মায়াবিনী পর্ব-৫+৬

0
2013

#মায়াবিনী

সুরমা
পর্ব : ৫+৬

সুপ্তি ওয়াশরুমে ঢুকে একটা থ্রি পিছ পরে বাইরে বের হয়ে আসে।এসে দেখে অপূর্ব তখনও নিচে বসে আছে।অপূর্বকে দেখে সুপ্তির রাগে সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে।ইচ্ছে করছে এই ছেলেটাকে একটা লাথি
মেরে নিচে ফেলে দিতে।বদমাইশ ছেলে।সুপ্তি রাগে অপূর্বের কলার চেপে ধরে অপূর্বকে টেনে তুলে।অপূর্ব বলে,
-আরে বাবা,কাউকে নিচে থেকে তুলতে হলে হাত ধরে টেনে তুলতে হয়।এভাবে কলার চেপে ধরে উঠায় নাকি।
-হনুমান,খবিশ,বাদর,তোর এতো বড় সাহস। তুই আমার বেড রুমে ডুকেছিস।আবার আমার বেডের উপর শোয়ে ছিলি।তোকে আস্ত গিলে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।লজ্জা করে না চোরের মতো অন্যের বেডরুমে ডুকতে??অপূর্ব সুপ্তির হাত কলার থেকে ছাড়িয়ে বলে,,,
-অন্যের বেড রুমে কোথায় ডুকলাম।আমিতো আমার বউয়ের বেডরুমে ডুকেছি।তুমি মনে হয় ভুলে গেছো।আমরা কিন্তু স্বামী স্ত্রী। এটা শপিং মলে তুমি নিজের মুখে স্বীকার করেছো।
-মগের মুল্লুক।বলেছিলাম বলেই কি সত্যি হয়ে গেছে।তোকে শায়েস্তা করার জন্য বলেছি।
-ছি ছি।মুখের কি ভাষা।স্বামীর সাথে এভাবে কেউ কথা বলে??স্বামীকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয় জানো না।কি তুই তুই করছো।স্বামীকে কেউ তুই করে বলে?একটু সুন্দর করে রস লাগিয়ে বলো।
-তুই বের হবি নাকি আমি তোর জন্য ঝাটা নিয়ে আসবো।
-ঝাটা লাগবে না।আমার টাকাটা দিয়ে দেও আমি চলে যাচ্ছি।বজ্জাতের হাড্ডি একটা।
-কিসের টাকা??
-তুমি দেখছি ভুলোমনা।তবে নিজেরটা খুব মনে রাখতে পারো।আজ শপিং এ যে আমার এতো গুলো টাকা মেরেছো ঐ টাকা গুলো দিয়ে দাও আমি চলে যাবো।
-মামার বাড়ির আবদার। বললেই পেয়ে যাবে।ঐ টাকা আর পাবে না।এবার যাও নিজের বাসায় ফিরে যাও।
-দিবে নাতো??
-না, দিবো না।
-সিউর??
-অফকোর্স সিউর।
-ঠিক আছে।তাহলে আমি যাচ্ছি না।বলেই অপূর্ব আবার সুপ্তির বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।সুপ্তি আবার রেগে বলে,,,,
-আমার বিছানায় শোবে না বললাম।
-টাকা দিয়ে দিলে তো চলে যাই।তাহলে আর শোয়ার প্রয়োজন হয় না।টাকা না দিলেতো আমি যাবো না।আর বসেও থাকতে পারছি না।তাই শোয়ে পড়লাম।
-আমি কিন্তু এবার চিৎকার করবো।আর আমার আব্বু,ভাইয়া আসলে কিন্তু খারাপ হবে।
-তুমি চিৎকার করলে আমিও চিৎকার করবো।
-তুমিও চিৎকার করবে মানে কি??
-আমিও চিৎকার করবো মানে আমিও চিৎকার করবো।তখন দুজনের চিৎকার শোনে তোমার ভাই,আব্বু চলে আসবে।আর তারা আসলে আমি বলবো আমরা দুজন স্বামী স্ত্রী।তাই আমি এখন থেকে তোমার সাথেই থাকবো।
-আপনার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।তাছাড়া আমরা তো স্বামী স্ত্রীও না।
-সেটা তো আর তোমার পরিবার জানে না।আর ঐ শপিং এর লোকজনও জানে না।
-মানে কি??
