#মায়াবিনী
সুরমা
পর্ব : ১৭+১৮
পরদিন খুব সকালে সুপ্তির ঘুম ভেঙ্গে যায়।দুটি চোখ মেলে তাকিয়েই মোবাইলটা হাতে নিয়ে অপূর্বকে কল করে।সাথে সাথে অপূর্ব কলটা রিসিভ করে।
-গুড মর্নিং
-গুড মর্নিং
-এতো সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গলো?
-হু,আজ একটু আগে আসবে??
-কেন?
-এমনি।তাহলে তোমার সাথে একটু কথা বলার সময় পেতাম
-ওহহ,ঠিক আছে।চলে আসবো।
-ওকে।তাহলে এখন উঠে রেডি হয়ে নাও।
-ওকে,বাই
-বাই।সুপ্তি বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কলেজের জন্য রেডি হয়ে নেয়।রুম থেকে বের হয়ে দেখে তার বাবা,ভাইয়া ডাইনিং টেবিলে বসে আছে।তার ভাবী রান্নাঘরে খারাব রেডি করছে।সুপ্তি ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,,,
-গুড মর্নিং,,,সুপ্তিকে এতো সকালে দেখে তার বাবা এবং ভাই,দুজনেই অবাক হয়।সুপ্তির বাবা বলে,,,,,,
-এতো সকাল সকাল কোথায় যাচ্ছিস??
-কলেজে যাবো।
-কলেজ তো আরো অনেক দেরি।
-কিছু নোট করার ছিল।তাই এখন আনিকার বাসায় যাবো।
-ওহহ,ঠিক আছে বোস।নাস্তা করে যা।শুভ্র যাওয়ার সময় তোকে নামিয়ে দিয়ে যাবে।
-ভাইয়াকে নিয়ে যেতে হবে না।আমি একাই যেতে পারবো।আর আনিকার বাসায় নাস্তা করবো।নাস্তা করে গেলে লেট হবে।আমি এখন আসি।তোমরা নাস্তা করো।
-ঠিক আছে।তাহলে সাবধানে যাস।
-ঠিক আছে।সুপ্তি বাসা থেকে বের হয়ে দেখে অপূর্ব রাস্তায় রিকশায় বসে আছে।সুপ্তি এগিয়ে গিয়ে অপূর্বের পাশে বসে।রিকশাও চলতে শুরু করে।অপূর্ব বলে,,,,
-কোথায় যাবে এখন??
-আগে চলো কিছু খেয়ে নেই।আমি সকালের নাস্তা করে আসি নি।
-ঠিক আছে চলো।অপূর্ব সুপ্তিকে নিয়ে নাস্তা করে নেয়।তারপর দুজনে কিছুক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরে অপূর্ব সুপ্তিকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে সেও অফিসে চলে যায়।
বিকালে অফিস থেকে ফেরার সময় অপূর্ব সুপ্তিকে কলেজ থেকে নিয়ে আসে।সুপ্তিকে তার বাসায় রেখে অপূর্বও নিজের বাসায় চলে আসে।সুপ্তি রুমে ডুকেই দেখে তার বাবা ভাই খুবই গম্ভীর ভাবে ডয়িংরুমে বসে আছে।এই অসময়ে শুভ্রকে বাসায় দেখে সুপ্তির কলিজায় ধুম করে উঠে।তার বাবা ভাইকে কিছুটা রাগান্বিতও মনে হচ্ছে।সুপ্তি মাথা নিচু করে নিজের রুমে যেতে লাগলে হঠাৎ করেই শুভ্র এসে সুপ্তির সামনে দাঁড়ায়।শুভ্রর চোখ দুটি সহ সারা শরীর রাগে লাল হয়ে আছে।শুভ্রকে দেখেই ভয়ংকর মনে হচ্ছে।সুপ্তি কিছু বুঝার আগেই শুভ্র সুপ্তি সজোরে এক চড় মারে।সুপ্তি তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যায়।সুপ্তির চোখ দিয়ে পানি চলে আসে।সুপ্তি করুন দৃষ্টিতে তার ভাই শুভ্রর দিকে চেয়ে থাকে।শুভ্র বলে,,,,
-তোকে বলেছিলাম কোনো ছেলের সাথে কথা বলবি না?কোনো ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করবি না।তাহলে কেন তুই ঐ ছেলেটার সাথে ঘুরলি??কি এতো মেলামেশা এই ছেলের সাথে?
-ভাইয়া তুমি,,,
-একদম মিথ্যা বলার চেষ্টা করবি না।আমি নিজের চোখে তোকে ঐ ছেলের সাথে এক রিকশায় দেখেছি।দুজনে হেসে হেসে কথা বলছিলি।একসাথে ঘুরলি।আমি সব দেখেছি।আমাকে এখন মিথ্যা বললেও লাভ কিছু হবে না।শুভ্র এগিয়ে গিয়ে সুপ্তিকে ফ্লোর থেকে টেনে তুলে।তারপর বলে,,,,
-তোর আর বাসা থেকে বের হওয়ার দরকার নেই।এখন থেকে তুই বাসায় থাকবি।অনেক পড়াশোনা করেছিস।আর পড়াশোনা করার দরকার নেই।
-ভাইয়া শোন,আমি অপূর্বকে ভালোবাসি।অপূর্ব খুব ভালো ছেলে।ও অন্যদের মতো না।একদম আলাদা।তুমি একবার কথা বলে দেখো।তোমারও ভালো লাগবে অপূর্বকে।সুপ্তির কথা শেষ হতে না হতেই শুভ্র সুপ্তিকে আরো একটা চড় মারে।এবারের চড়টা এতো জোরে ছিল যে,সুপ্তি অনেকটা দূরে গিয়ে তার ভাবীর উপর পড়ে।অর্পিতা সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরে।সুপ্তির ঠোঁট কেটে রক্ত বের হয়ে যায়।অর্পিতা বলে,,,
-কি করছো কি?বোনে গায়ে হাত তুলছো তুমি??না হয় একটা ভুল করে ফেলেছে।তাই বলে তুমি সুপ্তির গায়ে এভাবে হাত তুলবে?
-আমাকে কিছু বুঝাতে আসবে না।আমি সব বুঝি।ওর মাথা খারাপ হয়ে গেছে।সব কিছু নিজের চোখে দেখেছে।আমি বারবার ওকে বুঝিয়েছি।তাও সেইম ভুল করছে।এখন আবার বলছে ভালোবাসে।এই ছেলে অন্য ছেলেদের মতো না।এখন ওকে ভুলিয়ে বালিয়ে বিয়ে করবে পরে ওর জীবনেও দুর্গতি নেমে আসবে।আমি বেঁচে থাকতে এই ভুল আর দ্বিতীয়বার হতে দিবো না।আজকের পর থেকে ওও রুম থেকে বের হতে পারবে না।শুভ্র সুপ্তির হাত ধরে টানতে টানতে রুমের দিকে নিয়ে যেতে থাকে।সুপ্তি তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
-আব্বু বিশ্বাস করো,অপূর্ব খুব ভালো।আমি অপূর্বকে ছাড়া থাকতে পারবো না।ওকে ছাড়া আমি মরেই যাবো।প্লীজ আব্বু তুমি ভাইয়াকে বুঝিয়ে বলো।আব্বু,প্লীজ,তুমি বুঝার চেষ্টা করো।সুপ্তি কথা গুলো বলছে আর চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়ছে।কিন্তু তার বাবা মূর্তির মতো আগের জায়গায় বসে থাকে।শুভ্র সুপ্তিকে রুমে ঠেলে দিয়ে দরজা বাইরে থেকে লক করে দেয়।ভেতর থেকে সুপ্তি অনেকবার ডাকে।হাত দিয়ে দরজায় নক করতে থাকে।কিন্তু শুভ্র দরজা খুলে দেয় নি।শুভ্র অর্পিতার কাছে এসে বলে,,,,
-আমার অনুমিত ছাড়া যদি এই রুমের দরজা কেউ খুলে তাহলে খবর আছে।তুমি সুপ্তির রুমের আসেপাশেও যাবে না।কথাটা যেন মনে থাকে।
-শোন,তুমি এমনটা করো না।সুপ্তিকে তো তুমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসো।তাহলে এখন ওকে কেন এতো কষ্ট দিচ্ছো কেন??ওকে ঘরে বন্ধ করে রেখো না।সব ছেলেরা তো এক না।তুমি একটু খুঁজ নিয়ে দেখো।ছেলেটা যদি ভালো হয় তাহলে সুপ্তিকে বিয়ে দিতে আপত্তি কিসের?আর যদি শোন ছেলেটা খারাপ তাহলে আমরা সবাই মিলে সুপ্তিকে বুঝাবো।
-এই বিষয়ে তুমি আর একটাও কথা বলবে না।আমার বোনের ভালোমন্দ আমি খুব ভালো করেই জানি।তুমি এর মধ্যে আসার চেষ্টা করো না।তাহলে তোমার পরিণতিও ভালো হবে না।শুভ্র নিজের রুমে চলে যায়।অর্পিতা তার শশুড় মশাইয়ের কাছে এসে বলে,,
-বাবা,আপনি কিছু বললেন না??সুপ্তিকে তো আপনারা বিয়ে দিবেনেই।এখন সুপ্তি যাকে পছন্দ করে খুঁজ খবর নিয়ে যদি দেখেন ছেলে ভালো আছে তাহলে এই ছেলের কাছে দিতে সমস্যা কি??
-বৌমা,শুভ্র কি বলে গেলো তুমি শোন নি??আমাদের মধ্যে কোনোদিন কারো লাভ ম্যারেজ মেনে নেওয়া হবে না।সো,এখানে খুঁজ নিয়ে দেখার কিছু নেই।
-কিন্তু বাবা…..
-বৌমা,তুমি নিজের কাজে যাও।এই বিষয়ে তোমার কথা না বললেও হবে।অর্পিতা আর কিছু বলতে পারলো না।চুপচাপ নিজের রুমে চলে আসে।সুপ্তি দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে এক সময় দরজায় হেলান দিয়ে নিচে ফ্লোরে বসে কান্না করতে থাকে।
অপূর্ব মুখে শিস বাজাতে বাজাতে রুমে প্রবেশ করে থমকে যায়।তার বাবার অবস্থা খুবই করুন।মানুষটার চেহারাটা একদম শেষ।অপূর্বের বোন আর মা পাশে বসে আছেন।তার মা তার বাবার বুকে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।মারাত্মক কিছু যে একটা হয়েছে সেটা ডয়িং রুমের নিঃস্তব্ধাই বলে দিচ্ছে।অপূর্ব তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে বলে,,,,,
-আম্মু,আব্বুর কি হয়েছে????অপূর্বকে দেখেই তার বাবা আগুনের মতো জ্বলে উঠে।তিনি অনেকটা রেগে বলেন,,,,
-কাকে বাবা বলছিস?আমি তোর কেউ না।তুই আমাকে বাবা ডাকবি না।তুই আমার চোখের সামনে থেকে দূর হো।আমি তোর মুখ দেখতে চাই না।যে ছেলের জন্য পাড়ার লোকজন বাড়িতে এসে অপমান করে যায় সেই ছেলেকে আমি নিজের ছেলে বলে পরিচয় দিতে পারছি না।অপূর্ব তার বাবার কথায় কিছু বুঝতে পারে না।সে বোকার মতো হা করে তার বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।অপূর্বের বাবা আবার বলে,,,,,
-পাড়ার লোকজন বাড়ি এসে,ঘরে ডুকে চিৎকার করে বলে,ছেলে জন্ম দিয়েছেন।তাকে শিক্ষা দিতে পারেন নি।পাশের বাড়ির মেয়ের সাথে সারাদিন হেসে খেলে বেড়ায়।মেয়ের পেছনে বখাটে ছেলেদের মতো ঘুর ঘুর করছে।মেয়ের মাথা খাওয়ার চেষ্টা করছে।ছেলেকে সাবধান করে দিবেন,আবার যদি তাকে দেখি মেয়ের পিছনে ঘুরছে তাহলে মেরে এ পাড়া থেকে বের করে দিবো।আমাকে এসব মাথা নিচু করে শোনতে হলো।এ পাড়ায় জন্মের পর থেকে আছি।কোনোদিন কেউ অপমান করতে পারে নি।আজ বাড়ি এসে মুখে উপর কথা গুলো বলে গেলো।এই বয়সে আমাকে এটাও সহ্য করতে হলো।
চলবে——-
#মায়াবিনী
সুরমা
পর্ব : ১৮
-আব্বু,আমি সুপ্তির পেছনে ঘুরি না।আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি।আর ভালোবাসায় পাপ কিছু নেই।আমি সুপ্তিকে বিয়ে করতে চাই।অপূর্বের কথা শেষ হতেই তার বাবা বসা থেকে উঠে অপূর্বের গালে ঠাস করে একটা চড় মারে।অপূর্ব ছোট বেলায় অনেক দুষ্টু ছিল।কিন্তু কোনোদিন তার বাবা তার উপরে হাত তুলে নি।এই প্রথম তাকে মারলো।অপূর্ব আবুলের মতো তার বাবার মুখের দিকে চেয়ে থাকে।তার বাবা বলে,,,,
-এই মেয়েকে আমি কোনো দিনও আমার ঘরে তুলবো না।যার ভাই পাড়ার লোকজন নিয়ে এসে বাড়িতে যা নয় তা বলে অপমান করে সেই বাড়ির মেয়েকে ঘরে তুলার প্রশ্নই আসে না।আমি আমার বন্ধুর মেয়ের সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছি।তার সাথেই তোর বিয়ে হবে। অপূর্বের মা দেখে অপূর্বের গালে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসে গেছে।অপূর্বের মা অপূর্বের গালে হাত রেখে বলে,,,,,
-তুমি আমার ছেলেটাকে মারলে?আমার ছেলে কি এমন করেছে যে তুমি ওর গায়ে হাত তুললে???
-তোমার মতো মা যদি প্রত্যেক ঘরে থাকে তাহলে সন্তানরা অনেক বড় অপরাধ করেও কোনো শাস্তি পাবে না।পাড়ার লোকজন আমার বাসায় এসে আমার দিকে আঙ্গুল তুলে কতো গুলো কথা বলে গেলো।আমাকে যা নয় তাই বলে অপমান করলো।আর তুমি বলছো কি করেছে?
-যে যা বলবে সেটাই বিশ্বাস করতে হবে?আমার ছেলে যদি সত্যি মেয়েটাকে ডিস্টার্ব করতো তাহলে আমি তার শাস্তির ব্যবস্থা করতাম।কিন্তু মেয়েটাও আমার ছেলেকে ভালোবাসে।এতে আমি অন্যায় কিছু দেখছি না।দুজন দুজনকে ভালো বাসতেই পারে।আর অপরাধ বলছো?সেটা যদি আমার ছেলে করতো তাহলে আমি নিজের হাতে তাকে শাস্তি দিতাম।অপূর্ব তার মায়ের হাত সরিয়ে দিয়ে তার বাবার দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলে,,,
-আমি সুপ্তিকে ভালোবাসি।সুপ্তিও আমাকে ভালোবাসে।পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই আমাদের আলাদা করে।আর সুপ্তির বাবা ভাই কেমন এটা আমার কাছে ইম্পরট্যান্ট নয়।সুপ্তি কেমন মেয়ে এটাই মেইন ফ্যাক্ট।ওর পরিবারের কার্যক্রমের শাস্তি তো আর সুপ্তি পেতে পারে না।আমার জীবনে দ্বিতীয় কারো নাম লিখা সম্ভব নয় আব্বু।তুমি আমাকে ক্ষমা করো।তোমার পছন্দ করা মেয়েকে আমি বিয়ে করতে পারবো না।বিয়ে যদি করতেই হয় তাহলে সুপ্তিকেই করবো।কথা গুলো বলে অপূর্ব নিজের রুমে চলে যায়।অপূর্বের খুবই ভয় লাগছে সুপ্তির জন্য।সুপ্তির বাবা,ভাই বিষয়টা জানার পর তারা সুপ্তির সাথে কেমন বিহেব করেছে?সুপ্তি এখন কি করছে?একটা কল দিয়ে দেখবে?মোবাইলটা সুপ্তির কাছে আছে তো?নাকি তার ভাই সেটা নিয়ে নিয়েছে।অপূর্ব অস্থির হয়ে রুমে পাইচারি করতে থাকে আর একটা একটা করে শরীর থেকে কাপড় খুলে বিছানায় ফেলতে থাকে।কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না।অবশেষে মোবাইলটা হাতে নিয়ে সুপ্তিকে কল দেয়।কল হচ্ছে,কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না।এতে অপূর্বের টেনশন আরো বেড়ে যায়।অপূর্ব অফিস ড্রেস চেঞ্জ করে একটা থ্রিকোয়াটার আর একটা টি শার্ট পরে বাইরে বের হয়ে যায়।সুপ্তিদের বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।ব্যালকনির দরজা বন্ধ।বাড়ির পরিবেশ দেখে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না।অপূর্বের অস্থিরতার যেন কোনো সীমা নেই।হাজার চেষ্টার পরও নিজেকে সামলাতে পারছে না।এই মুহূর্তে সুপ্তির সাথে যোগাযোগ করা অপূর্বের খুব দরকার।কিন্তু কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না।অপূর্ব আগে পেছনে কিছু চিন্তা না করে সুপ্তিদের ফ্ল্যাটে চলে আসে।দরজায় দাঁড়িয়ে চিন্তা করছে কলিংবেল বাজাবে কিনা।কিছুক্ষণ যাওয়ার পর অপূর্ব কলিং বেলে চাপ দেয়।ডয়িং রুমে সুপ্তি,তার ভাই,বাবা আর দুজন কাজিন বসে ছিল।সবাই মিলে সুপ্তিকে বুঝানোর চেষ্টা করছিল।এমন সময় কলিং বেল বাজার কারনে সবাই কিছুটা অবাক হয়।এখন বাসায় আসার মতো কেউ নেই।দুই তিনবার বাজার পর শুভ্র অনেকটা বিরক্ত নিয়ে দরজা খুলে দেখে অপূর্ব দাঁড়িয়ে আছে।অপূর্বকে নিজের বাসায় দেখার পর শুভ্র অনেকটা রাগ হয়।শুভ্র কোনো কথা না বলে অপূর্বের টি-শার্টের কলার চেপে ধরে বলে,,,,
-তোর এতো বড় সাহস,তুই আমার বাসায় চলে আসলি?
-ভাইয়া,আমার কথাটা শোনোন,আমি কিছু বলতে চাই।অপূর্বকে এই সময় নিজের বাসায় দেখে সুপ্তির কলিজাটা শুকিয়ে যায়।সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে থাকে।অপূর্ব বলে,,,,
-আমি সুপ্তিকে ভালোবাসি। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।অপূর্বের কথা শেষ হতে না হতেই শুভ্র অপূর্বকে মারতে শুরু করে।সাথে শুভ্রর কাজিনরাও যোগ দেয়।অপূর্বকে মারতে দেখে সুপ্তি দৌঁড়ে এসে তার ভাইকে ধরে।সুপ্তি কান্না করতে থাকে।আর তার ভাইকে বলতে থাকে,,,,,
-ভাইয়া,প্লীজ,তোমরা অপূর্বকে আর মেরো না।ওতো মরে যাবে।প্লীজ বন্ধ করো।তোমার পায়ে ধরি,ওকে ছেড়ে দাও।ওকে আর মেরো না।প্লীজ ভাইয়া ছাড়ো,ভাইয়া প্লীজ,ছাড়ো,,,,,
-কতো বড় সাহস,,বাসায় এসে বলে আমি সুপ্তিকে ভালোবাসি। আজ ওকে এমন মার দিবো,জীবনে কোনোদিন মুখ দিয়ে ভালোবাসি কথাটা বের হবে না। সুপ্তি হাজার চেষ্টা করেও শুভ্রকে আটকাতে পারে নি।শুভ্র আর তার কাজিনরা মিলে অপূর্বকে এতোটা মারে যে,অপূর্বের মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়।সুপ্তি দেখে একনিমিশেই অপূর্বের দেহটা ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে।কিছুটা জায়গা অপূর্বের রক্তে লাল হয়ে গেছে।অপূর্ব জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।সুপ্তি এক দৌঁড়ে এসে অপূর্বকে ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে।আর অপূর্বকে ডাকতে থাকে।কিন্তু অপূর্ব কোনো কথায় বলে নি।শুভ্র সুপ্তিকে টেনে সুপ্তির রুমে নিয়ে যায়।শুভ্র বলে,,,,
-আজ প্রাণটা রেখেছি।এর পর যদি কোনোদিন তোদের এক সাথে দেখি।তোর মুখে ওর নামটা শোনি,,,,মনে রাখিস তাহলে একদম জানে মেরে ফেলবো।শুভ্র সুপ্তিকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখে।
২দিন পর,,,,,,
এই দুইদিন অপূর্ব ক্লিনিকে ভর্তি থাকে।দুদিন তার জ্ঞান ছিল না।দুদিন পর আজ সে চোখ খুলে পৃথিবীর আলো দেখে।চোখ মেলে দেখে তার বেডের পাশে তার মা,বোন বসে আছে।অপূর্বের মা অপূর্বের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,,
-এখন কেমন লাগছে??ভালো লাগছে??
-হু,আমি এখানে আসলাম কি করে??
-নিলয় আমাদের ফোন করে বললো তুই রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছিস।পরে আমরা গিয়ে তোকে হাসপাতালে নিয়ে আসলাম।দুদিন তোর জ্ঞান ছিল না।কথা গুলো বলতে বলতে অপূর্বের মা কান্না করে দেয়।অপূর্ব অবাক হয়ে বলে,,,,
-দুদিন ধরে আমি হাসপাতালে??আম্মু সুপ্তি????অপূর্বের মুখে সুপ্তি নামটা শোনে অপূর্বের মা অনেকটা রেগে বলে,,,,
-একদম এই মেয়ের নাম মুখে নিবি না।আমি এই মেয়ের কথা তোর কাছ থেকে শোনতে চাইনা।এই মেয়ের জন্যই আজ তোর এই অবস্থা।
-আম্মু কি বলছো?এখানে সুপ্তির দোষ কোথায়??
-কেন?ওর ভাইয়েই তো তোকে এতো মারলো।যদি তোর কিছু হয়ে যেতো তখন কি হতো বলতো?আমরা কি নিয়ে বাঁচতাম?এই মেয়েকে তুই ভুলে যা।এর থেকে ভালো মেয়ে তোর জন্য নিয়ে আসবো।
-আম্মু প্লীজ এসব বলো না।আমি সুপ্তিকে ভালোবাসি।বেঁচে থাকতে আমি সুপ্তিকে ভুলতে পারবো না।আমি সুপ্তিকেই চাই।আমার অন্য কাউকে লাগবে না।আর আমাকে মারার পেছনে সুপ্তির হাত নেই।ওও নিজের মতো চেষ্টা করেছে আমাকে বাঁচানোর জন্য।
-আর একটা কথাও বলবি না।এখন চুপ কর।
-আম্মু আমি এখন সুপ্তির কাছে যাবো।সুপ্তি নিশ্চয়ই বিপদে আছে।আমার অপেক্ষায় আছে।দুদিন ধরে কারো কোনো খুঁজ খবর নেই।কথা গুলো বলে অপূর্ব বেড থেকে উঠতে নিলে তার মা বাঁধা দিয়ে বলে,,,,
-আমি এই অবস্থায় তোকে এখন কোথাও যেতে দিবো না।তোর শরীর এখন খুবই দুর্বল।ডাক্তার বলেছে তোর ফুল রেস্ট দরকার।এই মুহুর্তে তুই কোথাও যাবি না।
-আম্মু তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো।সুপ্তির খুব বিপদ।ওও আমার উপর ভরসা করে আছে।এখন যদি আমি না যাই,ও খুব কষ্ট পাবে।মনে করবে পৃথিবীর সব ছেলে এক রকম।ওর মনে ছেলেদের জন্য নেগেটিভ ধারণা তৈরি হবে।আমাকে প্লীজ যেতে দাও।
-আমি কিছুতেই এখন তোকে যেতে দিবো না।তোর শরীর ভালো না।সুস্থ হলে যেখানে খুশি যাস।কিন্তু এখন তোকে আমি কিছুতেই একা ছাড়বো না।অপূর্ব তার মাকে বুঝাতে ব্যর্থ হলো।কিন্তু অপূর্বের একদম ভালো লাগছিল না।তার মন সুপ্তির কাছে পড়ে আছে।সারাটা দিন অপূর্ব হসপিটালের বেডে চটপট করে কাটায়।সন্ধ্যায় অপূর্বকে রিলিজ করে দিলে তার মা বাবা তাকে বাসায় নিয়ে আসে।এর মধ্যে অপূর্ব কয়েকবার বাইরে বের হতে চেয়েছিল।কিন্তু তার বাবা মা তাকে বাইরে বের হতে দেয় নি।অপূর্বের খুব ভয় লাগছিল।সুপ্তির নাম্বারও অফ।অপূর্ব অস্থিরতায় বিছানায় শোয়ে থাকতে পারছিল না।অপূর্বের খুবই ইচ্ছে করছিল জোরে কিছুক্ষণ কান্না করতে।কিন্তু ছেলেরা চাইলেও কাঁদতে পারে না।নিরবে সব রকম কষ্ট সহ্য করতে হয়।অপূর্ব কিছুতেই তার মাকে বুঝাতে পারলো না।মাঝ রাতে অপূর্ব নিজের বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
চলবে———