জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো বসে আছি ফুলে ফুলে সাজানো বাসর ঘরে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও দ্বিতীয় কেউ স্পর্শ করবে তার এই দেহে। ফোনটা বারবার রিং হচ্ছে! বারকয়েক বার রিং হতেই ফোনটা হাতে তুলে নিলাম। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মা বললো’ কথা তোর মেয়েটা অনেক কান্না করছে। কোন ভাবেই থামাতে পারছি না। তুই একটু কথা বল। যদি কান্না থামা।
– আচ্ছা মা রাইসাকে দাও।
– রাইসা ফোনটা হাতে নিয়েই বলতে লাগল ‘ মম তুমি কোথায়? সারাবাড়ি খুঁজেছি কোথাও তোমাকে পেলাম না। ‘ মম তুমি জানো না তুমি বুকে না নিলে আমার ঘুম হয় না। মা তুমি আমার সাথে লুকোচুরি করছো তাই না? আমি যে দুষ্টমি করি। মম আমি আর তোমার সাথে দুষ্টমি করবো না। আর বলবো না মম আইসক্রিম কিনে দাও। বলো মম তুমি কোথায় আছো?
– রাইসার কথা শুনে কথা কি বলবে বুঝতে পারছে না । দু’চোখ বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে।
– কি হলো মম তুমি এখনো রাগ করে থাকবে কথা বলবে না আমার সাথে?
– কথা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, আমার লক্ষী মা মন খারাপ করে না। আমি আসব। তোকে বুকে নিয়ে ঘুমাবো। হঠাৎ দরজায় আওয়াজ হলো। কথা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে তার বর ঘরে ঢুকছে।
– কথা আনোয়ারকে দেখে কিছু না বলেই ফোনটা রেখে দিল। চোখের পানি শাড়ির আচল দিয়ে মুছবে এমন সময় আনোয়ার কথার পাশে বসে বলল’ মেয়ের জন্য মন খারাপ? মন খারাপ করো না। কাল তো তোমাদের বাসায় যাচ্ছি।
-কথা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।
– কথা আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। মনেই হচ্ছে না এর আগেও তোমার বিয়ে হয়েছিল।
– কথা কিছু না বলে দু’চোখ বন্ধ করে আছে। আনোয়ার কথার ঘোমটা টা খুলে কপালে চুমু একে দিল। কথাকে শুইয়ে দিয়ে বুকের ওপর থেকে যখনি কাপড় টান দিয়েছে তখন কেমন যেন কলিজাটা কেঁপে ওঠল কথার। নিজের ওপর নিজেরই ঘৃণা হচ্ছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আনোয়ারকে সরানোর ক্ষমতা তার নেই। বারবার রাজের কথা মনে পড়ছে। সত্যিই জীবনে প্রথম বাসর রাতটি স্বপ্নের মতো ছিল। দু’জনে নামায শেষ করে সারারাত গল্প করা। সেদিন রাজকে দেওয়া শপথ বার বার কানে ভারি খাচ্ছে। সেদিন দুজন দুজনকে ছুঁয়ে শপথ করেছিল নিজেদের ভালোবাসার ভাগ কাউকে দিবে না। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। আজ অন্যজনের কাছে নিজের সবটা সপে দিতে হচ্ছে।
– কথার অর্ধ -বিবস্ত্র! আনোয়ার কথার আস্টে-পৃষ্টে জড়িয়ে আছে এমন সময় ফোনটা আবারো বেজে উঠল। কথা ফোন ধরতে গেলে আনোয়ার বলল’ থাক এখন ধরতে হবে না।’
– কিন্তু বারকয়েকবার ফোন রিং হতেই ফোনটা ধরল কথা ‘
– ফোনের ওপাশ থেকে রাইসার কান্না শুনা যাচ্ছে। কথা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আনোয়রকে বলল’ আমাকে একটু সময় দিবেন? জাস্ট একটু।
– আচ্ছা!
– কথা ফোনটা নিয়ে শরীরে কাপড় টেনে দিয়ে জানালার পাশে চলে গেল।
– হ্যালো কথা শুনতে পারছিস? রাইসা তোর সাথে কথা বলতে বলতে তখন সেন্সলেন্স হয়ে গিয়েছিল! এখন জ্ঞান ফিরে আবার তোকে না পেয়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে মা মা বলে কাঁদছে। কারো কথায় শুনছে না। তুই একটু ভালো করে বুঝা তো মেয়েটাকে। এমনেই অসুস্থ আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যাবে।
– মা রাইসাকে ফোনটা দিয়ে বলো তো, তার মা কথা বলবে।
– আচ্ছা আমি রাইসাকে দিচ্ছি কথা বল।
– রাইসা ফোন হাতে নিতেই কথা বললো’ মামনি তুমি কান্না করছো কেন?
– কি করবো বলো? তুমি আমাকে রেখে কোথায় চলে গেছো? ‘ মম তুমি কোথায়? এখনো আসছো না কেন?
– মা আমি কাল সকালেই আসবো। তুমি ঘুমিয়ে যাও।
– আমি কিছু জানি না। তুমি এখন আসবা।
– রাইসা মা আমার আমি তোমার জন্য চকলেট আর আইসক্রিম নিতে এসেছি। কাল সকালে নিয়ে যাবো।
– আমার কিছু লাঘবে না। আমি তোমার কাছে যাবো। নিয়ে যাও। নয়তো আমিও বাবার কাছে চলে যাবো।
– কথা কিছু বলতে পারছে না। চোখ দিয়ে আষারো ঝরনা ধারা নেমে আসছে। ফোনটা রেখে খাটে গিয়ে বসল। আনোয়ার ধাক্কা দিয়ে কথাকে শুইয়ে দিলো। কথার দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। এসবে কথার বরের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত।
– কথা চোখ বন্ধ করে আছে। বুকের ভেতরটা পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। তার জীবনটা এমন ছিল না। দেখতে দেখতে কথার জীবনে অভিশপ্ত একটি রাত কেটে নতুন সূর্য উঠে। সকাল হতেই গোসল করে চলে যায় শাশুড়িকে সাহায্য করতে।
– যখন রান্না ঘরে প্রবেশ করবে তখন, তার বড় ভাবি কাকে যেন বলছে’ আনোয়ার এটা একটা কাজ করলো? মেয়ে সহ বিয়ে করা মেয়েকে বিয়ে করলো।
– কথাকে রুমে ডুকতে দেখে চুপচাপ হয়ে গেল।
– পরের দিন কথা তাদের বাসায় যেতেই ‘ রাইসা দৌড়ে এসে কথাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল ‘ মম তুমি কোথায় ছিলে? আর আমাকে ছেড়ে যাবে না তো?
– রাইসার এই কথার কোন উওর নেই কথার কাছে।
.
.
চলবে………….
.
গল্প :- মায়া
পর্ব :- ০১
লেখিকা :- তাসনিম রাইসা