#মিঃ অভদ্র
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
#পর্ব ৩
৬
সন্ধ্যা ভোজন শেষ হতেই সবাইকে ইমতিয়াজ রুম দেখাতে বললেন।একে একে সবাইকে রুম দেখিয়ে রিয়া গেছে অভ্রকে রুম দেখাতে। মিরা গেছে মৃন্ময়কে রুম দেখাতে। মৃন্ময় তার রুমটি দেখে খুব খুশি হলো। সুন্দর পরিপাটি তার রুমটি।বিপত্তি ঘটলো তখন যখন দেখলো রুমে টয়লেট নেই। সে চেঁচিয়ে বলল,,
–” আমি এখানে থাকবো কিভাবে? ”
মিরা ভ্রুকুচকায়। বলে,,
–” কি সমস্যা এ রুমে?”
মৃন্ময় বলে,,
–“রুমে এটাচ বাথ রুম নেই? থাকবো কেমনে?”
মিরা অবাক হওয়ার ভান করে বললো,,
–” আপনার বুঝি টাট্টি খানায় ঘুমান? আগে বলবেন না? সেখানেই নিয়ে যেতাম!”
মৃন্ময় ভ্রু জোড়া কুচকে বলে,,
–“হোয়াট?!টাট্টিখানা মানে? ”
মীরা হাসলো। বলল,,
–” এতো বড় দামরা পোলা, টাট্টিখানা চিনেনা? হাউ? টাট্টিখানা মানে বাথরুম, যাকে উর্দুতে হাম্মামখানা, বাংলা আঞ্চলিক ভাষায় যাকে বলে পায়খানা! ”
মৃন্ময় রাগী চোখে তাকালো। কটমট করে বলল,,
–” তুমিতো ভারী শয়তান মেয়ে। ইচ্ছে করে আমাকে জ্বালাতন করার জন্য এমন করছো তাই না?”
মীরা ইনস্ট্যান্ট মার্কা ফেইস করে বলল,,
–“মোটেও না!”
–“তাহলে এমন রুমে আনলে কেন? যেখানে টয়লেট নেই? ”
মীরা দাঁত কেলিয়ে বলল,,
–” আমাদের বাসায় কারো রুমেই পায়খানা নেই!”
মৃন্ময় বিব্রতবোধ করলো। এভাবে কেউ বলে নাকি? শুন্তে কেমন অড লাগচ্ছে!ছিঃ।মৃন্ময় বেডে হেলে বসল। সে বললো,,
–” নেই কেন? আধুনিক যুগে সব বাসায় টয়লেট থাকে। তোমাদের বাসার টয়লেট নেই কেন? টাকা কম পড়েছিল বুঝি?”
মীরা ফিক করে হেসে দিলো। বলল,,
–” তেমন কিছুই না! টাকা কম কেন পড়বে? আলাই-বালাই মাশকালাই। আমাদের যে দাদাজান আছেন তার জন্য হয় নি। তার ধারণা,,” ঘরের ভিতরে টাট্টিখানা নোংরা জিনিস। এর ভিতর শয়তান নাচানাচী করে। ঘরের ভিতর শয়তান নাচবে তাতো হবে না! তাই তিনি বাসার পিছনে টাট্রিখানা বানিয়েছন। রাতে বেশী চাপলে দৌঁড়ে পিছনে চলে যাবেন।”
মৃন্ময় কেশে উঠলো।মেয়েটা খুব সাংঘাতিক। তা দেখে মীরা বলল,,
–” পানি দিবো? খাবেন?”
–” না”
–” আচ্ছা”
বলে বের হয়ে আসলো মীরা। রুমে হেসে হু হা করে হেসে উঠলো। মৃন্ময়ের বাংলার পাঁচ করে থাকা মুখখানি দেখে তার হাসির দমক আরো বাড়ছে।বেচারা!তখনি হুড়মুড় করে রুমে ঢুকলো রিয়া।বিছানায় এসে থম মেরে বসে রইলো। তাকে দেখে মীরা তার দিক ঘুরলো। পিঠের উপর পড়ে থাকা অবাধ্য চুল গুলো খোপা করতে করতে বলল,,
–” বড়পু কি হয়েছে তোর? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন? মনে হচ্ছে ভুত দেখেছিস!”
রিয়া ভয়ে ভয়ে মীরার দিক তাকালো। বলল,,
–” ভুতের থেকে কম ছিলনা!”
ভ্রু কুঁচকে বলল মীরা,,
–“মানে?”
রিয়া মাথাটা নত করে ফেললো। বলতে লাগলো। তার দৃষ্টিকোণে,,
–” আমি অভ্র ভাইয়াকে নিয়ে গেলাম তার রুমে। তিনি রুম দেখে বললেন,,
–” বাহ্ সুন্দর রুম! ”
আমি মুচকি হাসি দিলাম। আসি বলে আসতে নিতেই উনি আমার হাত ধরে তার কাছে টেনে নিলেন। তার এহেন কান্ডে আমি চোখ বড় বড় করে তার দিক তাকিয়ে রইলাম। তিনি বললেন,,
–” চলে যাচ্ছো কেন? আসো একটু গল্প করি!”
আমি তার কথায় অবাক হয়ে গেলাম। অচেনা-অজানা লোকটি হুট করে কাছে টেনে বলছে,”আসো গল্প করি?” আমিতো আবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। লোকটি হেসে ফেললো। তার নিশ্বাস এসে পড়ছিল আমার মুখে। কেমন মাতাল লাগছিল আমার। আমি যেন হারিয়ে যাচ্ছিলাম তার মাঝে। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলাম তার দিক।তখনি অভ্র আমার দিকে ঝুকে বললো,,
–” কি দেখছে ?”
আমি নিজের অগোচরে বলে ফেললাম,,
–” আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর!”
অভ্র হেসে ফেললো। হো হো করে। তখন আমার হুশ ফিরে। এক প্রকার পালিয়ে আসি সেখান থেকে।
মীরা বলল,,
–” বড়পু। সামথিং সামথিং! ”
রিয়া লজ্জা পেলো। কেন পেলো? সাথে সাথে কপাট রাগ দেখিয়ে বলল,,
–” নাথিং নাথিং! বাই দ্যা ওয়ে! আই হেব এ বয়ফ্রেন্ড। “ভাব দেখিয়ে বলল কপথাটি।
মীরা হেসে ফেললো।তখনি রিয়ার ফোনে কল এলো। রুশান কল করেছে। সে খুশিতে গদগদ হয়ে কল রিসিভ করে বারান্দায় চলে গেল। তা দেখে মীরা বলল,,
–” বড়পু তুমি মরিচিকার পিছনে ছুটছো।তোমার আসল রাজকুমার তোমার সামনেই আছে। কেন তুমি ধোঁয়াশার পিছনে ছুটছো? হুহ!”
ছোট নিশ্বাস ফেললো সে। তাকিয়ে রইলো বারান্দায় তার বোনের হাসি মুখটির দিক।
৭
জিনিয়া বলল,,
–“টগড় ভাইয়া আমার ভয় ভয় করছে।”
টগড় বললো,,
–” আমারো লাগচ্ছে। বাড়িটি কেমন যেন ভয়ংকর ভয়ংকর! ”
জিনিয়া বলল,,
–” ভাইয়া আম্মুকে ডেকে আনি?”
টগড় বলল,,
–” কিন্তু আমার যেতে ভয় করছে!”
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মীরা জিনিয়া আর টগরের কথোপকথন শুনে হেসে দিল। দুজনেই ৭,৮ বছরের হবে। যমজ তারা। টগড় একমিনিটের বড় জিনিয়ার। দুজনই টকটকে সুন্দর। মীরে এগিয়ে গেল। বলল,,
–” হাই! কি চলছে?”
জিনিয়া তখন ফিসফিস করে বলল,,
–“তোমাদের বাসায় কি ভুত আছে?”
মীরা মুখ টিপে হাসলো। কিছু বলতে নিবে তখনি পিছন থেকে মৃন্ময় বলল,,
–” আছেতো! এক ভুতনী। ”
কৌতুহল নিয়ে তাকালো জিনিয়া আর টগড়। বলল,,
–“হো ইজ সি?”
মৃন্ময় মুখ গম্ভীর করে বললো,,
–” এই যে তোদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দুই বেনী ওয়ালা ভুতনী।”
মীরা সাথে সাথে কটমট করে তাকালো। মুখ বিকৃত ভঙ্গিতে বলল,,
–” মিঃ অভদ্র!”
চলবে,,