মুগ্ধতার এক বিকেল পর্ব-২০

0
346

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (২০)

আমিন সাহেবের কড়া নির্দেশনা থাকার কারণে অনুভব আজ অফিসে এসেছে। তাও একদম পরিপাটি হয়ে। সে চিকন হলেও সুদর্শন। পোশাকটিতে বেশ ভালো লাগছে। অনুভব যখন প্রবেশ করছিল সবাই কেমন দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। ও তখন বোকার মতন চেয়ে ছিল। ভাবছিল, সে কি কোনো ভাবে চুলকানি বিশেষ পারফিউম মেখে এসেছে? নতুবা সে এক পা এক পা করে আগাতেই কেন সবাই দাঁড়িয়ে গেল। ম্যানেজার তাকে একটি নির্দিষ্ট কক্ষে বসিয়ে দিয়ে গেছেন। পরিপাটি সাজানো একটা কক্ষ। অনুভব চেয়ারের ব্যাক রেস্টে ঠেস দিয়ে চারপাশ দেখছে। পুরো কক্ষে নজর বুলিয়ে সে টেবিলের ওপরে থাকা পাজেল নিয়ে খেলতে লাগল। ম্যানেজার প্রবেশ করে বললেন,”অনুভব, পরিচয় করিয়ে দেই। ও হলো সায়েম। তোমার পার্সোনাল অ্যাসিস্টেন।”

অনুভব ভালো মতন চেয়ে দেখল। তার পার্সোনাল অ্যাসিস্টেন? এর মানে কী! বাবা কি তাকে অফিসে পার্মানেন্ট ভাবে বসানোর ধান্দা করছেন?

“অনুভব।”

ম্যানেজার রুস্তমের কণ্ঠ পেয়ে তাকাল অনুভব। মৃদু সুরে বলল,”আঙ্কেল আমি কি রোজ অফিসে আসব?”

রুস্তম একটু হাসলেন। আমিন সাহেবের সাথে তার কাজের বছর পঁচিশের ও বেশি। একদম শুরু থেকেই আছেন তিনি। অনুভব কে হতে দেখেছেন নিজের চোখে। তাই ছেলেটার স্বভাব সম্পর্কে তিনি আগে থেকেই অবগত। এছাড়াও আমিন সাহেব প্রায়শই ছেলের জন্য চিন্তায় মশগুল হয়ে থাকেন। এই তো সেদিনের কথা। অফিসের সব কাজ শেষেও আমিন সাহেব বাসায় যাওয়ার তাড়ায় ছিলেন না। রুস্তম তখন বললেন,”স্যার বাসায় যাবেন না?”

আমিন সাহেবের কোনো হেলদোল নেই। তিনি শুনতেই পান নি। রুস্তম আবার ডাকলেন।

“স্যার।”

“হ্যাঁ রুস্তম। বাসায় গেলে না?”

“আপনি বসে আছেন দেখে, এলাম।”

“ওহ।”

আমিন সাহেব আবার চুপ। ছেলের জন্য চিন্তায় তিনি ঘুমাতে পারেন না। অথচ অনুভবের কোনো হেলদোল নেই। যেন দুনিয়ার কোনো কাজেই তার আগ্রহ নেই।

“স্যার আপনি কী চিন্তিত?”

আমিন সাহেবের বুক থেকে হাহাকার নামে। তিনি কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলেন,”বুঝলে রুস্তম, একটা সন্তান থাকা পৃথিবীর সবথেকে বেশি চিন্তার।”

রুস্তম একটু হেসে বললেন,”কেন স্যার? অনুভব বাবার মতন সুর্দশন ছেলেকে নিয়ে চিন্তা কীসের?”

“সুদর্শন হওয়া না হওয়া কোনো কথা নয় রুস্তম। ছেলেটা এত অলস। এভাবে তো জীবন পাড় হবে না। নিজের জন্য কিছু করার ইচ্ছাটিই নেই।”

“তাহলে অফিসে কেন পাঠাচ্ছেন না?”

“ভাবছি, কীভাবে কী করব।”

“আমার মনে হয় অনুভব বাবা অফিসে এলে কিছু সময় কাটালে একটা আলাদা দায়িত্ব চেপে বসবে। ধীরে ধীরে কাজে মন টিকে যাবে।”

আমিন সাহেব কথাটির গুরুত্ব বুঝেছিলেন। তাছাড়া আর কোনো উপায় ও নেই। অনুভব কে বেশ কড়া হুশিয়ারি দিয়ে তবেই পাঠিয়েছেন। এদিকে অনুভব ভাবছে কীভাবে এখান থেকে বের হওয়া যায়।

অনুভবের কোনো কাজ ছিল না আজ। সে শুধুই পরিচিত হয়েছে। তবু তাকে বিষন্ন লাগছে। রুপবান ছেলের পাশে বসলেন। কপালে হাত রেখে বললেন,”কী হয়েছে বাবা?”

“কী হয় নি মা?”

রুপবান আতঙ্কিত হলেন না। তিনি ছেলের মতিগতি বুঝেন। অনুভব বালিশ থেকে মাথা উঠিয়ে মায়ের কোলে মাথা রাখল।

“বাবা কেন বুঝে না আমি অফিসে যেতে চাই না?”

রূপবান তখনই উত্তর দিলেন না। একটু ভেবে বললেন,”তোমার বাবা একা কাজ করেন। তোমার উচিত তাকে সাহায্য করা।”

“বাবা এখন অনেক বেশি শক্তিশালী মা।”

“সেটা ঠিক। তবে তুমি কি জানো তিনি শক্তিশালী কেন? কারণ তিনি নিয়ম নীতি মেনে চলেছেন। সারাটা জীবন পরিশ্রম করেছেন। পরিশ্রম করলে মানুষের শরীরের ক্ষমতা বেড়ে যায়। যদি তুমি কাজ ই না করো তবে তুমি শক্তিশালী হলেও ধীরে ধীরে সেই শক্তি হারিয়ে যাবে।”

কথা গুলো কানে পৌছাল না যেন। অনুভব কোল থেকে মাথা সরিয়ে নিল। বাবার সাথে দীর্ঘ দিন সংসার করে মা ও কেমন হয়ে গেছে। সে হতাশ হলো। কঠিন সেই হতাশে ভেতর থেকে তপ্ত হাওয়া বের হয়ে এসেছে।

আহনাফকে পড়িয়ে বের হলো সায়রা। ওমনি অনুভবকে দেখতে পেল। গোমড়া মুখ। পরনে অফিসের পোশাক। মাথা থেকে পা অবধি দেখে নিয়ে সায়রা বলল,”তুমি কবে থেকে অফিসে জয়েন করলে?”

সায়রার কথায় ভ্রু কুঞ্চিত করল অনুভব। কারণ মেয়েটি এমন ভাবে বাক্যটি বলল যেন এটি পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য ওর অফিসে জয়েন করা। অনুভব বেশ ভাব নিয়ে জানাল।

“কেন? আমি তো সেই কলেজের সময় থেকে বাবার অফিসে যাওয়া আসা করি। বাবার এই ব্যবসায় আমি বিশাল ভূমিকা রেখেছি।”

অনুভব যে স্পষ্ট মিথ্যে বলছে তা সায়রা ভালোই বুঝল। তবে ও বিষয়টা না ঘাটিয়ে বলল,”আচ্ছা আচ্ছা। ভালো তো।”

সায়রা রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিল। অনুভব ওর পাশে এসে দাঁড়াল।

“চলো আমি নামিয়ে দেই।”

“কেন?”

“কেন আবার কী কথা?”

“না আমি একাই যেতে পারব।”

কথাটা বলার পর ই একটা রিকশায় ওঠে গেল সায়রা। অনুভব ফ্যাকাশে ভঙ্গিতে চেয়ে রইল। সায়রা পেছন ফিরে বলল,”এই যে অনুভব মহাশয়, আপনার টাই এর ঠিক নেই। এতদিনে এই কাজটাও শিখলেন না?”

অনুভব সঙ্গে সঙ্গে তাকাল। সত্যিই টাই টা নষ্ট হয়ে গেছে। মা পরিয়ে দিয়েছিল। সে এ রকম ফর্মাল পোশাকে অভ্যস্ত নয়। তারপর ই ওর খেয়াল হলো,ও যে অফিসের ব্যাপারটি মিথ্যে বলেছে সায়রা বিষয়টা আসলেই বুঝতে পেরেছে।

অনুভবের অফিসের দ্বিতীয় দিন। ওর চোখে মুখে অতৃপ্তি। সায়েম প্রবেশ করেছে অনেক সময় হলো। অথচ অনুভবের কোনো জিজ্ঞাসা নেই। এমনকি বসতেও বলছে না। সায়েম এবার কণ্ঠের জোর কাজে লাগাল।

“হ্যালো স্যার।”

অনুভব তাকাল। তীক্ষ্ণ তার দৃষ্টি। সায়েম যেন ভয় পেল। সে শুকনো ঢোক গিলে বলল,”আমি ফাইল নিয়ে এসেছিলাম। যদি দেখতেন।”

হাত বাড়াল অনুভব। সায়েম ফাইল গুলো তুলে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। অনুভব ইশারায় বোঝাল দাঁড়িয়ে আছ কেন। সায়েম চট করেই জবাব দিল।

“আপনার কোনো প্রয়োজন হলে। যদি কিছু না বুঝতে পারেন।”

“তোমার কী মনে হয়, আমি এতটাই অবুঝ?”

“স্যার আমি সেটা বলি নি।”

“জানি কি বলেছ। যাও এখন।”

সায়েম চলে গেল। অনুভব বিড়বিড় করতে লাগল। এই অফিসের লোক গুলোকেও তার অসহ্য লাগছে।

সায়েমের ডাক পড়েছে। ছেলেটা নিজের ব্যক্তিগত মানুষটির সাথে কলে কথা বলছি। ওমনি ডাক পড়তে হলো তার। ও হন্তদন্ত হয়ে এল। অনুভব চোখ মুখ অন্ধকার করে আছে। সে পুরো ফাইলের একটি বিষয় ও বুঝতে পারে নি।

“স্যার।”

অনুভব অলস প্রকৃতির হলেও বাইরের মানুষের কাছে নিজেকে ধরা দেবার মতন মানুষ নয়। তাই সে বলল,”ফাইল নিয়ে যাও।”

“এই সময়ের মধ্যেই সব শেষ করে ফেললেন!”

সায়েম টেবিল থেকে ফাইল তুলে নিল। অনুভব কথা বলল না। কৌতুহলবশতই ফাইল ঘাটতে লাগল সায়েম। দেখল কোনো কিছুই করা হয় নি।

“স্যার, আপনি কি সিউর?”

“কেন?”

“আপনি তো কোনো কারেকশনই করেন নি।”

“এসব আমার কাজ? আমি করলে তুমি কী করবে?”

এ কথার বিপরীতে আর কোনো কথা থাকে না। সায়েম ফাইল নিয়ে চলে গেল। অনুভব তার মাকে কল করল।

“বাবা আমাকে কোথায় ফেলল বলো তো।”

“কী হয়েছে অনুভব?”

“অসহ্য লাগছে আমার।”

অনুভব কল রেখে দিয়ে কিছু সময় বসে রইল। তারপর সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে এল। সায়রা ইন একটিভ। একটিভ হয়েছিল তিনদিন আগে। মেয়েটাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া একেবারেই দুষ্কর।

চলবে…
কলমে~ফাতেমা তুজ ন‍ৌশি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে