মিঃঅভদ্র শেষ পর্ব

0
1858

#মিঃঅভদ্র
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
#শেষ পর্ব

১২
বন্দুক মাথায় ঠেকিয়ে রেখেছে মৃন্ময় মীরার কঁপালে। মীরা পিটপিট করে চোখ। ইমতিয়াজ পাশে বসে কুলকুল ঘামছে। বিস্ময় নিয়ে বললেন,,

–” মৃন্ময় দাদু ভাই এসব কি?”

মৃন্ময় বাকা হাসলো। বলল,,

–” দাদাজান। কি…..ছু না। যাষ্ট ফান। কাজি সাহেব বিয়ে পড়ান।”

পাশে কাজি থরথর করে কাঁপছে। বললেন,,

–” এমন বিয়ে কখনো দেখি!”

অভ্র কাজির পাশে বসে বললেন,,

–” এই যে এখন দেখছেন। শুরু করুন।”

মীরা অসহায় দৃষ্টির দিকে তাকালো ইমতিয়াজের দিক। তার হাত-পা আপাদত বাঁধা।পাশেই দাদা জানের লেংটা কালের বন্ধু পায়ের উপর পা তুলে বিড়ি টানছে।তা দেখে দুঃখী দুঃখী কন্ঠে ইমতিয়াজ বলল,,

–” দাদু ভাই আমি নিরুপায়! ”

মীরা ফুপিয়ে উঠলো। দূরের ঘর থেকে ভেসে আসচ্ছে রিয়া ও তার মার কন্ঠে। তারা বন্দি। মৃন্ময় মীরাকে ধমকে উঠলো,,

–” কান্না বন্ধ।”

মীরা মুখ চেপে কান্না থামতে পড়ছে না।কান্না এবার যেন বন্যা হয়ে নামবে।তখনি কাজি বলল,,

–” মা বলুন কবুল!”

মীরা চুপ। তা দেখে মৃন্ময় মীরার কানে ফিসফিস করে বলল,,

–“দাদাজান অনেকদিন বেঁচেছে। আর বেঁচে লাভ কি?”

মীরার বুক ধক করে উঠলো। বিনা ভনীতায় কবুল বলে দিলো। চোখ দিয়ে এখনো অশ্রু ঝড়ণা বয়ে যাচ্ছে।

১৩

–” কত অপরূপা তুমি। কত সুন্দর ময়াময়। যার জালে আটকে গেছিলাম প্রথম দিন!”

দু আঙ্গুলে থুতনী তুলে রিয়ার মুখ খানা দেখতে লাগলো অভ্র। রিয়া চোখ ডর ভয় স্পষ্ট। সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,,

–“আমি আপনাদের নামে কেস করবো!”

অভ্র হু হা করে হেসে উঠলো। ঘরের মাঝে হাসির গুঞ্জন হচ্ছে। রিয়া ভয়ে ঢুক গিলো। অভ্র বলল,,

–” মার তাছেই মাসীর বদনাম?”

রিয়া কিছু বুঝলো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো। বলল,,

–” আমি আপনাদের ভয় পাই না। আমি আপনাদের জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বো।”

অভ্র এবার হাসতে হাসতে বেডের পাশে শুয়ে পড়লো। মাথার নিচে দু হাত গুজে বলল,,

–” তুমি এত কিউট কেন রিয়া? এ জন্য তোমাকে আমার এত ভাললাগে। লাভ ইউ?”

রিয়া ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। তা দেখে অভ্র বলে,,

–” যাদের কথা বলছো? তারা আমাদের হাতের পুতুল। উঠে বললে, উঠবে বসতে বললে বসবে। কয আমরা কিং! মা…ফিয়া কিং!”

রিয়া এবার অবাক! পায়ের তলা থেকে মাটি যেন ছিটকে সরে গেছে। সে এক মাফিয়ার বউ? ভাবতেই গা গুলিয়ে এলো। রিয়া এবার পিছাতে লাগলো। পালাতে চায় সে। এসব থেকে। যখনি এক দৌঁড় দিবে অভ্র তাকে ধরে ফেললো। পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘারে মুখ গুঁজে দিলো। রিয়া কেঁপে উঠলো এমন আকস্মিক আক্রমণে।সারা শরীর যেন অসাড় হয়ে গেল। তখন শুন্তে পেল অভ্রর মাদক কন্ঠে,,

–” আমার থেকে পালিয়ে যেতে পাড়বে না কখনো তুমি। তুমি যে আমার অর্ধাঙ্গিনী। ”

বলেই কোলে তুলে নিলো। এগিয়ে গেল তাদের ফুলে সাজানো বিছানায়।আর অভ্রের রঙ্গে রিয়াকেও রাঙ্গীয়ে তুলতে লাগলো।

১৪

এখনো থম মেরে বসে আছে ইমতিয়াজ। তার পাশে তার বন্ধু। লেংটা কালের বন্ধু। সে নাকি মাফিয়া কিং? ও মাই গড! ইমতিয়াজ আড় চোখে তাকালো। সোলেমান দাঁত ভেটকিয়ে বলল,,

–” কি দেখো দোস্ত? লজ্জা লাগেতো?”

ইমতিয়াজ দুপাশে মাথা নারায়। অর্থাৎ কিছু না। ইমতিয়াজ উঠে দাঁড়ালো। সুলেমান হাতে টান দিয়ে বাচ্চাদের মতো বলল,,

–” কই যাস?”

ইমতিয়াজ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। পেশার হাই তার ঘুম প্রয়োজন। আজ তার নাতনীদের বিয়ে হয়েছে এই মাফিয়াদের ঘরে। কি হবে তাদের? দু দিন পর পর পুলিশ আসবে তার বাসায় এদের খুঁজতে? মান সম্মান কই যাবে তার? আপাদত চুলায় যাক, নয় তো নদীতে। তার এখন ঘুম প্রয়োজন গভীর ঘুম।তিনি বলল,,

–” আমার ঘুম পাচ্ছে। গভীর ঘুম। তুই বস বিড়ি ফুক। আমি আসি। ”

চলে গেলেন তিনি।তাকিয়ে রইলো সুলেমান। সে অবাক। এতো সবের মাঝে এ ঘুমুতে পারবেতো?

১৫

–“মীরা অপেন দা ডোর! ”

–” না খুলবো না। গো টু হেল!”

–“মীরা রাগিও না! ঘরে চলো। তোমাদের টাট্টিখানায় বহুত মশা। আমি চাই না। তোমাকে মশা কামড়াক। সেটা এক মাত্র অধিকার!”

মীরা এমনিতেই রেগে ছিলো। এমন কথায় উপর দিয়ে ঠান্ডা পানি ঠেলে দিলো। মৃন্ময় ভিজে চুবু চুবু। তখনি মীরা দরজার ওপাশ থেকে বাক্য ছুড়লো কিড়মিড়ি করে,,

–” আই হেইট ইউ মিঃ অভদ্র।”

মৃন্ময় এই ঠান্ডায় ঠান্ডা পানিতে ভিজে কাঁপছে।সাথে রাগ লাগলো তার। আজ তার বাসররাত। কই ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল দিনে কম্বলের নিজে রোমেন্স করবে? আর এখন তার বউ তাকে এই টাট্টীখানায় দাড় করিয়ে রেখেছে। সে রেগে বলল,,

–” মীরা অপেন দ্যা ডোর। আর এক সেকেন্ডের মাঝে দরজা না খুললে কিন্তু তোমার বাবার বিপদ হতে!”

মীরা সাথে সাথে দরজা খুললো। চোখ মুখ ফুলে তার। কিন্তু এতেই যেন কতটা হট লাগছে তাকে। মীরা কি তা জানে? মৃন্ময় এগিয়ে গেল। মীরা ভয়ে পিছিয়ে যেতেই। শাড়ির আঁচল টেনে ধরলো মৃন্ময়। এদিকে মীরার গলা শুকিয়ে কাঠ। যেন সাত দরিয়ার পানি এক মাথে পান করে ফেলবে সে। কিন্তু মূহুর্তে তার ভাবা পাল্টে গেল সব। মৃন্ময় মীরার আঁচল দিয়ে নীজের শরীর, মাথা, মুখ মুছতে লাগলো। আর বলল,,

–” তুমি অনেক দুষ্টু মেয়ে। আমাকে ভিজিয়ে দিলে পাজি মেয়ে? এখন আমার ঠান্ডা আর জ্বড় হলে তোমারি পোহাতে হবে। হুম!”

মীরা কি বলবে বুঝলো না। সে চুপ। মৃন্ময় তাকে রুমে নিয়ে এলো। ভিজে কাপড়েই তার সামনে খাবার প্লেট নিয়ে বসলো।এবং মুখের সামনে ধরে বলল,,

–” সকাল থেকে কিছু খাওনি। এখন হা করো। নয়তো মার একটাও মাটিতে পড়বে ন।!”

মীরার কেন জানি মুহূর্তটা ভাল লাগলো। এতেই লাগলো যে চোখের কোনের জল পড়ার রাস্তা পেয়ে গেল।তা দেখে মৃন্ময় হন্তদন্ত হয়ে চোখে পানি মুছে দিলো।বিচলিত হয়ে বলল,,

–” কি হয়েছে? আবার কাঁদছো কেন? আচ্ছা আর মারবো না বকবো না প্লীজ ডোন্ট ক্রাই।”

মীরা তাকিয়ে রইলো ব্যক্তিটির দিক সত্যি লোকটি তার কত কেয়ার করে। তাই বলে তাকে বন্দুকের ভয়ে বিয়ে করবে? আবার অভিমান জমা হলো। অন্য দিকে ফিরে তাকালো। মৃন্ময়ের এটা পছন্দ হলো না। সে মীরার মুখ তার দিক ঘুড়িয়ে বলল,,

–” লিসেন মীরা! আই নো তখন যা করেছি! তা টিক করিনি। আর কোনো রাস্তাই ছিল না। আমরা কাল চলে যাবো। তখন তোমাকে আর পাবো কই? আর আমাদের সত্য জানার পর তোমরা মানতেই না। তাই বাধ্য হয়েছি। বাট আই লাভ ইউ। লাভ ইউ ভেড়ি মাচ। হা..চ্চু?”

কথা বলার মাঝেই মৃন্ময় হাচি দিতে লাগলো। মীরা এবার নিজেই রাগ দেখিয়ে বলল,,

–” কাপড় চেন্চ করে আসুন। বাকি কথা পরে।”

–” নাহ্! হা…চ্চু। এখনি এ..হাচ্চু! ”

মীরা বুঝলো এ নাছড় বান্দা। সে বলল,,

–” আই নিড এ সাম টাইম!”

মৃন্ময় ঠোঁটে টান টান হাসি দিয়ে বলল,,

— “ওকে!”

গটগট করে চলে গেল কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের দিক।
মীরে হাফ ছেড়ে যেন বাঁচলো। খাটের সাথে হেলে চোখ বুঝে রইলো। ভাবতে লাগলো। যাই হোক বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে তারা আবদ্ধ হয়েছে। তার মা বলতেন সবার জীবনে একবার নাকি বিয়ে হয়। যদিও কথা মিথ্যা। আশে পাশে তাকালে বুঝা যা ছেলে হোক আর মেয়ে তাদের কবার বিয়ে হয়। তবুো মীরা ঠিক করলো। তাদের এই সম্পর্কের একটা নাম দিবে। মিঃ অভদ্রকেও একটা সুযোগ দিবে সে। এসব ভাবার মাঝেই চোখ লেগে যায় মীরার। সাথে সাথেই কে যেন ঝাপটে ধরে তাকে। হকচকিয়ে উঠে সে। দেখে মৃন্ময় তার গলায় মুখ গুঁজে। সে ফিসফিস করে বলল,,

–” তো কি ভাবলা?”

মীরা অবাক হয়ে বলল,,

–” কি ভাববো? আমি তো সময় চেযেছি!”

মৃন্ময় দাঁত কেলিয়ে বলল,

–” দিলামি তো!”

মীরার চোখ কঁপালে সে বলল,,

–” আর ইউ কিডিং মি? এ তো টু সময়ে কি হবে?”

মৃন্ময় মীরার নাকে কামড় দিয়ে বলল,,

–“বাসর হবে!”

মীরে ঢুক গিলে নিচু আওয়াজে বলল,,

–” আমি সময় চাই!”

মৃন্ময় এবার মীরার গালে চুমু খেয়ে বলল,,

–” সরি বেবী আই কান্ট। ”

বলেই ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। মীরা এবার বিস্ময়ের শেষ চুড়ায়। কিছুই বুঝে উঠার আগেই মৃন্ময় তাকে আপন করে নিলো। মিশিয়ে নিলো তার আত্মার সাথে।


১ বছর পর,

মীরা, রিয়া দুজনেই হাসপাতালে বেডে শুয়ে আছে।তাদের পাশে শুয়ে আছে ফুটফুটে টুইন বেবী। দুজনের ঘরেই একটি ছেলে, একটি মেয়ে হয়েছে। এমন ঘটনায় বিস্মিত মৃন্ময় আর অভ্র। সুলামান হাসি হাসি মুখে বলল,,

–” ইতু দেখ দেখ একটি তোর মতো আরেকটি আমার মতো দেখতে। হে হে!”

ইমতিয়াজের রাগ হলো প্রকাশ করলো না। মনে মনে গালি দিয়ে বলল,,

–” কোনকার কোন মাফিয়া হের মতো দেখতে আমার নাতনী। শালা উজবুক। ”

সুলেমান তখন খুশী খুশী গলায় বলল,,

–“ইতু…রে দোস্ত গালি দিয়ে লাভ নেই মাফিয়ার নাতনী মাফিয়া হবে। এটাই নিয়ম। হে হে।

ইমতিয়াজ মাথা নাড়িয়ে মেকি হেসে বলে,,

–” না না দোস্ত তা কেন বলব? বল? তোর নাতী তোর বংশ ধর। আমার কি। আমি শুধু আমার নাতনীদের দেখি। আর দোয়া করি তুই যেভাবে আমার নাতনীদের আপন করেছিস। একদিন তোর থেকেও ডেঞ্জার কেও তোর নাতনীদের আপন করে নেয়।”

সুলেমান হেসে বলল,,

— শকুনের দোয়ায় গরু মরে না। বুঝলা দোস্ত!”

উপস্থিত সবাই হেসে দিল। ইমতিয়াজ মুখটা ছোট হয়ে গেল। সে বলল,,

–“ওয়েট এন্ড ওয়াচ..!”

সমাপ্ত❤️

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ইহা একটি ফানি গল্প ছিল। আসা করি মজা পাইছেন!😁।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে