#মেঘবদল
লেখক – এ রহমান
শেষ পর্ব
অগ্রহায়ণের শেষে তেমন ঠাণ্ডা না থাকলেও রাতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়েছে। তাই সকাল থেকে ঠাণ্ডা টা বেশ পড়েছে। বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশ দেখছিল ঈশা। এক পাশে কাল মেঘে ছেয়ে আছে। আবার হয়তো বৃষ্টি নামতে পারে ধরণীর বুকে। তার মনটাও বিষণ্ণতায় ঘেরা। তার ধারনা সত্যি করে দিয়ে আবারো বৃষ্টি শুরু হল। বাতাসের তোড়ে পানি ছিটকে আসছে গায়ে। ঠাণ্ডা হাওয়াটা শরীরে কাঁপুনি ধরে দিচ্ছে। ঈশা ঘরে চলে গেলো। বারান্দার দরজা আটকে দিলো ঠিকই কিন্তু জানালার পর্দা সরিয়ে কাচ ভেদ করে তাকিয়ে থাকল দূর আকাশে। বৃষ্টির ফোঁটা কাঁচে বাড়ি খেয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ছিল। সেই দৃশ্যটা নিস্পলক চোখে তাকিয়ে দেখছে সে। কাচের উপরে হাত রাখতেই চোখে পড়ল অনামিকা আঙ্গুলে পরে থাকা আংটিটা। পূর্ণ দৃষ্টি মেলে সেটার দিকে তাকাতেই চোখ ভরে এলো তার। ইভান তাকে পরিয়ে দিয়েছিলো এটা। কথা ছিল এই আংটি পরার ১ সপ্তাহ পরে তাদের বিয়ে। কিন্তু সেই দিনটা আর আসেনি। ঈশার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।
–ফুপি মনি।
দ্রুত চোখের পানি মুছে পেছন ফিরে তাকাল। নিরা দৌড়ে এসে তাকে জরিয়ে ধরল। ঈশা তাকে কোলে তুলে নিলো। সে ঈশার গালে একটা চুমু দিয়ে বলল
–ফুপি মনি তুমি একা একা কি করছ?
ঈশা মৃদু হেসে বলল
–কিছু না মা। তুমি এই ঠাণ্ডায় একা একা উপরে এলে?
নিরা না সুচক মাথা নেড়ে বলল
–মা বাবাও তো এসেছে।
ঈশা কৌতূহলী চোখে তাকাল। বলল
–ভাইয়া ভাবি এসেছে?
নিরা উপর নিচে মাথা নাড়তেই ঈশা তাকে কোলে নিয়েই বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। এসে দেখে সোফায় বসে সবাই কি যেন একটা বিষয়ে আলোচনা করছে। নিয়াজ সাহেবের মুখ বেশ থমথমে। তিনি নিচের দিকে তাকিয়ে বললেন
–এটা কিভাবে সম্ভব? এতো তাড়াতাড়ি…।
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই মৃন্ময়ী উঠে দাঁড়ালো। বলল
–ঈশা। আসো। এখানে বস।
ঈশা নিরাকে কোলে নিয়ে গেলো সেদিকে। নিয়াজ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল
–কি হয়েছে? কোন সমস্যা?
নিয়াজ সাহেব কোন উত্তর দিলেন না। জারিফ বলল
–তেমন কিছু না। আজ ফারিয়ার জন্মদিন তো তাই ভাবছিলাম কিভাবে সেলিব্রেট করা যায়। সেটা নিয়েই আলোচনা হচ্ছিল।
ঈশা হেসে ফারিয়ার দিকে তাকাল। সে গভির ভাবে কিছু একটা ভাবছে। ঈশা বলল
–হ্যাপি বার্থ ডে ফারিয়া আপু।
ফারিয়া চমকে তাকাল। মৃদু সরে বলল
–থ্যাঙ্ক ইউ।
ঈশা বসে পড়ল সোফায়। নিরা তার কোলে। জারিফ ফারিয়াকে বলল
–ঝুম যেন কোথায় চলে গেলো। আমি দেখছি।
বলেই চলে গেলো মেয়েকে খুজতে। তার পিছে পিছে ফারিয়াও চলে গেলো। একে একে সবাই চলে গেলো। শুধু থেকে গেলো মৃন্ময়ী। নিরা এখনও ঈশার কোলেই বসে আছে। ফারিয়া টিভি অন করে নিরাকে বলল
–কার্টুন দেখবে নিরা মনি?
নিরা উপর নিচে মাথা নাড়তেই ফারিয়া কার্টুনের চ্যানেল অন করে দিলো। নিরা মনোযোগ দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে। মৃন্ময়ী অনেকটা সময় ঈশার দিকে তাকিয়ে থেকে মৃদু সরে ডাকল
–ঈশা?
ঈশা শান্ত দৃষ্টিতে তাকাল। কৌতূহলী কণ্ঠে বলল
–কিছু বলবে ভাবি?
মৃন্ময়ী একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। বলল
–ইভানের সাথে কথা হয়না তোমার?
ঈশার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। মলিন চেহারায় তাকাল। বলল
–তার ভালবাসার চেয়ে অভিমান টা অনেক বেশী। এতো সহজে আমার সাথে কথা বলবে বলে মনে হয় তোমার?
মৃন্ময়ী ভাষা খুজে পেল না। হতাশ শ্বাস ছেড়ে বলল
–তুমি চাইলেই তাকে মানাতে পারো। তোমার উপরে অভিমান করেই চলে গেছে। আবার তুমিই তাকে ফিরিয়ে আনতে পারো ঈশা। তুমি ছাড়া এটা আর কেউ পারবে না।
–আমার কথা কি শুনবে?
মৃন্ময়ী মৃদু হেসে বলল
–চেষ্টা করতে দোষ কি? চেষ্টা করার আগেই হাল ছেড়ে দিচ্ছ কেন? তুমি তো এমন মেয়ে না।
ঈশা ছলছল চোখে তাকাল। বলল
–ভাবি আমি খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি যে। আমি ইভান কে অনেক কষ্ট দিয়েছি। তাই তো অভিমান করে দূরে চলে গেছে। আমার শাস্তি প্রাপ্য ভাবী।
মৃন্ময়ী মৃদু হেসে বলল
–শাস্তি তো পেয়েছ। আর কত? এবার নিজেদের মান অভিমান মিটিয়ে ফেল। কথা বল ইভানের সাথে। দেশে ফিরে আসতে বল। দেখবে তোমার কথা ফেলতে পারবে না।
–আর যদি না আসতে চায়?
ঈশার কণ্ঠে শঙ্কা সাথে ভয়। মৃন্ময়ী হাসল। বলল
–এতোদিনে কখনো কথা বলার চেষ্টা করেছ? আসতে বলেছ একবারও? তাহলে কিভাবে বুঝলে আসবে না? চেষ্টা করে দেখ ঈশা। আমি জানি তুমি পারবে।
ঈশার চোখের পানি গড়িয়ে পড়ল। কাপা কাপা কণ্ঠে বলল
–আমি এতদিন কথা বলার সাহস পাইনি ভাবী। কিভাবে কথা বলব? আমি যে অপরাধ করেছি এরপর কি আমার আরও কিছু বলার আছে?
মৃন্ময়ী ঈশার ঘাড়ে হাত রাখল। বলল
–দেখ ঈশা সেদিন দোষটা তোমার ছিল। রাতুলের কথা বিশ্বাস করার আগে তোমার ইভানের সাথে কথা বলা উচিৎ ছিল। আমরা কেউই এটা বিশ্বাস করতে পারি না ইভানের অন্য কোন মেয়ের সাথে কোন রকম সম্পর্ক থাকতে পারে। ইভান তোমাকে খুব ভালবাসে। রাতুল ইভান কে ফাসিয়ে তোমার চোখে খারাপ বানাতে চেষ্টা করেছে। ইভান মেয়েটাকে শুধু হেল্প করতে গিয়েছিল। আর রাতুল সেটার সুযোগ নিয়েছে। তোমার উচিৎ ছিল সবার আগে ইভানের সাথে কথা বলার।
ঈশা চোখ বন্ধ করে ফেললো। মৃন্ময়ী বলল
–একবার ফোন দেবে?
ঈশা নিজের ফোনটা হাতে নিলো। ইভানের বাইরের নাম্বারে ফোন করলে সেটা বন্ধ দেখায়। ঈশা বলল
–ফোন বন্ধ ভাবী।
মৃন্ময়ী মৃদু হাসল। বলল
–বাদ দাও। ফারিয়ার জন্মদিন। আমরা আজ অনেক সাজগজ করবো। রেডি হয়ে নাও। আমি আসছি তোমাকে হেল্প করতে।
ঈশা মাথা নাড়াল। মৃন্ময়ী নিরাকে নিয়ে চলে গেলো। ঈশা নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। বিছানায় শুয়ে পড়ল। বাধ ভেঙ্গে কান্না আসছে তার। রাতুলের সেদিনের কথা শুনে সে যে ইভান কে সন্দেহ করেছে বা অবিশ্বাস করেছে সেরকম কিছু না। তার রাগ হয়েছিল যে সৃষ্টিকে হেল্প করার বিষয়টা ইভান তাকে জানায় নি। ঈশাকে আগে থেকে জানালে এরকম কিছুই হতো না। সৃষ্টি বন্ধু হিসেবে ইভানের কাছে হেল্প চেয়েছিল তার বয়ফ্রেন্ড কে শিক্ষা দিতে। আর সে কারনেই ইভান আর তার মাঝে একটা সম্পর্ক আছে বলে চালিয়ে দিয়েছিলো। সেটাই রাতুল জানতে পারে। আর সবার সামনে খুব খারাপ ভাবে বিষয়টা উপস্থাপন করে। নুরুল সাহেব সবটা জানার পর ইভান কে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। আর ঈশাও তখন কোন কথা বলেনি তাই ইভান অভিমান করেছে। ঈশার খারাপ লেগেছে বিষয়টা। ইভান কেন আগে থেকে এসব ঈশাকে বলেনি। তাহলেই তো কোন সমস্যা হতো না। হতনা কোন ভুল বুঝাবুঝি। অথচ ইভান সেটা না বুঝেই অভিমান করে চলে গেছে।
দরজায় ধাক্কানোর আওয়াজ পেয়ে ঈশা চোখ মুছে উঠে বসল। দরজা খুলে দেখে মৃন্ময়ী আর ফারিয়া দাড়িয়ে আছে। ঈশাকে দেখে ভ্রু কুচকে বলল
–এখনও রেডি হওনি?
ঈশা দরজা ছেড়ে বিছানায় এসে বসল। বলল
–আমার খুব ঠাণ্ডা লাগছে ভাবী। আমি এভাবেই যাবো।
মৃন্ময়ী অবাকের রেশে বলল
–কিসব বলছ? ঠাণ্ডা লাগবে কেন? বাইরে দেখো রোদের কি তেজ।
ঈশা ভ্রু কুচকে তাকাল জানালা দিয়ে। অবাক হয়ে গেলো। সত্যি তো! কি বৃষ্টিটাই না হচ্ছিল। হঠাৎ করেই আবার রোদ উঠে গেলো? ঘণ্টা খানিকের ব্যবধানে কাল মেঘ সরে সোনালী রোদের দেখা মিলল। এতো তাড়াতাড়ি মেঘবদল হল। ঈশার হাত ধরে তাকে টেনে দার করিয়ে দিলো ফারিয়া। হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল
–কোন কথা না। এটা পরে এসো। যাও।
ঈশা প্যাকেটের ভেতরে দেখার চেষ্টা করলো কি আছে। মৃন্ময়ী বিরক্ত হয়ে এক ধমক দিতেই সে চলে গেলো ওয়াশ রুমে। খানিকবাদে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে এলো। কোন রকমে শাড়িটা পেঁচিয়ে এসেছে। মৃন্ময়ী ফারিয়া দুজনেই দেখে ঠোট চেপে হাসল। ঈশা কোমরে হাত দিয়ে বলল
–আমাকে শাড়ি পড়তে হবে কেন? আমি অন্য কিছু পরবো।
মৃন্ময়ী ঈশার শাড়ি ঠিক করতে করতে বলল
–উপর মহল থেকে আদেশ। শাড়িই পরতে হবে। আমাদের কিছুই করার নেই।
ঈশা সন্দিহান চোখে তাকাল। বলল
–মানে?
ফারিয়া একটা শ্বাস ছেড়ে বলল
–এতো কথা বলার সময় নেই ঈশা। আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
———–
সন্ধ্যা নেমেছে মাত্র। ঠাণ্ডা হাওয়াটা পাতলা শাড়ি ভেদ করে গায়ে এসে বিধছে। ঈশা রীতিমতো কাঁপছে। বেশ অসস্তি হচ্ছে তার। এই ঠাণ্ডায় এভাবে সেজে গুঁজে ছাদের মধ্যে তাকে দাড় করিয়ে রাখার কোন মানে হয়না। সবার উপরে রাগ লাগছে। সেই কখন তাকে ছাদে এনে রেখে গেছে। বলেছে এখানেই নাকি সব কিছু হবে। সবাই খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে। আর তারা আসার আগে যেন সে নিচে না নামে। দক্ষিনের ঠাণ্ডা হাওয়া এসে ঈশাকে দমিয়ে দিলো। সে কেঁপে উঠে শাড়ির আচলটা টেনে ভালো করে জরিয়ে নিলো। কিন্তু লাভ হচ্ছে না। হাওয়া বইতেই আছে বিশ্রামহীন ভাবে। চোখ বন্ধ করতেই খেয়াল করলো তার গরম অনুভূতি হচ্ছে। চোখ খুলে দেখল তার গায়ে গরম শাল জড়ান। ঈশা পিছন ফিরে তাকাতেই চমকে গেলো। মাথা ঘুরে উঠল তার। কিছু সময়ের জন্য যেন বিশ্বাস করতে পারছে না বাস্তবে আছে নাকি স্বপ্নে। শুকনো ঢোক গিলে বলল
–তুমি?
ইভান শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–শীতের কাপড় না পরে এভাবে সং সেজে দাড়িয়ে থাকলে তো ঠাণ্ডা লাগবেই।
ঈশা চোখ ছোট ছোট করে তাকাল। সে কি সত্যি ইভান কে দেখছে? হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো। ইভানের অস্তিত্ব বুঝতে পেরেই ভেতরের আর্তনাদ বেরিয়ে এলো। চোখ বেয়ে পানি পড়ল। সেই সময় ফারিয়া এসে বলল
–নিচে তোমাদেরকে ডাকছে।
ইভান কোন উত্তর না দিয়ে নিচে চলে গেলো। ঈশার মুখ দিয়ে কথা বেরচ্ছে না। শুধু চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। এলোমেলো অনুভূতি তার। কিছু বলতে চেয়েও পারল না। ফারিয়া মৃদু হেসে বলল
–সব কিছু ইভান ভাইয়ার প্ল্যান ছিল। সবাই জানত। শুধু তুমি জানতে না। আর তোমাকে রেডি করানোর জন্য একটা কিছু তো বলতেই হবে। তাই আমার জন্মদিনের কথা বলেছি। সরি ঈশা।
ঈশার কথা বলার শক্তি হারিয়ে গেছে। সে অবাক হয়ে সব কিছু দেখছে। ফারিয়া তাকে নিয়ে গেলো নিচে। এতক্ষন ইভান কে দেখে ঘোরের মধ্যে চলে গেলেও নিচে নেমে আরেকদফা অবাক হল। মেঘবদল সেজেছে নতুন রুপে। সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে। কাজী সাহেব মনোযোগ দিয়ে কি যেন লেখালেখি করছেন। হতবুদ্ধ ঈশা গোল গোল চোখে চেয়ে আছে।
অবশেষে এলো সেই কাঙ্খিত সময়। এতবছরের অপেক্ষা আজ পরিনতি পেলো। কবুল বলে দুজন দুজনকে সারা জীবনের জন্য নিজের করে নিলো।
————
জানালার ধারে দাড়িয়ে আছে ঈশা। পুরো জানালার কাঁচটা খোলা। ঠাণ্ডায় কেঁপে উঠলেও বন্ধ করছে না। ইভান ঘরে ঢুকেই গম্ভীর গলায় বলল
–আবারো ঠাণ্ডার মধ্যে দাড়িয়ে আছিস?
ঈশা সামনে তাকিয়েই অভিমানী কণ্ঠে বলল
–মরে যাই। তাতে কার কি?
ইভান এগিয়ে গেলো। হাত বাড়িয়ে জানালা বন্ধ করে দিলো। তারপর ঈশাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে আলতো করে ঠোট ছুঁয়ে দিয়ে বলল
–এতো সহজ? আমি তোকে কিভাবে মরতে দেই জান।
ঈশা চোখ বন্ধ করে ফেললো। অনুভুতির চাপে পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে সে। ইভানের স্পর্শ তার অসস্তি ধরিয়ে দিচ্ছে। ঈশা কেদে ফেললো। ইভান তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দুই হাতে মুখ চেপে ধরে বলল
–কাদছিস কেন?
ঈশা কাপা কাপা কণ্ঠে বলল
–আমাকে কেউ কিছু বলেনি কেন?
–আমি নিষেধ করেছিলাম তাই বলেনি।
ঈশা এখনও কাদছে। ইভান তাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। ঈশার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
–সরি জান। আমি তোকে কষ্ট দিয়েছি। সৃষ্টি যে এমন কিছু এভাবে বলবে সেটা আমি জানতাম না। তার কথায় সায় দিয়ে আমি ওর সাথে গিয়েছিলাম। কিন্তু সে যে এটাকে একটা সম্পর্কের রুপ দেবে সেটা আমি কোনভাবেই জানতাম না। যখন জানতে পারি তখন আমি সৃষ্টির সাথে সব রকম যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমার তখনই তোকে সবটা বলে উচিৎ ছিল। কিন্তু তার আগেই রাতুল বিষয়টাকে এলোমেলো করে ফেলে। কিন্তু তুই বিশ্বাস করলি কিভাবে সেটাই আমার মাথায় আসল না। আমাকে একবারও জিজ্ঞেস করিস নি।
ইভানের শেষের কথাটা বেশ অসহায় শোনাল। ঈশা বুঝতে পারল সে অনেক কষ্ট পেয়েছে। নাক টেনে বলল
–বিশ্বাস করিনি। রাগ করেছিলাম। তুমি কেন আমাকে বল নি আগে? বললেই তো এসব হতো না। আমি সেদিন রাতুল ভাইয়ার সব কথার উত্তর দিতে পারতাম। আর বড় বাবা কত কষ্ট পেয়েছে তুমি জানো?
ইভান মাথা নাড়ল। ঈশা চোখ মুছে বলল
–তুমি এসেছ আমাকে বল নি কেন?
ইভান হাসল। উঠে বসে ঈশার কাছে এসে বলল
–বললে কি হতো? আমার বউ হওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে রাখতিস?
ঈশা দৃষ্টি নামিয়ে নিলো। ইভান মৃদু হেসে দুই হাতে ঈশার গাল চেপে ধরল। পরম আদরে ঠোট দুটো নিজের দখলে নিয়ে নিলো। ভালবাসার প্রথম স্পর্শে ঈশা অসাড় হয়ে গেলো। ইভান ঈশার কাছ থেকে দূরে গিয়ে বলল
–তোকে অনেক মিস করেছি। আমি আর দূরে থাকতে চাই না। তোকে নিজের করে পেতে চাই।
ঈশা ইভানের বুকে মাথা রেখে কাদতে লাগলো। ইভান তার সম্মতি পেয়ে হাসল। কিন্তু তাকে থামাল না। কারন এই কান্না খুশীর কান্না। আজ তার খুশীর দিন। তার জীবনে আজ মেঘবদল ঘটেছে। তার মনের আকাশের কালো মেঘ সরে গিয়ে খুশীর রোদ উঠেছে।
সমাপ্ত