মেঘবতী পর্ব-০৮

0
1961

#গল্পঃমেঘবতী
#পর্বঃ০৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

প্রিসাঃভাইয়া আমাকে আর মেরো না আমার লাগছে।(কান্না করতে করতে)

ব্যথায় প্রিসা কান্না করছে কিন্তু অয়নের থামার নাম নেই,সে এখনও মেরেই চলেছে।আধাঘন্টা যাবত ধরে অয়ন প্রিসাকে জানোয়ারের মতো মারছে।এক সময় অয়ন মারা বন্ধ করে তারপর প্রিসার হাত ধরে থাকে টেনে দাঁড় করাই তাকে।প্রিসার চোখ দুটো কান্না করার কারণে ফুলে গিয়েছে,গাল দুটো গাল হয়ে গিয়েছে,হাতেও বিভিন্ন জায়গায় লাল লাল দাগ হয়ে গিয়েছে।অয়ন হাত দিয়ে প্রিসার গাল চেপে ধরে।এমনিতেই গাল দুটো ব্যথা তার উপর অয়ন এভাবে চেপে ধরাই আরো বেশি ব্যথা লাগছে তাও প্রিসা কিছু বলেনি।

অয়নঃখুব ভালো লাগে না ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করতে,একা একা দেখা করতে যেতে,রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে?কি হলো কথা বলছিস না কেন?

প্রিসাঃচুপ।

অয়নঃকি হয়েছে এখন মুখে কুলো পেতেছিস কেন?রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খুব তো প্রেমিকের সাথে কথা বলতে পারিস।তাহলে আমার সামনে মুখে তালা দিয়ে রেখিস কেন?

প্রিসাঃচুপ।

অয়নঃফুফা-ফুপি কি তোকে প্রেম করার জন্য এতো পড়াশোনা করাছে?পড়াশোনা মন না বসলে বাসায় বলে দেয়,সেই সাথে প্রেমিকের কথাও বলে দে সময় থাকতে।কোন আকাম-কুকাম করার পর বলিস না।

প্রিসা এবার চোখ তুলে অয়নের দিকে তাকাই।চুলগুলো এলোমেলো আর উস্কোখুস্কো,চোখগুলো আগুনের মতো লাল।

প্রিসাঃ অয়…ন.. ভা….ই…. য়া…. কি…. ক..রে..ছি.. আ…মি?আ…প..নি এম…ন কর….ছেন… কে…ন?

প্রিসার কথা শুনে অয়ন রেগে গিয়ে আরো জোরে প্রিসার গাল চেপে ধরে।ব্যথায় প্রিসার চোখ পানি জমে যায়।

অয়নঃএই একদম আমার সাথে নাটক করবি না,একদম না।তোর সাথে কথা বলা তো দূর এখন আমার তোর মুখটাও দেখতে ইচ্ছে করছে না।

বলে অয়ন প্রিসাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়,তারপর রেগে বাইরে চলে যায়।প্রিসা নিচে বসেই কাঁদতে থাকে।প্রিসা বুঝতে পারছে না কেন অয়ন থাকে মেরেছে।প্রায় ১৫/২০সেকেন্ড পর অয়ন আবার ফিরে আসে।

অয়নঃতোকে আমি জাস্ট ২ মিনিট সময় দিলাম,এর মধ্যে ফ্রেশ হয়ে আয়।২ মিনিট পর আমি এসে যদি দেখে ফ্রেশ না হয়ে বসে আছি তাহলে আমার চেয়ে খাপার আর কেউ হবে না।

এরপর অয়ন আবার চলে যায়।প্রিসা চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়।তারপরও আস্তে আস্তে ওয়াশরুম গিয়ে কোন রকমে ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।বাইরে এসে দেখে অয়ন এখনো আসেনি।প্রিসা আস্তে আস্তে খাটে বসে।বাইরে তাকিয়ে দেখে আকাশটা অন্ধকার।প্রিসা অনুমান করে এখন রাত ৮/৯ হবে।তখনি দরজা খোলার শব্দ হয়।প্রিসা ঘাড় বাঁকিয়ে দেখে অয়ন এসেছে,হাতে তার একটা প্লেট।প্লেটটা প্রিসার সামনে রেখে দেয়।

অয়নঃকোন তামাশা ছাড়া খেয়ে নে।(অন্যদিকে তাকিয়ে)