-মানে হলো তুমি যদি এই মুহুর্তে আমার টাকা টা না দেও তাহলে তোমার পরিবারের সবাইকে বলবো তুমি লুকিয়ে আমাকে বিয়ে করেছো।
-আমাকে ভয় দেখাবেন না।আমি আপনাকে একটুকুও ভয় পাই না।আর এসব আজগুবি কথা আমার পরিবার বিশ্বাস করবে না।এসব শোনলে আমার আব্বু বলবে আপনাকে বিয়ের প্রমাণ দিতে।তখন কি করবেন?
-শপিং মল থেকে লোকগুলোকে ডেকে নিয়ে আসবো।ওরা এসে সাক্ষী দিবে।ওদের সামনে তুমি নিজেই বলেছিলে আমি তোমার স্বামী। এবার ভেবে দেখো তুমি কি করবে।আমার টাকা ফেরত দিবে নাকি আমি তোমার বাসার সবাই ডাকবো।অপূর্বের কথা শোনে সুপ্তির মুখটা মলিন হয়ে যায়।বেচারী বুঝতে পারছে এবার পরেছে মাইনকার চিপায়।এবার যদি অপূর্ব সত্যি সত্যি তার পরিবারের কারো কাছে কিছু বলে তাহলে পড়াশোনা বন্ধ করে দিবে।সুপ্তি অপূর্বের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।তারপর করুণ সরে বলে,,,,,,
-দেখুন আমার ভুল হয়ে গেছে।আমি আর কখনও আপনার সাথে কিছু করবো না।আপনি প্লীজ আমার ফ্যামিলির কাউকে কিছু বলবেন না।তাহলে আমি বিপদে পড়বো।সুপ্তির এমন করুণ সর শোনে অপূর্ব লাফ মেরে বিছানা থেকে উঠে বসে।বোঝার চেষ্টা করছে এই টুকুতে সুপ্তি নিস্তেজ হলো কি করে।অপূর্ব একটু ভেবে তারপর বলে,,,
-ঠিক আছে বলবো না।তাহলে আমার টাকাটা দিয়ে দাও।
-এখন তো আমার কাছে এতো টাকা নেই।আমি এতো টাকা দিবো কেমনে???
-সেটা আগে মনে ছিল না?এখন আমি এসব কথা শোনবো না।আমার টাকা চাই ব্যাস।
-আমাকে দুদিন সময় দিন। দুদিন পর আমি আপনার সবটাকা দিয়ে দিবো।
-এ্যাাাাাা,তোমাকে বিশ্বাস করি না।কাল হয়তো বলবে তুমি আমার টাকা নেও নি।আমার এক্ষণি চাই।
-আমি বলছি তো দিয়ে দিবো।আর এখন আমার কাছে এতো গুলো টাকা থাকলে অবশ্যই দিয়ে দিতাম।সুপ্তির কথা শোনে অপূর্ব চুপ করে বসে থাকে।অপূর্বকে চুপ থাকতে দেখে সুপ্তি বলে,,,,,,
-কি হলো?চুপ করে আছেন কেন??
-ঠিক আছে।স্রেফ দুদিন।এর বেশি নয় কিন্তু।
-ঠিক আছে ধন্যবাদ।দুদিনেই আমার হবে।
-হু,এবার তোমার ফোন নাম্বারটা দাও।
-ফোন নাম্বার?আমার ফোন নাম্বার দিয়ে আপনি কি করবেন?
-হু,বলাতো যায় না।হয়তো তুমি পালিয়ে গেলে।তাই ফোন নাম্বারটা নিয়ে রাখলাম।
-আশ্চর্য!পালালে তো নাম্বারও বন্ধ করে রাখতে পারবো।তাই নয় কি??
-সেটা আমি বুঝে নিবো।এখন আপাত নাম্বারটা দাও।সুপ্তি অনেকটা বিরক্ত নিয়ে অপূর্বকে নাম্বারটা বলে।অপূর্ব নাম্বারটা নিয়ে সুপ্তির ফোনে কল করে কনফার্ম হয়।তারপর আবার সুপ্তির বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।এবার বেচারী সুপ্তি রেগে ভোম হয়ে যায়।সে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,,
-আপনি আবার আমার বিছানায় শুলেন কেন?
-আসলে শরীর ব্যথা করছে।তাই একটু শোলাম
-তাহলে নিজের বাসায় গিয়ে শোন।এবার আপনি আসতে পারেন।আমি ঘুমাবো।
-হু,যাবো তো।এতো তাড়া কিসের?তার আগে আমার পা দুটো একটু টিপে দাও তো।অপূর্বের কথা শোনে সুপ্তি প্রায় মাছের মতো লাফিয়ে উঠে।অনেকটা রেগে চিল্লিয়ে বলে,,,,
-কিহহহহহহহহহ!!!!!!!আমি আপনার পা টিপে দিবো?আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।এক্ষণি আমার রুম থেকে বের হোন বলছি।নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।
-এমা?আমি খারাপ কি বললাম?তোমার জন্যই তো আমার পায়ে ব্যথা হলো।তাহলে তোমার উচিত আমার ব্যথাটা দূর করার জন্য কিছু করার।
-আর একটা বাজে কথা বললে আমি আপনাকে জবাই করে ফেলবো।সুপ্তি কথা গুলো এতো জোরে বলে যে,সুপ্তির বাবা এসে তার রুমের দরজায় নক করে,,,
-কিরে মা?কি হয়েছে?কার সাথে কথা বলছিস?দরজা খুল।সুপ্তির বাবার কণ্ঠ শোনে অপূর্ব বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে।সুপ্তিও ভয়ে কুকড়ে যায়।অপূর্ব বলে,,,,
-এবার কি হবে?মনে হয় আঙ্কেল আসছেন।
-আপনার জন্যই সব হলো।আপনি আমাকে বিপদে না ফেলে ছাড়বেন না।এটা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।
-বা,বা,এবার সব দোষ আমার।তোমাকে আমি বলেছিলাম এতো জোরে চিল্লিয়ে কথা বলতে?তোমার জন্যই হয়েছে।এখন আমি কি করবো?কোথায় লুকাবো??
-লুকাবেন মানে কি??বের হোন আমার রুম থেকে?
-বের হবো মানে?কোথায় বের হবো?
-কোথায় আবার, বাইরে বের হবেন।
-দরজায় তো আঙ্কেল।এখন বের হলেই দেখে ফেলবে
-দরজা দিয়ে বের হবেন কেন?যেদিক দিয়ে এসেছেন সেদিক দিয়েই বের হোন।
-মাথা খারাপ?আমি এভাবে যেতে পারবো না।জানের কি মায়া নেই নাকি।
-আপনিতো খুব আশ্চর্যের লোক।আসার সময় জানের মায়া ছিল না?
-আরে তখন তো মাথার চার পাশে টাকা টাকা ঘুরছিল।এখন তো সেই চিন্তা নেই।
-আমি আপনার মতো এমন পাগল আর একটাও দেখি নি।এবার দয়া করে যান।আব্বু একবার আপনাকে দেখলে আমার ১২টা বাজবে।প্লীজ যান।সুপ্তি অপূর্বকে ধাক্কা দিয়ে ভেতর থেকে ব্যালকনিতে নিয়ে আসে।অপূর্ব ব্যালকনিতে এসে বলে,,,
-থেকে যাই আজকে।বরং কাল সক্কাল সক্কাল চলে যাবো।
-অহহহহ! আপনি একটা বুরিং।অসহ্য।আপনাকে টলারেট করা যায় না।বের হোন।নয়তো এবার ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিবো।
-না,না।ধাক্কা দিও না।আমি নেমে যাচ্ছি।বাপরে বাপ।তোমাকে বিশ্বাস করা যায় না।যা ডেঞ্জারাস মেয়ে।বলা যায় না পরে আবার ফেলে দিলো।এমনিতেই এখনো বিয়ে করি নি।পড়ে গিয়ে হাত পা ভাঙ্গলে আর কোনো মেয়ে আমাকে বিয়ে করবে না।সারা জীবন আইবুড়ো হয়ে থাকতে হবে।কথা গুলো বলে অপূর্ব নিচে নেমে আসে।সুপ্তি একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে ব্যালকনির দরজাটা লাগিয়ে মেইন দরজা খুলে দেয়।দরজার পাশে তার আব্বু দাঁড়িয়ে ছিল।সুপ্তি দরজা খুলার সাথে সাথেই তিনি রুমে প্রবেশ করলেন।তিনি চারপাশে ভালো করে দেখে নিলেন।দরজা খুলে ব্যালকনিতে গিয়েও দেখে আসলেন।রুমে আসতেই সুপ্তি জিজ্ঞাসা করলো,,,,
-আব্বু,কি খোঁজ তুমি??
-রুমে কার সাথে কথা বলছিলে এতক্ষণ?
-ক,ই কা,রো সাথে কথা বলি নিতো।
-আমি স্পষ্ট কারো শব্দ শোনলাম।সুপ্তি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলে,,,
-আ,মি,তো গা,ন শো,ন,ছি,লা,ম।তু,তু,মি হয়তো গানের শব্দ শোনেছো।সুপ্তির বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,,,,
-এতো রাত জেগে গান শোনতে হবে না।সকাল সকাল শোবে সকালে ঘুম থেকে উঠবে।এখন ঘুমিয়ে যা।
-ঠিক আছে আব্বু।সুপ্তির বাবা চলে গেলে সুপ্তি আবার দরজা লাগিয়ে রুমে আসে।এতক্ষণ ধরে যা গেলো এখন অনেকটা নিশ্চিন্ত লাগছে।সুপ্তি আর কিছু না ভেবে বিছানায় শোয়ে পড়লো।কোলবালিশ টা পাশে নিয়ে চোখ বন্ধ করলো।দুমিনিট চোখ বন্ধ রাখতেই হঠাৎ করে চোখের সামনে অপূর্বের করা সেই দৃশ্যটা ভেসে উঠলে।তার মনে হচ্ছে অপূর্ব এখন তার বুকের উপর কিস করছে।সুপ্তি তাড়াতাড়ি লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে পরে।কথাটা মাথায় আসতেই সুপ্তির সারা শরীরের লোমকূপ গুলো নেড়ে উঠলো।সারা শরীর শিরশির করতে লাগলো।টপটপ করে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।এই মুহূর্তে তার মধ্যে অন্য রকম এক ফিলিংস চলে আসলো।সুপ্তির ভীষণ খারাপ লাগতে লাগলো।একটু সময়ে সুপ্তি অস্থির হয়ে উঠলো।হঠাৎ করে সে কান্না করে দিলে।বাকি রাতটায় সুপ্তির একটুকুও ঘুম হলো না।

চলবে——-

#মায়াবিনী

সুরমা
পর্ব : ৬

আজ খুব সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে যায় অপূর্ব।ফ্রেশ হয়ে সকালের ব্রেকফাস্ট টেবিলে গিয়ে বসে থাকে।অপূর্বই আজ প্রথম ব্রেকফাস্ট টেবলে আসে।তার মা খাবার রেডি করেছেন।রান্নাঘর থেকে খাবার এনে টেবিলের রাখতে গিয়ে তিনি দেখেন অপূর্ব টেবিলের সামনে বসে আছে।অপূর্ব তার মাকে দেখে বলে,,,
-গুড মর্নিং আম্মু।
-গুড মর্নিং।আজ সত্যি মর্নিংটা গুড।এতো সকালে উঠে গেলি যে?
-উঠে গেলাম।আব্বুতো বলে আমি কখনও সকালে উঠতে পারি না।তাই আজ উঠে দেখিয়ে দিলাম।তা,আব্বু কোথায়?আজ এখনো তো আসলো না।
-তোর আব্বু ঠিক সময়ে টেবিলে চলে আসবে।আর তুই সকাল বেলা উঠে ভালো কাজ করেছিস।প্রতিদিন এভাবে উঠে গেলিই তো পারিস।অযথা কথা শোনতে হয় না।
-আম্মু,আমি কি করবো বলোতো।আমিতো ট্রাই করি উঠতে।কিন্তু সকাল সকাল ঘুমটা আরো বেশি আসে।আর তখন ঘুমটা যে কি মজার সেটা তুমি আর আব্বু কখনও বুঝবা না।তার আগেই তোমার বিছানা থেকে উঠে যাও।আর আমি একটু মজা নেওয়ার জন্য শোয়ে থাকি।তাইতো লেট হয়ে যায়।
-হু,বোঝেছি।আর বলতে হবে না।তোর আব্বু এগুলো শোনলে তোকে আরো কথা শোনাবে।তুই এখন বস আমি খাবার গুলো নিয়ে আসি।
-ওকে।তাদের কথা শেষ হতে না হতেই অপূর্বের বাবা আর তিশা খাবার টেবিলে চলে আসে।এতো আগে অপূর্বকে খাবার টেবিলে দেখে তিশা এবং তার বাবা দুজনেই অবাক হয়।তার বাবা তার মুখোমুখি চেয়ার টেনে বসে বলে,,,,
-আজ সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠলো?এই প্রথম তোকে খাবার টেবিলে আগে এসে বসতে দেখলাম। যা হোক,আমার সত্যি ভালো লাগছে। প্রতিদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে খাবার টেবিলে আসলে আরো ভালো লাগবে।বাবার কথা শোনে অপূর্ব মাথা নিচু করে বলে,,,
-হু,এখন থেকে চেষ্টা করবো সকাল সকাল উঠে ঠিক সময় ব্রেকফাস্ট টেবিলে আসতে।
-গুড।আসলেই ভালো। অপূর্ব সবার সাথে ব্রেকফাস্ট করে অফিসের জন্য রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটতে লাগে।সুপ্তিদের বাসার কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে থাকে।এই সময় সুপ্তি কলেজের জন্য বাসা থেকে বের হয় ।এখনতো কলেজের সময় হয়েই এসেছে।এখনতো তার বাসা থেকে বের হওয়ার কথা।অপূর্ব মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে এখনো যথেষ্ট পরিমান টাইম আছে কলেজের।অপূর্ব বার বার সুপ্তিদের বাসার দিকে উঁকিঝুঁকি মারছিল।কিন্তু সুপ্তিকে দেখতে পেলো না।প্রায় অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর অপূর্ব আবার টাইম দেখে।আর দাঁড়িয়ে থাকলে তার অফিসে যেতে লেইট হবে।তাই সে একটা রিকশা ডেকে অফিসে চলে আসে।সুপ্তিকে দেখতে না পেয়ে অপূর্বের খুব খারাপ লাগে।সে কিছুতেই কাজে মন বসাতে পারছিল না।বারবার সুপ্তির কথা মনে পড়ছিল।হঠাৎ নাম্বারের কথা মাথায় আসতেই অপূর্ব মোবাইলটা হাতে নিয়ে সুপ্তিকে কল করে।কল হয়ে যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না।অপূর্ব সুপ্তিকে অনেকবার কল করার পরও যখন সুপ্তি কল রিসিভ করলো না তখন অপূর্বের কিছুটা অস্বস্তি হতে লাগলো।অনেক চেষ্টার পর অপূর্ব নিজেকে কিছুটা শান্ত করলো।কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পারলো না।অপূর্ব ১২টার দিকে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সুপ্তির কলেজে চলে আসে।কলেজের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে।একবার ভাবছিল কারো কাছে সুপ্তির কথা জিজ্ঞাসা করবে।আবার এতে যদি কেউ কিছু মনে করে একটা ভেবে কাউকে জিজ্ঞাসা করলো না।প্রায় ১ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর অপূর্ব দেখলো সুপ্তি কলেজ থেকে বের হচ্ছে।সুপ্তিকে দেখার সাথে সাথে অপূর্বের মুখে হাসি ফোটে উঠে।তার মনে হচ্ছে কতকাল পর সুপ্তির সাথে তার দেখা।এতক্ষণের খারাপ লাগা নিমিষেই শেষ হয়ে যায়।অপূর্ব একটু এগিয়ে আসে সুপ্তির দিকে।সুপ্তি তার বান্ধবী আনিকার সাথে কথা বলে বলে আসছিল।এমন সময় অপূর্বকে এখানে দেখে সুপ্তি দাঁড়িয়ে যায়।অপূর্ব এখানে আসবে ভাবতেই পারছে না সুপ্তি।অপূর্ব সুপ্তির সামনে গিয়ে বলে,,,,
-জানো আজ সকালে তোমাদের বাসার পাশে তোমার জন্য কতক্ষণ অপেক্ষা করেছি??বাট তোমাকেতো পেলামেই না।অপূর্বের কথা শোনে আনিকা সুপ্তির দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে,,,
-দোস,ছেলেটা কে??কি স্মার্টরে দেখতে।আর বডি দেখে মনে হয় জিম করে।আনিকার কথা শোনে সুপ্তি আনিকার দিকে চোখ লাল করে তাকালে আনিকা বলে,,,,,
-দোস রাগ করিস না।যা সত্যি তাই বললাম।আমিতো ফিদা।এতো হেন্ডসামও কোনো ছেলে হয়?আমার মনে হচ্ছে আমি ভুল দেখছি।প্রথম পলকেই ক্রাশ খাইছি।ফেইসটা কি ইনোসেন্ট।আনিকার কথা শোনে সুপ্তি কিছুটা রেগে বলে,,,
-তুই সব সময় বাঁশের উপর ক্রাশ খাছ এটা আমি জানি।
-মানে???
-মানে হলো এটাকে দেখতে যতোটা ইনোসেন্ট মনে হচ্ছে ভেতরে ঠিক ততটাই শয়তানের হাড্ডি।এই কয়দিন আমার যা জ্বালালো,আমি তো অতিষ্ঠ হয়ে গেছি।একটা খচ্চর।অপূর্ব সুপ্তিকে উদ্দেশ্য করে আবার বলে,,,,,
-আজ কখন কলেজে আসছো??তোমাকে তো আসতে দেখলাম না?আর কতবার কল করলাম রিসিভ করো নি কেন??
-আপনাকে কি এখন থেকে আমার সব কিছু বলতে হবে?আশ্চর্য, আপনি আমার গার্ডিয়ানের মতো আচরণ করছেন কেন?আর আমি যখন বলেছি আপনার টাকা দিবো তখন তো দিয়েই দিবো।এই কয়টা টাকার জন্য আপনি আমার কলেজে চলে এসেছেন??সুপ্তির কথা শোনে তার আনিকা বলে,,,
-কিসের টাকার কথা বলছিস??
-তোকে পরে বলবো।আর আপনি শোনেন,কালকে আপনার টাকা আপনাকে দিয়ে দিবো।এখন আপনি আসতে পারেন।আমি আপনার টাকা মেরে কোথাও চলে যাবো না।কথা গুলো বলে সুপ্তি আবার হাঁটতে শুরু করে।অপূর্ব পেছন থেকে সুপ্তিকে ডাক দিলে সুপ্তি দাঁড়িয়ে পড়ে।অপূর্ব কিছুটা সুপ্তির কাছে এসে বলে,,,,
-আমি এখানে টাকার জন্য আসি নি।সুপ্তি কিছুটা অবাক হয়ে বলে,,,
-তাহলে কিসের জন্য এসেছেন??
-তোমার সাথে কথা বলতে।তোমাকে দেখতে।অপূর্বের কথা শোনে সুপ্তি অবাকের উপর অবাক হয়ে বলে,,,
-আমার সাথে কথা বলতে মানে???
-দেখো,আমি এতো ঘোর প্যাচ বুঝি না।তাই সরাসরিই বলছি,আমি তোমাকে ভালোবাসি।তোমাকে আমার করে পেতে চাই।অপূর্বের কথা শোনে আনিকা সহ সুপ্তি সপ্তম আকাশ থেকে নিচে পড়ে।সুপ্তি কিছুটা রাগি গলায় বলে,,,,
-আমি আপনার টাকা নিয়েছি বলে এই নয় যে, যা মন চায় আমাকে তাই বলবেন।নেক্সটাইম যেন এসব আর না শুনি।বলে সুপ্তি আবার হাঁটতে শুরু করে।এবার অপূর্ব সুপ্তির সামনে এসে বলে,,,
-সুপ্তি,বি লিভ মি।আম সিরিয়াস।নো ফান।আমি নিজেও জানিনা আমি কখন তোমার প্রেমে পড়ে গেলাম।আমি সত্যি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
-আপনার বলা শেষ হয়ে থাকলে রাস্তা ছাড়ুন।আমার বাসায় যেতে লেইট হয়ে যাচ্ছে।
-সুপ্তি,তুমি কিছুতো একটা বলো।তোমার ফিলিংস?কিছু একটা,,
-সুপ্তি একটা বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,,,
-আমি আপনাকে ভালোবাসি না আর বাসতেও পারবো না।সরি।দয়া করে আপনি আর আমার পিছনে আসবেন না।কাল কলেজ যাওয়ার সময় আপনার টাকা টা দিয়ে দিবো।।কথাটা শেষ করে সুপ্তি একটা রিকশা ডেকে রিকশাতে উঠে বসে।অপূর্ব সুপ্তিকে পেছন থেকে অনেকবার ডাকে।কিন্তু সুপ্তি অপূর্বের কথায় কান দেয় নি।রিকশায় সুপ্তির মুড অফ।আনিকার সাথে কথা বলছে না।সুপ্তিকে এভাবে দেখে আনিকা বলে,,,,
-দোস,ছেলেটাকে তো আমার ভালোই মনে হচ্ছে।আর দেখতেও ড্রেসিং। তোর সাথে মানাতো।
-তুই এই কথা বলছিস??জানিস না আমাদের পরিবারে রিলেশন মেনে নেয় না।তাছাড়া আমি এখন রিলেশনে ডুকলে কি হবে জানিস তো??
-হু,জানিতো।কিন্তু ছেলেটাতো তোকে ভালোবাসে বললো।আর তোর কি এই ছেলের প্রতি কোনো ফিলিংস নেই???সুপ্তি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,,,
-আমি আমার পরিবারের কাউকে কষ্ট দিতে পারবো না রে।আমি যদি এমন কিছু করি তাহলে আমার আব্বু হয়তো এবার সত্যি সত্যি মরে যাবে।কোনো কিছুর বিনিময়ে আমি আমার আব্বু,ভাইয়াকে কষ্ট দিতে চাই না।
-তোর যা ভালো মনে হয়।তারপর আর কেউ কোনো কথা বলে নি।সুপ্তি নিজের বাসার সামনে এসে নেমে যায়।বাসায় গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।এখন তার কিছুই ভালো লাগছে না।তার খুব কান্না করতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু কেন সেটা তার জানা নেই।সুপ্তি বিছানায় উপুড় হয়ে শোয়ে নিঃশব্দে কিছুক্ষণ কান্না করার পর ঘুমিয়ে পড়ে।অপূর্বও বাসায় চলে আসে।এই সময় অপূর্বকে বাসায় দেখে তার মা বলে,,
-কিরে এই সময় চলে আসলি যে??শরীর খারাপ??
-নানা,আসলে কাজ করতে ভালো লাগছিল না।তাই আজ একটু ছুটি নিয়ে চলে এসেছি।
-ভালো করেছিস।আচ্ছা তাহলে এখন রুমে যা।গিয়ে ফ্রেস হয়ে আয় আমি খাবার দেই।
-ওকে।অপূর্ব গিয়ে ফ্রেশ হয়ে অল্পকিছু খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।সুপ্তির রুমের সামনাসামনি এসে দাঁড়িয়ে থাকে।কিন্তু সুপ্তিকে একবারের জন্যও দেখতে পাচ্ছে না।সুপ্তির ঘুম ভাঙ্গে একেবার ৩টার পরে।ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে বাইরে বের হয়ে আসে।টাওয়ালটা ব্যালকনিতে মেলে দিতে গিয়ে দেখে অপূর্ব তার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অপূর্বকে দেখে সুপ্তি চমকে উঠে।বুকের ভেতরে ধুকপুকানি শুরু হয়ে যায়।সুপ্তি এক লাফে রুমে এসে ব্যালকনির দরজা বন্ধ করে দেয়।দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে আবার কান্না করতে থাকে।সে কেন কাঁদছে?তার উত্তর তার জানা নেই।তবে এখন অপূর্বকে দেখলেই তার কান্না পায়।
অনেক কষ্টের পর সুপ্তি নিজেকে শান্ত করে।এর পরেও সুপ্তি আর দুএকবার জানালার ফাঁকা দিয়ে অপূর্বকে দেখেছে।অপূর্ব আগের মতো করেই দাঁড়িয়ে ছিল।সুপ্তি এসে রুমে বসতেই তার মোবাইলের রিংটোন টা বেজে উঠে।মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে অপূর্ব কল করছে।সুপ্তি কলটা কেটে দিয়ে মোবাইলটা সুইচ অফ করে রাখে।অপূর্ব প্রায় রাত ৯টা পর্যন্ত সুপ্তির জন্য দাঁড়িয়ে থাকে।কিন্তু সুপ্তি এর পর আর একবারের জন্যও ব্যালকনিতে আসে নি।ব্যর্থ হয়ে অপূর্ব বাসায় ফিরে আসে।রাতের খাবারও ভালো করে খায় নি অপূর্ব।অপূর্ব বুঝতে পারছে না কোন কারনে সুপ্তি তাকে এতো এভয়েট করছে।সুপ্তির এমন অবহেলায় ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে অপূর্ব।

চলবে—–

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে