মুঠোবন্দী লাজুকলতা পর্ব-৩৩

0
510

#মুঠোবন্দী_লাজুকলতা
#অপরাজিতা_মুন
#পর্ব_৩৩

বাসার সামনের সরু গলিটা দিয়ে ব্যাস্ত ভাবে পায়চারী করছেন শওকত রহমান। রাশভারি মুখটাতে তার চিন্তার ছাপ স্পষ্ট, মনটাও সন্তান এবং জামাতার জন্য ভীষণ রকমের উৎকন্ঠিত। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় যে উনার দেহ হতে কুলকুল করে ঘাম ঝরছে তা গায়ের সাতবে লেপ্টে থাকা ভেজা সাদা পাঞ্জাবি টাতে বাহ্যিক দিক থেকেই স্পষ্ট। রাতের আঁধারে নিরিবিলি গলি, হুটহাট দুই একটা মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। রাস্তার ধারে বন্ধ টং দোকানের ব্রেঞ্চটাতে বসলেন শওকত রহমান। পাঞ্জাবীর পকেট থেকে মুঠোফোন বের করে সময় দেখলেন বারোটা বাজতে আর মাত্র পাঁচ মিনিটের ঘাটতি। লাস্ট এক ঘন্টায় তিনি সময় দেখেছেন কম করে হলেও বিশ বার। এই এক ঘন্টা তার কাছে মনে হচ্ছে উনার জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘতম ঘন্টা। ষাট মিনিটে এক ঘন্টা হলেও, আজ তার কাছে এক ঘন্টাকে এক দিনের সমপরিমাণ মনে হচ্ছে, প্রয়োজনে তার থকেও বেশি। অপেক্ষারত শওকত রহমান উঠে দাঁড়ানোর আগে সময়টা আরেক বার দেখলেন, রাত্রী বারোটা বেজে এক মিনিট। নতুন তারিখের সূচনা, কিন্তু তার অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে না কিছুতেই।
অবশেষে অপেক্ষার অবসান হলো শওকত রহমানের। দূর হতে বাইকের হেডলাইটের আলো দেখে অশান্ত মনটা আরো বেশি ছটফট করে উঠল উনার।
রাইফ এক টানে বাইক নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে শশুড়ের সামনে। শওকত রহমান দ্রুত ছুটে এলেন, শারিরীক দিক থেকে দুজনকে স্বাভাবিক দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেললেন। আব্বাজানের দেখা পেয়ে মীরার ভ’ঙ্গুর মন মোচড় দিয়ে উঠল, ঝড়ো বর্ষণ নামার পূর্ব প্রস্তুতি দেখা দিলো ভাসা ভাসা মায়াবী চোখ জোড়ায়। ঢোক গিলে নয়নজোড়া বন্ধ করে ঠিকরে বেরিয়ে আসা নোনাজল ভেতরেই চাপা দিলো মীরা, ছিলে যাওয়া হাতের ক্ষত আড়াল করল ওড়নার ভেতর। নিজেকে শক্ত করল, বাবার সামনে নিজের ব্যাথাতুর মুখটায় মৃদু হাসি ফুটালো। রাইফ এবং মীরার নিকট দূর্ঘটনার বিস্তারিত শুনে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলেন। এমন পরিস্থিতে মাথার পেছনে আঘাত প্রাপ্ত রাইফ নিজেই ড্রাইভ করে আসার জন্য একচোট বকাও খেলো শশুড় মহাশয় এর থেকে। রাইফ জানালো, সে বেশি রাস্তা ড্রাইফ করে নি। সিএনজি তে করে এসেছে পুরো রাস্তা। চেয়ারম্যানের ঠিক করে দেওয়া বিশ বাইশ বছরের ছেলেটা বাইক নিয়ে এসেছে তাদের পিছু পিছু। অনেক রাত হয়ে গেছে জন্য রাইফ আর তাদের আগাতে দেয় নি। বাকি পথ নিজেই যেতে পারবে জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বিদায় নিয়েছে তাদের থেকে। শওকত রহমান দুজনকে সাথে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলেন। তিন তলায় সদর দরজায় দুজনেই অপেক্ষারত মা এবং শাশুড়ী কে দেখল কান্নারত চেহারায়। চাপা কান্না বাঁধ মানলো না খাফিজা বেগম এবং রাজিয়া বেগমের। নিজ নিজ সন্তান কে বুকে আগলে নিয়েই হু হু করে কেঁদে উঠলেন দুজনে।

_______________

মধ্যরাত্রি। ঘড়ির কাটা দেড়টা ছুঁই ছুঁই। রাইফ মাথার পেছনে আ’ঘাত পাওয়াতে অপেক্ষা না করে আজ দ্রুত শুয়ে পরেছে মীরার আগেই। কোনো রকম ফ্রেশ হয়ে, দু লুকমা খাবার খেয়ে, সালাত আদায় করেই মীরাও শুয়ে পরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বারান্দার লাইট জ্বালিয়ে রুমের আলো নিভিয়ে গুটিগুটি পায়ে নীরবে বিছানায় এসে বসল সে। বালিশের পাশ হতে মুঠোফোন টা হাতে নিলো ফজরের সালাত আদায় এর উদ্দেশ্যে এলার্ম সেট করার জন্য। সাধারণত বহুদিনের অভ্যাসরত মীরা এলার্ম বিহীন ফজরের ওয়াক্তে সজাগ পায়, কিন্তু আজকের কথা ভিন্ন। দূর্ঘটনার ধকল শেষে এমনিতেই আজ ঘুমাতে বেশ দেড়ি, তার উপর দেহের আ’ঘাত প্রাপ্ত স্থানের ব্যাথা কমানোর জন্য হাই পাওয়ার পেইন কিলার খেয়েছে দুজন ই। আজ ভোরে ঘুম থেকে উঠার জন্য এলার্ম এর সাহায্য নেওয়া মীরার জন্য সত্যি জরুরি। এলার্ম সেট করে মীরা পুনরায় বালিশের পাশে রেখে দিলো ফোনটা। যেহেতু বারান্দার লাইট অন, সেহেতু বাহিরের সেই আলো ঘরে প্রবেশ করে পুরো রুম আলোকিত করেছে বেশ। মীরা এক পলক তাকালো রাইফের দিকে। চিৎ হয়ে চোখের উপর হাত রেখে শুয়ে আছে রাইফ। ঘুমিয়ে গেছে নাকি সজাগ, ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। নিচে ঝুলিয়ে রাখা পা দুটো তুলে ভাঁজ করে বিছানার উপরে বসল মীরা। ঢিলে হয়ে আসা হাত খোঁপাটা খুলে দিলো, কোমড় সমান চুল গুলো আলগোছে জায়গা করে নিলো পুরো পিঠ সমেত। খোলা চুলে ঘুমানো মীরার ছোট বেলার অভ্যাস। শুয়ে থাকা রাইফের যেনো ঘুমে বিঘ্ন না ঘটে তাই চুপি চুপি বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই আচমকা চোখ মুখ খিঁচিয়ে চাপা আর্তনাদ করে উঠল মীরা। যেভাবে শুয়েছিলো সেভাবেই সে তড়িৎগতিতে উঠে বসতেই নিদ্রায় মাত্র চোখ লেগে আসা রাইফও ধপ করে উঠে বসল। মীরার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল, চোখ খিঁচে ঠোঁট কামড়ে রেখেছে মেয়েটা। ঘাড়ের উপর দিয়ে ক্ষত হাতটা পেছনে নিয়ে পিঠে চেপে রেখেছে। রাইফ দ্রুত মীরার কাছে এলো, উৎকন্ঠিত স্বরে শুধালো,

-‘কি হয়েছে মীরা? দেখি, দেখাও আমাকে।’

ব্যাথায় জর্জরিত মীরা ছটফটিয়ে উঠলো। ব্যাস্ত কন্ঠে বলল,

-‘পিঠে কি যেনো খুব বিঁধছে। ব্যাথা লাগছে প্রচন্ড।’

-‘দেখি, ওদিকে ঘোরো।’

ব্যাথাতুর মীরা দু দিকে ঘাড় নাড়িয়ে নিষেধ করল। দূর্ঘটনার পর সংকোচ ভুলে যাওয়া মীরাকে আবারও আষ্টেপৃষ্টে সংকোচ জেঁকে বসেছে। পিঠে চিনচিনে ব্যাথাতুর যায়গা রাইফে দেখাতে ভীষণ লজ্জায় ভুগছে। রাইফের দিকে না তাকিয়েই মীরা মৃদু আওয়াজে বলল সে পারবে। আজ ধৈর্যশীল রাইফের কি হলো জানে না, মীরার কথায় রাগ দপাদপ মাথায় উঠলো। সবসময় এতো বেশি বুঝতে হবে কেনো এই মেয়েটার? এতোই যদি পারত তবে এখনও পারছে না কেনো? এখনও কেনো ব্যাথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে? ক্ষত হাত টাতে এতো প্রেশারই বা দিচ্ছে কেনো?
মীরার ঘাড় নাড়ানো না বোধক জবাবে একটা শব্দও উচ্চারণ করল না রাইফ। চোয়াল শক্ত করে কড়া চোখে গম্ভীর মুখে শুধু তাকিয়ে রইল মীরার দিকে। সুক্ষ্ণ চিনচিনে ব্যাথা সয়ে যাওয়া মীরা রাইফের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নিম্নে রাখা মুখটা উপরে তুলল। এক পলক রাইফকে দেখেই মীরার মুখ থম মে/রে গেলো। রাইফের এমন কাঠিন্য গম্ভীর চেহারা যে এর আগে দেখেনি সে। রাইফের এমন তীক্ষ্ণ চাহনী, শক্ত চোয়াল আর নীরাবতা মীরার ভীত কাঁপিয়ে তুলল। সম্মোহনের ন্যায় ধীরে ধীরে রাইফের দিকে পিঠ দিয়ে ঘুরে বসল মীরা।
চিনচিনে ব্যাথাযুক্ত জায়গাটা থেকে হাত সরিয়ে নিলো সে। রাগান্বিত রাইফ মীরার পিঠ ময় ছড়িয়ে থাকা চুল গুলো বা হাতের আংগুলে সরিয়ে এক পাশে সামনে ঠেলে দিলো। রাইফের
আংগুলের স্পর্শ মীরার ঘাড় ছুঁইয়ে দিয়েছে বিড়বিড় করে। রাইফের আংগুলের হালকা স্পর্শে মীরা আড়ষ্ঠ হলো, রাইফের থেকে সামনের দিকে নুইয়ে গেলো অনেকটা এবং সাথে সাথেই রাইফের কড়া চাহনি মনে পড়লো তার। ভুল করে ফেলল সে। জিভ কে’টে রাগান্বিত রাইফের এক কড়া ধমকের অপেক্ষায় থাকা মীরা রাইফের আবারও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোরা চোখে পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখলো এখনও আগের ন্যায় কঠিন মুখশ্রী রাইফের। ধীরে ধীরে পিঠ সোজা করে আবারও রাইফের সামনে টানটান হয়ে বসলো মীরা। ফিটিং জামা পরিহিত মীরার ডান কাঁধের কিছুটা নিচে পিঠের উপরিভাগ এ আলতো করে হাত বুলালো। তীক্ষ্ণ ধারালো কিছু একটা বিঁধে আছে মীরার পিঠে। রাইফ অনুমান করল কাঁচ জাতীয় কিছু একটা হবে। আবছায়া আলোয় মীরার গোলাপি রংয়ের জামাটার কিছু অংশ ভিজিয়ে দেওয়া তরল র/ক্তও টের পেলো রাইফ। ক্ষত স্থানে রাইফের হাতের আলতো স্পর্শেও মীরা আর্তনাদ করে উঠল। ব্যাতি ব্যাস্ত স্বরে বলল,

-‘আহ! ব্যাথা পাচ্ছি। হাত সরিয়ে নিন প্লিজ, হাত সরিয়ে নিন।’

রাইফ দ্রুত হাত সরিয়ে নিলো। মীরা আঁটসাঁট জামা পরিধান করায় বিঁধে যাওয়া বস্তু রাইফের পক্ষে বের করা সম্ভব নয়। বিছানা হতে নেমে ঝটপট উঠে দাঁড়ালো রাইফ। কাঠের আলমারি খুলে হ্যাংগারে ঝুলানো ফ্রেশ ছাই রংয়ের শার্ট টা এনে মীরার দিকে এগিয়ে দিলো। তীক্ষ্ণ ব্যাথা সয়ে যাওয়া মীরা একবার শার্ট তো আরেকবার রাইফের দিকে হতভম্ব চেহারা নিয়ে তাকিয়ে রইল ফেলফেল চোখে। রাইফ শার্ট ধরে রাখা হাত টা ঝাঁকিয়ে নেওয়ার জন্য তাগদা দিলো মীরাকে। গম্ভীর মুখটা আরো গম্ভীর করে আদেশ সূচকে বলল,

-‘এক মিনিটের মধ্যে চেঞ্জ করে আসবা। এক সেকেন্ড বেশি হলে আজ কিন্তু কিছু একটা করেই ছাড়বো মীরা। মাইন্ড ইট।’

ব্যাস, রাইফের ছোট্ট একটা মিষ্টি হুমকি কাজে লাগলো। রাইফের হাত থেকে শার্ট টা এক প্রকার ছিনিয়ে নিয়েই মীরা দ্রুত পায়ে ছুটল ওয়াশরুমে। নির্দিষ্ট করে সময় দেওয়া সত্বেও চেঞ্জ করে আসতে মীরার এক মিনিট তো দূরের কথা, তিন মিনিট লেগেছে। লম্বা চওড়া দেহের অধিকারী রাইফের শার্ট মীরার দেহের অনেকটা অংশ ঢেকে রেখেছে। খয়েরী রংয়ের সুতি ওড়নাটা গলায় দু প্যাচ দিয়ে আঁটসাঁট ভাবে রাইফের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। রাইফ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে মীরার আপাদমস্তক পরখ করতে ভুলল না। ঢিলেঢালা ছাই রংয়ের শার্ট আর গাঢ় খয়েরী রংয়ের ওড়ানা টাতে মীরাকে মানিয়েছে বেশ। শার্টের সমস্ত বোতাম লাগিয়ে টপ বোতাম ও এমন ভাবে লাগিয়েছে যে শার্টের কলার মীরার গলায় চিপকে আছে। রাইফের সূক্ষ্ণতীসুক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আরো আড়ষ্ট হলো মীরা। কি আশ্চর্য! এভাবে তাকিয়ে দেখার কি আছে? এখন কি এভাবে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখার সময়? যখনি সময় পায় তখনি দেখে যায়!
মীরা কিছু বলার আগেই রাইফ নিজেই মীরাকে হাত ধরে কাছে টানল। বারান্দার দরজা খুলে দিয়েছে একটু আগেই। রুম সম্পূর্ণ আলোকিত না হলেও রাইফ মীরাকে যেখানে বসিয়েছে সেখানে এখন বারান্দার আলোয় পুরোপুরি আলোকিত বলা চলে। হাতে ফার্স্টএইড বক্স নিয়ে মীরার পেছনে বসল রাইফ। মীরা স্পষ্ট ধারণা করছে সামনে কি হতে যাচ্ছে। পিঠের অনেকটা অংশ যে রাইফের সামনে আজ উন্মোচন হবে তার তার মস্তিষ্ক জানান দিয়েছে প্রথমেই। যা বিঁধেছে বিঁধেছেই, আচ্ছা, ঠিক আছে। মীরাকে ব্যাথা দিতে হবে তো, আচ্ছা দে। কিন্তু বেছে বেছে পিঠেই কেনো? হাত, পা, মুখ ও তো ছিলো? দেহের এসব অংশ কি চোখে দেখেনি বস্তুটা?
পেছনে বসা রাইফের পরবর্তী কাজ কি হতে পারে সেটা ভেবেই শিউরে উঠল মীরা। মাথা ঝুঁকিয়ে উশখুশ করতে লাগল যা রাইফের কাছে স্পষ্ট প্রতীয়মান। নিশুতিরাতের হৈ হুল্লোড় বিহীন নগরে এক জোড়া কপোত-কপোতীর নিরব রুমটাতে নিরবতা ভেঙ্গে কথা বলে উঠল রাইফ। স্বাভাবিক কন্ঠে নাম ধরে ডেকে উঠলো,

-‘মীরা?’

-‘হুম।’

-‘আমি কে?’

সেই কখন থেকে চিনচিনে ব্যাথা সহ্য করে যাওয়া মীরা বিরক্ত হলো রাইফের এমন প্রশ্নে। এটা কোনো প্রশ্ন হলো? এমন সময় এরকম প্রশ্ন করা কি খুব জরুরি? বিরক্তির আভাস মাখা মুখটায় গাল ফুলিয়ে উল্টো প্রশ্ন করলো মীরা,

-‘আপনি কে?’

রাইফ কন্ঠে কিঞ্চিৎ রাগ মিশিয়ে ধমকে উঠলো,

-‘প্রশ্নর পৃষ্টে প্রশ্ন করবা না মীরা। যা প্রশ্ন করবো সরাসরি জবাব দিবা।’

মীরার ছোট্ট জবাব, ‘হুম’।

রয়েসয়ে রাইফ পুনরায় শুধালো,

-‘আমি কে?’

-‘আপনি মানুষ।’

মীরার উত্তরে রাইফের গম্ভীর মুখটায় হাসি ফুটল। মেয়েটা বেশ দুষ্ট, কিন্তু প্রকাশ করে না। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে আবারও শুধালো,

-‘কেমন মানুষ?’

প্রশ্নত্তর পর্ব দ্রুত শেষ করার জন্য মীরার ফটাফট জবাব,

-‘লাজ লজ্জাহীন ভালো মানুষ।’

মুচকি হাসি ধীরে ধীরে প্রসস্থ হচ্ছে রাইফের ঠোঁটে। হাসি মাখা বদনে ভরাট গলায় পুনরায় শুধালো,

-‘লাজ লজ্জাহীন ভালো মানুষটা সম্পর্কে তোমার কি হয়?’

ছোট্ট একটা ঢোক গিলে মীরা কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে মৃদু স্বরে জবাব দিলো,

-‘স্বামী।’

-‘আমি স্বামী হলে আমার অর্ধাঙ্গিনী তুমি। তোমার প্রতি আমার অধিকার গুলো কি পয়েন্ট আকারে বলতে হবে মীরা?’

এবার আর ফটাফট জবাব দিতে পারলো না মীরা। সুকৌশলে রাইফ যে মীরাকে তার অবস্থান সুস্পষ্ট করে বুঝিয়ে সহজ করে তুলছে তা বুঝতে পুরোপুরি সক্ষম না হলেও কিছুটা হলো। শুধু ডানে বায়ে মাথা নাড়িয়ে মীরা বুঝিয়ে দিলো তার প্রতি রাইফের অধিকার সমূহ বলার প্রয়োজন নেই। নীরব মীরার মাথা নাড়ানো দেখে মৌখিক উত্তরের জন্য অপেক্ষা করল না রাইফ। অনেক ক্ষণ যাবত সয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। আর কষ্ট দেওয়া উচিত হবে না। ছাই রংয়ের শার্ট টা নিচের দিক থেকে উপরে তুলে উন্মুক্ত করল মীরার মেদহীন ফিনফিনে কোমড় হতে পিঠের অনেকটা অংশ৷ ছোট্ট একটা ভাঙ্গা কাঁচ বিঁধে এতো ক্ষণে র/ক্তজমাট করে ফেলেছে ক্ষতস্থানে। লম্বালম্বি ভাবে আঁচড় ও লেগে কে/টে অনেকটা। রাইফ বুঝতে পারল এটা সেই ট্রাকের ই ভাঙ্গা গ্লাসের টুকরো। ব/জ্জাত কাঁচ এখানেও পিছু ছাড়েনি।
দ্রুত হস্তে কাঁচ টা টেনে বের করতেই ছটফটিয়ে আর্তনাদ করে উঠল মীরা। ফার্স্টএইড বক্স হতে সরঞ্জামদী বের করে পরিষ্কার করে দিলো ক্ষত স্থান টুকু। সামান্য নরম তুলার ছোঁয়াতেও ব্যাথায় বার বার কুঁকড়ে যাচ্ছে মীরা। থেমে থেমে আর্তনাদ করে উঠছে মৃদু স্বরে। পুরোপুরি পরিষ্কার শেষে এক হাতে ধরে রাখা শার্ট টা ছেড়ে দিলো রাইফ, ঢেকে দিলো মীরার ফর্সা পিঠ। মীরাকে আরামদায়ক অনুভব করাতে তার গলার কাছে লাগানো বোতামটাও খুলে দিলো নিজ হাতে। সামনে এক পাশ করে রাখা চুল গুলো পিঠে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই রাইফের চক্ষু আঁটকে গেলো গৌর বর্নের ঘাড়ে কৃষ্ণবর্ণের ক্ষুদ্র তিলটায়।

চলবে।

#মুঠোবন্দী_লাজুকলতা
#অপরাজিতা_মুন
#পর্ব_৩৩ ( এর বর্ধিতাংশ)

মধ্য রাত্রি। ঘড়ির কাটা টিকটিক করে সেকেন্ডের পর সেকেন্ড থেকে শুরু করে ঘন্টা অতিক্রম করে দুইটা বেজে গেছে। এতো রাতেও ঘুম আসছে না শওকত রহমানের। এপাশ ওপাশ করে ছটফট করছেন, তবুও ঘুমাতে পারছেন না। পাশেই শুয়ে থাকা খাদিজা বেগমের তন্দ্রাচ্ছন্ন ঘুমে ব্যাঘাত হলো স্বামীর বার বার নড়াচড়ার জন্য। চোখ মেলে তাকালেন তিনি। রুমের ক্ষীণ আলোয় এক পলক দেখে শওকত রহমানকে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললেন,

-‘এমন ছটফট করছেন কেনো? ঘুমান।’

সহধর্মিণীর কন্ঠ শুনে চকিত দৃষ্টিতে তাকালেন শওকত রহমান। খাদিজা বেগমের প্রশ্নকে অগ্রাহ্য করে নিজেই প্রশ্ন করলেন,

-‘খাদিজা, জেগে আছো?

-‘না। মাত্র চোখ লেগেছিলো তখনি আপনার নড়াচড়ায় ঘুম টা ভেঙ্গে গেলো।’

-‘শোনো খাদিজা। মেয়েটার জন্য মনটা ছটফট করছে বুঝছো। এতো করে আজ রাতটা এখানে থাকতে বললাম, রাইফ শুনলো না। সাথেই নিয়ে গেলো। আমার মনে হচ্ছে মীরার শরীর টা ভালো না। একটা কল দাও তো।’

-‘এতো রাতে? অসুস্থ মেয়েটার কাঁচা ঘুমটা যদি ভেঙ্গে যায়?

-‘আহা, বুঝতেছো না। ওর খোঁজটা নেওয়া জরুরি।’

খাদিজা বেগম স্বামীর চিন্তা স্পষ্ট বুঝতে পারলেন। মেয়ে যে উনার চোখের মণি। যেখানে মীরার দেহে একটু আঁচড় সহ্য করতে পারেন না সেখানে মেয়ের ক্ষত হাত উনার ভেতর বাহির দুটোই অস্থির করে তুলেছে। চিন্তা তো তার নিজের ও হচ্ছে, সেটা আর প্রকাশ করলেন না স্বামীর সামনে। ভরসা দেওয়ার উদ্দেশে আস্বস্ত স্বরে বললেন,

-‘চিন্তা করবেন না, রাইফ আছে তো। দেখলেন না, মীরাকে চোখে হারায় জন্য আপনি এতো করে বলার পরও রেখে গেলো না। ওর আম্মার কথা পর্যন্ত শুনলো না। সাথে করে নিয়েই গেলো। রাইফ থাকতে মীরার কিছু হবে না। শুধু শুধু চিন্তা করছেন, ঘুমান আপনি। শরীর খারাপ করবে, প্রেশার হাই হবে। কাল সকালে গিয়ে দুজন দেখে আসবো নে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে আপনার, দেখি কাঁথাটা টেনে নেন।’

খাদিজা বেগমের কথায় অস্থিরতা কিছুটা কমলো রাশভারী মানুষটার। খাদিজা ঠিকই বলেছে। রাইফ যে মীরাকে কতোটা আগলে রাখে তা উনার দৃষ্টিগোচর হয়েছে ভালোভাবেই। ছেলেটা ভরসার যোগ্য। স্বামী হিসেবে দ্বায়িত্ব পালনে হের ফের করতে দেখেন নি তিনি।

______________

গৌরবর্নের ঘাড়ে কৃষ্ণবর্নের ক্ষুদ্রাকায় তিল দেখিয়ে রাইফের ঘুম হারাম করে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে মীরা। সজাগ রাইফ বেশ কয়েক বার ঘুমানোর জন্য আঁখি পল্লব একত্রিত করেছিলো, কিন্তু অনেক আগেই রাতের ঘুম যে ফুরফুর করে ফাঁকি দিয়েছে দু চোখ হতে। জেগে থেকে আর কতোক্ষন ই চোখ বন্ধ করে থাকা যায়। তাই আবছায়া আলো আঁধারিতেই মীরার দিকেই নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে ছিলো রাইফ। মুখোমুখি দুজন। বুক অব্দি কাঁথা টেনে মীরা ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে ঘন্টা খানেক হলো। এই মেয়েটার সব কিছুই কেমন মায়ায় ভরা। চাল চলন, কথা বার্তা, থেকে থেকে তার নিরবতাও রাইফের মনে ভালোবাসার ঘন্টা বাজায়।
এই যে একটু আগে দৃষ্টিগোচর হলো, এ আর এমন কি জিনিস! বিন্দু সমতুল্য তিল মাত্র। তবুও কেমন টেনে নিচ্ছে রাইফকে। প্রথমে কৃষ্ণবর্নের তিলটা দেখা মাত্রই থমকে গিয়েছিলো তার মস্তিস্ক। ছুঁয়ে দেওয়ার লোভ সে সময় দমন করতে পারে নি তখন। মীরার অজান্তেই তিলটার উপর বৃদ্ধাংগুল এর হালকা স্পর্শ দিতে ভুলেনি সে।

এক হাত দূরত্বে থাকা নিদ্রারত মীরার ক্ষত হাতটা টেনে নিলো রাইফ। কি আর করার, বর্তমানে মীরার হাতটাই যে তার সম্বল। এই হাতেই সে মীরাকে নিঃসংকোচে রেখে পুরোদস্তুর আধিপত্য বিস্তার করতে পারে, যখন তখন ছুঁয়ে দিতে পারে অধর জোড়াও। রাইফের খসখসে হাতটা মীরার কোমল হাত স্পর্শ করতেই তড়িৎগতিতে মস্তিস্ক সচকিত হলো তার। মীরার হাত ভীষণ গরম। দ্রুত হাত ছেড়ে অর্ধাঙ্গিনীর কপাল, গাল এবং গলায় হাত রাখল রাইফ। হ্যাঁ, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা মীরার দেহে। জ্বর জেঁকে বসেছে কঠিন রূপে।
মীরা উষ্ণ গলায় রাইফের শীতল হাতের সংস্পর্শে নড়েচড়ে উঠলো। ঘুমের ঘোরে অন্যদিকে পাশ ফিরে বুক অব্দি গায়ে জড়ানো কাঁথাটা গলা অব্দি টানলো। ঘুম ঘুম কন্ঠে বিরবির করে বলল,

-‘শীত লাগছে খুব। ইস! আপনার হাত টা এতো ঠান্ডা।’

ঘুমের মাঝে কথাটুকু বলেই আবারও ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো মীরা। রাইফ এর কপালে চিন্তার সুক্ষ্ণ ভাঁজ দৃশ্যমান। আজকের দূর্ঘটনায় সব থেকে এই মেয়েটাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাতে ক্ষত, পিঠে ক্ষত, শরীরের ব্যাথা আর বুক ভরা আতংক তো আছেই। সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত জ্বরটাও পিছু ছাড়েনি, জেঁকে বসেছে ঘুমন্ত মীরাকে। আচ্ছা, এতো কিছু যখন আঁকড়ে ধরেছে তখন রাইফ কেনো বাদ যাবে? মীরার উপর যেখানে রাইফের সব থেকে বেশি ঘনিষ্ঠ থাকার কথা সেখানে এই ঝঞ্জাট গুলোই উল্টো মাথা উঁচিয়ে অধিকার ফলাচ্ছে। কেউ হাতে, কেউ পিঠে তো কেউ পুরো অঙ্গ জুড়ে। আর তিল, সে তো আ’ঙ্গার করে দিচ্ছে রাইফের হৃদয়।
রাইফ মীরার কাছে এলো সামান্য দূরত্ব বজায় রেখে। মীরার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে ডেকে উঠলো নাম ধরে৷ বেশ কয়েক বার ডাকার পর মীরা জবাব দিলো হ্যাঁ বোধকে। রাইফ শান্ত কন্ঠে বলল,

-‘মীরা, উঠো একটু। মেডিসিন খাবে উঠো।’

-‘খেয়েছি তো।’

-‘জ্বরের মেডিসিন খাবা। জ্বর আসছে তোমার।’

-‘নাপা খেয়েছি আমি।’

কথাটা বলেই কাঁথাটা মাথা অব্দি টেনে নিবে এমন সময় মীরার স্নায়ু পুরোপুরি কাজ করল। অবাক কন্ঠে শুধালো,

-‘আমার জ্বর এসেছে?’

রাইফ আহাম্মক হলো সাথে কিছুটা কনফিউজড ও বটে। বলে কি এই মেয়ে? নিজের জ্বর কি নিজে টের পাচ্ছে না? নাকি রাইফের ই ভুল। সন্দেহ দূর করতে মীরার উতপ্ত গালে হাত রাখতেই ছ্যাত করে উঠল। ঘুম কাতুরে মীরা চেতে গিয়ে বলল,

-‘সাপের গায়ের মতো ঠান্ডা কেনো আপনার হাত? হাত গরম করেন আগে, ঠান্ডা লাগছে আমার।’

-‘আমার হাত ঠিক আছে মীরা, তোমার শরীর ঠিক নায়। জ্বর আসছে। উঠো।’

মীরার ঘুম ছুটে গেলো। সত্যি ভীষণ রকম জ্বর এসেছে তার। এজন্যই ঘুমের মাঝে বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছিলো সে। কি একটা আগডুম বাগডুম স্বপ্নের জন্য জ্বর অনুভব করতে পারে নি। মৃদ্যু শীত লাগাটাকেও স্বপ্নের ই অংশ মনে করেছিলো এতোক্ষণ। হুস ফিরতেই ধরাম করে উঠে বসল, নিজের হাত দিয়েই নিজের কপাল-গলায় হাত ছোঁয়ালো। শরীর গরম। আসলেই জ্বর আসছে কিনা নিশ্চিত হতে নিজের শরীরের তাপমাত্রা আর রাইফের শরীরের তাপমাত্রার পার্থক্য নির্নয় করতে মীরা সামনেই এক হাতের উপর ভর দিয়ে কাত হয়ে শুয়ে থাকা শ্যাম বর্ণের সুপুরুষ টার কপালে হাত রাখলো আচমকা। মীরার এমন আচরণে কিছুটা কনফিউজড রাইফ পুরোপুরি কনফিউজড হলো। এমন অদ্ভুত কর্মকান্ডে তার হাসিও পেলো বেশ। জ্বরাক্রান্ত মীরা রাইফের হাসি দেখে থতমত খেলো, রাইফের গলায় হাত রাখতে যাবে এমন সময় দ্রুত হাত সরিয়ে নিলো। মীরার থতমত চাহনি রাইফের মুখে এক প্রস্থ হাসি ফুটিয়েছে। ধীরে সুস্থে নিজেও ওঠে বসল মীরার মুখোমুখি। পর পর প্রশ্ন করলো কয়েকটা,

-‘কি বুঝলা? শরীর কি গরম আমার? জ্বর আছে?’

-‘না।’

রাইফ মীরার একটা হাত টেনে নিজের কপাল ছোঁয়ালো। সময় নিয়ে কপাল থেকে গালে এবং ধীরে ধীরে গলায়। দু দিকে মাথা নাড়ালো রাইফ, মীরাকে বুঝিয়ে দিলো আসলেই তার জ্বর আসে নি। এবার গলা থেকে কিছুটা নিম্নে এনে হাত থামালো রাইফের বলিষ্ঠ বুকের বা পাশে। মীরার হাতটা বুকে চেপে ধরে ভরাট গলায় নিরব রুমে গমগমে আওয়াজ তুলে বলল,

-‘এসেছে। এদিকটায় পুড়ছে। আ/গ্নেয়গিরির লাভার ন্যায় পুড়ছে। ছাই হয়ে উড়ে যাওয়ার আগে তোমার তপ্ত দেহটার সান্নিধ্য পেতে চাই মীরা। তোমার জ্বরাক্রান্ত দেহটাই পারবে আমার দ/গ্ধ হয়ে যাওয়া বা পাশটাকে শীতল করতে। আমাকে সুখানুভূতি দিতে।’

