#মায়াবিনী
সুরমা
পর্ব : ৯+১০
সুপ্তি বিছানা থেকে উঠে জানালা দিয়ে বাহিরে উঁকি দিয়ে দেখে রাস্তার অপর পাশে অপূর্ব দাঁড়িয়ে আছে।সুপ্তি জানালা বন্ধ করে আবার নিজের রুমে এসে শোয়ে পড়ে।অপূর্ব সুপ্তিকে একের পর এক কল করেই যাচ্ছে।থামার কোনো নামেই নিচ্ছে না।সুপ্তি অনেকটা বিরক্ত হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে সুইচ অফ করে ফেলে।সুপ্তি মনে মনে বলতে থাকে,ছেলেটা এতো নাছোড়বান্দা কেন? কতো কি বললাম।তারপরও পিছু ছাড়তে চাইছে না।এখন বাসার সামনে এসে আবার কেমন অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।একতো কিছুক্ষণ আগে এতো বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটলো এখন আবার এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছে।ব্যাপারটা সুপ্তির কাছে খুব খারাপ লাগলো।সে বিছানায় শুয়ে চটপট করতে লাগলো।কিছুতেই বিছানায় থাকতে ইচ্ছে করছে না তার।কেন জানি অপূর্বের দিকে টানছে তাকে।সুপ্তি বিছানা থেকে উঠে আবার গিয়ে জানালার ফাঁকে অপূর্বকে এক পলক দেখে নিলো।কতক্ষণ ধরে এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।নিশ্চয় অনেক কষ্ট হচ্ছে তার।মুখটা শুকিয়ে গেছে।হাতে,মাথায় ব্যান্ডেজ করা।সুপ্তির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।সুপ্তি দৌঁড়ে এসে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে কান্না করতে থাকে।এ কেমন ভালোবাসা?কাছেও টানতে পারছে না,দূরেও সরিয়ে দিতে পারছে না।শুধু প্রেমহীনা চটপট করতে হচ্ছে।সুপ্তি কান্না করতে করতে এক সময় সে ঘুমিয়ে যায়।আর অপূর্ব আগের মতই দাঁড়িয়ে থাকে।একটুও নড়ে নি সে।সুপ্তি যাই বলুক না কেন,এতো সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নয় অপূর্ব।কিন্তু সকালের ঘটনার পর থেকে শরীর খুব দুর্বল লাগছে।দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না।মাঝে মাঝে পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।ক্ষত জায়গা গুলোতেও ব্যথা করছে।কিন্তু,এই ব্যথার থেকেও হৃদয়ের ব্যথা কঠিন।সেই ব্যথা সহ্য করার মতো নয়।
সুপ্তির যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন তুমুল বৃষ্টি বাহিরে।সুপ্তির চোখ দুটি ফোলে গেছে কান্না করার কারনে।মাথাটাও ভারী হয়ে গেছে।প্রচুর বাতাস বাহিরে।জানালাটা বারবার খুলছে আর লাগছে।ইচ্ছে করছিল না এই সময় সুপ্তি বিছানা থেকে উঠে যেই জানালা লাগাতে। কিন্তু প্রচণ্ড শব্দের কারনে উঠতে বাধ্য হলো।সুপ্তি যেই জানালাটা লাগাতে যাবে তখনি নজর পড়ে অপূর্বের উপর।এখনও সে এখানেই রয়েছে।এতো বৃষ্টির মধ্যে সে ভিজছে।রাস্তায় হাটুর উপর ভর দিয়ে বসে আছে অপূর্ব।সুপ্তি খেয়াল করে দেখে অপূর্ব বৃষ্টির পানিতে কাঁপছে।সারা শরীর কুচকে গেছে।দৃশ্যটা দেখার সাথে সাথে সুপ্তির বুকের ভিতরে অস্বস্তি শুরু হয়ে যায়।সুপ্তির ইচ্ছে করছিল কান্না করে দিতে।সে ব্যালকনির দরজা খুলে ব্যালকনিতে চলে আছে।অপূর্ব নিচের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।সুপ্তি এক দৌঁড়ে নিজের রুম থেকে বের হয়ে আসে।এসে দেখে ডয়িং রুমে কেউ নেই।সুপ্তি দরজারা আস্তে করে খুলে বাইরে বের হয়ে আসে।নিজের বাসা থেকে এক দৌঁড়ে অপূর্বের সামনে এসে দাঁড়ায়।অপূর্ব নিজের সামনে কারো পা দেখে মুখ তুলে উপরে তাকিয়ে দেখে সুপ্তি।সাথে সাথে অপূর্ব দাঁড়িয়ে যায়।বৃষ্টির পানিতে অপূর্বের চেহারাটা মলিন হয়ে গেছে।সুপ্তি বেচারী আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না।অপূর্বের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দেয়।অপূর্ব সুপ্তিকে নিজের বুকে শক্ত করে জড়িয়ে নেয়।সুপ্তির কান্না যেন থামতেই চাইছে না।সুপ্তিকে এতো কান্না করতে দেখে অপূর্ব বলে,,,,,
-এতো কান্না করছো কেন?মনে হচ্ছে আমি তোমাকে মেরেছি।সকালে তো বাসার কথা বলে খুব ভয় দেখাচ্ছিলা।আর এখন যে আমরা তোমাদের বাসার সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি সেটা মনে হয় ভুলে গেছো।অপূর্বের কথা শোনে সুপ্তি তাড়াতাড়ি অপূর্বকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায়।সুপ্তি এতক্ষণ এই বিষয়টা মাথায় ছিল না।কিন্তু একটা জিনিস মাথায় আসলো,যখন অপূর্বকে জড়িয়ে ছিল তখন সুপ্তি গরম ফিল করেছিল।এখন আবার বৃষ্টির পানিতে ঠাণ্ডা লাগছে।
অপূর্বের গায়ে অনেক উত্তাপ।সুপ্তি হাত বাড়িয়ে অপূর্বের কপালে হাত রেখে দেখে অপূর্বের শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।সুপ্তি এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিয়ে বলে,,,
-আপনার শরীরে তো অনেক জ্বর।সকালে এতো বড় একটা এক্সিডেন্ট করলেন আর এখন বৃষ্টিতে ভিজলেন কেন??তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে কাপড় চেঞ্জ করেন।তারপর এক গ্লাস গরম দুধ খেয়ে কাঁথা মুড়ে ঘুমাবেন।ঘুমালে আর জ্বরটা আসতে পারবে না।সুপ্তির কথা শেষ হলে অপূর্ব একটু এগিয়ে এসে বলে,
-আই লাভ ইউ সুপ্তি।আই রিয়ালি লাভ ইউ।আমার বাকি পথটা তোমার হাতে হাত রেখে চলতে চাই।অপূর্বের কথা শোনে সুপ্তি মাথা নিচু করে এক হাত দিয়ে আরেক হাত মুচড়াতে থাকে।অপূর্ব সুপ্তির গালে হাত দিয়ে মুখটা উচু করে বলে,,,
-উত্তর দিবে না?আমি আমার উত্তর শোনতে চাই।আমি যদিও জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো।তবুও আজ,এখন তোমার থেকে শোনতে চাই।অপূর্বের কথা শোনে সুপ্তির চোখ দুটি জলজল করতে থাকে।বৃষ্টির পানিতে দুজনে ভিজে একাকার হয়ে গেছে।অপূর্ব সুপ্তির এতোটা কাছে যে,অপূর্বের মুখ বেয়ে পানি সুপ্তির মুখের উপর পড়ছে।
-ভয় পেয়ো না।আমাদের ভালোবাসা সত্যি হলে আমরা সব বাঁধা অতিক্রম করবো।আমাদের এক হওয়া কেউ আটকাতে পারবে না।শুধু তুমি আমার উপর একটু ভরসা রাখো।আমাকে একটু ভালোবাসা দিও।দেখো,আমি সব কিছু ঠিক করে দিবো।
এবার সুপ্তির চোখে পানি চলে আসে।সে অপূর্বকে আবার জড়িয়ে ধরে।অপূর্বও সুপ্তিকে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে বলে,,,,,
-একবার বলো না,ভালোবাসো।কতদিন ধরে অপেক্ষায় আছি তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শোনবো বলে।প্লীজ,আর অপেক্ষা করিও না।
-ভালোবাসি,খুব ভালোবাসি।বলে সুপ্তি অপূর্বকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।মনে হচ্ছে সুপ্তি অপূর্বের বুকটা ফাঁক করে তার ভেতরে ডুকে যাবে।
-আমিও ভালোবাসি।অনেক অনেক ভালোবাসি।দুজন যেন দুজনকে ছাড়তেই চাইছে না।দুজনেই তাদের অবস্থান ভুলে ভালোবাসায় বিলিন হয়ে যায়।কিছুক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজার কারনে সুপ্তির শরীরও কাঁপতে থাকে।অপূর্ব সেটা ফিল করতে ফেরে বলে,,,
-তুমিতো অল রেডি কাঁপতে শুরু করে দিয়েছো।যাও,এখন বাসায় গিয়ে চেঞ্জ করো।আমিও বাসায় গিয়ে চেঞ্জ করে তোমাকে কল করবো।আর এখানে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক নয়।কখন কে দেখে ফেলে।অপূর্বের কথায় সুপ্তি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে।দুজন দুজনের বাসায় চলে আসে।সুপ্তি বাসায় ডুকে তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে ফেলে।অপূর্বকে এমন অবস্থায় দেখে অপূর্বের মা নির্বাক হয়ে যায়।কিছু জিজ্ঞাসা করার মতো ভাষা খোঁজে পাচ্ছেন না।কপালে ব্যান্ডেজ, হাতেও ব্যান্ডেজ করা।ভিজে শরীর কুচকে গেছে।তিনি অপূর্বের হাত জড়িয়ে ধরে বলেন,,,
-কি হয়েছে তোর?মাথায় ব্যান্ডেজ কেন??
অপূর্বের মা যেন অস্থির হয়ে উঠেন।অপূর্ব তার মাকে বলে,,,,
-কিছু হয়নি।সামান্য একটু ছোট্ লেগেছে।টেনশন করো না ঠিক হয়ে যাবে।
-কিছু হয়নি মানে কি?মাথায়,হাতে কি এমনি এমনি ব্যান্ডেজ করা??তিনি অপূর্বের ক্ষত জায়গায় হাত দিতে গিয়ে শরীরের তাপমাত্রা বুঝতে পারেন।এতে যেন তিনি আরো বেশি উত্তেজিত হয়ে উঠেন।অপূর্বের মায়ের কথা শোনে তিশা আর অপূর্বের বাবাও চলে আসে।অপূর্বকে এভাবে দেখে তারাও হতবাক হয়।সবাই মিলে অপূর্বকে পাহাড় সমান প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়।তিশা দৌঁড়ে এসে বলে,,,
-ভাইয়া,তোর কি হয়েছে?ব্যান্ডেজ কেন??
-তেমন কিছু হয়নি।রাস্তায় একটা গাড়ির সাথে হাল্কা ধাক্কা লেগে….অপূর্বের কথা শেষ হওয়ার আগেই তার বাবা বলে উঠে,,,
-এতদিন জানতাম তুমি একটা অপদার্থ। এখন জানলাম কেয়ারলেসও।রাস্তায় কিভাবে চলতে হবে এটাও এখনো শিখো নি?এতকিছুর পর বৃষ্টিতেও ভিজলে।কমন সেন্সটুকু নেই তোমার মধ্যে?।তোমার জীবনটা কেমনে যাবে আল্লাহ জানেন।যা হোক,ডাক্তার দেখিয়েছো??অপূর্ব মাথা নিচু করে বলে,,,,
-হু,
-যাক,ভালো করেছো।এবার গিয়ে ভিজা কাপড় চেজ্ঞ করো।নয়তো দেখা যাবে বড় কোনো রোগ বাঁধিয়ে ফেলেছো এর মধ্যে।বাবার কথা শোনে অপূর্ব মাথা নিচু করেই নিজের রুমে চলে আসে।অপূর্বের মা বলে,,,,
-তুমি সব সময় আমার ছেলেটাকে কথা শোনাও কেন?দেখছো ছেলেটা একটা আঘাত পেয়েছে তাও তুমি কথা না শুনিয়ে ছাড়বে না।
-তোমার ছেলে কাণ্ড বাধায় নি কখন আমাকে কাইন্ডলি একটু বলবে??সব সময় কিছু না কিছু গোলমাল করবেই।এই ছেলে জীবনেও আর ভালো হবে না।যতদিন আমরা আছি ততদিন আমাদের শান্তিতে থাকতে দিবে না।কথা গুলো বলে অপূর্বের বাবা নিজের রুমে চলে যায়।মাও অপূর্বের জন্য খাবার রেডি করতে চলে আসে।অপূর্ব রুমে এসে সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে মা খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অপূর্বের মা অপূর্বকে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়।অপূর্বও লক্ষ্মী ছেলের মতো খেয়ে নেয়।খাওয়া শেষ করে অপূর্বের মা চলে যায়।অপূর্ব ওষুধ খেয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে সুপ্তির নাম্বারে কল করে।দুবার রিং হওয়ার পর সুপ্তি কলটা রিসিভ করে।
চলবে———
#মায়াবিনী
সুরমা
পর্ব : ১০
অপূর্ব যে অসুস্থ এটা সে প্রায় ভুলেই গেছে।অপূর্বের মাথায় শুধু ঘুরছে কখন সুপ্তির সাথে একটু কথা বলতে পারবে।অপূর্ব বুঝতে পারছে না,এতকিছুর পর কখন যে সে সুপ্তিকে এতটা ভালোবেসে ফেললো।এখনতো সারা ভালো লাগার জগৎ জুড়েই সুপ্তির বসবাস।সুপ্তি কল রিসিভ করার সাথে সাথেই অপূর্ব বলে,,,,
-কি করছো?
-বসে আছি।আপনি কি করছেন?খেয়েছেন??
-হু,
-ওষুধ খেয়েছেন?
-হু,
-তাহলে এখন ঘুমান।ঘুমালে দেখবেন কাল শরীর একদম ফুরফুরে হয়ে যাবে।।জ্বরটাও চলে যাবে।
-এখন আমার ঘুম আসবে না।আমি তোমার সাথে কথা বলবো।
-কথা তো পরেও বলা যাবে।আগে আপনি সুস্থ হোন তারপর যত খুশি কথা হবে।
-সিউর তো?
-হু,
-ঠিক আছে তাহলে ঘুমাই।আর একটা কথা,,
-হু,বলুন
-এতো কষ্ট করে তোমার ভালোবাসা অর্জন করলাম।এখনও কি আপনি আপনি করবে??আমরা কি তুমিতে আসতে পারি না???অপূর্বের কথায় সুপ্তি মুচকি হেসে বলে,,,
-বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে???অপূর্বও হেসে বলে,,,,
-হু,বুঝতে পারছি,বিড়ালের গলায় ঘন্টাটা আমাকেই বাঁধতে হবে।সমস্যা নেই,আমি আমার অধিকার ঠিক ঠিক সময় আদায় করে নিবো।তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।হুম,কাল কলেজের জন্য রেডি হয়ে থেকো।,আমি অফিস যাওয়ার সময় তোমাকে নিয়ে যাবো।
-সেকি,আপনিতো অসুস্থ।কয়েকদিন অফিস না গেলে হয় না??
-না ম্যাডাম,আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। দুদিন ধরে তোমার জন্য অফিসে যাই না।এখন আবার কয়েকদিন না গেলে তো সমস্যা হবে।
-কেন?আমি কি করলাম?আমি কি আপনাকে অফিস যেতে মানা করেছি??
-মানা করো নি।কিন্তু মনটা চুরি করে নিজের কাছে নিয়ে বসে আছো।দেহটা অফিসে গেলেও তো কোনো কাজ করতে পারতো না।তাই অফিসে যাই নি।
———————
-কি হলো?কথা বলছো না যে??
-আমার খুব ভয় করছে।
-কেন?
-আমাদের রিলেশনশিপটা যদি আমার পরিবার মেনে না নেয়?
-ভয় পেয়ো না।আমি আছি তো।সব ম্যানেজ করে নিবো।একবার যেহেতু হাত ধরেছি,সারা জীবনেও আর সেই হাত ছাড়বো না।আমাদের ভালোবাসার কাছে তাদের হার মানতেই হবে।আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাদের হতাশ করবেন না।
-তাই যেন হয়।এবার আপনি ঘুমান।কাল সকালে কথা হবে।
-তাহলে একটা চুমু দাও।ঘুমিয়ে যাই।অপূর্বের কথা শোনে সুপ্তি লাফ মেরে শোয়া থেকে উঠে বসে।তার মাথা ঘুরতে শুরু করে।এসব কি বলছে অপূর্ব।চুমু দিবে মানে?অপূর্বের কি মাথা টাথা গেছে।সুপ্তির শরীর ঘামতে শুরু করে।সুপ্তি থুতলিয়ে বলে,,,,
-চু,মু,,,,,দি,বো,,,,,,মা,নে???
-চুমু দিবে মানে তুমি বুঝো না??আর এই কথাটাতে এত নার্ভাস হওয়ার কি আছে??
-না মা,নে,,,,
-থাক,চুমু দিতে হবে না।আমি দিচ্ছি বলে অপূর্ব মোবাইলটা মুখের কাছে এনে কয়েকটা চুমু দেয়।সুপ্তি চুমুর শব্দ শোনে যেন স্থির হয়ে যায়।তার হার্টবিট দ্রুত চলতে শুরু করে।সারা শরীর যেন ফ্রিজ্ড হয়ে যায়।এর আগে সে কখনও কোনো ছেলের সাথে কথা বলে নি।এই ফিলিংসটা তার জীবনে প্রথম।যদিও সে অনেকটা থমকে যায় তবুও মনের মধ্যে জানি একটা ভালোলাগা কাজ করে।সুপ্তিকে চুপ থাকতে দেখে অপূর্ব বলে,,,
-ঠিক আছে।তুমিও ঘুমাও।গুড নাইট।
-গুড নাইট।অপূর্বের খুব আনন্দ লাগছে।মনে হচ্ছে সে জীবনের সেরা গিফটা পেয়েছে।ভালোবাসা শুরু হওয়ার সাথে সাথে স্বর্গের সুখ ফিল করছে অপূর্ব।তার কাছে সব কিছু আলাদা একটা জগৎ এর মতো লাগছে।ইচ্ছে করছে দৌঁড়ে সুপ্তির কাছে চলে যেতে।কিন্তু মাথাটা অনেকটা ভারী ভারী লাগছে।তাই যেতে পারছে না।নয়তে কার সাধ্য ছিল এখন অপূর্বকে আটকে রাখবে।
সুপ্তিকে নিয়ে অপূর্ব কল্পনার জগতে চলে যায়।খুব সকালে অপূর্বের ঘুম ভেঙ্গে যায়।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ভোর ৪.৪৫ বাজে।অপূর্ব মোবাইটা হাতে নিয়ে সুপ্তিকে কল করে।কল হয়েই যাচ্ছে।কিন্তু সুপ্তি রিসিভ করছে না।অপূর্ব বিছানায় শোয়ে থেকে সুপ্তিকে অনেক কল করার পরও যখন সুপ্তি কল রিসিভ করে নি তখন অপূর্ব বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাসা থেকে বের হয়।অপূর্ব সুপ্তিকে কল করতে করতে এসে সুপ্তিদের বাসার সামনে দাঁড়ায়।প্রায় ৩০ মিনিট ধরে অপূর্ব বাসার সামনে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে।ঐ দিকে সুপ্তি বেঘোর ঘুমে তলিয়ে আছে।তার কোনে খবরেই নেই।সুপ্তির কথা ভাবতে এখন অপূর্বের রাগ লাগছে।ইচ্ছে করে মেয়েটাকে আছাড় মেরে নিচে ফেলে দিতে।অপূর্ব রাগে পাইচারি করতে থাকে আর সুপ্তিকে কল করতে থাকে।হঠাৎ ফোনের রিংটোনের শব্দে সুপ্তির ঘুম ভেঙ্গে যায়।সে চোখ বন্ধ করেই কলটা রিসিভ করে।ফোনটা কানের কাছে নিয়ে বলে,,,,
-হ্যালো কে??
-তুমি এতো ঘুম পারো কেন হুম?এক্ষণি ব্যালকনিতে আসো। অপূর্ব এতোটা জোরে বলে যে সুপ্তি লাফ দিয়ে উঠে বসে।মোবাইলটা সামনে এনে দেখে অপূর্বের কল।সুপ্তি আবার মোবাইলটা কানের কাছে নিয়ে বলে,,,,,,
-আপনি?এতো সকালে কল করলেন কেন???
-তোমাকে ব্যালকনিতে আসতে বলছি না???
-এখন?কেন?এখন আমি ঘুমোবো।আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।আমি এতো সকালে কোনোদিন ঘুম থেকে উঠি নি।
-উঠো নি তো কি হয়েছে?এখন থেকে উঠবে।এবার কথা বন্ধ করে ব্যালকনিতে আসো।আমি তোমাকে দেখবো।
-কলেজ যাওয়ার সময়তো দেখা হবেই।এখন বরং আপনি বাসায় গিয়ে ঘুমান।আমিও ঘুমাই। সুপ্তির কথা শোনে অপূর্বের রাগ লাগছে।সেই কোন সকাল থেকে এসে দাঁড়িয়ে আছে আর এখন তার কাছে ঘুমটা বড় হয়ে গেলো।অপূর্ব নিজেকে শান্ত করে বলে,,,
-ঠিক আছে।তোমাকে আসতে হবে না।তুমি ঘুমাও।আমি উপরে আসছি।সুপ্তি ঘুমের ঘোরে বলে
-হু,।সুপ্তি হঠাৎ খেয়াল আসতেই “না” বলে এক চিৎকার দিয়ে উঠে বসে।মোবাইলটা কানে নিয়ে বলে,,,
-আপনাকে আসতে হবে না।আমি আসছি।সুপ্তি বিছানা থেকে উঠে একটা ওড়না নিয়ে ব্যালকনিতে চলে আসে।সুপ্তির চোখে এখনো একরাজ্যের ঘুম জমা হয়ে আছে।অপূর্ব নিচে দাঁড়িয়ে আছে।সুপ্তিকে দেখে অপূর্ব হা হয়ে যায়।একটা প্লাজু আর একটা সাদা লেডিস টিশার্ট পরা।চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে।কাজল কালো চোখ দুটি ঘুমের মধ্যে ডুবে আছে।এমন ভাবে সুপ্তিকে দেখতে ভীষণ মায়াবী লাগছে।অপূর্ব সুপ্তিকে ইশারায় বলে ফোনটা কানে নিতে।সুপ্তি ফোনটা কানের কাছে নেয়।অপূর্ব বলে,,,,
-মাশআল্লাহ,এ তোমার কি রূপ?পাগল হয়ে গেলাম।ঘুম থেকে উঠার পর কারো ফেইস এতোটা মায়াবী লাগতে পারে আমার আগে জানা ছিল না।উম্মাাাাাাাাাহ,,,,আই লাভ ইউ।আজ আবার নতুন করে তোমার প্রেমে পড়লাম।
-হু,আমার ঘুমের ১২টা বাজিয়ে আপনার প্রেম উতলে পড়ছে।আমি জীবনেও এতো সকালে সময় ঘুম থেকে উঠি নি।কলেজ টাইমের আগে উঠি।
-আচ্ছা ঠিক আছে সরি।এখন গিয়ে ঘুমাও।তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল।তাই চলে আসলাম।আর এটা এখন থেকে অভ্যাস করে নাও,আমি যখন তখন তোমার ঘুমের ১২টা বাজাতে চলে আসবো।
-হু,এই জন্য এতদিন প্রেম করি নি।সুপ্তির কথা শোনে অপূর্ব হো হো করে হেসে দেয়।তারপর বলে,,,,
-ঠিক আছে।এখন যাও।অপূর্ব কলটা কেটে দিলে সুপ্তি নিজের রুমে এসে আবার শোয়ে পড়ে।অপূর্বও নিজের বাসায় চলে আসে।আজ অপূর্বকে খুব উজ্জল লাগছে।ভীষণ খুশি।রুমে প্রবেশ করতেই অপূর্ব তার বাবার সামনা সামনি হয়।অপূর্ব হেসে হেসে রুমে প্রবেশ করছিল। তার বাবাকে দেখার সাথে সাথে সে মুখটা মলিন করে ফেলে।তার বাবাকে এড়িয়ে নিজের রুমে ডুকতে যাবে তখনেই তার বাবা বলে,,,,
-সকাল বেলায় মুড এতো ফুরফুরে কেন?লটারি পেয়েছো নাকি?অপূর্ব থমকে দাঁড়ায়।তার বাবা জানি কেমন।সে কিছু একটা করলে তিনি কেমনে টের পেয়ে যান।আল্লাহ,সব বাবা কি গোয়েন্দা নাকি।অপূর্ব আমতা আমতা করে বলে,,,,
-ই,য়ে না মা,নে।কি,ছু না তো
-থাক আর বলতে হবে না।আমি বুঝতে পারছি।যে ছেলেকে এতো বকা দেওয়ার পরও কোনোদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নি।আর সেই ছেলে কিনা এখন প্রতিদিন আমাদের ঘুমে রেখে বাইরে বের হয়ে যায়।এটা তো আর এমনি এমনি হতে পারে না।নিশ্চয়ই কোনো ঝামেলা তৈরি করছো।এবার যদি সত্যি তুমি কোনো ঝামেলা বাঁধাও,মনে রেখো বাসায় তোমার জায়গা হবে না।অপূর্ব তার বাবার কথা শোনে মনটা খারাপ হয়ে যায়।সে বলে,,,
-আমি কি সব সময় ঝামেলা তৈরি করি?আমি যাই করি তাতেই তুমি ঝামেলা বলো।অপূর্ব রেগে নিজের রুমে চলে আসে।এতক্ষণ বিন্দাস লাইভ লিভ করছিল সে।বাবার কথা শোনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।কিছুক্ষণ বসে থেকে অপূ্র্ব ওয়াশরুমে ডুকে যায়।অপূর্ব আজ একটু ফর্মাল ড্রেস পরে।সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট, গলায় টাই।শার্ট টা ইন করে।গাল ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি।চুল গুলো সুন্দর করে স্টাইল করা।চোখে কালো সানগ্লাস। হাতে ওয়াচ।আর একদম ফিট ড্রেসে অপূর্বকে অসম্ভব হেন্ডসাম লাগছে।অপূর্ব রেডি হয়ে খেতে চলে আসে।অপূর্বকে দেখে তিশা বলে,,,,
-ভাইয়া,আজ তোকে কি হেন্ডসাম লাগছে রে।যে মেয়ে দেখবে সিউর তোর প্রেমে পড়বে।অপূর্ব তিশার পাশের চেয়ারটায় বসে ফিসফিস করে বলে,,,,,
-আমি এখন তোর ভাবীর সাথেই দেখা করতে যাচ্ছি।
-সত্যি??
-হু,
-তা কবে খোঁজে পেলি আমার মিষ্টি ভাবীটাকে?আমাকে তো বললি না আগে।
-বেশিদিন আগে না।কয়দিন আগে পেলাম।সময় পেলে তোর সাথে মিট করাবো।তোকে বলার সুযোগ পেলাম কোথায়।আগে দুজনে জড়িয়ে প্রেমটা করি।পরে তোকে বলবো।
-সত্যি তো?
-হু,সত্যি।
-ভাইয়া,এখন তবে পিক দেখা।
-পিক দেখলে মজা চলে যাবে।সামনা সামনি দেখলে সারপ্রাইজ হবি।
-ঠিক আছে।দু ভাই বোনকে ফিস ফিস করতে দেখে তার মা বলে,,,,
-কিরে,তোরা কি ফিসফিস করছিস??
-কিছু না আম্মু।
-তাহলে খাচ্ছিস না কেন?
-খাচ্ছি তো।অপূর্ব, তিশা আর কোনো কথা না বলে খেতে শুরু করে।অপূর্ব খাওয়া শেষ করে বাসা থেকে বের হয়ে আসে।বাসার সামনে থেকে একটা রিকশা নিয়ে সুপ্তিদের বাসা পার হয়ে একটু দূরে সুপ্তির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
চলবে——–