প্রিসাও আর কোন কথা না বাড়িয়ে খেতে শুরু করে কারণ তার প্রচুর খিদে পেয়েছিল।খাওয়া শেষ হলে অয়ন প্লেট নিয়ে যায়।তারপর কিছু ওষুধ এনে প্রিসাকে খেতে দেয় এবং হাতে আর মুখে মলম লাগিয়ে দেয়।

অয়নঃহিজাবটা ভালো করে বেঁধে নে যাতে মুখের দাগগুলো দেখা না যায় আর এই নে তোর চশমা।(গম্ভীরভাবে)

প্রিসা অয়নের কথা মতো হিজাবটা বেঁধে নেয়।প্রিসার হিজাব বাঁধা শেষ হলে অয়ন প্রিসার হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে আসে।গাড়ির দরজা খুলে প্রিসাকে সামনে বাসাই তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।এতক্ষণ অয়নদের বাগান বাড়িতে ছিলো যেটা তাদের বাসা থেকে অনেকটা দূরে।সিটের সাথে হেলান দেয় প্রিসা,চোখ তার বাইরে স্থির।ভাবছে কিছুক্ষণ আগের কথা,হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো।এরকম কিছু হবে সে ভাবতেও পারেনি।

ফ্ল্যাসবেক……

শুভ প্রিসাকে প্রপোজ করার পর প্রিসা কিভাবে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছিল না।কিছুক্ষণ চুপ থেকে যখনই প্রিসা কিছু বলতে যাবে তখনই কেউ শুভর হাত থেকে ফুলটা নিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।প্রিসা অবাক হয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে আর ফুলটা তার পাশের নিচে যেটাকে যে জুতো দিয়ে পিষে ফেলেছে।অয়ন এবার প্রিসার দিকে তাকাই তারপর কয়েক সেকেন্ড পর ঠাস করে প্রিসাকে থাপ্পড় মেরে দেয়।এতো জোরে মেরেছে যে প্রিসা তার জায়গা থেকে সরে যায়।প্রিসা ছলছল চোখে অয়নের দিকে তাকাই,অয়ন সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে প্রিসার হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।এতো শক্ত করে হাতটা ধরেছে প্রিসার মনে হচ্ছে এখুনি হাতটা খুলে চলে আসবে।

শুভঃএই কে তুই?আর ওকে কোথাই নিয়ে যাচ্ছিস?

অয়ন পেছনে ফিরে শুভর দিকে রেগে তাকাই।

অয়নঃওকে আমি যেখানে খুশি নিয়ে যাবো এর কৈফিয়ত আমি তোর মতো বাইরে মানুষকে দেবো না।

এরপর প্রিসার দিকে তাকিয়ে তাকে টানতে টানতে গাড়িতে বসাই আর তাদের বাগানবাড়িতে নিয়ে আসে।এরপর বাকিটাতো আপনারা জানেন।

ফ্ল্যাসবেক এন্ড…….

প্রিসা তার বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে।প্রিসা গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে অয়ন গাড়িটা নিয়ে চলে যায়।প্রিসা অয়নের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে সেও বাড়ির ভিতরে চলে যায়।বাসাই এসে এদিক-ওদিক না সোজা নিজের রুমে চলে যায়।ব্যাগ আর চশমাটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে সাওয়ারের দাঁড়িয়ে পরে প্রিসা।চোখ থেকে তার টপটপ করে পানি পড়ছে তার কিন্তু সেটা সাওয়ারের পানির সাথে এক হয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ছে।প্রায় ১ ঘন্টা পর সাওয়ার অফ করে ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে আসে প্রিসা।বাইরে এসে ভিজা চুলগুলো না মুছেই শুয়ে পরে।একদৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে সে,চোখের কার্নিশ বেয়ে জল পড়ছে তার।একসময় আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করে প্রিসা,ঘুম পাচ্ছে তার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।সেই রাতে প্রিসা আর বাইরে যাইনি।

পরেরদিন সকালে,

কপালে ঠান্ডা কিছু অনুভব হতে পিটপিট করে চোখ খুলে প্রিসা।মাথাটা প্রচুর ভারী লাগছে তার,চোখ খুলতেও কষ্ট হচ্ছে তাও অনেক কষ্টে চোখ দুটো খুললো।চোখ খুলে প্রিসা দেখে তার পাশে একদিকে তার মা বসে তার মাথায় জলপটি দিচ্ছে অন্যদিকে তার ভাইয়া বসে তার হাত ম্যাসাজ করছে।প্রিসা আস্তে আস্তে করে উঠে বসার চেষ্টা করে।

