মায়াবিনী পর্ব-৭+৮

0
1939

#মায়াবিনী

সুরমা
পর্ব : ৭+৮

রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফেইসবুকিং করতে থাকে অপূর্ব।হঠাৎ খেয়াল করে দেখে সুপ্তি অনলাইনে আছে।সাথে সাথেই অপূর্ব সুপ্তিকে একটা টেক্সট পাঠায়।
-হাই,কি করো?কিন্তু সুপ্তি মেসেজটা সিন করে নি।অপূর্ব সুপ্তির কাছ থেকে উত্তর আশা করছিল।কিন্তু অনেক্ষণ অপেক্ষা করার পরও কোনো উত্তর আসে নি।কিন্তু সুপ্তি ঠিকেই অনলাইছে আছে কিন্তু অপূর্বের সাথে কথা বলছে না।বিষয়টা অপূর্বকে অনেক কষ্ট দিলো।অপূর্ব মোবাইলটা হাতে নিয়ে সুপ্তিকে কল করলো।কিন্তু সুপ্তি রিসিভ করলো না।সুপ্তির জন্য অপেক্ষা করতে করতে একসময় অপূর্ব এভাবেই ঘুমিয়ে যায়।খুব সকালেই অপূর্বের ঘুম ভেঙ্গে যায়।সবেমাত্র সূর্যের কিছুটা আলো ছড়িয়েছে।তবে চারদিক যথেষ্ট আবছা।অপূর্বের কেমন যেন লাগছিল।সামনে ল্যাপটপ অন।রাতে কখন ঘুমিয়ে গেছে সে বলতেই পারে নি।ল্যাপটপও অফ করে নি।অপূর্ব দেখে সারা রাত সে অন লাইন ছিল।ফেইসবুকে ঢুকতেই অপূর্ব দেখে সুপ্তি তাকে একটা টেক্সট পাঠিয়েছিল।অপূর্বের খুব ভালো লাগলো।খুশিতে গদগদ হয়ে সে টেক্সট টা সিন করলো।সাথে সাথে তার মুখের হাসি চলে গেলো।টেক্সট টা এমন ছিল,,,
“সকাল ৯.৩০ এ আমার বাসা থেকে একটু দূরে যে গ্যাসপাম্পটা কাছে। সেখানে একটু আসবেন।আমি আপনার টাকা নিয়ে অপেক্ষা করবো”।
অপূর্ব সুপ্তির কাছ থেকে অন্য কিছু আশা করেছিল।কাল রাতে তো সে টেক্সট করে বলেছিল,সে সুপ্তিকে খুব ভালোবাসে।তাকে সে বিয়ে করতে চায়।সুপ্তিকে ছাড়া থাকার কথা চিন্তা করতে পারছে না অপূর্ব।কিন্তু সুপ্তি তার কথার কোনো প্রকার গুরত্ব দিচ্ছে না।অপূর্বের ইচ্ছে করছে এখন একটু কান্না করতে।কিন্তু ছেলে হয়ে জন্ম নিয়েছে।তাই সে প্রাণ খুলে কান্নাটাও করতে পারছে না।ছেলেদের তো কান্না করা পাপ।হয়তো তার চেয়েও বেশি কিছু।তাইতো মেয়েদের মতো কান্না করে বুকের কষ্ট ঝেরে ফেলতে পারে না।সেটা বুকের ভেতরে চাপা দিয়ে রাখতে হয় সবসময়।অপূর্ব ল্যাপটপটা অফ করে চার্জে লাগিয়ে দেয়।ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে একটা প্যান্ট আর একটা টিশার্ট পরে বাইরে বের হয়ে আসে।বাসার কেউ কেউ ঘুম থেকে উঠে নি।অপূর্ব মেইন দরজা বাইরে থেকে নক করে চলে আসে।রাস্তায় বেশি লোকজন নেই।দুএকজন বয়স্ক লোক হাঁটাহাঁটি করছে।অপূর্ব হাঁটতে হাঁটতে সুপ্তিদের বাসার সামনে এসে দাঁড়ায়।অপূর্বের চোখ যেন এখন এই ফ্ল্যাটের সেকেন্ড ফ্লোরেই আটকে থাকে।অন্য কোথাও যেতে চায় না।সারাক্ষণ শুধু সুপ্তিকে দেখতে ইচ্ছে করে।মন চায় ছায়ার মতো সুপ্তির সাথে মিশে থাকতে।কিন্তু এটা সে পারছে না।কি মায়াবিনী সে।কি মায়ার জালে বেঁধে ফেললো অপূর্বকে।কখনযে তাকে মন দিয়ে দিলো জানতে পারলো না অপূর্ব।কিন্তু এখন সে জানলো এই মায়াবিনী ছাড়া অন্য কিছু কল্পনা করাও তার পক্ষে আর সম্ভব নয়।অপূর্ব রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে সুপ্তিকে নিয়ে এক রাজ্যের কল্পনা এঁকে ফেলে নিজের মনে।কতো রকম ইচ্ছে বাসা বাঁধতে চাইছে এই ছোট্ট হৃদয়ে।শুধু মানুষটাকে পাশে পাওয়ার অপেক্ষায় এখন।সকাল থেকে একবারো সুপ্তি ব্যালকনিতে আসে নি।ব্যালকনির দরজাটাও খোলা হয়নি।অপূর্ব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৮.২২ বাজে।অপূর্ব আর দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের বাসায় চলে আসে।দরজা খুলে বাসায় ঢুকতেই দেখে তার বাবা নিউজ পেপার পড়ছে।তার মা রান্না ঘরে কাজ করছে।অপূর্ব তার বাবার কাছে গিয়ে বলে,,,,,
-গুড মর্নিং। তার বাবা খবরের কাগজটা মুখের সামনে থেকে সরিয়ে অপূর্বকে দেখে বলে,,,,
-গুড মর্নিং।বাহ!আমি খুশি হলাম।তুমি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠছো।তা সকাল বেলায় কোথায় গিয়েছিলে??
-বাহিরে হাঁটছিলাম।
-ভালো।যাক,মনে হচ্ছে তোমার মাথায় এবার কিছু সুবুদ্ধি আসছে।আমার খুব ভালো লাগলো এটা ভাবতে।অপূর্বের মনটা তেমন ভালো না।তবে বাসায় কারো সামনে সেটা প্রকাশ করা যাবে না।অপূর্ব তার বাবাকে বললো,,,
-আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি।তুমি বসো।
-ঠিক আছে।যাও।অপূর্ব এসে ফ্রেশ হয়ে একেবারে অফিসের জন্য রেডি হয়ে যায়।আজ বাসা থেকে একটু আগে বের হবে।সুপ্তির সাথে দেখা করতে হবে।এটা মনে হতেই আবার তার অনেকটা ভালো লাগলো।অপূর্ব রেডি হয়ে ৯টার আগেই খাবার টেবিলে চলে আসে।খাবার খেয়ে বের হয়ে আসে।সুপ্তির বলা জায়গায় অপূর্ব অপেক্ষা করতে থাকে।বারবার ঘড়ি দেখছে,এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করছে।রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখছে সুপ্তি আসে কিনা।অপূর্বের এবার বিরক্ত লাগতে লাগলো।এতো সময় অপেক্ষার কোনো মানে হয়।সময় তো যেতেই চাইছে না।হঠাৎ এক সময় অপূর্ব রাস্তায় তাকিয়ে দেখে সুপ্তি আসছে।সাথে সাথে অপূর্বের খুব ভালো লাগলো।সুপ্তিকে দেখার পর অপূর্বের ইচ্ছে করছিল দৌঁড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরতে।কিন্তু এটা রাস্তা।লোকজন দেখলে বাজে কথা বলবে।এমনকি বিষয়টা তাদের পরিবারেও জানাজানি হতে পারে।এতে বিষয়টা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে।অপূর্ব রাজ্য জয় করার মতো একটা হাসি দিলো।সুপ্তি অপূর্বের কাছে যাওয়ার আগেই অপূর্ব সুপ্তির কাছে চলে আসে।অপূর্ব বলে,,,,,
-অপেক্ষা খুব কষ্টদায়ক বিষয়।সময় যেন থমকে দাঁড়ায়।সেই ৯টা থেকে তোমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি।তুমিও আসছো না সময়ও যাচ্ছে না।দুজনেই এতক্ষণ আমাকে নিয়ে খেলা করেছো।
-আমি কি আপনাকে ৯টায় এসে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিলাম?আর আপনার টাকাটার জন্য যে এতো তাড়া ছিল তা তো আগে আমি বুঝতে পারি নি।আপনি আমাকে একটা টেক্সট করে বলতেন আপনার টাকাটা আরো আগে দরকার।তাহলে আমি সকালেই দিয়ে যেতাম।আর আপনার টাকাটা এতো দেরি করে ফেরত দেওয়ার জন্য আম সরি।সুপ্তির কথা শোনে অপূর্ব অবাক হয়ে বলে,,,,,,,
-আমিতো টাকার জন্য অপেক্ষা করি নি।
-তাহলে কেন অপেক্ষা করছেন?কথাই তো হয়েছিল সকাল ৯.৩০টায় টাকা দিতে আসবো।সুপ্তির পার্স থেকে টাকাগুলো বের করে অপূর্বের সামনে ধরে বলে,,,
-এই নিন আপনার টাকা।আর এতদিন টাকাটা না দিতে পারার জন্য আবার সরি।আশা করি আজকের পর থেকে আমাকে আর ডিস্টার্ব করবেন না।সুপ্তি এক টানা কথা গুলো বলতে থাকে।অপূর্ব যেন মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারছে না।কিন্তু বুকের ভেতরে ব্যথা ফিল করছিল সে।ব্যথাটা দ্রুত এত বেড়ে যাচ্ছিল যে অপূর্বের মনে হচ্ছিল এক্ষণি তার হার্ট ব্লক হয়ে যাবে।অপূর্ব টাকা গুলো সহ সুপ্তির হাত চেপে ধরে বলে,,,,,
-সুপ্তি,বিশ্বাস করো,আমার টাকা চাই না।আমি তোমাকে চাই।খুব ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে।তুমি এমন করোনা প্লীজ।তাহলে আমার বেঁচে থাকা কষ্টকর হবে।আমি সত্যি বলছি,এতদিন আমি তোমার পেছনে টাকার জন্য ঘুরি নি।তোমার সাথে একবার দেখার জন্য,তোমার সাথে কথা বলার জন্য তোমার পেছনে লেগে ছিলাম।অপূর্বের কথা শেষ হলে সুপ্তি হাত থেকে টাকা গুলো ছেড়ে দিতেই সেগুলো অপূর্বের হাতে চলে আসে।অপূর্ব বোকার মতো সুপ্তির দিকে তাকিয়ে থাকে।সুপ্তি আর কিছু না বলে কলেজের দিকে হাঁটতে শুরু করে।অপূর্বও দৌঁড়ে সুপ্তির সামনে এসে সুপ্তির দিকে ফিরে উল্টোভাবে হাঁটতে থাকে।আর বলতে থাকে,,,,,
-তুমি কেন আমাকে বুঝতে চাও না?আমার কি অপরাধ করেছি বলো?আমার কি কম আছে??আমার মধ্যে কোন ত্রুটির জন্য তুমি আমাকে এতটা এভয়েট করছো?তুমি আমাকে বলো।তোমার জন্য আমি নিজেকে বদলে ফেলবো।আমার ত্রুটিটা ঠিক করার চেষ্টা করবো।ট্রাস্ট মি,আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো নিজেকে তোমার মনের মত করে তৈরি করতে।প্লীজ,তাও তুমি নিজেকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে রেখো না।
-দেখুন,আমার পক্ষে আপনাকে ভালোবাসা সম্ভব না।এটা আগেও বলেছি।এখনো বলছি।প্লীজ,দয়া করে আমার পিছু নিবেন না।আপনাকে হাত জোর করে বলছি।
-কেন ভালোবাসা সম্ভব নয়??কারন বলো।তুমি কি অন্য কাউকে ভালোবাসো??বাসলে বলো আমি তোমার জীবন থেকে দূরে সরে যাবো।কিন্তু মিথ্যা কথা বলো না।আমার জানা মতে তোমার কারো সাথে কোনো রিলেশন নেই।
-আমি আপনাকে কোনো কিছু বলতে চাই না।শুধু দয়া করে আমাকে আপনার থেকে মুক্তি দেন।আমি আপনাকে ভালোবাসি না আর কখনো বাসতেও পারবো না।
-সত্যি তুমি আমাকে ভালোবাসতে পারবে না??
-না
-তোমাকে না পেলে আমার বাঁচা মরা সমান।তুমি না থাকলে আমার বেঁচে থেকে কি হবে??বিশ্বাস করো,তোমাকে ছাড়া সত্যি আমি মরে যাবো।কথাগুলো বলতে বলতে অপূর্ব সুপ্তির থেকে অনেকটা দূরে চলে আসে।অপূর্ব সুপ্তির দিকে তাকিয়ে পিছনের দিকে যেতে থাকে।সুপ্তি খেয়াল করে দেখে পিছন থেকে একটা গাড়ি ফুল স্পিডে এগিয়ে আসছে।সেটার প্রতি অপূর্বের কোনো নজর নেই।সে সেইম ভাবে কথা বলছে আর উল্টোভাবে গাড়িটার দিকে যাচ্ছে।সুপ্তি হঠাৎ করে জোরে চিৎকার দিয়ে বলে,,,,,
-প্লীজ,আর সামনে যাবেন না।গাড়ি আসছে থামুন। সুপ্তি দৌঁড়ে অপূর্বের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।সুপ্তিকে দৌঁড়াতে দেখে অপূর্ব দাঁড়িয়ে পেছনে থাকাতেই দেখে একটা বড় ট্রাক্টর খুব স্পিড নিয়ে এগিয়ে আসছে।অপূর্ব সরে দাঁড়াতে গিয়েও গাড়ির সাথে হাল্কা ধাক্কা লেগে ছিটকে গিয়ে অনেকটা দূরে পড়ে।এই দৃশ্য দেখার সাথে সাথে সুপ্তি এক চিৎকার দিয়ে পাখির মতো উড়ে যায় অপূর্বের কাছে।অপূর্ব মাটিতে পড়ে ছিল।সুপ্তি গিয়ে অপূর্বের মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে বলে,,,,
-কি হয়েছে আপনার?কোনো কথা বলছেন না কেন?কথা বলুন প্লীজ।আমার খুব ভয় করছে।প্লীজ কথা বলুন।সুপ্তি খেয়াল করে দেখে অপূর্বের শরীরে কিছু জায়গা কেটে গেছে।হাতের থেকে চামড়া সরে গেছে।মাথা থেকে রক্ত পড়ছে।অপূর্বের দেহটা মাটির সাথে লুটিয়ে আছে।সুপ্তি কান্না করতে শুরু করে অপূর্বকে এভাবে দেখে।

চলবে——–

#মায়াবিনী

সুরমা
পর্ব : ৮

অল্প সময়ের মধ্যেই লোকজন তাদের ঘিরে ফেলে।অপূর্বকে এভাবে পড়ে থাকতে সুপ্তি দেখতে পারছে না।কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ে রয়েছে।একটুকুও নড়াছড়া করছে না।অপূর্বের এমন অবস্থা দেখে সুপ্তির চোখের পানি দিয়ে বন্যা শুরু হয়েছে।এক একটা পানির ফোঁটা অপূর্বের মুখে টপটপ করে পড়ছিল।চারপাশে লোকজনের কথার ঢেউ।এদিকে সুপ্তির কান্না।অপূর্বে কান দিয়ে প্রবেশ করে মস্তিষ্কে ধাক্কা লাগছিল।কিছুক্ষণের মধ্যেই অপূর্ব চোখ খুলে থাকায়।তাকিয়ে দেখে সুপ্তি কান্না করছে।অপূর্বের ভীষণ খারাপ লাগলো সুপ্তিকে কান্না করতে দেখে।অপূর্বকে চোখ খুলতে দেখে সুপ্তির কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো।সে কান্নামাখা কণ্ঠে বললো,,,,
-আপনার কিছু হয়নিতো?আপনি ঠিক আছেন?এভাবে কেউ রাস্তায় হাঁটে?এখন যদি বড় কিছু হয়ে যেতো?আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।সুপ্তির কথা শোনে অপূর্ব মৃদু হেসে বলে,,,
-আমার কিছু হয় নি।আমি ঠিক আছি।আর বড় কিছু হলে কি হতো?আমি মরে যেতাম।তোমার তো ভালোই হতো।কেউ আর তোমাকে ডিস্টার্ব করতো না।
-একদম বাজে কথা বলবেন না।গাড়ির নিচে পড়ে মরতে হয় কেন? আর একটুর জন্য বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে নি।কথা গুলো বলে সুপ্তি আবার কান্না করতে থাকে।
– তুমি এভাবে কাঁদছো কেন??তোমার কান্না দেখে মনে হচ্ছে আমি মরে গেছি তাই তুমি এত কান্না করছো।কান্না রেখে হাসো।আমি যেদিন সত্যি সত্যি মরে যাবো সেদিন যত খুশি কান্না করো।বেঁচে থাকতে আমি তোমার কান্না দেখতে পারবো না।অপূর্বের কথা শোনে সুপ্তি মাথা তুলে অপূর্বের দিকে তাকায়।কিন্তু সে কি বলবে বুঝতে পারলো না।সুপ্তি খেয়াল করে দেখে অপূর্বের মাথা থেকে রক্ত পড়ছে।সুপ্তি বলে,,,
-চলুন,আপনাকে হসপিটালে নিয়ে যাই।
-হাসপাতালে কেন?
-আপনার কপাল কেটে সেখান থেকে তো রক্ত পড়ছে।তাছাড়া হাতেরও কয়েক জায়গা কেটে গেছে।সেগুলো ব্যান্ডেজ করতে হবে।
-এসব কিছু হবে না।এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।
-বললেই হলো।চলুন ডাক্তার দেখাবেন।
-বলছি না কিছু হবে না।অযথা টেনশন করো নাতো।অপূর্ব না করার পরও সুপ্তি অপূর্বকে ব্যান্ডেজ করিয়ে দেয়।ব্যান্ডেজ করার পর অপূর্ব আর সুপ্তি পাশেই একটা পার্কের বেঞ্চে বসে থাকে।দুজন দু পাশে নিরবে বসে আছে।অপূর্ব নিরবতা ভেঙ্গে বলে,
-তুমি বলবে কেন আমাকে ভালোবাসা যায় না??আমার দোষ কোথায়?,অপরাধ কি?কেন আমাকে এতোটা অবহেলা করছো???
-আপনি জানেন না, আমার ফ্যামিলিতে লাভ মেরেইজ মেনে নেওয়া হয় না।আমি আপনার সাথে নিজেকে জড়ালে লাস্টে আপনিও কষ্ট পাবেন আমিও কষ্ট পাবো
-কেন জানতে পারি কি???সুপ্তি কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
-আমার বড় একজন আপু ছিল।আমি যখন দশম শ্রেণিতে পড়ি তখন আপু অনার্সে পড়তো।আপু সবেমাত্র ভার্সিটিতে পা দিয়েছিল।কিছুদিন ভার্সিটি যাওয়ার পর ভার্সিটিতে তুষার নামে এক ছেলের সাথে আপুর রিলেশন হয়।দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসতো।একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারতো না।আপু আমার কাছে সব কিছু শেয়ার করতো।এক বছর রিলেশন চলার পর হঠাৎ আব্বু আপুর বিয়ের জন্য ছেলে দেখে।আপুতো তুষার ভাইয়াকে ছাড়া অন্য কারো সাথে বিয়ের কথা কল্পনাও করতে পারতো না।আপু কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিল।আপু যখন আর সহ্য করতে পারছিল না তখন আব্বুকে সবটা বিষয় খুলে বলে।আব্বু আপুকে বলেছিল তুষার ভাইয়াকে যেন বাসায় নিয়ে আসে।আব্বু ছেলের সাথে কথা বলবে।সাথে তার পরিবারের লোকজনকেও নিয়ে আসতে বলেছিল।কিছুদিন পর আপু তুষার ভাইয়া আর তার বাবা মা সহ আমাদের বাসায় নিয়ে আসে।তুষার ভাইয়াকে দেখে আব্বুর পছন্দ হয়ে ছিল।তুষার ভাইয়ার পরিবারও আপুকে পছন্দ করেছিল।দুই পরিবার মিলে তাদের বিয়েও দিয়ে ছিল।কিন্তু বিয়ের কিছুদিন যাওয়ার পর তুষার ভাইয়া আপুকে অবহেলা করতে শুরু করে।নানা কারনে আপুর উপর অত্যাচার করতো।গায়ে পর্যন্ত হাত তুলতো।আপু ফোনে সব কিছু বলতো।বিয়ের ৬মাসের মাথায় একদিন খবর আসে আপু আগুনে পুড়ে মারা যায়।তারা বলেছিল এটা দুর্ঘটনা। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস হতো না।আমার পরিবারের সবাই ভেবে নিয়েছিল আপুকে প্ল্যান করে খুন করা হয়েছিল।আমার আব্বু এটা প্রমাণও করেছিল।আব্বু তুষার ভাইয়াকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছিল।তার পরে অনেক কষ্টে ঐ দিনটাকে আমার পরিবারের সবাই ভুলতে পারলো।আব্বুতো স্টোকও করেছিল সেই সময়।তার পর থেকে আর কোনো রিলেশনের বিয়ে আমাদের মধ্যে হয় নি।আম্মু মারা যাওয়ার পর আব্বু আর বিয়ে করে নি।আমরা তিন ভাইবোনকে নিজের বুকে আগলে রেখেছিল।আমাদের সব আবদার পূরণ করতো।না চাইতেই সব কিছু হাতের কাছে এনে রাখতো।আপুকে আব্বু খুব ভালোবাসতো।আপুর মৃত্যুর পর আব্বু মারাত্মক আঘাত পেয়েছিল।কিভাবে মেনে নিতো এটা? ভাইয়ারও এক মেয়ের সঙ্গে তিন বছর রিলেশন ছিল।কিন্তু সেই সময় আপুর ঘটনাটা সব কিছু উল্টাপাল্টা করে দেয়।ভাইয়ার বিয়েটাও হয় নি।এখন আমি রিলেশন করলে আপনার মনে হয় আমার পরিবার মেনে নিবে??
-কেন মেনে নিবে না??সবাই কি তুষার এর মতো??আমি তোমাকে ভালোবাসি।তোমাকে সারা জীবন হৃদয় মাঝে যত্নে রাখবো।চুল পরিমাণ কষ্টও পেতে দিবো না।
-এটা আমার পরিবারের কেউ বিশ্বাস করবে না।দেখুন,আমি চাইনা আমার কোনো ভুলের জন্য আমার পরিবারের উপর আবার কোনো দুর্যোগ নেমে আসুক।আমি কিছুতেই আব্বু,ভাইয়াকে কষ্ট দিতে পারবো না।তাছাড়া আপনার সাথে কয়েকদিনের জন্য নিজেকে জড়িয়ে কষ্টের পাহাড় তৈরি করতে চাই না।আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
-তুমি চিন্তা করো না।আমি সব ম্যানেজ করবো।আমাদের ভালোবাসার জোর থাকলে সব কিছু আমরা জয় করবো ইনশা আল্লাহ।তুমি শুধু আমার পাশে থেকো প্লীজ।
-আপনাকে এতক্ষণ যা বললাম আপনি কিছুই শোনেন নি?প্লীজ,আপনি আমাকে মুক্তি দিন।দয়া করে আর আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না।কথাটা বলেই সুপ্তি উঠে এক দৌঁড়ে পার্ক থেকে বের হয়ে আসে।অপূর্বও সুপ্তির পেছন পেছন পার্ক থেকে বের হয়ে যায়।সুপ্তি একটা রিকশা ডেকে বাসায় চলে আসে।পেছন থেকে অপূর্ব অনেক ডাকার পরও সুপ্তি একবারো পেছন ফিরে তাকায় নি।সে সোজা নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে কান্না করতে থাকে।সেও যে মনে মনে অপূর্বকে ভালোবেসে ফেলেছে।সে না সহ্য করতে পারছে অপূর্বকে কষ্ট পেতে দেখতে না পারছে সব কিছু মেনে নিতে।অপূর্বের কাছে থাকলে সে অনেক কষ্টে নিজেকে অপূর্বের থেকে দূরে রাখে।ইচ্ছে করে নিজেকে অপূর্বের বুকে বিলিয়ে দিতে।কিন্তু কি করে সে এটা করবে।তার আব্বু ভাইয়া যে কখনই এই রিলেশন মেনে নিবে না।সুপ্তি কান্না করে বুকে জমানো কষ্ট গুলো ঝেরে ফেলতে চাইছে।কিন্তু যতকান্না করছে ততই যেন কষ্ট বেড়ে দ্বিগুণ হচ্ছে।সুপ্তির মনের আকাশে মেঘ জমেছে।মুহূর্তেই পৃথিবীর আকাশ আঁধার হয়ে গেছে।সুপ্তির মোবাইটা বেজে উঠলে সুপ্তি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে অপূর্ব কল করছে।সুপ্তির যেন এবার কলিজাটা দুবাগ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। কলটা কেটে দিয়ে আরো কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।অপূর্ব একের পর এক এক কল করেই যাচ্ছে।কিন্তু সুপ্তি কিছুতেই রিসিভ করছে না দেখে একটা এসএমএস পাঠায়।এসএমএস টোন বাজার সাথে সাথে সুপ্তি এসএমএসটা সিন করে।অপূর্বের এসএমএস,,,,,,,,
-“তুমি যতক্ষণ না বলবে তুমি আমাকে ভালোবাসো ততক্ষণ আমি তোমার বাসার সামনে থেকে এক পাও নড়বো না।প্রয়োজনে এখানে পড়ে আজ আমার মৃত্যু হবে।আমি দেখতে চাই আমার ভালোবাসার থেকেও তোমাদের জেদ বড় কিনা।”

চলবে———

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে