গল্প :- মায়া
পর্ব :- ০৪ এবং অন্তিম
লেখিকা :- তাসনিম রাইসা
.
.
.
-: এই তো প্রায় ৭ লাখের মতো।
– এতো টাকা! ডাক্তার সাব আমি যেভাবেই হোক টাকা জোগাড় করবো। আমার রাইসাকে যে বাঁচতেই হবে। কথা হসপিটাল থেকে বের হয়ে ভাবছে এতোগুলো টাকা কি করে সংগ্রহ করবে। বাবার অবস্থাও ভালো না।
-এদিকে কথা বাসায় এসে দেখে রাইসা সেন্সলেন্স হয়ে আছে।
– কথাকে দেখেই তা মা বললো’ কথা তুই কোথায় ছিলি রাইসা বললো তার পেট ব্যথা করছে প্রচন্ড। তার পর সেন্সলেন্স হয়ে গেল। রাইসাকে নিয়ে হসপিটালে আবারো রওয়ানা দেয়। ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা দিলে রাইসা মোটামুটি সুস্থ হয়ে যায়।
– ডাক্তার আড়ালে নিয়ে বলে দিল, যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব রাইসার চিকিৎসা শুরু করে দিতে।
– ডাক্তারের কথা শুনে বাসায় এসে সারারাত আর ঘুমাতে পারিনি। সারা রাত রাইসাকে বুকে জড়িয়ে কেদেছি। আমার বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন ছিল রাইসা আজ সেও হারিয়ে যাচ্ছে।
– মাঝরাতে রাইসা উঠে দেখে তার মা কাঁদছে।
” মা তুমি কাঁদছো কেন?”
– কথা চোখের পানি মুছে বললো ‘ কই মা কাঁদছি না তো?”
– মা জানো আমার না খুব কস্ট হয়। প্রতিদিন রাতে ঘুমালে কে যেন আমাকে ডাকে। তার কাছে নিতে চায়।
– রাইসার কথা শুনে কথার বুকটা কেঁপে ওঠে।
– রাইসাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে মারে তুর কিছু হবে না। আমি যেভাবেই হোক তোর কিছু হতে দিব না।
– তারপর কথা সে রাতেই সিদ্ধান্ত নেয় নিজের জীবনের বিনিময়ে তার মেয়েকে বাঁচাবে। তাই পরের দিন আনোয়ারের বাসায় গিয়ে বলে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই তবে শর্ত হচ্ছে বিয়ের আগে আমাকে আট লাখ টাকা দিতে হবে।
– আনোয়ার মৃদু হেসে বললো’ জানতাম তোদের মতো মেয়ে টাকা পেলে সব করতে রাজি। ‘ আচ্ছা কালই টাকা পেয়ে যাবে। আর পরশুই বিয়ে করতে চাই আমরা।
– কথা কিছু না বলে মাথা নাড়িযে হ্যাঁ সূচক জবাব দেয়।
– এদিকে কথা বাসায় এসে সারারাত রাজের ছবিটা বুকে নিয়ে কান্না করে আর বলতে থাকে ‘ রাজ পারলাম না তোমাকে দেওয়া কথা রাখতে। আজ আমি নিয়তীর কাছে পরাজিত। আজ সমস্ত মায়া বির্সজন দিয়ে আমি অন্যের হয়ে যাচ্ছি। তবে মনে রেখ দেহটা অন্যকেও পেলেও এ মনের রাজ্যে তুমিই থাকবে।
– এর পর কথার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরের ঘটনা তো আপনারা জানেনই।
– এদিকে আজ কথা আবারো চলে যাবে আনোয়ারের সাথে। আনোয়ারকে বললো ‘ যাওয়ার সময় রাইসাকে সাথে করে নিয়ে যাবে। ‘ কিন্তু আনোয়ারের এক কথাই বেজাল সাথে নিবে না। এই বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
– আনোয়ার চলে যাওয়ার পর রাইসা কাঁদতে কাঁদতে রুমে ঢুকে। কথাকে দেখেই রাইসা জড়িয়ে ধরে বলতে লাগে’ মম তোমার নাকি বিয়ে হয়ে গেছে?’ রিফাত বললো তুমি নাকি পতা। তুমি আর আমাকে বুকে নিবা না। তুমি আমাকে রেখে চলে গেছো। কাল রাতে কতো কান্না করছি বুকে নেওনি।
– রাইসা মা আমার কাঁদে না। আমার বুকে আয় তকে আদর করে দেয়।
– না না না! তুমি আমাকে ডাকবে না। তুমি পতা। তুমি পতা লোকটাকে বিয়ে করেছে। তুমি চলে যাও। কথাটা বলে রাইসা চলে গেল।
– বিকেল বেলা যখন কথা তার জামাই বাড়ি চলে যাবে এমন সময় কোথাও রাইসাকে খুঁজে পেল না। কথা বুঝে ফেলছে তার মেয়েটা তার বাবার মতোই অভিমানী। নিশ্চয়ই মন খারাপ করে কাঁদছে। তাই আনোয়ারকে রেখে তার মায়ের রুমে গিয়ে দেখে রাইসা উপুড় হয়ে কাঁদছে।
-কথা পিছন থেকে গিয়ে, রাইসার মাথায় হাত রাখতেই রাইসা কান্না জড়ানো কন্ঠে বললো কে? আপনি চলে যান।
– রাইসা চলো আমার সাথে।
-না আমি আপনার সাথে যাবো না। আপনি আমাকে ছুঁবেন না। আমার কেউ নেই। আমার মা-বাবা কেউ নেই। কাঁদতে কাঁদতে অন্যরুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।
– এদিকে মাস খানেক পর রাইসার অপারেশন হয়। রাইসা এখন পুরোপুরি সুস্থ। কিন্তু রাইসা সুস্থ হলেও সে হাসতে ভুলে গেছে। তার মাকে ঘৃণা করে বড্ডবেশি ঘৃণা করে। তার বিশ্বাস তার মা নিজের জন্য তাকে ছেড়ে গেছে। এখনো কথা আসলে রাইসা মুখ ফিরিয়ে নেয়। কথা পারেনা তার মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিতে।
– দেখতে দেখতে অনেক গুলো বছর কেটে যায়।
কথা মারা গেছে। মারা যাওয়ার আগে একটা ডাইরি রেখে গেছে। হ্যাঁ কথা কাঁদছে। তার মায়ের জন্য কাঁদছে কারণ এখন তার মা নেই। তার মায়ের মায়া জড়িত কথাগুলো ডাইরি বন্ধ হয়ে আছে।
.
.
সমাপ্ত…….
.