অন্যঃথ্যাঙ্ক গড অবশেষে তুই চোখ খুলেছিস।জানিস তোকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে আমরা কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ফুল।

অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে এটা শুনে প্রিসা অবাক হয়ে যায়।

প্রিসার মাঃকে বলেছিল কালকে ওতো রাতে স্নান করতে?আর স্নান করার পর ভিজা চুলেই ঘুমিয়ে পেরেছিস।তুই জানিস না ঠান্ডাতে তোর সমস্যা হয়,দেখ এখন জ্বর উঠে গিয়েছে।সবসময় বলি একটু সাবধানে চলিস কিন্তু কে শুনে কার কথা।

প্রিসা বুঝতে পেরেছে সবাই ভাবছে ঠান্ডা লাগার কারণে তার জ্বর এসেছি কিন্তু তারা তো আর জানেনা এটা ঠান্ডা লাগার জন্য না মারের জন্য।

তখনিই মিলা একটা বাটি নিয়ে রুমে আসে।বাটিটা দেখেই প্রিসা ভ্রু-কুচকে তাকাই।কারণ সে জানে বাটিতে তার অপছন্দের জিনিসটা আছে সেটা হচ্ছে সুপ তাও আবার ভেজিটেবল সুপ।

মিলাঃআহ্ চাচি পাখি আর বকো নাতো,এমনিতেই মেয়েটা অসুস্থ।এই নাও এই সুপটা ওকে খাইয়ে দাও।

প্রিসাঃআমি খাবোনা।(মুখে হাত দিয়ে)

অন্যঃমিলা তুই বাটিটা আমাকে দে।ফুল দেখি মুখের সামনে থেকে হাতটা সরাতো।

প্রিসাঃআমি খাবোনা ভাইয়া।

অন্যঃফুল বোন আমার প্লিজ খেয়ে নে,কাল রাত খেতে তুই কিছু খাসনি।প্লিজ খেয়েনে ফুল।

এতো কিউট করে যদি কোন ভাই তার বোনকে কিছু বলে তাহলে কি সে আর না করতে পারে,প্রিসাও পারেনি।ভালো না লাগলেও চোখমুখ খিঁচে কয়েক চামচ সুপ খেলো প্রিসা এরপর আর খাইনি।অন্যও তাকে আর জোর করেনি।সুপ খেয়ে প্রিসাকে ঔষুধ খাইয়ে সবাই চলে যায়।সবাই চলে যাওয়ার পর প্রিসা শুয়ে পরে কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই।ফোনের আওয়াজে প্রিসার ধ্যান ভাঙ্গে।ফোন হাতে নিয়ে দেখে এখন প্রায় দুপুর ১২ বাজে। শোয়া অবস্থায় প্রিসা ফোন রিসিভ করে।

প্রিসাঃহ্যাঁ স্মিতু বল।

স্মিতাঃকিরে তুই আজ ভার্সিটিতে এলি না যে?

প্রিসাঃএমনিই।

স্মিতাঃএকদম মিথ্যা বলবিনা।আমি জানি তুই এমনি এমনি ক্লাস মিস করার মতো মেয়ে নোস তাই বল কি হয়েছে?

প্রিসাঃআরে না সেরকম কিছু না জাস্ট ঠান্ডা লাগার কারণে একটু জ্বর এসেছে এই যা।

স্মিতাঃকি তোর জ্বর হয়েছে?এই তুই এতো ইরেস্পন্সাইবেল কেন বলতো?তুই জানিস তো ঠান্ডায় এলার্জি আছে তাও তুই একটু সাবধানে চলিস না।

প্রিসাঃআরে বাবা এবার তুইও বকিস না প্লিজ।

স্মিতাঃআচ্ছা ঠিক আছে এখন বকবো না তবে আমি আসছি বিকালে তোর বাসাই তখন দেখ তোকে আমি কি করি আর তোকে কিছু বলারও ছিল।ভেবেছিলাম ফোনেই বলবো কিন্তু যেহেতু বিকালে দেখা হচ্ছে তাই বিকালেই বলবো।

প্রিসাঃকি বলবো?

স্মিতাঃবিকালো বলবো এখন রাখছি।

প্রিসাঃআচ্ছা।

প্রিসা ফোন রেখে দেয় আর শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতে তাকে স্মিতা কি এমন বলবে যেটা সে ফোনে না বলে সরাসরি তাকে বলতে চাইছে?

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে