#মিঃ অভদ্র
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
#পর্ব_৫
১০
লাল টুকটুকে বউ সেজে বসে আছে রিয়া। বারবার চোখের পানি মুছে যাচ্ছে সে। তাদের পাশেই ফ্লোরে বসে আছে হেলদি সেলদি রুশান। হাত-পা বাধা তার।অভ্র তার পাশে বসে আছে মুখ গম্ভীর তার।ইমতিয়াজ রাগে ফুঁসছে। সে ধমকে বলল,,
–” আমার নাতনী হয়ে কি করে পালাস তুই? হাউ ডেয়ার ইউ?”
রিয়া কেঁপে উঠলো। সুলেমান তার বন্ধুকে সামলাতে সামলাতে বলল,,
–” আহা! ইতু থাম। বাচ্চা মানুষ তো! ভুল করে ফেলেছে!”
ইমতিয়াজ অতি দুঃখী দুঃখী কন্ঠে বললেন,,
–” আমি এখন মুখ দেখাই কি করে বল তো? এ মেয়ে এমন করবে? কখনো ভাবি নাই!”
সুলেমান বলল,,
–” দোস্ত ঠান্ডা হো। ঠান্ডা মাথায় ভাব সব।”
–” তুই মাথা ঠান্ডা করতে বলছিস? ভাবতে পারছিস ব্যাপার টা? মানুষ কি বলবে? ও দেখ ইমতিয়াজ তার নাতীন ভাইগ্যা গেছে! ও মাই গড? কে বিয়ে করবে এসবের পর?”
তখনি রুশান তার চিকন গলায় বলল,,
–“দাদাজান মে হু না!”বলেই দাঁত কেলালো সে!
ইমতিয়াজের মাথায় ধপ করে আগুন ধরে উঠলো। চোখ জোড়া বড় করে বলল,,
–“একদম চুপ থাক স্টুপিট? সাহস কত তোর? আমার নাতনীকে বিয়ে করবে?”
রিয়া তখন কাঁদো কাঁদো কন্ঠে মিন মিন করে বলল,,
–” দাদাজান ও অনেক ভাল ছেলে। আমাকে অনেক ভালবাসে। আমাকে সুখে রাখবে। তাই না রুশান?”
রুুশান মাথা উপর নিচ করে হে জানতেই ঠাস করে থাপর পড়লো তার গালে। সামনে তাকিয়ে তার মা দাঁড়িয়ে। সে চোখ বড় বড় করে বলল,,
–“আম্মু?”
মহিলা রেগে বললেন,,
–” এখনো আমার কাঁধে বসে খাচ্ছিস আর বলছিস তাকে সুখে রাখবি? হারামজাদা তোর ভাত নাই কঁপালে।সাথে পকেটমানি বন্ধ। যা এবার কর বিয়ে। ”
রুশান বাচ্চাদের মতো কেঁদে দিলো। মাকে বলল,,
–“আম্মু আমি বাচ্চা মানুষ আমার সাথে এমন করো না।আমি সরি। করবো না বিয়ে!”
বলে মারতে মারতে নিয়ে গেলেন। রিয়া থ। এ কেমন ছেলের সাথে প্রেম করলো সে?সামন্য ভাত না দেয়া, আর পকেট মানির জন্য উল্টে গেল? গালি দিলো মনে মনে সে। তারপর অভ্রর দিক আড় চোখে তাকাতেই অভ্র বলে উঠে,,
–” তুমি প্রেম করার জন্য এই কার্টুন পাইলা?”
রিয়া অপমানিত ফিল করলো। মুখ ভেঙ্গাচি দিয়ে অন্য দিক ফিরলো।
তখনি ইমতিয়াজ হায়পার হয়ে উঠে। বলতে লাগে,,
—” এখন আমার নাতনীর কি হবে? কে করবে বিয়ে?”
ওদিকে সুলেমান ফিসফিস করে বলে উঠে ইমতিয়াজের কানে,,
–“ইতু ওভার একটিং হয়ে যাচ্ছে কিন্তু?”
ইমতিয়াজ চুপ হলো। তখন সুলেমান বলল,,
–” তুই হাইপার হোস না। আমার নাতী করবে বিয়ে। কিরে অভ্র করবি তো? হুম? ”
অভ্র রিয়ার দিক বাঁকা হেসে চোখ টিপ মারলো। রিয়ার চোখ কঁপালে। তারপর দাদাজানের দিক লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিমা বলল,,
–” আপনি যা ভাল বুঝেন দাদা জান!”
সবার মুখে তখন হাসি ফুটে উঠলো। রিয়া ছাড়া। সে ধপাধপ পায়ে রুমে চলে গেল সে। রাগে মাথা ফাটছে তার। রুশানের জন্য কই ফাসলো সে? হুহ।
১১
–” আমি এ বিয়েতে রাজী না। কোনো মতেই না।”
কথাটি শুনে ভ্রু কুচকায় মৃন্ময়। বলে,,
–“হোয়াই?”
মীরা আমতা আমতা করে বলে,,
–“কজ আই হেভ এ বয়ফ্রেন্ড।”
মৃন্ময়ের পায়ের রক্ত যেন মাথায় উঠে গেল। কঁপালের রগ ফুলে গেছে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করার ফলে হাতের রগও ফুলে। সে ঢোক গিললো। দাদাজানের জন্য সে কই ফাসলো? তার দাদার ধারণা রিযার মতো সেও পালাবে। তাই তার বিয়েও ঠিক করে ফেললো মৃন্ময়ের সাথে মীরার অনুমতি ছাড়াই। মৃন্ময় শক্ত মুখে বলল,,
–” কি বললে?”
মীরা ভয়ে ভয়ে বলল,,
–” আমার বয়ফ্রেন্ড আছে! আমি আপনাকে বিয়ে করতে পাড়বো না!”
মৃন্ময় এতখন অন্যদিকে চেয়ে ছিল। এবার সে মীরার দিকে তাকালো। চোখ যেন লাল সূর্য। রাগী গলায় বলল,,
–“ফরগেট হিম!”
মীরা চকিতে বলল,,
–” কখনো না! আই লাভ হি…”
বাকিটা বলার আগেই গাল চেপে ধরে মৃন্ময় মীরার। কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠে,,
–” ডোন্ট ডেয়ার মীরা। নয়তো এর ফল তোমার ফুল ফ্যামিলি ভুক্তভোগী হবে!”
বলেই ধাক্কা মেরে চলে যায সে। মীরা তাকিয়ে থাকে শুধু। একাকে দেখছে সে? এতো শুধু মি অভদ্র নয় বরং ভয়ঙ্কর রকম অভদ্র। এই ভয়ঙ্কর রকম অভদ্রকে কখনো বিয়ে করবে না সে। কখনো না মরে গেলেও না।
চলবে,