#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩৯
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“আমার মেয়ের সাথে তোমার অন্যরকম সম্পর্ক কবীর।কেমন অদ্ভূত লাগে যখন একে অপরের সঙ্গে কথা বলো।সাধারণ যে ভাব কিংবা অনুভূতি বজায় থাকার কথা দুজনের মধ্যে সেখানে ব্যতিক্রম কিছু আছে।”
“তুমি বুদ্ধিমতী তাহিয়া।এর বাহিরে কিছু বলার নেই।”
কবীরের হেঁয়ালিপূর্ণ বাক্যগুলোতে ব্যতিক্রম সন্ধান করেও মিললো না।তাহিয়া মুখ বিবরে দ্বিধা বজায় রেখে পুনরায় বলল,
“তোশামণি কী নিজের কথা তোমার সাথে কখনো শেয়ার করে?আমাকে একটা জিনিস জেনে বলতে পারবে?”
“তোমার কী হলো বলো তো তাহিয়া।আজ এসব কথাবার্তা বলছো।”
তাহিয়া অপ্রস্তুত ভঙিতে হাসলো।গায়ে জড়ানো ওড়নাটি একটু এদিক ওদিক করে নিলো।চেহারার চেকনাই এখনও সমানতালে চারিধারে আভা ছড়ায়।
“মায়ান বড্ড সুবিধাবাদী মানুষ।এতোদিন মেয়েকে বড় করলাম আমি।এখন এতো বছর পরে হুট করে পিতৃধর্ম পালন করতে চাচ্ছে।ওর বড় ভাইয়ের ছেলের সাথে তোশার বিয়ের কথা শোনালো।দেখো তো প্রাক্তনরা এমন কথাবার্তা কেন বলে যে ঘৃ’ণা করাও তাদের ক্ষেত্রে কম মনে হয়।”
কবীরের মুখের রঙ কয়েক দফা বিবর্ণ হয়ে গেলো।সে জানতো মায়ানের এমন পরিকল্পনার কথা।তবে সময়ের ব্যবধানে ভুলে গিয়েছিল।
হালকা বিদ্রুপের সুরে বলল,
“তোশামণিকে দেখছি অনেকে বিয়ে করতে চায়।অবশ্য সুন্দরী,গুণে লাবণ্য মেয়েদের এমন এক জ্বা’লা থাকবেই।ভেবো না।মায়ান ঠিক করুক।কিন্তু শেষে তোশামণি যাকে গ্রহণ করতে ইচ্ছা পোষণ করবে সেই মানুষটা বিজয়ী হবে।”
“আমি এই কথাটা জানার জন্য এসেছি তোমার কাছে।তোশা কী কাওকে পছন্দ করে?”
“তোমার মন,মস্তিস্কের ধারণা কী?”
“ধারণা সবসময় সত্য হবে এমনটা নয়।কিন্তু মন বলছে কেউ একজন আছে আমার মেয়ের জীবনে।মস্তিস্ক আবার বলে যে মেয়েটা এখনও এতো বোকা বোকা কথা বলে সে প্রেম বা ভালোবাসা নামক জিনিসে জড়াবে?”
“কেন?জড়ানো তে অস্বাভাবিক কিছু দেখছিনা।”
“আছে।প্রেম করে চালাক মানুষেরা।আমার মেয়েটা এতো ওমন নয়।”
কবীর অধরযুগল কাঁ’ম’ড়ে হেসে ফেললো।মেয়ে যে প্রেমের বেলায় অষ্টরম্ভা নয় বরং ভাবনার বাহিরে চতুর।এই কথাটি তাহিয়া নামক জননীর জানা নেই।পরক্ষণে তাকে কোণঠাসা করার উদ্দেশ্যে কবীর বলল,
“হুঁ?বোকারা প্রেম করেনা?নিজের জীবন দেখেও এই ধারণা জন্ম নিলো মনে?তুমি কিন্তু সর্বোচ্চ লেভেলের বোকা ছিলে।আর মায়ান ছিল ভীতু।এগুলো ভুলে যেওনা।”
“তোমার এসব কথায় মনে হচ্ছে তুমি চিনো তোশামণি কাকে পছন্দ করে কিংবা পুরো ব্যাপারটা কী আসলে।”
কবীর দ্বিধা তৈরী করে বলল,
“জানি কিংবা জানিনা।ভেতরের কথা গুলোর জন্য সময়কে সময় দাও।সবটা জানতে পারবে।”
“মেয়ে তো বিপথগামী হয়নি?”
বড্ড ঠান্ডা সুরে প্রশ্নটি শুধালো তাহিয়া।কবীরের বর্তমানে জীবনে যা সবথেকে ভ’য়া’বহ।আজকে তাদের মধ্যে আলোচনাকে সবাইকে সবটা জানানোর প্রথম ধাপ বলে বিবেচিত করে নিলো।প্রশ্নটির ভিন্নমাত্রায় জবাব দিলো সে।
“মেয়ের জীবনসঙ্গী হিসেবে তোমার কোনো চাওয়া-পাওয়া আছে?”
“সারাজীবন সাথে থাকবে ব্যতীত আর কোনো চাওয়া নেই।বাকীটা যে সাথে থাকবে সে যদি খুশি থাকে সেখানে মা হয়ে সেই আনন্দ কেঁ’ড়ে নেওয়ার মতোন নির্বোধ আমি নই।”
“তাহলে সুপথ/বিপথের ভাবনাটি না হয় আপাতত সরিয়ে রাখো।সঠিক সময়ের অপেক্ষা করো শুধু।”
উষ্ণ শ্বাসে কবীরের বুকটা ভরে গেলো।এই অসম সম্পর্কের ব্যাপারে আলোচনা যেখানে কঠিন সেখানে সকলকে বিয়ের জন্য মানানো অনেক বড় ব্যাপার হবে।কিন্তু দুনিয়াতে হয়তো অসাধ্য বলে কিছু নেই।কোননা কোনো পরিণতি পাবে তোশা-কবীরের সম্পর্ক।
(***)
“তুই কী সালমান খান হওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছিস নিজের সঙ্গে?দেখ চল্লিশটা বছর হয়ে গেলো।এইবার তো বিয়ে করে নে।”
মাথা নিচু করে কবীর খেতে ব্যস্ত।যেন মায়ের কথাগুলো কর্ণকুহর হয়নি।হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাসটা নিতে নিতে বলল,
“বুঝলে মা আমাকে পরীতে ধরেছে।খুব সুন্দর পরী।আপাতত সে ছাড়বেনা।যদি ভবিষ্যতে ছেড়ে কোনো জিনের পিছনে দৌড় দেয় তখন তাহিয়া ঘটককে কাজে লাগাবো।”
সেতু খলবল করে বলল,
“তাহিয়াকে মটেও ঘটক বলবিনা।সোনা মেয়েটা কতো চেষ্টা করছে তোর সংসার তৈরী করার।”
“ওইযে বললে সালমান খান হবি কীনা।আপাতত সেই চিন্তায় আছি।ফিফটি সেভেনে পা রাখতো দাও।তখন বিয়ের জন্য ভাববো।তাছাড়া আমি যথেষ্ট ইয়াং একজন পুরুষ।মটেও বুড়ো নই যে বিয়ের জন্য পাগল হলে।”
“দেখলে তাহিয়া।”
তাহিয়া উপর নিচে মাথা দুলিয়ে বলল,
“দেখছি আন্টি।কবীর তোমার বিয়ে করতে কী সমস্যা?সত্যি করে বলো।”
“ছেলে আছে আমার।”
“তা কোনো ব্যাপার না।তুমি চাইলে ইয়াং মেয়েকেও বিয়ে করতে পারো।কারণ বিনা সংকোচে তোমার কোয়ালিফিকেশন দেখে রাজী হয়ে যাবে মেয়েরা।”
“ওইযে বললাম পরীতে ধরেছে।”
“কোনো পছন্দ আছে?”
“জানিনা।”
সেতু বিরক্ত হয়ে বলল,
“এতো পরী পরী করিস না।ভালো লাগেনা আমার ভয় করে।পরীরা দেখতে কুৎসিত হয়।বাহিরের সৌন্দর্য সবতো মরিচীকা।”
সেতু আদি যুগের মানুষ।এক কালে অনেক প্রসস্থ মস্তিস্কের হলেও ইদানীং গ্রামের মহিলাদের মতোন স্বল্পপ্রাণের হয়ে যাচ্ছে।পুরো বিষয়টিতে কেউ যদি একটুও মন না বসাতে পারে সে হচ্ছে তোশা।কারণ কুৎসিত কথাটি শুনে বৃষ্টি আড়ালে হেসেছে।এই একটু-আধটু বিদ্রুপের হাসিগুলো।তোশাকে ইদানীং সর্বোচ্চ পোড়ায়।রাগটা এবার কবীর শাহ এর উপরে গিয়ে পড়লো।একটু শক্ত সুরে বলল,
“তাকে পরীতে ধরবে কীভাবে?সে তো কালো।আর কালোদের সুন্দর পরীতে ধরেনা।”
ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত সকলের চোখ তোশার কাছে এসে থেমে গেলো।তাহিয়া চাপাসুরে স্বাবধান করলো।সেতু মুখটা গো’ম’ড়া করে বলল,
“তোশামণি,আমার ছেলে মটেও কালো না।”
কবীর কথার মধ্যিখানে বলল,
“কালো হলেও যে পরীটা পছন্দ করে সে খুব সুন্দর।যদি ধরো আমি কু’ৎ’সি’ত তাহলে ভাবতে হবে পরীটা অন্ধ।এক্ষেত্রে ভালোবাসা বেশী।বুঝলে।”
“বুঝলাম।”
সেতু কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলো।কিন্তু কবীর চোখের ইশারায় না করে দিলো।সে জানে তার মা এই কালো,ফর্সার ভেদাভেদ মানতে পারেন না।মুখটা মলিন করে সেতু খেতে লাগলো।পুরো ডাইনিং রুমে নিস্তব্ধ পরিবেশ।হুট করে সামান্য কেঁশে সেতু বলল,
“আসলে হয়েছে কী?এটাই সঠিক সময় দেখে বিষয়টা বলছি।অন্তত তাহিয়া তো বুঝবে আমাকে।দিশা কাল রাতে ফোন করেছিল আমাকে।সে নিজের স্বামী সন্তান ফিরে পেতে চাচ্ছে।আমি কিছু বলিনি।তবে যদি ফিরে আসে তো।”
কবীর মুখে থাকা খাবার গিলে ফেললো।শক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“এটা কোনো আলোচনার মধ্যে পড়ে মা?সম্ভব এতো বছর পর কিছু?”
“কেন নয়?”
“কখনো না।তাছাড়া আমি জীবনে অনেক এগিয়ে গিয়েছি।”
“কিন্তু সেই তো একা।”
“নাহ আমি একা নই।”
“তাহলে এতোক্ষণ পরীর কথাটা সত্য?কেউ আছে জীবনে।”
“না থাকার কিছু নেই।আছে একজন।তাই বলে সে দিশা নয়।”
সেতু শান্ত হলো।ভীষণ নরম কণ্ঠে বলল,
“দিশা আমাকে গত একমাসেও ফোন করেনি।বরং কথাটি বানিয়ে বলেছি তোমার জীবনে কেউ আছে কীনা জানতে।চল্লিশ বছর বয়সে কেউ প্রেম করে?পরীকে ধরে নিয়ে আসবি।তা নয় এমন কবিরাজি আরো দেখবি।”
কবীর আ’হ’ত সুরে বলল,
“তুমি মিথ্যা বলে বের করলে?”
“একদম।তাহিয়া তুমি জানো কে?”
“নাহ তো আন্টি।আশ্চর্য জানেন আমার নিজের মেয়ের কথাও মনে হয় ওর কেউ আছে।তোশাকে কয়েকবার জিজ্ঞেসও করতে গিয়েও পারিনি।আজ কবীর বলল।দেখেছেন আমাদের দুজনের ছানার গোপন মানুষ আছে।কিন্তু আসলে তারা কে?”
সেতু তাল মিলিয়ে বলল,
“নিশ্চয় সারপ্রাইজ পাবো আমরা সময় হলে।বাচ্চাদের উপর বিশ্বাস রাখি।”
টেবিলে বসে থাকা এই তাহিয়া -সেতু নামের মা গুলো ছাড়া আর সকলে জানে তাদের ছানাদের গোপন মানুষ বলতে তারা নিজেরাই।কবীর অসহায় হয়ে নিজের মাকে দেখছে।আসলেও সে সব রমণীর কাছে চ’তু’র হলে মা নামক মানুষটার নিকট ভীষণ বোকা।অন্যদিকে তোশা দুই রমণীর হাসিতে অবাক হচ্ছে।যখন সারপ্রাইজটা পাবে তখন কী করবে তারা?সময় তো ধীরে ধীরে ঘনিয়ে আসছে সকলের সবটা জানার।
চলবে।
#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪০
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“পুরুষ মানুষেরা ভালোবাসি,বিয়ে করবো কথাটি আসলে এমনিই বলে।গভীর কোনো ভিত্তি নেই যার।দেখবে এটা তাদের জন্য অনেক সহজ।”
“নিজে পুরুষ হয়ে এভাবে বলতে পারলেন প্রতীক স্যার?”
“তোশা যা সত্য।”
তোশা বিশ্বাস করলো না।আজ তার শ্যুটিং এর শেষ দিন।চুলগুলো সুন্দর করে বিন্যস্ত করে শুধালো,
“তাহলে কী এই পৃথিবীতে বিবাহিত বলতে কোনো পুরুষ থাকতো?আপনিও এমন নিশ্চয়।”
নিজের প্রশংসা করার দরুণ প্রসঙ্গটি উঠিয়েছিল প্রতীক।গলাটি পরিষ্কার করে বলল,
“আমি সাধারণ নই।যাকে পছন্দ করি মন থেকে বলি।জানো তো আমার পছন্দের আছে একজন।”
“তাই?সে কে?”
প্রতীক অনেকটা সাহস নিয়ে বলতে যাবে ঠিক তখুনি গেট দিয়ে কয়েকটি গাড়ীর প্রবেশ ঘটলো।আজকে তারা একটি স্টুডিও এর ভেতরে শ্যুটিং করছে।পরপর থামা গাড়ীগুলো অতি সহজে সবার দৃষ্টি কেঁড়ে নিলো।তোশাও ব্যতীক্রম নয়।সে অবাক হয়ে দেখছে গাড়ী থেকে নামা এলেমেলো পুরুষটিকে।উল্লাস!বর্তমানে সিনেমা জগতে সবথেকে বড় সুপারস্টার।এবং সকলের প্রিয় মুখ।তোশা নিজেও এই ছেলেটির অভিনয় পছন্দ করে।কিন্তু তার ব্যক্তিগত জীবনকে নয়।উল্লাসকে দেখে প্রতীক বিষন্ন কণ্ঠে বলল,
“পরিবেশকে নষ্ট করার জন্য এসে গিয়েছে।এই ছেলেটা কীভাবে যে এতোটা জনপ্রিয়তা পেলো।”
তোশা চোখটা প্রতীকের পানে ঘুরিয়ে শুধালো,
“কেন?সমস্যা কী?উল্লাস তো ভালো অভিনেতা।”
“ব্যক্তিগত জীবনে উদ্ভট আর এলেমেলো মানুষ।সারাক্ষণ ভ্যাপিং করে।গাঁ থেকে কোলনের সাথে এ’ল’কোহলের গন্ধ আসে।ধরি মাছ না ছুঁই পানি টাইপ প্লে’বয়।আরো শুনতে চাও?”
“বুঝলাম।কিন্তু ব্যক্তিগত জীবন দিয়ে কী হবে যদি অভিনয় ভালো হয়?”
“তোমার জন্য একটা অফার এসেছিল বিপরীতে এই উল্লাস কাজ করতো।আমি পরামর্শ কিংবা না জানিয়ে না করে দিয়েছি।”
“এমনিতেও আমার কবীর শাহ এরপর অভিনয় করতে দিবেনা।”
“রিয়েলি?তোমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হলো না তাতে?মানে পার্টনার হিসেবে তোমার নিজস্ব ভালোলাগা নেই।অভিনয় পছন্দ তোমার তাইতো?”
“সেরকম..।”
“না বলতে নিশ্চয়।কিন্তু এটা তোমার মনের কথা নয়।”
“আমার মনে কী চলে তা আপনি কীভাবে বলবেন?কবীর শাহ কখনো আমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেননি।তার একটি জিনিস পছন্দ নয়।সেটা আমি করবো না।”
“তোমাদের মেয়েদের সবথেকে বড় সমস্যা কী জানো?ছেলেদের কথাগুলো মেনে নেওয়া।তাছাড়া মি.শাহ বিশ বছরের বড় তোমার।কিছু তো মিলেনা।দেখো জীবনের অনেকটা সময় পড়ে আছে।এসব টাকাওয়ালা লোকেদের সঙ্গে প্রকৃত সুখ পাবেনা।”
তোশা ভীষণ নির্বিকার হয়ে প্রতীককে দেখছে।একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই আবার সুগার গার্ল শব্দ মোড়ানো অ’স্ত্র তার দিকে ছুঁড়ে দিলো।কিন্তু এবার মেয়েটির মনে মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে।মন খারাপ করবে?নাকী এড়িয়ে যাবে?
“প্রতীক স্যার,আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বলার কোনো অধিকার আপনাকে দিয়েছিলাম বলে মনে আসছেনা।”
“আরে তোশা রাগ করো না।ভালো এর জন্য।”
“নিশ্চয় আমার মা-বাবা মা’রা যায়নি।তারা বিষয়টি দেখবে।টাকার কথাটি উঠলো তখন বলতে হয় আপনি কেন অভিনয় ছেড়ে বৈরাগী হচ্ছেন না?”
অন্য কোনো বাক্য শোনার পূর্বে জায়গাটি ছেড়ে সিঁড়ির দিকে যেতে লাগলো তোশা।দোতালায় ছোট্ট একটি নিরিবিলিতে বসার জায়গা আছে।অনেক গুলো সাংবাদিক নেমে আসছে দোতালা থেকে।উল্লাসের পিছনে গিয়েছিল তারা।তোশা নতুন মুখ হওয়ায় কেউ কোনো আগ্রহ দেখালো না।কিন্তু হলুদ রঙা শাড়ী পরিহিতাকে একবার পিছন ফিরে দেখে নিলো অবশ্য।
উষ্ণ পরিবেশ হলেও ঈষৎ বাতাস আছে।ছোট ছোট চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে নিলো তোশা।মন খারাপ কিংবা ভালো নয়।সকলের থেকে দূরে থাকার উদ্দেশ্যে সে এখানে এসেছে।ফোনটা বের করে কবীর শাহ এর নাম্বারে ডায়াল করলো।রিসিভ হলে মিষ্টি করে শুধালো,
“পালিয়ে বিয়ে করতে কেমন লাগে?”
কবীর ভ্রু কুঁচকালো।সামনে তার বিদেশি ক্লায়েন্ট বসে আছে।তবুও প্রিয় নারীর সঙ্গে কথা বলার লোভ কী সামলানো যায়?
“নিশ্চয় ফ্রি এখন আপনি তোশা ম্যাডাম।”
“এটা উত্তর হলো?”
“চলেন না পালিয়ে যাই।এরপর কেয়ামত থেকে কেয়ামত সিনেমার মতোন দূরে পাহাড়ে চলে যাবো।আপনি কষ্ট করে টাকা নিয়ে আসবেন তাতেই চলে যাবে দিন।”
কবীরের সামনে বিশ্বের অন্যতম মানি মেকার পার্সনরা বসে আছে।তাদের সামনে ফোনে কথা বলায় উচ্চ শব্দে হাসি অসৌজন্যমূলক আচরণ হিসেবে গণ্য হলেও কবীর না হেসে পারলো না।সকলে তার দিকে অদ্ভূতভাবে তাঁকালো।বিনিময়ে নিজেকে ধাতস্থ করে সে বলল,
“কেয়ামত থেকে কেয়ামত সিনেমায় দুজনের হ্যাপি এন্ডিং হয়না।কিন্তু এই শাহ তার চৌধুরীর সাথে সুন্দর একটি এন্ডিং চায়।বুঝলেন।”
“এভাবে বলবেন না আমার লজ্জা লাগে।”
“বেলাডোনা রাখছি। তুমি সুন্দর করে শ্যুটিং শেষ করো।”
“আর একটু কথা বলেন।”
“ব্যস্ত।”
কবীরের ফোনটা কেঁটে গেলো।মন খারাপ হয়ে গেলো তোশার।কিছুটা অদৃশ্য বাতাসের উদ্দেশ্যে করে বলল,
“সে কেন বুঝেনা তার সঙ্গে কথা বলতে ভীষণ ভালো লাগে আমার।ষোল বয়সের প্রেমিকের মতোন সারাক্ষণ কল, ম্যাসেজ দিতো যদি।”
তোশা আনমনে বললেও সে একা ছিলনা অবশ্য।কড়া কোলনের(পারফিউম টাইপ) সুগন্ধে বিমোহিত হলো সে।পাশে ধোঁয়া উড়তে দেখে চমকে উঠে সেদিকে তাঁকালো।উল্লাস একমনে ভ্যাপিং করছে।এলেমেলো সত্যিই মানুষটা।এক হাত ডিভানের উপর রাখা।তোশাকে তার দিকে তাঁকাতে দেখে হাতের ভ্যাপটা সেধে বসলো।হকচকিয়ে উঠলো তোশা।
“আমি এসব খাইনা।”
উল্লাস হাতটা গুটিয়ে ব্লেজারে কিছু একটা খুঁজলো।ভীষণ স্বল্পভাষী ছেলেটা।একটু পর সিগারের প্যাকেট এগিয়ে দিলো।আঁতকে উঠে তোশা বলল,
“আমি এটাও খাইনা।”
“ওহ।কিন্তু আমি তো আ’ফি’ম টানিনা।বললে আনিয়ে দিবো।”
কতোটা সহজ সরল প্রস্তাব।তোশার কপালে ভাঁজ ও দুঠোঁটের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হলো।এই নায়কটা আসলেও উদ্ভট তো।
“এগুলো কী বলছেন?জানেন আমি কে?”
“প্রেমিকের কাছ থেকে পাত্তা না পাওয়া প্রেমিকা।”
“নাহ।”
“তো কে?”
“তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা।”
“ভীষণ পঁ’চা নাম।”
“ধুর কোথাও শান্তি নেই।”
তোশা উঠে যেতে নিলে উল্লাস ধোঁয়া উড়িয়ে বলল,
“দুই ঘন্টার জন্য অজ্ঞান হয়ে যা মেয়ে।যার এটেনশন পাওয়ার জন্য মন খারাপ করছিস।তখন এটেনশনের চোটে বিরক্ত হবি।”
“এই এই সাহস কে দিলো তুই বলার।”
উল্লাস জবাব দিলো না।বরং নির্বিকার নিজের কাজ করছে।হুট করে তোশার মনের শয়তানটাও নড়েচড়ে বসলো।কৌতুহলী হয়ে বলল,
“দুই ঘন্টার জন্য অজ্ঞান হওয়া যাবে?”
উল্লাস পুনরায় দেহে অনুসন্ধান করলো।খানিক বাদে হাতে কোলন স্প্রে এর ছোট একটি বোতল উঠে এলো।
“নাকের কাছে দুবার স্প্রে কর।বেশী করিস না।”
তোশা বোতলটি নিতে গিয়েও নিলো না।হাত গুটিয়ে বলল,
“আমি কেন নিবো?”
উল্লাস মৃদু হেসে ঝড়ের গতিতে উঠে এসে তোশার নাকের সামনে স্প্রে করে মুখটা চেপে ধরলো।পুরুষালি শক্তির কাছে নিরুপায় হয়ে তোশা হাসফাস করতে লাগলো।ক্ষাণিকবাদে চেতনা হারালো সে।নিরিবিলি হওয়ায় কেউ দেখলো না কী হলো।তাকে আস্তে করে ডিভানে বসিয়ে ফোনটা তুলে নিলো উল্লাস।একটু আগে লুকিয়ে পাসওয়ার্ড দেখে নিয়েছিল।তাছাড়া বোকাসোকা মেয়েরা যে ১-৮ পর্যন্ত ডিজিটের পাসওয়ার্ড দেয় সেই বিষয়ে বেশ অবগত কবীর।ডায়ালের শুরুতে কবীরের নামটা দেখে মুচকি হাসলো।
তোশার কল আবার আসতে দেখে কবীর একটু অবাক হলো।সাধারণত ব্যস্ত বললে মেয়েটা কখনো দ্বিতীয়বার ফোন করেনা।
“হ্যালো লিটল চেরী।কী হয়েছে?”
“আপনার লিটল চেরী আপাতত অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।আপনি জলদি আসুন।”
“কে? কে আপনি?তোশা কোথায়?”
“আমি উল্লাস।”
যতোটা শশব্যস্ত হয়েছিল কবীর ঠিক ততোটা শান্ত হয়ে গেলো।স্বস্ত্বির সঙ্গে বলল,
“তোশা কোথায় উল্লাস?”
“অজ্ঞান হয়ে আছে।”
“এটা বলো না তুমি স্প্রে করেছো ওর উপর।”
“হুঁ।”
“কেন?তুমি কী এখনও বাচ্চা?”
“আপনি আসবেন নাকী আমি রেখে চলে যাবো?দুজনে একত্র হয়ে ঘুরবেন তা না কাজ পাগল হয়ে থাকেন।আমার সখী মন খারাপ করছিলো।”
“সখী কে?”
উল্লাস ঘুমন্ত তোশাকে দেখে বলল,
“নাম তো বলল তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা।”
চিৎকার করে কবীর বলল,
“প্লিজ দুজনে বন্ধুত্ব করো না।তোমরা দুটো উপরের লেভেলের বুদ্ধিমান মানুষ।”
“আপনি ইনডায়রেক্ট নিজের প্রেমিকা আর এই এলেমেলো উল্লাসকে পাগল বললেন?”
“আমি ডাইরেক্ট বললাম।তোশার কাছে থাকো আসছি।”
কবীরের পাগল বলাকে একটুও গায়ে মাখলো না উল্লাস।ফোনটা রেখে বরং নরম মনে তোশার উদ্দেশ্যে বলল,
“সখী তোশা,
তুই আমি এক রকম?হুঁ আমি এতো বোকা না।আবার তোর মতোন ভালোও না।তোর সঙ্গে বন্ধুত্ব অদ্ভূত হবে।”
চলবে।
#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪১
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
কবীর শাহ কী আদৌ তোশাকে ভালোবাসে?নাকী অন্তরালে যে অনুভূতি রয়েছে সেটা মোহ মায়া?এমন নিবিড় প্রশ্নের উদয় তোশার মনে এইতো ঘন্টা দুয়েক আগে থেকে হচ্ছে।উল্লাসের দেওয়া স্প্রে এর প্রতিক্রিয়া শেষ হতে চারটে ঘন্টা সময় লাগলো।কখন বাসায় কীভাবে এসেছে সেগুলোর হদিশ নেই।তবে তার মামীর ভাষ্যমতে উল্লাসের সেক্রিটারী এসে দিয়ে গিয়েছে।তোশা ভেবেছিল কবীর শাহ হয়তো জানেনা।ইনিয়ে বিনিয়ে অজ্ঞান হারানোর ঘটনা বলে ম্যাসেজ করলো।কিন্তু আশ্চর্য সিন করে রেখে দিলো মানুষটা।অবজ্ঞায় কান্নাও আসছেনা তোশার।
“তোশামণি,উঠো তোমার আব্বু ফোন করেছে।কথা বলে নাও।”
বাবার কথায় লাফ দিয়ে উঠে বসলো তোশা।তাহিয়া বুঝতে পারে এসব খুশি হওয়া নিছক অভিনয়।মেয়েটা কীভাবে যে মা-বাবা দুজনের মন রক্ষা করে চলল কে জানে?
“হ্যালো আব্বু।কেমন আছো?”
মায়ানের জবাব দেওয়ার পূর্বে তাহিয়া উঁচু সুরে বলল,
“তোশামণি,বাবাকে বলে দিও তোমার নিজস্ব ফোন আছে।সেখানে পরের বার কল করে যেন।”
মায়ান অস্পষ্ট কথাগুলো শোনার জন্য শুধালো,
“কী বলে গেলো তোমার মা?”
“আমার ফোনে কল দিতে বলল।”
“কেন?ওর ফোনে কী সমস্যা?”
“সমস্যা নেই।তবে পছন্দ করে না হয়তো।কেমন আছো বললে না?”
তোশা খেয়াল করলো তার বাবা মুখে মেকি হাসি তুলে কথা এগিয়ে যেতে লাগলো।কথার এক ফাঁকে মায়ান অন্যরকম একটি প্রসঙ্গ তুললো।যা মটেও মেয়ের সঙ্গে আলাপ করার মতোন নয়।
“শুনেছি তাহিয়া পুনরায় বিয়ে করবে?তুমি জানো কিছু আম্মু”
“তাই?এসব কথা কে বলল তোমাকে?কবীর শাহ?”
“না।কবীর ওরকম নয়।তাছাড়া তুমি ওকে নাম ধরে কেন ডাকছো?”
“এমনি এমনি।তাহলে আসিফ আঙকেল?”
“না।আমার মন বলল।”
বাবার কথায় প্রাণখোলা হাসে তোশা।কী সুন্দর মানুষ নিজের ধারণাকে সত্য প্রমাণের চেষ্টায় মত্ত্ব থাকে।তোশা আরেকটু ঘটনাটি উ’স্কে দিতে বলল,
“মায়ের বিয়ে আমি দিতে চাই।পাত্র ঠিক করা।আসিফ আঙকেল।কিন্তু মা তো বুঝতেই চায়না।তুমি আসবে তখন মায়ের বিয়ে ধুমধাম করে দিবো।কী বাবা আমার সাথে থাকবে তো?”
“আসিফ ভাই?সত্যি তাহিয়া পছন্দ করে তাকে?”
“করবেনা কেন?মাথা ভর্তি চুল আছে,স্বাস্থ্য ভালো।একজন ভালো লিডার।তাছাড়া ব্যাচেলরও বটে।”
“ওহ।”
মায়ানের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।কারণ একে তো তার মাথার চুল উঠে যাচ্ছে দ্বিতীয়ত স্বাস্থ্য রোগাটে।এবং মটেও ব্যাচেলর না।দীর্ঘ এক শ্বাস বের হয়ে এলো মায়ানের বুক চিড়ে।নিজেকে মটেও মেইনটেইন করতে পারেনা অথচ কবীর,আসিফ নামের পুরুষের কীভাবে পারে?বড় প্রশ্ন।তোশা ভেতরে ভেতরে হেসে শে’ষ হয়ে যাচ্ছে।নিজের বাবার সঙ্গে এমনটা করতো না।যদি না মায়ের বিয়ে নিয়ে আগ্রহ দেখাতো।তোশার কোথাও মনে হয় মায়ান তাহিয়ার সঙ্গে বিরাট অন্যায় করেছে।আগুনে আরেকটু ঘি ঢালার জন্য তোশা বলল,
“জানো মায়ের বিয়ে নিয়ে..।”
“বুঝেছি বুঝেছি আম্মু।তোমার অনেক প্ল্যান।আমি তো আসছি কয়েকমাস পর।তখন না হয় এসব নিয়ে আলোচনা হবে।বাই দ্য ওয়ে তোমাকে অভিনেত্রী হিসেবে দেখার জন্য অনেক এক্সসাইটেড আমি।কবে টেলিকাস্ট হচ্ছে?”
“দশদিন পরে।”
“অল দ্য বেস্ট মামুনী।আমি জানি তুমি অনেক সুন্দর কাজ করেছো।”
“না দেখে বললে?”
“আমার মেয়ের প্রতি অগাধ বিশ্বাস আছে আমার।রাখছি পরে কথা হবে।”
মায়ান ফোন রেখে দেওয়ার পর তোশা বিছানাতে শুয়ে অনেকক্ষণ হেসে নিলো।চোখের কিনারাতে জল আসার উপক্রম।একটু পরে কবীরের নাম্বার থেকে ফোন এলো।
“হ্যালো কবীর শাহ।”
“কী ব্যাপার লিটল চেরী?এতো খুশি কেন?”
“আব্বুর সাথে মজা নিয়েছি।”
“কেমন?”
পুরো ঘটনা বিস্তারিত খুলে বলল তোশা।কবীর বিস্মিত হয়ে বলল,
“অবিশ্বাস্য!তুমি সত্যি নিজের বাবার সঙ্গে এমন মজা করেছো?মায়ানের রিয়াকশন কেমন ছিল?”
“মোটামুটি ধরা পড়া লোকের মতোন।আমি বুঝিনা এক্স হলে বুঝি মানুষ ট’ক্সিক হয়ে যায়।যেখানে দেখি সেখানেই এমন।প্রাক্তনেী জীবনে এগিয়ে গেলে কী হয় তাদের?নিজেরা যেন বসে আছে।”
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তোশা কবীরকে যে দিশাকে নিয়ে খোঁচা দিলো সেটা বেশ অনুধাবন হলো। মেয়েটা দিন দিন স্বভাবে ভিন্ন হচ্ছে।
“আমি তোমাকে কখনো সুন্দর করে ভালোবাসি বলেছি তোশামণি?”
“নাহ তো।কখনো না।ইহ জীবনে না।এতো দিনেও না।এতো সেকেন্ডও না।এতো ঘন্টায় না।”
“দেখা করবে আজ?”
তোশা গলা উঁচু করে জানালার বাহিরে তাঁকালো।রাত হয়ে গিয়েছে।এখন বের হওয়া অনেক কঠিন।
“কালকে করবো।”
“আজকেই।ধরো আমি যদি টিনেজারদের মতোন রাতে পাইপ বেয়ে ছাদে এসে দেখা করি?খুশি হবে তুমি?”
“আপনি এমনটা করবেন?হুঁ নির্বোধ নই আমি।”
কবীর স্মিত হাসলো।তোশাকে রা’গা’নো’র জন্য বলল,
“প্রেমিক হিসেবে সত্যি কবীর শাহ নিরামিষ।সঙ্গে তোশমণি নির্বোধ কন্যা।”
(***)
অসময়ে ভীষণ ঝড় এলো।শব্দ করে জানালার পর্দাগুলো উড়ছে।বৃষ্টির পানির ঝাপটা ঘরে এসে পড়ছে।তোশা উঠে বসলো।ঘড়িতে এখন রাত দুটো বাজে।মা কে পাশে না পেয়ে অবাক হলো।পরক্ষণে মনে হলো ঘুমানোর সময় তাহিয়া অন্য রুমে চলে গিয়েছিল।তোশার ঘুমটা এখনও কাঁটেনি।ধীরে ধীরে নিজের ফোনটা সামনে নিয়ে চমকে উঠলো।স্ক্রীনে কবীর শাহ এর নাম্বার।সঙ্গে ছাদে আসার জন্য অসংখ্য ম্যাসেজ।তোশার সেসব দেখে মাথায় হাত।কোনোমতে ওড়না গায়ে জড়িয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে দৌড়ে গেলো।ছাদের মধ্যে আলো ফেলে তোশা দেখলো কবীর শাহ এখনও রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে আছে।তোশা লাইটটা অফ করে একপাশে রেখে দিলো।অন্ধকারে শক্ত লোহার মতোন শরীরটাকে স্পর্শ করলো।ভিজে গেলো কবীরের সিক্ত দেহের স্পর্শে।
“আপনি সত্যি এসেছেন কবীর শাহ?কতোক্ষণ হলো এসেছেন?”
“দেড় ঘন্টা আগে।জানো তো সিনেমাতে নায়কেরা এরকম বৃষ্টি রাতে নায়িকার সঙ্গে দেখা করতে আসে।বৃষ্টির দিন তো শেষ হয়ে আসছে।ওয়েদার রিপোর্ট অনুযায়ী আজ অসময়ের বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল দেখে চলে এলাম।তোমাকে নিয়ে ভিজবো,গাইবো,আর ভালোবাসি বলবো।”
তোশার অধরযুগল প্রশস্ত্ব হয়ে গেলো।কবীর শাহ মানুষটা তো এমন নয়।অহংকারী, বদমেজাজি মানুষ।তবে আজ কী হলো?উল্লাসের কথা মনে হতে সেটা বলতে যাবে তখন কবীর শাহ নিজ থেকে বলল,
“উল্লাস আমার পরিচিত।কিছুটা পাগলাটে।তোমার সঙ্গে এমন করার কারণ তুমি ঘুরে অজ্ঞান হওয়ার কথাটি নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলে।আমি কী এতোটা অবহেলা করেছি তোমাকে যে এভাবে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করাতে হবে?”
“তাতে কী কাজ হয়নি?”
“নাহ।আমি আজ এসেছি তুমি কতোটা স্পেশাল সেটা অনুভব করানোর জন্য।কবীর শাহ তার মধ্য বয়সে এসে একজনকে ভালোবেসেছে।সে সবথেকে দামী।সেটা তাকে নিজের ক্ষতি করে বুঝতে হবেনা।আমি তোমাকে সরাসরি কখনো তেমনভাবে নিজের ভালোবাসার কথা বলিনি।কিন্তু আজ চাই বলতে।”
যদিও অন্ধকার কিন্তু তোশা মনে হয় স্পষ্ট দেখতে পেলো কবীরের চোখে তার জন্য ভালোবাসা।মানুষটি এগিয়ে এসে তোশাকে আলিঙ্গন করলো।মুখোমুখি দাঁড়া করিয়ে বলল,
“তোমায় আমি দেখেছিলাম ব’লে
তুমি আমার পদ্মপাতা হলে;
শিশির কণার মতন শূন্যে ঘুরে
শুনেছিলাম পদ্মপত্র আছে অনেক দূরে
খুঁজে খুঁজে পেলাম তাকে শেষে।
নদী সাগর কোথায় চলে ব’য়ে
পদ্মপাতায় জলের বিন্দু হ’য়ে
জানি না কিছু-দেখি না কিছু আর
এতদিনে মিল হয়েছে তোমার আমার
পদ্মপাতার বুকের ভিতর এসে।
তোমায় ভালোবেসেছি আমি, তাই
শিশির হয়ে থাকতে যে ভয় পাই,
তোমার কোলে জলের বিন্দু পেতে
চাই যে তোমার মধ্যে মিশে যেতে
শরীর যেমন মনের সঙ্গে মেশে।
জানি আমি তুমি রবে-আমার হবে ক্ষয়
পদ্মপাতা একটি শুধু জলের বিন্দু নয়।
এই আছে, নেই-এই আছে নেই-জীবন চঞ্চল;
তা তাকাতেই ফুরিয়ে যায় রে পদ্মপাতার জল
বুঝেছি আমি তোমায় ভালোবেসে।
–জীবনানন্দ দাশ
কবিতাটি বৃষ্টি রাতে কবীর শাহ এর কণ্ঠে অন্যরকম শোনালো।কী হতো কবি যদি আরো কয়েকটি ছন্দ মিলাতো।অবশেষে তোশার জীবনে সেই সত্য সময়টি এলো।কবীর আস্তে করে বলল,
” আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি তোশামণি।”
“আমিও আপনাকে ভালোবাসি কবীর শাহ।অনেক বেশী।”
দুজনের মুখে সুন্দর এক হাসি।সিক্ত সমীরণের সঙ্গে উষ্ণ শ্বাস মিলে যাচ্ছে।কিন্তু ছাদের দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা কল্লোলের মুখখানি মেঘে জড়িয়ে গেলো।তার ভালোবাসায় দেখা তোশামণি কাওকে ভালোবাসে?আর সেটা কীনা বাবা-মায়ের বন্ধু কবীর শাহ!
চলবে।