#মায়াবিনী
সুরমা
পর্ব : ১৩+১৪
সুপ্তি জানে না তার বাবা তাকে কি বলবে।তবুও তার অনেক ভয় করছে।সুপ্তির বাবা, ভাই সুপ্তিকে অনেক ভালোবাসে।মা মারা গেলেও কোনোদিন সেটা বুঝতে দেয় নি তার বাবা।সব সময় ভালোবাসায় ভরিয়ে রেখেছে।আগলে রেখেছে সুপ্তিকে। সবার কাছ থেকে অসম্ভব ভালোবাসা পেয়েছে।সুপ্তি যা আবদার করে তার বাবা ভাই সব পূরণ করে।এর আগে সুপ্তির এতো ভয় কখনও লাগে নি।কিন্তু আজ কেন যে এতো ভয় লাগছে সুপ্তি বুঝতে পারছে না।সুপ্তি ভয়ে ভয়ে তার বাবার দিকে ফিরে তাকায়।তার বাবা একটু এগিয়ে এসে বলে,,,,
-আজ এতো লেট কেন?সুপ্তি কাঁপা কণ্ঠে বলে,,,
-আ,স,লে আজ একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম।তাই লেট হয়ে গেছে।
-দুপুরে কি খেয়েছিস??
-ফুচকা খেয়েছি।
-এরকম করলে হবে?শরীর ঠিক থাকবে এসব খাবার খেলে??যা করবি তার আগে খেয়ে নিবি।খেয়ে তারপর ঘুরাঘুরি করবি যত মন চায়।যা এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।কিছু খেয়ে নিবি।বাবার কথা শোনে সুপ্তি তার বাবার দিকে হা করে থাকিয়ে থাকে।সুপ্তি মনে করেছিল আজ এতো দেরি করে আসার জন্য নিশ্চয় তাকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হবে।কিন্তু তার ভাবনার মতো কিছুই হলো না।এবার সুপ্তির অনেকটা ভালো লাগছে।খুশির ঠ্যালায় নাচতে ইচ্ছে করছে।সুপ্তি নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে অপূর্বকে কল করে।রিংটোন টা শব্দ হতেই অপূর্ব কলটা রিসিভ করে।
-কি করছো?শরীর কি এখনও ব্যথা করছে??ফ্রেশ হয়েছো?কিছু খেয়েছো?ওষুধ খেয়েছো?অপূর্ব একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।কোনোটার আন্স দেওয়ার সুযোগও সুপ্তি পাচ্ছে না।অপূর্বের প্রশ্নের ভান্ডার শেষ হলে সুপ্তি বলে,,,,
-এতো প্রশ্ন এক সাথে করলে কোনটা উত্তর দিবো বলোতো?
-সব গুলোর উত্তরেই দিবে।কি করছো এখন??
-শুয়ে আছি।জানো,আমি যে এতো লেট করে বাসায় ফিরলাম তার জন্য আব্বু আমাকে কিছু বলে নি।আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।এখন আমার খুব ভালো লাগছে।
-হুম,বলবে কেন?উনিতো জানেন,উনার মেয়ের সাথে জামাইও ছিল।আর উনার জামাই যতক্ষণ উনার মেয়ের পাশে আছে ততক্ষণ কোনো টেনশন করতে হবে না।
-এ্যা,বলছে তোমাকে।আব্বু যদি জানতো আমি কোনো ছেলের সাথে ছিলাম।তাহলে আমার বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিতো।যা হোক,বাদ দাও এসব কথা।এখন কি করছো তুমি??
-এইতো,মাত্র ফ্রেশ হয়ে আসলাম।তুমি কি করছো??
-আমি শুয়ে আছি।আচ্ছা এখন রাখি।ফ্রেশ হয়ে আসি।পরে কথা হবে।
-ওকে,যাও।অপূর্ব সুপ্তির সাথে কথা বলে ফোনটা রাখতেই তার মা রুমে আসে।অপূর্ব তার মাকে দেখেই গিয়ে জড়িয়ে ধরে।এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে যে তার মা নড়তেও পারছিল না।অপূর্বের মা বলে,,,,,,
-কি করছিস?ছাড়,এভাবে কেউ জড়িয়ে ধরে।অপূর্ব তার মায়ের কথা শোনে হালকা একটু লোস করে ধরে।কিন্তু ছাড়ে নি।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
-আম্মু,
-কি ব্যাপার হুম??আজ এতো খুশি??
-হু,আমি দুনিয়ার সব থেকে বেশি খুশি।অপূর্বের কথা শোনে অপূর্বের বাবা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,,,
-নিশ্চয় কাউকে আবার নিজের জালে আবদ্ধ করছো নয়তো এতো খুশির কারন দেখি না।অপূর্ব দরজার সামনে তার বাবাকে দেখে তার মাকে ছেড়ে দেয়।অপূর্বের হাসি খুশি মুখটা মলিন হয়ে যায়।অপূর্ব মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।অপূর্বের মা বলে,,,,
-তোমার চোখে কি কোনদিন আমার ছেলের ভালোটা পড়বে না?সব সময় আমার ছেলের দোষ খুঁজে বেড়াও।
-তোমার ছেলের ভালোর থেকে খারাপটাই বেশি করে।তাই তার খারাপ দিকটা বেশি চোখে পড়ে।তাছাড়া ইদানীং তোমার ছেলের মতিগতি একদম ঠিকটাক লাগছে না।আমি বিষয়টা নিয়ে খুব টেনশনে আছি।কোনদিকে কি ঝড় তুফান আসবে সেটাই শুধু বুঝতে পারছি না।কথা গুলো বলে অপূর্বের বাবা রুম থেকে বের হয়ে যান।অপূর্বের মনটা খারাপ হয়ে যায়।অপূর্ব গিয়ে সোফায় বসে যায়।অপূর্বের মা গিয়ে পাশে বসে অপূর্বের মাথায় হাত দিয়ে বলে,,,,,
-মন খারাপ করিস না।জানিসেই তো তোর বাবা এরকমেই।
-আব্বু আমাকে কোনোদিনও বুঝলো না।আমি কি এতোটাই খারাপ?সব সময় সবার ক্ষতি করি??কথা গুলো বলে অপূর্ব রুম থেকে বের হয়ে আসে।অপূর্বের মাও পিছন পিছন এসে বলে,,,,,
-কোথায় যাচ্ছিস?শোন,,,,,,,,,অপূর্ব তার মাকে পাত্তা না দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে সুপ্তিদের বাসার সামনে গিয়ে সুপ্তিকে কল করে।একের পর এক কল করেই যাচ্ছে।কিন্তু সুপ্তি কল রিসিভ করছে না।অপূর্বের এবার রাগ লাগছিল।এমনিতেই বাসা থেকে কতো গুলো কথা শোনে আসলো এখন আবার এই মেয়েও ফোন রিসিভ করছে না।অপূর্ব দেয়াল টপকে পানির পাইপ দিকে উপরে চলে আসে।ব্যালকনি দিয়ে সুপ্তি রুমে ডুকে যায়।সুপ্তি ওয়াশরুম থেকে মাত্র শাওয়ার নিয়ে রুমে এসেই চমকে যায়।এই সময় অপূর্ব এখানে কি করছে।একটু আগেই তো দুজনের দেখা হয়েছিল।সুপ্তি অবাক হয়ে বলে,,,
-তুমি এখানে কি করছো??সুপ্তির কথা শোনেও অপূর্ব কিছু বলে নি।অপূর্ব সুপ্তিকে অপলক দৃষ্টিতে দেখছিল।চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছিল।গায়ে টাওয়াল জড়ানো।অপূর্ব ধীর পায়ে সুপ্তির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।অপূর্বকে এগোতে দেখে সুপ্তি পিছনে যেতে থাকে।সুপ্তি পিছনে যেতে যেতে দেয়ালের সাথে পিট ঠেকে যায়।তবুও অপূর্ব এগিয়ে যেতেই থাকে।অপূর্ব গিয়ে একদম সুপ্তির সাথে মিশে যায়।অপূর্ব সুপ্তির এতো কাছে চলে আসে যে,তাদের মাঝে আর কোনো ফাকা নেই।সুপ্তির নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।বুকের ভেতরে কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে পিটাচ্ছে। সুপ্তির ঠোঁট সহ সারা শরীর কাঁপছে।অপূর্ব সুপ্তির ঠোঁট দেখে যেন পাগল হওয়ার উপক্রম।
নিজেকে কিছুতেই স্থির করতে পারছে না।অপূর্ব নিজের আঙ্গুল দিয়ে আলতো করে সুপ্তির ঠোঁট স্পর্শ করতেই সুপ্তি পাথর হয়ে যায়।চোখ দুটি বন্ধ করে ফেলে।ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিতে থাকে।অপূর্ব সুপ্তির কোমড় জড়িয়ে ধরে সুপ্তিকে নিজের সাথে আরো মিশিয়ে ফেলে।অপূর্ব নিজের নাক সুপ্তির মুখে ঘষতে থাকে।সুপ্তি অপূর্বের টি-শার্ট কামছে ধরে।অপূর্ব ফিসফিস করে বলে,,,,,
-ক্যান আই কিস ইউ জান???অপূর্বের কথায় সুপ্তি কিছু বলে নি।সে চোখ বন্ধ করেই রেখেছে।অপূর্ব যেন নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখতে পারলো না।সে সুপ্তির ঠোঁটে ডুব দেয়।পাগলের মতো সুপ্তির ঠোঁটে কিস করতে থাকে।সুপ্তিও অপূর্বের মাথার চুল শক্ত করে কামছে ধরে।চলতে থাকে দুজনের পাগলামো। অনেক্ষণ পর অপূর্ব সুপ্তির ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে তাকিয়ে দেখে সুপ্তি তখনও নিজের চোখ দুটি বন্ধ করে রেখেছে।অপূর্ব সুপ্তিকে বিছানায় ফেলে দিয়ে নিজে সুপ্তির উপর সমস্ত ওজন ছেড়ে দিয়ে সুপ্তির গলায় পাগলের মতো হামলে পড়ে।অপূর্ব কি করছে বা কি করতে যাচ্ছে তার সেদিকে কোনো হুশ নেই।অপূর্ব সুপ্তির গলা থেকে আস্তে আস্তে নিচে নামতে থাকে। অপূর্ব সুপ্তির পরনের টাওয়ালে হাত রাখতেই সুপ্তি অপূর্বের হাত ধরে ফেলে।অপূর্বের স্পর্শে সুপ্তি তো পাথরের মতো হয়ে যায়।জীবনে প্রথম কোনো ছেলের স্পর্শ। এই স্পর্শ যে কাউকে এতো পাগল করে দেয় এর আগে সুপ্তির এটা জানা ছিল না।সুপ্তিরও ইচ্ছে করছে আজ সুখের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে যেতে।কিন্তু,,,,,,,,,
এই সময় হঠাৎ করে বাইরে থেকে সুপ্তির বাবার গলা ভেসে আসে।সুপ্তির দরজায় নজ করে সুপ্তিকে ডাকতে শুরু করে।সুপ্তি অপূর্বকে জোরে এক ধাক্কা মেরে উঠে বসে।অপূর্ব সুপ্তির ধাক্কা সামলাতে না পেরে নিচে ফ্লোরে পড়ে যায়।অপূর্ব ফ্লোরে পড়ে আবালের মতো হয়ে যায়।সে কিছুই বুঝতে পারছে না।অপূর্ব বোকার মতো সুপ্তির দিকে তাকিয়ে থাকে।সুপ্তি তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে বলে,,,,,
-কি হলো?এখনো বসে আছো কেন??শোনছো না আব্বু দরজায় নক করছে। তুমি তাড়াতাড়ি যাও।আব্বু তোমাকে দেখলে উপায় নেই।সুপ্তি তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে ডুকে যায়।চেঞ্জ করে এসে দেখে অপূর্ব আগের মতোই নিচে বসে আছে।সুপ্তি অপূর্বের সামনে গিয়ে বলে,,,,
-এখনো বসে আছো কেন??তাড়াতাড়ি যাও।
-আমি যাবো না।অপূর্বের কথা শোনে সুপ্তি অবাক হয়ে বলে,,,,,
-যাবে না মানে কি?
-যাবো না মানে যাবো না।তুমি যাও,আংকেল ডাকছে দরজা খুলে দাও।
-মানে কি?আব্বু আমার রুমে ডুকে যদি তোমাকে দেখে তাহলে কি হবে জানো??ইশ,এমন করছো কেন?যাও প্লীজ,,,
-আমাকে এভাবে ফেলে দিলে কেন??আমার কি ব্যথা লাগে না???
-সরি,ভুল হয়ে গেছে।আর এমন হবে না।তুমি এখন যাও।প্লীজ যাও।সুপ্তি অপূর্বকে টেনে তুলে ব্যালকনিতে নিয়ে আসে।অপূর্ব মুখটা কালো করে রাখে।সুপ্তি ভালো করেই বুঝতে পারছে অপূর্ব রাগ করেছে।সুপ্তি একটু এগিয়ে গিয়ে অপূর্বের পায়ে ভর দিয়ে অপূর্বের ঠোঁটে গভীরভাবে একটা চুমু খায়।অপূর্ব কল্পনাও করে নি সুপ্তি কখনও এটা করবে।এতক্ষণের সব অভিমান আকাশে উড়ে যায়।সুপ্তি অপূর্বের চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে বলে,,,,
-আম সরি।এবার যাও।মন খারাপ করো না লক্ষ্মীটি।অপূর্ব সুপ্তির কোমড় আকড়ে ধরে সুপ্তির ঠোঁটে চুমু খেতে নিলে সুপ্তি আঙ্গুল দিয়ে অপূর্বের ঠোঁট চেপে ধরে বলে,,,,,
-এখন যাও প্লীজ।প্লীজ,,
-একটু,,,,,
-অন্য সময়।এখন না।যাওতো। সুপ্তি অপূর্বকে একমতো জোর করেই বের করে।অপূর্ব নিচে নেমে আসলে সুপ্তি জোরে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,,,,
-পাগল একটা,,,,,,,,,
চলবে——–
#মায়াবিনী
সুরমা
পর্ব : ১৪
সুপ্তি ব্যালকনির দরজা বন্ধ করে রুমে ঢুকে যায়।এসে রুমের দরজা খুলে দেখে দরজার সামনে তার বাবা আর ভাবী দাঁড়িয়ে আছে।সুপ্তির বাবা বলে সুপ্তিকে ভালো করে দেখে বলে,,,,,,,
-এতো লেট হচ্ছিল কেন দরজা খুলতে???
-ওয়াশরুমে ছিলাম,,,,,
-ওহহহ,আচ্ছা।ঠিক আছে।এখন চল কিছু খেয়ে নিবি।এত সময় কেউ না খেয়ে থাকে?এভাবে চললে কয়দিন পর অসুস্থ হয়ে যাবি।
-হু,চলো।সুপ্তি তার বাবার সাথে গিয়ে খেয়ে নেয়।তারপর বাবা আর ভাবীর সাথে বসে গল্প করতে থাকে।অপূর্ব বাসায় গিয়ে তার গিটারটা বের করে ব্যালকনি গিয়ে বসে।অনেকদিন ধরে গিটারটা হাতেই নেওয়া হয় নি।অপূর্বের আজ এতো ভালো লাগছে যে,চারপাশে যা দেখছে সব কিছুকেই রঙিন লাগছে।অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করছে বুকের ভেতরে।এতো সুখ এর আগে কখনও পায়নি অপূর্ব।বাহিরে মৃদু বাতাস,আর ভেতরে তীব্র আনন্দ।মুহূর্ত টা যেন একদম অন্য রকম।অপূর্ব মোবাইলটা হাতে নিয়ে সুপ্তির একটা ছবি বের করে তন্ময় হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।টানাটানা কাজল কালে হরিণ দুটি চোখ।গোলাপি দুটি ঠোঁট।যা মুহূর্তেই হৃদয় ছুঁয়ে যায়।অপূর্ব মোবাইলটা বুকের মাঝে চেপে ধরে।ভালোবাসা কি অমায়িক বিষয়।কতরকম মায়া মমতায় জড়িয়ে নেয় দুটি হৃদয়।দুদিন আগেও এই মেয়েটাকে চিনতো না অপূর্ব।আর আজ এই মেয়েটাকে নিয়ে তার সমস্ত জগৎ।প্রতিটা মুহূর্ত সুপ্তিকে নিয়ে চিন্তা করা ছাড়া তার অবসর সময় কাটে না।কাজের ফাঁকে ফাঁকেও কল্পনায় কথা হয় দুজনাতে।ঘুমের রাতেও স্বপ্ন একে যায় হৃদয়ে।প্রতিটা দিন শুরু হয় সুপ্তিকে নিয়ে।একটা দিনও যেন কাটতে চায়না সুপ্তিহীনা।কি অদ্ভুদ এক খেলা।ভালোবাসা ভালোবাসায় ভরপুর জীবন। এসব চিন্তা করতে সত্যি ভালো লাগছে অপূর্বের।অপূর্ব চোখ দুটি বন্ধ করে গিটার বাজাতে থাকে।এমন সময় তার মা রুমে ডুকে।অপূর্বের কাঁধে হাত রাখতেই অপূর্ব চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে তার মা।অপূর্ব গিটারটা পাশে রেখে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
-কিছু বলবে?
-হু।আসলে তোর বাবা তোর জন্য মেয়ে দেখেছে।গতকাল আমাকে মেয়ের ছবিও দেখিয়ে ছিল।তোকে বলার মতো সময় সুযোগ কোনোটাই পেলাম না।আমার অবশ্য মেয়ে দেখে পছন্দ হয়েছে।এখন তুই দ্যাখে বল পছন্দ হয় কিনা।মায়ের কথা শোনে অপূর্ব বড় ধরনের একটা শক খায়।অপূর্ব আমতা আমতা করে বলে,,,,,
-এখন বিয়ে??এতো তাড়াতাড়ি কেন??
-এতো তাড়াতাড়ি হলো কোথায়?যথেষ্ট বয়স হয়েছে বিয়ের।তাছাড়া প্রত্যেক বাবা মায়ের এটা দায়িত্ব।এই নে,দেখ মেয়েটাকে।আমার মনে হয় তোরও পছন্দ হবে।অপূর্বের মা ছবিটা অপূর্বের দিকে এগিয়ে দেয়।অপূর্ব বসা থেকে উঠে বলে,,,,
-আম্মু,এখন আমি বিয়ে করতে পারবো না।মানে এই মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না।আমি একজনকে ভালোবাসি।আমি তাকেই বিয়ে করতে চাই।অপূর্বের কথা শোনে অপূর্বের মা অপূর্বের দিকে তাকিয়ে থাকে।অপূর্ব তার মায়ের কোলে মাথা রেখে বলে,,,,
-বিশ্বাস করো আম্মু,সুপ্তি খুব ভালো মেয়ে।তোমার সুপ্তিকে পছন্দ হবে।রূপে গুনে কোনো দিক দিয়ে সে কম নয়।অপূর্বের কথা শোনে অপূর্বের মা বলে,,,,
-মেয়ের বাসা কোথায়?বাবার নাম কি?আমাদের সব ইনফরমেশন দে।আমরা গিয়ে তাদের সাথে কথা বলে আসবো।তার আগে তোর আব্বুর সাথে কথা বলতে হবে।দেখি কি বলে।
-সব দিবো।কিন্তু আমাকে একটু সময় দাও প্লীজ।এখন সুপ্তির পড়াশোনা রানিং।এখন ওর বাবা ভাই বিয়ে দিবে না।কয়েকটাদিন যাক,পরে কথা বলবো।
-ঠিক আছে।তবে সেটা যেন খুব বেশি দেরি না হয়।জানিসতো তোর বাবা যা বলে তা খুব তাড়াতাড়ি করে।আমি না হয় কয়দিন তোর বাবাকে বলে সময় নিবো।
-আম্মু,,এখন আব্বুকে এসব ব্যাপারে কিছু বলো না।সময় হলে আমিই বলবো।এখন কোনো অজুহাত দিয়ে আটকে রাখো প্লীজ।।
-অজুহাত দিয়ে বেশিদিন রাখা যাবে না।আর হ্যা,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার সাথে মেয়ের পরিচয় করিয়ে দিবি।আমি মেয়েকে দেখতে চাই।
-ঠিক আছে।দেবো।অপূর্বের মা অপূর্বের রুম থেকে চলে গেলে অপূর্ব মোবাইল বের করে সুপ্তিকে কল করে।কয়েকবার কল হওয়ার পরও সুপ্তি কল রিসিভ করে নি।অপূর্বের খুব রাগ লাগছে।এই মেয়েটা সব সময় এমন করবে।কল করলেও রিসিভ করবে না।এমনিতেই অপূর্ব টেনশনে পড়ে গেছে।তার বাবা একবার যা বলে তাই করে।যেহেতু বিয়ের কথা একবার বলেছে,এখন যতদিন বিয়ে না করাবে ততদিন শান্তিতে থাকতে দিবে না।অপূর্ব বিষয়টা সুপ্তির কাছে শেয়ার করতে চেয়েছিল।কিন্তু তা আর পারছে না।সুপ্তিতো কলেই রিসিভ করছে না।অপূর্ব কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আবার সুপ্তিকে কল করে।দুই তিনবার কলটা হওয়ার পর রিসিভ করে।অপূর্ব বলে,,
-এই মেয়ে?তুমি এমন কেন?কখন থেকে কল করে যাচ্ছি।মোবাইলটা রেখে কোথায় যাও?একটিবার কলটা রিসিভ তো করবে নাকি?এমনিতেই টেনশনে আছি তার উপর তুমি কল রিসিভ করছো না।কেমন লাগে তখন?কোথায় ছিলে এতক্ষণ??
-কে আপনি??শব্দ দুইটা শোনার সাথে সাথেই অপূর্ব চমকে উঠে।পুরুষ কণ্ঠ?অপূর্ব বুঝতে পারছে না কে কলটা রিসিভ করেছে।সাথে সাথে অপূর্ব কলটা কেটে দেয়।অপূর্ব এবার আরো বেশি টেনশনে পড়ে যায়।তার মাথায় শুধু একটা চিন্তায় আসছে,”সুপ্তি কি এর জন্য কোনো প্রবলেমে পড়বে??অপূর্ব নিজের রুমে পাইচারি করতে থাকে।
সুপ্তি খাবার খেয়ে রুমে এসে দেখে তার ভাই শুভ্র তার রুমে দাঁড়িয়ে আছে।এই সময় শুভ্রকে নিজের রুমে দেখে সুপ্তির কিছুটা ভয় লাগলো।এমনিতে তো তার ভাই কখনও তার রুমে আসে না।আজ হঠাৎ কি মনে করে,,,,,,,,,।সুপ্তি আস্তে করে বলে,,,,
-ভাইয়া,তুমি আমার রুমে??সুপ্তির কথা শোনে সুপ্তির ভাই শুভ্র সুপ্তির দিকে ফিরে বলে,,,,,
-তোর ফোনে মাত্রই একটা কল আসছিল।আমি রিসিভ করেছি।ওপাশ থেকে একটা ছেলে কথা বলছিল।ছেলেটার কথা শোনে মনে হলো তোর সাথে অনেক সময় কথা বলে।ছেলেটা কে????
শুভ্রর কণ্ঠটা এতোটা গম্ভীর ছিল যে সুপ্তি ভয়ে প্রায় কাঁপছিল।সুপ্তির বুঝতে বাকি রইলো না তখন অপূর্বই কল করেছিল।শুভ্রর কথা শোনে সুপ্তি মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।কি বলবে বুঝতে পারছে না সে।শুভ্র চিৎকার করে বলে,,
-কি হলো?কথা বলছিস না কেন?ছেলেটা কে?শুভ্রর চিৎকার শোনে সুপ্তির ভাবী আর বাবা সুপ্তির রুমে চলে আসে।সুপ্তির ভাবী দেখে সুপ্তি গম্ভীর হয়ে আছে।চোখ দিয়ে টপটপ বৃষ্টি পড়ছে।আর শুভ্র অতিরিক্ত রেগে আছে।তিনি খুব ভালোই বুঝতে পারলেন সুপ্তি কিছু গণ্ডগোল করেছে।তিনি এসে সুপ্তির কাঁধে হাত রাখলে সুপ্তি তার ভাবীর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকায়।সুপ্তির বাবা বলে,,,,
-কি হয়েছে?এতো জোরে চিৎকার করছিস কেন??
-তোমার মেয়েকে এই প্রশ্নটা করো।তার মোবাইলে এখন ছেলেরাও কল করে।ভাবা যায় এসব??এতো কিছু হওয়ার পরও তোমার মেয়ে কোন ছেলের সাথে ফোনে কথা বলে।শুভ্রর কথা শেষ হলে তার বউ অর্পিতা বলে,,,,
-তুমি কি সব বলছো? মাথা ঠিক আছে?সুপ্তি কখনও এমনটা করবে না।
-আমার মাথা ঠিকেই আছে।আমিও মনে করেছিলাম সুপ্তি হয়তো এমন কিছু করবে না।কিন্তু এখন আমি নিজেকে তো আর অবিশ্বাস করতে পারি না।নিজের কানে যা শোনলাম তা তো ভুল প্রমাণিত হতে পারে না।
-শুভ্র,কি হয়েছে ব্যাপারটা আমাকে খুলে বলতো।
-আব্বু,আমি আমার রুমে যাচ্ছিলাম।তখন শোনলাম সুপ্তির কল বাজছে।তাই রুমে এসে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম আননোন নাম্বার।তাই রিসিভ করলাম।অপর পাশ থেকে একটা ছেলে কথা বলছি।আর সুপ্তির সাথে এমন ভাবে কথা গুলো বলছিল,আমি সিউর সুপ্তির সাথে প্রায়েই কথা হয়।শুভ্রর কথা শোনে তার বাবাও রেগে যায়।সুপ্তির ভাবী অর্পিতা পরিস্থিতি বুঝে বলে,,,,,,,
-শোন,একটা কলে কিছু প্রমাণিত হয় না।ভুল করেও তো কল চলে আসতে পারে।নং নাম্বারও হতে পারে।সব কিছু ভালে করে না জেনে কিছু বলা উচিত না।অর্পিতার কথা শোনে সুপ্তির বাবা বলে,,,
-দেখো,তোমাদের যা ইচ্ছা করো।কিন্তু আমি যদি শোনি সুপ্তিও তার বোনের মতো ভুল করছে। ছেলের ফাংশনে জড়িয়েছে,,তাহলে সেদিন আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।কথা গুলো বলে তিনি নিজের রুমে চলে আসেন।শুভ্র একটু এগিয়ে এসে বলে,,,
-তুমি যা বলেছো সেটা হলেতো ভালোই।এর বাহিরে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে সুপ্তির খবর আছে।তুমি সুপ্তিকে বুঝাও।আমরা ওকে খুব ভালোবাসি।ও যেন আবার কোনো ভুল না করে।শুভ্র কথা গুলো বলে রুম থেকে বের হতে যেতে লাগলে অর্পিতা বলে,,,
-তুমি সুপ্তির ফোনটা নিয়ে যাচ্ছো কেন?ফোনটা রেখে যাও।
-ফোনটা এখন থেকে আমার কাছেই থাকবে।সুপ্তির এখন আর ফোনের দরকার নেই।যার সাথে দরকার হবে আমাকে বলতে বলো।নয়তো বাড়ির লেন লাইনে কল করবে।সুপ্তির ভাই নিজের রুমে চলে যায়।সুপ্তির ভাই চলে যেতেই সুপ্তি তার ভাবীকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।অর্পিতা অনেক কষ্টে সুপ্তির কান্না থামায়।সুপ্তি আর অর্পিতা দুজনে পাশাপাশি বসে আছে।দুজনেই নিরব।কেউ কারো সাথে কথা বলছে না।অর্পিতা ইচ্ছে করেই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো।এতে সুপ্তি নিজেকে সামলে নিতে পারবে।কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর অর্পিতা বলে,,,,
-কি হয়েছে আমাকে সবটা বলো।ছেলেটা কে??কি সম্পর্ক তোমার সাথে তার???
-…………….
-কি হলো কথা বলছো না কেন?ছেলেটা কে?
-……………….
-এভাবে চুপ করে না থেকে এটলিষ্ট আমাকে তো বলো।
-ভাবী,আমি অপূর্বকে ভালোবাসি।ভাবী বিশ্বাস করো,অপূর্বও আমাকে অনেক ভালোবাসে।ভাবী,প্লীজ কিছু একটা করো আমার জন্য।
-সুপ্তি,তুমি তো জানো তোমার বাবা ভাই কখনও মেনে নিবে না।তার পরও তুমি,,,,,,,,,,
সুপ্তি আরো বেশি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
চলবে——–