#মিহিদানা ২
দিহান আপাতত মাকে কিছু না বলে মায়ের মোবাইল থেকে তুশাকে কল করল। সেটাও যথারীতি ব্লক! তার ফুপাতো ভাইয়ের মোবাইল থেকে কল করে পাওয়া গেল তুশাকে।
“হ্যালো!”
“তুশা আমি দিহান।”
তুশা চুপ হয়ে গেল।
“শুনতে পাচ্ছো তুশা?”
ওপাশ নিশ্চুপ।
“হ্যালো….কথা বলো না কেন? তুমি সকালের মেসেজ কেন পাঠিয়েছ? তোমার সাথে খোলাখুলি কথা বলতে চাই।”
তুশা স্পিকটি নট!
দিহান এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “তুমি কোথায় বলবে?”
এবার উত্তর এলো, “বাসায়।”
“ওকে!”
ফোন রেখে দিয়ে দিহান মায়ের কাছে গিয়ে সবকিছু খুলে বলল। মা কিছুক্ষণ ভেবে জিজ্ঞেস করলেন, “আজ আর বলে কী হবে বল!”
“তুমি বলেছিলে বিয়ে করে যেতে..”
মা হেসে বললেন, “ওই মেয়ের একটা মেসেজ পেয়ে সকাল থেকে পাগল হয়ে আছিস। তুইও ওকে পছন্দ করিস তাই না? আগে বললেই পারতি!”
দিহান একটু লজ্জা পেয়ে বলল, “না মা। আমি কখনো তেমন কিছু ভাবিনি।”
“তাহলে থাক৷ এখন অল্প সময়ে আর এসব ভেবে লাভ নেই। ওর সাথে যোগাযোগ রাখিস। যদি তোর জন্য অপেক্ষা করে তাহলে তো ভালোই। তুই নিশ্চয়ই ভাবছিস না আজকে বিয়ে করে ফেলবি?”
দিহান মায়ের কথায় কিছুটা আহত ও লজ্জিত হলো। মায়ের কথা ঠিকই। সে বোধহয় মনে মনে আশা করেছিল মা বলবেন, চল যাই, তোর বিয়েটা করিয়ে আনি। সেজন্যই হয়তো সে তুশাকে জিজ্ঞেস করেছিল সে বাড়িতে আছে কি না।
দিহান ঘরে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আপনমনে তুশার কথা ভাবতে লাগল। এভাবে অকপটে বলা ভালোবাসার কথা উপেক্ষা করা যায় কি? নাকি মায়ের কথাই ঠিক? সেও মনে মনে তুশার জন্য দুর্বল? মনের ভেতর আঁতিপাঁতি করে তুশার অস্তিত্ব খুঁজতে লাগল। মনে পড়ে গেল ওর সাথে কাটানো সময়গুলোর কথা। কিন্তু ভালোবাসা? না, সে জিনিসের হদিস পাওয়া গেল না। শূন্য হাতড়ে ফিরে এলো দিহান। সবই সাময়িক আবেগ বৈ কিছু নয়।
****
দিহানের ফোনটা আসার পর থেকেই তুশার বুক কাঁপছে৷ এতদিনকার লুকিয়ে রাখা ভালোবাসার কথা আর চেপে রাখতে না পেরে সে বলেই ফেলেছে৷ এতদিন বলি বলি করে আর বলা হয়নি। ছেলেবেলা থেকেই সে ভীষণ লাজুক। কতবার দিহানের ইনবক্সের মেসেজ অপশনে ‘তোমাকে ভালোবাসি’ শব্দটা টাইপ হয়ে মুছে গেছে, তা তুশা নিজেও জানে না। হিসেব রাখেনি। গতরাতে সারারাত সে ঘুমায়নি। ভেতরে জমা সব আবেগ প্লাবনের মতো আছড়ে পড়েছে চোখের কোল বেয়ে। অভিমানী মন শেষরাতে লিখে ফেলেছে ভালোবাসার কথাগুলো। তারপর হাত আপনাআপনি সেন্ড বাটনে চাপ দিয়ে ফেলেছে। চলে গেছে মেসেজ।
কয়েকবার চেষ্টা করেছে মন, মেসেজটা আনসেন্ড করে দিতে। কিন্তু মনের আরেকটা অংশ তীব্র প্রতিবাদ করেছে। শেষ পর্যন্ত ব্লক করে দিয়েছে দিহানকে। কী দরকার এই কথোপকথন চালানোর? তাতে আদৌ কিছু হবে না।
শুধু মেসেজে ব্লক করেই ক্ষান্ত হয়নি তুশা। ফোনেও ব্লক করেছে দিহান আর তার মা বাবার নাম্বার। কোনোভাবেই আর যোগাযোগ করা যাবে না তার সাথে।
কিন্তু দিহান যে অন্য নাম্বার থেকে কল করবে এটা তুশা ভুলেও ভাবেনি। দিহান কেন জিজ্ঞেস করল সে কোথায়? সে কি আসবে? কথা বলতে আসবে নাকি অন্য কারনে?
তুশার গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে বারবার। সে কি আশা করছে এক নিমিষে স্বপ্ন পূরণ হওয়ার?
দিহানের ফোন আর তো আসছে না। তবু তুশার মন আজব কল্পনাগুলোকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে…
দুপুর গড়িয়ে গেল। কিছুই হলো না৷ তুশার মন ভেঙে গেল। কিছুই খেতে পারল না সে৷ খাবার না খেতে পেয়ে খেতে হলো মা বাবার বকা। সেসবও ঠিকঠাক কানে ঢোকেনি তার। কেউ আসছে না তার জন্য- এই দুঃখবোধ তাকে স্থির থাকতে দিচ্ছে না।
বিকেলের দিকে শুয়ে থাকতে থাকতেও তুশার বিক্ষিপ্ত মন ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করছে শূন্যের পানে। হঠাৎ কলিংবেল বাজল। একবার…দুবার…তিনবার…
কে এলো? দিহান?