মায়া – লেখিকা অন্তরা ইসলাম

0
717

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট২০২০
#গল্প_মায়া
#লেখিকা_অন্তরা_ইসলাম

আমি পানি দেখলে খুব ভয় পাই।কিন্তু আজ জীবনের মায়া কাটিয়ে উঠতে পানি ব্যতীত অন্য কিছুর কথা মাথায় আসলো না।তাই জীবনের প্রথমওশেষবারের মতো নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি।অদুর জলরাশি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে।আমি শেষবারের মতো ফেলে আসা অতীতটাকে একবার স্মরণ করে নিতে চাই।তাই চোখ বন্ধ করে মনে করতে শুরু করি……..

আমার নাম নীলা।এক ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। কিন্তু বাবা-মায়ের আদর, স্নেহ, ভালোবাসা এগুলো কখনোই পাইনি। কারন বাবা-মা দুজনেই চাকরি করে। আমার জন্য তাদের কাছে সময় কই…তারা ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত।আমি সারাদিন কাজের মেয়ের সাথেই থাকতাম। বাবা-মায়ের সাথেতো সপ্তাহে একবার দেখা হতো। কারন সকালে যখন তারা চলে যায় আমি ঘুমে বিভোর। আর রাতেও তাদের অপেক্ষায় থেকে ঘুমিয়ে যেতাম।আমাদের সংসারে অভাব ছিল না তারপরেও বাবা-মা রোজ রোজ ঝগড়া করত। যা আমার ভালো লাগত না অথচ একসমসয় এরা একে অপরকে ছাড়া একমুহূর্তের জন্যও থাকতে পারত না।আমি সবেমাত্র প্রাইমারির গন্ডি পেরিয়ে হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছি। তার কিছুদিন পরেই বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ ঘটে। তারা লিগালি একে অপরকে ডির্বোস দিয়ে দেয়।আমাকে অনিচ্ছা সত্বেও বাবার সাথে যেতে হয়।আমি বাবাকে অবশ্য অনেক ভালোও বাসি কিন্তু তা না বলা কথা…..

আমার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয় আমাকে দাদু বাড়িতে রেখে আসেন।কখনো কথা বলেন না বা দেখতে যান না বাবা।কারন সে তার নতুন স্ত্রীকে নিয়ে সুখে আছে।আমি তার সংসারে উটকো ঝামেলা। শুধু পড়াশোনার খরচটা দিত।কিন্তু তাও কপালে সইল না।ছোট চাচ্চু বিয়ে করলো।তার বউ আমাকে মোটেও সহ্য করতে পারতো না।তাই নানা ভাবে কষ্ট দিতে থাকে। খেতে দিত না, আমার জামা কাপড় নিয়ে নিত,অনেক কাজ করাতো।শেষ পর্যন্ত তাদের আচরণ আমাকে নিশ্চুপ বানিয়ে ফেলে।একটা ডানপিটে মেয়ে হঠাৎ করে চুপ করে যায়। প্রয়োজনের বাইরে একটা কথাও বলেনা।ঘর থেকে বেরোয়না।কারো সাথে মেশে না।আর সবচেয়ে বড় কথা এখন বাবা চাইলেও তার সাথে কথা বলিনা।বাবা বলে ডাকিনা।কিভাবে ডাকবো এই ক’বছরে তার প্রতি থাকা ভালোবাসা ঘৃণার রূপ নেয়। আমি বুঝতে পারি তার পরকিয়া সম্পর্কের জন্যই আমাদের সংসারটা ভেঙে গেছে। আমার এমন আচরনে সবাই অবাক হয়। কিন্তু কিছু বলেনা।যখন কোন অত্যাচারই আমাকে তাড়াতে পাড়লনা।তখন একদিন হঠাৎ করে আমার বাবা আসলেন।রাত তখন ১১টা। এসেই আমাকে ডাকলেন আমি একটু অবাক হলাম। কারণ আমাকে রেখে যাওয়ার তিন বছর পরে আজ সে এসেছে। আর এসেই আমাকে ডাকছে।আমি গেলাম,তিনি আমাকে চলে যেতে বললেন।আমি যাবোনা বলায় সে আমাকে সজোরে একটা চড় মারে।আমি বিছানার উপর পড়ে যাই।সে পাশ থেকে একটা বালিশ নিয়ে আমাকে চেপে ধরেন।কেউ আমাকে বাচাঁতে এগিয়ে আসেনি।চেচাঁমেচি শুনে আসা পাশের বাড়ির আপু আমাকে প্রানে বাঁচান।আমি বাবার সাথে সব সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়ে চিরতরে বেড়িয়ে আসি।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
মাঝরাত আমি একা একটা মেয়ে কোথায় যাব? কি করব? কিছুই বুঝতে পারছি না।জোরে চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু মুখ থেকে কোন শব্দ বেড়োতে চায় না।যেন নির্বাক হয়ে গেছি।পুরো রাস্তা ফাঁকা। কোথাও যেন একটা কাক পাখিও নেই।খুব ভয় হচ্ছে। একটা বাস স্টপেজ এ বসে নিঃশব্দে কান্না করছি।হঠাৎ কেউ একজন পাশ থেকে বলে উঠে, এই যে ম্যাম কাঁদছ কেন?এটা শুনে কিছুটা অবাক হলাম। তাকিয়ে দেখি একটা ছেলে। সে আমাকে জিজ্ঞেস করল কোথায় যাব। আমি কোন জবাব না দেওয়ায় সে আমার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে অন্য হাতে আমার হাত ধরে হাটতে লাগলো। একটা বাড়িতে নিয়ে গেল। ভিতরে একজন বৃদ্ধা মহিলা তাহাজ্জুদ নামাজে ব্যস্ত।ছেলেটি আমাকে একটা রুমে নিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে আমার জন্য খাবার নিয়ে এলো।আমি খেতে অস্বীকার করি।সে আমার চোখ থেকে ঝরতে থাকা জলগুলো মুছিয়ে দিয়ে বলে,তুমি ভয় পেয় না। আমার নাম আকাশ। তোমার নাম কি?আমি তাকে বলি,নীলা। কিন্তু সে নীল বলে উঠে। আর আমাকে খাইয়ে দিতে থাকে। রাতে আর কথা হয়না আকাশের সাথে। সকালে জানতে পারি ওই মহিলা আকাশের মা।আকাশ আমাকে আম্মুর বাসায় পৌঁছে দেয়।এর মধ্যে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয় আমাদের। আকাশ আম্মুর বাসা থেকে ফেরার আগে আমাকে বলে,তুমি কি আমার আকাশ রঙিন করার জন্য রং হবে?বিশ্বাস করো ওই নীল আকাশের মতো এই আকাশ ও নীল ছাড়া অসম্পূর্ণ। আমি তাতে সম্মতি জানাই।তারপর আকাশ চলে যায়।

আম্মুর বাসায় ভালোই লাগছিল। শুধু আমাকে টাইম না দিয়ে ফোনকে টাইম দেওয়াটা ভালো লাগছিল না।আমি তো এখনো বাড়িতে ঘটে যাওয়া কথা গুলো আম্মুকে বলতে পারি নি।তবুও সুখেই তো আছি।খাবার পাচ্ছি, জামা পাচ্ছি।আর কি চাই?থাক না আম্মুর সাথে আগের মতো দুরত্ব। আকাশ তো আছে।একদিন একজন ভদ্রলোক আসলেন।আমি তাকে চিনি না।কলিং বেলের শব্দে আমি দরজা খুলে দেই।সে বাসায় ঢুকেই আমাকে প্রশ্ন করে, তুমি এখানে এসেছো কেন?ফিরে যাবে কবে? আমার জবাবের অপেক্ষা না করেই সে আম্মুর রুমে চলে যায়। একটু পরেই তার সাথে আম্মুর ঝগড়া হয়।সে আম্মুকে চড় মারে আর বলে আমি তোমাকে বিয়ে করেছি অন্যের ঝামেলা সাথে নিয়ে আসার জন্য না।তোমার যদি মেয়ের জন্য এত মায়া থাকে তাহলে আমাকে বিয়ে করলে কেন? আমি দরজার সামনে দাড়ানো ছিলাম তাই সবটা শুনতে পাই।আমার আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না। দৌড়ে রুমে এসে দরজা লক করে দেই।খুব কান্না পাচ্ছে। ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার অন করে দেই চোখের জল যেন বাধা মানছে না।কিছুক্ষণ পর আবার ব্যাগ গুছিয়ে আম্মুর বাসা থেকে ও বেড়িয়ে আসি। খুব কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে যে,আম্মু ও মুখ ফিরিয়ে নিল।

আকাশকে কল দিলাম আমার শেষ ভরসা।কিন্তু সে ও সবটা শুনে মুখ ফিরিয়ে নিল।আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তাই শেষ পর্যন্ত নদীর পাড়েই আসতে হলো। এগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে নোনাপানির স্রোত চলে এসেছে। আমি আর মায়া বারাতে চাই না।তোমাদের মুক্ত করে দিলাম।থাক না কিছু না বলা কথা যা আজও হয়নি বলা,
ভালোবাসি তোমাদের বাবা-মা………..
আর বলা হলোনা তার আগেই নদীর শান্ত পানিকে অশান্ত করে দিয়ে নীল চিরতরে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেল। সত্যি খুব কষ্ট হচ্ছিল সবাইকে ছেড়ে যেতে।আর বারবার আম্মু তোমার হাসি মুখটা ভেসে উঠছিল চোখের সামনে…….
আর মনে হচ্ছিল আমি তো এটা চাইনি তাহলে এমন কেন হলো????কেন???

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে