#মিঃ অভদ্র
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
#পর্ব ৪
৮
সকাল সকাল কোচিংয়ের জন্য বের হলো মীরা।চারিদিকে কুয়াশায় আচ্ছান্ন এখনো। রোদের আভা ফুটেনি। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে নিশা তার সাথেই যাবে সে। ঘড়িটা দেখলো সে। ৭ঃ০৫। ও মাই গড। আজাদ স্যার ঢুকতে দিবেনা ক্লাসে আজ। এই ভেবেই ছুট লাগায় সে। গলির কাছে টং দোকান সেখানে এসে থামলো একটু হাপাচ্ছে সে। এক হাত দিয়ে কঁপালের বিন্দু ঘাম মুছে নেয়। বন্ধ টং দোকানের ফাকা জায়গায় নিয়ে চোখ যেতেই দেখতে পেলো,, কয়েকটি কালো পোষাক পরিহিত লোকের সাথে একটি লাল হুডি পড়া লোক কথা বলছে। লাল হুডি পড়া ছেলেটিকে চেনা চেনা লাগচ্ছে!মিঃ অভদ্রের মতো লাগছে। মীরা এগিয়ে গেল। ডাক দিল,,
–“মিঃ অভদ্র?
লোকটি শুনলো কিনা বুঝা গেল না। মীরা আবার ডাক দিতেই তারা। হন্তদন্ত হয়ে উল্টো পথে চলে গেল। পিছন থেকে বার কয়েক ঢেকে এগিয়ে এলো মীরা। ততখনে সবাই উধাও কই গেল এত জলধি? চিন্তার ভাজ পড়লো তার মাথায়। কালো কাপড় পরিহিত লোকটির হাতে একটি কালো বেগ ছিল। যা সেই লাল হুডি পড়া লোকটিকে দিচ্ছিল। লোক গুলোর মুখে ছিল ভয়ের ছাপ। কেন? মিঃ অভদ্র এমন কি বলল তাদের? যে তাদের চেহারা শুকিয়ে গেল? আচ্ছা ওটা কি আদ? মিঃঅভদ্র? নাকি মীরার মনের ভুল? অন্যকারো সাথে গুলিয়ে ফেলেছে নাতো সে? মীরা ভাবতে লাগলো এসব তখনি তার ফোন বেঁজে উঠলো। নিশা কল করেছে। জিবে কামোড় দিয়ে আবার ছুট লাগায় সে। নিশা আজ তাকে চাবিয়ে খাবে!
কোচিং থেকে বের হতে হতে ১২ টা বাজলো তার। তখন নিশা বলল,,
–“দোস্ত চল ফুচকা খেয়ে আসি?”
মীরা পরনের সুইটার খুলতে খুলতে বলল,,
–“যাওয়া যায়। কিন্তু তুই খাওয়াবি। আমি এক্সট্রা টাকা আনি নাই!”
নিশা বলল,,
–” অবশ্যি খাওয়াবো কেন নয়?”
দুজনে গেল সামনের ফুচকা স্টলে। ফুচকা অর্ডার করে বসলো চেয়ারে তারা।তখনি হুট করেই একটি ছেলে এসে দাঁড়ালো। দাঁত কেলিয়ে বললো,,
–” হাই গার্লস!”
কন্ঠে শোনে চমকে থাকরো মীরা। ভ্রু কুচকে বিড়বিড় করে বলল,,
–” চলে এসেছে মাথা ব্যথা”
মুখে মিথ্যা হাসি নিয়ে আবার বলল,,
–” কেমন আছেন রাতুল ভাই?”
রাতুল হেসে বলল,,
–” তোমায় ছাড়া আর ভাল কই?”
রাগ লাগলো মীরার। কিন্তু প্রকাশ করলো না। এ এলাকার কমিশনারের ছেলে সে! কিছু বললেই উল্টো রিয়েকশন তার। হুহ! মাঝে মাঝে মীরা তো মন চায় পিছনে লাথি মেরে নদীতে ফেলে দিতে। মুখে প্লাস্টিক হাসি দিয়ে বলল,,
–” বিয়ে করলেইতো পাড়েন ভাইয়া! আপনি বললে আমি মেয়ে খুঁজে দি?”
রাতুল হাসি দিল। বলল,,
–” মেয়ে দেখতে হবে না। তা দেখাই আছে। শুধু তার হা শোনা বাকি। দেন সানাই বাজবে।”
মীরা খানিক চুপ থেকে হেসে বলল,,
–” তাহলে তো ভাইয়া আপনাকে আইবুড়ো হয়ে থাকতে হবে? কারণ আপনার দেখা পাত্রীর তো বয়ফ্রেন্ড আছে!”
মুহূর্তেই রাতুলের চেহারার রং উড়ে গেল। রাগে বলল,,
–” সে কোন শালা নাম টা বলো শুধু। মাটিতে পুতে ফেলবো এক বারে!”
তখনি পিছন থেকে কেউ বলল,,
–” আমি সেই শালা। পুতে দেখা?”
রাতুলের সাথে সাথে পিছনে ঘুরে তাকালো মীরা আর নিশাও। মীরার চোখ কঁপালে। বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে সে। নিশা হা হয়ে আছে। রাতুলের মুখে ভয়ের ছাপ। সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,,
–” ভাই অ–আপনি? আমায় মাফ করবেন আমি জানতাম না সে আপনার জিএফ। ”
মৃন্ময় বাঁকা হেসে বলল,,
–” এখন জেনেছিস তো? যা ভাগ!”
রাতুল উল্টো পথে দৌঁড়ালো। তা দেখে নিশা ফিক করে হেসে দিল। মীরা মৃন্ময়কে চোখ রাঙ্গিয়ে বলল,,
–“এসবের মানে কি?আপনি আমার কোন জন্মের বয়ফ্রেন্ড? ”
মৃন্ময় এতখন দাঁড়িয়ে ছিল। হুট করে মীরা গা ঘেসে বসে বলল,,
–” এই জন্ম থেকে যত জন্ম আসবে। ”
নিশা বলল,,
–“তুই তো ভালই মীরা? তলে তলে টমপু চালাস?”
–” ওই তুই চুপ থাক! আপনি কি ফালতামি শুরু করেছেন? হাতের মোয়া না? যান এখান থেকে। অভদ্র লোক যখন তখন যেখানে সেখানে হামলে পড়েন?”
মৃন্ময় ভ্রুকুটি কুচকে বলল,,
–” লাইলেক সিরিয়াসলি? যার জন্য করলাম চুরি সে বলে চোর? বাহ্ ভালই? কই এতো বড় হেল্প করলাম ট্রীট দিবা? তা না? এক কাজ করি? তোমার রাতুল ভাইকে আবার ডেকে আনি? কি বলো?”
মীরা ভেংচি কাটলো। বলল,,
–” আমি কারো হেল্প চাইনি! যেচে পড়ে গায়ে পড়ে আপনি এসেছেন? আতি ডাকি নাই। সো ফুটেন?”
–“তা তো হচ্ছে না? আমি আমার একমাত্র গার্লফ্রেন্ডকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না? নো নেভার! ” বলেই দু হাতে জড়িয়ে ধরলো মৃন্ময়।
এদিকে মীরা গালি দিয়ে যাচ্ছে একগাদা। সেদিকে তার ভ্রূক্ষেপেই নেই। সে চেপে ধরেই আছে। তা দেখে নিশা হাসতে হাসতে মাটিতে লুটু পুটু খাবে অবস্থা। সে বলল,,
–” তোদের কেমিস্ট্রিটা সেই হবেরে?”
মীরা চোখ রাঙ্গালো। দাঁত দাঁত চেপে বলল,,
–” একবার এই অভদ্র থেকে ছুটতে দে তোর এক দিন কি আমার একদিন?”
মীরার কথায় হাসি উড়ে গেল নিশার। কি রাক্ষসী মীরা তা জানা তার। মৃন্ময় হেসে বলল,,
–” নিশা ডোন্ট ওয়ারী? এই জংলি বিল্লিকে আমি ছাড়ছি না সো তুমি নির্ভয় বাড়ি যাও। টা টা!
নিশা দাঁত কেলালো বলল,,
–” বায় বায় জিজু!”
মীরাতো রেগে মেগে আগুন! একগাদা গালি ছুড়ে বলল,,
–” দাঁড়া তুই ছুটাচ্ছি তোর জিজু বলা। শালী?”
তখনে নিশা চম্পট।
৯
বসার ঘরে সবাই মুখ গম্ভীর করে বসে আছে।শুধু ইমতিয়াজ নেই। মীরা সবে ঢুকলো বাসায়। মনিশাকে মুখ চেপে কাঁদতে দেখে এগিয়ে গেলো সে।
–” মা কাঁদছো কেন?দাদাজান কি মারা গেছে?”
মনিশা চোখ বড় বড় করে তাকায় মেয়ের দিক।গালে এক চাটি মেরে বলে,,
–” কি অলুক্ষণে কথাবার্তা? বাবা মরবে কেন?”
মীরা গালে হাত ঘসতে ঘসতে বলল,,
–” তাহলে সবাই এভাবে বসে কেন? দাদাজান কই?”
মনিশা আবার আঁচলে মুখ লুকিয়ে ঢুকরে উঠে বলে,,
–” তোদের লালনপালনে তো কোনো ত্রুটি রাখিনাই? তাহলে তোরা এমন কেন করলি?”
মীরা আবার হয়ে বলল,,
–” কি করেছি আমরা?”
মনিশা এবার কান্নার দমক বাড়িয়ে বলল,,
–” তোর বোন ভেগেছে? ওই মুখ পুড়ো হিন্দু ছেলেটার সাথে। শুনেছি তারা পাহড়ে লুকিয়েছে। ছেলেটার কি আক্কেল বলতো? আর জায়গা পেল না? সাজেক যেত? কক্সবাজার যেত? নাহ্ সে পাহাড়ে লুকালো? যদি পড়ে ব্যাথা পায়? আমার মেয়ের কি হবে রে?”
মীরা বিশমিত হল। তার বোন সত্যি ভেগে গেল? বেচারা অভ্র ভাই? বাই দ্যা ওয়ে অভ্র ভাই কই?মীরা বলল,,
–” মা অভ্র ভাইয়া কই?”
–” সে তোর দাদার সাথে গেছে। পাহাড়ে। তোর দাদা বুড়ো মানুষ। পাহড়ে উঠবে কিভাবে? তাই অভ্রকে নিয়ে গেছে। কড়া ভাবে বলে গেছে। একে আজ এনে ঝাটা পিটা করবে! প্রেমের ভুত নামাবে! ওঝাও ডাকা হবে?”
মীরা তাকিয়ে রইলো তার মার মুখে। হাসি হাসি মুখ তার। মেয়ে ধরে এনে প্রেমের ভুত তারাবে তাতে সে বহুত খুশি। মীরা কি করবে? হাসবে না কাঁদবে? বুঝতে অক্ষম সে।
চলবে,