#মিষ্টার_লেখক(৮)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
[কার্টেসি সহও সম্পূর্ণ কপি নিষিদ্ধ]
হঠাৎ দরজায় কড়াঘাত শুনে ইমা কিছুটা দূরে সরে যায়। মহিন যেন আকাশ সম রাগ নিয়ে দরজা খুলে দেয়। ইতিমধ্যে ইমা ওরনা দিয়ে নিজেকে আবৃত করে নিয়েছে।
মিলি বললো,ভাই পাশের বাসার আন্টিরা বউ দেখতে এসেছে।মা ইমাকে নিয়ে যেতে বলেছে।
মহিন রাগ নিয়ন্ত্রণ করেই বললো, আজকের দিনটাই আমি ফ্রি আছি জানিস ই তো।
মিলি বললো, নতুন বউকে দেখতে আসবে এটাই তো স্বাভাবিক তাই না? এখন যদি আমরা দেখতে না দেই পরে বাসায় বাসায় গিয়ে বদনাম রটিয়ে বেড়াবে। তার থেকে কিছুক্ষণ দেখে চলে যাবে এটা ভালো না?
মহিন আর কিছু বলে না, রেগে হনহন করে হেঁটে বেলকনিতে চলে যায়।মিলি এসে ইমাকে বলে,চলো তোমাকে দেখবে বলে এসেছে।
ইমা পিছু পিছু যায় আর পিছনে ফিরে তাকায়।
নতুন বউকে দেখার আগ্রহ প্রায় সবার মাঝেই বিরাজ করে। ছোট বেলা গ্রামে কারো বিয়ে হলে ইমা এভাবেই দেখতে যেত।বড় হওয়ার পরও মাঝে দেখতে যেত। তার খুব ভালো লাগতো। সম্পূর্ণ নতুন একজন লাল টুকটুকে বউ দেখতে।
প্রায় ত্রিশ মিনিট পর বউ দেখা শেষ হলে প্রতিবেশীরা বিদায় নিয়ে চলে যায়। তখন ইমা রুমে এসে মহিনকে কোথাও দেখতে পায় না। বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়।
আসে পাশে চোখ বুলিয়ে পাশের বাসার বেলকনিতে দেখতে পায় একজন মহিলা, অবশ্য ইমার বড় বোনদের বয়সের হবে। তিনি ছোট বাবুকে খুব যত্ন সহকারে গোসল করাচ্ছেন। দৃশ্যটা ইমার নজর কাড়ে। একজন মা কিভাবে পরম আদুরে তার ছোট্ট বেবি কে গোসল করিয়ে দেয় তাই দেখে ইমা।
একটু এগিয়ে যায় ভালো করে দেখার জন্য। ছোট্ট বাবুটা কে বড় পানির ভলে বসিয়ে দেওয়া হয়। পানি পেয়ে বাবু হাত নাড়িয়ে দুষ্টুমি করছে আর আময়িক আসছে।
এরকম দৃশ্য দেখে ইমা ও হাসে।
মহিলা যখন বাবু কে পানি থেকে তুলে আলতো হাতে শরীর মুছে কাপড় পড়িয়ে দেয় তখন ইমার দিকে নজর পরে।
ইমা কিছুটা বিব্রত বোধ করে। বেলকনি থেকে চলে আসতে নিলে মহিলা পিছন থেকে ডাক দিয়ে বললো,
— শুনুন?
ইমা আবার বেলকনি গেসে দাঁড়ায় তখন মহিলা বললো,
— আপনি কি মহিন ভাইয়ার স্ত্রী?
ইমা সহসাই উত্তর দেয়,জ্বী।
মহিলা আবার বললেন, আপনার শ্বাশুড়ি মা কি আপনাকে পছন্দ করে বউ করে এনেছেন?
মহিলার এরকম প্রশ্নে বিব্রত বোধ করে ইমা।তাই চুপ করে থাকে তখন মিলি এসে বললো, কি করছো তুমি এখানে?
ইমা চমকে পিছনে ফিরে তাকায়। মিলি এগিয়ে এসে দেখে পাশের বেলকনিতে ঐ মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। তখন রেগে গিয়ে ইমাকে বললো,
— আসতে না আসতেই মানুষজনের সাথে আলাপ শুরু করে দিয়েছো? গতকাল ই তো আসলে এর মধ্যে এতো কি কথা তোমার?চলো রুমে চলো।
ইমা হতবাক হয়ে রুমে গেল! বুঝতে পারলো না এই সামান্য ব্যাপারে এতো উত্তেজিত হয়ে পড়ার কি আছে? মিলি আবারো বলে,
— এসব মানুষজনের সাথে কথা বলার দরকার নেই।আর কখনো কথা বলবে না।মা শুনলে অনেক রাগ করবে।তাই বলছি আর কখনো কথা বলবে না,কেউ কথা বলতে চাইলে ও না।
তারপর মিলি চলে যায় রুম থেকে।ইমা বসে রইলো চুপটি করে। ইচ্ছে করছে কাউকে জিজ্ঞাসা করতে,মিলি কেন কথা বলতে নিষেধ করল পাশের বাসার মহিলার সাথে। কিন্তু এখন কাউকে জিজ্ঞেস করা হলে ব্যাপারটা শুভনীয় হবে না। বলবে নতুন বউ আসতে না আসতেই খবরদারি শুরু করে দিয়েছে এখনই।
.
.
মোহনার থেকে জানতে পারলো মহিন স্টাডি রুমে গিয়ে বসে আছে। হয়তো স্টাডি করছে।ইমা মোহনার দেখানো পথ দিয়ে হেঁটে স্টাডি রুমে যায়। দরজা কিঞ্চিৎ ফাঁক করে রাখা আছে।ইমা খুব সন্তর্পণে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে যেন শব্দ দূষণ না হয়। এতে মহিনের পড়াশোনার ব্যঘাত ঘটবে তাই।
সাড়া ঘর বইয়ে পরিপূর্ণ। মহিন সামনের দিকে বই সামনে নিয়ে বসে আছে, হয়তো পড়ছে।
ইমা হেঁটে হেঁটে বুক সেলফে থাকা বই গুলো দেখছে। বেশিরভাগ বই সায়েন্স ফিকশন। ইমা যে বই গুলো পড়েছে ঐ গুলো বেশিরভাগ ইসলামীক গল্পের বই । এবার ঠিক করলো কিছু সায়েন্স ফিকশন বই পড়বে এখান থেকে।
বই পড়লে শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ হয় এবং শব্দচয়ন ও বাক্য বিন্যাসের অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়। যত বেশি বই পড়া হয়, তত বেশি শব্দভান্ডারে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শব্দ যোগ হতে থাকে। ফলে বই পড়া শব্দভান্ডার সমৃদ্ধিতে অনেক বেশি সাহায্য করে। নতুন কোনো ভাষা শিখতেও বই পড়ার বিকল্প নেই
অনেক দিন কোন গল্প লেখা হয় না ইমার। বিয়ের তোরজোরে লেখালেখির কথা ভুলেই বসেছে সে।ইমার স্বপ্ন কোন একদিন তার লেখা বইয়ের পাতায় দেখবে।যদিও ইমা ক্ষুদে লেখিকা। তেমন ভালো লিখতে পারে না। তবুও প্রত্যেকটি মানুষের একটা না স্বপ্ন থাকেই।কেউ প্রকাশ করে কেউ বা লুকিয়ে রাখে।
কেউ স্বপ্ন পূরণ করতে অজানার পথের পথিক হয়,কেউ বা ঘুমিয়ে থেকে স্বপ্নের পথে হাঁটে।
.
বই দেখতে দেখতে একটা বইয়ে চোখ আটকে যায় ইমার।বইটা দেখতে পেয়ে তার অবস্থান, সবকিছু যেন ভুলে বসে ইমা।
চোখ মুখ রাগে লাল রঙা ধারন করে! নতুন করে অপমান বোধ জাগ্রত হয় যেন।বইটা হাতে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়!
পিছনে বিকট শব্দে আঁতকে উঠে মহিন।চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় সে।ইমা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে স্টাডি রুম পার হয়ে দরজার বাহিরে সাদা টাইলসে পরে থাকা বই টার দিকে!
মহিন বুঝতে পারলো না ঠিক কি হয়েছে। এগিয়ে এসে ইমার দিকে চক্ষু বিস্ফোরিত করে তাকায়। কারণ ইমার চোখে মুখে কাঠিন্য ভাব ফুটে আছে।
তখন বাহিরে পরে থাকা বই টা কুড়িয়ে তুলে রাজিয়া সুলতানা। তিনি বরাবর বসে ছিলেন,বই টা এভাবে পরতে দেখে আকাশ সম বিষ্ময় নিয়ে উঠে এসেছেন। তার বাসায় বই’কে অবমাননা করার মতো কাউকে দেখছেন না তিনি। কেননা তিনি যেমন একজন প্রফেসর তেমনি তার ছেলে মেয়েরাও একেকজন ডাক্তার এবং ভবিষ্যত ডাক্তার।বড় মেয়ে মিলি মন্ত্রণালয়ে চাকরি করে ছোট মেয়ে মোহনা মেডিকেল স্টুডেন্ট। স্বামী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা, এখন রিটায়ার্ড করেছেন।
যাই হোক রাজিয়া সুলতানা বই হাতে এগিয়ে এলেন ইমা আর মহিনের কাছে। এসে বললেন,
কি ব্যাপার বই টা এভাবে ছুঁড়ে ফেললো কে?
ইমা আর মহিন দু’জনেই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। তখন রাজিয়া সুলতানা আবারো বললেন, আমি কিছু জিজ্ঞাসা করছি তোমাদের উত্তর দিচ্ছ না কেন?
তখন মহিন বললো, আমি ফেলেছি মা!
ইমা বললো, না মা আমি ফেলেছি!
রাজিয়া সুলতানা রেগে গেলেন দুজনের এমন সহজ শিকারক্তি শুনে। বললেন,তোমরা কি আমার সাথে মজা করছো? একটা বই এভাবে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছো তার পর আবার সে না আমি বলছো? লজ্জা করছে না?
বই মানুষের হৃদয়ের দ্বার খুলে দেয়, চিন্তার জগতকে প্রসারিত করে।মননশক্তি ও হৃদয়বৃত্তিকে সম্পূর্ণভাবে জাগ্রত করতে পারি বই পাঠের মাধ্যমেই।বইয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্যের স্রোতধারা একত্রিত হয়।আর সেই বই কে এভাবে অবমাননা করার অধিকার কে দিয়েছে তোমাদের?
মহিনের দিকে তাকিয়ে বললেন,এই শিক্ষা আমি দিয়েছি তোমাকে?
মহিন এবারো নিশ্চুপ হয়ে রইলো। রাজিয়া সুলতানা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বই টা বুক সেলফে ঠিক করে রেখে চলে গেলেন।
বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা আজাদ লস্কর ভিতরে ঢুকলেন। এতোক্ষণ বউ রেগে ছিলেন বলে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছিলেন না।বলা তো যায় না অন্যের রাগ তার উপর যদি জেড়ে দেন তার রাগী প্রফেসর বউ।
এখন এসে বললেন, কি ব্যাপার বলত?বই তো ইচ্ছে করে ফেলে দেওয়ার কোনো কারণ দেখছি না আমি? তাহলে কি হয়েছে?
নিরবতা ভেঙ্গে ইমা এবার বললো,
বাবা এই বইয়ের রাইটার কে আমার একদম পছন্দ নয়। আমি চাই না এই রাইটারের কোন বই এখানে থাকুক!
বই টার নাম “ডাইনির শহর” (ছদ্মনাম)
এটা যে মহিনের লেখা বই! তুহিন আহমেদ নামে।আর মহিন হচ্ছে ডাক নাম।
মহিন বুঝতে পারছে না কি করবে?ইমা তাকে এতো টা ঘৃণা করে তা আগে জানতো না সে। একটা বই এর জায়গা হবে না তার কাছে আর যদি জানতে পারে মহিন সেই রাইটার তাহলে ঠিক কি রিয়েক্ট করবে ইমা?
.
.
ইমা আর কিছু না বলে নিজের রুমে এসে বসে থাকে। মনে পড়ে গেল সেদিন তাকে যখন ব্লক করে দেওয়া হয় তখন অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিল ইমার বাবার ফেবু আইডি থেকে মেসেজ দিবে সেই তুহিন আহমেদ নামের রাইটার কে।
পরে অনেক ভেবে মেসেজ দেয়,
আসসালামু আলাইকুম।
“এই সামান্য ব্যাপারে এভাবে অপমান না করলেও পারতেন ভাইয়া”।
এটুকু লিখে সেন্ড করে। তারপর অপেক্ষা করে অপর প্রান্তের মানুষটার প্রতি উত্তরের। কিন্তু সেই মানুষটা মেসেজ টা সিন পর্যন্ত করে না। এতে আরো রেগে যায় ইমা। রেগে গিয়ে বাবার আইডি থেকে ব্লক করে দেয় সেই রাইটার কে!….
#চলবে… ইনশা আল্লাহ।