মীরা নির্বাক শ্রোতার ন্যায় ধ্যান মে/রে শুনে যাচ্ছে রাইফের কথা। স্বামীর মুখে উচ্চারিত একেকটা শব্দের মর্ম অনুধাবন করছে গভীর ভাবে। রাইফের গাঢ় স্বরের আকুল আবেদন মীরার ভেতর বাহির উথাল-পাতাল করে তুলছে। তবুও মৌন মীরা মৌন থেকে গেলো সেকেন্ডের পর সেকেন্ড। রাইফ হতাশ হয়ে চাপা দীর্ঘশ্বাস টা আড়াল করে শুয়ে পরল আগের ন্যায়। তার শান্ত মুখশ্রী এক পলক দেখতে ভুলল না মীরা। না রাগ না অভিমান, কিছুই ফুটে ওঠেনি রাইফের চৌকস চেহারায়। লাজুক মীরা আজ সাহস পেলো যেনো। হয়তো জ্বরাক্রান্ত দেহটাও রাইফের সান্নিধ্য পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। জ্বরের তোপে শীত শীত অনুভব করা মীরার দেহ রাইফের বুকের উষ্ণতা লুটে নিতে চাচ্ছে। নাকি রাইফের মাদ/কতা মেশানো আকুল আবেদন কে অগ্রাহ্য করতে পারছে না মীরা? কে জানে? এতো কারণ ই বা দর্শাতে হবে কেনো? দূরত্ব ঘোচাতে এতো কারণ খোঁজার কি আছে? এলোমেলো খোলা চুলগুলো ঘাড় থেকে সরিয়ে বা পাশে টেনে সামনে নিলো সে।
রাইফ মীরার সব কিছুই অনুধাবন করেছে এতোক্ষণ। এই মেয়েটাকে চেনে সে। কোনো কিছু করার আগে যে সে দীর্ঘ ভাবনায় পতিত হয় সেটাও তার অজানা নয়। ইচ্ছাকৃত ভাবে এগিয়ে যেতে নারাজ সে। আবার বিপরীত পক্ষ থেকে একটু ইশারা পেলেই ঝটপট কাজে লেগে যায়। রাইফ মীরার জড়তা দূর করতে একটু সাহায্য করলো। চিত হয়ে শুয়ে থাকা রাইফ কাত ঘুরলো। পেশিবহুল বাম হাতটা মেলে দিলো পাশে। কাচুমাচু করতে থাকা মীরা রাইফের এক ধাপ এগিয়ে আসাতে স্বস্তি পেলো। সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে রাইফের দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে পরলো। বালিশের উপর রাখা পেশিবহুল বা হাতের উপর মাথাটা রাখতেই মীরার পেটের উপর রাইফের শক্তপোক্ত ডান হাতটা আঁকড়ে ধরে টেনে নিলো, দুজনের মাঝের দূরত্ব ঘুচিয়ে দিলো পুরোটায়। কাঙ্ক্ষিত নারীকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো, বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করল নিবিড়ভাবে। একে অপরের সাথে মিশে গেলো, সজ্ঞানে মীরা নতুন অনুভূতির সাক্ষী হলো। রাইফের বুকের উষ্ণতা কুড়িয়ে নিলো, ইচ্ছাকৃত ভাবে আজ নিজেই রাইফের হাতের উপর হাত রাখল। রাইফের হাতের উল্টো পিঠের উপর দিয়েই আঙুল এ আংগুল গুঁজল। কাঠকাঠ হয়ে পরে রইলো রাইফের দু বাহুর বন্ধনে।
.
কখনও মীরার মেয়েলি সুবাস টেনে নিচ্ছে রাইফ , কখনও বা মুখ ডুবিয়ে লাজুকলতার চুলের ঘ্রাণ।
সময়ের পর সময় অতিবাহিত হচ্ছে। বুকের সাথে জড়িয়ে রাখে মীরা থেকে শুরু করে এ শহরের কাক পক্ষীরাও ঘুমিয়ে গেছে অথচ রাইফের ঘুম নেই এখনও। নাহ, এভাবে আর থাকতে পারছে না রাইফ। তার বেহায়া মনটা আরো বেশি বেহায়া হলো, অবাধ্যতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেলো যেনো। মীরার ঘাড়ে পরে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিলো সতর্কতার সহিত। বাহির থেকে ঘরে প্রবেশ করা আলোতেই মনোযোগ দিয়ে দেখল সেই ক্ষুদ্র তিলটা। বৃদ্ধাংগুলি দিয়ে হালকা করে ঘষে দিলো করেক বার। মাথা কিঞ্চিৎ উঁচু করে মীরার উষ্ণ ঘাড়ে রাইফের শীতল ঠোঁট জোড়া ছুঁয়ে দিলো ছোট্ট করে। আচমকা স্পর্শে বাহুবন্ধনে পরে থাকা মীরা ঈষৎ কেঁপে উঠলো। মৃদু কম্পনও স্পষ্ট অনুভব করল রাইফ। এতোক্ষণ কাঠকাঠ হয়ে পরে থাকা মীরা যে তার ন্যায় সজাগ বুঝতে সময় লাগলো না। ভালোই হলো, সুখানুভব তবে দুজনের ই হোক। রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করুক সঙ্গীনীর অধরের মিষ্টি ছোঁয়া।
রাইফ মীরার কানের কাছে মুখ আনলো, দু ঠোঁট হালকা করে ছুঁইয়েও দিলো নরম লতিতেও। কন্ঠ যথেষ্ট খাদে নামিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

-‘ভয় পেয়ো না, বেশি না জাস্ট পাঁচটা মিনিট। আজ অন্য কোথাও না, তোমার ঘাড়েই শুধু আমার দখলস্বত বসাবো। আমার গাঢ় স্পর্শ শুধু তোমার ক্ষুদ্র তিলটা টাতেই ছড়াবো।’

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে