মিষ্টার লেখক পর্ব-০৭

0
973

#মিষ্টার_লেখক(৭)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
[কার্টেসি সহও সম্পূর্ণ কপি নিষিদ্ধ]

ইমার লজ্জা মিশ্রিত মুখশ্রী দেখে মহিন বললো,
— আমি মোহনা কে ডেকে দিচ্ছি অপেক্ষা করো।

তারপর সে চলে যায় মোহনা কে ডাকতে।
মহিনের এই মানবতা দেখে ইমা ভিশন খুশি হয়ে মনে মনে বলে, “জাযাকিল্লাহু খাইরন” সার্জন সাহেব।

এদিকে মহিন এসে মোহনার রুমে নক করে চলেছে অথচ মোহনার কোন পাত্তা নেই।পরে ফোনে কল দেয়। পাঁচ ছয়বার কল দেওয়ার পর রিসিভ করে মোহনা। মহিন বের হয়ে আসার জন্য বললে, মোহনা ঘুম জড়ানো কন্ঠে উল্টো পাল্টা বকে কল কেটে দেয়। এতে মহিনের ইগোতে লাগে। মনে মনে ঠিক করে আগামীকাল মোহনার কান দুটো আস্ত রাখবে না!তখন বুঝবে বড় ভাইয়ের কথা না শুনলে কি হয়।

কি আর করার মহিন রুমে ফিরে গিয়ে ইমাকে সবটা বললো। বেচারি ইমা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। তখন মহিন বললো, আমি ট্রাই করতে পারি?
ইমা উপায় নেই দেখে ডান দিকে মাথা কাত করে সম্মতি দিল। মহিন এগিয়ে গিয়ে খুব যত্ন সহকারে একে একে সব গুলো পিন খুলে দেয়। তারপর মহিন বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসলে ইমা শাওয়ার নিয়ে তবে বের হয়ে আসে।

মহিন ইমার আসার শব্দ পেয়ে চোখ মেলে তাকায়। তাকাতেই চোখ আটকে যায়, এই প্রথমবারের মতো ইমাকে এরকম খোলা মেলা দেখছে। ওরনা দিয়ে বক্ষ যুগল ঢেকে রেখেছে ঠিকই কিন্তু লম্বা পাতলা চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া।যার থেকে টুপ টুপ করে ঝরে পড়ছে পানির ফোঁটা।ইমা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তাওয়েল দিয়ে মুছে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
পিছন থেকে মহিন বললো,
— কিছু খাবে এখন?

ইমা হাত থামিয়ে মহিনের দিকে ঘুরে তাকালো, তারপর বললো,
— ভিশন ঘুম পাচ্ছে, এখন খাবো না কিছু। আপনি খেয়ে নিন।

মহিন মুগ্ধ নয়নে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। খুব স্নিগ্ধ লাগছে ইমাকে।
ইমা বেলকনিতে গিয়ে ভেজা তাওয়ালে টা ছড়িয়ে দিয়ে আসে।
এসে আবার মনে মনে লজ্জায় মিইয়ে যায় এই ভেবে যে আজ থেকে মহিনের পাশে এক‌ই বিছানায় ঘুমাতে হবে।
.
.
সকাল বেলা,
মহিনের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে ইমার।ইমা উঠে বসতেই মহিন বললো,
— আর একটু হলে তো পরেই যেতে! এতো বড় খাট হ‌ওয়া সত্তেও এতো কর্ণারে গিয়ে শুয়েছো কেন?

উত্তরে চুপ করে বসে থাকে ইমা।তাই মহিন বললো,যাও ফ্রেশ হয়ে আসো, নাস্তা করবে।
ইমা দেয়াল ঘড়ি দেখে সময় দেখলো মাত্র ৭টা বাজে! এতো সকাল বেলা নাস্তা করবে সে?এই সময় তো তার বাবা ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণের ইনজেকশন নিত। তারপর বিশ মিনিট পর নাস্তা করতো।আর এই সময়ে সে নাস্তা করবে?

মহিন, ইমাকে থম মেরে বসে থাকতে দেখে বললো, কি ব্যাপার? বসে আছো যে? সবাই এখন ডাইনিং এ চলে আসবে, তখন তুমি উপস্থিত না থাকলে কেমন দেখাবে বলো?

ইমা অলস ভঙ্গিতে বললো, এতো তাড়াতাড়ি নাস্তা করবো? আরো পরে করলে হয় না?

মহিন সময় চেক করে বললো,
— একদম হয় না।
— কেন? আমি তো বাড়িতে আরো পরে নাস্তা করতাম।
— এখন আর সে অনিয়ম চলবে না, সময় মতো খাবার খেতে হবে।যেহেতু ডিনারের পর অনেকটা সময় শরীর খাবার পায় না তাই সকালের খাবার অর্থাৎ ব্রেকফাস্ট সকাল ৭-৮টার মধ্যে সেরে ফেলতে হবে। যদি এ সময়ের মধ্যে সম্ভব না হয় তাহলে সকাল ১০ টার মধ্যে সেরে ফেলতে হবে। সকাল ১০টার পর যদি নাস্তা করো তাহলে তা কিন্তু আসলে আর ব্রেকফাস্ট থাকে না এবং দুপুরের খাবার খাওয়ার ওপর এর প্রভাব পড়ে। তখন আর দুপুরের খাবার বেলা ৩ টার আগে করার ইচ্ছা জাগে না। ফলে শরীর ভাঙতে শুরু করে। তাই ব্রেকফাস্টটা সাড়তে হবে সময়ে। সুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ব্রেকফাস্টের সময় নির্ধারণের খুব সহজ একটা নীতি আছে। তা হচ্ছে, ঘুম থেক ওঠার ঠিক আধ ঘণ্টার মধ্যে ব্রেকফাস্ট সেরে ফেলা।

ইমা আর বসে না থেকে অঘর্তা উঠে যেতে হলো, তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে চুল চিড়নি করে ওড়না দিয়ে পুরো শরীর সুন্দর করে ঢেকে দিলো।

মহিন ইমার অপেক্ষায় বেলকনিতে বসে থেকে ফোনের নোটে কিছু লিখছে।ইমা ফ্রেশ হয়ে আসলে তবে তাকে নিয়ে ডাইনিং রুমে যাবে বলে।অথচ লেখার মধ্যে এতোটাই মগ্ন হয়ে পড়ে যে ইমার কথা ভুলেই বসে।
এদিকে ইমা তৈরি হয়ে মহিন কে না পেয়ে বেলকনিতে আসে।এসে দেখে মহিন গভীর মনোযোগে ফোনে টাইপিং করছে।ইমা আর একটু কাছে গিয়ে উঁকি মেরে দেখতে নিলে মহিন পিছনে ফিরে! আকস্মিক ঘটনায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় মহিন।তাই আমতা আমতা করে বললো,
— ককখন এসেছো তুমি?

ইমা উত্তর না দিয়ে আরো একটু ঝুঁকে বাহিরে তাকায়,এদিক ওদিক খুঁজেও পায় না।মহিন অবাক হয়ে বলে, তুমি কি খুজছো কিছু?

ইমা কোমরে হাত রেখে মন খারাপ করে বললো,
— ওই গাছটিতে খুব সুন্দর একটা রঙ বেরঙের পাখি ছিল। আপনার জন্য দেখতে পারলাম না ভালো করে।

মহিন যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো,সে ভেবেছিল ইমা উঁকি মেরে তার ফোন দেখতেছিল! আসলে তা নয়। এখন ইমাকে পাশে বসিয়ে বললো,
— পাখি খুব পছন্দ?

ইমা উপর নিচ মাথা দুলায়।
মহিন একটু ভেবে বললো,
— আচ্ছা এবার চলো খাবার খেতে যাই?
— আচ্ছা চলুন।

দুজনে ড্রয়িং রুমে এলে ইমা কয়েকজন অপরিচিত মুখ দেখতে পায়।যাদের আগে দেখেনি। সবাই নতুন ব‌উ দেখবে বলে বসে আছে ।ইমা সকলের উদ্দেশ্যে সালাম দিল।
মিলি তার শ্বাশুড়ির সাথে পরিচয় করিয়ে দিল ইমাকে। ভদ্রমহিলা ইমাকে কাছে বসিয়ে বললেন,ব‌উ তো চান্দের মতো সুন্দর। সাথে আরো দুজন সায় দিয়ে বললেন, আসলেই ব‌উ অনেক সুন্দর। আবার একজন টিপ্পনী কেটে বললেন, সুন্দর হবে না কেন? এমন ডাক্তার ছেলের জন্য কতো সুন্দর সুন্দর মেয়েদের সিরিয়াল লেগে ছিল। কথা ছিল তো ডাক্তার মেয়ের সাথে বিয়ে হবে। সাধারণত ডাক্তার’রা ডাক্তার মেয়ে ই বিয়ে করে। কিন্তু মহিনের যে কি হলো এমন অদূরে গিয়ে সাধারণ মেয়েকে বিয়ে করে আনলো!

ইমা বলার মতো কিছু পেলো না।মহিন বরাবর ডাইনিং এ চেয়ারে বসে ছিল। মহিলার এমন ধারা কথায় উঠে এসে বললো,
— সাধারণ মেয়েটির মাঝেই অসাধারণ খুঁজে পেয়েছি।যা বাহ্যিক দৃষ্টিতে আপনারা দেখতে পাবেন না।আর ডাক্তার দের যে ডাক্তার‌ই বিয়ে করতে হবে এটা কোথাও লেখা নেই।তাই অহেতুক কথা বলে নিজেদের ছোট পরিচয় দিবেন না।

তারপর সবাই খেতে বসে। মহিন সকাল বেলা শুধু ফলমূল দিয়ে নাস্তা করে। কেননা
সকালের নাস্তার জন্য সব চাইতে ভালো খাবার হচ্ছে ফলমূল। কলা, আপেল, কমলা, স্ট্রবেরি, আঙুর ইত্যাদি ধরণের ফলমূল অথবা মৌসুমি ফলমূল দিয়ে সকালের নাস্তা করা সব চাইতে ভালো। ২ টি কলা, ১ টি আপেল, ১ টি কমলা, ২/৩ টি স্ট্রবেরি এভাবে শুধুমাত্র ফল দিয়ে নাস্তা করা সকালের জন্য ভালো। আবার ফলমূল দিয়ে সালাদের মত তৈরি করেও খায় সে।

কিন্তু এসবে একদম অভ্যস্থ না ইমা। তাই তাকে সবজি খিচুড়ি দেওয়া হয়।যারা ভাত জাতীয় খাবার খেয়ে অভ্যস্ত তারা ভাতের বদলে সকালের নাস্তায় রাখতে পারেন খিচুড়ি। তবে অবশ্যই সবজি খিচুড়ি। চালের পরিমাণ কমিয়ে বেশি পরিমাণে সবজি দিয়ে রান্না করা সবজি খিচুড়ি দিয়ে সেরে নিতে পারেন সকালের নাস্তা। এতে করে ভারী নাস্তা করা হলেও দেহে পৌঁছাবে পুষ্টি।

এরকম একেকজন একেকরকম খাবার যেমন,আটার রুটি,ওটস,সালাদ,দ‌ই ইত্যাদি খাবার দিয়ে সকালের নাস্তা শেষ করে। যেগুলো শরীরের জন্য খুবই উপকারী এবং ক্ষতিকর কোনো প্রভাব ফেলে না।
কিন্তু পরিবারের অনেকেই এসব খাবার পছন্দ করে না। শুধুমাত্র মহিনের ভয়ে ভীত হয়ে খায়, কিছু বলতে পারে না।মোহনা নিজের মুখশ্রী বাংলার পাঁচের মতো করে গিলে গিলে খেয়ে চলেছে। তারপর উপর কতো সাধের ঘুম ভেঙে খেতে এসেছে, মনে মনে হাজারো বকে চলেছে মহিন কে।
.
.
আজকের দিনটা মহিন বাসায় থাকবে। সারাটা দিন ইমাকে দিবে। আগামীকাল থেকে আবার ব্যস্ত জীবন শুরু হবে।
ইমা মেহমানদের সাথে বসে গল্প করছে তখন মোহনা ডেকে নিয়ে যায় এক পাশে।ইমা কারণ জানতে চাইলে বলে, আমার কান দুটো কে বাঁচিয়ে দাও প্লিজ ভাবী মনি!
ইমা কিছুই বুঝতে পারে না। তখন মোহনা বললো, তোমাকে এতো কিছু বুঝতে হবে না তুমি শুধু তোমার রুমে এসো।

তারপর মহিন আর ইমার রুমে নিয়ে গিয়ে বাহিরে থেকে দরজা লক করে চলে যায় মোহনা।ইমা বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তখন মহিন বেলকনিতে থেকে আসতে আসতে বলে,
— আজ সারাটা দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম….

ইমা পিছনে ফিরে তাকায়।
মহিন ট্রাউজারের পকেটে হাত গুজে রেখে মুচকি হেসে এগিয়ে আসছে।
ইমা দুই হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে আছে তার কামিজের কিছু অংশ। সারা শরীর গরম হয়ে লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। লজ্জায় লাল রঙা ধারন করেছে। মহিন কাছে এসে দাঁড়ায়, তাদের মধ্যে কিঞ্চিৎ ফাঁক বিদ্যমান আছে ‌।ইমা মাথা নিচু করে আছে,তার থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে মহিন।
ইমা নিজেকে সামলাতে না পেরে মহিনের বুকের উপর ঢলে পড়ে। নিজেকে লুকানোর বৃথা চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠে। মহিন পরম আদুরে জড়িয়ে ধরে তার বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়। ধীরে ধীরে অধরপল্লব দুটো ছুয়ে দেয়।ইমা আরো শক্ত করে চেপে ধরে মহিন কে….

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে