মিঃ অভদ্র পর্ব-০২

0
1860

#মিঃ অভদ্র
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
#পর্ব ২

পরিচয় পর্ব চলছে,,ইমতিয়াজ পরিচয় দিচ্ছে,

–“এ হলো আমার ছেলের বউ মনিশা। অতি গুনী লক্ষী মেয়ে। যাকে বলে ভাগ্যগুণে পাওয়া। হে হে। এ হচ্ছে তার বড় মেয়ে আমার বড় নাতনী রিয়া অনার্স ২য় বর্ষে পড়ছে। ও হচ্ছে আমার ছোট নাতনী এইচএসসি দিবে। আমার ছেলে আউট ওফ টাউন ব্যবসার কাজে।”

তারপর শুরু হলো ভালুক দাদাজান ওরফে সুলেমানের পরিবারের পরিচয় পর্ব। তিনি যেন বহুত খুশি মাকড়শার মতো ঝুলন্ত হাসি দিয়ে বলল,,

–“এ হচ্ছে আমার বড় পুত্র মহসিন , সে আমার ছোট পুত্র রবিউল তার বউ রেহেনা। বড় ছেলের একটি দু ছেলে।নাম অভ্র অার মৃন্ময়। ছোট ছেলের এক মেয়ে এক ছেলে।নাম টগড় আর জিনিয়া। ”

সকলেই একে অপরকে সালাম দিয়ে পরিচয়পর্ব শেষ করলেন।

হল রুমে সবাই বসে আছেন। রমরমা পরিবেশ। গুটুরফুটুর চলছে। ইমতিয়াজ আর সুলেমান তাদের লেংটা কালের ঘটনা বলছে আর হো হো করে হাসচ্ছেন। আর সবাই শ্রোতা। শুধু মিরা ড্যাবড্যাব তরে তাকিয়ে দেখছে সুলেমানকে। সুলেমান তা লক্ষ করছে অনেকক্ষণ সে বিব্রত বোধ করছে। মেয়েটি তার দিকে এমন করে দেখছে কেন? কাহিনী কি? তিনি ইশরায় ডাকলেন। মিরা কাছে যেতেই বলল,,

–” তুমি কি কিছু বলতে চাও দাদু ভাই?”

মিরা উপর নিচ মাথা দুলিযে বলল,,

–” হে!”

ইমতিয়াজ জানে তার নাতনীর খবর নির্ঘাত উদ্ভট কিছু বলবে। সে হাসার চেষ্টা করে বলল,,

–” ও কি বলবে ছোট মানুষ যা তুই জিনিয়ার সাথে গল্প কর!”

মিরা বলল,,

–” আমি মোটেও বাচ্চা না দাদাজান আম অ্যাডাল্ট গার্ল । বয়সে ১৮ তে পড়েছে তার মানে আমি বড় বাচ্চা না। তাই না ভালুক দাদাজান?”

কথাটি সুলেমানের দিক তাকিয়ে বলল। সুলেমান ভ্যাবাচেকা খেল। বলল,,

–” ভালুক দাদাজান মানে?”

মিরা বলল,,

–” আপনি ধবধবে সাদা, আপনার চুল সাদা, দাঁড়ি সাদা লোম সাদা, চোখের ভ্রু পর্যন্ত সাদা। আপনাকে দেখে মনে হলো সাদা ভালুক। তাই ভালুক দাদা। পছন্দ না হলে আমার স্টকে আরেকটা নাম রেখেছি ধলা রোগী দাদাজান। কোনটা ভাল আপনি বলুন তো? আম কনফিউজড! ”

সুলেমান বিষম খেল। মেয়ে সাংঘাতিক। বলল,

–” ভালুক দাদাজানই ডাকো।”

–“থ্যাঙ্ক ইউ! ”

বলে মীরা চলে গেল। এদিকে ইমতিয়াজের মাথায় হাত।এ মেয়ে সব জায়গায় তার নাক কেঁটে দেয়।

মীরা সোফায় এসে বসলো। মুখে তার টান টান হাসি। তখনি মৃন্ময় এসে তার পাশে বসে। বলল,,

–” নাইস নেইম। মিরা!”

মীরা মুখ বাকালো বলল,,

–” আপনি তো সত্যি অভদ্র। একে বারে আমার বাড়ি এসে উঠেছেন? মতলবটা কি? ”

মৃন্ময় হেসে ফেললো। বলল,,

–” কোনো মতলব নেই।”

মীরা ভ্রু কুচকে বলল,,

–” তাহলে পিছু নিয়েছেন কেন?”

মৃন্ময় অবাক হওয়ার ভান করে বলল,,

–” আমি কই পিছু নিলাম!”

–” একদম ঢং করবেন না! সকালে এতো নাটক করলেন! ভুলে গেছেন? নাকি মাথায় বাড়ি দিয়ে সব বের করবো?”

মৃন্ময় এবার হো হো করে হেসে দিল। বলল,

–” সত্যি তুমি বুদ্ধি মতি। আই লাইক ইট!”

–” সত্যি করে বলুন তো কি চাই?”

মৃন্ময় একটু গম্ভীর হয়ে গেল। শান্ত গলায় বলল,,

–“তোমাকে!”

মীরা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো। মুখ তার হা হয়ে গেছে অবাকে। ছেলে বলে কি?সত্যি বেটা অভদ্র!

রান্না ঘরে দুটি কাজের মহিলার সাথে যোগ হয়েছে রিয়া,মিরা আর মনিশা। সন্ধ্যা ভোজনের আয়োজন চলছে। রিয়া ডালের বড়া গরম তেলে ঢালছে। মীরা পাশে দাঁড়িয়ে বড়া নাড়ছে। কুটুস করে একটি বড়া মুখে নিয়ে বলল,,

–” বড়পু আমার না ভালুক দাদাজানের নাতী মৃন্ময়ের উপর হেব্বি ডাউট আছে।”

রিয়া ভয়ে ভয়ে বলল,,

–” আমার তো ওটার বড়টা অভ্রের উপর আছে। বেটা আসচ্ছে পর থেকেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে নির্লজ্জের মতো।”

মীরা ভ্রু কুচকে বললো,,

–” মোটাও না বড়পু হি ইজ এ নাইস গায়। তাকে আমার খুব ভাল লেগেছে। তাকে জিজু করতে পারলে সেই হতো!”

রিয়া চোখ রাঙ্গিয়ে বলল,,

–“এক চড় মাড়বো বেদ্দপ।(তারপর ফিসফিস করে বলল) তুই জানিস না আমার বিএফ আছে? ”

মীরাও ফিসফিস করে বলল,,

–” বড়পু তার সাথে তোমার বিয়ে এ ইহজগৎ হচ্ছে না। তার তিনটি কারণ,,

১) সে অন্য ধর্মের।
২)দাদাজান কখনো রাজি হবে না।
৩) রুশান ভাই কখনো ধর্ম চেঞ্জ করবে না।

রিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,,

–” তো কি হয়েছে। সে তার ধর্ম পালন করবে আর আমি আমার ধর্ম আর রইলো দাদাজান মানবে কি না? তাহলে বলি আমি পালাবো!”

মীরা অবাক হয়ে গেল। তারপর হেসে দিলো বলল,,

–” তারপর তোমার কাছ থেকে আমি পালাবার ফিলিংস কেমন জানবো!”

রিয়া কটমট করে বলল,,

–” যা ভাগ এখান থেকে।”

মিরাও দিলো দৌঁড়। সামনে না তাকিয়ে পিছনে ফিরে দৌঁড়চ্ছে। তখনি ধাম করে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়তে নেয়। তখনি একটি পুরুষালী শক্ত হাত তার কোমড়ে স্পর্শ করে ধরে তাকে। মীরা চোখ বন্ধ করে আছে। হঠাৎ অন্য রকম অনুভূতি কাজ করছে। সে চোখ খুলে চমকে যায়। মৃন্ময়ের বাহুডোর আবদ্ধ সে।মীরা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে,,

–” ছাড়ুন মিঃ অভদ্র। যখন, তখন, যেখানে সেখানে আমাকে ছোঁয়ার ধান্দা! ”

মৃন্ময় কিছু বলল না। তাকিয়ে রইলো মীরা মুখের দিক। কি শান্ত তার দৃষ্টি। এমন দৃষ্টিতে মীরার মতো চঞ্চল মেয়ের বুলি আটকে গেছে। বের হচ্ছেই না। কিছুতেই না।

মীরা তার চোখ সরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। অস্বস্তি লাগছে খুব। দম যেন আটকে আসচ্ছে তার।কখনো কোনো ছেলের এত কাছে যায় নি সে।সে অনেক কষ্টে বলল,,

–” ছাড়ুন!”

মৃন্ময় সাথে সাথে ছেড়ে দিল। মীরে এক দৌড়ে রুমে এসে বসে পড়লো।একটি বারো পিছনে ফিরেনি কি হলো তার সাথে? ১৮ বছরে এ প্রথম এমন অনুভূতি হচ্ছে? কি নাম এ অনুভূতির!

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে মৃন্ময় আর অভ্র। এটা তাদের রোজকার কাজ। যে যেখানেই থাকুক এসময় টুকু দু ভাই দুজনকে দিবেই। মৃন্ময় আলাপ পাড়লো,,

–” ভাইয়া আশে-পাশে না প্রেম প্রেন গন্ধ পাচ্ছি। কাহিনী কি?”

অভ্র হেসে ফেললো। মৃন্ময় তাকে কি মিন করে বলছে। সবটা ধরতে পেড়েছে সে। অভ্র চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,,

–” আই লাইক হার। বলতে পারিস লাভ আট ফাস্ট সাইট। ”

মৃন্ময় বিস্মিত হয়ে গেল। তারপর অভ্রকে জড়িয়ে ধরে খুশি খুশি গলায় বলল,,

–” ফাইনালি। তোমার কাউকে পছন্দ হলোম আম সো হেপি। আমি আজিই দাদাজানকে জানবো।”

অভ্র লাজুক হাসলো। কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,,

–” তোর কিছু বলতে হবে না। আমি বলবো। তোরটা বল! এই সেই মেয়ে? তোর সকালের পরি? যা সাথে সময় কাঁটাতে চোখে ময়লা পরার নাটক করতে হলো?”

মৃন্ময় হেসে দিলো। বলল,,

–“হে এই সেই। যার প্রেমে সকালে পড়েছি। তার সাথে কথা বলার জন্য একটা নাটক পর্যন্ত করেছি। হা হা। ভাবিনী মেয়েটি দাদাজানের বন্ধুর নাতনী হবে। ”

অভ্র মৃন্ময়ের কাধে হাত রেখে বলল,,

–“একেই বলে ভাগ্য!”

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে