#মিঃ অভদ্র
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
#পর্ব_১
বড় রাস্তার সামনে আসতেই হুট করে পিছন থেকে কেউ শাড়ির আঁচল টেনে ধরে মিরার। সে চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখলো। একটি মাত্রাতিরিক্ত সুদর্শন পুরুষ চোখ বন্ধ করে কুচঁকে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু কুচকে বলল,,
–” একট কি ধরণের অভদ্রতা? আচঁল ধরেছেন কেন? ছাড়ুন!”
ছেলেটি ছাড়লো না। ওড়নাটি আরো শক্ত করে ধরে, বিনয়ী সুরে বলল,,
–” মেম আম সরি ফর দ্যাট। বাট আই নিড এ হ্যাল্প। প্লীজ হ্যাল্প মি?আমার চোখে কি যেন পড়ছে! আমি চোখ খুলতে পারছিনা।”
ছেলেটিকে ভাল করে লক্ষ করতে লাগলো মিরা। ফরেনার লুক তার। পড়নে এ্যাস কালার ফুল স্লিভ টি শার্ট আর টাওজার নেভি কালারের। কানে হেড ফোন। হয়তো জোগীং করতে বের হয়েছিল। ছেলেটির চুল সামনের দিক বড় আর পিছনে ছোট চকলেট কালার রং করা। লাল, ঠোট। খাড়া নাক। টকটকে গায়ের রং। চোখ কেমন আপাদতে বোঝা মুশকিল। কারণ সে চোখ কুচকে আছে। ঠিক তেমন ভাবে যখন কোনো মশলাপাতি, ধুলাবালি, বা কোনো পোকা ঢুকলে হয়। ছেলেটি পিটপিট করে তাকাতে চাইছে কিন্তু পারছে না।মৃন্ময়ী বলল,,
–“কি সাহায্য চাই?”
ছেলেটি আবার তাকানোর বৃথা চেষ্টা করলো। পারলনা। এদিকে মিরার কলেজে ফেয়ারওয়েল। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।মিরা আবার বিরক্তি নিয়ে বলল,,
–“বলছেন না কেন? মুখে তালা দিয়ে রেখেছেন। জলধি বলুন আমার লেট হচ্ছে।”
ছেলেটি বলল,,
–” এত অস্থির হচ্ছেন কেন? একটু ওয়েট করুন। ”
মিরা মুখ বাকালো। ছেলেটি তার পকেট থেকে একটি কার্ড বের করে বলল,,
–“এই ঠিকানায় যাবো। ”
–“আচ্ছা আমি উবা ডেকে দিচ্ছি।”
–“থ্যাঙ্ক ইউ ”
মিরা উবাতে কল করলো। ১০ মিনিটের মাথায় উবা হাজির। ছেলেটিকে গাড়িতে বসিয়ে বলল,,
–” এবার উঠে আমায় উধার করুন।আমার কাজ শেষ আমি আসি।”
বলে চলে যেতে নিলেই খপ করে ধরে ফেললো তার হাত। মিরা মেজাজ চটে গেল। রাগের সাথে পিছনে ঘুরলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
–” আপনিতো ভাঁড়ি অভদ্র? হাত ধরলেন কেন আবার? জানেন না? অপরিচিত কারো হাত ধরতে নেই? তাও যেনে শুনে দ্বিতীয় বার একটি ভুল করলেন? ”
ছেলেটি অসহায় লুক নিয়ে বলল,
–“মেম আপনি যা ইচ্ছে বলতে পারেন? এই মুহূর্ত আমি অচল। চোখে দেখতে পাচ্ছি না।আর আপনি গাড়িতে একা পাঠিয়ে দিচ্ছেন? যদি এরা ছিনতাইকৃত কাজে জড়িত থাকে? বা আমাকে কিডন্যাপ করে নেয়? তখন আমার কি হবে? একা এক অবলা পুরুষকে এভাবে একা ফেলে যাচ্ছেন?কিছু হলে এ দায় ভাড় কে নিবে?”
মিরা ভেবাচেকা খেয়ে গেল।ছেলে বলে কি?এদিকে ড্রাইভার তাদের ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে দেখছে। মিরা ড্রাইভার দিক তাকিয়ে চাপা হাসলো। মুখে হাসি রেখেই ছেলেটির উদ্দশ্যে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
–” তো এখন কি করতে হবে আমায়? আপনাকে মাথায় নিয়ে নাচবো না কোলো করে আপনাকে পৌঁছে দেব?”
ছেলেটি সব কঁটা দাঁত বের করে হাসলো। তা দেখে পিত্তি জ্বলে উঠলো মিরার। ছেলেটি বলল,,
–” আইডিয়া ভালো!”
মৃন্ময়ী আকাশ থেকে পড়লো এমন ভাব করে বলল,,
–” মানে?”
ছেলেটির সহজ ভঙ্গিতে বলল,,
–” আপনি আমাকে পৌঁছে দিন। ওই যে কোলে করে বললেন?(মীরা বড় বড় চোখ করে তাকালো ছেলেটির দিক)না না তা করতে হবে। গাড়ি করে দিলেই চলবে! প্লীজ মানা করবেন না! প্রয়োজনে এই গাড়ি আপনাকেও পৌঁছে দেবে। ভাড়া না হয় আমি দিব!”
মীরা রাজী হলো। গাড়িতে উঠতেই স্বা করে গাড়ি ছুটতে লাগলো। মিরা গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। ছেলেটি বলল,,
–” আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। অপরিচিত জায়গায়, অপরিচিত কারো হেল্প পাবো ভাবতে পারিনি। বাই দ্যা ওয়ে আমি মৃন্ময়। আপনি?
মীরা কিছুই বললো না চুপ রইলো পুরো রাস্তা। সে ভাবচ্ছে হঠাৎ একটি অপরিচিত ছেলে তার শাড়ির আঁচল ধরে টান দিলো। আর তাকেই সে পৌঁছাতে ছুটছে তার গন্তব্য? কি অদ্ভুত। বড়ই অদ্ভুত কথা বার্তা।
এটা কি কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের কাজ? ছেলেটি তো ছেলে ধরাও হতে পাড়তো? ভেবেই আড় চোখে তাকালো মিরা। ছেলেটি সিটে হেলে আছে চোখ বন্ধ করে! না হচ্ছে কোনো এক রাজ্যের প্রিন্স ঘুমিয়ে আছে। এসব ভাবতে ভাবতেই গাড়ি এসে থামলে পাইভ স্টার হোটেলের সামনে মৃন্ময়কে নামিয়ে সে চলে এলো কলেজে।ভাড়া আবশ্যি মৃন্ময় দিয়ে দিয়েছে।কিন্তু বেটা সাংঘাতিক অভদ্র এ পর্যন্ত এগিয়ে দিল মিরা তাও একটা থ্যাঙ্ক ইউ বল না? মিরা বিড়বিড় করে গালি দিয়ে বলল,,
–“মিঃ অভদ্র!”
২
মিরা ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে বাসায় ফিরে জানতে পারলো তার দাদাজানের লেংটা কালের বন্ধু এসেছে ইউএস থেকে। এখনে তাদের বাংলো কেনা হয়েছে কিন্তু কাজ শেষ হয়নি। তাই তাদের পরিবার সমেত হোটেলে উঠেছে। দাদা জান তাদের পরিবার সমেত দাওয়াত করেছেন। ফোনে তার লেংটা কালের বন্ধু কে বলেছে,,
–” এটা কোনো কথা সুলেমান? আমার এত বড় বাড়ি থাকতে তুমি থাকবে হোটেলের ছোট কামড়ায়? তা কি হয় আফটার ওল ইউ আর মাই লেংটা কালের বন্ধু!”
ওপাশে কি জানি তখন বলল। যা কেউ শুনতে পেলো না। শুনা গেলো ইমতিয়াজের হো হো করে হেসে উঠে ভয়ঙ্কর রকমের হাসি।
তা শুনে মিরার বড় বোন রিয়া বিস্ময় নিয়ে বলল,,
–“দাদাজান? কি হয়েছে? আপনার হাসিতে পুরো বাড়ি কেঁপে উঠলো!”
দাদাজান হাসতে হাসতে বলল,,
–” ভেরি ফানি ইয়াং লেডি। ভেরি ফানি! যাই হোক। তোমার মাকে বলো আমার লেংটা কালের বন্ধু আসছে সপরিবার সমেত। তাদের আপ্যায়ন কোন ত্রুটি না থাকে। তাহলে সব কটার গর্দান যাবে।”
বলে আবার হাসতে হাসতে উঠে চলে গেলেন।সবাই তার যাওয়ার দিক তাকিয়ে রইলেন। মনিশা মাথায় ঘোমটা দিয়ে রান্না ঘরে রিয়াকে নিয়ে ঢুকে গেলেন। আজ অনেক কাজ তার।শশুরের কথা কখনো ফালবেন না তিনি। মেহমান আসবে বাসায় তাতে তিনি বহুত খুশি।
কিন্তু খুশি নয় মিরা। মোটেও না। তার ঘুম পাচ্ছে।কিন্তু ঘুমুতে যেতে পাড়ছে না। ইমতিয়াজের হুকুম অনুযায়ী যারা আসচ্ছে তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হবে। শহরের নাম করা দোকান থেকে গাঁদা ফুলের মালা আনানো হয়েছে ।মিরা সোফায় বসে হাই তুলতে তুলতে বলল,
–” বড়পু? আর কতখন এভাবে বসে থাকবো? আমার ঘুম পাচ্ছে। খুব ঘুম!”
বলেই রিয়ার কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো। রিয়া বলল,,
–” একদম ঢং করবি না। দাদাজান দেখতে পেলে তোর গর্দান যাবে।”
মিরা অসহায় ফেইস করে তাকাতেই ফিক করে হেসে দিলো রিয়া। সাথে মিরাও। দুজনে হেসে কুটকুট। তখনি টং টং করে কলিং বেল বেজে উঠলো। সবাই সেদিকে অধীর আগ্রহে চেয়ে। দাদাজান জোড়ে চেঁচিয়ে উঠলো। বলল,,
–” এসেছে গেছে, এসে গেছে আমার বন্ধু আমার লেংটা কালের বন্ধু।”
বলতে বলতে গেট খুললেন ইমতিয়াজ। মিরা উঁকি মেরে দেখার ট্রাই করলো। এক পলক দেখে মনে হলো সাদা ভালুক দাঁড়িয়ে আছে। যার সব সাদা। চুল সাদা, দাড়ি সাদা, শরীরের লোম সাদা, কপালে ভ্রু জোড়া সাদা। কাপড় পড়েছেও সাদা।
মিরা রিয়াকে ফিসফিস করে বলল,,
–” বড়পু আমি তো জানতাম দাদা জানের লেংটা কালে বন্ধু মানুষ।এখন তো দেখছি ভালুক? ও মাই গড। কি সাংঘাতিক ব্যাপার? ”
রিয়া মিরার মাথায় চাটি মেরে বলল,,
–” চুপ কর! সবসময় উদ্ভট কথা! ”
গুনে গুনে সাত জন এসেছেন তারা। ৬ জনকে ফুলের মালা পড়ানো হয়েছে একটি আমার হাতে! ৭ নং ব্যক্তি দাদাজানের লেংটা কালের অতি প্রিয় আদরের নাতি। তিনি গাড়ি পার্ক করছেন। তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আমি। শাহজাদা আসবেন কখন কে জানে।
–” হাই বিউটিফুল! ”
মিরার ভাবার মাঝে কারো কন্ঠে শুনে সামনে তাকাতেই হকচকিয়ে গেল। আবাক হয়ে হালকা চিলিয়ে বললো,,
–” মিঃ অভদ্র?”
মৃন্ময় মিটমিটে হাসতে লাগলো। বলল,,
–” উপরওয়ালা যাব ভি দেতা হ্যায় ছাপ্পড় ফার্কে দেতাহে। ”
চলবে,