।
এর মধ্যে আবার শুভ্র ভাইয়ের ফোনটা বেজে ওঠায় সে আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত আমাদের কে কাউন্টারে দিয়ে সব ফর্মালিটি পুরন করে মা কে বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।
এদের মাঝে আমি একটা শব্দও করিনি, নিরব দর্শকের মতো শুধু দেখেছি।
ডক্টর দেখাতে গিয়ে ডক্টর বলে দিলেন অতিরিক্ত ভয়ে আমি সেন্সলেছ হয়ে পড়েছিলাম। আমি যেনো হাসি খুশি থাকি।
ডক্টর দেখিয়ে বের হওয়ার পরে মায়ের ফোনে আবার শুভ্র ভাইয়ের কল ডক্টর কি বলেছে তা শুনে কি কি যেনো বলে মা কে বাসায় চলে যেতে বললেন।
*****
হাত মুখ বাধা অবস্থায় একটা গুদাম ঘরে পড়ে আছে একটা যুবক।
তাকে ঠিক কি কারনে তুলে আনা হয়েছে তা সে নিজেও জানেনা।
হঠাৎ রুমের সব আলো জলে ওঠায় প্রথমে চোখে সব ঝাপসা লাগলেও যখন ক্লিয়ার হলো তখন অদ্ভুত ভাবে ছেলেটির মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে শুভ্র।
এবার যেনো শুভ্রকে দেখে ছেলেটার মুখ ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে হচ্ছে, শুভ্র একা নয় সাথে ওর বন্ধু আর ওকে যারা তুলে এনেছে তারাও আছে।
কিরে আমাকে চিনতে পারছিস?
ছেলেটার মুখ বাধা থাকায় সে কিছুই বলতে পারছে না।
শুভ্র বাকা হেসে বলে এই ওর মুখের বাধন খুলেদে।
কেমন লাগছে বন্ধু এখানে এভাবে পড়ে থাকতে। শা*লা তোকে বলেছিলাম না আমার জিনিষের দিকে নজর না দিতে। তুই কি ভেবেছিস তোকে আমি ছেড়ে দিবো, না কখনই না। তুই তরীকে কেনো হ্যারাসমেন্ট করতে চেয়েছিলি বল।
এবার ছেলেটি অট্টহাসি দিয়ে বলে আরে সামান্য রেগিং টেকেল করার সাধ্য নেই যে মেয়ের সে কিনা সামলাবে তোকে হাউ ফানি ইয়ার। তার চাইতে এক কাজ কর ওকে আমার হাতে তুলে দে বিনিময়ে এবার ইলেকশনে আমার বাবাকে দাড়াতে বাড়ন করবো।
যতই হোক মীর পরিবার আর সিকদার পরিবারের মধ্যে আত্নার সম্পর্ক তৈরি হবে যে তখন।
তোর বোনটা না সেই হ*ট। আমি তো জাষ্ট ওদের দিয়ে একটু টায়াল দিচ্ছিলাম। কিন্তু দেখ ও তোকে কতটা ভয় পায়। তোর সামান্য চোখ গরমেই ঢলে পড়ে গেলো।
তোর সাহস কি করে হয় তরীর দিকে তাকানোর, ও শুধুই আমার আমার জিনিষে কাউকে হাত তো দুরে থাক তোর মতো চরিত্র হিন ছেলের চায়াও পড়তে দিবো না। আর তুই কি বল্লি হ*ট, তাইনা তাহলে দেখ এবার বলেই একটা গরম রড ছেলেটার হাতে লাগিয়ে দেয় শুভ্র।
তোকে আমি ছাড়বোনা শুভ্র, আর তোর বোনকে তো আমার করেই ছারবো, তার জন্য আমার যা করতে হয় তাই করবো। ভেছিলাম এবার ছাত্র লিডার কমিটির জন্য তোকে জায়গা ছেরে দিবো, কিন্তু তুই আমার শরিরে আঘাত করলি তো এবার দেখ আমি তোর ওই তরী রানির ঠিক কি হাল করি। এমন হাল করবো তুই নিজেও ওর দিকে তাকাতে ভয় পাবি।
কি ভেবেছিস তুই কমিটিতে দাড়ালে আমি চান্স পাবো না। আরে আমার বন্ধু আর ছোট ভাই বোনেরা আমাকে এমনিতেই সাপোর্ট করে। আর তরীর ব্যাপারে বলচিস তো, ওর আশেপাশেও তোকে আসতে দিবো না।
আচ্ছা সে নাহয় দেখা যাবে, তরী যখন আমার নজরে এসেছে৷ তখন ওকে আমার পায়ের কাছে না আনতে পারলে আমার নামও মীর মনির না।
শুভ্র রাগে এবার মনিরের চোয়াল বরাবর একটা ঘুষি বসিয়ে দেয়। যার ফলস্বরূপ মনির সেখানে সেন্স হারায়।
***
বাড়িতে ডুকতেই দেখি ফুপি আয়েশ করে সোফায় বসে বাবা আর বাবাইযের সাথে গল্প করছে। আমাদের কে ডুকতে দেখে ফুপি বলে ওঠেন
আরে তরী নাকি, কিরে মা তোর চেহারার এই হাল কেন, আহারে মা আমার জ্বরে পড়ে একেবারে শুকিয়ে গেছিস।
ফুপির কথায় কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে আছি। খুব ভালো করেই জানি একটু পড়ে ফুপি আমার জন্য মা কে কথা শুনাবেন, এবার তো আবার সাথে মামনীও আছে বকা শুনবেন দুজনেই।
ফুপি আমাদের ভাই বোনদের সবাইকে অনেক বেশিই আদর করেন ভালোবাসেন। আর এ কারনেই পান থেকে চুন খশলেই মা আর মামনিকে কথা শুনতে হয়।
হ্যা রে ভাবিনা বললো বাবু তোদের সাথে আছে তাহলে আসছেনা কেন এখনো।
আসলে আপা ওর আজকে এসাইনমেন্ট আছে আর হলে জরুরি কাজ পড়ে যাওয়ায় ও একটু হলে গেছে। রাতে না আসলেও কাল সকালে ঠিক চলে আসবে দেখো।
মায়ের কথা শেষ করতে দেরি কিন্তু ফুপির রেগে যেতে একটুও সময় রাগলো না,
আমি সারা বছরে মাত্র দুই বার আসি তাও যদি ছেলে মেয়ে গুলোকে কাছেই না পাই তাহলে তোমরা মায়েরা ছেলে মেয়েদের কি শিখিয়েছো।
এই শিক্ষা দিচ্ছো তোমরা ওদের।
আমি বাবুর পছন্দের খাবার করে নিয়ে এসেছি, কই বড় ভাবি ফোন দাও দেখি তোমার শুভ্র কে,দেখি ও ওর ফুপির সাথে দেখা না করে কিভাবে থাকতে পারে।
আমি এখনো চুপচাপ দাড়িয়ে আছি, কারন ফুপির অনুমতি পেলে তবেই উপড়ে যেতে পারবো।
কথা মাঝে ফুপি আমাকে খেয়াল করে বললেন তরী মা যাও ঘরে যাও। ফ্রেশ হয়ে আসো আমি তোমার জন্য নিজের হাতে মোরগের মাংশ খিচুরি করে এনেছি।
উর্মি রুমি ওরা তোমার রুমে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
ফুপির বলতে দেরি কিন্তু আমার দৌড় লাগাতে দেরি হয়নি।
কারন কখন আবার৷ কোন দিক থেকে আমার জন্য মা বকা খায়।
রুমে ডুকতেই উর্মি রুমি দুজনে আমাকে দরজার কাছে ভাও বলে ভয় দেখায়। এতে আমি বেশ চমকে যাই ।
ওরা দুজন এবার কলেজে উঠেছে। আর আমি ভার্সিটিতে। আমার চাইতে তিন বছরের ছোট ওরা। আর শুভ্র ভাই আমার চাইতে পাঁচ বছরের বড়।
আমার বাবারা দুই ভাই একবোন। আর তাদের ঘরে শুভ ভাই আমি ফুপির দুই মেয়ে উর্মি রুমি আর শেহমাত ভাইয়া।
শেহমাত ভাইয়াও শুভ্র ভাইয়ের সমান বয়সি কিন্তু সে পড়া লেখার পাশাপাশি সিরেটে চা বাগানের দায়িত্ব নিয়েছে।
আমি উর্মি রুমিকে ছাড়িয়ে ওয়াশ রুমে ডুকে যাই। ফ্রেশ হতে হবে।
তারপরে ওদের দুজনের সাথে কথা বলা যাবে।
****
কেবলি শুভ্র মনিরের হাতে চা*কু ডুকাতে যাবে অমনি শুভ্রর ফোনটা বেজে ওঠে। এতে প্রচুন্ড বিরক্ত হলেও যখন দেখে তরী ফোন করেছে তখন ওর ঠোটের কোনায় হাসি ফুটে ওঠে।
চা*কু ফেলে দিয়ে ফোনটা কানে নিতেই ভেসে আসে দুইটা মেয়ের খিলখিল করে হাসির শব্দ। বুঝে যায় তরীর ফোন থেকে উর্মি রুমি ফোন করেছে।
দা ভাই তুমি কই আছো।তোমায় খুব মিছ করছি।
ওরে পাকনি বুড়ি রাতে আসবো তো, তখন দেকি কত মিছ করে।
সত্য?
হুম সত্যি।
ঠিক তখনি,,,
চলবে,,,