#মায়াবিনী
সুরমা
পর্ব : ১৫+১৬
সুপ্তির সারা রাত ঘুম হলো না।বার বার অপূর্বের কথা মনে পড়ছিল।বিছানায় শোয়ে এপাশ ওপাশ করছিল।আর চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল।এত কষ্ট আগে কখনও পায় নি সুপ্তি।ভালোবেসে আজ যতটা কষ্ট পেলো।ভোরের দিকে সুপ্তির চোখ দুটি লেগেছিল।এর আগে শুধু কান্নাই করলো।হাজার কথা মনের মধ্যে হানা দিলো।অপূর্ব নিশ্চয় আমার কলের জন্য অপেক্ষা করছে।নিশ্চয় আমাকে খুব মিস করছে।এখন কি করছে?আমার অপেক্ষায় আছে নাকি ঘুমিয়ে গেছে?আরো কতকি মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
অপরদিকে অপূর্ব চিন্তায় পড়ে যায়।কে কলটা রিসিভ করলো।কোনো প্রবলেম হলো কিনা।এর পর অপূর্ব সুপ্তিকে আরো কয়েকবার কল করেছিল।কিন্তু ফোন সুইচ অফ।এতে অপূর্বের টেনশন আরো বেড়ে যায়।সুপ্তির সাথে কথা বলতে না পেরে অপূর্ব অস্থির হয়ে উঠে।বাসার সবাই যখন ঘুমে তলিয়ে তখন অপূর্ব বাসা থেকে বের হয়ে সুপ্তিদের ফ্ল্যাটের সামনে চলে আসে।সুপ্তির ব্যালকনির দরজা জানালা বন্ধ।এটা দেখে অপূর্বের আরো বেশি খারাপ লাগছিল।অপূর্ব কোনোভাবেই সুপ্তির সাথে যোগাযোগ করতে পারছিল না।অপূর্ব সারা রাত সুপ্তিদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।অবশেষে ভোর ৬টায় নিজের বাসায় ফিরে আছে।সারা রাত না ঘুমিয়ে থাকার জন্য অপূর্বকে খুব এলোমেলো লাগছিল।সকালে ব্রেকফাস্ট না করেই আজ অপূর্ব অফিসের জন্য বের হয়ে আসে।সকাল থেকে সে সুপ্তির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।অপূর্বের খুব নার্ভাস লাগছিল।একবার সুপ্তির ফোনে কল করে।একবার ঘড়ির দিকে তাকায়।হঠাৎ অপূর্ব দেখে সুপ্তি আসছে।কিন্তু সুপ্তির চোখ মুখ একদম ফোলে গেছে।সুপ্তির মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।অপূর্ব একটু সুপ্তির দিকে এগিয়ে এসে বলে,,,
-তোমার ফোন বন্ধ কেন?তোমাকে কতো কল করেছি জানো?রাতে তো একজন পুরুষ তোমার ফোনটা রিসিভ করেছিল।তারপর থেকে তোমার ফোন অফ।কতো টেনশনে যে আমার রাতটা কাটলো শুধু আমিই জানি।আর তোমার একি অবস্থা?মনে হয় সারা রাত ধরে কান্না করেছো।যার জন্য মুখের এই অবস্থা হয়েছে।
-তুমি সব সময় এতো প্রশ্ন একসাথে করো কেন???একটা একটা করে করতে পারো না??
-আমি এমনেই।এখন বলো কি সমস্যা হয়েছে।সুপ্তি অপূর্বকে সবটা বিষয় খুলে বললে অপূর্ব চুপটি হয়ে থাকে।সুপ্তি আবার কান্না করতে থাকে।অপূর্ব বলে,,,
-কান্না করো না।কিছু হবে না।আমি আছি তো।
-তুমি আমার ফ্যামিলির লোকদেরতো চিনো না।ওরা কখনওই আমাদের রিলেশনটা মেনে নিবে না।
-আমাদের ভালোবাসা সত্যি হলে কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।তুমি প্লীজ একটু শান্ত হও।আমি বাসায় গিয়ে আম্মুর সাথে কথা বলবো।আব্বু আম্মুকে কালকেই তোমাদের বাসায় পাঠাবো।
-নাহ,এখন এটা করো না।তাহলে সমস্যা হবে।আর আমার আব্বু যদি জানে আমাদের রিলেশনের কথা।তাহলে দুনিয়া উল্টে গেলেও তোমাকে আর আমাকে এক হতে দিবে না।
-তাহলে কি করবো বলো?কি করলে তোমার আব্বু ভাইয়া আমাকে মেনে নিবে??আর একটা ছেলে খারাপ ছিল বলেকি সব ছেলেরাই খারাপ??সবাই কি এক?
-জানি না।আজ একটু সময় হবে তোমার??
-কেন?
-তোমার যদি অফিসে ইমারজেন্সি কোনো কাজ না থাকে তাহলে আমাকে নিয়ে কোথাও একটু যাও।দুজনে আজ কোথাও ঘুরতে চাই।এসব থেকে কিছুটা সময় দূরে থাকতে চাই।
-আজ তোমার ক্লাস নেই?ক্লাসে যাবে না??
-আমার কিছু ভালো লাগছে না।ইম্পরট্যান্ট ক্লাস নাই।
-ঠিক আছে।তাহলে চলো।অপূর্ব সুপ্তিকে নিয়ে রিকশা দিয়ে লেকের কাছে চলে আসে।দুজন পাশাপাশি বসে আছে।কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলছে না।সুপ্তির মন খারাপ।কিন্তু অপূর্বও বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না।অপূর্বরও অনেক টেনশন হচ্ছে।কিন্তু,এখন সুপ্তির সামনে সেটা প্রকাশ করলে সুপ্তি আরো বেশি টেনশন করবে।অপূর্ব তাই নিজেকে শান্ত রেখেছে।অপূর্ব নিজের একটা মোবাইল সুপ্তির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,,,,
-এই মোবাইলটা তোমার কাছে রাখো।শুধু মাত্র নিজের প্রয়োজনে কল দিলে বের করো।নাহলে লুকিয়ে রাখবে।
-এমনিতে আমার মোবাইলের প্রয়োজন পড়বে না।
-তোমার না পড়লেও আমার পড়বে।আমি কল করবো।রাখো ফোনটা।সুপ্তি কথা না বাড়িয়ে অপূর্বের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে নিজের পার্সে রেখে দেয়।অপূর্ব সুপ্তিকে নিয়ে অনেক জায়গায় ঘুরে।এখন সুপ্তির অনেকটাই ভালো লাগছে।মনটা হালকা হয়েছে।সারাদিন সুপ্তি অপূর্বের সাথে থেকে ৪টার দিকে বাসায় ফিরে আসে।এর বেশি লেট করলে বাসার সবার সামনে জবাবদিহি করতে হবে।
অপূর্ব সুপ্তিকে তার বাসার সামনে নামিয়ে রেখে সেও নিজের বাসায় চলে আসে।সারারাত না ঘুমিয়ে থাকার জন্য সুপ্তি বিছানায় শুয়েই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যায়।অপূর্ব বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করে।তারপর মোবাইলটা হাতে নিয়ে সুপ্তিকে কল করে।রিংটোন বাজছে।কিন্তু সুপ্তি কল রিসিভ করছে না।অপূর্বের তো খুব রাগ লাগছে।অনেক্ষণ কল হওয়ার পরও সুপ্তি কল রিসিভ করে নি।করবেই কেমনে?মােবাইলতো সাইলেন্ট করা।অপূর্বও ক্লান্ত হয়ে একসময় ঘুমিয়ে যায়।সুপ্তির ঘুম ভাঙ্গে একেবারে রাত ৯টায়।ঘুম থেকে উঠেই মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে অপূর্ব ৬৩টা কল করেছে।সুপ্তি এবার শেষ।সুপ্তির এবার ভয় লাগলো।নিশ্চয় অপূর্ব রেগে গেছে।অপূর্ব যখনেই কল করে সুপ্তি তখন অপূর্বের কল রিসিভ করতে পারে না।সুপ্তি ভয়ে ভয়ে অপূর্বকে কল করে।রিং হতে হতে কলটা কেটে যায়।সুপ্তি আবার অপূর্বের নাম্বার ডায়াল করে।এবার কলটা হতেই অপূর্ব রিসিভ করে।কিন্তু কোনো কথা বলে না।সুপ্তি ভয়ে ভয়ে বলে,,,,,
-আম সরি।আমি ঘুমিয়ে ছিলাম।আর মোবাইলতো সাইলেন্ট ছিল।তাই বুঝতে পারি নি।
-……………
-কি হলো,কথা বলবে না??বললাম তো আমার ভুল হয়ে গেছে।আর এমন হবে না।
-……………..
-কথা বলোনা প্লীজ।তুমি এভাবে থাকলে আমার খারাপ লাগে।
-তুমি সব সময় এমন করো কেন?হুম?কোনো দিনেই একবার কল করলে তোমাকে পাই না।
-বললাম তো আমি ঘুমিয়ে গেছিলাম।আর মোবাইল সাইলেন্ট ছিল।সরি,,,।সরি বলার সময় সময় সুপ্তির কণ্ঠটা কাঁপছিল।অপূর্ব বুঝতে পারছে,এখন আর একটু কিছু বললেই সুপ্তি কান্না করে দিবে।অপূর্ব বলে,,,,
-ইটস ওকে।কি করো এখন??
-মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম।তুমি কি করো?
-আমিও ঘুমাচ্ছিলাম।তোমার কলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেছে।খেয়েছো কিছু??
-না।
-তাহলে যাও,ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নাও।আমি পরে কল করবো।
-হু,আচ্ছা।অপূর্ব কলটা কেটে দিলে সুপ্তি বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়।আজ দিন ভালোই গেলো সুপ্তির।ভালোবাসা হলো ফুলের ববুকে থাকা সৌরভ। দুটি হৃদয় এক হলেই সুগন্ধ ছড়ায়।ভালোবাসায় বাসায় ভরপুর হয়।চারদিক রঙিন হয়ে উঠে।সব সময় যদি এভাবেই থাকতো।তাহলে ভালোবাসা হতে পৃথিবীর জান্নাত। সুপ্তি গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে রুম থেকে বের হয়ে দেখে ডয়িং রুমে তার বাবা বসে খবরের কাগজ পড়ছে।সুপ্তি মাথা নিচু করে ডাইনিং রুমে যেতে লাগলে তার আব্বু বলে,,,,,,
-শরীর খারাপ??বাবার কথা শোনে সুপ্তি দাঁড়িয়ে বলে,,,,,
-না,শরীর ভালো আছে।
-তাহলে কলেজ থেকে আসার পর থেকেই এতো ঘুম পাড়লি কেন??আমিতো মনে করেছিলাম শরীর খারাপ লাগছে।
-আসলে আজ ক্লান্ত লাগছিল তো তাই কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতেই পারছি না।
-এখন শরীর ঠিক আছে??
-হু,
-তাহলে এখন গিয়ে খেয়ে নে।ইদানীং খাওয়াদাওয়া মনে হয় ঠিক সময়ে করছিস না।যার ফলে অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাস।সুপ্তির আর কোনো কথা না বলে সোজা ডাইনিং রুমে চলে আসে।খাওয়াদাওয়া করে কিছুক্ষণ ভাবীর সাথে গল্প করে।
চলবে——–
#মায়াবিনী
সুরমা
পর্ব : ১৬
সুপ্তি নিজের রুমে এসে উপুড় হয়ে শোয়ে অপূর্বের সাথে কথা বলতে থাকে।কতক্ষণ তাদের কথা চললো কেউ জানে না।সুপ্তি দুনিয়া ভুলে যায় যখন সে অপূর্বের সাথে কথা বলে।চারপাশে তখন সে শুধু অপূর্বকেই ফিল করে।ভালোবাসা কি অদ্ভুত মুগ্ধতায় ভরপুর।দুটি হৃদয় এক হলেই সুখ এসে ভিড় করে।সুখে সুখে খেলা চলে।আর দুটি প্রাণ হারিয়ে একে অপরের ভেতরে।সুপ্তিও যেন অপূর্বতে হারায়।সুপ্তি হঠাৎ কারো উপস্থিতি ঠের পেয়ে তাড়াতাড়ি মোবাইলটা বালিশের নিচে চাপা দিয়ে উঠে বসেই চমকে যায়।তার পেছনে তার ভাই শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে।সুপ্তির কলিজা একদম শুকিয়ে যায় শুভ্রকে দেখে।শুভ্র কি শোনলো কি না কে জানে।মোবাইল কি দেখে ফেলেছে??সুপ্তির ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।বারবার ডুগ গিলতে থাকে।ভয়ে সুপ্তির কপালে ঘাম জমা হয়ে গেছে।হাত পাও একটু একটু কাঁপতে শুরু করেছে।শুভ্র গম্ভীর গলায় বলে,,,,,
-কার সাথে কথা বলছিলি??শুভ্রর কথা শোনে সুপ্তি আমতা আমতা করে বলে,,,,
-ক,ই। কা,রো সা,থে কথা বলি নি।
-আমি বাইরে থেকে শোনলাম তুই হেসে হেসে কারো সাথে কথা বলছিলি।
-আমিতো গা,,,ন গাইছিলাম।,শুভ্র সারা রুম ভালো ভাবে দেখে।ব্যালকনির দরজা ভালো করে আটকে দিয়ে সুপ্তির সামনে এসে বলে,,,,,
-আমি নিজের কানে তোকে কারো সাথে কথা বলতে শোনেছি।কিন্তু কোনো প্রমাণ পেলে বুঝতি।আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি তুই কোনো গণ্ডগোল পাকাচ্ছিস।আমি যা চিন্তা করছি সেরকম যদি কিছু হয়,তাহলে তোর দুর্দিন শুরু।আর যদি আমি ভুল কিছু কল্পনা করে থাকি তাহলে ভালো।শুভ্র কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে শান্ত করে নিলো।তারপর সুপ্তির পাশে বসে বললো,,,
-এখনো সময় আছে,উল্টাপাল্টা কিছু মাথায় ঘুরপাক করলে বল।আমরা তোর ভালোই চাই।আবেগের বশত জীবন নষ্ট করবি না।একজনকে তো দেখলি।একটা ভুলের জন্য অকালে তার জীবন চলে গেছে।আমি,আব্বু তোকে খুব ভালোবাসি।কোনোদিন চাইবো না তোর কোনো ক্ষতি হোক।বরং আমরা চাইবো তুই সারা জীবন ভালো থাক।তোর কোনো ইচ্ছাই কোনো দিন অপূর্ণ রাখি নি।সব সময় তোর মুখে হাসি দেখার জন্য চেষ্টা করেছি।ভবিষ্যতেও তাই চাইবো।আশা করি এমন কিছু করবি না যাতে আমরা কষ্ট পাবো।কথা গুলো বলে শুভ্র সুপ্তির রুম থেকে চলে যায়।সুপ্তির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে।সুপ্তি বুঝতে পারছে না সে কি করবে এখন।যা করছে তা ঠিক করছে নাকি ভুল কিছু করছে।সুপ্তির পক্ষে এখন না অপূর্বকে ছেড়ে দেওয়া সম্ভব।না নিজের পরিবারের কাউকে বোঝানো সম্ভব।সুপ্তি যেন সাগরের মাঝখানে সাঁতার কাটছে।কোনো কূলেই সে যেতে পারছে না।সুপ্তির বুক থেকে ভারী কষ্ট বের হচ্ছে।সুপ্তি বিছানায় শোয়ে শব্দ করে কান্না করতে থাকে।সুপ্তি মোবাইলটা বালিশের নিচে রাখার পরও অপূর্ব লাইন কাটে নি।সে সুপ্তি আর তার ভাইয়ের কথা গুলো আবছা শোনেছে।এখন সুপ্তির কান্নাটাও শোনতে পাচ্ছে।অপূর্ব সুপ্তিকে অনেক ডেকেছে মোবাইলে।কিন্তু সুপ্তি কন্টিনিউ কান্না করেই যাচ্ছে।কিছুতেই থামছে না।সুপ্তির কান্না শোনে অপূর্ব অস্থির হয়ে উঠে।অপূর্ব কলটা কেটে দিয়ে আরো কয়েকবার কল করে।কিন্তু সুপ্তি কল রিসিভ করে নি।অপূর্বের খুব টেনশন লাগছে।অপূর্ব নিজের বাসা থেকে বের হয়ে আসে।সুপ্তিদের বাসার সামনে এসে দেখে ব্যালকনির দরজা বন্ধ।অপূর্ব আবার সুপ্তির নাম্বার ডায়াল করে।কল হয়ে যাচ্ছে কিন্তু সুপ্তি কলটা রিসিভ করছে না।অপূর্ব সুপ্তিদের প্লেটে ডুকে দেখে মেইন দরজা খুলা।অপূর্ব দরজার ফাঁকে উঁকি দিয়ে দেখে ডয়িং রুমে কেউ নেই।অপূর্ব আর কিছু চিন্তা না করেই সুপ্তিদের বাসায় ডুকে যায়।অপূর্ব সুপ্তির রুমে গিয়ে দেখে সুপ্তি বিছানায় শুয়ে কান্না করছে।অপূর্ব সুপ্তির রুমের দরজাটা লাগিয়ে দেয়।দরজা লাগানোর শব্দে সুপ্তি মাথা তুলে দেখে অপূর্ব।এই সময় অপূর্বকে নিজের রুমে দেখে মনে হচ্ছে সুপ্তি ভূত দেখেছে।সুপ্তি এক লাফে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। অপূর্বের সামনে এসে বলে,,,
-তুমি এখানে কি করে এলে???ব্যালকনির দরজাতো ভেতর থেকে লাগানো।
-মেইন দরজা দিয়ে ডুকেছি।
-একি?কেউ দেখে নি?আব্বু,ভাইয়া
-না।কেউ দেখে নি।
-তুমি এভাবে আসতে গেলে কেন?এমনিতেই কতো রকম সমস্যা।এখন যদি আবার তুমি কারো চোখে পড়ো,,,,
-আমার ফোনটা রিসিভ করছিলে না কেন??অপূর্বের কথায় সুপ্তি কোনো উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।অপূর্ব সুপ্তির দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে সুপ্তির গালে হাত রেখে মাথা তুলে।তারপর বলে,,,
-আমি তোমার আর ভাইয়ার সব কথা শুনেছি।কিন্তু,একটা কথা বলো,আমিতো তোমাকে ভালোবাসি?বাসি না???
-হু,,
-তাহলে দেখো আমাদের কোনো সমস্যা হবে না।সব বাঁধা আমরা অতিক্রম করবো।আমি বাসায় তোমার কথা বলেছি।আম্মু তোমাকে দেখতে চেয়েছে।আর জানো তো,আমার আম্মু খুব ভালো।তোমার আব্বুর কাছে যখন আম্মু তোমাকে চাইবে দেখে নিও,তোমার আব্বু ভাইয়া আপত্তি করতে পারবে না।সুপ্তির চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তে থাকে।অপূর্ব সুপ্তির পানি মুছে দিয়ে বলে,,,,
-এই পাগলি,কাঁদছো কেন??সুপ্তি অপূর্বকে জড়িয়ে ধরে আরো বেশি কান্না করতে থাকে।অপূর্বও সুপ্তিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।সুপ্তি বলে,,,,,
-আমার খুব ভয় করছে।আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
-তোমার কি মনে হয় তোমাকে ছাড়া আমি ভালো থাকবো??আমরা দুজন দুজনের জন্য।কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না ইনশা আল্লাহ।অপূর্ব সুপ্তিকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে চোখের পানিটা মুছে দিয়ে বলে,,,
-আর যদি কখনও কাঁদতে শোনি,তাহলে দেখো তোমার কি অবস্থা করি।যা হোক,কান্না না করে বুদ্ধি কাটিয়ে সেটার সমাধান করতে হবে।আর আমি যদি কল করি আর তোমাকে না পাই,,,,,,
-সরি
-কিসের সরি?জানো তখন আমার কি পরিমাণ রাগ লাগে যখন এতো কল করার পরও তোমাকে পাই না?যাই হোক,সুযোগ থাকলে আমার কলটা রিসিভ করবা।আমারও তো টেনশন হয় তাই না??
-হু,,,অপূর্ব আর সুপ্তি দুজনে কথা বলছে।এমন সময় সুপ্তির ভাই শুভ্র দরজায় নক করে।সুপ্তি আর অপূর্ব দুজনেই লাফিয়ে উঠে।সুপ্তি বলে,,,,,,
-এখন কি হবে??এই সময় ভাইয়া আবার এখানে কি করছে?তুমি যাবে কি করে?ভাইয়া কি তোমাকে দেখেছে?
-না,দেখে নি তো
-তাহলে এখন আমার রুমে কেন এলো??
-আমি কি করে বলবো??আমি ব্যালকনি দিয়ে চলে যাচ্ছি।পরে তুমি দরজা খুলে দিও।অপূর্ব ব্যালকনির দরজা খুলে পাইপ ধরে নিচে নেমে আসে।সুপ্তি দাঁড়িয়ে দেখে অপূর্বকে আর দেখা যাচ্ছে না।তখন এসে দরজা খুলে দেয়।দরজা খুলার সাথে সাথে শুভ্র রুমের ভেতরে চলে আসে।রুমের আনাচেকানাচে সব জায়গা ভালোকরে দেখে।তারপর সুপ্তির সামনে এসে বলে,,,,
-কার সাথে কথা বলছিলি??
-কারো সাথে কথা বলি নি।
-মিথ্যা কথা বলবি না।আমি নিজের কানে শোনেছি।তোর রুম থেকে ছেলের কণ্ঠ আসছিল।দরজা খুলতে এতো লেট হলে কেন?
-আমি ওয়াশ রুমে ছিলাম।তাই লেট হয়েছে।
-আমার সামনে একদম মিথ্যা কথা বলবি না বললাম না??।তোকে এতো করে বোঝানোর পরেও তুই কিছু মাথায় নিচ্ছিস না।আমিতো ঠিকি খুঁজে বের করবো তুই কি করছিস।আমার সন্দেহ যদি ঠিক হয়,তাহলে………
শুভ্র হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে যায়।সুপ্তি গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।এবার শুভ্রর কথায় সুপ্তির একটুকুও কষ্ট লাগে নি।সুপ্তি বোঝতে পেরেছে,তাকে এমন আরো অনেক কিছু সহ্য করতে হবে।সুপ্তি গিয়ে বিছানায় শোয়ে পড়ে।আবার সেই একটা সকালের প্রত্যাশা,যখন অপূর্বের সাথে তার দেখা হবে।কিছুক্ষণ গল্প হবে।পাশাপাশি হাঁটা হবে।হাতে হাত রাখা হবে।
চলবে——-