#গল্পঃমেঘবতী
#পর্বঃ০৭
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
মাঝে আরও বেশ কিছুদিন চলে যায়।প্রিসার মামা-মামীরা আসার পর অয়ন আর সায়ন তাদের বাসাই চলে যায়।তাদের বাসা প্রিসাদের বাসা থেকে বেশি দূরে না মাত্র ১৫ মিনিটের রাস্তা।এ কয়দিন প্রিসা অয়ন আর সায়নকে প্রচুর মিস করেছে কিন্তু কেন করেছে সেটা সে জানেনা আর কাকে বেশ মিস করেছে সেটাও জানেনা।
আজ শুক্রবার তাই প্রিসার বাবা-মা,অন্যের সবার অফিস বন্ধ আর প্রিসার ভার্সিটিও বন্ধ।তাই প্রিসা ঠিক করেছে আজ তারা অয়নদের বাড়িতে যাবে।প্রিসার মা নিজের ভাইয়ের পরিবারের জন্য একগাদা আইটেম রান্না করে দেয়।বাসাই সব কাজ মিটিয়ে অন্য,প্রিসা আর মিলা অয়নের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়।মিলা প্রথমে যেতে চাইছি কিন্তু প্রিসাই তাকে জোর করে নিয়ে এসেছে।কিছুক্ষণ পর তারা অয়নের বাড়িতে পৌঁছে যায়।তারা এসেছে দেখে প্রিসার মামা-মামী খুব খুশী হয়।তাদের তিনজনকে বসিয়ে প্রিসার মামী রান্না ঘরে চলে যায় তাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করতে আর প্রিসার মামা অন্য আর মিলার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত।সেই সুযোগে প্রিসা চুপিচুপি সবার চোখের আড়ালে ওখান থেকে উঠে উপড়ে চলে আসে।উপরে এসে প্রিসা প্রথমে সায়নের রুম খুঁজে শুরু করে।বেশ কিছুক্ষণ পর প্রিসা কাঙ্খিত সায়নের রুমটা পেয়ে যায়।আস্তে আস্তে দরজা খুলে প্রিসা আশেপাশে একবার ভালো করে দেখে তারপর আস্তে আস্তে রুমের ভিতর ঢুকে।রুমে এসে একটা কাজ টেবিলের উপর রেখে তার উপর একটা ফাইল চাপা দিয়ে দেয় প্রিসা।তারপর তাড়াতাড়ি সায়নের রুম থেকে বেরিয়ে এসে অয়নের রুমে চলে যায় এবং তার রুমেও ঠিক একই কাজ করে যেটা সে সায়নের রুমে করেছে।তারপর সেখান থেকেও বেরিয়ে যায়।
এদিকে,
মিলাঃএই পাখিটা(প্রিসা) আবার কোথাই গেলো?গেলো তো গেলো আমাকেও নিয়ে গেলো না কেন?
এদিক সেদিন ঘুরে প্রিসাকে খুঁজছে মিলা আর নিজে নিজে বিরবির করছে।সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় অসাবধানতাবসত পা পিচলে পড়ে যেতে নিলে কেউ থাকে পেছন থেকে ধরে ফেলে।তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায় মিলা।পেছনে ফিরে দেখে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে তারমানে সেই মিলাকে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছে।
মিলাঃসরি আসলে আমি খেয়াল করিনি।
অয়নঃইটস ওকে বাট কে তুমি?তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না।
মিলাঃআমি মিলা পাখির না মানে প্রিসার চাচাতো বোন।
অয়নঃও আচ্ছা নাইস টু মিট ইউ।
মিলাঃহুম,আচ্ছা আমি আসছি আর আপনি প্রিসাকে কোথাও দেখতে পেলে ওকে বলবেন নিচে চলে আসতে,আমাদের এবার যেতে হবে।
অয়নঃওকে।
এরপর মিলা ওখানে আর না দাঁড়িয়ে তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে নেমে চলে আসে।অয়ন পেছন ফিরে মিলার যাওয়া পানে তাকিয়ে মুচকি হসে আবার উপরে উঠতে থাকে।আসলে সে আর সায়ন কিছু কাজের জন্য বাইরে গিয়েছিল কিন্তু সায়ন কিছু কাগজ ফেলে চলে যায় আর সেগুলো নিতেই সে আবার বাসাই আসে।
অয়নঃএখানে কি করছো তুমি?
হঠাৎ কারো আওয়াজ শুনে প্রিসা ঘাবড়ে যায়।পিছন ফিরে দেখে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে এটা দেখে যেন তার আত্মা ফিরে এসেছে।
প্রিসাঃআরে আপনি?আমি তো আরো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
অয়নঃএখানে কি করছো তুমি?
প্রিসাঃআমি?ওই… বাড়িটা ঘুরে দেখছিলাম আরকি।
অয়নঃআচ্ছা ঠিক আছে বাড়ি পরে এসে আবার দেখো এবার নিচে যাও মিলা তোমার খোঁজ করছিল,বাড়িও তো যেতে হবে তোমাদের।
প্রিসাঃও শিট,আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।আচ্ছা আমি আসছি,পরে আবার দেখা হবে।
অয়নঃহুম।
প্রিসা দৌড়ে নিচে চলে আসে।তারপর আরো কিছু সব থেকে তারা তিনজন বিদায় নিয়ে নিজের বাড়ি চলে আসে।
_____________________________________
ক্লাস শেষ হওয়ার পর স্মিতা বায়না করে ফুসকা খাবে বলে।তাই তারা দুজন ভার্সিটির কাছে একটা ফুসকার দোকানে যায়।দুজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফুসকা খাচ্ছে আর কথা বলছে,মাঝেমাঝে হাসাহাসি করছে।তখন পেছন থেকে কেউ প্রিসাকে ডাকে।পেছন ফিরে প্রিসাকে যাকে দেখে তাতে তো সে অবাক কারণ এই ব্যক্তিকে সে এখানে মোটেও আসা করেনি।প্রিসার ভ্রু-কুচকে উঠে কিন্তু সেটা বিরক্ততে নাকি অবাক হওয়ার কারণে সেটা সে জানে না আসলে জানতে চাইনা।এদিকে স্মিতাও ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে তবে সেটা অবাক হওয়ার কারণে।
প্রিসাঃমিস্টার শুভ আপনি?আপনি এখানে কি করছেন?
স্মিতাঃ(শুভ?ও আচ্ছা এটাই তাহলে সেই শুভ।এর নাম তো শুভ না হয়ে অশুভ হওয়া উচিত ছিল— মনে মনে)
শুভঃ তোমার সাথে অনেকদিন ধরে দেখা করবো ভাবছিলাম অবশেষে আজ তোমার সাথে দেখা হলো তাহলে।
প্রিসাঃআমার সাথে?কিন্তু কেন?আমার সাথে কেন দেখা করতে চাইছিলেন আপনি?
শুভঃবলবো একটু সবুর করো।আচ্ছা তোমার পাশে যে দাঁড়িয়ে আছে ওটা নিশ্চয়ই তোমার বান্ধবী।তোমার বান্ধবীও তোমার মতো সুন্দর।হ্যালো আমি শুভ।
স্মিতাঃ(ব্যাটা লুইচ্চা কোথাকার–মনে মনে)
হ্যালো,স্মিতা।
শুভঃতো স্মিতা তুমি একটু সাইডে যাও ওর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
প্রিসাঃও সাইডে কেন যাবে?যা বলার ওর সামনেই বলুন।
স্মিতাঃহুম,কেন সাইডে যাবো?আমি থাকলে কি সমস্যা?
শুভঃআসলে ওর সাথে না আমার কিছু পার্সোনাল কথা আছে।
স্মিতা একবার প্রিসার দিকে তাকিয়ে তারপর আবার শুভর দিকে তাকাই।
স্মিতাঃপার্সোনাল?
শুভঃহুম খুবই পার্সোনাল।
স্মিতা আর কথা না বাড়িয়ে সাইডে চলে যায়।
প্রিসাঃকি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন।
শুভঃওকে ওকে।এই নাও এই কাজটা।
প্রিসাঃকি আছে এতে?(কাগজটা নিয়ে)
শুভঃএতে একটা ঠিকানা আছে।কাল ঠিক বিকেল ৫ টার সময় ওখানে পৌঁছে যাবে।
প্রিসাঃমগের মুলুক নাকি যে আপনি আর আমিও নাচতে নাচতে চলে যাবো।
শুভঃমগের মুলুক নাকি কিসের মুলুক সেটা আমি তোকে পরে বোঝাবো এখন যেটা বলছি সেটা শোনো।
প্রিসাঃআমি যাবো না কি করবেন আপনি?
শুভঃকি করবো?যদি তুমি কাল না আসো তাহলে আমি সোজা তোমার বাসাই চলে আসবো।আর আমি যদি যেটা করি তাহলে এরপর আর কি কি করবো সেটা তুমি ভাবতেও পারবে না।তাই বলছি আমার কথা শুনো কাল ঠিক সময়ে চলে এসো,বাই।
কথাগুলো বলে শুভ ওখান থেকে বাইক নিয়ে চলে যায়।শুভ চলে যেতেই স্মিতা প্রিসার কাছে চলে আসে।
স্মিতাঃকিরে কি বলেছে ও?
প্রিসা স্মিতাকে সব খুলে বলে।
স্মিতাঃকি বলছিস তুই?এখন কি করবি?
প্রিসাঃজানিনা রে।চল বাসাই চলে যাই আর ভালো লাগছে না।
এরপর তারা ফুচকাওয়ালাকে টাকা দিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হয়।এদিকে এতক্ষণ এসব কিছু দূর থেকে লক্ষ্য করছিল কেউ কিন্তু সেটা সবার অজান্তে।
পরেরদিন,
পরেরদিন কাঙ্ক্ষিত সময়ে শুভর দেওয়া ঠিকানায় প্রিসা পৌঁছে যায়।প্রথমে ভেবেছিলাম আসবে না কিন্তু পরে মত বদলে ফেললো।কারণ বলা তো যায়না যদি সে না যায় তাহলে না সত্যি সত্যি বাসাই চলে যায়।
প্রিসা সেখানে গিয়ে তো অবাক কারণ জায়গাটা ফুল,বেলুন এছাড়াও নানা জিনিস দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো।প্রিসা এসব দেখতে ব্যস্ত তখন সেখানে শুভ চলে আসে।
শুভঃআমি জানতাম তুমি আসবে,আমার বিশ্বাস ছিল।
প্রিসাঃকেন ডেকেছেন আমায়?
শুভঃও মা এসেছো আগে একটু বসো।
প্রিসাঃদেখুন আমি এখানে বসতে আসিনি,আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে তাই কেন ডেকেছেন সেটা তাড়াতাড়ি বলুন।
শুভঃওকে।
এরপর শুভ যেটা করে সেটাতে প্রিসা মোটেও অবাক হয়নি কারণ এখানে এসেই সে এটা আন্দাজ করতে পেরেছিল।
শুভঃদেখো আমি এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারিনা তাই সরাসরি বলছি,”আই লাভ ইউ মিস প্রিসা”।যেদিন তোমাকে প্রথম দেখি সেদিনই ভালো লেগে গিয়েছিল।তারপর থেকে আমি সবসময় শুধু তোমার কথাই ভাবতে থাকি।সবসময় এটাই চাইতাম যে যাতে তোমার সাথে আমার আরেকবার দেখা হয়।এখন আমার সবকিছুতে শুধু তুমিই আছো।আই লাভ ইউ,আই রিয়েলি লাভ ইউ।
প্রিসার এখন কি বলা উচিত সে কিছু বুঝতে পারছে না।
চলবে……….